করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য

600 minute read
0

 করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য

[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]

সূচীপত্র

১. নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কি হাঁচি-কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
২. করোনাভাইরাসের (2019-nCoV/Covid-19) ইতিহাস
৩. করোনাভাইরাসের কারণ নিয়ে বিভ্রান্তি
৪. ভাইরাসটি কি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়? এটি কি ছোঁয়াচে?
৫. করোনাভাইরাস সত্যিই ছোঁয়াচে কিনা, এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন
৬. মাস্ক কেন এই ভাইরাসে অকার্যকর?
৭. ভাইরাসটি কি চীন থেকে বা চীনে সংক্রমিত মানুষ থেকেই অন্য দেশে ছড়িয়েছে?
৮. গুজবের ক্ষতির একটি উদাহরণ
৯. করোনাভাইরাস যখন 'ভাইরাস' নয়, গুজব
১০. চীনে যদি করোনাভাইরাসের এই উপদ্রব না হতো...
১১. নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ছোঁয়াচে না হলে করোনাভাইরাসও ছোঁয়াচে নয়
১২. করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় কিভাবে?
১৩. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না গিয়েও করোনাভাইরাস পজিটিভ হবার কিছু ঘটনা
১৪. বিশ্বব্যাপী স্থানীয় সংক্রমণের কিছু ঘটনা
১৫. স্থানীয় সংক্রমণ কী বার্তা দেয়?
১৬. চীনে প্রথমে কে বা কারা আক্রান্ত হয়েছে? কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছে?
১৭. 'চোখ ওঠা' এবং জলবসন্ত কি ছোঁয়াচে রোগ?
১৮. ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির অস্তিত্ব, ক্রিয়াকর্ম এবং ক্ষমতা
১৯. একটি নিরীক্ষা প্রমাণ করবে, ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ-ই নেই
২০. ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা বিজ্ঞানের তৈরি করা ভুত!
২১. করোনাভাইরাস কোনো ‘ভাইরাস’ নয়, বরং অন্যকিছু
২২. আণবিক বোমা তৈরি ও প্রয়োগের উদ্দেশ্য
২৩. উহানের বাতাসে তেজস্ক্রিয় জাতীয় কিছু একটা মিশেছিল, এই অনুমাণের কিছু কারণ
২৪. অতীতের মহামারীগুলো কি ছোঁয়াচে ছিল?
২৫. করোনাভাইরাস নিয়ে চীনের লুকোচুরির গল্প
২৬. করোনাভাইরাস উহানের মাছের বাজার থেকে কোনোভাবে সৃষ্ট নয়; ছোঁয়াচেও নয়
২৭. করোনাভাইরাস যদি ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত না হয়, তাহলে অন্য দেশে পৌঁছলো কী করে?
২৮. উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা রোগী অন্য দেশে করোনা ছড়ায়নি
২৯. অনেক দেশে করোনা ছড়ায়নি, ছিল পরীক্ষা পদ্ধতির ভুল
৩০. পরীক্ষা পদ্ধতির ভুল বা বিভ্রান্তির আরো কিছু উদাহরণ
৩১. চীন ছাড়া যেসব দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ হয়েছে, সেসব দেশে করোনাভাইরাসের উৎস কী?
৩২. চীন ছাড়া অন্য অনেক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ‘অজানা’ কারণে
৩৩. কী সেই ‘অজানা’ কারণ?
৩৪. অন্য দেশে ব্যাপক মৃত্যুর সম্ভাব্য কিছু কারণ
৩৫. বেশি টেস্ট, বেশি পজিটিভ হবার একটি বড় কারণ
৩৬. আরেকটি প্রশ্নের উত্তর
৩৭. করোনাভাইরাস সম্পর্কে একটি মজার গল্প ও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
৩৮. করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে না হবার কিছু জ্বলন্ত উদাহরণ
৩৯. লক্ষণ ছাড়াই কি কেউ করোনা ছড়িয়ে দিতে পারে?
৪০. ‘করোনাভাইরাস’ নামক ‘ভাইরাস’-এর অস্তিত্ব কি এই পর্যন্ত পৃথিবীর কারো শরীরে পাওয়া গেছে?
৪১. এই নিবন্ধ/বই কেন?
৪২. মহামারী দেখা দিলে করণীয় (মূল আলোচ্য বিষয়)
৪৩. এই নিবন্ধ/বই নিয়ে দু'টি কথা
৪৪. এই নিবন্ধ/বইয়ের সৌজন্যে কিছু ভবিষ্যদ্বানী


প্রথম অধ্যায়

নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কি হাঁচি-কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচলিত একটি বিশ্বাস হচ্ছে, হাঁচি-কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অনেক রোগ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলোকে (যেমন: সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া) সংক্রামক রোগ বলেই মনে করা হয় এবং সর্বত্র প্রচার করা হয়। গভীরভাবে আমাদের বিশ্বাস জন্মে গেছে এই কথায়, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এই রোগগুলোতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্য যে কোনো লোক এগুলোতে আক্রান্ত হতে পারে। ডাক্তারদের মুখে এমন কথা/সতর্কবাণী শুনে শুনেই ধারণাটি আমাদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় ডা. প্রশান্ত পালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে, 'নিউমোনিয়া থেকে সাবধান' শিরোনামে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, 'নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে?', তিনি উত্তরে বলেন, 'নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে 'ড্রপলেট ইনফেকশন' বলা হয়। সাবধানতার জন্য, যাঁরা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকেন, তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করা দরকার।' [https://www.anandabazar.com/lifestyle/beware-of-pneumonia-1.938611]

এই ডাক্তার অবশ্য বলেছেন 'ছড়াতে পারে', সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন, নিশ্চয়তার কথা নয়; অন্যরা হয়তো বাড়িয়ে বলে। শুধু ডাক্তাররা নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ প্রায় সকল নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এটাই বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো ছোঁয়াচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে Pneumonia শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Pneumonia can be spread in a number of ways. The viruses and bacteria that are commonly found in a child's nose or throat, can infect the lungs if they are inhaled. They may also spread via air-borne droplets from a cough or sneeze. In addition, pneumonia may spread through blood, especially during and shortly after birth. More research needs to be done on the different pathogens causing pneumonia and the ways they are transmitted, as this is of critical importance for treatment and prevention.' [https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia]

উইকিপিডিয়ায় Influenza শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়, 'Influenza can be spread in three main ways: by direct transmission (when an infected person sneezes mucus directly into the eyes, nose or mouth of another person); the airborne route (when someone inhales the aerosols produced by an infected person coughing, sneezing or spitting) and through hand-to-eye, hand-to-nose, or hand-to-mouth transmission, either from contaminated surfaces or from direct personal contact such as a handshake. The relative importance of these three modes of transmission is unclear, and they may all contribute to the spread of the virus. In the airborne route, the droplets that are small enough for people to inhale are 0.5 to 5 μm in diameter and inhaling just one droplet might be enough to cause an infection. Although a single sneeze releases up to 40,000 droplets, most of these droplets are quite large and will quickly settle out of the air. How long influenza survives in airborne droplets seems to be influenced by the levels of humidity and UV radiation, with low humidity and a lack of sunlight in winter aiding its survival.' [https://en.wikipedia.org/wiki/Influenza]


কিন্তু এই ধারণা সত্যিই সঠিক কিনা, তা অন্তত আগে ভালো করে যাচাই করা উচিত ছিল।
প্রথমে আমাদের পরিষ্কারভাবে জানা দরকার, কেন মানুষ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়?
নিউমোনিয়া সাধারণত শিশুদের বেশি হয়। বড়রাও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তবে পরিমাণে কম। আর শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার সবচেয়ে বড় বা প্রধান কারণ হলো, শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা, ঠান্ডায় শরীরে কাঁপুনি আসা। বড়রাও অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত  হয়। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার ভিন্ন কিছু কারণও থাকতে পারে। সেসব একেবারে ব্যতিক্রম। নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি রোগ। ফুসফুসে ঠান্ডা লেগেই মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিতে ডা. প্রশান্ত পাল বলেন, 'সামান্য ঠান্ডা লাগা থেকেও কেউ কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সকলেই যে সামান্য ঠান্ডা লাগলেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবেন তা নয়। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে সামান্য ঠান্ডা লাগা থেকে নিউমোনিয়া সাধারণত হয় না। তবে যাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, বিশেষ করে শিশু কিংবা প্রবীণ মানুষের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশ বেশিই।'
দৈনিক যুগান্তরে ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত' যেসব লক্ষণে বুঝবেন নিউমোনিয়া, বাঁচতে কী করবেন?' শিরোনামের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, 'ভারতের বিখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাট জানান, শীত পড়তে শুরু করলেই নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার সময় বুকে ব্যথা হয়। এ সময় দ্রুত চিকিৎসা রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারে। তাঁর মতে, নিউমোনিয়ায় ছোঁয়াচে নয়। তবে রোগী কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে 'ড্রপলেট ইনফেকশন' বলা হয়।' [https://www.jugantor.com/lifestyle/265762]

ডা. গৌতম বরাট নিশ্চিভাবে বললেন, 'নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে নয়', আর সম্ভাবনার ভিত্তিতে বললেন, 'তবে রোগী কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।' এই 'ছড়াতে পারে' সম্ভাবনাকে সারা বিশ্বে 'ছড়ায়' বলেই বিশ্বাস করে। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না, এই বিশ্বাসের ভিত্তি কী?

এই জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত Pneumonia শীর্ষক নিবন্ধে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ সম্পর্কে বলা হয়, 'Pneumonia can be spread in a number of ways. The viruses and bacteria that are commonly found in a child's nose or throat, can infect the lungs if they are inhaled. They may also spread via air-borne droplets from a cough or sneeze. In addition, pneumonia may spread through blood, especially during and shortly after birth. More research needs to be done on the different pathogens causing pneumonia and the ways they are transmitted, as this is of critical importance for treatment and prevention.' [https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia]

নিউমোনিয়া নিয়ে এতো বছর ধরে গবেষণা করার পরও এখানে নিউমোনিয়া সংক্রমণ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এগুলো কাশি বা হাঁচি থেকে বায়ুবাহিত ফোঁটাগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আবারো বলছি, বলা হচ্ছে, 'ছড়িয়ে পড়তে পারে।' এখানেও সম্ভাব্যতা, নিশ্চয়তা নয়। এমনকি এই নিবন্ধে আরো একটি চমকপ্রদ কথা বলা হয়। বলা হয়, 'নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রোগজীবাণু এবং সেগুলো কীভাবে সংক্রমিত হয়, সে সম্পর্কে আরও গবেষণা করা দরকার। কারণ চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
বলা হয়েছে, আরো গবেষণা করা দরকার। কিন্তু এই গবেষণা শেষ হবে কবে? গবেষণা শেষ হতে হতে মানুষের কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, উপলব্ধিও করতে পারছে না এখনো অনেকে! এই লেখা শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি নতুন একটা উপলব্ধি সবার মনে সৃষ্টি হবে। আর এই 'অনেকটা চিরন্তন' সম্ভাব্যতা চিরকালের জন্য দূর করার একটা কৌশল এই লেখার পক্ষ থেকে বলে দেয়া হবে। কৌশলটি প্রয়োগ করলে এই সম্ভাব্যতা পরিণত হবে নিশ্চয়তায়, এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

আর সর্দি-কাশি, যাকে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা বলা হয়, এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় মানুষ কী কারণে আক্রান্ত হয়, তা শুধু ডাক্তাররা নয়, সচেতন অনেকেই বুঝেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হবার কিছু কারণ হলো- (ক) ঋতু পরিবর্তনের ফলে জলবায়ুতে ঠান্ডা-গরমের ভারসাম্যহীনতা বা হঠাৎ মিশ্রণের কারণে। (খ) গরম পরিবেশ থেকে এসে বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে, তখন কিছুটা বিশ্রাম না নিয়ে শরীরে আকস্মিক ঠান্ডা লাগালে বা পানি পান করলে। (গ) শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে। এই রকম কিছু কারণে মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়।

কিন্তু তবুও কেউ এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে ডাক্তাররা তাকে হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় নাক-মুখ রুমাল/টিস্যু দিয়ে চেপে ধরে রাখতে বলেন, আলাদা প্লেট-গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করতে বলেন, যাতে রোগটির ভাইরাস অন্যদের মাঝে সংক্রমিত হতে না পারে।

এবার সবার নিকট কিছু প্রশ্ন:
(এক) আপনার কি মনে আছে, সর্বশেষ যখন আপনি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন, আপনি আক্রান্ত হবার আগে আপনার কাছের কেউ কি রোগটিতে আক্রান্ত ছিল? 'কাছের কেউ' বলতে আপনার পরিবারের কেউ বা আপনার কর্মস্থলের কেউ বা আপনার সাথে যারা বেশি সময় থাকে, এমন কেউ।
(দুই) অথবা এমন কি কখনো হয়েছে, আপনি আক্রান্ত হবার আগে আপনার কাছের কেউ রোগটিতে আক্রান্ত ছিল না, তবে আপনি আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হতে না হতেই আপনার কাছের কেউ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে?
(তিন) অথবা এমন কি কখনো হয়েছে, আপনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার আগে আপনার পরিবারের বা যাদের সাথে সময় কাটান বেশি, তাদের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল, এমনকি আপনি সুস্থ হতে না হতেই নতুন করে আপনার কাছের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলো?
(চার) কখনো কি এমন হয়েছে, আপনি  ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলেন, আপনি আক্রান্ত হবার আগে আপনার কাছের কেউ রোগটিতে আক্রান্ত ছিল না, এমনকি আপনি আক্রান্ত হবার পর কিছু দিন চলে গেছে, তবু আপনার কাছের অন্য কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়নি?

আমার বিশ্বাস, সর্বশেষ ২ মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ১০০ জন রোগীর খোঁজ নেয়া হলে শুধু ৪নং প্রশ্নের উত্তরে 'না' উত্তর প্রদানকারী মানুষের সংখ্যা অন্য তিনটি প্রশ্নের উত্তরে 'না' উত্তর প্রদানকারী মানুষের সংখ্যার সমষ্টির চেয়ে অনেক বেশি হবে। ১০০ জন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অন্তত ৮০ জন এমন পাওয়া যাবে, যারা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার আগে তাদের কাছের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল না, এমনকি সুস্থ হবার আগে তাদের কাছের কেউ নতুন করে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়নি। আর এটা সবাই জানে, আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত মানুষ রুমাল, টিস্যু ইত্যাদি খুব কম ব্যবহার করে।

ধরা যাক, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে সবাই রুমাল, টিস্যু ইত্যাদি ব্যবহার করে। তবু যদি সর্বশেষ এক মাসের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ১০০ জন রোগীর খোঁজ নেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশই (অন্তত ৮০ জন) ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে নতুন করে, তাদের পরিবারের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার আগেই। এই বিষয়টা নিয়ে যদি তবু কারো সংশয় থাকে, তারা দয়া করে এর পর থেকে বিষয়টা বাস্তবের সাথে মেলানোর চেষ্টা করবেন। যদি সম্ভব হয়, একটা জরিপ করে ফেলুন, সঠিকভাবে জরিপ করলে আপনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন, অধিকাংশ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয় নতুন করে। এটা প্রমাণিত হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটাও প্রমাণিত হয়ে যাবে, যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার জন্য আগে থেকেই কাছের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত থাকা শর্ত নয়, তাই একজন আক্রান্ত হবার পরও একই পরিবেশে থাকা অন্য কেউ নতুন করে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে কোনো বাধা নেই! একই পরিবারের একজন যখন নতুন করে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত  হতে পারে, তখন পরে আরো এক বা একাধিক ব্যক্তি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে পারে সেই একই কারণে, যে কারণে প্রথম ব্যক্তিটি আক্রান্ত হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা যে কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, তা এভাবে যাচাই করলে অবশ্যই প্রমাণিত হবে। বিষয়টা আরো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে (লিখতে) পারলে ভালো হতো। কিন্তু কিছু লোক আছে, যাদেরকে আরো বিস্তারিতভাবে লিখে বুঝালেও বুঝবে না বা বুঝতে চাইবে না। এদের কাছে পুরনো ধারণাই সঠিক।

এবার আমার নিজের কথা একটু বলি। জানুয়ারির (২০২০) ২৮ তারিখ থেকে আমার সর্দি-কাশি শুরু হয়েছে। এখনো (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০) পুরোপুরি ভালো হয়নি। মাঝখানে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ দিন (সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) আমি একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি আমাদের জেলা শহরে। আমরা সেখানে ৩২ জন ছিলাম। আমার মতো সর্দি-কাশি নিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন আরো ২ জন। আমরা কেউই রুমাল, টিস্যু ব্যবহার করিনি। তবু নতুন করে সেখানকার কেউ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়নি। এমনকি আমাদের ঘরের কেউই (আমি ছাড়াও আরো ৬ জন) এখনো আমার সর্দি-কাশি'র অংশীদার হতে পারেনি! হয়তো আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবার অনেক দিন পর কেউ আক্রান্ত হতে পারে। যদি হয়, সেটাকে কি আমার এই সর্দি-কাশির সংক্রমণ বলা যাবে?

অতীতে বহুবার আমার সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে। খুব কম সময় দেখেছি আমার আগে বা পরে আমার কাছের কারো ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে। আমার বিশ্বাস, এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষের ডায়েরী আমার সাথে মিলে যাবে। হয়তো ঐসব ডাক্তারদের সাথে মিলবে না, যারা ইনফ্লুয়েঞ্জাকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করছেন! হয়তো যতবারই ওদের ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে, ততবার অন্য কারো কাছ থেকেই হয়েছে এবং ওদের নিজেদের ভালো হতে না হতেই যাদের থেকে ওরা এটা পেয়েছে, তারা এদের থেকে আবার ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে!

নিউমোনিয়ার ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। একই পরিবারের একাধিক শিশুর বা ব্যক্তির একইসাথে নিউমোনিয়া হয়েছে, এমন ঘটনার অস্তিত্ব খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১ হাজার রোগীর খোঁজ নিলেও এমন ঘটনা দু'একটা পাওয়া যায় কিনা, সন্দেহ। জানি না, তবু নিউমোনিয়াকেও কেন ছোঁয়াচে রোগ বলে অপবাদ দেয়া হয়! বলা হয়, নিউমোনিয়াও নাকি হাঁচি, কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়; বলা হয়, নিউমোনিয়াও নাকি এক ধরনের ভাইরাস! জানি না, কোন দিন বিজ্ঞান এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়, নয় কোনো ভাইরাস; বরং জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত কিছু কারণে এগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়! রুমাল, টিস্যু বা মাস্ক ব্যবহার করে এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।

এই লম্বা আলোচনার পরও যদি কারো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে রোগ নয়, তাহলে একটি সরেজমিন জরিপ করে ফেলুন। ১০০০ (এক হাজার) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া রোগীর তথ্য নেয়া হোক। আমার বিশ্বাস, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০০ জন এমন পাওয়া যেতে পারে, যারা এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার আগে তাদের কাছের কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত ছিল। বাকি ৯০০ জনের ক্ষেত্রে এমন পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ শতকরা ৯০ জনই নতুন করে রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে, বাস্তবে এমনই পাওয়া যেতে পারে। বাকি ১০ শতাংশ যে নতুন করে আক্রান্ত হয়নি, অন্য কারো থেকে আক্রান্ত হয়েছে, তা প্রমাণ করার কোনো পন্থা কি কারো জানা আছে? জানা নেই। এই বাকি ১০ শতাংশও যে ঐ কারণেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়নি, যে কারণে ৯০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে, তা কি কেউ কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবে? পারবে না। তাহলে এটা বিশ্বাস করতে কেন আর কষ্ট হবে, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে রোগ নয়?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু এবং নিউমোনিয়া এই রোগগুলোর গায়ে 'ছোঁয়াচে' তকমা লাগানোটা মানবজাতির কতটুকু উপকার করেছে, বলতে অনেকের কষ্ট হবে, কিন্তু এতে মানবজাতির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বুঝতে পারলে হতভম্ব হয়ে যাবেন সবাই।


দ্বিতীয় অধ্যায়

করোনাভাইরাসের (2019-nCoV/Covid-19) ইতিহাস

দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস সম্পর্কে বলা হয়, 'মাসখানেক আগে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এটাকে করোনাভাইরাস বলে শনাক্ত করেছিলেন। তারা জানান, ভাইরাসটি নিউমোনিয়ার মহামারী  ঘটাতে পারে। তবে ভাইরাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।'

২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে ‘যুক্তরাষ্ট্রে ছড়াল চীনের ভাইরাস’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গত বছর ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এটাকে করোনা ভাইরাস বলে শনাক্ত করেন। তারা জানান, ভাইরাসটি নিউমোনিয়ার মহামারী ঘটাতে পারে। তবে ভাইরাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।'


২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের প্রথম আলোয় প্রকাশিত 'ঝুঁকি আছে, প্রস্তুতিও আছে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনা দপ্তর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর জানতে পারে, হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মানুষ অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি চীনা কর্তৃপক্ষ নতুন এই ভাইরাস শনাক্ত করে।'


করোনাভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ

'করোনাভাইরাস: লক্ষণ ও চিকিৎসা কী, কতটা মারাত্মক, কোথা থেকে এলো, কোন প্রাণী থেকে ছড়ালো, চীনে কেন?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায়, ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে যায় বলে মনে করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।'
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, 'একটি ভাইরাস- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল- এর মধ্যেই চীনের অনেক মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করেছে এবং অন্যান্য দেশেও এটি ধরা পড়েছে। ... রোগীদের শরীরে নিউমোনিয়া তৈরি করছে, এমন একটি ভাইরাস সবসময়ই উদ্বেগজনক।'

'ঝুঁকি আছে, প্রস্তুতিও আছে' শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, 'এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি থাকে। নিউমোনিয়া দেখা দেয়। কিডনীর প্রদাহ হতে পারে।'


'করোনাভাইরাস ঠেকাতে প্রস্তুত সরকার' শিরোনামে ২৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সবাইকে অধিক সতর্ক হতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ রোগে নিউমোনিয়া হলে ফুসফুস অকেজো হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে কিডনী, হার্ট ও লিভার অকেজো হয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।'


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে Coronavirus শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 

'Common signs of infection include respiratory symptoms, fever, cough, shortness of breath and breathing difficulties. In more severe cases, infection can cause pneumonia, severe acute respiratory syndrome, kidney failure and even death.' [https://www.who.int/health-topics/coronavirus]

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানে প্রকাশিত 'What is coronavirus and how worried should we be?' শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The virus causes pneumonia. Those who have fallen ill are reported to suffer coughs, fever and breathing difficulties. In severe cases there can be organ failure.' [https://www.theguardian.com/world/2020/feb/08/what-is-coronavirus-how-worried-wuhan-china]

                                    তৃতীয় অধ্যায়

করোনাভাইরাসের কারণ নিয়ে বিভ্রান্তি

করোনাভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট কারণ এখনো কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। অনেক ভিন্নমত রয়েছে এই ভাইরাসের কারণ নিয়ে। সব কারণই সম্ভাব্য। এ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক।

'করোনাভাইরাস: লক্ষণ ও চিকিৎসা কী, কতটা মারাত্মক, কোথা থেকে এলো, কোন প্রাণী থেকে ছড়ালো, চীনে কেন?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহানের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে। যদিও কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা, তিমি), ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও থাকে, যেমন মুরগি, বাদুর, খরগোশ, সাপ- এসব এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুরের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে।'

বিবিসি বাংলার এই এক প্রতিবেদনেই তিনটি সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তিন রকম মন্তব্য উল্লেখ করা হয়ছে। প্রথমে বলা হয়েছে 'সম্পর্ক আছে', এরপর বলা হয়েছে 'হতে পারে' এবং শেষে বলা হয়েছে 'ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে'। মানে, কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়।
'বাদুড়-সাপ থেকে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস' শিরোনামে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বাদুড়ের স্যুপ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, কেবল ফ্রুটব্যাট বা মেগাব্যাটের মধ্যে পাওয়া ভাইরাসের সঙ্গে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের মিল রয়েছে। বাদুড়ের স্যুপ উহানে খুবই জনপ্রিয় খাবার। এই শহরেই একটি মাছ বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। আরেকটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, সাপ থেকেই এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।'

প্রতিবদেনটিতে আরো বলা হয়, 'পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করছেন, বাদুড় থেকে ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করেছে সাপের মাধ্যমে। উহানের হুয়ানান সিফুড মার্কেটে অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সাপও বিক্রি করা হয়। আর সেখান থেকেই এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ার আগে অন্য কোনো প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে থাকতে পারে।'
এখানেও সেই সম্ভাব্যতা- 'ছড়াতে পারে', 'ঘটতে পারে', 'থাকতে পারে'।

অর্থাৎ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, কোত্থেকে মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে? তবে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে 'যুক্তরাষ্ট্রে ছড়াল চীনের ভাইরাস' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'জানা গেছে, মূলত সামুদ্রিক খাবার থেকে মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে।' এই প্রতিবেদনে যেভাবে বলা হয়েছে, 'জানা গেছে', তাতে মনে হয় বিষয়টা অনেকটা নিশ্চিত। কিন্তু দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা, সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন, তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে, যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।'

মাছের বাজারের সাথে এই ভাইরাস সংক্রমণের কোনো সম্পর্কই আর রইলো না। বাকি রইলো বাদুড় আর সাপের মাধ্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল আরটিভি'র ওয়েবসাইটে 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাদুড় থেকে ছড়িয়ে থাকতে পারে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'এক বিবৃতিতে গবেষকরা জানিয়েছে, উহান করোনাভাইরাসের প্রাকৃতিক হোস্ট বাদুড় হতে পারে; কিন্তু বাদুড় ও মানুষের মাঝখানে একটি অজ্ঞাত মাধ্যম থেকে থাকতে পারে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উহান ইন্সটিটিউট অব ভিরোলজির একজন সিনিয়র গবেষক বলেছেন, এই গবেষণার ফলাফল সতর্কভাব নিতে হবে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে তিনি বলেন, একটি কম্পিউটার মডেলে ক্যালকুলেশনের ভিত্তিতে এই ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে এটা ঘটবে তা অনিবার্য নয়। বান্ডিং প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অন্যান্য আরও অনেক কিছুর সঙ্গে এটি নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য প্রোটিনেরও সম্পর্ক থাকতে পারে।' [https://www.rtvonline.com/international/84240]

উহান করোনাভাইরাসের প্রাকৃতিক হোস্ট বাদুড় হতে পারে, এই গবেষণা ফলাফলটা সতর্কভাবে নেয়ার কথা বলা হয়েছে এখানে এবং আরো বলা হয়েছে, 'একটি কম্পিউটার মডেলে ক্যালকুলেশনের ভিত্তিতে এই ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। বাস্তব জীবনে এটা ঘটবে তা অনিবার্য নয়।'

দৈনিক যুগান্তরে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বনরুই?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 'ভোঁদর ও বাদুড়ের পর এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণে দায়ী করা হচ্ছে বিপন্ন প্রাণী বনরুইকে। চীনের একদল বিজ্ঞানী বলেন, এই ভাইরাসের আদি পোষক বাদুড় হলেও মানুষের শরীরে বিস্তারে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে বনরুই।

গুয়াংজু প্রদেশের দক্ষিণ চায়না কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসটির   আরএনএ বিন্যাসের সঙ্গে বনরুইয়ের শরীরে পাওয়া করোনাভাইরাসের বিন্যাসের ৯৯ শতাংশ মিল পেয়েছেন। এ নিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।...
ভাইরোলজির ভাষায় এ ধরনের পোষক প্রাণীকে বলা হয় মধ্যবর্তী বাহক। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেই প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, নিশ্চিত করে বলার আগে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।
ফ্রান্সের প্যাস্টুয়ার ইনস্টিটিউটের আরনড ফন্টেনেট বলেন, এই রোগ সরাসরি বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে বিস্তার ঘটেনি। আমরা মনে করি, মধ্যবর্তী বাহক হিসেবে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারির পর নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত করে চীন। বিজ্ঞানীরা প্রথম থেকেই ধারনা করে আসছেন যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকে ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
সি ফুডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীও ওই মার্কেটে বিক্রি হত, যা পরে বন্ধ করে দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ। গোড়ার দিকে সাপ, বাদুড় ও ভোঁদড়ের দিকে ইঙ্গিত ছিল অনেকের।
আবার বিজ্ঞানীদের আরেকটি অংশের বক্তব্য, করোনাভাইরাস সাপকে পোষক হিসেবে ব্যবহার করে, এমন কোনো প্রমাণ কখনও মেলেনি।' [https://www.jugantor.com/international/276045]

এই প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সম্পর্ককে বাদুড় ও ভোঁদড় থেকে ছিন্ন করে বনরুইয়ের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। বনরুই সম্পর্কে আবার বলা হয়েছে, 'যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের দাবি, নিশ্চিত করে বলার আগে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।' আর সাপের সাথে এই ভাইরাসের সম্পর্ক সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'করোনাভাইরাস সাপকে পোষক হিসেবে ব্যবহার করে, এমন কোনো প্রমাণ কখনও মেলেনি।'

দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় 'যেভাবে ছড়াল করোনাভাইরাস' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'নতুন এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ কোথা থেকে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।'

উইকিপিডিয়ায়ও চীনের উহানের মানুষকে ব্যাপকহারে আক্রমণকারী এই রোগকে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে '2019–20 Wuhan coronavirus outbreak (উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো হালনাগাযোগ্য)' শিরোনামের একটি নিবন্ধে। নিবন্ধটির শিরোনাম বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান শিরোনাম '2019–20 coronavirus pandemic'। বলা হয়েছে, 'In Wuhan, during December 2019, a cluster of cases displaying the symptoms of a "pneumonia of unknown cause" was linked to Huanan Seafood Wholesale Market, which had a thousand stalls selling fish, chickens, pheasants, bats, marmots, venomous snakes, spotted deer, and other wild animals (ye wei, bushmeat). In January 2020, the hypothesis was that this was a novel coronavirus from an animal source (a zoonosis).' [https://en.wikipedia.org/wiki/2019%E2%80%9320_coronavirus_outbreak]

সুতরাং করোনাভাইরাস কোত্থেকে জন্ম নিল, এই প্রশ্নের কোনো উত্তরই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখনো এর কারণ অজ্ঞাত। আমরা আর কোনো উত্তর নিয়ে না ভেবে আপাতত দেখি, এই ভাইরাস সত্যিই মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় কিনা? এটা কি সত্যিই কোনো 'ভাইরাস', যা এক শরীর থেকে আরেক শরীরে সংক্রমিত হবার শক্তি রাখে?


চতুর্থ অধ্যায়

প্রথম পরিচ্ছেদ : ভাইরাসটি কি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়? এটি কি ছোঁয়াচে?
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই সারা বিশ্বে এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, অন্য কোনো দেশেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। চীনে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে শুরু করলো। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে, চীনের সাথে প্রায় সব দেশের যোগাযোগ আছে; প্রায় সব দেশের মানুষ চীনে যাতায়াত করে এবং চীনের মানুষও প্রায় সব দেশে যাতায়াত করে। চীনের উহানে সংক্রমণের কিছু দিনের মধ্যেই নতুন নতুন দেশে করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া যেতে শুরু করায় মানুষ আরো বেশি আতঙ্কিত হতে শুরু করে।
চীন থেকে ভাইরাসটি অন্য দেশে ছড়ানো সম্পর্কে কিছু সংবাদ ও প্রতিবেদন সম্পর্কে আগে আমরা জেনে নিই।

'যুক্তরাষ্ট্রে ছড়াল চীনের ভাইরাস' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৩ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের রহস্যময় ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের খবর তারা পেয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিটি চীনের উহান শহর থেকে সম্প্রতি সিয়াটলে পৌঁছেছেন।'

প্রথম আলোয় ২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'চীনের দুটি শহর অবরুদ্ধ' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের আধা স্বায়ত্বশাসিত হংকংয়ে এই ভাইরাস সংক্রমিত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উহান থেকে এক নারী যিনি তাইওয়ানে গিয়েছিলেন, তাঁর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে ম্যাকাওয়ের ক্ষেত্রেও।'


'করোনাভাইরাসে মৃত্যু বাড়ছেই' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। এছাড়া গতকাল কানাডায় এই ভাইরাসে সংক্রমিত এক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি উহান থেকে কানাডার টরেন্টোতে গিয়েছিলেন।'


'ভয়ে চীন সীমান্ত সিলগালা' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস সিঙ্গাপুরেও পৌঁছেছে। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত চীন ফেরত চারজনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/272201]


দৈনিক সমকালে ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ভারতের কেরালায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায়। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এক ভারতীয়ের শরীরের করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি সম্প্রতি চীন থেকে ভারতে আসেন। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার' [https://samakal.com/international/article/200111160]


'করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে' শিরোনামে দৈনিক নয়াদিগন্তে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মহামারী রূপ নেয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০০ মানুষ। এবার প্রথমবারের মতো চীনের বাইরে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে মারা গেছেন ৪৪ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক।

তিনি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন।' [https://www.dailynayadiganta.com/onnodiganta/477323]

'করোনাভাইরাস মোকাবেলায় 'দুর্বলতা ও ঘাটতি' স্বীকার চীনের' শিরোনামে দৈনিক নয়াদিগন্তে বিবিসি ও রয়টার্স সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'গতকাল হংকং জানিয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ৩৯ বছর বয়সী আরটিএইচকে ব্রডকাস্টার। গত ২১ জানুয়ারি তিনি উহানে গিয়েছিলেন এবং পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন।' [https://www.dailynayadiganta.com/onnodiganta/477861]


'কেরালায় করোনাভাইরাস আতঙ্ক, ২২৩০ জন নজরদারিতে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, 'চীন সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের ১৯টি দেশে পৌঁছে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যে।

সেখানে তিন জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে নিশ্চিত করা গেছে।...
এনডিটিভি জানায়, সোমবার উহান ফেরত এক ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
এর আগে এ ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত কি না, তা নির্ণয়ে ১৪০ জনের নমুনা কেরালার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৪৬ জনের শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি। তবে ৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত হয়। এ তিন আক্রান্ত চীনের উহান থেকে  ভারতে ফিরেছেন।' [https://www.jugantor.com/international/274909]

'চীন ফেরত ৩৬১ বাংলাদেশি থাকবেন হজ ক্যাম্পে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ডব্লিউএইচও জানায়, চীন ছাড়া ১৮টি দেশে আরও ৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। অন্য দেশের যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই উহান শহরে ছিলেন।'

জার্মানের জনপ্রিয় রেডিও ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে 'করোনা ভাইরাস: চীনে এক দিনে ৬৫ জনের মৃত্যু' শিরোনামে ০৫.০২.২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'উহান নয়, এখন চীনের হুবেই থেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের খবর বেশি করে আসছে। মঙ্গলবার হুবেইতে মোট ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের উপদ্রব শুরু হওয়ার পর একদিনে সব থেকে বেশি মৃত্যুর খবর এল হুবেই থেকেই। ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে।

চীনের বাইরে সব চেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জাপানের মানুষ। সেখানে ইতিমধ্যে ৩৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। এরপরেই আছে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। সেখানে ২৫ ও ২৪ জন এই ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জার্মানিতে। আক্রান্তের সংখ্যা ১২। বেলজিয়ামে এই প্রথম এক জনের শরীরে করোনা ভাইরাস মিলেছে। উহান থেকে মোট নয় জন বেলজিয়াম ফিরেছিলেন, তার মধ্যেই একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।' [https://www.dw.com/bn/a-52261469]

'করোনাভাইরাসে প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক মারা গেছেন। বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস এমন খবর দিয়েছে।

এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এটাই প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা।'

এই প্রতিবেদনগুলো সম্মিলিতভাবে খুব শক্তভাবে প্রমাণ করে, চীনের বাইরে প্রথম প্রথম যেসব দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তারা প্রায় সবাই 'উহান ফেরত'। তার মানে উহান থেকে রোগটির উৎপত্তি হবার পর যারা উহানে গমন করেনি বা উহানে ছিল না, তারা এতে আক্রান্ত হচ্ছে না; শুধু চীন ছাড়া অন্যান্য দেশে তারাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, যারা উহানে ছিল বা গমন করেছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয়, রোগগুলো একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হচ্ছে না। আর যেহেতু এই ভাইরাসটির আক্রমণে মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় আর নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে না বলে আমরা প্রথমেই জানলাম, তাই এ ব্যাপারে আমরা অনেকটা নিশ্চিত, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে না। এটা প্রচালিত অর্থে কোনো ভাইরাস নয়, বরং 'অন্য কিছু'।

অবশ্য পরবর্তীতে আরো কিছু দেশে করোনাভাইরাস এমন উৎস থেকে সংক্রমিত হতে থাকে, যে উৎস সম্পর্কে এখনো কেউই কিছু বলতে পারছে না। অর্থাৎ চীন বা উহানের সাথে বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সম্পর্ক ছাড়াই অনেক দেশের মানুষ এই 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হতে শুরু করে। এ সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

করোনাভাইরাস সত্যিই ছোঁয়াচে কিনা, এবার এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক।
দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'ডা, সেবরিনা ফ্লোরা (ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইসিডিডিআরের পরিচালক) বলছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি এবং ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।'
এখানে বলা হয়েছে, 'ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।'

'করোনাভাইরাস আতঙ্ক: অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে একের পর এক চীনা শহর' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ভাইরাসটির প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল এটি শুধু প্রাণীর কাছ থেকে ছড়াতে পারে। কিন্তু পরে এই ভাইরাস একজন মানুষের কাছ থেকে আরেকজন মানুষের শরীরেও সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে এটি কিভাবে মানবদেহ থেকে আরেক মানবদেহে ছড়ায় সেটি এখনও রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51222815]

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।' আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এটি কিভাবে মানবদেহ থেকে আরেক মানবদেহে ছড়ায় সেটি এখনও রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।'

তবু কেন নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এই রোগগুলোর মতো করোনাভাইরাসকেও ছোঁয়াচে রোগ মনে করা হয় এবং নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগে আক্রান্তদের সাথে যে আচরণ করা হয়, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সাথেও সে রকম আচরণ করা হয়? পুরো উহান শহরকে এখন ‘কোয়ারেন্টাইন’ বানিয়ে ফেলা হয়েছে, তালাবদ্ধ করা হয়েছে। আরো অনেক দেশে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ঐসব লোকদেরকে, উহানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর যারা উহান থেকে ফিরেছে এবং যাদেরকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
উহান থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। উহানে কাউকে ঢুকতেও দেয়া হচ্ছে না। কেন? শুধু করোনাভাইরাসকে নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ছোঁয়াচে রোগ মনে করার কারণেই। অথচ নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলোও কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে আমরা প্রথমেই পরিষ্কারভাবে জানলাম।

'নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়', এই ধারণাটা যদি আগে থেকে প্রচলিত থাকতো, তাহলে উহানে প্রথম যারা করোনাভাইরাসে বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হতো? প্রথমে যারা করোনাভাইরাসে বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়নি, তাদের সাথেই বা কেমন আচরণ করা হতো? একটু ভেবে দেখুন। একটু ভাবলেই অবাক হয়ে যেতে পারেন। আপনার ভাবনার সাথে এই লেখার ভাবনা মিলে কিনা, যাচাই করার জন্য লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


তৃতীয় পরিচ্ছেদ

মাস্ক কেন এই ভাইরাসে অকার্যকর?
উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শুধু উহান শহরে বা হুবেই প্রদেশে নয়, প্রায় পুরো চীনজুড়েই মানুষ মাস্কের ভেতর ঢুকে গেলো। শুধু মাস্কের ভেতর নয়, অনেকে পুরো শরীরকে আবৃত করে চলাফেরা করতে শুরু করলো। বিশেষ করে চিকিৎসাকর্মীরা। প্রথমে এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য-প্রতিবেদন দেখা যাক।
'চীন এখন 'মাস্ক নগরী' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের এখনও কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এখন প্রতিরোধই এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। এজন্য সবার মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে মাস্ক। পুরো চীন এখন এক মাস্কের 'নগরী'তে পরিণত হয়েছে।...
দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, গত সপ্তাহে মাত্র দু’দিনে প্রায় আট কোটি মাস্ক বিক্রি করেছে আলিবাবার মালিকানাধীন তাওবাও। জানুয়ারির ১৯ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে জেডি ডটকম মাস্ক বিক্রি করেছে অন্তত ১২ কোটি ৬০ লাখ পিস।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/271337]

'থেমে নেই ভালবাসা...' শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীনের এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহর উহান থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের যানবাহন চলাচল। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে উৎকণ্ঠিত বাসিন্দাদের অস্বাভাবিক ভিড়। ফার্মেসিগুলোতে দেখা দিয়েছে ওষুধের সংকট। করোনাভাইরাস আতঙ্কে রয়েছে পুরো বিশ্ব। একডজনেরও বেশি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। উহানে আটকা পড়েছেন বিদেশি নাগরিকরা। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। তাদের ফেরাতে চীনা সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার। ইতিমধ্যে কিছু কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হিসেবে সবাই মাস্ক পরছেন একরকম বাধ্য হয়েই। ফলে পুরো চীন এখন এক ‘মাস্ক নগরীতে’ পরিণত হয়েছে। মাস্ক কেনার হিড়িক পড়েছে অনলাইন ও অফলাইন দোকানগুলোতে। এতে মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে চীনে। বিপণনি কেন্দ্রগুলো তাই মাস্ক উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। - এএফপি' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/272203]


চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে চীনের প্রায় সব নাগরিক বাধ্যতামূলতভাবে মাস্ক পরছে। কিন্তু মাস্ক পরতে শুরু করার পর কি ভাইরাসটি মানুষকে আক্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে? মানুষ কি রক্ষা পাচ্ছে ভাইরাসটির আক্রমণ থেকে? মাস্ক ব্যবহার শুরু করার আগে ভাইরাসটি যত মানুষকে আক্রমণ করেছে, তার চেয়ে বেশি আক্রমণ করেছে মাস্ক ব্যবহারের পর। তার মানে মাস্ক ব্যবহার কোনো কাজেই আসছে না। রোগটি নিজ গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে কেউ রোধ করতে পারছে না রোগটির গতি। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, চিকিৎসাকর্মীরাও পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাসটিতে, যারা সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি অবরুদ্ধ করে রাখে শরীরকে।


৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'করোনাভাইরাস সতর্ককারী প্রথম সেই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মারা গেলেন করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ককারী প্রথম সেই চীনা চিকিৎসক। চীনা নাগরিকদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে যে সকল চিকিৎসকরা প্রথম সতর্ক করেছিলেন তাদের একজন ডাঃ লি ওয়েনলিয়াং। সবশেষ সেই চিকিৎসকও করোনাভাইরাসের কাছে হার মানলেন। চীনা সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৩৪ বয়সী এই চিকিৎসক। গত ৩০ ডিসেম্বর লি ওয়েনলিয়াং তার সহকর্মীদের ওই ভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।'

'করোনা ভাইরাসের বাহক মানুষও!' শিরোনামে বাংলা অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন লিখেন জাকিয়া আহমেদ, যা প্রকাশিত হয়, জানুয়ারি ২২, ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্তেরও খবর পাওয়া গেছে, যাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে দেশটির সরকারি হিসাবে সোমবার পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৩ জন। উহান ছাড়া বেইজিং ও সাংহাইতেও আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভাইরাসটি চীনের ১৩ প্রদেশে ছড়িয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ৪৪০ জন, আর মারা গেছেন ৯ জন। দুই দিনের মাথায় এত বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ভাইরাসটি 'রেপিডলি স্প্রেড' হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন চিকিৎসা কর্মীও রয়েছেন।' [https://www.banglatribune.com/others/news/605297]

'করোনাভাইরাসে ইউরোপের মধ্যে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'এদিকে করোনাভাইরাসে বিশাল একটা সংখ্যক চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সম্পর্কে চীনের কাছে তথ্য চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭৬০ স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে চীন।' [https://www.jugantor.com/international/278677]


'চীনে প্রায় দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত' শিরোনামে এএফপি ও রয়টার্স, বেইজিং সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীনের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গতকাল শুক্রবার বলেছে, এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এর মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন।...

উহানে বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করছেন প্রায় ৮০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, যে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই উহানের।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1639919]

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে, সংক্রামক বা বায়ুবাহিত রোগ নয়। সংক্রামক বা বায়ুবাহিত রোগ হলে উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক পরিহিত কেউ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো না। যেখানে শুধু মাস্ক পরিহিত সাধারণ মানুষকেই নয়, মাস্কসহ আপাদমস্তক মোড়ানো হাজারো চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকেও রোগটি আক্রমণ করে বসেছে, সেখানে রোগটিকে 'সংক্রামক রোগ' বলার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে? মাস্ক পরেও কেন এই 'ভাইরাসে'র আক্রমণ থেকে মানুষ রক্ষা পাচ্ছে না? কেউ কি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হলে 'নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লয়েঞ্জা এগুলো বায়ুবাহিত রোগ নয়', আগে এই কথা বিশ্বাস করতে হবে।


একটু ভাবলেই যে-কারো সহজেই এই বিশ্বাস সৃষ্টি হবে, উহানে সৃষ্ট এই নিউমোনিয়ার উপদ্রব 'ভাইরাস' হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে না; সামুদ্রিক মাছ, সাপ, বাদুড়, বনরুই যেদিকেই আপনার সন্দেহের দৃষ্টি যায়, আপনার সন্দেহের দৃষ্টি সেদিক থেকে একসময় ফিরে আসবেই এবং এই বিশ্বাস জন্ম হবে, এটা অন্য কিছু, যা বায়ুর সাথে মিশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের ওপর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার ফলে মানুষ মারাত্মকভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

এই 'অন্য কিছু' একজন থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হয় না। কারণ এটা কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নয়। বরং এই 'অন্য কিছু' থেকে একজন যেভাবে আক্রান্ত হয়, অন্যজনও সেভাবেই আক্রান্ত হয়। এই 'অন্য কিছু' থেকে সৃষ্ট নিউমোনিয়ায় প্রথম আক্রান্ত মানুষটিকে নির্বাসিত করা হলেও, সরিয়ে নিলেও, কোয়ারেন্টাইনে বন্দী করে রাখলেও, এমনকি মেরে ফেললেও একই এলাকার আরো আরো লোক এই 'অন্য কিছু'র কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবেই। এই 'অন্য কিছু' থেকে বাঁচার জন্য শুধু মাস্ক নয়, পুরো শরীর আবৃত করে ফেললেও কোনো লাভ নেই। কারণ খুব সম্ভবত এটা বায়ুর সাথে মিশে শরীরে প্রবেশ করে। বায়ু থেকে এই 'অন্য কিছু'কে আলাদা করার জন্য বা এর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরে কোনো লাভ নেই।

কিসে লাভ হতো/হবে, তা-ও পরবর্তীতে এ নিবন্ধে আলোচনা করা হবে। আপাতত মাস্ক ব্যবহার সত্যিই কোনো কাজে আসছে কিনা, এ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক।


'করোনাভাইরাস: মাস্ক পরে কি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বিশ্বের বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। বিশেষ করে চীনে, যেখান থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা, সেখানেও মানুষ বায়ুর দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হরহামেশা নাক আর মুখ ঢাকা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়।

অবশ্য বায়ুুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক কতটা কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্টই সংশয়ে আছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা, যাদেরকে বলা হয় ভাইরোলজিস্ট।...
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের ডঃ ডেভিড ক্যারিংটন বিবিসিকে বলেন, "সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়।"
"বেশিরভাগ ভাইরাসই" বায়ুবাহিত, তিনি বলেন, এবং এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারেনা ঠিকঠাক। তাছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।
তবে হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে এই মাস্ক। আর হাত থেকে মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কিছু সুরক্ষা এটা দেয়।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51218534]

'করোনা মোকাবিলায় সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া যে কারণে সফল' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের মহামারিবিষয়ক অধ্যাপক বেঞ্জামিন কাউলিংয়ের ভাষ্য, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক পরা জাদুকরি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না। প্রত্যেকেই যদি হাত ধোয়া, সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরে, তাহলে হয়তো এটা কাজে দিতে পারে। বাকি সাবধানতাগুলো না মেনে শুধু মাস্ক পরে এই রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে না।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1646273]


'How does coronavirus spread and how can you protect yourself?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় কাতারভিত্তিক আল জাজিরা চ্যানেলের ওয়েবসাইটে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, 'While face masks are popular, scientists doubt their effectiveness against airborne viruses.

Masks may provide some protection to you and others, but because they are loose and made of permeable material, droplets can still pass through.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/01/coronavirus-spread-protect-200130115539072.html]

'করোনাভাইরাস: টিকা আছে কি? আক্রান্তরা পুরো সেরে উঠছেন কি? এবং অন্যান্য নির্বাচিত প্রশ্ন' শিরোনামে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বিবিসিকে মানুষের করা কিছু প্রশ্নের উত্তর বিবিসির পক্ষ থেকে দেয়া হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, 'মুখে মাস্ক পরলেই যে ভাইরাস প্রতিরোধে বড় ধরণের পরিবর্তন আনা যাবে, এমন খুব কম প্রমাণ আছে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51427768]

সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে ''Do face masks work? Medical experts explain how to protect yourself from coronavirus' শিরেনামে ২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Sam Meredith) বলা হয়, 'Epidemiologists and infectious disease experts have been at pains to emphasize against an unwarranted scramble for face masks in recent weeks, particularly because such hoarding behavior elevates the prospect of an equipment shortage for medical workers.

''Seriously people — STOP BUYING MASKS!'' U.S. Surgeon General Jerome Adams said via Twitter over the weekend.

''They are NOT effective in preventing general public from catching coronavirus, but if healthcare providers can't get them to care for sick patients, it puts them and our communities at risk!'' [https://www.cnbc.com/2020/03/02/coronavirus-do-face-masks-work-and-how-to-stop-it-from-spreading.html?recirc=taboolainternal]

করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর থেকে চীন বা উহানের মানুষ যেভাবে মাস্ক এবং শরীর আবৃতকারী বিভিন্ন পোশাক পরে চলাফেরা করছে, তাতে ভাইরাসটি এতো ব্যাপক মানুষকে আক্রমণ করা সুযোগ পাবার কথা নয়, যদি এটি সত্যিই কোনো 'ভাইরাস' হতো এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ বায়ুবাহিত বা সংক্রামক হতো। কেউ কি বলতে পারবেন, মাস্ক পরার পরও, শরীর ভালোভাবে আবৃত করে ফেলার পরও কেন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়?
'ইতালিতে ৫ হাজার চিকিৎসক-নার্স করোনায় আক্রান্ত' শিরোনামে দৈনিক সমকালে ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (ইউসুফ আলী, রোম থেকে) বলা হয়, 'ইতালিতে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার দু'জন চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন।
এদের একজন জিনো ফাসোলি (৭৩)। তিনি ৪ বছর আগে চিকিৎসক হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে নিজ ইচ্ছায় লোম্বার্দিয়ার উপশহর ব্রেসিয়ার একটি হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার তিনি প্রাণ হারান। এছাড়া ড. লিওনার্দো মার্কি যিনি 'ক্রেমোনা' অঞ্চলের কাজা দি কুরা সান কামিল্লো হাসপাতালের ডিরেক্টর। সোমবার তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।  
প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইতালি। করোনায় ইতালির উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত লোম্বাদিয়ায় উপশহরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সোমবার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 
চীনের চেয়ে ইতালিতে চিকিৎসাকর্মী আক্রান্তের হার দ্বিগুন। এটি বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটিতে। সরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এরপরও প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন সেবাদানকারীরা। ... ইতালির প্রায় ৪৭ শতাংশ আক্রান্ত রোগী বৃহত্তর লোম্বার্দিয়া অঞ্চলের। এ কারণে সরকার এ অঞ্চলটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে করোনার প্রকোপ হ্রাসের চেষ্টা  অব্যাহত রেখেছে।' [https://samakal.com/international/article/200316442]

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩টি প্রশ্ন:
১. কেউ কি বলতে পারবেন, মাস্ক পরার পরও, শরীর ভালোভাবে আবৃত করে ফেলার পরও কেন শুধু সাধারণ মানুষ নয়, চিকিৎসক-নার্সরাও ব্যাপকহারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়?
২. করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে মনে করেই চিকিৎসক-নার্সরা পিপিই ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে। তবু তারা আক্রান্ত হয় কেন?
৩. এতো সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করার পরও চিকিৎসক-নার্সদের ব্যাপকহারে করোনায় আক্রান্ত হওয়া কি এটা প্রমাণ করে না, 'করোনা ছোঁয়াচে নয়, বরং অন্য কিছু?'

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন তখনই, যখন মাথা থেকে এই ধারণা দূর করবেন, করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' নয় এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে না। নয়তো শুধু মাস্ক পরা শুরু করার পর মাস্ক পরিহিত কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতো না।
মাস্ক কি সত্যিই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়? এই প্রশ্নের জবাবে প্রথম যে দুটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়, তার প্রথমটিতে স্বীকার করা হয়, 'সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়'; দ্বিতীয়টিতে স্বীকার করা হয়, 'While face masks are popular, scientists doubt their effectiveness against airborne viruses.'

কিন্তু প্রথমটির শেষে আবার বলা হয়, 'এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারেনা ঠিকঠাক। তাছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।' আরেকটির শেষে বলা হয়, 'Masks may provide some protection to you and others, but because they are loose and made of permeable material, droplets can still pass through.'

উভয় প্রতিবেদনেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে মাস্কের অকার্যকারীতার কথা স্বীকার করার পর আবার মাস্কের অকার্যকারীতার কারণ হিসেবে মাস্কের 'ঢিলেঢালামী'কে দায়ী করা হয়। কিন্তু এ প্রসঙ্গে কারো চিন্তায় ভুলেও এটা আসে না, যার ভয়ে মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কি সত্যিই অস্তিত্বশীল কিনা! কথাটা হঠাৎ করে কিছুটা ধাঁধাপূর্ণ হয়ে গেছে। কথাটা পড়ে অনেকের চোখ হয়তো কপালে উঠে গেছে! বেশি কঠিন করে না বলে সহজ করে বললে বলতে হয়, যার ভয়ে আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি, তা কি সত্যিই হাঁচি-কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার শক্তি রাখে? মাস্কের অকার্যকারীতা চোখের সামনে পরিষ্কার হবার পর এই প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে কেউ একটিবারের জন্যও নতুন করে ভাববার প্রয়োজন মনে না করে মাস্কের ক্ষুদ্র ক্ষদ্র ত্রুটিকে এজন্য দায়ী করেই নিজেকে এবং অন্যকে একটা বুঝ দিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালায়। কোনো উত্তর না পেয়ে এমনও বলা হয়, যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত। এই কথা যারা বলেছেন, তারা কি উহানের চিকিৎসাকর্মীদের এমন কোনো ছবি দেখেননি, যেখানে চিকিৎসাকর্মীরা চোখ সহ পুরো শরীর আবৃত করে রেখেছে?

'করোনাভাইরাস: যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদের কী করতে হবে?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আমি কি মুখে মাস্ক পরবো?
ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশন বলছে: "ভাইরাসটি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ করি না। এগুলো যে খুব একটা কার্যকর, তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এছাড়াও যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তারা মুখে মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।" [https://www.bbc.com/bengali/news-51802294]

'Medical experts have urged people to stop panic buying face masks, warning that such equipment is not an effective way to protect yourself from the fast-spreading coronavirus.

The advice comes at a time of intensifying concern about COVID-19, which has killed more than 3,000 people worldwide since late last year.
The outbreak was first identified in Hubei province, China, where over 90% of the deaths have been reported. More recently, the virus has been spreading at a faster rate outside China than inside the country.'

সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে 'Do face masks work? Medical experts explain how to protect yourself from coronavirus' শিরোনামে ২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Sam Meredith) এই কথাগুলো বলা হয়। [https://www.cnbc.com/2020/03/02/coronavirus-do-face-masks-work-and-how-to-stop-it-from-spreading.html?recirc=taboolainternal]




সময় এসেছে গৎবাঁধা ধারণা ত্যাগ করার। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক পরে এবং আপাদমস্তক শরীর ঢেকেও যখন দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসাকর্মীরাও করোনাভাইরাসের আক্রমণ এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না, তখনও যদি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে বায়ুবাহিত মনে করে বসে থাকা হয় এবং নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব রোগ যে ছোঁয়াচে নয়, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তাহলে মনে হয় না, আর কোনোভাবে কোনো ঘটনা মানুষকে এটা বোঝাতে সক্ষম হবে, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বায়ুবাহিত নয়; নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ ছোঁয়াচে নয়।
বিজ্ঞানের অসংখ্য 'প্রমাণিত সত্য' একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আর কোনো 'প্রমাণিত সত্য' ভুল প্রমাণিত হবে না, এমন কি কোনো কথা আছে? যে 'প্রমাণিত সত্য' নিয়ে নতুন করে ভাববার কথা এখানে বলা হচ্ছে, তা আরো আগে না ভেবে আমরা এ পর্যন্ত কত বড় বড় বিপদে পড়েছি, তা সম্পর্কে একটু ধারণা দিলেই চমকে উঠতে পারে যে কোনো লোক। সে জন্য এই লেখার আরেকটু গভীরে যেতে হতে পারে।


চতুর্থ পরিচ্ছেদ

এবার আমরা একটু দেখে নিই, চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশে ভাইরাসটি কি চীন থেকেই বা চীনে সংক্রমিত মানুষ থেকেই সংক্রমিত হয়েছে?
ইতিপূর্বে অনেকগুলো ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোতে দেখানো হয়েছে, করোনাভাইরাস চীনের বাইরে যেসব দেশে ছড়িয়েছে, সেসব দেশের এমন সব লোকই এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, যারা চীনের উহান থেকে সেসব দেশে গিয়েছিল। তবে এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের আরো কিছু ঘটনা আছে, যেগুলোকে 'মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ' বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:

সিএনএনের ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'These are the countries where novel coronavirus cases have been confirmed worldwide' শিরোনামে প্রকাশিত এবং ২৪ ঘন্টা হালনাগাদকৃত একটি নিবন্ধে (By Eric Cheung, CNN) এ পর্যন্ত চীনের বাইরে কোন দেশে কতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তার একটা পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে। নিবন্ধটিতে বলা হয়, 'China's National Health Commission has confirmed the virus can be transmitted from person to person through "droplet transmission" -- where a virus is passed on due to an infected person sneezing or coughing -- as well as by direct contact.

There are at least 1,100 confirmed cases of novel coronavirus in 29 countries and territories outside mainland China. More than 600 of those cases are linked to the stricken Diamond Princess cruise ship docked in YokohamaJapan.
Eleven people have died outside of mainland China from the virus. Three deaths have been recorded in Japan, including two Diamond Princess passengers. Hong Kong and Iran have recorded two deaths each, with one death each in South Korea, the PhilippinesTaiwan, and France.
Several countries, including the United States and Japan, have evacuated their nationals on flights from Wuhan, capital of Hubei province and the epicenter of the outbreak. The US and other countries have also evacuated passengers from the Diamond Princess.' [https://edition.cnn.com/2020/01/29/asia/coronavirus-cases-worldwide-intl-hnk/index.html]

কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে 'How does coronavirus spread and how can you protect yourself?' শিরোনামে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত এবং ২৪ ঘন্টা হালনাগাদকৃত একটি প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে বলা হয়,
'How is the coronavirus spreading?
The coronavirus - known as COVID-19 - spreads from person to person in close proximity, similar to other respiratory illnesses, such as the flu.
Droplets of bodily fluids - such as saliva or mucus - from an infected person are dispersed in the air or on surfaces by coughing or sneezing.
These droplets can come into direct contact with other people or can infect those who pick them up by touching infected surfaces and then their face.
According to scientists, coughs and sneezes can travel several feet and stay suspended in the air for up to 10 minutes.
It is not yet known how long the virus can survive outside a host but, in other viruses, it ranges from a few hours to months.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/01/coronavirus-spread-protect-200130115539072.html]

এই প্রতিবেদনগুলোতেও করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হবার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। যেমন সিএনএনের নিবন্ধে বলা হয়েছে, 'China's National Health Commission has confirmed the virus can be transmitted from person to person through "droplet transmission" -- where a virus is passed on due to an infected person sneezing or coughing -- as well as by direct contact.'

অপরদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'The 2019-nCoV coronavirus spreads from person to person in close proximity, similar to other respiratory illnesses, such as the flu.
Droplets of bodily fluids - such as saliva or mucus - from an infected person are dispersed in the air or on surfaces by coughing or sneezing.'

হাঁচি, কাশি, শ্লেষ্মা, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে একজনের রোগ আরেকজনের শরীরে ছড়ায় (বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি), এমন ধারণা অনেক আগ থেকেই প্রচলিত থাকার কারণে করোনাভাইরাস একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে চীনসহ সারাবিশ্বে। নিউমোনিয়া, ফ্লু এরকম রোগ কোনোভাবে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে না, এই বিশ্বাসটা মানুষের আগে থেকে থাকলে করোনাভাইরাসের নামই হয়তো এমন হতো না (অবশ্য ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা '2019-nCoV coronavirus' নামটা পরিবর্তন করে নতুন নাম রেখেছে 'COVID-19')। এমনকি চীনের উহানের মানুষ হঠাৎ করে অতিমাত্রায় এবং ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করার পর সবাই আগে খুঁজতে শুরু করতো, কোত্থেকে মানুষ ফুসফুসের এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে? কী কারণে মানুষ এতো ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে? খুঁজতে খুঁজতে একসময় হয়তো প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসতো। কিন্তু 'নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ', আগ থেকে এমন বিশ্বাস প্রচলিত থাকার কারণে যখনই দেখা যায়, বিশ্বের কোথাও একসাথে হাজার হাজার মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে, তখন একই পরিবেশে বাস করা একাধিক ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে আমরা নিশ্চিতভাবে ধরে নিই, এটি একটি ছোঁয়াচে 'ভাইরাস', যা একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পর্যায়ক্রমে সব মানুষকে আক্রমণ করবে। কিন্তু এই ভাবনাটা আমাদের মনে কোনোভাবে আসে না, যেই কারণে একজন  লোক আক্রান্ত হয়েছে, সেই একই কারণে একাধিক লোকও আক্রান্ত হতে পারে; এক জন থেকে আরেকজনে ছড়ানো আবশ্যক নয়। আমরা কারণ না খুঁজে যারা প্রথমে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়াকেই অন্যদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার কারণ বলে মনে করে বসি! শুধু তা-ই নয়, কখনো কখনো মনে করি, প্রথমে আক্রান্ত হওয়া লোকদেরকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করে ফেললেই এই অভিশাপ দূর হয়ে যাবে!

এই লেখার শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগগুলো ছোঁয়াচে নয়। এই ভিন্ন ধারণাটা অনেকে হয়তো হঠাৎ করে শুনে হজম করতে কষ্ট হবে। কিন্তু বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করলে এটা সহজেই এবং নির্ভুলভাবে প্রমাণ করা যাবে। কিভাবে বাস্তবতা যাচাই করতে হবে, তা-ও একই সাথে বলে দেয়া হয়েছে। এভাবে বাস্তবতা যাচাই করে অনতিবিলম্বে এই রোগ দুটোর উপর থেকে 'ছোঁয়াচে' অপবাদটা মুছে ফেলা বিশ্বমানবতার জন্য অতীব জরুরী।


দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন



যেসব ঘটনা থেকে মনে হয় করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে, যদি ছোঁয়াচে না হয়, তাহলে কেন/কিভাবে ছড়িয়েছে? - তা নিয়ে এবার একটু আলোচনা করা যাক:
আমরা জানি, অনেক মানুষকে 'বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়'। আমরা অনেক সময় 'কান নিয়েছে চিলে' শুনে নিজের কান জায়গামতো আছে কিনা, তা না দেখে অন্যের কথা শুনে চিলের পেছনে দৌড়াতে শুরু করি। কিন্তু নিজের কানে হাত দিয়ে দেখি না কান জায়গামতো আছে কিনা! আর গুজবে কান দেয়া এবং গুজবকে সঠিক মনে করে তা ছড়ানোটাও আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়।
করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো সম্পর্কে, বিশেষ করে চীন থেকে অন্য দেশে ছড়ানো সম্পর্কে কিছু সংবাদ ও প্রতিবেদন দেখা যাক আগে:
(১) কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার ওয়েবসাইটে 'Coronavirus: Which countries have confirmed cases?' শিরোনামে প্রকাশিত নিয়মিত হালনাগাদকৃত একটি প্রতিবেদনে বিশ্বের কোন দেশে কত জন এ পর্যন্ত (২১ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তার একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Hundreds of cases have been confirmed elsewhere, with the virus being recorded in at least 26 countries.
Here are the countries that have so far confirmed cases of the new coronavirus:
Australia - 17
Australia has confirmed 17 cases of the virus as of February 21, including two passengers evacuated from the Diamond Princess cruise ship in Japan, according to the Australian government.
Most of the patients arrived in the country from Wuhan or Hubei    province.
Belgium - 1
Belgium said on February 4 that one of nine Belgian citizens repatriated from Wuhan had tested positive for the coronavirus.
Cambodia - 1
Cambodia confirmed its first case of coronavirus on January 27.
Minister of Health Mam Bunheng said the patient was a 60-year-old Chinese national in the coastal city of Sihanoukville.'
[https://www.aljazeera.com/news/2020/01/countries-confirmed-cases-coronavirus-200125070959786.html]

(২) 'করোনাভাইরাসে চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যু ফিলিপাইনে' শিরোনামে দৈনিক মানবজমিনে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে এবার প্রথমবারের মতো চীনের বাইরে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে মারা গেছেন ৪৪ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক। তিনি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ফিলিপাইনে যাওয়ার আগেই ওই ব্যক্তি সংক্রমিত  হয়েছিলেন।'
[https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=211208&cat=8]

(৩) 'করোনাভাইরাসে তাইওয়ানে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের মূল ভূখন্ড থেকে করোনাভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এ ভাইরাসে প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ানে প্রথম একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দ্বীপদেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শিহ-চুং রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।
এতে তিনি বলেন, ষাটের কোঠায় থাকা বৃদ্ধ ওই ব্যক্তির আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ছিলেন।
কোভিড-১৯ নামে নভেল করোনাভাইরাসবাহী নতুন এই রোগে তাইওয়ানে এর আগে কেউ মারা যায়নি। তবে সব মিলে আক্রান্ত হয়েছে ২০ জন।
এর আগে চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হংকং, ফিলিপিন্স, জাপান ও ফ্রান্সে একজন করে মৃত্যু হয়।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৬৬৫ জন ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৪২ জনের। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬৮ হাজার।
এর মধ্যে একদিনেই আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৪৩ জন মানুষ।' [https://www.jugantor.com/international/279109]

(৪) 'Taiwan reports first death from coronavirus' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'A taxi driver has died from the coronavirus in Taiwan, marking the first such death on the island and the fifth fatality outside mainland China from an epidemic that has curbed travel and disrupted global supply chains.
The health minister, Chen Shih-chung, said during a news conference on Sunday that the deceased was a 61-year-old man who had diabetes and hepatitis B. Taiwan has to date reported 20 confirmed cases.
The man who died had not travelled abroad recently and was a taxi driver whose clients were mainly from Hong Kong, Macau and mainland China, the minister said. One of his family members was also confirmed to have the virus.
The pair constituted Taiwan’s first local transmission cases, the minister said, adding that the authorities were trying to find out the source. “So far, we are not able to gather his contact history, so we are actively making investigations, hoping to find out the source of the contraction,” Chen said.'
[https://www.theguardian.com/world/2020/feb/16/taiwan-reports-first-death-from-coronavirus]

(৫) 'Taiwan Scours Dead Taxi Driver’s Data to Trace Coronavirus Path' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ব্লুমবার্গে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, যা তৈরি করেন By Samson Ellis. সেখানে বলা হয়, 'Health authorities in Taiwan are scouring travel histories, phone records and security camera footage in an effort to map out everyone who came into contact with a taxi driver who became Taiwan’s first confirmed death from the coronavirus.
The victim, a man in his 60s from central Taiwan who died Saturday, had not recently traveled overseas and had no recorded contact with any of the 19 other people diagnosed with the coronavirus in Taiwan, according to a statement from Taiwan’s Centers for Disease Control.'  [https://www.bloomberg.com/news/articles/2020-02-17/taiwan-scours-dead-taxi-driver-s-data-to-trace-coronavirus-path]

(৬) 'করোনাভাইরাসে ইউরোপের মধ্যে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে প্রথম চীনের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। উহান রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর এশিয়ার বাইরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে প্রথমবারের মতো আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়েছে।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাগনেস বুজিন বলেন, হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ১৬ জানুয়ারি ফ্রান্সে আসেন। ২৫ জানুয়ারি তাকে প্যারিসের হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়।
এর আগে চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে কেবল তিনটি দেশে - হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়।' [https://www.jugantor.com/international/278677]

(৭) 'করোনা ভাইরাস : চীনে মৃত ৪১, ফ্রান্সে মিলল ৩ আক্রান্ত' শিরোনামে সময় টিভির ওয়েবসাইটে ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এদিকে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তির শরীরে প্রাণঘাতী ওই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আক্রান্তরা সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছিলেন।' [https://www.somoynews.tv/pages/details/194571]

(৮) 'These are the countries where novel coronavirus cases have been confirmed worldwide' শিরোনামে সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিয়মিত হালনাগাদকৃত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'A Chinese tourist who tested positive for coronavirus has died in France, according to a statement from French Health Minister Agnes Buzyn, confirmed to CNN by the French Health Ministry.
This is the first person to die from coronavirus in Europe.'
[https://edition.cnn.com/2020/01/29/asia/coronavirus-cases-worldwide-intl-hnk/index.html]

(৯) 'চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হংকংয়ের নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'হংকংয়ে করোনাইভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর চীনের বাইরে এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দুজন মারা গেলেন। রোববার একজন মারা গেছেন ফিলিপাইনে।
মঙ্গলবার ভাইরাসটির তীব্র সংক্রমণের কারণে হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যাক্তির নাম পরিচয় জানানো হয়নি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মৃত এই ব্যক্তি জানুয়ারিতে চীনের উহান শহরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানকেই নতুন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।' [https://www.jugantor.com/international/274816]

(১০) 'হংকংয়ে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয়জনের মৃত্যু' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক সমকালে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'হংকংয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার হংকংয়ের প্রিন্সেস মার্গারেট হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এ নিয়ে হংকংয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হলো।
হাসপাতালের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৭০ বছর বয়সী ওই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৭টায় তার মৃত্যু হয়। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।
ওই ব্যক্তি হংকংয়ের কাওয়াই চুং এলাকার একটি বাড়িতে একাই বাস করতেন। ২ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হওয়ার ১০ দিন পর তাকে প্রিন্সেস মার্গারেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করা হয়, তখনই তার অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল।
২২ জানুয়ারি তিনি একদিনের সফরে চীনের মূল ভূখন্ডে গিয়েছিলেন। হংকংয়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা ঘটে ৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান।' [https://www.samakal.com/international/article/200213042]

(১১) নিউইয়র্ক টাইমসে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'Second Hong Kong Coronavirus Death as It Awaits Stranded Cruise Passengers' শিরোনামে রয়টার্সের সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 'Hong Kong reported its second death from the new coronavirus on Wednesday as authorities drew up plans to fly home hundreds of city residents stranded on a virus-stricken cruise ship in Japan.
The 70-year-old man who died had underlying illnesses and was one of 62 confirmed cases in the Chinese-ruled city, a Princess Margaret Hospital spokeswoman said.' [https://www.nytimes.com/reuters/2020/02/18/world/asia/18reuters-china-health-hongkong.html]

(১২) বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে 'করোনাভাইরাসে ২ ইরানি নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানের দুই নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা (আইআরএনএ) এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে সংস্থাটি নিহত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি।
স্থানীয় সময় বুধবার ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলিরেজা বাহাবজাদেহের বরাত দিয়ে আইআরএনএ জানায়, নিহত দুইজনই করোনা ভাইরাসের জীবাণু বহন করছিলেন। তারা ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম নামক এলাকার বাসিন্দা। এর বাইরে নিহতদের বিষয়ে আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে বুধবারই ইরানের স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির আরেক বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানায়, করোনাভাইরাসে ইরানের দুই জন নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। পরে কর্মকর্তারা আক্রান্ত দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তারা বয়স্ক ব্যক্তি।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/02/20/503739]

(১৩) 'Two die of coronavirus in Iran, first fatalities in Middle East' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় "Two elderly people have died due to coronavirus in the city of Qom, south of Tehran," Alireza Vahabzadeh, an adviser to Iran's health minister, told Al Jazeera on Wednesday.
"The two victims had suffered acute lung infections due to their infection with the coronavirus," he added.
Earlier in the day, Kianoush Jahanpour, spokesman for Iran's ministry of health, said the two people had tested positive for the virus in preliminary results and died due to immune deficiencies and old age.
There was no immediate information about the gender and the exact age of the victims.'
[https://www.aljazeera.com/news/2020/02/die-coronavirus-iran-fatalities-middle-east-200219171007605.html]

(১৪) 'Coronavirus: First deaths reported in Middle East' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জার্মানের সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়, 'The deadly COVID-19 virus claimed the lives of two people in Iran, in the first deaths to be reported in the Middle East. Tehran previously denied reports that people in the country were infected with the virus.
Two people in Iran have died after testing positive for the new coronavirus, COVID-19, Iranian officials said on Wednesday.
Iran's Health Ministry said that the two patients were Iranian citizens and residents of the city of Qom, state news agency IRNA reported.
Both of the patients were reportedly elderly who had health issues that impacted their immunity.
"Following the recent cases of chronic respiratory diseases in Qom, two of the patients tested positive in preliminary tests," ministry spokesman Kianoush Jahanpour said, according to IRNA.
"Unfortunately both passed away in the intensive care unit due to old age and issues with their immune system."
Qom is a center for Islamic studies that draws scholars from across Iran and other countries. The two patients who died, however, were not known to have left Iran.
Prior to Wednesday's deaths, the Iranian government denied reports about people being infected with the virus in the country.'    [https://www.dw.com/en/coronavirus-first-deaths-reported-in-middle-east/a-52436966]

(১৫) ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে 'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Two Iranians have died in hospital after testing positive for the new coronavirus in the central city of Qom, the head of the city's University of Medical Sciences told Iran's Mehr news agency, saying the two had died of "respiratory illness".
Separately, health ministry official Kianush Jahanpur said in a post on Twitter that "both patients died in ICU due to age and immune system deficiency".
Iran had confirmed the two cases - the first in the country - earlier on Wednesday.'
[https://www.aljazeera.com/news/2020/02/cloneofcloneofcloneofcloneofcloneof2002152244372-200220231446112.html]

(১৬) 'করোনাভাইরাসে ইরানের কোম শহরে ৫০ জনের মৃত্যু!' শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাসে ইরানের এক কোম শহরেই ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। দেশটির আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা ইলনার বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ইনডিপেনডেন্ট, এবিসি নিউজ ও আল-আরাবিয়া সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র কোম শহরে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাসে ১২ জনের মৃত্যুর এবং ৬৪ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চীন সফরকারী কোমের অধিবাসী একজন ইরানি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এ ভাইরাসটি ইরানে ছড়িয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধারণা করছে। কোমে এরই মধ্যে সবার বাড়িতে মাস্ক ও জীবাণুমুক্ত-করণ উপাদান পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।' [https://www.kalerkantho.com/online/world/2020/02/24/878371]

(১৭) 'করোনাভাইরাস: চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লো কেন?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীনের বাইরে ২৪ টি দেশে এ পর্যন্ত ৪৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই জন।
বৃহস্পতিবার জাপানে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘোষণা এসেছে - টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাগাওয়া শহরের বাসিন্দা ওই নারীর বয়স ছিল প্রায় ৮০ বছরের মতো।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51499092]

(১৮) 'Elderly woman dies of coronavirus in Japan' শিরোনামে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে যুক্তরাজ্যের ডেইলী মেইলের অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'And, today, an 80-year-old woman in Japan has died with the coronavirus to become the country's first recorded victim, taking the toll to 1,370.
The death makes Japan just the third place outside of China to declare someone has died from the virus, along with Hong Kong and the Philippines.
At least 236 people have been officially diagnosed with the virus, now known as SARS-CoV-2, in Japan since its first infection on January 16.
Almost all of these, however – 219 at latest count – have been among passengers on a cruise ship which is quarantined in the water off a port near Yokohoma.
Health minister Katsunobu Kato confirmed the woman's death today, February 13. She had been living in the Kanagawa region close to Tokyo.
Mr Kato said that authorities are not certain that the woman was killed by the virus, but that she is the first person to die after testing positive for the infection.
'The relationship between the new coronavirus and the death of the person is still unclear,' he said at a government briefing.' [https://www.dailymail.co.uk/health/article-7999851/Elderly-woman-dies-coronavirus-Japan.html]

(১৯) জাপানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা কিয়োডো নিউজের ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে '2 elderly passengers of virus-hit ship die in Japan' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Two elderly Japanese passengers from the Diamond Princess, a coronavirus-hit cruise ship quarantined in Yokohama, have died, the health ministry said Thursday.
The deaths of the 87-year-old man from Kanagawa Prefecture and the 84-year-old woman from Tokyo raised the number of fatalities in Japan of people infected with the COVID-19 virus to three, the Ministry of Health, Labor and Welfare said.
The man, who had bronchial asthma and other pre-existing illnesses, was hospitalized on Feb. 11 after displaying symptoms such as fever and breathing difficulties, according to the ministry. He tested positive for the new coronavirus on Feb. 12.
The woman broke out in a fever on Feb. 5 but was not initially tested for the virus. She was finally hospitalized on Feb. 12 due to the persistent fever and other symptoms, and was confirmed to be infected with the virus the following day, the ministry said.
She had no pre-existing conditions and died on Thursday of pneumonia believed to be caused by the virus, it said.'
[https://english.kyodonews.net/news/2020/02/24c3b1bf4030-breaking-news-2-elderly-passengers-of-virus-hit-ship-died-japan-govt-source.html]

(২০) 'Japan Reports 2 Deaths Among Cruise Ship Passengers' শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, 'Japan records two deaths of passengers who had been aboard a quarantined cruise ship.
Two passengers from the cruise ship quarantined in Japan have died after contracting the new coronavirus, the first deaths among the more than 600 people on board who have been infected,  a Japanese health ministry official said on Thursday.
The two people, both Japanese, were an 87-year-old man and an 84-year-old woman, the Japanese broadcaster NHK reported. They were taken to hospitals on Feb. 11 and 12, and both had underlying health issues, the broadcaster said. No other information about them was immediately available.
Hundreds of passengers have begun disembarking from the ship, the Diamond Princess, after Japan declared the two-week quarantine over, even as officials have continued to report dozens of new cases on the vessel.' [https://www.nytimes.com/2020/02/19/world/asia/china-coronavirus.html]

(২১) 'Coronavirus updates: South Korea reports big jump in cases, virus spreading in Chinese prisons' শিরোনামে এনবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The first person confirmed to have contracted the virus was believed to have fallen ill after meeting a friend who had recently returned from China. Residents of the northern towns of Codogno and Castiglione d’Adda were being urged to stay at home as medical tests continued. — Reuters'
[https://www.nbcnews.com/news/world/coronavirus-update-south-korea-reports-big-jump-cases-virus-spreading-n1140201]

(২২) দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা Yonhap News Agency -এর ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'S. Korea reports 1st death from virus; cases soar to 104' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'South Korea reported its first death from the new coronavirus on Thursday, with 53 new cases of the coronavirus confirmed in a single day to bring the total here to 104.
The 63-year-old deceased, who had been bedridden for more than 20 years at a hospital in southeastern city of Cheongdo, died from pneumonia on Wednesday. Confirmation of his infection was discovered as the health authorities investigated all patients at the hospital where some were also confirmed to be infected.
The health authorities are working to determine the exact cause of   the       patient's           death.'
[https://en.yna.co.kr/view/AEN20200220002056320]

(২৩) 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এক নাগরিক মারা গেছেন। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমন খবর দিয়েছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এটাই প্রথম কোনো দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা।
তবে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। আবার বলা হচ্ছে, অন্য কোনো কারণেও মারা গিয়ে থাকতে পারেন ওই ব্যক্তি। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
এর আগে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি দেশটির দায়েগু শহরের এক চার্চে যান। এরপর হাসপাতালেও যান। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪ জন। এমন পরিস্থিতিতে আড়াই লাখ মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরের মেয়র।
দায়েগুর মেয়র কোয়ান ইয়ং-জিন বলেন, শহরটি নজিরহীন সঙ্কটের মুখোমুখি। কারণ দায়েগুতে ৪৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা স্থানীয় একটি চার্চে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শহরটিতে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই সঙ্কট মোকাবিলায় শহরটির বাসিন্দাদের নিজ বাড়ি থেকে বাইরে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' [https://www.kalerkantho.com/online/world/2020/02/20/876788]

(২৪) 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় এক দিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়েছে ভয়াবহ করোনাভাইরাস। দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এক দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির একটি হাসপাতালে অন্য অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641278]

(২৫) 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার ভয়ংকর ছোবল' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাবের স্থান দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আজ সোমবার দেশটি জানিয়েছে, আরও ১৬১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন সাতে পৌঁছেছে। এর আগে গত শনিবার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক দিনে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, থাইনাম নামের একটি হাসপাতাল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর থেগুরের ধর্মীয় এক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
থেগু ও ছংগদুর কাছাকাছি হাসপাতালটিকে 'স্পেশাল কেয়ার জোন' ঘোষণা করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে বয়স্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
করোনাভাইরাসের নতুন প্রাদুর্ভাবের স্থান দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আজ সোমবার দেশটি জানিয়েছে, আরও ১৬১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন সাতে পৌঁছেছে। এর আগে গত শনিবার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক দিনে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, থাইনাম নামের একটি হাসপাতাল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর থেগুরের ধর্মীয় এক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
থেগু ও ছংগদুর কাছাকাছি হাসপাতালটিকে 'স্পেশাল কেয়ার জোন' ঘোষণা করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে বয়স্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641416]

(২৬) লাইভ সায়েন্স ডটকম এর ওয়েবসাইটে ''Superspreader' in South Korea infects nearly 40 people with coronavirus'  শিরোনামে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Nicoletta Lanese - Staff Writer) বলা হয়, 'Update (Sunday, Feb. 23): The number of coronavirus cases in South Korea has soared to about 602, according to The New York Times. More than half of those cases involve members of, or those somehow linked to, the religious sect, the Shincheonji Church of Jesus, where a so-called superspreader infected at least 37 people last week.
A so-called superspreader infected at least 37 people at her church with the new coronavirus, and dozens of additional worshippers are also showing symptoms of the disease, called COVID-19, according to news reports.
The 61-year-old woman attends the Shincheonji Church of Jesus the Temple of the Tabernacle of the Testimony in Daegu, South Korea, according to the international news outlet AFP. The city, located in the southern part of the country, is home to about 2.5 million people. The woman, called "Patient 31" by Korea's Centers for Disease Control and Prevention, developed a fever on Feb. 10 and attended four church services before being diagnosed with COVID-19.
Despite running a fever, the woman twice refused to be tested for the coronavirus, as she had not recently traveled abroad, according to The Guardian. So far, she and 37 other members of the church have tested positive for the novel coronavirus, called SARS-CoV-2, and 52 additional churchgoers have shown symptoms of infection but have not yet been tested. (SARS-CoV-2 is the name of the coronavirus that causes COVID-19.)
Authorities described the outbreak as a "super-spreading event," as the lone woman transmitted the infection to an unusually high number of people, according to Reuters. Current estimates suggest that a single person with the novel coronavirus spreads the infection to about 2.2 additional people, on average. The surge of infection at the church brings the total number of confirmed cases in South Korea to 104; one death associated with the virus has occurred in the country so far.' [https://www.livescience.com/coronavirus-superspreader-south-korea-church.html]

(২৭) 'ইতালিতে করোনাভাইরাসে ১ ব্যক্তির মৃত্যু, ১০ শহর বন্ধ' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার পর ১০টি শহর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসমাগমস্থলে যাওয়া। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১৭তে পৌঁছেছে।
দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ইতালির উত্তরাঞ্চলের লম্বার্ডি এলাকায় ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শহরের জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্কুল, বার, চার্চ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি। যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কেউ চীন সফর করেননি।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641064]

(২৮) 'উহানের মতো 'ভুতুড়ে নগরী'তে পরিণত ইতালির যে শহর' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রাস্তাঘাটে কোনো যানবাহন নেই। ফুটপাতে নেই কোনো পথচারীর হাঁটার শব্দ। দোকানপাটও সব বন্ধ। একেবারে পিনপতন নীরবতার শহরে পরিণত ইতালির কডোঙ্গো।
এ যেন আরেক উহান। বলতে গেলে উহানের মতো 'ভুতুড়ে শহরে' পরিণত হয়েছে ইতালির কডোঙ্গো।
উত্তর ইতালির লোদিপ্রদেশের ছোট্ট শহর কডোঙ্গো। সম্প্রতি শহরটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত দুই রোগীর মৃত্যু হয় সেখানে। এ ছাড়া ৫০ জনের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস আতঙ্কে নিশ্চুপ হয়ে গেছে শহরটি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যাচ্ছে না। বের হয়েও লাভ নেই কোনো। কারণ করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে শহরের স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, শপিংমলের অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাওলা নামের এক বাসিন্দা বলেন, 'কডোঙ্গো এখন একটা ভুতুড়ে শহর। করোনাভাইরাস আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি করেছে। মানুষজন তাদের ঘরে ঘরে বন্দি, কোনো মানুষ রাস্তায় নেই। এমনটি বেশি দিন চললে করোনায় নয়, না খেয়েই মরতে হবে আমাদের।'...
ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি।
যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কেউ চীন সফর করেননি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেন, অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার সাবধানতা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানান তিনি।' [https://www.jugantor.com/international/281931]

(২৯) 'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত নিয়মিত হালনাগাদকৃত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Six coronavirus cases discovered in north Italy, hundreds to be tested.
Six people have tested positive in Italy for coronavirus, the northern Lombardy region said, in the first known cases of local transmission of the potentially deadly illness in the country.
Officials told residents from three small towns some 60km (40 miles) southeast of Italy's financial capital Milan, to stay at home as doctors tested hundreds of people who might have come into contact with the six coronavirus sufferers.
None of the six was believed to have visited China.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/02/cloneofcloneofcloneofcloneofcloneof2002152244372-200220231446112.html]

(৩০) 'Coronavirus maps and charts: A visual guide to the outbreak' শিরোনামে By The Visual and Data Journalism Team কর্তৃক তৈরিকৃত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'Meanwhile in Italy, the country's authorities have announced a series of measures to try to halt the virus's spread. It is not yet clear how it entered the country.
Eleven towns in northern Italy at the centre of the outbreak - home to a total of 55,000 people - have been quarantined. Schools, universities and cinemas have been closed and several public events cancelled.
The UK has advised against travelling to the region.' [https://www.bbc.com/news/world-51235105]

(৩১) 'করোনাভাইরাস: ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪০০' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইইউর স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকাইডস, রোমে ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পরে সাংবাদিকদের বলেন: "এটি উদ্বেগজনক একটি পরিস্থিতি, তবে আমাদের অবশ্যই আতঙ্কিত হয়ে হালা ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।"
"এই ভাইরাসটি সম্পর্কে এখনও অনেক বিষয় অজানা রয়ে গেছে। বিশেষত এর উৎস এবং এটি কীভাবে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।" [https://www.bbc.com/bengali/news-51655052]

(৩২) 'New coronavirus cases of unknown origin found on West Coast' শিরোনামে এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By ROBERT JABLON, LISA BAUMANN and ANDREW SELSKY) বলা হয়, 'Health officials in California, Oregon and Washington state worried about the novel coronavirus spreading through West Coast communities after confirming three patients were infected by unknown means.
The patients — an older Northern California woman with chronic health conditions, a high school student in Everett, Washington and an employee at a Portland, Oregon-area school — hadn’t recently traveled overseas or had any known close contact with a traveler or an infected person, authorities said.' [https://abcnews.go.com/US/wireStory/coronavirus-cases-unknown-origin-found-west-coast-69301250]

(৩৩) 'করোনাভাইরাস: গত ২৪ ঘন্টায় বিশ্ব-মহামারী ঠেকানোর সুযোগ কি আরও কমে গেছে?' শিরোনামে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিবিসির মেডিক্যাল করেসপন্ডেন্ট ফারগাস ওয়ালশ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান এবং ইটালিতে করোনাভাইরাসের যে সার্বিক অবস্থা, তাকে একটি বিশ্ব-মহামারীর প্রাথমিক ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
"এই প্রত্যেকটি দেশেই আমরা দেখছি করোনাভাইরাস এমনভাবে ছড়াচ্ছে যার সঙ্গে চীনের কোন সম্পর্ক নেই। ইরানের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ সেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন একই সঙ্গে কয়েকটি শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। লেবাননে যে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেটিও ইরান থেকে ফেরা এক মানুষের মাধ্যমে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।'' [https://www.bbc.com/bengali/news-51615567]

(৩৪) 'করোনাভাইরাস: প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে বলে হুঁশিয়াারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' শিরোনামে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কী বলেছেন?
ডা.  টেডরস বলেন, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা "তুলনামূলকভাবে কম" কিন্তু সংক্রমণের ধরণ উদ্বেগজনক।
"যে সব সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের সাথে কোন যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ প্রাদুর্ভাবের শিকার এলাকায় ভ্রমণ করার কোন উল্লেখ নেই অথবা আগে কোন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসারও কোন উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না সেসব সংক্রমণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে," তিনি বলেন।
ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা "খুবই উদ্বেগজনক", তিনি বলেন।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51596145]

(৩৫) 'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'WHO chief Ghebreyesus in Geneva said he was concerned about cases outside China with 'no epidemiological link'.
"Although the total number of COVID-19 cases outside of China remains relatively small, we are concerned about the number of cases with no clear epidemiological link, such as travel history to China or contact with a confirmed case," he told reporters during a media briefing.
The WHO chief said he was concerned about the potential for COVID-19 to spread in countries with "weaker health systems".'
[https://www.aljazeera.com/news/2020/02/cloneofcloneofcloneofcloneofcloneof2002152244372-200220231446112.html]

(৩৬) 'What is coronavirus and what are the symptoms?' শিরোনামে বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের সংবাদদাতা জেমস গালাঘর কর্তৃক তৈরিকৃত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 'How fast is it spreading?
Thousands of new cases are being reported each day. However, analysts believe the true scale could be 10 times larger than official figures.
Outbreaks have now occurred in South Korea, Italy and Iran, raising fears that it could become a pandemic. A pandemic is declared when an infectious disease threatens different parts of the world simultaneously.
The WHO has said it is concerned about the number of cases with no clear link to China or other confirmed cases. It has said the window of opportunity to contain the virus was "narrowing".
With colds and flu tending to spread fastest in the winter, there is hope the turning of the seasons may help stem the outbreak.
However, a different strain of coronavirus - Middle East respiratory syndrome - emerged in the summer, in Saudi Arabia, so there's no guarantee warmer weather will halt the outbreak.' [https://www.bbc.com/news/health-51048366]

(৩৭) 'করোনাভাইরাস ছড়ানোর ধরন উদ্বেগজনক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে পরিষ্কার যোগসূত্র না থাকা রোগী বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজন মারা যাওয়ার ঘটনার পরপর ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুসের কাছ থেকে এ মন্তব্য এল। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চারজনের মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটল।
কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা বা চীন সফর না করেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইরানে নতুন করে সংক্রমণ ঘটা ও মৃত্যু ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।
তবে টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, চীনসহ অন্যান্য দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর এখনো সুযোগ রয়েছে। সম্ভাব্য মহামারি ঠেকাতে সব দেশকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি মনে করেন, যেসব দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বল, সেখানে এ রোগের বিস্তার নিয়ে তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641065]

(৩৮) 'What is coronavirus and what should I do if I have symptoms?' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Sarah Boseley, Hannah Devlin and Martin Belam) বলা হয়, 'Is the outbreak a pandemic and should we panic?
No. A pandemic, in WHO terms, is “the worldwide spread of a disease”. The spread of the virus outside China is worrying but not an unexpected development. The WHO has declared the outbreak to be a public health emergency of international concern. The key issues are how transmissible this new coronavirus is between people, and what proportion become severely ill and end up in hospital. Often viruses that spread easily tend to have a milder impact. Generally, the coronavirus appears to be hitting older people hardest, with few cases in children.' [https://www.theguardian.com/world/2020/feb/29/what-is-coronavirus-what-should-i-do-symptoms]

প্রথম প্রতিবেদনে চীনের বাইরে কোন দেশে কতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে, তাদের পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে (প্রতিবেদনটি প্রায় প্রতিদিন হালনাগাদ করা হচ্ছে)। এর পরের প্রতিবেদনগুলো বিশেষ করে ঐ সব দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানো সম্পর্কে, যেসব দেশে করোনাভাইরাসে মানুষ শুধু আক্রান্তই হয়নি, বরং এক বা একাধিক মানুষ মারাও গেছে। চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের ঘটনা জানাজানি হবার পর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে এই নিবন্ধে আলোচনা করা হতে পারে। তবে কখন এই নিবন্ধ লেখা শেষ হয়, বলা যাচ্ছে না। কারণ- ১. এই লেখা শুরু করার পর এ পর্যন্ত অনেকগুলো ব্যক্তিগত কাজের 'উপদ্রব' দেখা দিয়েছে, যেমনটা অন্যসময় খুব কম হয়। সামনে আরো দেখা দিতে পারে, ইতিহাস এটাই পূর্বাভাস দেয়! ২. লেখালেখি আমার কোনো পেশা নয়, সময়-সুযোগ পেলে বা বাড়তি সময় পেলে লেখালেখি করি, লেখালেখিকে কিছু সময় দেয়ার চেষ্টা করি। ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে লেখালেখির প্রতি আমার ঝোঁক। বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো আমার লেখাকে তেমন পাত্তা দেয় না, চার-পাঁচটা লেখার মধ্যে ১টা প্রকাশ করে। দু'একটা পত্রিকা আছে, আমার একটা লেখাও এখনো পুরোপুরি প্রকাশ করেনি। এখনো মানুষেরও কোনো কাজে আসেনি আমার কোনো লেখা। কোনো লেখা এখনো স্বীকৃতিও পায়নি। লেখালেখি করে এখনও কোনো অর্থও উপার্জিত হয়নি। অবশ্য উপার্জনের চিন্তাটাও ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে, জীবনের প্রতি আগ্রহ দিন দিন কমে যাওয়ার কারণে। জীবনের প্রতিটা 'ভবিষ্যৎ-মুহূর্ত' অনিশ্চয়তায় ভরা না হলে জীবনের প্রতি আগ্রহ হয়তো কমতো না। ৩. চাকরিসহ প্রাত্যহিক জীবনের অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলোর পেছনে চলে যায় দিনের বড় একটা অংশ। কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথেও প্রতিদিন ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের মতো সময় খরচ হয়ে যায়। এগুলো এড়াবার কোনো সুযোগ নেই। শুধু ঘুমের সময় থেকে কিছুটা সময় ‘ধার’ নিয়ে লেখাটা চালিয়ে যেতে পারছি। নয়তো এখনো হয়তো এই লেখার একটা পরিচ্ছেদ লেখাও শেষ হতো না। বিগত কয়েকদিন যেভাবে ঘুমকে ঠকাচ্ছি, বিগত দশ বছরে এরকম আর ঠকানো হয়নি। দিনে কষ্ট হচ্ছে, তবু ঘুমকে ঠকিয়েই যাচ্ছি। ইচ্ছা আছে, লেখাটা যদি ভালোয় ভালোয় শেষ হয়, ঘুমকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করবো। আরো কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, সব কিছু বলা যায় না, কিছু রহস্য রেখে দিতে হয়। (৪) বর্তমান ঘটনা কোনে দিকে মোড় নেয়, কেউ জানে না।

বলে রাখছি, পৃথিবীতে এসেছি ৪০ বছর হয়ে গেলো। এখনো আমার দ্বারা মানবজাতির কোনো সেবা হয়নি। সেই ঘাটতি পূরণ বা দায় শোধের জন্যেই এই লেখার প্রচেষ্টা। তবে লেখাটা সেবা হিসেবে তখনই গণ্য হবে, যখন একে গ্রহণ করা হবে। আমি দেখেছি, আমার অনেক লেখা আমাদের দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোও প্রকাশ করতে চায় না ওদের অনেক লিখিত ও অলিখিত নীতিমালা থাকার কারণে। একটা অলিখিত নীতি হয়তো এমন আছে, অপরিচিত এবং বড় পদবীহীনদের লেখা কোনোভাবে অগ্রাধিকার পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা এরকম পদবীধারীদের কোনো লেখা হাতে আসামাত্র প্রকাশ করতে হবে, দু'বার ভাববারও দরকার নেই!
এটা দেশীয় প্রেক্ষাপট। আর আন্তর্জাতিক কিছু প্রেক্ষাপটও রয়েছে। কিছু কিছু দেশে যেভাবে সবাই সবাইকে মূল্যায়ন করে, প্রত্যেকে অন্যের কথা শোনার চেষ্টা করে, সব দেশে এমন নয়। অনেকে কারো কথা শোনার আগে দেখে নেয়, সে কোন প্রজাতির লোক, তার বর্ণ কী, এই বিষয়ে তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে কিনা বা পিএইচডি আছে কিনা, সে কোন ধর্মের লোক, সে কোন ভাষায় লিখেছে, এসব। এমনটা করে করে মানবজাতি শুধু ক্ষতিগ্রস্থই হচ্ছে, পশ্চাৎপদই থেকে যাচ্ছে। পৃথিবীতে মানুষে মানুষে অনেক বৈষম্য দূর করা যাচ্ছে না আমাদেরই গোঁড়ামী ও হীনমন্যতার কারণে।
এরকম একটি নিবন্ধ তৈরি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, ফেসবুকে।

কেন এই লেখার ইচ্ছা জাগলো মনে? কারণ দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত পড়তে গিয়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভিন্ন কিছু তথ্য মনের দরজায় নাড়া দেয়। মনে হয়, এটা তো প্রকৃতপক্ষে ভাইরাস নয়, তবু ভাইরাস ভেবে সবাই অস্থির হচ্ছে, পাগলের মতো চারদিকে ছোটাছুটি করছে, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অনেককে গোরস্থানের মতো কোয়ারেন্টাইনে জীবন্ত প্রোথিত করে রাখা হচ্ছে, এদের কথা কেউ শুনতে চাচ্ছে না, এরা নিজেদের জীবনকে অভিশপ্ত মনে করছে, সর্বোপরি কোটি কোটি মানুষের জীবনে ভয়াল অন্ধকার নেমে এসেছে। লেখা শুরু করার পর এই সব ভাবনা যখন মাথায় আসে, তখন মনে হয় দুই-তিন দিনের মধ্যে লেখাটা শেষ করে ফেলি। কিন্তু যতোই তাড়াহুড়ো করতে যাই, ততোই পিছিয়ে পড়ি, বিভিন্ন ঝামেলা এসে সামনে পড়ে। আবার ভাবি, তাড়াহুড়ো করে লিখে শেষ করলেও যদি লেখাটা অন্য অনেকগুলো লেখার মতো সবার কাছে গুরুত্বহীন মনে হয়, সম্পাদক-প্রকাশকরা যদি চারআনা দামও না দেয়, এতো কষ্ট করে লিখে কী লাভ হবে! এটা ভাবনায় চলে এলে লেখাটার প্রতি আগ্রহ কমে যেতো। তবে শুরু থেকে একটি চিন্তা আমাকে কখনোই পুরোপুরি থেমে যেতে দেয়নি। আগে শুধু আমার নিজের জানা হোক, শুধু আমার কাছে পরিষ্কার হোক, করোনাভাইরাস কি আমাকেও আক্রমণ করতে ধেয়ে আসছে, আমারও কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? 'ভাইরাস', 'ভাইরাস' বলে যেভাবে সারা বিশ্বে চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে, আমারও কি ভয় পাওয়া দরকার? এই 'আমার' কখনো কখনো আক্ষরিক অর্থে শুধু 'আমি' থাকে না, 'আমার' এর মধ্যে ঢুকে যায় আমার পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনও। কখনো আবার 'আমার' এর মধ্যে ঢুকে যায় আমিসহ পৃথিবীর সব মানুষ। এটা কি একজন মানুষের ভুল?
এই ভাবনা থেকে লেখাটা চালিয়ে যাবার চেষ্টা করতে থাকি অনেক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে, ঘুম কমিয়ে শরীরকে কষ্ট দিয়েও। দেখা যাক, কোথায় গিয়ে শেষ হয়!
শেষ হতে হতে নতুন করে কিছু ঘটলে বা ভাইরাসটি নতুন দিকে মোড় নিলে লেখাটাও মোড় নিতে পারে এবং সম্ভাব্য নতুন দিকবদলের ভিত্তিতে কোনো তথ্য পেলে সম্ভব হলে তা-ও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে এখানে, সে বিষয়েও আলোচনা করা হতে পারে।
উপরের প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখিত সবগুলো ঘটনার বিবরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে এটা পরিষ্কার হবে, চীনের বাইরে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের অধিকাংশই চীনের উহান থেকেই ফিরেছিল। উহানে থাকতেই তারা রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। উহান থেকে আক্রান্ত হয়ে অন্য দেশে গিয়ে মারা গেছে মাত্র। ইঁদুরের মতো। যেখানে ইঁদুরের উৎপাত বেশি, সেখানেই ইঁদুর মারার ঔষধ দেয়া হয়। কিন্তু ঔষধ খেয়ে সব ইঁদুর কি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়? কিছু ইঁদুর ঘটনাস্থলে প্রাণ না হারিয়ে অন্য জায়গায় গিয়েও প্রাণ হারায় কখনো কখনো।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দুই মাস শেষ না হতেই (ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের পর) চীনের বাইরে ইতালী, ইরান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর নতুন আরো কিছু দেশের মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে দায়ী করতে শুরু করা হয় এই তিনটি দেশের সাথে যে কোনো রকম সম্পৃক্ততাকে।
বিষয়টা যথাসম্ভব পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য আগে উপরের প্রতিবেদনগুলোর 'নিচে দাগ দেয়া' অংশগুলোতে আবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক:

১. ফিলিপাইন
১.১ 'করোনাভাইরাসে চীনের বাইরে প্রথম মৃত্যু ফিলিপাইনে' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বাইরে ফিলিপাইনে মারা গেছেন ৪৪ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক। তিনি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন। (২নং)

২. তাইওয়ান
২.১ 'করোনাভাইরাসে তাইওয়ানে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  ষাটের কোঠায় থাকা বৃদ্ধ ওই ব্যক্তির আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ছিলেন। (৩নং)
২.২ 'Taiwan reports first death from coronavirus' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, the deceased was a 61-year-old man who had diabetes and hepatitis B. ...
The man who died had not travelled abroad recently and was a taxi driver whose clients were mainly from Hong Kong, Macau and mainland China, the minister said. One of his family members was also confirmed to have the virus.
The pair constituted Taiwan’s first local transmission cases, the minister said, adding that the authorities were trying to find out the source. “So far, we are not able to gather his contact history, so we are actively making investigations, hoping to find out the source of the contraction,” Chen said.  (৪নং)
2.3 'Taiwan Scours Dead Taxi Driver’s Data to Trace Coronavirus Path' wk‡ivbv‡gi cÖwZ‡e`‡b ejv nq, The victim, a man in his 60s from central Taiwan who died Saturday, had not recently traveled overseas and had no recorded contact with any of the 19 other people diagnosed with the coronavirus in Taiwan, according to a statement from Taiwan’s Centers for Disease Control. (৫নং)

৩. ফ্রান্স
৩.১ 'করোনাভাইরাসে ইউরোপের মধ্যে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে প্রথম চীনের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। ...
হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ১৬ জানুয়ারি ফ্রান্সে আসেন। (৬নং)
৩.২ 'করোনা ভাইরাস : চীনে মৃত ৪১, ফ্রান্সে মিলল ৩ আক্রান্ত' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির (ফ্রান্স) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কয়েকজন ব্যক্তির শরীরে প্রাণঘাতী ওই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আক্রান্তরা সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছিলেন। (৭নং)
৩.৩ 'These are the countries where novel coronavirus cases have been confirmed worldwide' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, A Chinese tourist who tested positive for coronavirus has died in France, according to a statement from French Health Minister Agnes Buzyn, confirmed to CNN by the French Health Ministry. (৮নং)

৪. হংকং
৪.১ 'চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হংকংয়ের নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মৃত এই ব্যক্তি জানুয়ারিতে চীনের উহান শহরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। (৯নং)
৪.২ 'হংকংয়ে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয়জনের মৃত্যু' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তি হংকংয়ের কাওয়াই চুং এলাকার একটি বাড়িতে একাই বাস করতেন। .... ২২ জানুয়ারি তিনি একদিনের সফরে চীনের মূল ভূখন্ড গিয়েছিলেন। (১০নং)
৪.৩ 'Second Hong Kong Coronavirus Death as It Awaits Stranded Cruise Passengers' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, The 70-year-old man who died had underlying illnesses and was one of 62 confirmed cases in the Chinese-ruled city, a Princess Margaret Hospital spokeswoman said.  (১১নং)

৫. ইরান
৫.১ 'করোনাভাইরাসে ২ ইরানি নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়,  দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা (আইআরএনএ) এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে সংস্থাটি নিহত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি। ...
নিহত দুইজনই করোনা ভাইরাসের জীবাণু বহন করছিলেন। তারা ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম নামক এলাকার বাসিন্দা। এর বাইরে নিহতদের বিষয়ে আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ... তারা বয়স্ক ব্যক্তি। (১২নং)
৫.২ 'Two die of coronavirus in Iran, first fatalities in Middle East'' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয় Two elderly people have died due to coronavirus in the city of Qom, south of Tehran. ...
The two victims had suffered acute lung infections due to their infection with the coronavirus. ...
the two people had tested positive for the virus in preliminary results and died due to immune deficiencies and old age.
There was no immediate information about the gender and the exact age of the victims. (১৩নং)
৫.৩ 'Coronavirus: First deaths reported in Middle East'  শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, Tehran previously denied reports that people in the country were infected with the virus. ...
Both of the patients were reportedly elderly who had health issues that impacted their immunity. ...
Unfortunately both passed away in the intensive care unit due to old age and issues with their immune system. ...
The two patients, who died, however, were not known to have left Iran.
Prior to Wednesday's deaths, the Iranian government denied reports about people being infected with the virus in the country. (১৪নং)
৫.৪ 'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, the two had died of "respiratory illness".
Separately, health ministry official Kianush Jahanpur said in a post on Twitter that "both patients died in ICU due to age and immune system deficiency". ... (১৫নং)
৫.৫ 'করোনাভাইরাসে ইরানের কোম শহরে ৫০ জনের মৃত্যু!' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা ইলনার বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ইনডিপেনডেন্ট, এবিসি নিউজ ও আল-আরাবিয়া সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র কোম শহরে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাসে ১২ জনের মৃত্যুর এবং ৬৪ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চীন সফরকারী কোমের অধিবাসী একজন ইরানি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এ ভাইরাসটি ইরানে ছড়িয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধারণা করছে।  (১৬নং)

৬. জাপান
৬.১ 'করোনাভাইরাস: চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লো কেন?' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার জাপানে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘোষণা এসেছে - টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাগাওয়া শহরের বাসিন্দা ওই নারীর বয়স ছিল প্রায় ৮০ বছরের মতো। টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাগাওয়া শহরের বাসিন্দা ওই নারীর বয়স ছিল প্রায় ৮০ বছরের মতো। (১৭নং)
৬.২ 'Elderly woman dies of coronavirus in Japan' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, Mr Kato said that authorities are not certain that the woman was killed by the virus, but that she is the first person to die after testing positive for the infection.
'The relationship between the new coronavirus and the death of the person is still unclear,' he said at a government briefing. (১৮নং)
৬.২ '2 elderly passengers of virus-hit ship die in Japan' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, The man, who had bronchial asthma and other pre-existing illnesses, was hospitalized on Feb. 11 after displaying symptoms such as fever and breathing difficulties, according to the ministry. He tested positive for the new coronavirus on Feb. 12.
The woman broke out in a fever on Feb. 5 but was not initially tested for the virus. She was finally hospitalized on Feb. 12 due to the persistent fever and other symptoms, and was confirmed to be infected with the virus the following day, the ministry said.
She had no pre-existing conditions and died on Thursday of pneumonia believed to be caused by the virus, it said. (১৯নং)
(২০) 'Japan Reports 2 Deaths Among Cruise Ship Passengers' শিরোনামের সংবাদে বলা হয়, The two people, both Japanese, were an 87-year-old man and an 84-year-old woman, the Japanese broadcaster NHK reported. They were taken to hospitals on Feb. 11 and 12, and both had underlying health issues, the broadcaster said. No other information about them was immediately available. (২০নং)

৭. দক্ষিণ কোরিয়া
৭.১ 'Coronavirus updates: South Korea reports big jump in cases, virus spreading in Chinese prisons' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, The first person confirmed to have contracted the virus was believed to have fallen ill after meeting a friend who had recently returned from China. (২১নং)
৭.২ 'S. Korea reports 1st death from virus; cases soar to 104' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, The 63-year-old deceased, who had been bedridden for more than 20 years at a hospital in southeastern city of Cheongdo, died from pneumonia on Wednesday. ...
The health authorities are working to determine the exact cause of   the       patient's           death. (২২নং)
৭.৩ 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। আবার বলা হচ্ছে, অন্য কোনো কারণেও মারা গিয়ে থাকতে পারেন ওই ব্যক্তি। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। (২৩নং)
৭.৪ 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় এক দিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। (২৪নং)
৭.৫ 'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার ভয়ংকর ছোবল' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। (২৫নং)
৭.৬ ''Superspreader' in South Korea infects nearly 40 people with coronavirus' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, More than half of those cases involve members of, or those somehow linked to, the religious sect, the Shincheonji Church of Jesus, where a so-called superspreader infected at least 37 people last week.
A so-called superspreader infected at least 37 people at her church with the new coronavirus, and dozens of additional worshippers are also showing symptoms of the disease, called COVID-19, according to news reports. ...
Despite running a fever, the woman twice refused to be tested for the coronavirus, as she had not recently traveled abroad, according to The Guardian. So far, she and 37 other members of the church have tested positive for the novel coronavirus, called SARS-CoV-2, and 52 additional churchgoers have shown symptoms of infection but have not yet been tested. (SARS-CoV-2 is the name of the coronavirus that causes COVID-19.) (২৬নং)

৮. ইতালি
৮.১ 'ইতালিতে করোনাভাইরাসে ১ ব্যক্তির মৃত্যু, ১০ শহর বন্ধ' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার ইতালির উত্তরাঞ্চলের লম্বার্ডি এলাকায় ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ....
ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি। যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কেউ চীন সফর করেননি। (২৭নং)
৮.২ 'উহানের মতো 'ভুতুড়ে নগরী'তে পরিণত ইতালির যে শহর' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি।
যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কেউ চীন সফর করেননি। (২৮নং)
৮.৩ 'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, Six people have tested positive in Italy for coronavirus, the northern Lombardy region said, in the first known cases of local transmission of the potentially deadly illness in the country.
Officials told residents from three small towns some 60km (40 miles) southeast of Italy's financial capital Milan, to stay at home as doctors tested hundreds of people who might have come into contact with the six coronavirus sufferers.
None of the six was believed to have visited China. (২৯নং)
৮.৪ 'Coronavirus maps and charts: A visual guide to the outbreak' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, Meanwhile in Italy, the country's authorities have announced a series of measures to try to halt the virus's spread. It is not yet clear how it entered the country. (৩০নং)
৮.৫ 'করোনাভাইরাস: ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪০০' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ভাইরাসটি সম্পর্কে এখনও অনেক বিষয় অজানা রয়ে গেছে। বিশেষত এর উৎস এবং এটি কীভাবে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। (৩১নং)

৯. যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং অন্যান্য:
৯.১ 'New coronavirus cases of unknown origin found on West Coast' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, Health officials in California, Oregon and Washington state worried about the novel coronavirus spreading through West Coast communities after confirming three patients were infected by unknown means.
The patients — an older Northern California woman with chronic health conditions, a high school student in Everett, Washington and an employee at a Portland, Oregon-area school — hadn’t recently traveled overseas or had any known close contact with a traveler or an infected person, authorities said. (৩২নং)
৯.২ 'করোনাভাইরাস: গত ২৪ ঘন্টায় বিশ্ব-মহামারী ঠেকানোর সুযোগ কি আরও কমে গেছে?' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রত্যেকটি দেশেই আমরা দেখছি করোনাভাইরাস এমনভাবে ছড়াচ্ছে যার সঙ্গে চীনের কোন সম্পর্ক নেই। ইরানের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ সেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন একই সঙ্গে কয়েকটি শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। লেবাননে যে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেটিও ইরান থেকে ফেরা এক মানুষের মাধ্যমে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। (৩৩নং)
৯.৩ 'করোনাভাইরাস: প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে বলে হুঁশিয়াারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কী বলেছেন?
ডা. টেডরস বলেন, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা "তুলনামূলকভাবে কম" কিন্তু সংক্রমণের ধরণ উদ্বেগজনক।
"যে সব সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের সাথে কোন যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ প্রাদুর্ভাবের শিকার এলাকায় ভ্রমণ করার কোন উল্লেখ নেই অথবা আগে কোন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসারও কোন উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না সেসব সংক্রমণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে," তিনি বলেন।
ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা "খুবই উদ্বেগজনক", তিনি বলেন। (৩৪নং)
৯.৪ 'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, WHO chief Ghebreyesus in Geneva said he was concerned about cases outside China with 'no epidemiological link'.
"Although the total number of COVID-19 cases outside of China remains relatively small, we are concerned about the number of cases with no clear epidemiological link, such as travel history to China or contact with a confirmed case," he told reporters during a media briefing.
The WHO chief said he was concerned about the potential for COVID-19 to spread in countries with "weaker health systems". (৩৫নং)
৯.৫ What is coronavirus and what are the symptoms? শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, The WHO has said it is concerned about the number of cases with no clear link to China or other confirmed cases. It has said the window of opportunity to contain the virus was "narrowing". (৩৬নং)
৯.৬ 'করোনাভাইরাস ছড়ানোর ধরন উদ্বেগজনক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা বা চীন সফর না করেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইরানে নতুন করে সংক্রমণ ঘটা ও মৃত্যু ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।
তিনি মনে করেন, যেসব দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বল, সেখানে এ রোগের বিস্তার নিয়ে তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন। (৩৭নং)
৯.৭ 'What is coronavirus and what should I do if I have symptoms?' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, The spread of the virus outside China is worrying but not an unexpected development. ...
The key issues are how transmissible this new coronavirus is between people, and what proportion become severely ill and end up in hospital. Often viruses that spread easily tend to have a milder impact. Generally, the coronavirus appears to be hitting older people hardest, with few cases in children. (৩৮নং)

এবার আমরা এই প্রতিবেদনগুলোর সারাংশে আসি:
# ফিলিপাইন : ফিলিপাইনে প্রথমে যিনি করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরন করেছেন, তিনি 'উহান ফেরত'।
# তাইওয়ান : (১) তাইওয়ানে প্রথম যিনি করোনাভাইরাসে মারা গেছেন বলে মনে করা হয়, তিনি ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বি-তে ভুগছিলেন। (২) তিনি সম্প্রতি বাইরের কোনো দেশে যাননি। (৩) এটা তাইওয়ানের প্রথম স্থানীয় সংক্রমণ। (৪) তাইওয়ানে এর আগে করোনাভাইরাস শনাক্তকৃত ১৯ জনের সাথে ওই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক ছিল না।
# ফ্রান্স : (১) ফ্রান্সে যিনি প্রথম মারা গেছেন, তিনি ছিলেন চীনা পর্যটক। (২) ৮০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ১৬ জানুয়ারি চীন থেকে ফ্রান্সে আসেন। (৩) ফ্রান্সে পরবর্তীতে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কয়েক ব্যক্তি সম্প্রতি চীনে ভ্রমণ করেছেন।
# হংকং : (১) হংকংয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি চীনে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে হংকংয়ে এসে মৃত্যুবরণ করেন। (২) দ্বিতীয় ব্যক্তি একদিনের সফরে চীনের মূল ভূখন্ডে গিয়েছিলেন। (৩) দ্বিতীয় ব্যক্তির অন্তর্নিহিত অসুস্থতাও ছিল।
# ইরান : (১) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত প্রথম দু'ব্যক্তি বয়স্ক ছিলেন। (২) বার্ধক্যজনিত কারণে এবং ফুসফুসের সংক্রমণে তারা উভয়ে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় মারা যান। (৩) মজার বিষয় হচ্ছে, এদের নাম, পরিচয়, বয়স এমনকি লিঙ্গ সম্পর্কেও জানা যায়নি। (৪) মৃত দু’জন ইরানের বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন কিনা, তা-ও জানা যায়নি। (৫) ইরানের কোম শহরে পরবর্তীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫০ জনের মতো মানুষ মৃত্যুবরন করেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের 'ধারণা', চীনে সফরকারী কোমের অধিবাসী একজন ইরানী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভাইরাসটি ইরানে ছড়িয়েছে।
# জাপান : (১) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরনকারী প্রথম নারীর বয়স ছিল ৮০ বছরের মতো। (২) কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত নয় যে, এই নারী ভাইরাস দ্বারা মারা গিয়েছিল। (৩) ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে যে দু'জন জাপানি যাত্রী নিহত হলেন, তাদের একজন পুরুষ ও অন্যজন নারী, দু'জনেরই বয়স আশির কোঠায়। (৪) তাদের উভয়ের অন্তর্নিহিত সমস্যাও ছিল।
# দক্ষিণ কোরিয়া : (১) দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া প্রথম ব্যক্তিটি সম্প্রতি চীন থেকে ফিরে আসা এক বন্ধুর সাথে দেখা করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে 'মনে করা হয়'। (২) অবশ্য ২০ বছরের বেশি সময় ধরে লোকটি শয্যাশায়ীও ছিলেন। (৩) তিনি নিউমোনিয়ায় মারা যান। (৪) আবার বলা হচ্ছে, অন্য কোনো কারণেও মারা গিয়ে থাকতে পারেন ওই ব্যক্তি। (৫) মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। (৬) দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। (৭) দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গীর্জায় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য "রোগী ৩১" নামক যে নারীকে দায়ী করা হয়, দ্য গার্ডিয়ানের মতে, ঐ মহিলা সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি বলে করোনাভাইরাসটি পরীক্ষা করার জন্য দু'বার অস্বীকার করেছিলেন।
# ইতালি : (১) ইতালিতে করোনাভাইরাসে প্রথম যে ব্যক্তির মৃত্যুবরনের ঘটনা ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা। তাছাড়া যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কেউ চীন সফর করেননি। (২) ইতালির তিনটি শহরে যে ছয়জন লোকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাদের কেউ চীন ভ্রমণ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়নি। (৩) বলা হয়, এখনো পরিষ্কার নয় ইতালীতে কিভাবে করোনাভাইরাস প্রবেশ করেছে। (৪) আবার বলা হয়েছে এটি কিভাবে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
# যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং তৎসংশ্লিষ্ট : (১) যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের তিনটি রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটনে যে তিনজন রোগীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তিনজনই অজানা উপায়ে সংক্রামিত হয়েছে, বিষয়টা নিশ্চত। রোগীরা সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি বা কোনও ভ্রমণকারী বা কোনও পরিচিত ব্যক্তির সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল না। (২) ইরানের অবস্থাও অনেকটা এরকম। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে মহামারী ঘোষনা করতে দ্বিধান্বিত।

এই সারাংশ থেকে আমরা করোনাভাইরাস চীনের বাইরে সংক্রমিত হবার ঘটনাগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করতে পারি।
এক. উহান থেকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের অন্য দেশে গিয়ে মৃত্যু।
দুই. করোনাভাইরাসের উপদ্রবের সময় বা পর থেকে চীনের উহানে ছিল না বা যায়নি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের এমন অনেক লোকও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া।
তিন. চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসা কারো সংস্পর্শ ছাড়াই অন্যান্য দেশের মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রকারের লোকদের আক্রান্ত হওয়াকে স্থানীয় সংক্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

করোনাভাইরাসের উপদ্রবের সময় চীনের উহানে ছিল, সেখান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্য দেশে গিয়ে মারা যাবার ঘটনাগুলোই প্রথম প্রথম বেশি ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা দেখেই ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে শুরু করেছে এবং এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, ভাইরাসটি নাকি চীন থেকে অন্য দেশে ছড়াতে শুরু করেছে। বিষয়টা হাস্যকর। চীন থেকে ভাইরাসটি তখন ছড়ায়নি। চীন থেকে অন্য দেশে ছড়িয়েছে ভাইরাসাক্রান্ত মানুষ। কিন্তু তবু মানুষ আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে কেন? কারণ (এক) এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ সাধারণত নিউমোনিয়ায় ভোগে মারাত্মকভাবে। আর নিউমোনিয়া সম্পর্কে এই শক্ত ধারণা 'সেট' করা আছে আমাদের সবার মাথায়, এই রোগটি ছোঁয়াচে। বিজ্ঞান আমাদেরকে এটা শিখিয়েছে। ব্যস, করোনাভাইরাসের 'রোগী' থেকে 'ভাইরাস' ছড়াতে শুরু করলো ঐ সমস্ত লোকের শরীরে, যারা ঐ রোগীর সংস্পর্শে আসার পর নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগে ভুগতে শুরু করেছে। 'সব শেষ', 'সব শেষ' বলে চারদিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হলো। আমাদেরকে খেতে শুরু করলো মনের বাঘে। কিন্তু আমাদের মাথায় কোনোভাবে এটা ঢুকলো না, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব রোগ আমাদের সবারই হয় মাঝে মাঝে। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো লোকের সংস্পর্শে আসেনি, তারাও রোগটির আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। (দুই) আরেকটা কারণ হতে পারে, যেহেতু উহানের মাছের বাজার থেকে রোগটির উৎপত্তি হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও এই কথার কোনো ভিত্তি নেই বলে একটু আগেই আলোচনা করা হয়েছে, তাই 'সত্যিকারার্থে যে কারণে' উহানে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, সে কারণেই এসব দেশেও ছড়িয়ে থাকতে পারে।

যদি এসব দেশ থেকে কোনো করোনা রোগী গিয়ে উহানে রোগটি না ছড়ায়, তাহলে উহান থেকে রোগী গিয়ে এসব দেশে রোগটি ছড়াতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু (১) 'নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ', এই ধারণায় বুঁদ হয়ে থাকার কারণে সেদিকে লক্ষ্য করার প্রয়োজন আমরা মনে করি না। (২) পাশাপাশি সকল রকম সংবাদ মাধ্যমে করোনাভাইরাসকেও সংক্রামক বলে সতর্ক করা শুরু হয়। প্রচার করা হতে থাকে এই ভাইরাস হাঁচি-কাশি, শ্লেষ্মা-থুথু ইত্যাদির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়। এ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। (৩) উহানে কী কারণে ছড়িয়েছে, তা ভালোভাবে না খুঁজে রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করাটাই অন্য দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পরোক্ষ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে, তা পরবর্তী আলোচনায় চলে আসবে।

সবচেয়ে বড় কথা, (১) আমরা নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগকে আগ থেকে যেভাবে ছোঁয়াচে বলেই জানি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি এ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাসটা সেরকম না হয়ে বরং এরকম হতো, 'নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ কোনোভাবে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে না', তাহলে আমার বিশ্বাস, 'উহান ফেরত' করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো শরীর থেকে কোনো 'ভাইরাস' অন্য কারো শরীরে সংক্রমিত হতো না। যে লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো, সে-ই শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হতো; এমনকি আমরা তাকে সমাজ থেকে আলাদা না করে, স্বাভাবিক চলাফেরা থেকে তাকে বঞ্চিত না করে বরং তার সেবায় সবাই আত্মনিয়োগ করতাম। এমনকি তার সংস্পর্শে আসার পরও যদি আমরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতাম, কোনোভাবেই আমাদের মনে হতো না, আমাদের নিউমোনিয়া তার কাছ থেকে উড়ে এসে আমাদেরকে আক্রমণ করেছে! বরং স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে হতো, আমাদের আগে আমাদের কাছের কারো হওয়া ছাড়া অন্য সময়ও তো আমাদের নিউমোনিয়া হয়, এখনও সেভাবেই হয়েছে। আর আমাদের নিউমোনিয়ার চিকিৎসাও সাধারণ নিউমোনিয়ার চিকিৎসার মতোই করা হতো। ২. নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আমরা সচেতন নই বলেই মনে করি বা প্রচার করা হয়, রোগগুলোতে কোনো একজন আক্রান্ত হলে তার সংস্পর্শে যাওয়া অন্যরাও আক্রান্ত হয়।
উহান থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে অন্য দেশে যাবার পর সংক্রমিত লোক থেকে সে দেশের কারো সংক্রমিত হবার ঘটনা প্রথম অবস্থায় একেবার কম ছিল। কিন্তু তবু কেন অন্য অনেক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, এমনকি বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস চীনের চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে?

নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যাগুলোর কারণ সম্পর্কে প্রথম পরিচ্ছেদেই আলোচনা করা হয়েছে। এখানে শুধু বাড়তি একটি কথাই বলা দরকার, এই রোগগুলোর প্রতিষেধক কখনো আবিষ্কার করা যাবে না। ঋতু পরিবর্তন, অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা এবং ঠান্ডা-গরমের আকস্মিক মিশ্রণের সাথেই মূলত রোগগুলো সম্পর্কিত। মানুষের শরীরের শারীরিক বৈশিষ্ট্য আমূল পরিবর্তন করা গেলেই শুধু এই রোগগুলো থেকে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে, নয়তো নয়। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে ভালোভাবে ভাবি না বা এ সম্পর্কে সঠিক ধারণার পরিবর্তে মারাত্মক সব গুজব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকার কারণে সমাজের একজন লোক এই রোগগুলোর কোনোটিতে কোনো কারণে আক্রান্ত হলে আমরা ভয়ে তটস্থ হয়ে যাই, ভাবতে শুরু করি, আমি আবার কখন ওই লোক থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ি! আমাদের মনে এই অমূলক ভীতিগুলো ছড়ানোর জন্য বিজ্ঞান দায়ী। কারণ বিজ্ঞানই আমাদের মনে এই রোগগুলো একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় বলে ভীতি ছড়াচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। এই ভীতিগুলোর জন্যই, এরকম নানা গুজবে বিশ্বাস করার জন্যই আমাদেরকে অনেক সময় 'বনের বাঘে নয়, মনের বাঘে খায়'।

গুজবের ক্ষতির একটি উদাহরণ
কোনো গুজবের সাথে পরিচিত হয়নি বা কোনো গুজবে বিশ^াস করেনি, এমন মানুষ পৃথিবীতে থাকলেও তাদের সংখ্যাটা খুব কম হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম গুজব ছড়ায়। কোনো কোনো গুজব সারাবিশ্বে একযোগে ছড়ায়। কোনো গুজব একবার কি দু'বার ছড়ায়, কোনো গুজব অনেকবার। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আমরা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার গুজবেও আতঙ্কিত হয়েছি। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে। নিউইয়র্ক পোস্টের ওয়েবসাইটে ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে একটি প্রতিবেদন (By Dan Elson) প্রকাশিত হয় '5 times the world was supposed to end but didn't শিরোনামে, যেখানে বলা হয়, রেকর্ড করা ইতিহাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার পৃথিবী শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল, কিন্তু শেষ হয়নি।' [https://nypost.com/2017/07/27/5-times-the-world-was-supposed-to-end-but-didnt] এগুলো ছিল বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত হওয়া গুজব। এভাবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত একটা গুজব বেশ কয়েকবার ছড়িয়েছে। দেশের মানুষ বার বার গুজবটিতে আতঙ্কিত হয়েছে। গুজবটির নাম 'ছেলেধরা আতঙ্ক'।

শিশু-অপহরণ হয় না, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এমন দেশ খুব কম আছে। আর নারী-অপহরণ তো উন্নত-অনুন্নত প্রায় সব দেশেই হয় কমবেশি। বাংলাদেশে কয়েক বছর পরপরই 'ছেলেধরা আতঙ্ক' গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে। রীতিমতো একটা 'ভাইরাস' হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের (২০১৯) মাঝামাঝি সময়েও একবার এই গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সময়টা এখন অনলাইনের। তাই গুজবকে বিশ্বাস করানোর জন্য অনেক ভিডিও এবং ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিলো কিছু লোক। ইচ্ছাকৃত। আগুনে ঘি ঢাললো। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারলো না- (১) 'ছেলেধরা' কথাটি 'শিশু-অপহরণ' এরই অন্য নাম। নির্দিষ্ট কোনো সময়ে নয়, বছরের প্রায় সব সময় দেশের কোথাও না কোথাও শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটে। গুগলে 'অপহৃত শিশু উদ্ধার' এরকম কথা লিখে খুঁজলে অনেক সংবাদের লিঙ্ক চলে আসে। দেখতে পাবেন গুজব ছড়ানোর আগেও শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, পরে এখনও ঘটছে। যেমন: '২০ দিন পর অপহৃত শিশু উদ্ধার, ছয় অপহরণকারী গ্রেপ্তার' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে, লিঙ্ক: (https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1068245)

'আশুলিয়া থেকে অপহৃত শিশু ডিমলায় উদ্ধার' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক মানবজমিনে ১৪ ফেব্রুয়াারি ২০২০ তারিখে, লিঙ্ক: (https://mzamin.com/article.php?mzamin=212983) আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক কালের কন্ঠে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, লিঙ্ক: (https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2020/02/15/874784)|

সুতরাং 'ছেলেধরা' নামক নতুন বা আলাদা শিশু-অপহরণ বলতে কিছু নেই।

(২) এই গুজব কোনো না কোনোভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর কিছু অনলাইন পোর্টাল বা সামাজিক মাধ্যমে অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক ভিডিও পোস্ট করলো শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য। কারণ ভিডিওটি যত বেশি দেখা হবে, তাদের অনলাইন আয় তত বেশি হবে। বিশেষ করে এরকম একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর কোথাও থেকে একজন তথাকথিত শিশু-অপহরণকারীকে ধরে তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ধান্দাবাজ কিছু লোক অর্থ উপার্জনের ধান্দায় লিপ্ত হলো। মানুষ তখন ভাবতে ভুলে গেলো, এভাবে শিশু-অপহরণ সারা বছরই হয়।
অনেকের অনেক শিশু মাঝেমধ্যে বাসায় ফিরতে দেরি করে। বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে। গুজব ছড়ানোর ঐ সময়টাতে কারো শিশু এরকম বাসায় ফিরতে একটু দেরি হলেই নিজ শিশুকে 'ছেলেধরা' নিয়ে গেছে বলে ওদের অভিভাবক হা-হুতাশ করা শুরু করে। এই খবরটাও বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পরে শিশুটি বাসায় ফিরে আসার পর বা শিশুটিকে খুঁজে বের করার পর যাদের কাছে ইতোমধ্যে শিশুটিকে ছেলেধরা নিয়ে যাবার সংবাদ চলে গেছে, তাদের অনেকের নিকট শিশুটির ফিরে আসার সংবাদ পৌঁছে না।

পরিস্থিতি তখন এমন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, কোনো এলাকায় অপরিচিত কোনো লোক পথঘাটে ঐ এলাকার কোনো শিশুর সাথে কথা বললেই শিশুটি যদি লোকটিকে চিনতে না পেরে 'ছেলেধরা' বলে চিৎকার করে ওঠতো, তখন মানুষ চারদিক থেকে এসে ঐ লোককে ঘিরে ফেলতো। শুরু হতো লোকটির উপর উত্তম-মধ্যম। ঐ লোক পড়ে যেতো মহা বিপদে। কারো কাছে নিজেকে 'আমি ছেলেধরা নই' বলেও লাভ হতো না। মানুষ তখন ভাবতো, সারাদেশে ছেলেধরা বের হয়েছে। এখন আমরা হাতেনাতেই ধরে ফেলেছি এক ছেলেধরাকে। মানুষ 'ছেলেধরা পেয়েছি পেয়েছি' বলে তার উপর চড়াও হতো। লোকটির কোনো কথা কেউ শুনার প্রয়োজন মনে করতো না, বিশ্বাস করতো না। ঐ বিভীষিকাময় সময়টাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষ 'ছেলেধরা' অপবাদের শিকার হয়ে গণপিটুনির কবলে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় অনেক মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে মানুষ গণপিটুনি দিয়ে পুলিশেও সোপর্দ করেছে। একটা পর্যায়ে এমন হয়েছে, যখন মানুষ দেখেছে, পুলিশ এসব লোককে ছেড়ে দিচ্ছে এদের প্রকৃত পরিচয় জানার পর, তখন মানুষ ভাবতে শুরু করলো, পুলিশকে সোপর্দ করে লাভ নেই, যা করার আমাদেরকেই করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম বক্তব্য দিয়ে অনেকে পোস্টও করেছে তখন। এভাবে গুজবটি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করলো।

একসময় এরকম সন্দেহভাজন কাউকে মানুষ ধরতে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতে শুরু করে। পুলিশ এবং প্রশাসনও এরই মধ্যে বেশ তৎপর হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ পুলিশের জনসচেনতামূলক প্রচারণা উপেক্ষা করে কথিত 'ছেলেধরা'কে গণপিটুনি দিতে থাকে এবং হত্যা করতে থাকে। ২৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে বিবিসি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে 'Bangladesh lynchings: Eight killed by mobs over false child abduction rumours' শিরোনামে, যার লিঙ্ক: https://www.bbc.com/news/world-asia-49102074

এভাবে ছেলেধরা সন্দেহে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকজন মানুষ মানুষের গনপিটুনিতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরন করে। শেষে ঘটলো সবচেয়ে মর্মান্তিক এক ঘটনা। ঘটনাটি একটি দৈনিক পত্রিকা থেকেই উদ্ধৃত করা যাক। ২০ জুলাই ২০১৯ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে 'ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে তিনজন নিহত' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 'ছেলে ধরা সন্দেহে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে গণপিটুনিতে নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে উত্তর বাড্ডায় এক নারী ও সিদ্ধিরগঞ্জে এক যুবক এবং শুক্রবার রাতে কেরানীগঞ্জে এক যুবক মারা গেছে।

এছাড়া শনিবার গাজীপুরে এক নারী ও শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় এক বৃদ্ধকে মারধর করা হয়েছে। এদিকে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারাকে বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। শনিবার বিকালে এক বার্তায় এ আহ্বান জানানো হয়।
রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবার সকাল ৯টার দিকে যান এক নারী। এ সময় স্কুলের সামনে থাকা অভিভাবকরা তাকে স্কুলে প্রবেশের কারণ জানতে চান। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাবেন বলে ওই নারী জানান। এরপর তাকে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে নেয়া হয়।
তবে খবর ছড়িয়ে পড়ে স্কুলে ছেলে ধরা এসেছে। এরপর ছেলেধরা সন্দেহে তাকে স্কুলের বাইরে এনে গণপিটুনি দেয়া হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।' [https://www.jugantor.com/national/201401]

এই ঘটনার পর যখন জানাজানি হয়, ওই নারী কোনো ছেলেধরা ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন উচ্চশিক্ষিত নারী, শুধু শিশু অপহরকারীদের সাথে তাঁর কিছু 'লক্ষণ' মিলে যাবার কারণেই তাঁকে 'ছেলেধরা' সন্দেহ করে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়, তখন মানুষের টনক নড়ে। মানুষ এভাবে ছেলেধরা সন্দেহে সন্দেহভাজন মানুষকে হত্যা করা নয়, পিটুনি দেয়াও পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। ওই নারীর ১১ বছরের একটি ছেলে ও ৪ বছরের একটি মেয়ে ছিল। তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তাঁর ৪ বছরের মেয়েটির কান্নারত ছবি দেখে অনেকে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। মানুষ এভাবে ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করে, 'ছেলেধরা বের হয়েছে' বলে তারা এতোদিন যা শুনেছে, সবই গুজব।
কিন্তু গুজবটি বিশ্বাসের কারণে বড় ধরনের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে মানবসমাজে, অনেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে, যেগুলোর ক্ষতিপূরণ কোনোভাবে সম্ভব নয়। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে, যারা ভালো করে যাচাই না করে এই গুজবকে বিশ্বাস করেছে এবং গুজবকে বিশ্বাস করে গুজবের পক্ষে যে কোনো তৎপরতা চালিয়েছে, তাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব এই নারীসহ সারাদেশে যাদেরকে মানুষ নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের পরিবারের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাওয়া।
আরেকটি কথা, 'ছেলেধরা গুজব' শুধু বাংলাদেশে ছড়ায় না, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ছড়ায় মাঝে মাঝে। বিবিসির ওয়েবসাইটে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় Pregnant India woman beaten over child kidnapping rumour শিরোনামে, যার লিঙ্ক: https://www.bbc.com/news/world-asia-india-49547919
কলকাতার (ভারত) আনন্দবাজার পত্রিকায় ২২ জুলাই ২০১৯ তারিখে 'ছেলেধরা গুজব, ভবঘুরেকে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হল ডুয়ার্সে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 'দক্ষিণবঙ্গ ছেড়ে এবার 'ছেলেধরা' গুজব ছড়াল উত্তরবঙ্গেও। সোমবার সকালে ¯্রফে সন্দেহের বশে, গুজবের জেরে ছেলেধরা বলে থেঁতলে খুন করা হল মধ্যবয়সী এক ভিক্ষাজীবীকে। ওই ব্যক্তির পরিচয় পুরোপুরি না জানা গেলেও, প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, তিনি বহুরুপী সেজে বিভিন্ন বাজার এলাকায় অর্থোপার্জন করতেন।
ঘটনাটি সোমবার ঘটেছে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানা এলাকার শুলকাবাড়ি বাজারে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একটি অংশ পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার সকালে ওই ব্যক্তি মহিলা সেজে এলাকায় ঘুরছিলেন। নাগরাকাটা এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওই এলাকায় 'ছেলেধরা'র গুজব ছড়াচ্ছে।
সোমবার সকালে ওই ব্যক্তিকে মেয়েদের পোশাকে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে শুলকাবাড়ি বাজারে কয়েকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেই সময় কেউ কেউ ওই ব্যক্তিকে ছেলেধরা বলে সন্দেহপ্রকাশ করে। অভিযোগ, তারপরেই কয়েকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ব্যক্তির উপর। বাজারের মধ্যেই বাঁশ,লাঠি দিয়ে মারা শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পাথর দিয়েও থেঁতলে মারা হয়।' [https://www.anandabazar.com/state/vagrant-stoned-to-death-at-dooars-over-kidnapper-rumour-dgtl-1.1021207]

'Child Kidnapping Rumours' শিরোনামে ভারতের এনডিটিভি’র ওয়েবসাইটে সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (Written by Alok Pandey) বলা হয়, 'A labourer was beaten to death and eight others were injured in a mob attack after they were mistaken as child kidnappers at a village in Uttar Pradesh's Amethi. The killing comes days after another man who was taking his nephew to a doctor was beaten to death over child kidnapping rumours in Uttar Pradesh's Sambhal.' [https://www.ndtv.com/topic/child-kidnapping-rumours]

গুজব এভাবে মানব সমাজে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, পৃথিবীতে বড় বড় বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চীন ছাড়া অন্য দেশে নতুন কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার 'অধিকাংশ ঘটনা'কে (বিশেষ করে যেগুলোর সাথে চীন বা সংক্রমিত কারো যোগসূত্র নেই) আমরা গুজব হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি কিছু দিক বিবেচনায়: 

তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

করোনাভাইরাস যখন 'ভাইরাস' নয়, গুজব
এক. করোনাভাইরাসের ফলে মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় আর নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ বলেই বিজ্ঞান আগ থেকে প্রচার করে আসছে, তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মানুষ যখন দেখেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ নিউমোনিয়ায় ভোগে আর নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই মানুষ এটা বুঝে নিতে শুরু করেছে, এই ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়বে নিশ্চিতভাবে। অথচ নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, এই সত্যটা এই লেখার প্রথম পরিচ্ছেদেই পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এমনকি এই সত্যটা বাস্তবেই যাচাই করে নেয়ার একটি কার্যকরী পন্থার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যে রোগ একজন থেকে আরেকজনে কোনোভাবে ছড়াতে পারে না, সে রোগের গায়ে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগের লেবেল লাগানো কি গুজব নয়? এই গুজবে পুরো বিশ্ব এখন অস্থির। যারা করোনায় আক্রান্ত, তারা তো মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত, যারা আক্রান্ত নয়, তাদেরও আতঙ্কের সীমা নেই। এই আতঙ্কটা শুধুই করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বা ছোঁয়াচে বলে প্রচার করার কারণে।

দুই. চীন বা উহানের সাথে সম্পর্ক নেই, বিগত কয়েক মাসে কোথাও ভ্রমণের রেকর্ডও নেই, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে কোনো সম্পর্কও নেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন  অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের বিষয়টা গুজব ছাড়া আর কিছু নয়। যেমনটা ঘটেছে তাইওয়ান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে। 'Doctor who treated first US coronavirus patient says COVID-19 has been 'circulating unchecked' for weeks' শিরোনামে সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত ১১ মার্চ ২০২০ তারিখে হালনাগাদকৃত একটি নিবন্ধে (By Berkeley Lovelace Jr. and William Feuer) বলা হয়, Compton-Phillips (chief clinical officer of Providence St. Joseph Health) said some front-line workers had been saying 'if' when talking about the virus becoming widespread in the U.S. — until two weeks ago, when cases suddenly cropped up in Iran and Italy with no known connection to China. Then, ''we started saying, 'when,'' she said.'  [https://www.cnbc.com/2020/03/06/doctor-who-treated-first-us-coronavirus-patient-says-covid-19-has-been-circulating-unchecked-for-weeks.html] এই এতোগুলো দেশে এমন অনেক মানুষ 'ভাইরাস'টিতে  আক্রান্ত হয়েছে, যাদের সাথে না আছে চীন বা উহানের সম্পর্ক, না আছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সম্পর্ক। তবু এটা 'ভাইরাস' হলো কী করে? তবু আমরা কেন মনে করি 'ভাইরাস'টি ভয়ঙ্কর, বিপজ্জনক,; ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে? কে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে? যারা নিউমোনিয়াকে ছোঁয়াচে মনে করে, তাদের কাছে সত্যিই এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই।


৩৬ নং-এ উল্লেখিত আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'WHO chief Ghebreyesus in Geneva said he was concerned about cases outside China with 'no epidemiological link'.
"Although the total number of COVID-19 cases outside of China remains relatively small, we are concerned about the number of cases with no clear epidemiological link, such as travel history to China or contact with a confirmed case," he told reporters during a media briefing.'

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনা আপনিই মাথায় ঢুকে যাবে যখন নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগকে 'ছোঁয়াচে নয়' বলে স্বীকার করে নেয়া হবে। তখন উত্তরটা কী হবে? তখন ভাইরাসটিকে ছোঁয়াচে মনে না করার কারণে কোথাও মানুষ ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করলে যদি একই সময় অন্য কোথাও এভাবে কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন তার নিউমোনিয়াকে সাধারণ নিউমোনিয়া বলেই গণ্য করা হবে এবং তার সাথে 'একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সাথে যে রকম আচরণ করা হয়', সেরকম আচরণই করা হবে। শুধু তা-ই নয়, যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে নয়, তাই কোথাও মানুষ ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করলে, 'প্রথমে যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের কাছ থেকে নতুন কেউ আক্রান্ত হবে', এই চিন্তাটা না করে সবাই ভাবতো, ঐ জায়গায় কোনো বিষক্রিয়া বা দূষণের কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে, এটা ভেবে মানুষ ওই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতো। আর তারা অন্যত্র চলে গেলেও নতুন জায়গার কেউ 'তাদের কাছে থেকে এই রোগে নিজেরা আক্রান্ত হবে' এটা নিয়ে চিন্তিত হবার পরিবর্তে তাদের শুশ্রূষায় লেগে যেতো কোনো রকম দ্বিধায় না ভুগে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে?


কী হচ্ছে এসব? ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না কোনোভাবে। লিখে বুঝানো যাবে না কোনোভাবে। শুধু সারাবিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায়/ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভাষায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত এ সম্পর্কিত সংবাদ, প্রতিবেদন ও নিবন্ধগুলো একত্র করলে যা হবে, তা দিয়ে ৫০০ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট কয়েক হাজার বই হতে পারে। করোনাভাইরাসের উপর উইকিপিডিয়া এ পর্যন্ত মোট কতগুলো নিবন্ধ রচনা করেছে, আমার জানার দরকার হয়নি। শুধু উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো দিয়েই ৫০০ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট অনেকগুলো বই ছাপানো যেতে পারে! উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে শুধু উহান বা চীন নয়, গুজবে গুজবে, আতঙ্কে আতঙ্কে পৃথিবীবাসী নাকাল। আপাতত চীনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ। তিন হাজারের (৩০০০) উপর মানুষ অনেক আগেই মারা গেছে (অফিসিয়াল হিসাব মতে, ননঅফিসিয়াল হিসাবের বাস্তবতা ভিন্নও হতে পারে)। এটা ৪ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর খবর আসছে। জানি না, অন্য কোনো দেশের অবস্থা এর চেয়ে ভয়াবহ হয় কিনা! উহানে গণমৃত্যুসহ অনেক দেশেই ভাইরাসটি কেড়ে নিতে শুরু করেছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। ইতোমধ্যে অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত সবগুলো মহাদেশে পৌঁছে গেছে করোনাভাইরাস। পৃথিবী বার বার ধ্বংস হবার কথা (যদিও গুজব ছিল) জেনেও হয়তো মানুষ এতো বেশি আতঙ্কিত হয়নি, যতোটা আতঙ্কিত হয়েছে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কথা শুনে। আতঙ্ক দিন দিন এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়াচ্ছে। আতঙ্ক কমানোর উদ্যোগের চেয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর অপতৎপরতা আনুপাতিকহারে বেশি হতে পারে। এর একটা প্রধান কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ নিয়ে পুরাতন একটি ভ্রান্ত ধারণার পাশাপাশি মানবজীবনে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর 'কল্পিত' অপতৎপরতা।

উহান শহরকে তালাবদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগেই (২৩ জানুয়ারি), সেখানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর 'তালাবদ্ধ করা পর্যন্ত যারা ছিল', তাদেরকে ভেতরে রেখেই। '2020 Hubei lockdowns' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে (সর্বশেষ ৪ মার্চ হালনাগাদকৃত) বলা হয়, 'In 23 January 2020, the central government of the People's Republic of China imposed a lockdown in Wuhan and other cities in Hubei province in an effort to quarantine the epicentre of an outbreak of coronavirus disease 2019 (COVID-19). This was the first known instance in modern history of locking down a major city of as many as 11 million people, and the incident was commonly referred to in the media as the "Wuhan lockdown" (Chinese: 汉封城; pinyin: Wǔhàn fēng chéng). The World Health Organization (WHO), although stating that it was beyond its own guidelines, commended the move, calling it "unprecedented in public health history".' [https://en.wikipedia.org/wiki/2020_Hubei_lockdowns]

শুধু উহান নয়, পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে মানুষকে এভাবে বন্দী করার অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বিগত কয়েক দিনে। অনেককে নিজ গৃহেও বন্দী করে রাখা হয়েছে, তার 'ভাইরাস' অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায়। শুধু মানুষকে নয়, মানুষভর্তি জাহাজকেও কোয়ারেন্টাইন করে রাখার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো প্রথমবারের মতো।
কোয়ারেন্টাইনের ভেতরে যাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবেন, তাদের অনেকেই ভবিষ্যতে কখনো হয়তো তাদের এই বিভীষিকাময় জীবনের কাহিনী নিয়ে লোমহর্ষক উপন্যাস অথবা জবানবন্দীমূলক নিবন্ধ লিখতে পারেন। জানি না কেমন ভয়ঙ্কর ও শরীর শিউরে ওঠা গল্প হয় সেগুলো! আমরা তখন আরো গভীরভাবে জানতে পারবো তাদের জীবনের হৃদয়বিদারক কাহিনী সম্পর্কে। আপাতত ৩৩ মিনিটের একটি ভিডিও আমরা দেখে নিতে পারি তালাবদ্ধ উহানের উপর, যা 'The lockdown: One month in Wuhan' শিরোনামে ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, যার লিঙ্ক  হচ্ছে এই: https://bit.ly/3cGDaH3 

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত (৪ মার্চ পর্যন্ত) শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীই মারা যায়নি, করোনাভাইরাস 'গুজব' হিসেবে ছড়িয়ে পড়ার কারণেও বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে বিভিন্নভাবে, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না।
করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে, এই আতঙ্কে ভারতে একজন সন্দেহভাজন করোনাভাইরাস রোগী নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভেবে আত্মহত্যা' শিরোনামে দৈনিক সমকালে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে চীনসহ প্রায় গোটা বিশ্ব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতের বেশ কিছু শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রোগীরা। আতঙ্ক গ্রাস করছে সাধারণ মানুষকে। আর সেই আতঙ্কই প্রাণ নিল এক ব্যক্তির।
অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ভেবে আত্মহত্যা করেছেন।...
শেষামনাইডু কান্দ্রিগা গ্রামের বাসিন্দা কে বালকৃষ্ণ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত খবর দেখে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনিও এই রোগে আক্রান্ত। সর্দি-কাশি ও জ্বরের জন্য তার চিকিৎসাও চলছিল। ডাক্তাররা জানান, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তবে তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি।
তবে ডাক্তারের কথায় আমল দেননি বালকৃষ্ণ। নিজেকে করোনায় আক্রান্ত ভেবে তিনি পরিবারকে বাঁচানোর জন্য কঠিন পদক্ষেপ নেন। মঙ্গলবার স্ত্রী-সন্তানকে ঘরে তালাবন্দি করে রেখে মায়ের কবরস্থানে চলে যান তিনি। তার স্ত্রীর ডাকাডাকিতে প্রতিবেশীরা দরজা খুলে দেওয়ার পর সবাই ছুটে যান কবরস্থানে। তারা গিয়ে দেখেন, মায়ের কবরস্থানের পাশে একটি গাছের ডালে ঝুলছেন বালকৃষ্ণ।' [https://samakal.com/international/article/200212358]

বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের বাসিন্দা রতন রপ্তান (৩৫) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মা রেনুকা রপ্তানের (৫৬) মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক নয়াদিগন্তে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় 'সাতক্ষীরায় ছেলের করোনাভাইরাসের গুজবে মায়ের মৃত্যু' শিরোনামে।' [http://www.dailynayadiganta.com/khulna/479970]

'সৌদিতে করোনা সন্দেহে বিদেশি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক সমকালে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশি এক শিক্ষার্থী সৌদি আরবে আত্মহত্যা করেছেন। জেদ্দার একটি হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। সন্দেহজনকভাবে হাসপাতালে তাকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। শনিবার সকালে তার মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টে করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট আসার আগেই আত্মহত্যা করেন তিনি। তবে তিনি কোন দেশের নাগরিক, তা এখনও জানা যায়নি। খবর আরব নিউজের।' [https://samakal.com/todays-print-edition/tp-world/article/200226655]

বৃটেনের অন্যতম বিশ্বস্ত নিউজ ব্র্যান্ড দ্য মিররের অনলাইনে 'North Korea official suspected of having coronavirus 'shot dead for trip to public baths' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন (By Milo Boyd) প্রকাশিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'A North Korean official has reportedly been executed after he broke the terms of his coronavirus quarantine.
The trade official had been placed in medical quarantine after returning to the authoritarian country from China.
After the government worker was caught going to a public bath however, he was arrested and immediately shot, North Korean sources told Donga.'
[https://www.mirror.co.uk/news/world-news/north-korea-official-suspected-having-21488373]

'Mumbai Man Allegedly Kills Brother For Leaving Home During Lockdown: Cops' শিরোনামে ভারতের এনডিটিভির ওয়েবসাইটে ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Mumbai: A man was arrested for allegedly killing his brother after they got into a fight over stepping out of their home amid the coronavirus lockdown in Mumbai's Kandivali, police said on Thursday.
The accused identified as Rajesh Laxmi Thakur killed his younger brother Durgesh after the former along with his wife stepped out of the house to buy groceries in the market on Wednesday afternoon.
According to police, when the couple returned from the market, Durgesh questioned them about the urgency to buy groceries amid the lockdown. Following this, an argument ensued between the brothers and Durgesh slapped Rajesh's wife. Later, Rajesh attacked his younger brother with a kitchen knife.
As Durgesh had sustained serious injuries, the victim was rushed to a nearby hospital where he was declared brought dead. ' [https://www.ndtv.com/mumbai-news/mumbai-man-kills-brother-for-leaving-house-during-lockdown-over-coronavirus-spread-2201474]

[৪ মার্চের পরে সংঘটিত এরকম কিছু ঘটনা]
'ছেলের মৃত্যু খবরে পিতার মৃত্যু; করোনা রিপোর্ট এলো নেগেটিভ' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ১২ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'নারায়ণগঞ্জের (বাংলাদেশ) সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া রিমন সাউদ (২৪) এর পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে মৃত রিমনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও নাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুবেল হাওলাদার ও নাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ সাদরিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (১১ মে) রাত ৩টার দিকে অসুস্থ বোধ করলে রিমন সাউদ নিজ বাড়ীর ২য় তলা থেকে পায়ে হেটে গাড়িতে উঠেন। পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসাপাতলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু করোনার উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে কোনো হাসপাতালে ভর্তি নেয় নাই বলে জানায় তার পরিবার। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৫ টার দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ছেলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে হার্ট এটার্ক করেন বাবা হাজী ইয়ার হোসেন।'  [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/05/12/529636]

'করোনা সন্দেহে ছেলেকে খুন করলেন ফুটবলার বাবা!' শিরোনামে কালের কন্ঠে ১৬ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ছেলে। নমুনার পরীক্ষার রিপোর্ট তখনও আসেনি। জানা যায়নি শিশুটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা। কিন্তু নিজেদের 'নিরাপত্তার জন্য' নিজের ৫ বছরের ছেলেকে খুন করে ফেলল ফুটবলার পিতা! ভয়াবহ এই ঘটনা ঘটেছে তুরস্কে। কোহভের তকতাস নামের এক ফুটবলার ছেলেকে খুন করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
তকতাস এর আগে তুরস্কের প্রথম সারির লিগে খেললেও বর্তমানে তিনি অপেশাদার লিগে বুরসা ইলদিরইমস্পুরের হয়ে খেলেন। তুরস্কের হাবেরতুর্ক চ্যানেলে জানানো হয়েছে, সেই ফুটবলার নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে স্বীকার করেন যে, তিনি নিজেই ছেলেকে বালিশে চাপা দিয়ে খুন করেছেন কারণ পুত্রকে তিনি মোটেই ভালোবাসেন না। অনুশোচনায় ভুগে ছেলের মৃত্যুর ১১ দিন পরে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু যার জন্য এই ভয়ানক ঘটনা, তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
কারণ তকতাসের ছেলের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ এসেছে। এপ্রিলের ২৩ তারিখে প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৫ বছর বয়সী শিশুটি। সেদিন তুরস্কে শিশু দিবস ছিল। ছেলেকে তার বাবার সঙ্গেই আইসলেশনে রাখা হয়। সেদিনই তার পুত্র কাশিমকে হত্যা করেন ফুটবলার পিতা।' [https://www.kalerkantho.com/online/sport/2020/05/16/912399]

ভারতের এনডিটিভি নিউজের ওয়েবসাইটে 'Indian-Origin Man Called "Chinese", Beaten Up In Israel Over Coronavirus' শিরোনামে ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন বলা হয়, 'Jerusalem: An Indian-origin Jew was badly beaten by two people who called him a "Chinese" and yelled ''CoronaCorona" in Israel's Tiberias city, in an apparent racist assault linked to the virus outbreak.
Am-Shalem Singson, 28, from the Bnei Menashe community, from Manipur and Mizoram, was admitted to the Poriya hospital with severe chest injuries, Channel 13 reported.
The police continues to search for the two suspects based on his description of the incident, the leading Israeli TV channel reported.

Mr Singson told the police that he tried very hard to explain to the attackers that he was not Chinese and was not infected by the coronavirus, but it did not help.
The incident happened on Saturday.
Mr Singson immigrated to Israel from India with his family three years ago, the report said.
There were no witnesses to the incident and the police search is primarily based on the security footage in the area.

"We were shocked to receive the report of the vicious and racist attack in Tiberias," Michael Freund, Chairman and Founder of Shavei Israel, the organisation that has been working on the immigration of Bnei Menashe to Israel, was quoted by the Channel as saying.
"I demand that the Israeli police investigate the incident immediately and prosecute those who committed this heinous act," Mr Freund said.' [https://www.ndtv.com/indians-abroad/indian-origin-man-called-chinese-beaten-up-in-israel-over-coronavirus-2195857]

সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Mr Singson told the police that he tried very hard to explain to the attackers that he was not Chinese and was not infected by the coronavirus, but it did not help.'

এই বিষয়টার সাথে বাংলাদেশ ও ভারতে 'ছেলেধরা' গুজবের একটা দিক থেকে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ছেলেধরা গুজবেও ভিকটিম যতোই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে, আক্রমণকারীরা কোনোভাবেই তার কথায় কর্ণপাত করেনি, ভারতের এই লোকের সাথে ইসরাইলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায়ও সে যতোই নিজেকে 'ভারতীয় এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়' বলে বোঝাতে চেষ্টা করেছে, কোনো লাভ হয়নি; বিশ্বাস করা দূরের কথা, তার কথায় কেউ কর্ণপাতও করেনি।
এরকম অসংখ্য ঘটনা বিশ্বের নানা দেশে নানা প্রান্তে ঘটে থাকতে পারে, যার দশ হাজার ভাগের একভাগও এই নিবন্ধে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। কারণ সেগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত। পৃথিবীতে যদি এতোগুলো ভাষা না হতো, মানবজাতি যদি মাত্র একটা ভাষা-ই ব্যবহার করতো এবং এই নিবন্ধ তৈরিতে অনেকগুলো মানুষ একসাথে কাজ করতো, তাহলে এরকম বেদনাদায়ক আরো কিছু ঘটনা এই নিবন্ধে উল্লেখ করা যেতো (নিবন্ধটি হয়তো তখন আরো অনেক বড় হয়ে যেতো)। শুধু বাংলাভাষায় প্রকাশিত ঘটনাগুলো খুঁজে খুঁজে এ নিবন্ধে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হলেও নিবন্ধটির পরিধি আরো অনেক বেড়ে যাবে। অবশ্য সংগ্রহে আরো অনেকগুলো ঘটনা আছে। লেখাটি বড় হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়নি।

করোনাভাইরাস বা নিউমোনিয়া একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়, একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে লাফ দেয়, বিজ্ঞান মানুষকে যুগ যুগ ধরে এই বিষয়ে 'সচেতন' করে তোলার কারণে উহান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক মানুষ তার সাধারণ নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জাকেও করোনাভাইরাস ভেবে তার 'ভাইরাস' যেন আরেকজনকে আক্রান্ত করতে না পারে, সেই আশঙ্কায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে; অনেক মানুষ 'ভাইরাসে আক্রান্ত' ভেবে তার কাছের কাউকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করেনি; এরকম আরো কত বিচিত্র মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে দেশে দেশে!

'ছেলেধরা' বের হবার গুজবের সাথে এই গুজবের আরো একটি মিল লক্ষ্য করা যাক। গত বছর বাংলাদেশের কোথাও কোনো এক শিশু অপহরণকারীকে মানুষ হাতেনাতে ধরে ফেলার খবর চারদিকে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মানুষ এমন সব লোককে ছেলেধরা ভেবে গণপিটুনি দিতে এবং গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে শুরু করে, যাদের সাথে ছেলেধরা বা শিশু অপহরণকারীর কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ মিলে যায়। এভাবে চীনের উহানে কোনো 'বিষক্রিয়া বা দূষণে'র প্রতিক্রিয়া হিসেবে (বিস্তারিত আলোচনা পরে আসছে) মানুষ যখন ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করে, তখন চীনের অন্যান্য স্থানে এবং বিশ্বের অনেক দেশে এমন সব মানুষকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা শুরু হয়, যাদের সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ মিলে যায় বা করোনাভাইরাস রোগীর শারীরিক বৈশিষ্টের সাথে যাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অনেক মিল পাওয়া যায়। এই মিলে যাবার ফলেই তাদেরকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বলেই ঘোষণা করা হয়। তারা আদৌ চীনে থেকে এসেছে কিনা বা চীন থেকে আগত কোনো করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে এসেছে কিনা, সে দিকে আর লক্ষ্য করার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। এরকম মানুষগুলোর উপর শুরু হয় চরম মানসিক নিপীড়ন। দক্ষিণ কোরিয়ার যে মহিলাকে 'সুপার স্প্রেডার' বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, ওই মহিলা বড়ই বিভীষিকাময় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, সেই ঘটনার পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সার্বিক পরিস্থিতিও হয়ে যায় অস্থিতিশীল। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
লাইভ সায়েন্স ডটকমের ওয়েবসাইটে ''Superspreader' in South Korea infects nearly 40 people with coronavirus' শিরোনামে একটি নিবন্ধ (By Nicoletta Lanese) প্রকাশিত হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'The number of coronavirus cases in South Korea has soared to about 602, according to The New York Times. More than half of those cases involve members of, or those somehow linked to, the religious sect, the Shincheonji Church of Jesus, where a so-called superspreader infected at least 37 people last week.

A so-called superspreader infected at least 37 people at her church with the new coronavirus, and dozens of additional worshippers are also showing symptoms of the disease, called COVID-19, according to news reports.

The 61-year-old woman attends the Shincheonji Church of Jesus the Temple of the Tabernacle of the Testimony in DaeguSouth Korea, according to the international news outlet AFP. The city, located in the southern part of the country, is home to about 2.5 million people. The woman, called "Patient 31" by Korea's Centers for Disease Control and Prevention, developed a fever on Feb. 10 and attended four church services before being diagnosed with COVID-19.

Despite running a fever, the woman twice refused to be tested for the coronavirus, as she had not recently traveled abroad, according to The Guardian. So far, she and 37 other members of the church have tested positive for the novel coronavirus, called SARS-CoV-2, and 52 additional churchgoers have shown symptoms of infection but have not yet been tested. (SARS-CoV-2 is the name of the coronavirus that causes COVID-19.)

Authorities described the outbreak as a "super-spreading event," as the lone woman transmitted the infection to an unusually high number of people, according to Reuters. Current estimates suggest that a single person with the novel coronavirus spreads the infection to about 2.2 additional people, on average. The surge of infection at the church brings the total number of confirmed cases in South Korea to 104; one death associated with the virus has occurred in the country so far.

"We are in an unprecedented crisis," Daegu Mayor Kwon Young-jin said during a news conference this week, Reuters reported. "We've asked [all members of the church] to stay at home, isolated from their families." Additionally, Kwon advised residents of Daegu to stay indoors and ordered that all schools for young children and public libraries be shut down, according to The Guardian. Local and U.S. military forces stationed in the city have been forbidden from traveling off base or receiving outside guests.

"It's like someone dropped a bomb in the middle of the city. It looks like a zombie apocalypse," resident Kim Geun-woo told Reuters by phone in regard to the abandoned streets of the city.'  [https://www.livescience.com/coronavirus-superspreader-south-korea-church.html] একজন মহিলা, যে কখনো দেশের বাইরে যায়নি, সে সাধারণ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে যাবার পর তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এমনকি তার মাধ্যমে নাকি তাৎক্ষণিক ৩৭ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে! এই  সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় যা ঘটতে শুরু করে, তা প্রতিবেদনটিতেই উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে কোনো কারণেই হোক, হাসপাতালে জ্বর পরীক্ষায় মহিলাটির জ্বর যখন করোনাভাইরাস হিসেবে শনাক্ত হয়, তখন কেউ একবারের জন্যও এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি যে, সে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে গিয়েছিল কিনা! মূলত এখানেই ছেলেধরার সাথে করোনাভাইরাসের মিল।

মহিলাটি যদি উহানে না গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে উহানের করোনাভাইরাস কিভাবে 'ভাইরাস' হয়ে তাকে আক্রমণ করলো? উহানের সাথে সম্পর্কহীন একজন মহিলা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের হোতা, এটা কিভাবে সম্ভব? ওই নারীর করোনাভাইরাস যদি উহানে না গিয়ে হতে পারে, অন্যদেরও কেন হতে পারে না? বিজ্ঞান নিউমোনিয়াকে সংক্রামক বলার কারণেই এই প্রশ্নের উৎপত্তি। যদি এই মহিলা সত্যিই করোনাভাইরাসের রোগী হয়ে থাকেন, পাশাপাশি চীন বা উহানের সাথে, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে তার কোনো যোগসূত্র না থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, হয়তো (১) দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস অন্য কোনো উৎস থেকে ছড়িয়েছে, যার প্রথম শিকার এই মহিলা। কিন্তু সেই অজ্ঞাত উৎস কী? সময়ই হয়তো এর সঠিক উত্তর দিতে পারে; নয়তো (২) মহিলাটির করোনা পরীক্ষার ফলাফল সঠিক ছিল না।

ছেলেধরা গুজবের সাথে করোনাভাইরাস গুজবের অমিলও রয়েছে অন্তত একটি। ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে গুজবটি যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু অপরিচিত ও নিরীহ মানুষ যখন মানুষের হাতে খুন হতে শুরু করে, তখন একটা মর্মান্তিক মৃত্যু মানুষের 'গুজব-বিশ্বাসে' প্রবলভাবে আঘাত হেনে 'গুজব বিশ্বাস'টি ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দেয়; মানুষকে গুজবটিতে বিশ্বাসের ভয়াবহতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার ফলে মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পারে; মানুষ 'ছেলেধরা বের হওয়া' গুজবে বিশ্বাস করা থেকে পিছু হটে। কিন্তু উহানের করোনাভাইরাস দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর গুজবটিকে এতোই শক্তভাবে মানুষ বিশ্বাস করে ফেলেছে, (১) বিগত কয়েক মাসে উহানের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথেও কোনোভাবে সম্পর্ক নেই, এমন কিছু মানুষ নিজেদের নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জাকে করোনাভাইরাস ভেবে আত্মহত্যা করার পরও,  (২) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভেবে একজনকে গুলি করে হত্যা করার পরও, (৩) 'চীনের নাগরিক এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত' ভেবে একজন ভারতের নাগরিককে শারীরিক নির্যাতনের পরও, (৪) মেয়ের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জাকে করোনাভাইরাস মনে করে আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবার পরও, (৫) এই চার রকম ঘটনার মতো আরো অনেক মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত গবার পরও, (৬) কোনোভাবে কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এসেও অসংখ্য মানুষের করোনা 'ভাইরাস' শনাক্ত হবার পরও, (৭) পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য মানুষ সাধারণ নিউমোনিয়া/ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েও করোনায় আক্রান্ত বলে অভিযুক্ত হবার পরও, এমনকি মারা যাবার পরও আমাদের টনক নড়েনি; আমরা করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' মনে করা থেকে এখনো পেছনে আসতে পারিনি। বরং আমরা এখনও বিশ্বাস করছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না এসেও, চীনে বা উহানে গত তিন-চার মাসে না গিয়েও মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে! জানি না আমাদের 'বোধ' জেগে উঠার জন্য আর কত ভয়াবহ ঘটনা সংঘটিত হওয়া দরকার!

করোনাভাইরাস নিয়ে গুজবের আরেকটা উদাহরণ দেখা যাক:
২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় 'করোনাভাইরাস : ভারতে ৪০ হাজার মানুষ 'সংক্রমিত' মাত্র একজনের কাছ থেকে' শিরোনামে। আতঙ্কিত হবার মতো সংবাদ। বিবিসির ইংরেজি ভার্সনের ওয়েবসাইটে অবশ্য সংবাদটি 'Coronavirus: India 'super spreader' quarantines 40,000 people' শিরোনামে প্রকাশিত হয় একই তারিখে। বলা হয়, 'Indian authorities in the northern state of Punjab have quarantined around 40,000 residents from 20 villages following a Covid-19 outbreak linked to just one man.
The 70-year-old died of coronavirus - a fact found out only after his death.
The man, a preacher, had ignored advice to self quarantine after returning from a trip to Italy and Germany, officials told BBC Punjabi's Arvind Chhabra.
India has 640 confirmed cases of the virus, of which 30 are in Punjab.
However, experts worry that the real number of positive cases could be far higher. India has one of the lowest testing rates in the world, although efforts are under way to ramp up capacity.

There are fears that an outbreak in the country of 1.3 billion people could result in a catastrophe.

The man, identified as Baldev Singh, had visited a large gathering to celebrate the Sikh festival of Hola Mohalla shortly before he died.
The six-day festival attracts around 10,000 people every day.' [https://www.bbc.com/news/world-asia-india-52061915]


অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারে ৩১ মার্চ তারিখে প্রকাশিত করোনাভাইরাসের সর্বশেষ হালনাগাদে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ১,২৫১ জন মাত্র!


উভয় তথ্যই কি সঠিক? কিভাবে হতে পারে! গুজব শুধু বাংলাদেশেই ছড়ায় না, ভারত-বৃটেন থেকেও গুজব ছড়ায়, হয়তো বেশি নয়, কম। করোনাভাইরাস নিয়ে এরকম গুজবে গুজবে পুরো বিশ্ব অস্থির। একদিন না একদিন মানুষের নিকট তা পরিষ্কার হবেই।
এটা একটা চরম বিস্ময়কর বিষয়, করোনাভাইরাস এতো ভয়ঙ্কর গুজব হয়ে দেখা দিয়েছে যে, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে, তার ধারেকাছে যাওয়া সবাইকে আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মনে করে বসি। গুজব আর কাকে বলে! এমন খবরগুলোই সমাজে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এক কান থেকে একশ কানে, গুণিতক হারে। খারাপ খবর দ্রুত ছড়ায়। আমরাই এসব খবর ছড়াই অন্যকে সতর্ক করার জন্য। কিন্তু যেসব লোককে করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়, শেষে যখন পরীক্ষায় তাদের করোনা নেগেটিভ আসে, সেই খবর আর তেমন প্রচারিত হয় না বা প্রচারিত হলেও যারা গুজবের খবর শুনেছে, তাদের সবার কানে পৌঁছে না।
এভাবে করোনার উপদ্রবের এই সময় চীনের বাইরের এমন অনেকের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ খুঁজে পাওয়াকেও করোনাভাইরাস বলেই বিশ্বাস করি, যাদের সাথে সম্প্রতি চীনে যাতায়াত বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না! কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না, এটি কোনো ভাইরাস নয়, 'কোনো নির্দিষ্ট কারণে' একটা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া মাত্র (যাকে অনেক জায়গায় বলা হয়েছে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া')। প্রশ্ন থেকে যায়, উহানের সাথে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সম্পর্ক ছাড়া যাদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে, করোনাভাইরাস যদি ছোঁয়াচে না হয়, তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব কিভাবে পাওয়া গেছে? যৌক্তিক প্রশ্ন। আমার বিশ্বাস, আর মাত্র এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া গেলে করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বলে বিশ্বাস করার শক্তি আমাদের অনেকের অনেকাংশে কমে যাবে। তবে বিজ্ঞানের প্রতি অতি বিশ্বাসী এবং পরিষ্কার ভিন্নমত বুঝে নিতে বা মেনে নিতে দ্বিধান্বিত কিছু লোক থেকেই যাবে, যারা হাজারো যুক্তি, তথ্য দিয়ে বুঝালেও নিজেদের মনে দীর্ঘদিন থেকে লালন করা এই ধারণাটা কোনোভাবে হাতছাড়া করতে রাজি হবেন না। এদের কাছ উপযুক্ত তথ্য/যুক্তি উপস্থাপন করা 'উলুবনে মুক্তা ছড়ানো' ছাড়া কিছু নয়।

চীনে যদি করোনাভাইরাসের এই উপদ্রব না হতো...
গত বছরের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উহানে গণমৃত্যু শুরু হয়। শুধু উহান নয়, উহানের পর পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও মানুষ উহানের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে শুরু করে, কেউ উহানে থাকা/গমন করা বা 'উহান ফেরত' কারো সংস্পর্শের কারণে, কেউ 'উহান ফেরত' কারো সংস্পর্শ ছাড়াই, এমনকি উহানে অবস্থান বা গমনের কোনো নাম-গন্ধ ছাড়াই! উহানে যদি করোনাভাইরাসের এই উপদ্রব দেখা না দিতো এবং শুধু উহান নয়, পৃথিবীর কোথাও যদি গত তিন মাসে এমন কোনো 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া'য় (এই ভাইরাসকে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' শুধু এখানেই বলা হয়নি, উইকিপিডিয়ায়ও '2019–20 coronavirus outbreak' শিরোনামের নিবন্ধে চীনের উহানের মানুষকে ব্যাপকহারে আক্রমণকারী এই রোগকে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'In late December 2019, a cluster of pneumonia cases of unknown cause was reported by health authorities in Wuhan, Hubei Province, People's Republic of China. The initial cases mostly had links to the Huanan Seafood Wholesale Market and consequently, the virus is thought to have a zoonotic origin. The virus that caused the outbreak is known as SARS-CoV-2, a new virus which is closely related to bat coronaviruses, pangolin coronaviruses and SARS-CoV-1.
The earliest reported symptoms occurred on 1 December 2019, in a person who had not had any exposure to the Huanan Seafood Wholesale Market or to the remaining 40 of the first cluster detected with the new virus. Of this first cluster, two-thirds were found to have a link with the market, which also sold live animals.' Link: https://en.wikipedia.org/wiki/2019%E2%80%9320_coronavirus_outbreak এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটেও Coronavirus disease (COVID-19) outbreak শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়, On 31 December 2019, WHO was informed of a cluster of cases of pneumonia of unknown cause detected in Wuhan City, Hubei Province of China. (Link: https://www.who.int/westernpacific/emergencies/covid-19গণমৃত্যুর ঘটনা না ঘটতো, তাহলে যেসব দেশে এখন এমন সব লোকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে, যাদের সাথে উহান বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে কোনো রকম সম্পর্ক নেই, তারা কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো না? অবশ্যই হতো। উহানের সাথে বা কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সাথে কোনো রকম সম্পর্ক ছাড়াই যদি তারা আক্রান্ত হতে পারে, তাহলে উহানে কী ঘটেছে বা ঘটেনি, তার সাথে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোনো সম্পর্কই থাকার কথা নয়। যদি অন্য কোনো কারণে এখন তাদের শরীরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হতো, তাদের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যেতো।

করোনাভাইরাসকে যারা 'ভাইরাস' ভাবতেই পছন্দ করে এবং কোনোভাবেই চায় না তাদের এই বিশ্বাস ভেঙ্গে যাক, এই উত্তরটি সঠিক বলে মেনে নিতে কি তাদের কোনো অসুবিধা আছে?। কিন্তু ইতোপূর্বেকার আলোচনা যাদের মন থেকে 'নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো ছোঁয়াচে রোগ' এই বিশ্বাসের ভুত অনেকটাই দূর করে ফেলেছে, এই প্রশ্নের উত্তর মেনে নিতে তাদের এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না।
উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা না দিলেও তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো হয়তো (১) এমন কোনো উৎস থেকে, যেরকম উৎস থেকে উহানে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, নয়তো (২) করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ত্রুটির কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়েও শুধু সর্দি-জ্বরে ভোগার কারণে তারা পরীক্ষায় 'করোনাভাইরাস পজিটিভ' হিসেবে শনাক্ত হতো। এই কথাটা বুঝে নেয়া কি সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী কারো পক্ষে কঠিন?

'করোনাভাইরাস: গত ২৪ ঘন্টায় বিশ্ব-মহামারী ঠেকানোর সুযোগ কি আরও কমে গেছে?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিবিসির মেডিক্যাল করেসপন্ডেন্ট ফারগাস ওয়ালশ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান এবং ইটালিতে করোনাভাইরাসের যে সার্বিক অবস্থা, তাকে একটি বিশ্ব-মহামারীর প্রাথমিক ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
"এই প্রত্যেকটি দেশেই আমরা দেখছি করোনাভাইরাস এমনভাবে ছড়াচ্ছে যার সঙ্গে চীনের কোন সম্পর্ক নেই। ইরানের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ সেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন একই সঙ্গে কয়েকটি শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। লেবাননে যে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেটিও ইরান থেকে ফেরা এক মানুষের মাধ্যমে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।" [https://www.bbc.com/bengali/news-51615567]

দ্য কনভার্সেশনের ওয়েবসাইটে 'How does the coronavirus test work? 5 questions answered' শিরোনামে প্রকাশিত রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'র জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মৌরিন ফেরান কর্তৃক লিখিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The main symptoms of COVID-19, the disease caused by the coronavirus SARS-CoV-2, are fever, dry cough and shortness of breath. These look a lot like the flu and the common cold, so it takes a physician to determine if testing for the virus is necessary.

Initially, the Centers for Disease Control and Prevention recommended testing only people with symptoms and who had potentially been exposed to the virus. But to the surprise of public health officials, several of the first people in the U.S. who tested positive for the virus had no obvious exposure. This development suggested that the virus was being transmitted locally, meaning it was spreading from person to person easily and/or that people may have been transmitting the virus without experiencing serious symptoms.'        [https://theconversation.com/how-does-the-coronavirus-test-work-5-questions-answered-133118]

একজন সচেতন, চোখ-কান খোলা এবং সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী মানুষ হিসেবে আপনিই বলুন, যারা বিগত কয়েক মাসে উহানে বা চীনে যায়নি এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে যাদের কোনো যোগসূত্র নেই, তারা কিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে? এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি সত্যিই আক্রান্ত হয়, তাহলে করোনাভাইরাস কি আর 'ভাইরাস' থাকে? যদি এটাকে সম্ভব বলে মনে করা হয়, তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে, করোনাভাইরাস শুধু মানুষ থেকে মানুষে নয়, এক দেশ থেকে আরেক দেশেও চলে যেতে পারে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিন্তু তা কি সম্ভব? কখনোই না। বিজ্ঞান তো এটা কখনো বলেনি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এরকম রোগগুলোর ভাইরাস মাঝে মাঝে এক দেশের লোক থেকে আরেক দেশের লোকের শরীরেও সংক্রমিত হয়! করোনাভাইরাস সম্পর্কেও এখনো এমন কোনো মন্তব্য করা হয়নি, এটা এক দেশ থেকে আরেক দেশে কোনো বাহক ছাড়া বাতাসে উড়ে উড়ে চলে যেতে পারে!

নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ছোঁয়াচে না হলে করোনাভাইরাসও ছোঁয়াচে নয়
যারা নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব রোগকে সংক্রামক বলে প্রচার করতো, এসব ঘটনা দেখে তারা এখন বোবা হয়ে আছে। তারা ভাবছে আমরা তো বলে থাকতাম, এসব রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়; সর্বোচ্চ ৬ ফুটের মধ্যে থাকা কারো মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে, হাঁচি-কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়, কিন্তু এখন দেখি শুধু ৬ ফুট নয়, আমাদের ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৬ হাজার মাইলের চেয়েও বেশি দূরের দেশের অনেকের শরীরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে, যেখানে হাঁচি-কাশির শব্দ পর্যন্ত পৌঁছাও সম্ভব নয়! তাহলে কিভাবে এমন ঘটনা ঘটে?
একজন সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী মানুষ হিসেবে আপনি বলুন, করোনাভাইরাসের জীবাণু কি বাতাসের মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যেতে পারে? এমন দিনও হয়তো অপেক্ষা করছে, করোনাভাইরাস এক দেশের মানুষের শরীর থেকে আরেক দেশের মানুষের শরীরে সংক্রমিত হবার ঘটনাগুলোকেও 'করোনাভাইরাসের নতুন রূপ' হিসেবে বিশ্বাস করানোর পক্ষে আর কোনো বিকল্প যুক্তি খুঁজে না পেয়ে এরকম কথাই প্রচার করা শুরু হতে পারে! কারণ বিজ্ঞান একটা কিছু বলে দিলেই হয়, সাধারণ মানুষ তা নিয়ে ভাববার কোনো অধিকার আছে বলে মনে না করে বা তা নিয়ে ভাববার কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে বিজ্ঞানের তত্ত্বকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেয়। যেমন: নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব রোগকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ বলে প্রচার করা হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। এখনো এটা নিয়ে কোনো শক্তিশালী ভিন্নমত প্রকাশের কথা জানা নেই।


American Lung Association এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'What Causes Pneumonia?' শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়, 'Pneumonia can be caused by a wide variety of bacteria, viruses and fungi in the air we breathe. Identifying the cause of your pneumonia can be an important step in getting the proper treatment.'
[https://www.lung.org/lung-health-and-diseases/lung-disease-lookup/pneumonia/what-causes-pneumonia.html]


এখানে নিউমোনিয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনার কোথাও বলা হয়নি অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে বা ঋতু পরিবর্তনের কারণে নিউমোনিয়া হয়। বরং এখানে নিউমোনিয়ার কারণের সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাককে। মানুষ এসব কথা যুগের পর যুগ ধরে শুনতে শুনতে, জানতে জানতে এসব কথার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কথা বিশ্বাস করতে চায় না, মেনে নিতে চায় না। একই ওয়েবসাইটে Pneumonia শিরোনামের নিবন্ধে নিউমোনিয়া সম্পর্কে বলা হয়, 'Pneumonia is an infection in one or both of your lungs caused by germs. It can be spread by coughing, sneezing or even breathing.' [https://www.lung.org/lung-health-and-diseases/lung-disease-lookup/pneumonia]


এই লেখার প্রথম পরিচ্ছেদেই একটি এক্সপেরিমেন্টের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব ফ্লু কোনো সংক্রামক রোগ নয়। কিভাবে তা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করা যাবে, সেই পদ্ধতিও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। পরে এক জায়গায় বলা হয়েছে, এগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যাবে না। অবশ্য প্রতিষেধক নাকি আবিষ্কারও হয়েছে, কিন্তু যারা টীকা নিচ্ছে, তারা উপকৃত হবার কথা নয়। কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা এবং ঋতু পরিবর্তনের কারণেই অধিকাংশ সময় মানুষ এইসব রোগে আক্রান্ত হয়। এগুলো যেমন ঠান্ডাজনিত রোগ, তেমনি মৌসুমী রোগও। প্রতিষেধক টীকা গ্রহণ করার পরও অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা এবং ঋতু পরিবর্তন মানুষকে এসব রোগ থেকে কোনোকালেই রেহাই দেবে না। এ ব্যাপারে আরেকটি কথা এখানে বলতে হচ্ছে, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদির সাথে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সম্পর্ক নেই। হাঁচি, কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এগুলো বা এগুলোর 'ভাইরাস' কোনোভাবেই একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে না। কথাটি বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করা হোক।

কোনো হাসপাতাল বা অন্য কোথাও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক বা একাধিক লোকের (শিশু বা বয়স্ক) সাথে তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার পরপরই সুস্থ-সবল ১০ থেকে ১০০ জনকে বা যে কোনো সংখ্যক মানুষকে (শিশু বা বয়স্ক) থাকতে দেয়া হোক। দেখা যাবে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যার বা যাদের সাথে ঐ ১০ থেকে ১০০ জন লোক বেশ কয়েকদিন থেকেছে, চিকিৎসার পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সে বা তারা নিউমোনিয়া থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে, কিন্তু এই ১০০ জনের কেউ তখনও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় নি। আক্রান্ত হলেও সর্বোচ্চ ২ জন বা ১ জন হতে পারে। হতে পারে এই কারণে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের সাথে অবস্থান না করলেও তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতো। এই এক্সপেরিমেন্ট চালানো যে কারো জন্য সহজ। অন্যভাবেও করা যেতে পারে। আপনি কি কখনো নিউমোনিয়া  বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত আপনার সন্তান বা পরিবারের কোনো সদস্যের কাছাকাছি থাকেননি কোন মাস্ক পরা ছাড়া? থেকেছেন, আপনার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষও থেকেছে। আপনার সন্তান বা পরিবারের সদস্যের রোগটি কি তখন আপনাকেও আক্রমণ করেছে? দু'একবার করতে পারে। সেটা আপনি এই রোগগুলোতে আক্রান্ত কারো কাছে না থাকলেও করতো। কারণ রোগগুলো ঠান্ডাজনিত এবং সিজনাল।
নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের সাথে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সম্পর্ক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করার জন্য এরকম একটা পরীক্ষা চালানোই যথেষ্ট। জানি না, যে ধারণা মানুষের মধ্যে 'ভাইরাস' ছড়াচ্ছে, গুজব হয়ে দেখা দিয়েছে, যে ধারণা মানুষকে আতঙ্কিত করছে, সেই ধারণাটিকে আমাদের আরো কিছু দিন বুকে আঁকড়ে ধরে রাখা উচিত, নাকি ছুঁড়ে ফেলে দেয়া উচিত? কোনটার মধ্যে আমাদের কল্যাণ?

এবার বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাক, রোগগুলো আসলেই ছোঁয়াচে কিনা?
ধরুন, আপনি সর্দি-জ্বর জাতীয় শারীরিক সমস্যা, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়া, এরকম কোনো একটায় ভুগছেন। এ অবস্থায় একদিন আপনি কোনো এক সামাজিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন ঐ বৈঠকের মধ্যমণি হিসেবে, যেখানে ২০ জনের মতো লোক ছিল, যাদের কারো আপনার মতো সমস্যা ছিল না, সবাই পুরো সুস্থ ছিলেন। তারা সবাই আপনার কাছাকাছিই বসেছিল।
বৈঠকটি চলমান ছিল ২ ঘন্টার মতো। শুধু তা-ই নয়, বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসংখ্যবার আপনার হাঁচি এবং কাশি এসেছে; আপনার নাক দিয়ে শ্লেষ্মাও নির্গত হয়েছে অনেক। কিন্তু আপনি মাস্ক ব্যবহার করেননি, কোনো টিস্যু বা রুমালও ব্যবহার করার সুযোগ পাননি, শুধু হাত ব্যবহার করেছেন জরুরী ক্ষেত্রে।
আপনার কি মনে হয়, আপনার ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়া উক্ত বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে? সবার মধ্যে না হলেও অন্তত একজনের মধ্যেও কি আপনার শারীরিক সমস্যাটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে? আপনার জীবনে কি এরকম ঘটনা কখনো ঘটেছে, আপনি একজনের সামনে হাঁচি বা কাশি দিলেন, তাতে ঐ লোকও আপনার হাঁচি-কাশিজনিত শারীরিক সমস্যায় (যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়া) আক্রান্ত হয়ে গেলো?
এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে একজনের সর্দি-কাশি বা সর্দি-কাশিজনিত সমস্যা কি আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে?
অথবা ধরুন, আপনি এবং আরো ১৯ জন মিলে মোট ২০ জন লোক কোনো এক জায়গায় গিয়েছেন এক ঘন্টা সময় ধরে হেঁটে হেঁটে। আপনাদের মধ্যে শুধু একজন নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভোগার কারণে বার বার হাঁচি এবং কাশি দিচ্ছিল। টিস্যু রুমালও ব্যবহার করছিল না, মাস্ক ব্যবহার করা দূরের কথা।
ওই লোকের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে আপনারাও কি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যাবেন? সবাই না হলেও অন্তত একজনও কি ওই লোক থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?


এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজলে অনেকের চোখ খুলে যাবে এই রোগগুলোর সম্পর্কে একটা বদ্ধমূল ধারণার অসারতার ব্যাপারে।



Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে 'How COVID-19 Spreads' শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'COVID-19 is a new disease and we are still learning how it spreads, the severity of illness it causes, and to what extent it may spread in the United States.


Person-to-person spread
The virus is thought to spread mainly from person-to-person.
Between people who are in close contact with one another (within about 6 feet).
Through respiratory droplets produced when an infected person coughs or sneezes.
These droplets can land in the mouths or noses of people who are nearby or possibly be inhaled into the lungs.' [https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/about/transmission.html]

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে Coronavirus শিরোনামে প্রকাশিত (নিয়মিত হালনাগাদকৃত) নিবন্ধে বলা হয়, 'Standard recommendations to prevent infection spread include regular hand washing, covering mouth and nose when coughing and sneezing, thoroughly cooking meat and eggs. Avoid close contact with anyone showing symptoms of respiratory illness such as coughing and sneezing.' [https://www.who.int/health-topics/coronavirus]

কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে 'How does coronavirus spread and how can you protect yourself?' শিরোনামে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে বলা হয়,

'How is the coronavirus spreading?
The coronavirus - known as COVID-19 - spreads from person to person in close proximity, similar to other respiratory illnesses, such as the flu.

Droplets of bodily fluids - such as saliva or mucus - from an infected person are dispersed in the air or on surfaces by coughing or sneezing.
These droplets can come into direct contact with other people or can infect those who pick them up by touching infected surfaces and then their face.

According to scientists, coughs and sneezes can travel several feet and stay suspended in the air for up to 10 minutes.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/01/coronavirus-spread-protect-200130115539072.html]

সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে 'Coronavirus: What are the symptoms, how it spreads and how to protect yourself' শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন Noah Higgins-Dunn, যা প্রকাশিত হয় ৪ মার্চ ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'The coronavirus’ spread is similar to the flu, according to World Health Organization. Whenever someone with the virus coughs or exhales, they release droplets of infected fluid that can land on nearby surfaces and can infect another person who comes in contact.' [https://www.cnbc.com/2020/03/04/coronavirus-what-are-the-symptoms-and-how-to-protect-yourself.html]

এই চারটি নিবন্ধ-প্রতিবেদনের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং প্রতিরোধ সম্পর্কিত প্রায় সব নিবন্ধ-প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসকে নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ হিসেবেই প্রচার করা হয়। বলা হয়, বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাসটি মূলত একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে (প্রায় ৬ ফুটের মধ্যে) ছড়িয়ে পড়ে; বলা হয়, সংক্রমিত ব্যক্তির লালা, শ্লেষ্মা ইত্যাদি তরলের ফোঁটা কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এমনকি ১০ মিনিট পর্যন্ত বাতাসে স্থির থাকতে পারে; বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধের আদর্শ সুপারিশগুলির মধ্যে নিয়মিত হাত ধোয়া, কাশি এবং হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ এবং নাক ঢেকে রাখা, মাংস এবং ডিম ভালোভাবে রান্না করা অন্তর্ভুক্ত। কাশি এবং হাঁচি দেওয়ার মতো শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার লক্ষণগুলো দেখানো কারও সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলতেও বলা হয়।

প্রথম অধ্যায়েও আমরা বুঝার চেষ্টা করেছি, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো ছোঁয়াচে নয়, এই প্রতিবেদনগুলো উল্লেখ করার আগেও প্রসঙ্গক্রমে আবারও 'নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো ছোঁয়াচে নয়' এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদি নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো বাস্তবে ছোঁয়াচে না হয়, এগুলো সম্পর্কে পূর্বধারণা (ছোঁয়াচে হওয়া) ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে করোনাভাইরাসের উপর থেকেও ছোঁয়াচে অপবাদের লেবেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে খসে পড়বে।

যেহেতু করোনাভাইরাস একটি ফুসফুসের সংক্রমণজনিত রোগ হবার কারণে একে নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ মনে করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে 'নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়' যখন প্রমাণিত হলো, তখন করোনাভাইরাস আর ছোঁয়াচে থাকে কিভাবে?!
সর্বশেষ প্রতিবেদনগুলো আমাদেরকে এই বিষয়টাও নিশ্চিত করে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সর্বোচ্চ ৬ ফুট (অবশ্য শুধু ৩ বা ৬ নয়, ২৭ ফুট দূর থেকেও করোনাভাইরাসে যে-কেউ সংক্রমিত হতে পারে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সহযোগী অধ্যাপক লিডিয়া বুরিবা। খবর নিউইয়র্ক পোস্ট ও ইউএসএ টুডে'র। নিউইয়র্ক পোস্টে ৩১ মার্চ ২০২০ তারিখে 'Coronavirus could travel 27 feet, stay in air for hours: MIT researcher' শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে (By Lee Brown) বলা হয়, 'Social-distancing guidelines to stay 6 feet from others may be woefully inadequate, one scientist warns — saying the coronavirus can travel 27 feet and linger for hours.

MIT associate professor Lydia Bourouiba, who has researched the dynamics of coughs and sneezes for years, warns in newly published research that the current guidelines are based on outdated models from the 1930s.

Rather than the assumed safety of 6 feet, Bourouiba warns that ''pathogen-bearing droplets of all sizes can travel 23 to 27 feet.'' [https://nypost.com/2020/03/31/coronavirus-could-travel-27-feet-stay-in-air-for-hours-mit-researcher/]) কাছে যারা কখনো যায়নি, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কথা নয়। এটা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, বিশ্বের নানা প্রান্তের যাদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে, যারা করোনায় আক্রান্ত কারো শুধু ৬ ফুট বা ২৭ ফুট নয়, বরং ২৭ মাইল কাছেও একটিবারের জন্যও যায়নি, চীনে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর থেকে চীনে যায়নি, তবু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা গুজব হবার সম্ভাবনাই বেশি, যদি গুজব না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে (১) চীনে 'একেবারে প্রথমে' করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকগুলো যে কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সেরকম কোনো কারণ কাজ করেছে চীনের পরবর্তী মানুষ এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের যেসব মানুষ চীনের সাথে কোনো যোগসূত্র ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার পেছনেও; অথবা (২) করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য যে পরীক্ষা করা হয়, সে পরীক্ষার ত্রুটির কারণেই তারা করোনা নেগেটিভ রোগী হয়েও পজিটিভ হয়ে গেছে।
পরবর্র্তী আলোচনাগুলো করা হবে এই দু'টি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানার জন্যই।
চীনে 'একেবারে প্রথমে' করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকগুলো ঠিক কী কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা না করে আগে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে  আলোচনা করা যাক। দেখা যাক, সেখানে সত্যিই কোনো ত্রুটি আছে কিনা!
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে আমরা বুঝতে পারবো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়, তবু বিশ্বের অনেক দেশের অনেক মানুষ পরীক্ষায় 'করোনাভাইরাসে পজিটিভ' হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।



করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় কিভাবে?
করোনাভাইরাস আসলে কী, এ সম্পর্কে এই লেখার প্রথম দিকে আলোচনা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় কিভাবে, তা জানার আগে করোনাভাইরাসের প্রকৃতি, লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে আরেকটু ভালোভাবে জানা দরকার।
যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে 'Radiological findings from 81 patients with COVID-19 pneumonia in Wuhan, China: a descriptive study' শিরোনামে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত গবেষণামূলক নিবন্ধে বলা হয়, 'A cluster of patients with coronavirus disease 2019 (COVID-19) pneumonia caused by infection with severe acute respiratory syndrome coronavirus 2 (SARS-CoV-2) were successively reported in Wuhan, China. We aimed to describe the CT findings across different timepoints throughout the disease course.' [https://www.thelancet.com/journals/laninf/article/PIIS1473-3099(20)30086-4/fulltext#section-3d6acba1-acea-4be2-8dc9-b7e14e5b6583]

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে 'Pneumonia of unknown cause – China' শিরোনামে ৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'On 31 December 2019, the WHO China Country Office was informed of cases of pneumonia of unknown etiology (unknown cause) detected in Wuhan CityHubei Province of ChinaAs of 3 January 2020, a total of 44 patients with pneumonia of unknown etiology have been reported to WHO by the national authorities in China. Of the 44 cases reported, 11 are severely ill, while the remaining 33 patients are in stable condition. According to media reports, the concerned market in Wuhan was closed on 1 January 2020 for environmental sanitation and disinfection.

The causal agent has not yet been identified or confirmed. On 1 January 2020, WHO requested further information from national authorities to assess the risk.

National authorities report that all patients are isolated and receiving treatment in Wuhan medical institutions. The clinical signs and symptoms are mainly fever, with a few patients having difficulty in breathing, and chest radiographs showing invasive lesions of both lungs.' [https://www.who.int/csr/don/05-january-2020-pneumonia-of-unkown-cause-china/en]

'What is Covid-19?' wk‡ivbv‡g GKwU wbeÜ cÖKvwkZ nq The Guardian-G 13 †deªæqvwi 2020 Zvwi‡L| †mLv‡b ejv nq, 'The virus can cause pneumonia. Those who have fallen ill are reported to suffer coughs, fever and breathing difficulties. In severe cases there can be organ failure. As this is viral pneumonia, antibiotics are of no use. The antiviral drugs we have against flu will not work. If people are admitted to hospital, they may get support for their lungs and other organs, as well as fluids. Recovery will depend on the strength of their immune system. Many of those who have died were already in poor health.' [https://www.theguardian.com/world/2020/feb/13/what-is-covid-19]

উইকিপিডিয়ায় চীনের উহানের মানুষকে ব্যাপকহারে আক্রমণকারী এই রোগকে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। উইকিডিয়ায় '2019–20 coronavirus outbreak' শিরোনামের (নিয়মিত হালনাগাদকৃত) নিবন্ধে বলা হয়, 'In Wuhan, during December 2019, a cluster of cases displaying the symptoms of a "pneumonia of unknown cause" was linked to Huanan Seafood Wholesale Market, which had a thousand stalls selling fish, chickens, pheasants, bats, marmots, venomous snakes, spotted deer, and other wild animals (ye wei, bushmeat). In January 2020, the hypothesis was that this was a novel coronavirus from an animal source (a zoonosis).' [https://en.wikipedia.org/wiki/2019%E2%80%9320_coronavirus_outbreak]

নিউজিল্যান্ড স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে 'COVID-19 (novel coronavirus) – health advice for the general public' শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে (সর্বশেষ ৫ মার্চ ২০২০ তারিখে হালনাগাদকৃত) বলা হয়, 
'Symptoms
Symptoms of COVID-19 are similar to a range of other illnesses such as influenza. Having any of these symptoms does not necessarily mean that you have COVID-19.
Symptoms include: fever, coughing, difficulty breathing.
Difficulty breathing is a sign of possible pneumonia and requires immediate medical attention.' [https://www.health.govt.nz/our-work/diseases-and-conditions/covid-19-novel-coronavirus/covid-19-novel-coronavirus-health-advice-general-public#whatis]

করোনাভাইরাস সম্পর্কে এই নিবন্ধগুলো থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়, এটা মূলত নিউমোনিয়া রোগ, অজ্ঞাত কোনো কারণে যার প্রাদুর্ভাব হয়েছে। লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এমনও বলা হয়েছে COVID-19 এর লক্ষণগুলি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণের মতোই। এককথায় করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার শরীরে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ ব্যতীত ভিন্ন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' বলেই প্রায় সব জায়গায় পরিচয় করা হয়, তাই দেখা যাক নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্তকরণ পরীক্ষা এবং করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা পদ্ধতি কি এক, নাকি ভিন্ন?

'What actually happens during a coronavirus test?' শিরোনামে সিএনএনের ওয়েবসাইটে করোনাভাইরাস শণাক্তকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে একটি নিবন্ধ (By Arman Azad) প্রকাশিত হয় ৪ মার্চ ২০২০ তারিখে, যা সর্বশেষ আপডেট করা হয় ১৩ মার্চ ২০২০ তারিখে। এমন একটি নিবন্ধ/প্রতিবেদনের জন্য খুব সম্ভবত ১০ থেকে ১২ দিন এই লেখাটিতে বিরতি দিয়ে তথ্যের সাগরে ডুব দিতে হয়। তেমন কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না পছন্দমতো। শেষে ১৩ তারিখে প্রকাশিত নিবন্ধটি পেয়ে ডুবন্ত অবস্থা থেকে ফিরে আসার মাধ্যমে লেখাটির বিরতি শেষ হয়। নিবন্ধটির একটা বড় অংশ উল্লেখ করা দরকার।
'(CNN)You have a fever. You're in respiratory distress. And you might even be hospitalized with pneumonia. Doctors worry you may have been infected with the novel coronavirus. What happens next?
Ideally, you'll be tested for the virus, which has sickened tens of thousands of people worldwide and killed more than 3,000.
While US health officials originally restricted coronavirus testing to only the sickest patients, Vice President Mike Pence announced earlier this month that any American -- with a doctor's order -- should soon be able to access the tests.
Questions remain over whether the US can meet a possible surge in testing demand, but those who are able to get tested can expect a fairly straightforward, and maybe even familiar, process.

You'll be swabbed
Testing for the new coronavirus isn't all that different from testing for the flu. First, doctors need to collect a specimen -- a sample that will be checked for the virus.

Health experts think the coronavirus replicates in the respiratory tract, causing respiratory illness, so the US Centers for Disease Control and Prevention recommends that clinicians swab your throat, going through both your mouth and your nose. People with "wet" coughs may also be asked to cough up sputum, a mixture of saliva and mucous.
It's unlikely that other bodily fluids will be tested, said Dr. David Hooper, chief of the Infection Control Unit at Massachusetts General Hospital. Because the illness so far has been flu-like and concentrated in the lungs, "they're probably not routinely testing for other types of body materials, such as stool or urine or blood. Although that may change in the future."

Your specimen will be sent to a qualified lab
Once a sample has been collected and stored in a sterile tube or vial, it's sent to a lab that has access to a test kit.
Quest Diagnostics and LabCorp have also launched their own tests and universities are developing tests, as well. ...

Your sample will be tested
Once samples arrive at a lab, technicians use a procedure called RT-PCR, or reverse transcriptase polymerase chain reaction, to look for the coronavirus. A similar test is sometimes used to identify the flu, and it allows clinicians to see whether a certain genetic sequence is present in a specimen -- such as the throat swab or sputum sample collected earlier.

Just like how every species has unique DNA, every virus has a unique genetic code. This code, called the viral genome, provides the blueprint for the virus as it replicates. Essentially, the coronavirus test works by determining whether any given specimen contains the distinct coronavirus genome.
To do that, technicians first extract any genetic information from the throat swabs and sputum samples. The purified genetic material is then mixed with a set of ingredients, including some derived from the coronavirus itself, and the entire solution is placed into a testing machine.
If a patient's specimen contains coronavirus, then the virus's genetic material will be amplified, and the machine will return a positive result. The viral sample will then be sent to the CDC's own lab in Atlanta, where the positive result will be confirmed.

How long does the test take?
Once a sample arrives at a state lab, test results can be available in as little as 24 hours, according to the Massachusetts Department of Public Health. That's important, said Hooper, because patients can be kept in isolation while awaiting coronavirus test results.
"When only the CDC was doing [tests] in the US," he said, "we would wait three days, or four, to get a result, which is obviously problematic if you have a patient in the hospital."

Individual hospitals are also working to develop their own tests, Hooper said, which "hopefully can be validated by the FDA under their emergency use protocol, and that would add to our capacity and would shorten turnaround time even further, so that we could potentially get a result within a couple of hours."
Commercial laboratories like LabCorp estimate three to four days from pickup of the specimen to release of the test result.
On Friday, the US Department of Health and Human Services announced it will fund two laboratories developing a diagnostic test that can detect novel coronavirus in approximately one hour.

What can go wrong?
Because the test looks for viral genetic material in a swab or sputum sample, the quality of a specimen is critical, said Hooper. "How much virus the patient actually is shedding, or is in the site that's sampled" also matters, he said.
A patient may shed more of the virus later in the infection than earlier, said Hooper, and the virus could have a greater affinity for certain parts of the respiratory tract. If the virus is drawn toward the lower respiratory tract, for example, then a throat swab may be less effective than a sputum sample.
It's also possible, Hooper said, that some people with the virus haven't been tested given the CDC's stringent testing criteria thus far. Coupled with limited testing capacity, clinicians have had to "prioritize the sickest and those in the hospital setting," he said.
But if enough tests were available, there would be "persons with exposure risks whom we would want to test even if they had few or no symptoms," said Hooper.
That's important not only for "public health reasons, but also to understand better what proportion of patients may shed virus before or even without symptoms altogether." [https://edition.cnn.com/2020/03/04/health/coronavirus-test-what-happens-explainer/index.html]

এই নিবন্ধ থেকে আমরা যেসব বিষয় পরিষ্কারভাবে জানতে পারি:
(এক) করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ হলো জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়া।
(দুই) নতুন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা ফ্লুর জন্য পরীক্ষা করা থেকে আলাদা নয়।
(তিন) ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ইনফেকশন কন্ট্রোল ইউনিটের প্রধান ডাঃ ডেভিড হুপার বলেছেন, এখনও অবধি অসুখটি ফ্লুর মতো।
(চার) নমুনাগুলি কোনও ল্যাবে পৌঁছানোর পরে প্রযুক্তিবিদরা করোনাভাইরাসটি অনুসন্ধানের জন্য 'আরটি-পিসিআর' নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
(পাঁচ) ফ্লু শনাক্ত করার জন্য মাঝে মাঝে করোনাভাইরাসের মতো একই ধরণের পরীক্ষা করা হয়।

'How can you find out if you have Coronavirus? You will have to take one of these 5 tests' শিরোনামে ইকোনোমিক টাইমসের ওয়েবসাইটে ৭ মার্চ ২০২০ তারিখে (সর্বশেষ হালনাগাদ ২০ মার্চ ২০২০) করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে আরও জানা যায়, 'What's the test name to detect coronavirus?
This strain of the coronavirus COVID-19 - does not have a readily available test kit. But it can nevertheless be detected by a series of tests in the hospital.'


করোনাভাইরাস COVID-19-এর এই স্ট্রেনটিতে সহজেই উপলব্ধ কোনো টেস্ট কিট নেই। তবে তবুও এটি হাসপাতালের বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। বিশেষ করে 'আরটি-পিসিআর' পদ্ধতির মাধ্যমেই সাধারণত করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়।

করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস সঠিকভাবে শনাক্তকরণ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা লাভ করার জন্য এবার আমরা 'Are Coronavirus Tests Accurate?' শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসিননেটের ওয়েবসাইটে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ (By Karina Lichtenstein) কী বলছে, তা একটু দেখি।

'New cases of the novel coronavirus continue to increase worldwide, with 73,332 confirmed global cases of COVID-19 as of today, according to the World Health Organization (WHO). That includes 72,528 cases in China and 804 cases in 25 countries outside of China.
Some have questioned the accuracy of the statistics released by the Chinese government regarding the reported number of cases and deaths due to the outbreak. Now there are concerns about the accuracy of the laboratory tests used to confirm diagnoses.

Reports suggest some people test negative up to six times even though they are infected with the virus, according to the BBC and Chinese media. Such was the case with Dr. Li Wenliang, the ophthalmologist who first identified the outbreak and was reprimanded by Chinese authorities when he tried to warn others.

Dr. Wenliang developed a cough and fever after unknowingly treating an infected patient. He was hospitalized, testing negative for coronavirus several times before eventually receiving a positive result. On Jan. 30 the doctor posted: "Today nucleic acid testing came back with a positive result, the dust has settled, finally diagnosed," according to the BBC. Dr. Wenliang passed away on February 7 in Wuhan, the epicenter of the outbreak.

False-negative test results, where patients are told they do not have a condition when they actually do, cause several problems. Patients may be turned away from hospitals and medical facilities when they require care. They may infect others at home, work, school, or in the community. Patients' conditions may also worsen without treatment.

When faced with a highly infectious, potentially deadly pathogen, even a small number of false negatives can have a potentially serious and widespread impact on the larger population.

How Do Doctors Diagnose COVID-19?
Doctors use a laboratory test called RT-PCR to diagnose severe acute respiratory syndrome coronavirus 2, or SARS-CoV-2, the virus that causes COVID-19 illness. RT-PCR detects and amplifies genetic material of interest. MedicineNet author Melissa Conrad Stöppler, MD notes that "RT-PCR has been used to measure viral load with HIV and may also be used with other RNA viruses such as measles and mumps."

However, RT-PCR tests for the novel coronavirus are not perfect and not always accurate. A recent study in the journal Radiology examined medical records from 167 patients with COVID-19 from Hunan province in China. Researchers found that five patients out of 167 -- 3% of the study group -- who had chest CT scan features suggestive of COVID-19 initially tested negative for SARS-CoV-2 infection by RT-PCR. The patients were isolated and all eventually were confirmed through repeated swab tests to have the infection.

False negatives comprised just 3% of the patient population in this study. However, failure to detect a small number of cases of the potentially deadly viral infection may have wide-ranging effects for patients and others who may become infected.

Why Are Coronavirus Tests Inaccurate?
The study authors note that RT-PCR tests may produce false negatives due to laboratory error or insufficient amount of viral material collected from the patient. Samples that are stored or handled improperly also result in false negatives.

Tests may result in false negatives if the patient is tested too early in the course of infection and there is insufficient amount of virus to be detected. Improper sampling may result in a false negative.

Another potential problem with test kits: Faulty reagents. The CDC recently admitted test kits they distributed resulted in inconsistent results due to a problematic reagent required for the test. They are now manufacturing the reagents using stricter quality control measures.

In the middle of cold and flu season, it is possible that some people who are being tested for coronavirus do not actually have the infection. Symptoms like cough and fever are nonspecific and may occur with many conditions other than COVID-19.

What's the Solution?
In addition to the possibility of false negatives, authors of the Radiology study note that lab testing for SARS-CoV-2 is time-consuming and that test kits may be in short supply due to the rising number of infections.

So, what's the solution? Doctors in Hubei recently started diagnosing COVID-19 clinically based on patients' symptoms and lung imaging. These cases are reflected in the global tally of infected individuals. Clinically-diagnosed cases account for the approximately 15,000 new cases reported by China last week.

The study authors note typical CT findings can help medical personnel with early screening of suspected cases. Lung imaging may also help predict potential severe complications of the illness.
The authors note that early detection and isolation are essential tools in fighting the novel coronavirus. They recommend isolation and repeat swab tests for those who have symptoms of the illness and characteristic chest CT findings despite negative RT-PCR tests.

How Many People Really ARE Infected?
Many factors are likely to confound the real number of those who have contracted or died from SARS-CoV-2. The inclusion of clinically diagnosed cases of COVID-19 may further muddle the issue. Professor Paul Hunter of the University of East Anglia told Science Media Centre that previously suspected cases of the illness are now considered confirmed cases even though some may be caused by illnesses other than COVID-19.'
[https://www.medicinenet.com/script/main/art.asp?articlekey=228250]

এই নিবন্ধ থেকে যা জানা হলো:

(এক) চিকিৎসকরা আরটি-পিসিআর নামে একটি পরীক্ষা ব্যবহার করেন গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সিন্ড্রোম করোনাভাইরাস ২ বা সার্স-কোভি-২ নির্ণয়ের জন্য, এটা এমন ভাইরাস, যা COVID-19 অসুস্থতার কারণ হয়।
(দুই) করোনাভাইরাসটির জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষা নিখুঁত এবং সর্বদা নির্ভুল নয়।
(তিন) রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলোর যথার্থতা সম্পর্কে উদ্বেগ রয়েছে।
(চার) গবেষণার লেখকরা নোট করেছেন যে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগুলি পরীক্ষাগারের ত্রুটির কারণে বা রোগীর কাছ থেকে সংগ্রহযোগ্য ভাইরাল উপাদানের অপর্যাপ্ত পরিমাণের কারণে ভুয়া নেগেটিভ ফলাফল তৈরি করতে পারে। যে নমুনাগুলি ভুলভাবে সংরক্ষণ করা হয় বা পরিচালনা করা হয় সেগুলো মিথ্যা নেতিবাচক ফলাফল প্রদান করে।
(পাঁচ) ঠান্ডা এবং ফ্লু মৌসুমের মাঝখানে, যাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়, তাদের অনেকের প্রকৃতপক্ষে সংক্রমন না হবার সম্ভাবনা থাকে। কাশি এবং জ্বরের মতো লক্ষণগুলি অনর্থক এবং এগুলো COVID-19 ব্যতীত অনেকগুলো শর্তের সাথে দেখা দিতে পারে।
(ছয়) হুবাইয়ের চিকিৎসকরা সম্প্রতি রোগীদের লক্ষণ এবং ফুসফুস ইমেজিংয়ের উপর ভিত্তি করে ক্লিনিক্যালী COVID-19 নির্ধারণ শুরু করেছেন। এই ঘটনাগুলো সংক্রমিত ব্যক্তিদের বিশ্ব তালিকায় প্রতিফলিত হয়।
(সাত) যারা সার্স-কোভি-২ তে আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গেছেন তাদের প্রকৃত সংখ্যাটি অনেক কারণেই বিভ্রান্তিকর হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
(আট) COVID-19-এর ক্লিনিক্যালি নির্ণয় করা মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্তি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।


করোনাভাইরাস শনাক্তকরন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি সম্পর্কে আরো কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:


বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ বাড়লো, একদিনে ২৪২ জনের মৃত্যু' শিরোনামে। সেখানে বলা হয়, 'চীনের হুবেই প্রদেশে বুধবার ২৪২ জনের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। বলা হচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এটিই ভয়ালতম দিন।
আক্রান্তের সংখ্যায়ও ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গিয়েছে। এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১৪, ৮৪০ জন। ...
এখন অবশ্য যাদের শরীরে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে তাদেরকেও সংক্রমিত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাবে এবং সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা যাবে তাদেরকেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত বলা হবে। এর আগে যথাযথ পরীক্ষা করে ভাইরাসের উপস্থিতি পেলেই তাকে সংক্রমিত বলা হতো।
সম্ভবত নতুন এই সংজ্ঞায়নের কারণে আক্রান্তের সংখ্যার এই উল্লম্ফন একারণেই দেখা গেছে।
উহানে বুধবার মারা যাওয়া ২৪২ জনের মধ্যে ১৩৫ জনই ছিলো নতুন এই সংজ্ঞার অধীনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত।
নতুন এই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদেরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন কোভিড-১৯ বলেই অভিহিত করছে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51484851]

'করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে চিকিৎসক-নার্সদের চুল ফেলে দেয়ার হিড়িক' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে বুধবার। ওইদিন দেশটিতে করোনা আক্রান্ত কমপক্ষে ২৫৪ জন মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গলবার দেশটিতে সর্বনিম্ন আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আগের দিনের চেয়ে কম হয়। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকটাই আশার আলো জাগে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু বুধবার থেকে ভাইরাস শনাক্তকরণে নতুন পদ্ধতি অবলম্বনে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এতোদিন ধরে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য শুধু আরএনএ পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল ছিল। এতে রিপোর্ট পেতে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতো।
বুধবার থেকে দ্রুত করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হতে সিটি স্ক্যান শুরু করা হয়। যার ফলে বৃহস্পতিবার হুবেইয়ে ১৪ হাজার ৮৪০ জনকে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।' [https://www.jugantor.com/international/278167]

'চীনে বিভীষিকার দিন' শিরোনামে বিবিসি, এএফপি ও সিএনএনের সূত্রে এরকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক সমকালে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বাঁচার আকুতিতে ভারি হয়ে উঠেছে উহানের লাশ পোড়া বাতাস। করোনাভাইরাস কভিড-১৯ মৃত্যুর ফরমান নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেখানকার অলিগলি। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মৃতদের পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে লাশ পোড়া বাতাস ছড়িয়ে যাচ্ছে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে আরও দূরে। প্রায় দেড় মাস অবরুদ্ধ থাকা এক মৃত্যুপুরী যেন উহান। সেখানে আটকা পড়েছেন বহু বিদেশিও। খাদ্য সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই মৃত্যু উপত্যকায় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা।

চীনের হুবেই প্রদেশে শুধু বুধবার মারা গেছেন ২৪২ জন এবং অন্যান্য প্রদেশে ১২ জন। এদিন দেশটিতে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬৭ জনে। এক দিনে দেশটিতে নতুন করে ১৪ হাজার ৮৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে মোট আক্রান্তের সর্বশেষ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে।
চীনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদ্ধতি বদলানোয় দেশটিতে এক দিনেই কভিড-১৯ রোগে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা হুট করে বেড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। হুবেই প্রদেশে এখন কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ যেমন- জ্বর, সর্দি, শুস্ক কাশি দেখা দিলেই তাকে সংক্রমিত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কারও ফুসফুসের সংক্রমণ ধরা পড়লেও তাকে সংক্রমিত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর আগে নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ-আরএনএ) পরীক্ষা করে ভাইরাসের উপস্থিতি পেলেই তাকে সংক্রমিত বলা হচ্ছিল। ফলে আগে যে প্রক্রিয়ায় তথ্য দেওয়া হতো, প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও খারাপ বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসির চীন প্রতিনিধি স্টিফেন ম্যাকডোনেল আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে এক বিশ্নেষণে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, চীনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদ্ধতিতেই গলদ আছে।' [https://samakal.com/todays-print-edition/tp-first-page/article/200226116]

এই প্রতিবেদনগুলো থেকে পরিষ্কার হয়, চীনে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কারো ফুসফুসের সংক্রমণ ধরা পড়লেও তাকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবেই ধরা হচ্ছে। কিন্তু ফুসফুসের সংক্রমণটা কি সাধারণ নিউমোনিয়ার কারণে, নাকি অন্য কারণে তা যাচাই করার যেমন সুযোগ নেই, প্রয়োজনও মনে করা হয় না। এটার প্রধান একটা কারণ এই হতে পারে, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য বিশেষ কোনো কীট নেই। কিন্তু তাই বলে যদি সাধারণ বা সিজনাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্তকেও করোনাভাইরাসের রোগী বলে গণ্য করা হয় এবং করোনাভাইরাসের চিকিৎসার মতো তাদের চিকিৎসা করা হয়, তাহলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়বে, করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের সংখ্যাও বাড়বে, তাই না?

'Are coronavirus tests flawed?' শিরোনামে বিবিসির ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। তৈরি করেন বিবিসির স্বাস্থ্য এবং বিজ্ঞান সংবাদদাতা James Gallagher. নিবন্ধটির প্রায় পুরোটাই এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে:
'There are deep concerns laboratory tests are incorrectly telling people they are free of the coronavirus.

Stories in several countries suggest people are having up to six negative results before finally being diagnosed.
Meanwhile, officials in the epicentre of the epidemic, Hubei province, China, have started counting people with symptoms rather than using the tests for final confirmation.
As a result, nearly 15,000 new cases were reported on a single day - a quarter of all cases in this epidemic.

What are these tests and is there a problem with them?
They work by looking for the genetic code of the virus.
A sample is taken from the patient. Then, in the laboratory, the virus's genetic code (if it's there) is extracted and repeatedly copied, making tiny quantities vast and detectable.

These "RT-PCR" tests, widely used in medicine to diagnose viruses such as HIV and influenza, are normally highly reliable.

"They are very robust tests generally, with a low false-positive and a low false-negative rate," Dr Nathalie MacDermott, of King's College London, says.

But are things going wrong?
A study in the journal Radiology showed five out of 167 patients tested negative for the disease despite lung scans showing they were ill. They then tested positive for the virus at a later date.

And there are numerous anecdotal accounts.

These include that of Dr Li Wenliang, who first raised concerns about the disease and has been hailed as a hero in China after dying from it.
Dr Li posted a picture of himself on social media from his hospital bed, on 31 Jan. The next day, he said, he had been diagnosed for coronavirus.
He said his test results had come back negative on multiple occasions before he had finally been diagnosed.
Chinese journalists have uncovered other cases of people testing negative six times before a seventh test confirmed they had the disease.
And similar issues have been raised in other affected countries, including Singapore and Thailand.
In the US, meanwhile, Dr Nancy Messonnier, of the Centers for Disease Control and Prevention, says some of its tests are producing "inconclusive" results.

What might be going on?
One possible explanation is the tests are accurate and the patients do not have coronavirus at the time of testing.
It is also cough, cold and flu season in China and patients may confuse these illnesses for coronavirus.
"The early signs of coronavirus are very similar to other respiratory viruses," Dr MacDermott says.
"Maybe they weren't infected when first tested.
"Then, over the course of time, they became infected and later tested positive for the coronavirus. That's a possibility."
Another option is the patients do have the coronavirus but it is at such an early stage, there is not enough to detect.
Even though RT-PCR tests massively expand the amount of genetic material, they need something to work from.
"But that doesn't make sense after six tests," Dr MacDermott says.
"With Ebola, we always waited 72 hours after a negative result to give the virus time."
Alternatively, there could be a problem with the way the tests are being conducted.

There are throat swabs and then there are throat swabs.
"Is it a dangle or a good rub?" asks Dr MacDermott.
And if the samples are not correctly stored and handled, the test may not work.
There has also been some discussion about whether doctors testing the back of the throat are looking in the wrong place.
This is a deep lung infection rather one in the nose and throat.

However, if a patient is coughing, then some virus should be being brought up to detect.

Coronaviruses are named for the tiny "crowns" that protrude from their surface.
A final option is the RT-PCR test for the new coronavirus is based on flawed science.
In order to develop the test, researchers must first pick a section of the virus's genetic code.
This is known as the primer. It binds with the matching code in the virus and helps bulk it up. Scientists try to pick a region of the virus's code they do not think will mutate.
But if there is a poor match between the primer and the virus in the patient, then an infected patient could get a negative result.
At this stage, it is impossible to tell exactly what is going on so lessons for other countries are unclear.
"It is not going to change that much," Dr MacDermott says.
"But it flags up that you have to test people again if they continue to have symptoms." [https://www.bbc.com/news/health-51491763]

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলায় প্রতিবেদনটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয় 'করোনাভাইরাস: শনাক্তকরণ পরীক্ষা পদ্ধতি কি ত্রুটিপূর্ণ?' শিরোনামে। [https://www.bbc.com/bengali/news-51523745]

এই প্রতিবেদনগুলো থেকে আমরা যেসব বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনেছি, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
(এক) চীনে ১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে তাদেরকেও সংক্রমিত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
(দুই) যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাবে এবং সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা যাবে তাদেরকেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত বলা হবে। এর আগে যথাযথ পরীক্ষা করে ভাইরাসের উপস্থিতি পেলেই তাকে সংক্রমিত বলা হতো।
(তিন) হুবেই প্রদেশে ১২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কারো শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ যেমন- জ্বর, সর্দি, শুষ্ক কাশি দেখা দিলেই তাকে সংক্রমিত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কারো ফুসফুসের সংক্রমণ ধরা পড়লেও তাকে সংক্রমিত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর আগে নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ-আরএনএ) পরীক্ষা করে ভাইরাসের উপস্থিতি পেলেই তাকে সংক্রমিত বলা হচ্ছিল।
(চার) চীনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদ্ধতিতেই গলদ আছে বলে সন্দেহ।
(পাঁচ) এইচআইভি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাস নির্ণয়ের জন্য বহুল ব্যবহৃত "আরটি-পিসিআর" পরীক্ষাগুলো সাধারণত অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
(ছয়) At this stage, it is impossible to tell exactly what is going on so lessons for other countries are unclear.

(সাত) শেষ প্রতিবেদনের এই অংশটির দিকে আমরা আবার লক্ষ্য করি: বলা হয়েছে,

It is also cough, cold and flu season in China and patients may confuse these illnesses for coronavirus.
"The early signs of coronavirus are very similar to other respiratory viruses," Dr MacDermott says.

চীনা সাংবাদিকরা এমন সব লোকের তথ্যও প্রকাশ করেছে, সপ্তমবারের পরীক্ষায় যাদের করোনাভাইরাসের ফলাফল পজিটিভ আসার আগে প্রথম ছয়বারের পরীক্ষায় যাদের ফলাফল নেগেটিভ হয়েছে এবং সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে অনুরূপ ইস্যু উত্থাপিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর ডাঃ ন্যান্সি মেসনিয়ার বলেছেন, এর কয়েকটি পরীক্ষা "অনির্বাচিত" ফলাফল তৈরি করছে।
একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল পরীক্ষাগুলো সঠিক এবং রোগীদের পরীক্ষার সময় করোনাভাইরাস ছিল না।
চীনে এখন কাশি, সর্দি এবং ফ্লু এর মওসুম চলমান এবং রোগীরা এই অসুস্থতাগুলোকে করোনাভাইরাস ভেবে বিভ্রান্ত হতে পারে।
ডক্টর ম্যাকডার্মট বলেছেন, "করোনাভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের সাথে খুব মিলে যায়।
"প্রথমবার পরীক্ষা করার সময় হয়তো তারা সংক্রমিত ছিল না।
"তারপরে, সময়ের সাথে সাথে তারা সংক্রমিত হবার পর করোনভাইরাসের জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছিল। এটি মাত্র একটি সম্ভাবনা।"

প্রশ্ন হতে পারে: ১. ছয় ছয়বার পরীক্ষা করার পরও যাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি এবং যাদের ব্যাপারে মনে করা হয়, তাদের পরীক্ষার সময় ওদের শরীরে করোনাভাইরাস ছিল না, তাহলে তাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হলো কেন? শতবার ভেবেও এই প্রশ্নটির গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে তারা হিমশিম খাবে, যারা করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' মনে করে এবং এটা প্রচার করে করে বিশ্বব্যাপী মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত এবং আতঙ্কিত করার পেছনে, মানবসমাজে বিপর্যয় ডেকে আনার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। অবাক লাগে, আমরা করোনাভাইরাস এমন এক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করি, যা নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচআইভি ইত্যাদি রোগ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। আমরা এমন অসংখ্য মানুষেরও করোনাভাইরাস পরীক্ষা করি, যাদের শরীরে করোনাভাইরাস নেই; এমনকি ছয় ছয়বার পরীক্ষা করেও যাদের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

২. যেহেতু বলা হয়েছে, চীনে এখন কাশি, সর্দি এবং ফ্লু এর মওসুম চলমান এবং রোগীরা এই অসুস্থতাগুলোকে করোনাভাইরাস ভেবে বিভ্রান্ত হতে পারে। ডক্টর ম্যাকডার্মট বলেছেন, "করোনাভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের সাথে খুব মিলে যায়"; সেহেতু এটা কি সম্ভব নয়, অনেক অনেক মানুষের সাধারণ বা সিজনাল নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জাটা করোনাভাইরাস হিসেবেই শনাক্ত হয়ে যায়?

সর্বোপরি 'করোনাভাইরাস একটি ভাইরাস' এবং 'নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ' এই দু'টি পূর্বধারণাকে মাথার একপাশে রেখে 'Are coronavirus tests flawed?' এবং এর আগের এ সম্পর্কীয় নিবন্ধ/প্রতিবেদনগুলো অক্ষরে অক্ষরে পড়লে এই দু'টি পূর্বধারণাকে মাথার একপাশ থেকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে ঐ সমস্ত লোকের অনেক কষ্ট হতে পারে, যারা খোলা মন নিয়ে এই নিবন্ধ পড়ছেন।

অন্তত এই লেখার প্রথম অধ্যায় কেউ খোলা মন নিয়ে পড়লেই চলবে, এই নিবন্ধ/প্রতিবেদনগুলো পড়ারও প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যাদের মনে কোনো না কোনো দোষ আছে; যাদের মনুষত্ববোধে ত্রুটি আছে, তারা এই নিবন্ধের শক্তির চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী নিবন্ধ পড়লেও তাদের চিন্তাধারা তারা পাল্টাবে না। মানবজাতির সত্যিকার ক্ষতি এরাই করে। এরা মানুষ নয়, মানুষের ঘরে জন্ম নেয়া কোনো ভয়ঙ্কর বিষাক্ত প্রাণী।

পূর্বধারণা দু'টিকে মাথার একপাশ থেকে মাথার ভেতরে আগের জায়গা ফিরিয়ে নিতে বাধা দিতে পারে, এমন আরো কয়েকটি প্রতিবেদন/নিবন্ধ দেখা যাক:

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম EurekAlert এর ওয়েবসাইটে ৫ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত 'Wuhan CT scans reliable for coronavirus (COVID-19) diagnosis, limited for differentiation' শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়, 'Chest CTs have low rate of misdiagnosis and can standardize imaging features and transformation rules for rapid diagnosis, yet modality is limited for identification of and distinguishing between specific viruses.


Leesburg, VA, March 5, 2020--An article by radiologists from Wuhan, China--published open-access and ahead-of-print in the American Journal of Roentgenology (AJR)--concluded that chest CT had a low rate of misdiagnosis of COVID-19 (3.9%, 2/51) and could help standardize imaging features and rules of transformation for rapid diagnosis; however, CT remains limited for the identification of specific viruses and distinguishing between viruses.
Yan Li and Liming Xia at Tongji Hospital in Hubai Province studied the first 51 patients diagnosed with COVID-19 infection confirmed by nucleic acid testing (23 women and 28 men; age range, 26-83 years) and two patients with adenovirus (one woman and one man; ages, 58 and 66 years). In their retrospective cohort of 53 patients, as of February 9, a total of 99 chest CT examinations had been performed.
Comparing image reports of the initial CT study with laboratory test results to identify patterns suggestive of viral infection, according to Li and Xia, "COVID-19 was misdiagnosed as a common infection at the initial CT study in two patients with underlying disease and COVID-19."

Meanwhile, viral pneumonia was correctly diagnosed at the initial CT study in the remaining 49 patients with COVID-19 and two patients with adenovirus.

As Li and Xia explained: "CT of one of the two patients with confirmed adenovirus infection showed ill-defined patchy ground-glass opacities (GGOs), segmental and subpleural consolidations in both lungs, and pleural effusion. CT of the other patient showed subpleural GGOs and consolidation with vascular enlargement, interlobular septal thickening, and air bronchogram sign."

The CT findings seen in Li and Xia's two adenovirus cases were similar to those observed in their COVID-19 cases.

The two authors also found CT features of COVID-19 that differ from both severe acute respiratory syndrome coronavirus (SARS-CoV) and Middle East respiratory syndrome coronavirus (MERS-CoV): a reversed halo sign in two patients (3.9%) and pulmonary nodules with a halo sign in nine patients (17.6%).

"These findings are not mentioned, to our knowledge, in the studies in the literature," the authors noted.

"It is valuable for radiologists to recognize that the CT findings of COVID-19 overlap with the CT findings of diseases caused by viruses from a different family, such as adenovirus, and have differences as well as similarities with viruses within the same family, such as SARS-CoV and MERS-CoV," added Li and Xia.'
[https://www.eurekalert.org/pub_releases/2020-03/arrs-wcs030520.php]

এখানে বলা হয়েছে,
(এক) বুকের সিটিগুলিতে ভুল রোগ নির্ণয়ের হার কম থাকে এবং দ্রুত নির্ণয়ের জন্য ইমেজিং বৈশিষ্ট্য এবং রূপান্তরের নিয়মগুলোকে মানক করা যেতে পারে, তবুও নির্দিষ্ট ভাইরাসগুলোর শনাক্তকরণ এবং পার্থক্য করার জন্য কার্যকারিতা সীমিত।
(দুই) "অন্তর্নিহিত রোগ এবং COVID-19 আক্রান্ত দুটি রোগীর প্রাথমিক সিটি গবেষণায় একটি সাধারণ সংক্রমণ হিসাবে COVID-19 এ ভুল রোগ নির্ণয় করা হয়েছিল।" ...
লি এবং জিয়া'র দুটি অ্যাডেনোভাইরাস মামলায় দেখা সিটি ফলাফলগুলি তাদের COVID-19 ক্ষেত্রে দেখা একইরকম ছিল।
(তিন) "রেডিওলজিস্টদের পক্ষে এটি স্বীকৃতি মূল্যবান যে সিওভিড -১৯ এর সিটি ফলাফলগুলি অ্যাডেনোভাইরাস জাতীয় পরিবার থেকে ভাইরাসজনিত রোগের সিটি আবিষ্কারের সাথে ওভারল্যাপ হয় এবং তার মধ্যে পার্থক্য পাশাপাশি একই পরিবারে ভাইরাসের সাথে মিল রয়েছে যেমন, SARS-CoV এবং MERS-CoV হিসাবে।"

'পরীক্ষায়ও ধরা পড়ছে না করোনাভাইরাস সংক্রমণ' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস আক্রান্তদের অনেককে পরীক্ষার পরেও সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। চীনের চিকিৎসকরা এমনটিই জানিয়েছেন।
চীনের একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের প্রধান ওয়াং চেনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, অনেকের পরীক্ষার ফল ‘ফলস নেগেটিভ’ এসেছে।
তিনি চীনের টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অসুস্থদের যারা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে সত্যিই আক্রান্ত, টেস্ট করে তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
এই বিজ্ঞানী আরও জানান, এখনও অনেকের লালা পরীক্ষা করে ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। যার মানে সত্যিকার অর্থেই যতজন এন করোনাভাইরাস আক্রান্ত, তার অর্ধেকের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ধরা পড়েনি।
যে প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস প্রথমে ছড়িয়েছে, সেই হুবাই এখন করোনাভাইরাস শনাক্তে সিটি স্ক্যান শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, এই পরীক্ষায় দ্রুত রোগ শনাক্ত সম্ভব।'

[https://www.jugantor.com/international/276105]

এই প্রতিবেদন অনুসারে, করোনাভাইরাসে সত্যিই আক্রান্ত (অসুস্থ), তবু তাদের মধ্যে পরীক্ষায় শুধু ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের (গড়ে ৪০ শতাংশ) পজিটিভ ফলাফল আসছে! কেমন অদ্ভুত কথা। 'সত্যিই আক্রান্ত' যাদের পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসছে, পরীক্ষা ছাড়াই তারা 'সত্যিই আক্রান্ত', এটা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া গেলো!
অন্য কোনো ক্ষেত্র হলে এটা নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, হাসাহাসিও হতো হয়তো। সিরিয়াস বিষয় বলে কথা। প্রমাণিত হচ্ছে, পরীক্ষা ছাড়াই অনেককে 'করোনাভাইরাসের রোগী' বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনটা বিশ্বের কয়টা দেশে হয়েছে বা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী কতজন মানুষ এ পর্যন্ত এমন ঘটনার শিকার হয়েছে কেউ বলতে পারবে না। এমন ঘটনার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত কতজন মানুষ কত বিব্রতকর পরিস্থিতি শুধু নয়, বিপদ এবং ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, কেউ বলতে পারবে না। করোনাভাইরাসের প্রচলিত পরীক্ষা করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য যথাযথ নয় বলেই এমন অসংখ্য ঘটনাও অস্তিত্ব লাভ করছে, যাদের পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসছে, তারাও করোনাভাইরাস পজিটিভ! এদের অনেকের পরিণতি হয়েছে বড়ই বিপর্যয়কর।

'কীভাবে শনাক্ত করা হয় করোনাভাইরাস আছে কি নেই' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে, যা তৈরি করেছেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবরিনা মরিয়ম ইলিয়াস। সেখানে বলা হয়, 'মানুষের জিনটির উপস্থিতি অনেক সময় আরএনএ কম পরিমাণে থাকলে নাও আসতে পারে। কিন্তু যদি তিনটি PCR-ই নেগেটিভ আসে অর্থাৎ ডিএনএ বৃদ্ধি হতে না পারে, তাহলে আবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাটির পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এখানে বলে রাখা উচিত যে, PCR-এর পজিটিভ বা নেগেটিভ ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর মধ্যে রোগের কী কী লক্ষণ দেখা গেছে, তার অন্য কোনো অসুখ আছে কি না এবং আনুষঙ্গিক লক্ষণসমূহ বিবেচনা করে, তবেই রোগীর কোভিড-১৯ আছে কি নেই তা নির্ণয় করতে হবে। PCR-এর জন্য নমুনাগুলো তৈরি করার সময় প্রতিটি ধাপে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে মেশিনে বসানোর আগে পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কোনোভাবে একটি নমুনার সঙ্গে আরেকটি নমুনা মিশে গেলে PCR-এ 'ফলস পজিটিভ' ফলাফল আসতে পারে। অর্থাৎ, প্রকৃতপক্ষে রোগীর কোভিড-১৯ না থাকলেও রেজাল্ট আসতে পারে যে, তার আছে। আবার নমুনাগুলো সংগ্রহের সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে বা ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে বা জিনে কোনো ধরনের মিউটেশন বা পরিবর্তন থাকলে প্রাইমারটি ঠিকমতো সংযুক্ত হতে পারে না ডিএনএর সঙ্গে। এ ক্ষেত্রেও PCR-এ 'ফলস নেগেটিভ' রেজাল্ট আসবে। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে রোগীর কোভিড-১৯ থাকলেও রেজাল্ট আসতে পারে যে, তার রোগটি নেই; যেটা রোগীর সঠিক চিকিৎসার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য এই রোগ নির্ণয়ের প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করতে হয়।' [https://www.prothomalo.com/technology/article/1648639]

ফলস পজিটিভ ফলাফল আসার একটিমাত্র উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখে 'একেবারেই ভিন্ন উপসর্গ, তবুও করোনা আক্রান্ত এই তরুণী' শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে গোটা বিশ্ব। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা।
করোনাভাইরাসের লক্ষণ হিসেবে এতদিন সাধারণত সর্দি, জ্বর, কাশি ,শ্বাস কষ্টের কথা জানা যাচ্ছিল। তবে মানুষ ভেদে করোনার লক্ষণ ভিন্নও হতে পারে।
২০ বছর বয়সী এক মার্কিন নারী করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার লক্ষণগুলো প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে শেয়ার করেছেন করোনার ভিন্নধর্মী  লক্ষণ।
প্রথমে স্বাভাবিক ঠান্ডা লেগেছিল জুলিয়ার। ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে তার শরীরে ব্যথা শুরু হয়। সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা, গলা জ্বলা, কানে শুনতে না পাওয়ার সমস্যা ছিল তার। শরীরের তাপমাত্রা ছিল ১০০.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এরপর মার্চের ৩ তারিখ। কানে তখনও কিছু শুনছে পাচ্ছিলেন না তিনি। সেই সাথে কোনও কিছুর ঘ্রাণ নেওয়া বা স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না তার। তবে কোনও ধরনের কফ বা নাকে পানি আসার মত সমস্যা ছিল না জুলিয়ার।
দিনের পর দিন ক্রমাগত বাড়তে থাকে জুলিয়ার মাথা ব্যথা। যার জন্য স্বাভাবিকভাবে প্যারাসিটামল ওষুধ খেয়েছিলেন তিনি। এরপর বিশ্রামের জন্য মার্চের ৫ থেকে ১৩ তারিখে নিজেই কোয়ারেন্টাইনে যান জুলিয়া। তিনি বলেন, ততদিনে আমার সব সমস্যার সমাধান হতে শুরু করেছে, আমি কানে শুনতে পাচ্ছি, আমার ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়ও কাজ করছে। সেই সাথে মুখের স্বাদও ফিরে এসেছে।
এরপর ১৩ তারিখের পর পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে করোনা পরীক্ষা করান তিনি। মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজেটিভ আসে তার। অবাক হয়ে যান জুলিয়া। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যেসব সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কথা তার চেয়ে ব্যতিক্রম তার লক্ষণগুলো। তবুও কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এরপর পর্যাপ্ত চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন জুলিয়া।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/03/23/513511]

শেষে উল্লেখিত নিবন্ধ-প্রতিবেদনগুলো থেকে আমরা করোনাভাইরাসের পরীক্ষা সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেকগুলো বিষয় বুঝতে সক্ষম হয়েছি। সব বাদ দিলেও অন্তত এই কথাগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার হবার কথা:

(এক) করোনাভাইরাস COVID-19-এর এই স্ট্রেনটিতে সহজেই উপলব্ধ কোনো টেস্ট কিট নেই। তবে তবুও এটি হাসপাতালের বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। বিশেষ করে 'আরটি-পিসিআর' পদ্ধতির মাধ্যমেই সাধারণত করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়।
(দুই) 'আরটি-পিসিআর' পদ্ধতিটি এইচআইভি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেই সাধারণত ব্যবহার করা হয়।
(তিন) নতুন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা ফ্লুর জন্য পরীক্ষা করা থেকে আলাদা নয়।
(চার) সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কারো ফুসফুসের সংক্রমণ ধরা পড়লেও তাকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবেই ধরা হচ্ছে। কিন্তু ফুসফুসের সংক্রমণটা কি সাধারণ নিউমোনিয়ার কারণে, নাকি অন্য কারণে তা যাচাই করার যেমন সুযোগ নেই, প্রয়োজনও মনে করা হয় না। এই ফাঁকে সাধারণ নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত মানুষও করোনাভাইরাসের রোগী হিসেবে চিহ্নিত হবার সমূহ অবকাশ রয়েছে এবং হচ্ছেও।
(পাঁচ) আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগুলো পরীক্ষাগারের ত্রুটির কারণে বা রোগীর কাছ থেকে সংগ্রহযোগ্য ভাইরাল উপাদানের অপর্যাপ্ত পরিমাণের কারণে ভুয়া নেগেটিভ ফলাফল তৈরি করতে পারে।
(ছয়) করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী প্রচলিত পরীক্ষায় বড় ধরনের খুঁত রয়েছে, যে কারণে কখনো কখনো 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত' রোগীর পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসে, আবার 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়', এমন রোগীর পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল আসে।

এজন্য 'Are Coronavirus Tests Accurate?' শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসিননেটের ওয়েবসাইটে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Karina Lichtenstein) বলা হয়, 'Many factors are likely to confound the real number of those who have contracted or died from SARS-CoV-2. (যারা SARS-CoV-2 তে আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গেছেন তাদের আসল সংখ্যাটি অনেক কারণেই বিভ্রান্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।)'  [https://www.medicinenet.com/script/main/art.asp?articlekey=228250]

প্রশ্ন ছিল, যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না গিয়েও, গত কয়েক মাসে চীনে বা অন্য কোনো দেশে না গিয়েও বিশ্বের অনেক দেশের অনেক মানুষ করোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যায়, এমনকি মৃত্যুবরনও করে, তাহলে তারা কিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে?
এই প্রশ্নের প্রথম বিকল্প উত্তর হিসেবে আমরা করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে মোটামুটি অবহিত হবার পর এটা স্বীকার করতে নিশ্চয়ই কুন্ঠিত হবো না, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি বা বিভ্রান্তি থাকার কারণে যেভাবে 'করোনাভাইরাস আছে এমন' অনেকের ক্ষেত্রে নেগেটিভ ফলাফল আসে, তেমনি 'করোনাভাইরাস নেই এমন' অনেকের ক্ষেত্রে পজিটিভ ফলাফল আসে। পজিটিভ ফলাফল আসার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নতুন কোনো পরীক্ষা-পদ্ধতি উদ্ভাবন না করে (বা না থাকায়) নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষা করা হয় যে পদ্ধতিতে, সে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, চীনে শেষ দিকে যাদের শরীরে শুধু লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে (করোনাভাইরাস আর নিউমোনিয়ার লক্ষণ একেবারে কাছাকাছি), তাদের আর কোনো পরীক্ষা না করেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে কি এমন অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে পরিগণিত হয়নি, যারা সত্যিকারার্থে করোনাভাইরাসে নয়, বরং সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল?
একটি নিবন্ধে তো পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, 'CT remains limited for the identification of specific viruses and distinguishing between viruses (নির্দিষ্ট ভাইরাস শনাক্তকরণ এবং ভাইরাসের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য সিটি'র সীমাবদ্ধতা রয়েছে)'.
প্রচলিত পরীক্ষায় এই গুরুতর ত্রুটি থাকার পরও আমরা কিভাবে নিশ্চিত হতে পারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না গিয়েও, গত কয়েক মাসে চীনে বা অন্য কোনো দেশে না গিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, তাদের এটা সাধারণ নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা নয়, বরং সত্যিই করোনাভাইরাস? চীনে যদি এসময় করোনাভাইরাসের উপদ্রব দেখা না দিতো, তাহলে এসব নিউমোনিয়া সাধারণ নিউমোনিয়া হিসেবেই পরিগণিত হতো এবং এসব রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সাধারণ নিউমোনিয়ার চিকিৎসার মতোই করা হতো।
এই বিষয়টা আরো পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য এবার আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না গিয়েও এবং (চীন ছাড়া অন্য দেশের ক্ষেত্রে) গত কয়েক মাসে চীনে বা অন্য কোনো দেশে না গিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার আরো কিছু ঘটনা (কিছু ঘটনার পুণরোল্লেখও হতে পারে) আরেকটু কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করবো:

 (১) চীন:
'করোনাভাইরাসে নতুন আতঙ্ক, আক্রান্ত হলেও লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২২ ফেব্রুয়াারি ২০২০ তারিখে রয়টার্সের সূত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান থেকে চারশ মাইল উত্তরে আনইয়াংয়ে ভ্রমণে যান ২০ বছর বয়সী এক চীনা তরুণী। সেখানে তার সঙ্গে পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু তাদের কারোরই শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। ...
জানজু ইউনিভার্সিটি ও কলেজের পিপলস হাসপাতালের ডা. মেইউন ওয়াং বলেন, উহান থেকে এক নারী আনইয়াংয়ে গিয়েছিলেন গত ১০ জানুয়ারি। পরে স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। যখন তারা অসুস্থতা অনুভব করতে শুরু করেন, চিকিৎসক তাদের আলাদা করে ফেলেন এবং তাকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করেন।
প্রথম ওই নারীর শরীরে করোনাভাইরাস নেই বলেই দেখা গেছে। কিন্তু পরবর্তী পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে।
তার পাঁচ আত্মীয়ের শরীরেও কভিড-১৯ নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটেছে। কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই তরুণীর শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি।
তার বক্ষে সিটি স্ক্যানে তাকে স্বাভাবিকই দেখা গেছে। তার কোনো জ্বর ছিল না। পেটে ব্যথা কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসঘটিত কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি। ছিল না কোনো গলা ব্যথাও।
এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীদের দাবি, কভিড-১৯ ভাইরাসের প্রতিরোধ এতে কঠিন হয়ে পড়বে।' [https://www.jugantor.com/international/281232]

২০ বছর বয়সী ওই চীনা তরুণী উহান থেকে চারশ মাইল উত্তরে আনইয়াংয়ে ভ্রমণে যান ১০ জানুয়ারি। ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও ওই তরুণীর শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি! উহান-ফেরত ওই তরুণী উহান থেকে ফেরার এক মাস পরও সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া দূরের কথা, তার শরীরে করোনার কোনো লক্ষণও প্রকাশ পায়নি! বিশ্বাসযোগ্য, নাকি অবিশ্বাস্য? আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, 'তার বক্ষে সিটি স্ক্যানে তাকে স্বাভাবিকই দেখা গেছে। তার কোনো জ্বর ছিল না। পেটে ব্যথা কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসঘটিত কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি। ছিল না কোনো গলা ব্যথাও।' তবু তার কাছ থেকে তার পাঁচ আত্মীয়ের শরীরেও কভিড-১৯ নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটেছে!! এটা সবাই জানে, কাউকে করোনাভাইরাস আক্রমণ করলে তার শরীরে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিন্তু এক মাস পরও যাকে করোনা আক্রমণ করেনি, এমনকি তার শরীরে কোনো লক্ষণও প্রকাশ পায়নি, তার কাছ থেকে তার পাঁচ আত্মীয়ের করোনায় আক্রান্ত হবার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারবেন? 'কান নিয়েছে চিলে'র মতো ঘটনা হবার সম্ভাবনা কি এখানে খুব বেশি নয়?

(২) তাইওয়ান
'তাইওয়ানে করোনা সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক সমকালে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে তাইওয়ানে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যুই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চীন নিয়ন্ত্রিত তাইওয়ানে প্রথম মৃত্যু। তাইওয়ানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শি-চুং রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওই পুরুষের বয়স ৬০ বছর। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কোন দেশ ভ্রমণ করেননি। তিনি ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ছিলেন।' [https://samakal.com/international/article/200212764]

'দেশের বাইরে না গিয়েই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, তাইওয়ানে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামে চ্যানেল আইয়ের অনলাইনে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে তাইওয়ানে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শিহ-চাং মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সময় রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, ৬১ বছর বয়সী ওই ট্যাক্সি চালক আগে থেকেই ডায়াবেটিস এবং হেপাটাইটিস বি’তে আক্রান্ত ছিলেন। এ নিয়ে এ ভাইরাসে চীনের বাইরে ৫ জনের মৃত্যু হলো। ...
তিনি জানান, তাইওয়ানে মৃত ব্যক্তি দেশের বাইরে ভ্রমণ না করলেও তার ট্যাক্সির যাত্রীরা ছিলেন মূলত হংকং, ম্যাকাও এবং চীনের মূল ভূখন্ড থেকে তাইওয়ানে আসা লোকজন।
ওই ট্যাক্সি চালকের পরিবারের আরেক সদস্যের দেহেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
একই পরিবারের এই দু'জনই তাইওয়ানের প্রথম স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা। অর্থাৎ এরা দেশের বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে আসেননি, বরং দেশের ভেতরে থাকা অবস্থায় ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই সংক্রমণের উৎস খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
'এখন পর্যন্ত আমরা বের করতে পারিনি তার কার কার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। তাই আমরা সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়ার আশায় সক্রিয়ভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি,' বলেন তিনি।
এর আগে টানা তৃতীয় দিনের মতো নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ার দাবি করে চীন। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশটির হুবেই প্রদেশে জনগণ ও যানবাহন চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।'

চীন নিয়ন্ত্রিত তাইওয়ানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো দেশ ভ্রমণ করেননি। তিনি ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বি'তে আক্রান্ত ছিলেন। করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন, এমনকি মারাও গেছেন, কিন্তু তিনি কোনো দেশ ভ্রমণ করেননি! তাহলে তাঁকে কোত্থেকে করোনা সংক্রমণ করেছে? তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিস এবং হেপাটাইটিস বি'তে আক্রান্ত ছিলেন। করোনাকে ছোঁয়াচে বলে বিশ্বাস করার পরও; তিনি অন্য কোনো করোনা রোগী থেকে সংক্রমিত হয়েছেন, এটা নিশ্চিত না হবার পরও; এমনকি অন্য কোনো দেশে তিনি ভ্রমণ করেননি, এটা নিশ্চিত হবার পরও তাঁকে করোনায় আক্রান্ত মনে করার অর্থ: করোনা আসলেই ছোঁয়াচে নয় অথবা করোনার পরীক্ষা বিভ্রান্তির উর্ধ্বে না হবার কারণে করোনায় আক্রান্ত নয়, এমন লোকও করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত হচ্ছে।

দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, 'একই পরিবারের এই দু'জনই তাইওয়ানের প্রথম স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা। অর্থাৎ এরা দেশের বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়ে আসেননি, বরং দেশের ভেতরে থাকা অবস্থায় ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই সংক্রমণের উৎস খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
'এখন পর্যন্ত আমরা বের করতে পারিনি তার কার কার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। তাই আমরা সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়ার আশায় সক্রিয়ভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি,' বলেন তিনি।'
এই দুইজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে 'তাইওয়ানের প্রথম স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা' বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। তাইওয়ানের কেউ যদি এদের আগে করোনায় আক্রান্ত হতো, দেশি বা বিদেশি, তাহলে সেই ব্যক্তিই হতো তাইওয়ানের প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি। কিন্তু এদের আগে তাইওয়ানের কেউ আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, চীন বা উহানের সাথে সম্পর্ক ছাড়া এবং করোনায় আক্রান্ত কারো সংস্পর্শ ছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হওয়া কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তাহলে করোনাভাইরাস 'ভাইরাস' হয় কেমন করে?
তাইওয়ানের এই ঘটনাকে বলা হচ্ছে 'স্থানীয় সংক্রমণ'। করোনাভাইরাস যদি চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ে থাকে, এটি যদি সংক্রামক হয়ে থাকে, তাহলে 'স্থানীয় সংক্রমণ' এর অস্তিত্ব বিশ্বাস করার কোনো ভিত্তি থাকে?
নিউমোনিয়ার পরীক্ষার পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করায় আমরা সাধারণ নিউমোনিয়াকেও করোনাভাইরাস মনে করছি না তো!

(৩) জাপান
'করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু জাপানে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে জাপানে প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভাইরাসটিতে চীনের বাইরে ফিলিপিন্সে একজনের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার জাপান সেদেশে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
কভিড-১৯ এ মারা যাওয়া অশীতিপর ওই জাপানি নারী থাকতেন টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমের কানাগাওয়া এলাকায়। মৃত্যুর পর তার নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হন কর্মকর্তারা।' [https://www.jugantor.com/international/278616]

'করোনাভাইরাস: চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লো কেন?' শিরোনামে  বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বৃহস্পতিবার জাপানে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘোষণা এসেছে - টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাগাওয়া শহরের বাসিন্দা ওই নারীর বয়স ছিল প্রায় ৮০ বছরের মতো।
জাপানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই নারীর মৃত্যুর পরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই রোগের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এবং এই প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের সাথে তার কোনও সুস্পষ্ট যোগসূত্র নেই।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51499092]

চীনের হুবেই প্রদেশের সাথে কোনো যোগসূত্র ছাড়া 'প্রায় ৮০ বছরের মতো' বয়সী ওই নারী কোত্থেকে করোনাভাইরাসের 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হলো? চীন থেকে ওই মহিলাকে এই ভাইরাস মিসাইলের মতো টার্গেট করে কি আক্রমণ করেছে?
যাদের করোনাভাইরাস নেই, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা তাদেরকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দলে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, এসব ঘটনা তা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।

(৪) দক্ষিণ কোরিয়া
''Patient 31' and South Korea's sudden spike in coronavirus cases' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (by Kelly Kasulis) বলা হয়, 'The situation here was not really serious until mid-February. It began to get very serious starting with patient 31," said Hwang Seung-sik, a spatio-temporal epidemiologist at Seoul National University.


"Before patient 31, our strategies to contain the virus were working. But after countless people were infected by patient 31, it became very difficult to control.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/03/31-south-korea-sudden-spike-coronavirus-cases-200303065953841.html]

এনবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'Coronavirus updates: South Korea reports big jump in cases, virus spreading in Chinese prisons' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, The total number of COVID-19 cases stemming from ''patient 31'' in the city of 2.5 million people — which is two hours south of the capital, Seoul — comes to 58, and of the total 42 made contact at the church. ...
Little is known about the woman known as "patient 31" except that she is in her early 60s, had no recent record of overseas travel and was diagnosed with pneumonia last weekend. — Stella Kim' [https://www.nbcnews.com/news/world/coronavirus-update-south-korea-reports-big-jump-cases-virus-spreading-n1140201]

লাইভ সায়েন্স ডটকম এর ওয়েবসাইটে ''Superspreader' in South Korea infects nearly 40 people with coronavirus' শিরোনামে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Nicoletta Lanese - Staff Writer) বলা হয়, 'The 61-year-old woman attends the Shincheonji Church of Jesus the Temple of the Tabernacle of the Testimony in Daegu, South Korea, according to the international news outlet AFP. The city, located in the southern part of the country, is home to about 2.5 million people. The woman, called "Patient 31" by Korea's Centers for Disease Control and Prevention, developed a fever on Feb. 10 and attended four church services before being diagnosed with COVID-19.

Despite running a fever, the woman twice refused to be tested for the coronavirus, as she had not recently traveled abroad, according to The Guardian. So far, she and 37 other members of the church have tested positive for the novel coronavirus, called SARS-CoV-2, and 52 additional churchgoers have shown symptoms of infection but have not yet been tested. (SARS-CoV-2 is the name of the coronavirus that causes COVID-19.)'
[https://www.livescience.com/coronavirus-superspreader-south-korea-church.html]

"রোগী ৩১" নামে অভিহিত মহিলা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। শুধু এতোটুকু জানা যায়, তাঁর বিদেশের ভ্রমণের কোনও সাম্প্রতিক রেকর্ড ছিল না এবং গত সপ্তাহান্তে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বিদেশে ভ্রমণের কোনো রেকর্ড নেই, তবু তাঁর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়াকে করোনাভাইরাস বলে গণ্য করা হয়েছে, এটা একটা হতবাক করা তথ্য নয়? শুধু তা-ই নয়, মনে করা হচ্ছে, তাঁর কাছ থেকে আরো ৫৮ জন করোনা 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হয়েছেন!
যে মহিলার বিদেশ ভ্রমণের কোনো রেকর্ডই নেই, চীন বা চীনের উহান ভ্রমণ দূরের কথা, সে মহিলার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা কিভাবে 'ভাইরাস'জনিত ঘটনা হলো, কেউ কি বলতে পারবেন?
অথচ বলা হচ্ছে, "Before patient 31, our strategies to contain the virus were working. But after countless people were infected by patient 31, it became very difficult to control."

বিষয়টা সচেতন সবাইকে অবাক করার কথা। এই মহিলাকে একদিকে "রোগী ৩১" নামে অভিহিত করা হয়, অপরদিকে 'সুপারস্প্রেডার' বলেও অপবাদ দেয়া হয়।
সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি বলে মহিলাটি দু'দুবার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে অস্বীকার করেছিল, তবু তাকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী মনে করা হচ্ছে, এমনকি তাকে সুপারস্প্রেডার বলেও অপবাদ দেয়া হচ্ছে।
শুধু করোনাভাইরাসকে একটি 'ভাইরাস', সংক্রামক/ছোঁয়াচে রোগ মনে করা এবং করোনাভাইরাস শণাক্তকরণে ফাঁক থাকার কারণে এভাবে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত কত মানুষ বিপদগ্রস্থ হয়েছে, সংকটাপন্ন হয়েছে, কেউ বলতে পারবে না।
করোনাভাইরাসকে ভাইরাস মনে না করলে এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগকে ছোঁয়াচে বলে মনে না করলে মহিলাটিকে কোনোভাবেই সুপারস্প্রেডার নয়, শুধু 'স্প্রেডার' মনে করারও অবকাশ থাকতো না। তখন করোনাভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত সব রোগী সম্পর্কে এই প্রশ্ন জাগতো, কোত্থেকে হঠাৎ করে এতোগুলো মানুষ অল্প কয়দিনের ব্যবধানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলো?
'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় এক দিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়েছে ভয়াবহ করোনাভাইরাস। দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এক দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির একটি হাসপাতালে অন্য অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641278]
প্রথমে বলা হয়েছে, 'চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়েছে ভয়াবহ করোনাভাইরাস।' পরে বলা হয়েছে, 'তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।'
সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়া সত্ত্বেও এটা 'ভাইরাস' হলো কী করে, চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পৌঁছে গেলো কী করে? চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার দূরত্ব কি ৬ ফুট থেকেও কম?!
দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন কোনো সুপারস্প্রেডারের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমতি হয়নি, যিনি চীন ফেরত নন, বরং অন্য কোনো উৎস থেকে সংক্রমিত হতে পারে, আপাতত এই সম্ভাব্যতার উপর বিশ্বাস পোষন করতে কি কোনো বাধা আছে?

(৫) ভারত
'ভারতে করোনা ভাইরাসের হানা, প্রাণ গেলো তরুণীর' শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এবার ভারতের কলকাতায় করোনা ভাইরাসের বলি হলেন এক তরুণী। এ ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ জানুয়ারি রাত ১১টায় ওই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সোমবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেলেন ৩২ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের এই তরুণী।
হাসপাতাল সূত্র জানাচ্ছে, করোনা ভাইরাসের মতো সমস্ত উপসর্গ নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তার মধ্যে পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব এবং জ্বরের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। অবস্থা খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
সূত্রের খবর, গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে থাইল্যান্ড ছেড়ে ভারতে আসেন এই তরুণী। তার আগে নেপালেও গিয়েছিলেন তিনি।
ভারতের থাই কনসুলেট জেনারেলকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মৃতের সমস্ত পরীক্ষার রিপোর্ট চেয়েছেন।
এদিকে থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের আক্রমণে কমপক্ষে আটজন মারা গেছেন।'

[https://www.ittefaq.com.bd/worldnews/126215]

'করোনাভাইরাস : থাইল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৩' শিরেনামে দৈনিক ইনকিলাবে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'থাইল্যান্ডে আরও একজন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানুয়ারিতেই থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি প্রথম ধরা পড়ে।' [https://www.dailyinqilab.com/article/267405]

জানুয়ারিতেই থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি প্রথম ধরা পড়ে। অথচ গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে থাইল্যান্ড ছেড়ে ভারতে আসেন ওই তরুণী। নেপালে গিয়েছিলেন তার আগে। সবচেয়ে বড় কথা তিনি চীনে যাননি। এবার বলুন, কার কাছ থেকে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন?
মজার বিষয় হলো, ওই তরুণী করোনা 'ভাইরাসে'র বলি হবার পর দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে!
চীনে না গিয়েও, থাইল্যান্ডের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার অনেক আগে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেও ওই তরুণীর করোনা 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হবার সম্ভাব্য কারণ এই হতে পারে: করোনাভাইরাসের পরীক্ষা যথাযথ না হওয়ার কারণে ওই তরুনী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও করোনাভাইরাস পজিটিভ ফলাফল আসে।
করোনাভাইরাস কোনো দেশে বিস্তার লাভের পরও সে দেশে এমন আরো অনেক ঘটনা ঘটতে পারে, এই কথা অস্বীকার করতে পারবেন কেউ?

(৬) বাংলাদেশ

'বাংলাদেশে করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু' শিরোনামে সময় নিউজের ওয়েবসাইটে ১৮ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের জন্য একটি দুঃসংবাদ আছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পুরুষ, তার বয়স ৭০। ওই ব্যক্তি খুবই উচ্চ-ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ফুসফুসের সমস্যা ও কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। তার হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিদেশে যান নাই, কিন্তু বিদেশ ফেরত ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।' [https://m.somoynews.tv/pages/details/203456]

'করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে একজনের মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক  যুগান্তরে ১৮ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসে সমস্যা এবং হার্টের অসুখ ছিল। হার্ট সমস্যার কারণে সম্প্রতি তার স্টেনটিং বা রিং পরানো হয়।' [https://www.jugantor.com/national/290465]

প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়, 'বিদেশে যান নাই, কিন্তু বিদেশ ফেরত ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।' কিন্তু বিদেশ-ফেরত কার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন, তার উল্লেখ কোনো সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদি সত্যিই তিনি কোনো 'বিদেশ ফেরত' থেকে সংক্রমিত হতেন, তাহলে বিদেশ-ফেরত ওই ব্যক্তি কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি সে করোনায় আক্রান্ত কিনা, তা-ও উল্লেখ করা দরকার ছিল। কোনো কারচুপি হয়ে থাকতে পারে। কারণ প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি সম্পর্কে এমন তথ্য আর কোনো সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়নি। তবে প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই উল্লেখ করা হয়েছে, 'তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসে সমস্যা এবং হার্টের অসুখ ছিল। হার্ট সমস্যার কারণে সম্প্রতি তার স্টেনটিং বা রিং পরানো হয়।' এই রকম তথ্য।
সুতরাং এই সম্ভাবনা প্রবল, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা সাধারণ নিউমোনিয়ার পরীক্ষার মতো করার ফলে এই ধুম্রজালের সৃষ্টি।

'করোনায় মৃত দ্বিতীয় ব্যক্তি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেল' শিরোনামে চ্যানেল আইয়ের ওয়েবসাইটে ২১ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের দ্বিতীয় যে ব্যক্তিটি মারা গেছেন, তিনি সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (৭৩)।
মৃত ওই ব্যক্তির করোনা আক্রান্তের বিষয়ে জানা গেছে, তিনি নিজে কিংবা তার পরিবারের কেউ বিদেশফেরত ছিলেন না।
দারুস সালাম থানার ওসি জানান, 'অবসরের সময়ে ওই ব্যক্তি শুধু বাসা ও মসজিদের মধ্যে যাতায়াত সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। তিনি বাসাতেই থাকতেন, বের হতেন শুধু নামাজ পড়ার জন্য।'

দ্বিতীয় মৃত ব্যক্তি নিজে কিংবা তার পরিবারের কেউ বিদেশফেরত ছিলেন না। তবু করোনা 'ভাইরাসে' কোত্থেকে সংক্রমিত হলেন?

'করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে 'কমু্যুনিটি সংক্রমণ' শুরু, পঞ্চম ব্যক্তির মৃত্যু' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট পাঁচজনের মৃত্যু হলো। তবে এই প্রথম সংস্থাটি স্বীকার করে নিলো যে বাংলাদেশে সীমিত আকারে হলেও কম্যুনিটি সংক্রমণ হচ্ছে বলে সংস্থাটি ধারণা করে।
তবে ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি।
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, ''আমরা দুইটি ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করছিলাম। এখন পর্যন্ত সেখানে সংক্রমিত হওয়ার উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি। সে কারণে সীমিতভাবে কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে বলে আমরা মনে করছি। কিন্তু কম্যুনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে আগে আমাকে বিস্তারিত তথ্যের বিশ্লেষণে বলতে হবে।'' ...
কম্যুনিটি সংক্রমণ প্রশ্নে এর আগে আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ''যখন কোন সংক্রমক রোগের বিস্তার এমনভাবে ঘটে যে, তার উৎস সম্পর্কে তথ্য জানা যায় না, যেমন কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে যখন বিদেশফেরতদের সংস্পর্শ ছাড়াই একজন ব্যক্তি থেকে আরেকজন ব্যক্তির শরীরে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে, হয়তো কাজ বা কেনাকাটা করতে গিয়ে, অথবা এমন মানুষের মধ্যে ছড়ায় যারা মনে করেন যে, তারা আক্রান্ত হয়নি, এভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়লে তখন তাকে কম্যুনিটি সংক্রমণ বলা হয়।' [https://www.bbc.com/bengali/news-52031308]

করোনাভাইরাস যদি সত্যিই ভাইরাস হয়ে থাকে, তাহলে কম্যুনিটি সংক্রমণ কিভাবে সম্ভব, তা যে দেশেই হোক?



(৭) যুক্তরাষ্ট্র
'1,000 Quarantined after New York Family's COVID-19 Diagnosis' শিরোনামে ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইটে ৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Health officials seeking to prevent the spread of COVID-19 in New York state focused Wednesday on a suburban community where four members of the same family and a neighbor have been diagnosed with the virus, ordering new testing and putting about 1,000 people in self-quarantine. ...


Gov. Andrew Cuomo detailed the procedures after meeting with local officials in Westchester County, north of New York City, where test results came back positive for the wife, two children and neighbor of a lawyer hospitalized with the disease. The new results brought the number of confirmed cases in the state to six.

Cuomo said people who've come into contact with them will be tested and should sequester themselves in their homes. They include eight people who worked with the lawyer and his wife at their law firm and hospital workers who treated him, as well as the neighbor's children.

“Whenever you find a case, it is about containment and doing the best you can to keep the circle as tight as possible,” Cuomo said.

The 50-year-old lawyer, who commuted by train from New Rochelle to work at a small Manhattan law firm, has an underlying respiratory illness that potentially put him in more danger from the disease, officials said. He is being treated in the intensive care unit of a Manhattan hospital.

Cuomo said the lawyer had no known travel history to countries where the outbreak of the new coronavirus has been sustained. State and city officials said the man had done some other traveling recently, including an early February trip to Miami.'
[https://www.voanews.com/science-health/coronavirus-outbreak/1000-quarantined-after-new-york-familys-covid-19-diagnosis]

নিউইয়র্ক রাজ্যে সিওভিড -১৯ এ আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৫০ বছর বয়সী এমন এক আইনজীবিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার শ্বাসকষ্টের অন্তর্নিহিত অসুস্থতা রয়েছে এবং যার কোনও ভ্রমণ ইতিহাস নেই। তবু তিনি কোত্থেকে চীনে উৎপত্তি হওয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলেন?
যদি করোনাভাইরাস সত্যিই 'ভাইরাস' হয়, তাহলে যেহেতু তার কোনও ভ্রমণ ইতিহাস নেই, তাই এই আইনজীবির ক্ষেত্রে দু'টো বিষয়ের একটি সত্য হবে: হয়তো করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়; বিশ্বের যে কেউ যে কোনো সময় এতে আক্রান্ত হতে পারে, নয়তো করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় এমন লোকদেরও করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়, যারা সত্যিই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়; বরং সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে এক দিনে আক্রান্ত ৫৯৪' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না। কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির নাম-পরিচয় গোপন রেখে জানিয়েছে, তিনি একজন বয়স্ক নারী এবং তিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।'

[https://www.prothomalo.com/international/article/1642376]

নিউইয়র্কের মতো ক্যালিফোর্নিয়ায়ও এমন এক রোগীকে দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না; যিনি বয়স্ক এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। ওই মহিলার করোনাভাইরাসে সংক্রমণ যে প্রচলিত অর্থে কোনো ভাইরাসজনিত নয়, এতে কি কোনো সন্দেহ আছে? বরং এই সম্ভাবনাই বেশি, করোনাভাইরাস শনাক্তকরন পরীক্ষা আর নিউমোনিয়া শনাক্তকরণ পরীক্ষা প্রায় একই রকমভাবে করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্তরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে মনে হয়।

'Doctor who treated first US coronavirus patient says COVID-19 has been 'circulating unchecked' for weeks' শিরোনামে সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Berkeley Lovelace Jr. and William Feuer) বলা হয়, 'That’s all changed since last weekend. There are now well over two dozen cases in the U.S. of person-to-spread, many of which are proving to have been transmitted openly in the community, and it appears to be getting worse, according to state health officials.


State and local health have confirmed community transmission cases in California, Washington state, New York and North Carolina — where a woman contracted the virus on a trip to Washington state in what appears to be the nation's first domestic travel-related infection. ...

Some hospitals still haven’t instituted strict isolation protocols for everyone being tested, and some state officials are even starting to relax hospital quarantine rules for patients who test positive. One woman in New York is under self-quarantine at her home in Manhattan.

State health officials said a California patient was not under quarantine as doctors appealed to the CDC to test her. Since she hadn't been to Wuhan, or been in contact with anyone who was, she was out and about in her community.' [https://www.cnbc.com/2020/03/06/doctor-who-treated-first-us-coronavirus-patient-says-covid-19-has-been-circulating-unchecked-for-weeks.html]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ব্যক্তিগতভাবে ছড়িয়েছে' বলে মনে করা দুই ডজনেরও বেশি মামলা বিশ্বাস করা তখনই সম্ভব হবে, যখন করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' মনে করা হবে না, নতুবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়, তবু পরীক্ষার ত্রুটির কারণে অনেকের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়, এই কথাটা বিশ্বাস করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক এবং উত্তর ক্যারোলাইনাতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ কিভাবে সম্ভব? মানুষ কি এতোই বোকা হয়ে গেছে, এসব অদ্ভুতুড়ে সংবাদ শুনেই বিশ্বাস করে ফেলবে!

ক্যালিফোর্নিয়ায় এক রোগীকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকরা সিডিসির কাছে আবেদন করেছিলেন, যিনি উহানে ছিলেন না বা এমন কারও সাথে যোগাযোগ করেননি, যিনি উহানে ছিলেন; তিনি বাইরে ছিলেন এবং তার সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলেন। তবু কিভাবে তাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হলো?
করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী এতো ভয়ানক 'ভাইরাসে' পরিণত হলো, যারা করোনাভাইরাসের গায়ে 'ভাইরাস' বা ছোঁয়াচে তকমা লাগিয়েছিল, তারাও হয়তো ভাবতে পারেনি বিষয়টা এতোদূর গড়াবে!

'করোনাভাইরাস: চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, বাংলাদেশে বিমান বন্দরে সতর্কতা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন (ফারহানা পারভীন কর্তৃক তৈরিকৃত)  প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ২০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেছিলেন যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোন মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনো খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
ডা. সেবরিনা ফ্লোরা (ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর-এর পরিচালক) বলছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে তবে এখনো এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি এবং ভাইরাসটা ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51173808]

জানা যায়নি, কখন থেকে করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অবশ্য করোনাভাইরাস নামের মধ্যেই 'ভাইরাস' শব্দটি প্রথম থেকে ব্যবহৃত হওয়ায় খুব সম্ভবত মানুষ একে ছোঁয়াচে বলে ঘোষণা দেয়ার অপেক্ষা করেনি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ছোঁয়াচে বলে নিশ্চিত হবার আগেই বা প্রচার শুরু করার আগেই মানুষ একে 'ভাইরাস' বা ছোঁয়াচে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। দোষটা কিন্তু মানুষের নয়।

ভক্স মিডিয়ার ওয়েবসাইটে 'The CDC's rocky effort to get Americans tested for coronavirus, explained' শিরোনামে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Brian Resnick and Dylan Scott) বলা হয়, 'The CDC confirmed eight days ago that the virus was in community transmission in the United States—that it was infecting Americans who had neither traveled abroad nor were in contact with others who had.


In South Korea, more than 66,650 people were tested within a week of its first case of community transmission, and it quickly became able to test 10,000 people a day. The United Kingdom, which has only 115 positive cases, has so far tested 18,083 people for the virus.' [https://www.vox.com/science-and-health/2020/3/6/21168087/cdc-coronavirus-test-kits-covid-19]

সিডিসি আট দিন আগে নিশ্চিত করেছে যে, ভাইরাসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে রয়েছে, এটি এমন অনেক আমেরিকানদের সংক্রমিত করেছে যারা বিদেশে ভ্রমণ করেনি বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসেনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কথাও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত বিশ্বের কারো কাছে নেই। শুধু করোনাভাইরাসকে 'ছোঁয়াচে' বলে বিশ্বাস করার কারণেই, 'ভাইরাস' নাম দেয়ার কারণেই কেউই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।

সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে: করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে নয়, এটা একই সাথে একাধিক দেশের মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। অথবা করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় বড় ধরনের ত্রুটি থাকার কারণে অনেক সময় সাধারণ নিউমোনিয়া রোগীও করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়। অথবা অন্য কোনো কারণে একাধিক দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস আক্রমণ করেছে, এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের কোনো সংস্পর্শ বা যোগাযোগ ছাড়া।
সময়ই বলে দিতে পারে কোনটা সঠিক?

(৮) ইতালি
'Coronavirus updates: South Korea reports big jump in cases, virus spreading in Chinese prisons' শিরোনামে এনবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Six Italians have tested positive for the coronavirus in the northern Italian region of Lombardy, a local official said on Friday in the first known cases of local transmission in Italy of the potentially deadly illness.


''We have got six cases of coronavirus,'' Lombardy councillor Giulio Gallera told a news conference, adding that hundreds of people who had been in contact with the patients were now being tested to see if they had been infected.

The first person confirmed to have contracted the virus was believed to have fallen ill after meeting a friend who had recently returned from China. Residents of the northern towns of Codogno and Castiglione d’Adda were being urged to stay at home as medical tests continued. — Reuters' [https://www.nbcnews.com/news/world/coronavirus-update-south-korea-reports-big-jump-cases-virus-spreading-n1140201]

এই নিবন্ধ লেখার মনস্থ করে ৬ ফেব্রুয়ারি একটি ফেসবুকে পোস্টে করোনাভাইরাস নিয়ে একটি লেখা তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছি। কাছে থাকা তথ্যগুলো দিয়ে এবং করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে লেখাটি তৈরি শুরু করা হয়েছে। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে, ততই করোনার পরিস্থিতি বাঁক বদল করেছে। এই অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসে মনস্থির করলাম, আর সামনে না গিয়ে এ পর্যন্ত করোনার আচরণ এবং গতিবিধির উপর ভিত্তি করে লেখাটা সমাপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু কয়েকদিন লেখার পর পরিস্থিতি গুরুতরভাবে মোড় নেয়।

করোনা আতঙ্কে এখন বিশ্বে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ গৃহবন্দি। চীনের পরেই করোনা মহামারী মারাত্মক রূপ নিয়েছে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, জার্মানি, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশ। মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে ইতালি ও স্পেন। সেখানে দোকান-বাজার, রেস্তোরাঁ-বার, স্কুল-কলেজ সবই স্তব্ধ, জনমানবশূন্য। প্রায় ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়, মর্গে জমছে লাশের স্তূপ। শেষকৃত্য করার লোক নেই। শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে দেহ পুড়িয়ে ফেলছেন সেনাসদস্যরা।


চীনে করোনাভাইরাসের তান্ডব (সংক্রমণ এবং মৃত্যু) কমে যেতে যেতে কিছুদিন আগে প্রায় শূন্যের ঘরে নেমে আসে, অন্যদিকে ইতালী, স্পেন, ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয়টা হু হু করে বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছে, আজ ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ১১:১৪ টা পর্যন্ত ইতালিতে মৃত্যুবরণ করে ৯১৩৪ জন এবং স্পেনে ৫৮১২ জন, উভয় দেশে মৃত্যুর সংখ্যা চীনকে আরো আগে অতিক্রম করে ফেলে! জানি না, এরপর আর কত দেশ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবস্থল চীনকে মৃত্যুর দিকে থেকে ছাড়িয়ে যায়! জানি না, এক মাস পর (২৮ এপ্রিল) করোনাভাইরাসের তান্ডবে আর কত হাজার মানুষকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়! জানি না, এই লেখাও অপূর্ণ থেকে যায় কিনা!


ইতালিতে করোনাভাইরাসের উপদ্রব সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করতে গিয়ে এই কথাগুলো বলা প্রয়োজন মনে হলো। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর ইতালির লম্বার্ডি অঞ্চলে ইতালির ছয়জন নাগরিক করোনাভাইরাসের জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছে। লম্বার্ডি অঞ্চলের এই ছয়জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে ইতালিতে স্থানীয় সংক্রমণের প্রথম জানা ক্ষেত্র বলে মনে করা হয়। প্রতিবেদনটির শেষে আবার বলা হয়, ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া প্রথম ব্যক্তিটি সম্প্রতি চীন থেকে ফিরে আসা এক বন্ধুর সাথে দেখা করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে মনে করা হয়।

প্রথম কথা হলো 'মনে করা' আর নিশ্চয়তার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। দ্বিতীয় কথা হলো 'সম্প্রতি চীন থেকে ফিরে আসা এক বন্ধু' কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল? যদি সে আক্রান্ত হতো, তাহলে সে-ই হতো ইতালী বা লম্বার্ডি অঞ্চলে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি, তার কাছ থেকে যে সংক্রমিত হয়েছে, সে হতো দ্বিতীয় ব্যক্তি। আর যদি 'সম্প্রতি চীন থেকে ফিরে আসা এক বন্ধু' করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয় (চীন থেকে ফিরে এলেই করোনা পজিটিভ হবে, এমন কোনো কথা নেই), তাহলে বিশ্বাস করতে হবে করোনায় আক্রান্ত নয়, এমন একজন লোক থেকে সুস্থ কোনো লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে! এটা কিভাবে সম্ভব? একজন লোকের শরীরে কালি নেই, পরিষ্কার শরীর, তার সাথে মিশলে আরেকজনের শরীরে কালি লাগবে কিভাবে?!
'যে ভুলে ইতালিতে করোনার মহামারি' শিরোনামে সময় নিউজের ওয়েবসাইটে ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত তুরস্কের রাষ্ট্রীয় এজেন্সি আনাদোলুর একটি প্রতিবেদন অবলম্বনে তৈরিকৃত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কডোনো শহরের যে রোগী থেকে সারাদেশে ব্যাপক আকারে করোনা ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ওই রোগী প্রথমে সামান্য অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে যান। তার পারিবারিক চিকিৎসক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠান। দুদিন পর শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সমস্যা দেখা দিলে ওই রোগী আবার হাসপাতালে যান। কিন্তু তখনো প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর ফলে ওই রোগীর কাছ থেকে করোনাভাইরাস অন্য রোগী ও হাসপাতালের কর্মীসহ পুরো ১৬ হাজার বাসিন্দার পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, কডোনো শহরের ওই রোগী চীন ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু তার ওই বন্ধু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই রোগীর ভাইরাসের উৎস জার্মানির মিউনিখ বা ফিনল্যান্ড হতে পারে। কিন্তু কিভাবে ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত হলেন তা জানা যায়নি। ...
করোনা প্রথম ধরা পড়া দেশ চীন থেকে ভৌগলিকভাবে ইতালির এত দূরে অবস্থান হলেও কেনো দেশটিতে এমন মহামারি আকারে ছড়ালো? এক্ষেত্রে চীনা পর্যটকদের উচ্চ সংখ্যাই বড় সন্দেহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ৩১ লাখ চীনা পর্যটক ইতালি সফর করেছে। তবে ইতালিতে মৃত্যুহার এতো বেশি হওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা কারণ হিসেবে দেখছেন, সেখানকার প্রবীণ জনসংখ্যার হারকে। ডেমোগ্রাফিক সায়েন্স জার্নালের এক নিবন্ধে অক্সফোর্ডের গবেষকরা লিখেছেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিরা অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ইতালির মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।' [https://m.somoynews.tv/pages/details/203627]

এখানে কডোনো শহরের যে রোগী থেকে সারাদেশে ব্যাপক আকারে করোনা ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ওই রোগী চীন ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তার ওই বন্ধু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই রোগীর ভাইরাসের উৎস জার্মানির মিউনিখ বা ফিনল্যান্ড হতে পারে। কিন্তু কিভাবে ওই রোগীর করোনায় আক্রান্ত হলেন তা জানা যায়নি। ...
হয়তো কখনো জানা যাবে না, কারণ ওই রোগী হয়তো ভুলভাবে করোনা-শনাক্ত হয়েছে অথবা সত্যিই ওই লোকটি স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত। কিন্তু স্থানীয়ভাবে মানুষ কিভাবে সংক্রমিত হতে পারে, তা বুঝতে কষ্ট বলেই ওই লোকের করোনায় আক্রান্ত হবার কারণ খোঁজা হচ্ছে। স্থানীভাবে সংক্রমণের কারণ ততদিন পর্যন্ত অস্পষ্ট থাকবে মানবজাতির নিকট, যতদিন মানবজাতি শুধু নিউমোনিয়াজাতীয় শারীরিক সমস্যাগুলোকে নয়, যে কোনো রোগকে সংক্রামক, বিশেষ করে বায়ুবাহিত বলে বিশ্বাস করবে। আমার অনুরোধ, এই ধারণা পরিহার করার জন্য যে যার অবস্থান থেকে দ্রুত কাজ শুরু করুন, মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, মানুষকে আর বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেয়া ঠিক হবে না।
'ইতালিতে করোনাভাইরাসে ১ ব্যক্তির মৃত্যু, ১০ শহর বন্ধ' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার পর ১০টি শহর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসমাগমস্থলে যাওয়া। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১৭তে পৌঁছেছে।
দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ইতালির উত্তরাঞ্চলের লম্বার্ডি এলাকায় ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শহরের জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্কুল, বার, চার্চ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি। যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কেউ চীন সফর করেননি।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641064]

চীন ভ্রমণ না করেও করোনায় আক্রান্ত? স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ? কিভাবে সম্ভব? করোনাকে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘোষনা দিয়েছেন, প্রচার করছেন, তাদেরকে এই প্রশ্নটির উত্তর অবশ্যই দিতে হবে। বলতে হবে চীনে উপদ্রব শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সুদূর ইতালিতে পৌঁছলো কী করে কোনো মাধ্যম ছাড়া?

'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত নিয়মিত হালনাগাদকৃত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Six coronavirus cases discovered in north Italy, hundreds to be tested.

Six people have tested positive in Italy for coronavirus, the northern Lombardy region said, in the first known cases of local transmission of the potentially deadly illness in the country.

Officials told residents from three small towns some 60km (40 miles) southeast of Italy's financial capital Milan, to stay at home as doctors tested hundreds of people who might have come into contact with the six coronavirus sufferers.

None of the six was believed to have visited China.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/02/cloneofcloneofcloneofcloneofcloneof2002152244372-200220231446112.html]

উত্তর ইতালিতে শনাক্তকৃত ছয়টি করোনাভাইরাসের ঘটনা স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হওয়ার প্রথম জানা ক্ষেত্রে। বলা হয়, ছয়জনের কেউই চীন সফর করেছেন বলে মনে করা হয়নি। ইতালীতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ এই দিকে ইঙ্গিত করে, হয়তো করোভাইরাসের প্রচলিত পরীক্ষায় ত্রুটি থাকার কারণে সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদেরকেই করোনাভাইরাসের রোগী বলে মনে হচ্ছে, নতুবা অন্য কোনোভাবে উহানের ভাইরাস ইতালীতে ছড়িয়ে পড়েছে বা ছড়ানো হয়েছে। সময় হয়তো বলে দেবে, কোনটা সঠিক।

'Coronavirus maps and charts: A visual guide to the outbreak' শিরোনামে By The Visual and Data Journalism Team কর্তৃক তৈরিকৃত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'Meanwhile in Italy, the country's authorities have announced a series of measures to try to halt the virus's spread. It is not yet clear how it entered the country.


Eleven towns in northern Italy at the centre of the outbreak - home to a total of 55,000 people - have been quarantined. Schools, universities and cinemas have been closed and several public events cancelled.
The UK has advised against travelling to the region.' [https://www.bbc.com/news/world-51235105]

এখানে বলা হয়েছে করোনাভাইরাস কীভাবে ইতালিতে প্রবেশ করেছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। যেখানে চীনের উহান ছাড়া অন্যান্য প্রদেশ বা নগরীতে তেমন একটা প্রবেশ করেনি, চীনের বেইজিং, সাংহাইসহ বড় বড় অনেক শহরকে (যে শহরগুলো উহানের খুব নিকটবর্তী) লকডাউন করতে হয়নি, সেখানে ইতালীতে কিভাবে প্রবেশ করেছে, কেন ইতালীর কোনো একটা দু'টো শহরকে নয়, পুরো ইতালীকে লকডাউন করতে হয়েছে, তা অবশ্যই একটি বড় প্রশ্ন। সবাই চায় প্রশ্নটির উত্তর পরিষ্কার হোক।

(৯) ইরান
'Coronavirus: First deaths reported in Middle East' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জার্মানীর সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়, 'The deadly COVID-19 virus claimed the lives of two people in Iran, in the first deaths to be reported in the Middle EastTehran previously denied reports that people in the country were infected with the virus.

Two people in Iran have died after testing positive for the new coronavirus, COVID-19, Iranian officials said on Wednesday.
Iran's Health Ministry said that the two patients were Iranian citizens and residents of the city of Qom, state news agency IRNA reported.
Both of the patients were reportedly elderly who had health issues that impacted their immunity.
"Following the recent cases of chronic respiratory diseases in Qom, two of the patients tested positive in preliminary tests," ministry spokesman Kianoush Jahanpour said, according to IRNA.
"Unfortunately both passed away in the intensive care unit due to old age and issues with their immune system."
Qom is a center for Islamic studies that draws scholars from across Iran and other countries. The two patients who died, however, were not known to have left Iran.
Prior to Wednesday's deaths, the Iranian government denied reports about people being infected with the virus in the country.'       [https://www.dw.com/en/coronavirus-first-deaths-reported-in-middle-east/a-52436966]

করোনাভাইরাসে ইরানের যে দু'জনের প্রাণহানির কথা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা ছিলেন ইরানি নাগরিক এবং কোম শহরের বাসিন্দা, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে। উভয় রোগীই বয়স্ক ছিলেন যাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। তবে দুই রোগী ইরান ছেড়ে গেছেন বলে জানা যায়নি।
ইরানের বাইরে না গিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে কী ব্যাখ্যা আছে তাদের কাছে, যারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়াকে ভাইরাস বলে দাবি করে, প্রচার করে এবং বিশ্বাস করে।

(১০) যুক্তরাজ্য
'Coronavirus: Woman in 70s becomes first virus fatality in UK' শিরোনামে বিবিসির ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৫ মার্চ ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'A woman with underlying health conditions has become the first person in the UK to die after testing positive for coronavirus.

The Royal Berkshire NHS Trust said the patient, understood to be in her 70s, had been "in and out of hospital for non-coronavirus reasons".
She was admitted and tested positive for coronavirus on Wednesday.
It comes as the number of UK people diagnosed with the virus reached 116, a rise of more than 30 in 24 hours.

Meanwhile, the prime minister's official spokesman said it was "highly likely the virus is going to spread in a significant way".

The woman, who was being treated at the Royal Berkshire Hospital in Reading, is believed to have caught the virus in the UK, said the country's chief medical adviser Prof Chris Whitty.
She is not thought to have been abroad recently, BBC health correspondent Nick Triggle added.
Officials are now trying to trace the people she was in contact with.
Prof Whitty offered his sincere condolences to her family and friends and asked that their request for privacy is respected.' [https://www.bbc.com/news/uk-51759602]

যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত প্রথম ব্যক্তিরও বিদেশ ভ্রমণের কোনো রেকর্ড নেই! চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোক থেকে করোনাভাইরাস যুক্তরাজ্যে ছোঁয়াচে হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, এমন বক্তব্যের কি কোনো ভিত্তি থাকে? কিভাবে এমন ঘটনা ঘটলো, এই প্রশ্নের উত্তর কি কখনো পাওয়া যাবে? [উত্তর অবশ্যই থাকার কথা।]

'Coronavirus: Latest patient was first to be infected in UK' শিরোনামে বিবিসি'র ওয়েবসাইটে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The latest patient diagnosed with the coronavirus in England is the first to catch it in the UK.

It is unclear whether this was directly or indirectly from someone who recently returned from abroad, England's chief medical officer said.
The man is a resident of Surrey who had not been abroad recently himself.

It takes the total number of UK cases to 20 and comes after a British man in his 70s became the first UK citizen to die from the virus. ...
Prof Whitty said the case was being investigated and contact tracing has begun.
The Department of Health and Social Care said the virus was passed on in the UK but the original source was "unclear" and there was no "immediately identifiable link" to overseas travel.' [https://www.bbc.com/news/uk-51683428]

যুক্তরাজ্যে সর্বশেষ শনাক্তকৃত একজন রোগী সম্পর্কে এখানে বলা হয়, লোকটি নিজে সম্প্রতি বিদেশ ছিলেন না, এমনকি সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরে আসা কারও কাছ থেকে এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ছিল কিনা তাও স্পষ্ট নয়। আরো বলা হয়, ভাইরাসটি যুক্তরাজ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল তবে আসল উৎসটি "অস্পষ্ট" এবং বিদেশ ভ্রমণে "তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্তযোগ্য কোনো লিঙ্ক"ও ছিল না।
অনেক ভাবনার বিষয়। লোকটি নিজে বিদেশ না গিয়ে, এমনকি বিদেশ থেকে ফিরে আসা কারো সাথে না মিশেও কিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো? করোনাভাইরাস তাহলে 'ভাইরাস' হলো কী করে! আরেকটি গুরুতর প্রশ্ন, ভাইরাসটি যুক্তরাজ্যে প্রেরণ করার উৎস কী?

(১১) স্থানীয় সংক্রমণের উপর কিছু প্রতিবেদন:
'করোনাভাইরাস: প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' শিরোনামে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কী বলেছেন?
ডা. টেডরস বলেন, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা "তুলনামূলকভাবে কম" কিন্তু সংক্রমণের ধরণ উদ্বেগজনক।
"যে সব সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের সাথে কোন যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ প্রাদুর্ভাবের শিকার এলাকায় ভ্রমণ করার কোন উল্লেখ নেই অথবা আগে কোন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসারও কোন উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না সেসব সংক্রমণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে," তিনি বলেন।
ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা "খুবই উদ্বেগজনক", তিনি বলেন।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51596145]

'What is coronavirus and what are the symptoms?' শিরোনামে বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের সংবাদদাতা জেমস গালাঘর কর্তৃক তৈরিকৃত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 
'How fast is it spreading?
Thousands of new cases are being reported each day. However, analysts believe the true scale could be 10 times larger than official figures.
Outbreaks have now occurred in South KoreaItaly and Iran, raising fears that it could become a pandemic. A pandemic is declared when an infectious disease threatens different parts of the world simultaneously.

The WHO has said it is concerned about the number of cases with no clear link to China or other confirmed cases. It has said the window of opportunity to contain the virus was "narrowing".

With colds and flu tending to spread fastest in the winter, there is hope the turning of the seasons may help stem the outbreak.

However, a different strain of coronavirus - Middle East respiratory syndrome - emerged in the summer, in Saudi Arabia, so there's no guarantee warmer weather will halt the outbreak.' [https://www.bbc.com/news/health-51048366]

দ্য কনভার্সেশনের ওয়েবসাইটে 'How does the coronavirus test work? 5 questions answered' শিরোনামে প্রকাশিত রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'র জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মৌরিন ফেরান কর্তৃক লিখিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The main symptoms of COVID-19, the disease caused by the coronavirus SARS-CoV-2, are fever, dry cough and shortness of breath. These look a lot like the flu and the common cold, so it takes a physician to determine if testing for the virus is necessary.

Initially, the Centers for Disease Control and Prevention recommended testing only people with symptoms and who had potentially been exposed to the virus. But to the surprise of public health officials, several of the first people in the U.S. who tested positive for the virus had no obvious exposure. This development suggested that the virus was being transmitted locally, meaning it was spreading from person to person easily and/or that people may have been transmitting the virus without experiencing serious symptoms.' [https://theconversation.com/how-does-the-coronavirus-test-work-5-questions-answered-133118]

প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে সব সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের সাথে কোন যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ প্রাদুর্ভাবের শিকার এলাকায় ভ্রমণ করার কোনো উল্লেখ নেই অথবা আগে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসারও কোনো উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না সেসব সংক্রমণ উদ্বেগজনক। দ্বিতীয় প্রতিবেদনেও একইরকমভাবে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চীন বা অন্য কোনো নিশ্চিত মামলার সাথে সুস্পষ্ট যোগসূত্র নেই, এমন সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক।

এই প্রতিবেদনগুলোর একটা নির্যাস বের করা যাক: 
(এক) ২০ বছর বয়সী এক চীনা তরুণী, যার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ ছিল না, তবু তার কাছ থেকে তার পাঁচ আত্মীয়ের শরীরেও কভিড-১৯ নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটেছে!
(দুই) চীন নিয়ন্ত্রিত তাইওয়ানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো দেশ ভ্রমণ করেননি।
(তিন) চীনের হুবেই প্রদেশের সাথে কোনো যোগসূত্র ছাড়া 'প্রায় ৮০ বছরের মতো' বয়সী এক জাপানী নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
(চার) "রোগী ৩১" নামে অভিহিত মহিলা, যার বিদেশে ভ্রমণের কোনো রেকর্ড নেই, তবু তাঁর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়াকে করোনাভাইরাস বলে গণ্য করা হয়েছে।
(পাঁচ) জানুয়ারিতেই থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি প্রথম ধরা পড়ে। অথচ গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে থাইল্যান্ড ছেড়ে ভারতে ফিরে আসা এক তরুণী, যনি চীনেও যাননি, তবু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
(ছয়) বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়, 'বিদেশে যান নাই, কিন্তু বিদেশ ফেরত ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।' কিন্তু বিদেশ-ফেরত কার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন, তার উল্লেখ কোনো সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
(সাত) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যে সিওভিড -১৯ এ আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৫০ বছর বয়সী এমন এক আইনজীবিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার শ্বাসকষ্টের অন্তর্নিহিত অসুস্থতা রয়েছে এবং যার কোনও ভ্রমণ ইতিহাস নেই।
(আট) নিউইয়র্কের মতো ক্যালিফোর্নিয়ায়ও এমন এক রোগীকে দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না।
(নয়) সিডিসি নিশ্চিত করেছে যে, ভাইরাসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে রয়েছে, এটি এমন অনেক আমেরিকানদের সংক্রমিত করেছে যারা বিদেশে ভ্রমণ করেনি বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসেনি।
(দশ) ইতালির কডোনো শহরের যে রোগী থেকে সারাদেশে ব্যাপক আকারে করোনা ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ওই রোগী সম্পর্কে জানা গেছে, কডোনো শহরের ওই রোগী চীন ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু তার ওই বন্ধু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই রোগীর ভাইরাসের উৎস জার্মানির মিউনিখ বা ফিনল্যান্ড হতে পারে। কিন্তু কিভাবে ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত হলেন তা জানা যায়নি।
(এগারো) উত্তর ইতালিতে শনাক্তকৃত ছয়টি করোনাভাইরাসের ঘটনা স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ হওয়ার প্রথম জানা ক্ষেত্র। বলা হয়, ছয়জনের কেউই চীন সফর করেছেন বলে মনে করা হয়নি।
(বারো) করোনাভাইরাসে ইরানে এমন দু'জনের প্রাণহানি হয়েছে, যারা ছিলেন ইরানি নাগরিক এবং কোম শহরের বাসিন্দা, দু'জনের কেউ ইরান ছেড়ে গেছেন বলে জানা যায়নি।
(তেরো) যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত ব্যক্তির সাথে 'করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে' হবার কোনো যোগসূত্র নেই।
যুক্তরাজ্যে সর্বশেষ শনাক্তকৃত একজন রোগী নিজে সম্প্রতি বিদেশ ছিলেন না, এমনকি সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরে আসা কারও কাছ থেকে এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ছিল কিনা তাও স্পষ্ট নয়।

দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছা ছাড়া উপায় নেই, অধিকাংশ দেশে চীন থেকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়নি, স্থানীয়ভাবেই সংক্রমিত হয়েছে; আবার কিছু কিছু কিছু দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সংক্রমিত হয়েছে মাত্র, কিন্তু এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়নি! মানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অন্য দেশে গিয়েছে, কিন্তু ওইসব রোগী থেকে এই ভাইরাস সেই দেশের কাউকে আক্রমণ করেনি। কারণ এটা কোনো ভাইরাস নয়, অন্যকিছু; এটা ছোঁয়াচে নয়, চীন ছাড়া অন্য দেশে যারা এতে আক্রান্ত হয়েছে, তারা হয়তো (১) বাস্তবে নেগেটিভ হয়েও শনাক্তকরণ পদ্ধতির ত্রুটির কারণে পরীক্ষায় পজিটিভ হয়ে গেছে, বিশেষ করে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে, নয়তো (২) এমন কোনো উৎস থেকে সরাসরিই আক্রান্ত হয়েছে, যে উৎস থেকে চীনের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণ সরাসরি এই 'অন্য কিছু', বাকি দেশগুলোতে সংক্রমণ হয়নি, বরং সেসব দেশে অনেকের সাধারণ নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষার ভুলে করোনাভাইরাস হয়ে গেছে, যদিও সত্যিকারার্থে করোনায় আক্রান্ত হয়নি; অনেকের সাধারণ নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জাকে ভুলভাবে করোনা বলে চিহ্নিত করার কারণে করোনার মতো করেই তাদেরকে চিকিৎসা দেয়ার ফলে অনেক ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণও করেছে। স্থানীয় সংক্রমণের ক্ষেত্রেই এরকম ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সংক্রমণ কী বার্তা দেয়?
করোনাভাইরাস যদি প্রচলিত অর্থে ভাইরাসজাতীয় রোগ হতো, তাহলে এমন একটি দু'টি নয়, এমন অসংখ্য ঘটনা কেন ঘটেছে, যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে কোনো সংস্পর্শ বা যোগসূত্র ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে? করোনাভাইরাস ভাইরাস জাতীয় রোগ হলে এই ঘটনাগুলো কল্পনাও করা যেতো না। কিন্তু বাস্তবে এই ঘটনাগুলো অস্বীকারের কি কোনো উপায় আছে?
স্থানীয় সংক্রমণ বা কম্যুনিটি সংক্রমণ নামক কোনো কিছু করোনাভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত হতো না কোনোভাবে।

শুধু এই স্থানীয় সংক্রমণ বা কম্যুনিটি সংক্রমণের দিকে লক্ষ্য করলে একজন ভাইরাসে বিশ্বাসী মানুষের মন থেকে 'করোনাভাইরাস একটি ভাইরাসজাতীয় রোগ', এই বিশ্বাস প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কমে যাবে। বাকি পঞ্চাশ শতাংশ বিশ্বাস দূর করার জন্য লেখার বাকি অংশটুকু পড়তে হবে। তবে আমার বিশ্বাস, অনেকে বিষয়টা লক্ষ্য করলে এবং বাস্তবতা উপলব্ধি করলে 'প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ' নয়, বরং প্রায় শতভাগ আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারেন 'করোনাভাইরাস একটি ভাইরাসজাতীয় রোগ' এই বিশ্বাসের প্রতি। কারণ যে রোগ শুধু এক দেশের একজনকে নয়, অনেকগুলো দেশের অসংখ্য মানুষকে কোনো সূত্র ছাড়া ধরে ফেলতে পারে, সে রোগ আর যাই হোক, সংক্রামক, ছোঁয়াচে বা ভাইরাস হতে পারে না।

ষষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

পঞ্চম অধ্যায়

চীনে প্রথমে কে বা কারা আক্রান্ত হয়েছে? কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছে?
চীনে প্রথমে কে বা কারা আক্রান্ত হয়েছে, কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছে, তা দেখতে হলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ইতিহাস আবার সামনে আনতে হবে। এ সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:

(১) 'What Is Coronavirus?' শিরোনামে একটি নিবন্ধ (By Lauren M. Sauer, M.S.) প্রকাশিত হয় হপকিন্স মেডিকেলের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়,
'How did this new coronavirus spread to humans?
COVID-19 appeared in Wuhan, a city in China, in December 2019. Although health officials are still tracing the exact source of this new coronavirus, early hypotheses thought it may be linked to a seafood market in WuhanChinaSome people who visited the market developed viral pneumonia caused by the new coronavirus. A study that came out on Jan. 25, 2020, notes that the individual with the first reported case became ill on Dec. 1, 2019, and had no link to the seafood market. Investigations are ongoing as to how this virus originated and spread.' [https://www.hopkinsmedicine.org/health/conditions-and-diseases/coronavirus]

(২) যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে ২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'Emerging understandings of 2019-nCoV' শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ''There is an emergency in China, but it has not yet become a global health emergency...WHO is following this outbreak every minute of every day'', said Dr Tedros Ghebreyesus, Director-General of WHO, on Jan 23. A novel coronavirus (2019-nCoV) outbreak is emerging, but it is not yet a Public Health Emergency of International Concern (PHEIC). As we went to press, more than 500 cases have been confirmed in China, as well as in JapanSouth KoreaThailand, and the US. The virus can cause a severe respiratory illness, like SARS and MERS, and human-to-human transmission has been confirmed. These characteristics are driving China's urgent public health actions, as well as international concern. But much remains unknown. The pieces of the puzzle that is 2019-nCoV are only now beginning to come together.

Today, we publish the first clinical data from individuals confirmed to be infected with 2019-nCoV from WuhanChina. Chaolin Huang and colleagues provide comprehensive findings for the first 41 laboratory-confirmed cases. 27 of these 41 cases had direct exposure to the Wuhan seafood market that is thought to be the initial site of infection from an animal source. All had viral pneumonia. The severity of illness is concerning: almost a third of patients developed acute respiratory distress syndrome requiring intensive care; six patients died; five had acute cardiac injury; and four required ventilation.

Separately, Jasper Fuk-Woo Chan and colleagues report clinical and microbiological data from a family of six people who had travelled to Wuhan and later presented with pneumonia to Shenzhen Hospital in Guangdong province. Five were identified as infected with 2019-nCoV. Notably, none had been to the Wuhan market, but two had visited a Wuhan hospital. The authors suggest these findings confirm human-to-human transmission. Together, these Articles provide an important initial picture of the clinical spectrum and transmission of this new disease. ...

There are still many gaps in our understanding.' [https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(20)30186-0/fulltext]

(৩) 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটির সন্ধান চলছে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনে যে ৭৫ হাজারেরও বেশি লোকের দেহে এ সংক্রমণ ঘটেছে- তার ৮২ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে এই হুবেই অঞ্চল থেকে। এ তথ্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির।
কিন্তু চীনা গবেষকদের এক জরিপ যা ল্যান্সেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয় কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণ চিহ্নিত হয় একজন লোকের দেহে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর।
সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে উহান শহরের ওই বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে এটি ঠিক যে, প্রথম দিকে যে ৪১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন- তার মধ্যে ২৭ জনই উহানের সেই বাজারের সংস্পর্শে এসেছিলেন।[https://www.jugantor.com/international/281953]

(৪) 'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/269371]

(৫) 'Who is 'patient zero' in the coronavirus outbreak?' শিরোনামে বিবিসি ফিউচারে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Fernando Duarte) বলা হয়, 'Chinese authorities and experts are at odds about the origin of the ongoing coronavirus outbreak. More specifically, who is "patient zero" for the outbreak. Also known as an index case, patient zero is a term used to describe the first human infected by a viral or bacterial disease in an outbreak.

Advances in genetic analysis now make it possible to trace back the lineage of a virus through those it has infected. Combined with epidemiological studies, scientists can pinpoint individuals who may have been the first people to start spreading the disease and so trigger the outbreak.

Identifying who these people are can help address crucial questions about how, when and why it started. These can then help to prevent more people from getting infected now or in future outbreaks.

Do we know who patient zero is in the Covid-19 coronavirus outbreak that started in China?

The short answer is – no.

Chinese authorities originally reported that the first coronavirus case was on 31 December and many of the first cases of the pneumonia-like infection were immediately connected to a seafood and animal market in Wuhan, in the Hubei province. ...

However, a study, by Chinese researchers published in the Lancet medical journal, claimed the first person to be diagnosed with Covid-19, was on 1 December 2019 (a lot of earlier) and that person had "no contact" with the Huanan Seafood Wholesale Market.
Wu Wenjuan, a senior doctor at Wuhan's Jinyintan Hospital and one of the authors of the study, told the BBC Chinese Service that the patient was an elderly man who suffered from Alzheimer's disease.

"He (the patient) lived four or five buses from the seafood market, and because he was sick he basically didn't go out,” Wu Wenjuan said.

She also said that three other people developed symptoms in the following days – two of whom had no exposure to Huanan either. ...
Researchers also found that 27 people of a sample of 41 patients admitted to hospital in the early stages of the outbreak had been exposed to the market.' [https://www.bbc.com/future/article/20200221-coronavirus-the-harmful-hunt-for-covid-19s-patient-zero]

'করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি কে?' শিরোনামে দৈনিক জনকন্ঠে ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে বিবিসি ফিউচারে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অবলম্বনে একটি ছায়া প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। [https://www.dailyjanakantha.com/details/article/482607]

এই নিবন্ধ/প্রতিবেদনগুলোর নিচে দাগ দেয়া বাক্যগুলো আমরা আগে আলাদা করি।
(এক) Some people who visited the market developed viral pneumonia caused by the new coronavirus. A study that came out on Jan. 25, 2020, notes that the individual with the first reported case became ill on Dec. 1, 2019, and had no link to the seafood market. Investigations are ongoing as to how this virus originated and spread.
(দুই) Today, we publish the first clinical data from individuals confirmed to be infected with 2019-nCoV from WuhanChina. Chaolin Huang and colleagues provide comprehensive findings for the first 41 laboratory-confirmed cases. 27 of these 41 cases had direct exposure to the Wuhan seafood market that is thought to be the initial site of infection from an animal source. All had viral pneumonia. ...

Separately, Jasper Fuk-Woo Chan and colleagues report clinical and microbiological data from a family of six people who had travelled to Wuhan and later presented with pneumonia to Shenzhen Hospital in Guangdong province. Five were identified as infected with 2019-nCoV. Notably, none had been to the Wuhan market, but two had visited a Wuhan hospital. The authors suggest these findings confirm human-to-human transmission. ...
There are still many gaps in our understanding.
(তিন) কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণ চিহ্নিত হয় একজন লোকের দেহে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর। সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে উহান শহরের ওই বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে এটি ঠিক যে, প্রথম দিকে যে ৪১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন- তার মধ্যে ২৭ জনই উহানের সেই বাজারের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
(চার) ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
(পাঁচ) Chinese authorities originally reported that the first coronavirus case was on 31 December and many of the first cases of the pneumonia-like infection were immediately connected to a seafood and animal market in Wuhan, in the Hubei province. ...


However, a study, by Chinese researchers published in the Lancet medical journal, claimed the first person to be diagnosed with Covid-19, was on 1 December 2019 (a lot of earlier) and that person had "no contact" with the Huanan Seafood Wholesale Market. ...
"He (the patient) lived four or five buses from the seafood market, and because he was sick he basically didn't go out," Wu Wenjuan said.
Researchers also found that 27 people of a sample of 41 patients admitted to hospital in the early stages of the outbreak had been exposed to the market.

এবার আমরা সারাংশে আসি।

(এক) প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়, সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েছিলেন, এমন কিছু লোক নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। তবে একেবারে প্রথমে শনাক্তকৃত ব্যক্তিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তবে সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে তার কোনও সম্পর্ক ছিল না।
(দুই) দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্যমতে পরীক্ষাগারে যে ৪১ জন ব্যক্তির করোনাভাইরাস নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ২৭ জনই উহান সি ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন।
(তিন) আরও বলা হয়, পৃথকভাবে, জ্যাস্পার ফুক-উ চ্যান এবং সহকর্মীরা ছয় জনের একটি পরিবার থেকে ক্লিনিক্যাল এবং মাইক্রোবায়োলজিক্যাল তথ্য রিপোর্ট করেছেন, যারা উহান ভ্রমণ করেছিলেন এবং পরে নিউমোনিয়া নিয়ে গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পাঁচজনকেই ২০১৯-এনসিওভিতে সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কেউই উহান বাজারে আসেনি, তবে দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিল।
এরপর বলা হয়, লেখকরা পরামর্শ দেন যে, এই ফলাফলগুলো মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণকে নিশ্চিত করে।
(চার) উল্লেখিত এই দু'রকম ঘটনা বর্ণনার আগে দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কিন্তু অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে', আর পরে বলা হয়, 'আমাদের বোঝার মধ্যে এখনও অনেক ফাঁক রয়ে গেছে।'
(পাঁচ) তৃতীয় প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, তা প্রথম দু'টি প্রতিবেদনকেই সমর্থন করে।
(ছয়) চতুর্থ প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি।
শেষে বলা হয়, অবশ্য এ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
(সাত) পঞ্চম প্রতিবেদনেও বলা হয়, কোভিড -১৯ শনাক্তকারী প্রথম ব্যক্তিটি ছিল ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর (অনেক আগে) এবং সেই ব্যক্তির হুয়ানান সীফুড হোলসেল মার্কেটের সাথে "যোগাযোগ ছিল না"।
এখানে লোকটি সম্পর্কে আরো বলা হয়, "সামুদ্রিক খাবারের বাজারে যেতে তাকে চার বা পাঁচটি বাস পাল্টাতে হতো, এমনকি তিনি অসুস্থ থাকায় নিজের আবাসস্থলের বাইরে যাননি।"
(আট) এখানেও প্রাদুর্ভাবের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই ৪১ ব্যক্তির করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হবার কথা উল্লেখ করা হয়, যাদের ২৭ জন নির্দিষ্ট ওই "বাজারে গিয়েছিল"।
(নয়) এই প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়, চীনা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল যে, প্রথম করোনাভাইরাস কেসটি ৩১ ডিসেম্বর ছিল এবং নিউমোনিয়া জাতীয় সংক্রমণের প্রথম অনেকগুলো হুবাই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার এবং পশুর বাজারের সাথে সাথে সংযুক্ত হয়েছিল।
(দশ) আরও বলা হয়, আমরা কি জানি চীন থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ''শূন্য রোগী'' কে?
সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো 'না'।

চীনে করোনাভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ এবং ভাইরাসটি ছোঁয়াচে কিনা, সে সম্পর্কিত এই প্রতিবেদন-নিবন্ধগুলোতে যে ঘটনাগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে যারা করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে/সংক্রামক/ভাইরাস হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ছাড়া বিশ্বের অন্য সকল সচেতন মানুষ না হলেও অধিকাংশ সচেতন মানুষ করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে/সংক্রামক/ভাইরাস বলে ভাবতে অনেক কষ্ট হতো। কারণ ছোঁয়াচে বলে আখ্যা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত অনুকূল তথ্য-উপাত্ত নেই এই ঘটনাগুলোতে। 'কষ্ট হতো', না বলে 'ভাবতো না কোনোভাবে' বলা যেতো এখানে। কিন্তু বলা হয়নি, কারণ 'ছোঁয়াচে রোগ বলে একটা কথা আছে না! করোনাভাইরাসও ছোঁয়াচে হলেও তো হতে পারে, হিসাব পুরো না মিললেও!
এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে দু'টি ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পড়া যাক এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

'চোখ ওঠা' এবং জলবসন্ত কি ছোঁয়াচে রোগ?
[এক] গতকাল (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯) একটা ক্লাসে পাঠ দিতে গিয়ে দেখলাম, উষা নামক একজন শিক্ষার্থীর চোখ লাল হয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমার চোখে কী হয়েছে?' সে বললো, 'আমার চোখ লইছে (চোখ ওঠা রোগ হয়েছে)।' অন্য শিক্ষার্থীরা আমাদের কথোপকথন শুনছিলো। আমি অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, 'উষা'র চোখ ওঠা রোগ হয়েছে, ওর এই রোগ ওর থেকে কি তোমাদেরও হতে পারে না?' প্রায় সবাই উত্তর দিলো, 'হতে পারে।' আমি বললাম, 'তোমরা ভয় পাবে না, ওর এই রোগ ওর থেকে তোমাদের কোনোভাবেই হবে না। যদি রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া তোমাদের কারো ভাগ্যে থেকে থাকে, ওর যেমন অন্য কারো থেকে রোগটি হয়নি, নতুন করে হয়েছে, তোমাদেরও তেমনি রোগটি হতে পারে, কিছুই করার নেই।

এখন বর্ষাকাল শেষের পথে এবং একইসাথে শীতকাল শুরুর পথে। প্রতি বছর এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। একজনের সাথে আরেকজনের কোনো যোগসূত্র ছাড়াই। এটা সিজনাল রোগ। তোমাদের মধ্যে অন্য অনেকেরও এখন রোগটি হতে পারে।

কেন বলছি এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়, এবার শুনো:
১. যদি রোগটি মৌসুমী রোগ না হয়ে ছোঁয়াচে রোগ হতো, তাহলে বছরের শুধু এই সময়টাতে নয়, বরং সারা বছর ধরে চক্রাকারে মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হতো। রোগটি থেকে মানুষ কোনো ঋতুতেই রক্ষা পেতো না।
২. রোগটি ছোঁয়াচে হলে বর্ষা-শেষের এই সময়টাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যারা প্রথমে রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তারা কার কাছ থেকে আক্রান্ত হচ্ছে?

যেহেতু সিজনাল রোগ, তাই সবাই যে একইসাথে একই দিনে আক্রান্ত হবে, এমন কোনো কথা নেই। এজন্য কারো এই রোগ হয়েছে দেখলে তাকে ঘৃণার চোখে দেখবে না। কারণ তার আগে তোমারও রোগটি হতে পারতো। আর এবছর সিজনালী তোমারও যে রোগটি হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই, উষা'র থেকে তোমার হওয়া দূরের কথা। তাই কারো রোগটি হয়েছে দেখে অহেতুক ভয় পাবে না। মানুষকে অনেক সময় বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়।

পাঁচ বছর আগে এরকম বর্ষা-শেষে আমারও রোগটি হয়েছিল। কিন্তু ঐ বছর আমাদের পরিবারের আর কারো রোগটি হয়নি। তাহলে রোগটি ছোঁয়াচে হলো কী করে! এ বছরও উষা’র যে এই রোগটি হয়েছে, সে প্রতিদিন রোগটি নিয়ে স্কুলে এলেও তোমরা দেখবে, স্কুলের সবাই রোগটিতে আক্রান্ত হবে না। ছোঁয়াচে রোগ হলে কিন্তু ওর থেকে আমরা সবাই না হলেও অনেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে যাবো। হয়তো স্কুলের আরো দু'একজন এবছর রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে, সেটা কি উষা থেকেই হয়েছে বলে আমরা মনে করবো? না, বরং উষা'র যেভাবে এমনিতেই হয়েছে নির্দিষ্ট ঋতু পরিবর্তনের কারণে, আমাদের মধ্যে অন্য কারো রোগটি হলে তাদের রোগটাকেও আমরা সেভাবেই হয়েছে বলে মনে করবো।'

[দুই] আমাদের দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক পরিবারে একাধিক লোক পর্যায়ক্রমে রোগটিতে আক্রান্ত হয়। শুধু এরকম ঘটনার প্রতি লক্ষ রেখেই মানুষ রোগটিকে নিশ্চিতভাবে ছোঁয়াচে রোগ বলে বিশ্বাস করে।

কোনো পরিবারে একজনের রোগটি হবার পর আরেকজন বা আরো কয়েকজন রোগটিতে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোই শুধু আমরা দেখি এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করেই রোগটি সম্পর্কে মনে মনে একটি ধারণা লালন করি। কিন্তু দেখি না, ১. কোনো পরিবারে প্রথমে যে লোক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, সে কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে? ২. এমন অনেক পরিবারে অনেক মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, যার কাছ থেকে পরিবারের অথবা তার কর্মস্থলের আর কেউ আক্রান্ত হয় না। ৩. এমন অনেক মানুষের সংস্পর্শে আমরা প্রায়ই আসি, যারা এই রোগে আক্রান্ত, তবু আমরা খুব কমই রোগটিতে আক্রান্ত হই! ৪. আমরা যারা এই রোগে কখনো আক্রান্ত হয়েছি, তখন এই রোগ নিয়ে যাদের সংস্পর্শে গিয়েছি, সবাই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েনি! ৫. মাঝে মাঝে এমন ঘটনাও ঘটে, কোনো পরিবারে খুব কাছাকাছি সময়ে বা একই সাথে একাধিক সদস্য রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এই বিষয়গুলো ভালোভাবে ভাবলে রোগটি নিয়ে আমাদের চোখের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। রোগটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পাল্টে যেতে পারে।
যারা রোগটিকে ছোঁয়াচে ভাবতে পছন্দ করেন, তাদের নিকট প্রথম প্রশ্ন: ধরুন, একটি পরিবারে পর্যায়ক্রমে তিনজন লোক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। আপনার কি মনে হয়, যদি ছোঁয়াচে না হতো তাহলে তিনজন একই দিনে একই সাথে রোগটিতে আক্রান্ত হতো?
যারা রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তারা কেউই এই প্রশ্নটির উত্তরে 'হ্যাঁ' বলতে পারবেন না। কারণ এটা সম্ভব নয়। সংক্রামক রোগ নয়, এমন কোনো রোগও একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে একই দিনে সাধারণত আক্রমণ করে না। যদি এই প্রশ্নটির উত্তর 'না' হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে ভাবুন, ছোঁয়াচে না হলেও যদি একই পরিবারে একাধিক মানুষ রোগটিতে একসাথে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে, বরং কখনো একজনের পর আরেকজন, কখনো কয়েকজন একসাথে আক্রান্ত হয়, তাহলে রোগটি ছোঁয়াচে হয় কী করে? ছোঁয়াচে হিসেবে তখন তো রোগটির আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকে না!

দ্বিতীয় প্রশ্ন: যেসব পরিবারে একাধিক মানুষ পরপর রোগটিতে আক্রান্ত হবার কারণে মানুষ মনে করে রোগটি ছোঁয়াচে, যদি সত্যিই ছোঁয়াচে হতো, তাহলে তাদের পরিবারে রোগটি সবার শেষে যার হয়েছে, তার থেকে আবার অন্যদের হয়না কেন? রোগটি ছোঁয়াচে হলে তাদের পরিবার রোগটি থেকে কি কখনো মুক্ত হতো? একজনের পর একজনের চক্রাকারে সারা বছর ধরে লেগে থাকে না কেন রোগটি? ঔষধেও কি তখন কোনো কাজ হতো?

তৃতীয় প্রশ্ন: ৬. বর্ষাকালের শেষদিকে যখন রোগটির উপদ্রব শুরু হয়, তখন কি পুরো দেশে মাত্র একজনের প্রথমে সমস্যাটি দেখা দেয়? তার কাছ থেকে কি একজন-দু'জন করে আক্রান্ত হয়ে হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোগটি বিস্তার লাভ করে?
মোটেই না। পুরো দেশে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্দিষ্ট মওসুমে হাজার হাজার মানুষ প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে রোগটিতে আক্রান্ত হয়। এরপর আরো আরো মানুষ আক্রান্ত হয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে বলতে হবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে হাজার হাজার মানুষ রোগটিতে কিভাবে আক্রান্ত হয়? কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়? সুস্থ মানুষ, যাদের এগুলো ছিল না, তাদের কাছ থেকে?! প্রথমে যারা আক্রান্ত হয়, তারা আক্রান্ত না হলে পরে কি আর কেউ আক্রান্ত হতো না? প্রথমে যারা আক্রান্ত হয়, তারা যে কারণে আক্রান্ত হয়, পরে যারা আক্রান্ত হয়, তারাও সেই একই কারণে আক্রান্ত হওয়া কি অসম্ভব??
যদি অসম্ভব না হয়, তাহলে আমরা কেন রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি করছি?
দেখা যায়, এমন অসংখ্য ঘটনা আছে, পরিবারের শুধু একজন বা দু'জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, অন্যদের রোগটি হয়নি, আমার ক্ষেত্রেও যেটা ঘটেছে। অহরহ এমন অসংখ্য ঘটনা দেখার পরও যারা রোগটিকে 'ছোঁয়াচে নয়' বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তাদেরকে বোঝানোর আর কোনো উপায় নেই।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, রোগটিকে চিকিৎসকরাই ছোঁয়াচে রোগ বলে সব সময় প্রচার করছে। দৈনিক যুগান্তরে ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে 'চোখ উঠলে কি করবেন' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সাফী খান। সেখানে বলা হয়, 'চোখ ওঠা ছোঁয়াছে রোগ, তাই যাদের চোখ ওঠেছে, তাদের সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। চোখ আক্রান্ত ব্যক্তির রুমাল, কাপড়চোপড়, তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য হাত তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে হবে।'
একই পরিবারের কয়েকজন রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে দেখেই সাধারণত সবাই এটিকে ছোঁয়াচে রোগ বলে বিশ্বাস ও প্রচার করছে। কিন্তু মানুষ যদি এদিকে লক্ষ্য করতো, রোগটি মৌসুমী রোগ, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়েই সাধারণত মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, সারাবছর নয়, তাহলে কোনোভাবেই রোগটিকে কেউ ছোঁয়াচে রোগ বলে সমাজে আতঙ্ক ছড়াতো না। যেহেতু নির্দিষ্ট একটি ঋতু পরিবর্তনের সময় প্রতিবছর মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে এক মৌসুমে কি মাত্র একজন লোকই রোগটিতে আক্রান্ত হবে বা এক মৌসুমে যারা আক্রান্ত হবার, তারা কি একই দিনে আক্রান্ত হবে?
শুধু ছোঁয়াচে বলে প্রচার করার কারণে মানুষ এখন এই রোগে আক্রান্ত কাউকে দেখলে ভয় পায়; মানুষ মনে মনে চায়, এসব লোক ঘরের বাইরে যেন বের না হয়! অনেকে এই রোগে আক্রান্ত কেউ তার বাড়িতে বেড়াতে আসুক, তা চায় না। সামাজিক এসব বিব্রতকর বিষয়ের একমাত্র কারণ রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে মনে করা।

[তিন] শুধু এই রোগটি নয়, জলবসন্ত রোগকেও (চিকেন পক্স) একইভাবে ছোঁয়াচে রোগ বলে প্রচার করা হয়। দৈনিক যুগান্তরে ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে 'চিকেন পক্স হলে কী করবেন?' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন জ্বর ও যৌনব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আহসান। নিবন্ধটিতে বলা হয়, 'চিকেন পক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, হাঁচি-কাশি এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেই এটি বেশি ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে আলাদা একটি ঘরে রাখা উচিত। ব্যবহৃত পোশাক, গামছা এগুলো যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। পক্স ভালো হয়ে গেলে শিশুর ব্যবহৃত সব কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে গরম পানি এবং স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে দিন।'
ডাক্তারদের এইসব কথার সাথে বাস্তবতার তেমন কোনো মিল নেই। গত শীতকালে (২০১৮) আমার ছোট ভাই পক্সে আক্রান্ত হয়েছিল। ওর পক্স আমি নিজ হাতে স্পর্শ করে দেখেছি, সত্যিই পক্স কিনা, তবু আমার পক্স হয়নি। ওকে আমরা 'একঘরে' করে রাখিনি, তবু আমাদের পরিবারের আর কেউ ওর পক্সের সংক্রমণের শিকার হয়নি!
আমার স্ত্রী কয়েক বছর আগে পক্সে আক্রান্ত হয়েছে। সে এই রোগ নিয়ে তার বাবার বাড়িও গিয়েছে। কিন্তু সেখানে আর কেউ তার কাছ থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়নি। ২০০৪ সালে আমারও পক্স উঠেছিল। কিন্তু আমাদের পরিবারের আর কাউকে আমার পক্স গিয়ে ছোবল মারেনি। এরকম অনেক ঘটনা আমাদের অনেকের জানা আছে। কিন্তু আমরা এই ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে একই পরিবারে পরপর কয়েকজন রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিই। এতে রোগগুলো থেকে আমাদের নিস্তার লাভ কোনোভাবে সম্ভব নয়।
কারণ আমার আশপাশের কারো রোগটি না হলেও নির্দিষ্ট ঋতুতে রোগটি আমাকে আক্রমণ করতে পারে। আর যদি আমার আশপাশের অনেকে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও, তাদের সাথে সবসময় মেশা সত্ত্বেও ওই মৌসুমে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া আমার ভাগ্যে লেখা না থাকে, তাহলে রোগটি অন্য কারো শরীর থেকে আমার শরীরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসতে পারবে না।
দেখবেন, এখন সমাজে তেমন কারো জলবসন্ত নেই। এক দু’মাস পরই শীত আসছে। শীতকাল আসতে শুরু করার পরই দেখা যাবে মানুষের পক্স দেখা দিচ্ছে। শীতকাল যখন শেষের দিকে, তখন অবশ্য পক্স বেশি হয় মানুষের।

আপনার কাছের কারো পক্স হলে আপনি যদি পক্সকে ছোঁয়াচে রোগ মনে করেন, তবু আপনি রোগটি থেকে এবছর বেঁচে যেতে পারেন; আর যদি আপনি পক্সকে ছোঁয়াচে রোগ মনে না করেন এবং আপনার কাছের কারো রোগটি না-ও হয়, তবু আপনি রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ? রোগটি সাধারণত শীত মৌসুমেই, বিশেষ করে শীতের শেষের দিকে হয়, অন্য মৌসুমে তেমন নয়। আর শীত মৌসুম চলে গেলে রোগটি থেকে আপনি আপাতত বেঁচে গেছেন এ বছরের জন্য, এমনটা ধরে নিতে পারেন। সুতরাং রোগ দু’টিকে ছোঁয়াচে রোগ বলে আর ভয় নয়; রোগ দু'টিতে আক্রান্ত কাউকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা বৃথা। [bit.ly/3c5s5PX]

নিবন্ধটি এখন এই লেখার একটি অংশ হয়ে গেছে, পূর্বেই যা লেখা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ 'চোখ ওঠা (কনজাংটিভাইটিস) এবং বসন্ত (পক্স) কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়' শিরোনামে একটি ছোট্ট লেখা পোস্ট করা হয়েছিল ফেসবুকে।


২০১৯ সালে এসে শ্রেণিকক্ষে সংঘটিত একটা ঘটনার সূত্র ধরে তা আরো বড় পরিসরে লেখা হয়। লেখাটি পড়ার পর এমন কেউ হয়তো অবশিষ্ট থাকবে না, যার মনে এই দু'টি রোগ ছোঁয়াচে হবার বিশ্বাস থেকে যাবে। যারা ছোঁয়াচে বলে বিশ্বাস করতো আগ থেকেই, তাদেরকে যে তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তাদের টনক নড়বে, কোনো সন্দেহ নেই।

বুঝা যাচ্ছে, যুগের পর যুগ যে বিশ্বাস নিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেছে, যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অনেক মানুষ নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে, এমনকি যে বিশ্বাস নিয়ে অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে, সে বিশ্বাস ভুলও হতে পারে। আরেকটা ভিন্নমতের কথা শুনলে অনেকে নয়, সবাই চমকে যাবেন। ভাবতে পারেন এই ভিন্নমত কখনো কোনোভাবে সঠিক হতে পারে না। 'ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর' এমন বিশ্বাসের বয়স কয়েকশত বছর। সর্বশেষ দুই শতাব্দীর যে কোনো সময় পৃথিবীর মোট সচেতন জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ, যাদের বয়স অন্তত ১৫ বছর, এই বিশ্বাসের সাথে পরিচিত ছিল/আছে বলে স্বীকার করতে তেমন কেউ কুন্ঠিত হবে না। ভেতরে ভেতরে খুব সীমিত কিছু মানুষ এই ধারণা বিশ্বাস করে না। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে অনেক অনেক মানুষ আছে, এই ধারণা খুব শক্তভাবে বিশ্বাস করেন, কিন্তু ধূমপায়ী! অনেক খুঁজেও আপনি এই ধারণার পরিপন্থী কোনো গ্রন্থ/নিবন্ধ/বক্তব্য/প্রতিবেদন গুগলে বা কোথাও খুঁজে পাবেন না। কারণ ধূমপান বিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে লেখাও অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগের কোনো কোনো মাধ্যমে এই জাতীয় কিছু পোস্ট করা তাদের কম্যুনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘনের শামিল, যদিও বিশ্বের প্রায় সব দেশে ধূমপান চালু আছে, তবু। অবাক হবার মতো বিষয়, বিশ্বব্যাপী ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে এতো প্রচারণার পরও বিশ্বের খুব কম দেশ আছে, যেখানে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ। অনেক দেশে নিষিদ্ধ হলেও ফাঁক আছে। 'Smoking bans: How they vary around the world' শিরোনামে বিবিসির ওয়েবসাইটে ১ জুন ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ (By Rick Kelsey) পড়ে দেখতে পারেন, যার লিঙ্ক: http://www.bbc.co.uk/newsbeat/article/32958975/smoking-bans-how-they-vary-around-the-world

উইকিপিডিয়ায়ও এ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ আছে 'List of smoking bans' শিরোনামে। নিবন্ধটিতে এমন অনেক দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ, তবে সর্বত্র-সর্বক্ষেত্রে নয়। [https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_smoking_bans]

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত শুধু মনে হয়, ভুটান এবং তুর্কমেনিস্তানে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ধূমপান। 'যে দেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হল ধূমপান' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে তুর্কমেনিস্তানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। [https://www.bd-pratidin.com/international-news/2016/08/03/161021]

'Bhutan smokers huff and puff over tobacco ban' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে ভুটানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। [https://www.aljazeera.com/indepth/features/2012/09/201292095920757761.html]

যদি সত্যিই ধূমপান ক্ষতিকর হতো, পৃথিবীর সব দেশ থেকে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হতো অনেক আগেই, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কেন করা হচ্ছে না, তা বুঝতে গভীরভাবে ভাববারও প্রয়োজন হবে না সচেতন কারো।
ধূমপান সম্পর্কে প্রচলিত বিশ্বাস নিয়ে যেই ভিন্নমতের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলো চলে এসেছে, সেই ভিন্নমত সম্পর্কে 'ধূমপান নয়, বরং মদপান ক্ষতিকর' শিরোনামে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ পড়তে পারবেন এই লিঙ্কে bit.ly/2V0sHRk গিয়ে। নিবন্ধটি পড়তে পড়তে একসময় আবিষ্কার করবেন ধূমপানের সাথে যে মারাত্মক ক্ষতিগুলোর সম্পর্ক সম্পর্কে আপনি জানেন, সেই ক্ষতিগুলো বাস্তবে ধূমপানের সাথে সম্পর্কিত নয়! নিবন্ধটি আপনাকে ধূমপানে উৎসাহিত করবে না, কারণ ধূমপানে মারাত্মক কোনো ক্ষতি না হলেও অন্তত দু'টি  ক্ষতি হয় বলে নিবন্ধটিও স্বীকার করে: অর্থের অপচয় এবং মুখে দুর্গন্ধ। নিবন্ধটি বেশ দীর্ঘ করেই লেখা হয়েছে, কারণ (১) ধূমপানের মারাত্মক সব ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ 'দীর্ঘ'দিন ধরেই শুনে আসছে, (২) নিবন্ধটির শেষ পর্যন্ত পৌঁছার আগেই পাঠকের ধারণা যেন পাল্টে যায়। যদি পূর্ব ধারণা পাল্টে যাবার আগেই পড়া শেষ হয়ে যায়, তাহলে কী লাভ হলো লিখে, কী লাভ হলো পড়ে!

এই লেখার পরবর্তী অংশ পড়ার আগে, 'ধূমপান নয়, বরং মদপান ক্ষতিকর' নিবন্ধটি পড়ে নিলে পরবর্তী অংশ বুঝা অনেকটা সহজ হবে। তবে এই নিবন্ধটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, এটা বুঝতে সহজ হওয়া যে, যুগের পর যুগ এমন অনেক বিশ্বাস নিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেছে, এমন অনেক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অনেক মানুষ নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে, এমনকি এমন অনেক বিশ্বাস নিয়ে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণও করেছে, যেগুলোর কোনো কোনটি একদিন ভুলও প্রমাণিত হতে পারে।

ধূমপান সম্পর্কিত নিবন্ধটি আমরা সবাই না পড়লেও শুধু চোখ ওঠা এবং জলবসন্ত রোগ সম্পর্কিত নিবন্ধটি আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পূর্ববর্তীদের আরোপিত এবং যুগের পর যুগ ধরে প্রচলিত ধারণা সঠিক না-ও হতে পারে। চোখ ওঠা এবং জলবসন্ত রোগ সংক্রান্ত আরো কিছু নিবন্ধ দেখা যাক:

'How Is Pink Eye Spread and How Long Are You Contagious?' শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হেলথলাইনের ওয়েবসাইটে ৩০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (Medically reviewed by Gerhard Whitworth, RN Written by James Roland) বলা হয়, 
'Is pink eye contagious?
When the white part of your eye turns reddish or pink and becomes itchy, you may have a condition called pink eye. Pink eye is also known as conjunctivitis. Pink eye can be caused by a bacterial or viral infection, or it may be caused by an allergic reaction.

Bacterial and viral conjunctivitis are both highly contagious, and you may be contagious for up to two weeks after symptoms first appear. Allergic conjunctivitis is not contagious.

Most cases of pink eye are viral or bacterial, and can occur with other infections.

How is it spread?
A pink eye infection can be passed to someone else in the same ways other viral and bacterial infections can be spread. The incubation period (the time between becoming infected and symptoms appearing) for viral or bacterial conjunctivitis is about 24 to 72 hours.
If you touch something with the virus or bacteria on it, and then touch your eyes, you can develop pink eye. Most bacteria can survive on a surface for up to eight hours, though some can live for a few days. Most viruses can survive for a couple days, with some lasting for two months on a surface.
The infection can also be spread to others through close contact, such as a handshake, hug, or kiss. Coughing and sneezing can also spread the infection.
You're at increased risk for pink eye if you wear contact lenses, especially if they're extended-wear lenses. That's because bacteria can live and grow on the lenses.

How long should you stay home from school or work?
Pink eye is contagious once symptoms appear, and the condition remains contagious as long as there is tearing and discharge. If your child has pink eye, it's best to keep them home from school or daycare until symptoms disappear. Most cases are mild, with symptoms often clearing up within a few days.

If you have pink eye, you can return to work any time, but you will need to take precautions, such as washing your hands thoroughly after touching your eyes.
Pink eye isn't any more contagious than other common infections, such as a cold, but it does require effort to keep from spreading it or picking it up from someone else.' [https://www.healthline.com/health/is-pink-eye-contagious]

চিকেন পক্স সম্পর্কে সিডিসি'র (Centers for Disease Control and Prevention) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'Chickenpox (Varicella)' শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Chickenpox is a contagious disease caused by the varicella zoster virus. The virus spreads mainly by touching or breathing in the virus particles that come from chickenpox blisters, and possibly through tiny droplets from infected people that get into the air after they breathe or talk, for example. Symptoms of chickenpox include an itchy rash, fever, and tiredness. The disease can be serious – even fatal – especially for babies, adolescents, adults, pregnant women and people with a weakened immune system. The best protection against chickenpox is two doses of the chickenpox vaccine. Most people who get the vaccine will not get chickenpox. If a vaccinated person does get chickenpox, the symptoms are usually milder with fewer or no blisters (they may have just red spots) and mild or no fever.' [https://www.cdc.gov/dotw/chickenpox/index.html]

গুটিবসন্ত সম্পর্কে সিডিসি'র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত Smallpox শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়,
'How does Smallpox Spread?
Before smallpox was eradicated, it was mainly spread by direct and fairly prolonged face-to-face contact between people. Smallpox patients became contagious once the first sores appeared in their mouth and throat (early rash stage). They spread the virus when they coughed or sneezed and droplets from their nose or mouth spread to other people. They remained contagious until their last smallpox scab fell off.

These scabs and the fluid found in the patient's sores also contained the variola virus. The virus can spread through these materials or through the objects contaminated by them, such as bedding or clothing. People who cared for smallpox patients and washed their bedding or clothing had to wear gloves and take care to not get infected.
Rarely, smallpox has spread through the air in enclosed settings, such as a building (airborne route).
Smallpox can be spread by humans only. Scientists have no evidence that smallpox can be spread by insects or animals.' [https://www.cdc.gov/smallpox/transmission/index.html]

কনজাংটিভাইটিস এবং পক্স সম্পর্কে এমন ভয়ানক ধারণা ছড়িয়ে দেয়াটা মানবজাতির কী উপকারে এসেছে, ফলাফল বের করতে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে অনেক। যদি রোগগুলোকে ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত, সংক্রামক ইত্যাদি বলে মানুষকে সতর্ক করার বিষয়টা সঠিক হতো এবং রোগাক্রান্ত মানুষকে বাড়িতে থাকতে বা 'একঘরে' থাকতে বলাটা এই রোগগুলো দমনের কার্যক উপায় হতো, তাহলে যে কোনো এলাকায় রোগগুলোর উপদ্রবের পরও যার সাথে এমন কোনো রোগীর দেখা হয়নি, সে কোনোভাবে  রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো না।
রোগগুলো ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত হলে ডাক্তারের কাছে মানুষ এগুলোর চিকিৎসার জন্য যেতে পারতো না, কারণ কোনো ডাক্তার ছোঁয়াচে হবার কারণে এগুলোতে আক্রান্ত হবার ভয়ে এগুলোর চিকিৎসা করতো না। সব ডাক্তার চেম্বারের সামনে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিতো, 'এখানে 'চোখ উঠা' এবং 'পক্স'- এই দু'টি রোগের চিকিৎসা করা হয় না'!

কোনো ডাক্তার অবশ্য এমন করেন না। ডাক্তাররা স্বাভাবিকভাবেই এসব রোগীর চিকিৎসা করে থাকেন। যদি সত্যিই রোগগুলো ছোঁয়াচে হতো, ডাক্তাররা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডেই কাটাতো বেশির ভাগ সময়! সুস্থ হয়ে উঠে নতুন কোনো রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে আবারও আক্রান্ত হয়ে আবারও হাসপাতালের বেডে চলে যেতো!

বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেও বিষয়টা সহজে বুঝা যাবে। যে কোনো এলাকায় রোগগুলোর উপদ্রবের পর ৫ জন রোগী এবং ২০০ জন লোক নিয়ে তাদেরকে ১০০ জন করে দুই ভাগ করার পর প্রথম ১০০ জনকে ঐ ৫ জন রোগীর সান্নিধ্যে ৫-৭ ঘন্টা রাখা হলে আর বাকি ১০০ জন লোককে এরকম যে কোনো রোগী থেকে দূরে রাখা হলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড পার হবার পরও দেখা যাবে, যে ১০০ জন লোককে রোগীদের সান্নিধ্যে রাখা হয়েছে, সেই ১০০ জন লোক এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার হার আর যে ১০০ জনকে দূরে রাখা হয়েছে, সেই ১০০ জন লোক এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার হারে তেমন একটা ব্যবধান নেই।

আমার বিশ্বাস, এরকম কোনো নিরীক্ষা পৃথিবীর কোথাও কখনো চালানো হয়নি। পূর্ববর্তীদের দৃষ্টি নিজেদের চোখে ইনস্টল করেই আমরা রোগগুলোকে দেখছি। রোগগুলো
 উপর এই অপবাদের লেবেল আরো বেশি সময় ধরে এঁটে রাখা ঠিক হবে না। পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই হালনাগাদ হচ্ছে। এই অপবাদের লেবেল এরপরও লাগিয়ে রাখা হলে আর কিছু না হোক, সমাজে মানুষে মানুষে দূরত্ব ঘুচবে না, অহেতুক কিছু ভয় সবসময় মানুষকে ভীত করে রাখবে।
নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা যে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত নয়, তা এই লেখার শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে। ডাক্তাররাও এগুলোকে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে থাকেন, কিন্তু নিয়মিত এসব রোগের চিকিৎসা করার কারণে নিয়মিত এসব রোগে ভোগেন না! সাধারণ মানুষের মতোই মাঝেমধ্যে ভোগেন।
এখানে আলোচনা করা হয়েছে কনজাংটিভাইটিস এবং পক্স ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত না হওয়া সম্পর্কে। এই আলোচনাগুলো নতুন। হ্যাঁ, নতুন আরেকটা বিষয়ে আলোচনার লিঙ্ক ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। 'ধূমপান নয়, বরং মদপান ক্ষতিকর'। পুরাতন কথা শুনতে শুনতে কান অনেক সময় ঝালাপালা করে। নতুন অনেক কিছুই সুন্দর।

নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত নয়, কনজাংটিভাইটিস এবং পক্সও ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত নয়, তাহলে পৃথিবীতে আর কোন্ রোগ আছে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত? কলেরা? যক্ষ্মা? একজিমা বা এলার্জিজাতীয় রোগগুলো? বাত?
প্রকৃতপক্ষে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগই নেই পৃথিবীতে। এই ধারণাটা বিজ্ঞানের ভুলে বা অজ্ঞতার ফলে সৃষ্ট। তবে সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব আছে। সেটা আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এগুলো নয়, বরং ক্যান্সার, একজিমা বা এলার্জিজাতীয় রোগ এবং বাত, এরকম কিছু রোগ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এগুলো যে বংশগত বা সংক্রামক নয়, তা নিয়ে 'দীর্ঘজীবন লাভের উপায়' শিরোনামে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ তৈরি করা আছে, যা বই আকারে প্রকাশ করলে ২৫০ পৃষ্ঠার বেশি বড় আকারের একটি বই হবে, কিন্তু এখনো বই আকারে প্রকাশিত হয়নি, আপাততঃ শুধু ব্লগে প্রকাশ করে রাখা হয়েছে (৫৫ পর্বে ধারাবাহিকভাবে, প্রথম পর্বের লিঙ্ক হচ্ছে: bit.ly/2V2ckDO)। লেখাটি পৃথিবীর সব মানুষের হাতে দ্রুত পৌঁছানো জরুরী, নয়তো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এই তিনটি রোগে মানবমৃত্যুর সংখ্যা কমানো যাবে না, বরং বাড়তেই থাকবে।

কলেরা, যক্ষ্মা এগুলো যে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাাহিত নয়, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করার দরকার নেই। এই লেখায় প্রদত্ত বিভিন্ন সূত্রের সাথে মিলিয়ে বুঝে নিতে হবে। আর একজিমা বা এলার্জিজাতীয় রোগগুলো এবং বাত ইত্যাদি রোগ সংক্রামক। পাশাপাশি ক্যান্সারও। এগুলো একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়, তবে স্পর্শের মাধ্যমে, বায়ুর মাধ্যমে বা শূন্যে লাফিয়ে লাফিয়ে নয়, বরং রক্তের মাধ্যমে। এগুলোতে তীব্রভাবে আক্রান্ত কারো শরীর থেকে অন্য কারো শরীরে রক্ত দেয়া হলে যাকে রক্ত দেয়া হয়েছে, তার শরীরে এই রোগগুলো সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এজন্য সন্তান গর্ভে আসার সময় বা গর্ভে থাকাকালীন স্বামী-স্ত্রী কেউ যদি এই রোগগুলোতে আক্রান্ত থাকে, সন্তানের শরীরেও রোগগুলো চলে আসে। কারণ এই রোগগুলো রক্তের দোষজনিত রোগ।

ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির অস্তিত্ব, ক্রিয়াকর্ম এবং ক্ষমতা
বড় প্রশ্ন থেকে যায় ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির অস্তিত্ব, ক্রিয়াকর্ম এবং ক্ষমতা সম্পর্কে। অবাক লাগে, কিভাবে এতো সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম বস্তু, যেগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না, দেখতে হয় মাইক্রোস্কোপ দিয়ে, সেগুলো মানুষের শরীরে মারাত্মক সব রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে! আরো অবাক করা বিষয়, কিভাবে এগুলো এক শরীর থেকে আরেক শরীরে উড়ে গিয়ে একজনের শরীরের রোগ আরেকজনের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়ার পদ্ধতিকে সাধারণ মানুষ নয়, বিজ্ঞান পর্যন্ত বিশ্বাস করে! চূড়ান্ত অবাক করা বিষয় হলো, এসবে বিশ্বাস সমাজের মধ্যে সাধারণ মানুষ ছড়ায়নি, এসব বিশ্বাসের জন্মদাতা বিজ্ঞান নিজেই!

এটা কখনো সম্ভব নয়, কখনো নয়। শুধু ক্ষুদ্র নয়, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এসব অণুজীবের তৎপরতা এবং ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা যা বিশ্বাস করি, এসব বস্তুর যদি চিন্তাশক্তি এবং মানুষ এদেরকে নিয়ে যা ধারণা করছে, তা বুঝার চেতনা থাকতো, এরা হতবাক হতো নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষের এতো উঁচু ধারণার কথা বুঝতে পেরে এবং একই সাথে দুঃখভারাক্রান্ত হতো এদের নামে জঘণ্য অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দেখে!
ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির অস্তিত্ব, ক্রিয়াকর্ম এবং ক্ষমতা সম্পর্কে এই সামান্য কথাটা সহজেই তারা গ্রহণ করবেন, যারা নিরেট একজন ভদ্রলোক হিসেবে মনোযোগসহ এই লেখাটা শুরু থেকে এই পর্যন্ত পড়েছেন। আর তেমন কিছুু বলার দরকার নেই। তবু তাদের বুঝাটা আরো শক্ত হওয়ার জন্য বাড়তি কিছু কথা বলতে হচ্ছে।

ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এগুলো এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের শরীরে কোনো রোগ ছড়িয়ে দিতে কেউ কি কখনো দেখেছে? দেখেনি। বলা হবে, খালি চোখে এগুলোকে দেখা যায় না, এজন্য কেউ দেখে না। যদি খালি চোখে দেখা না যায়, এগুলো দেখতে হলে মাইক্রোস্কোপ লাগে, তাহলে বলতে হবে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এগুলো একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে গিয়ে রোগ ছড়ানোর প্রক্রিয়াটা কেউ কি কখনো দেখতে পেয়েছে? তা-ও দেখতে পায়নি। কারণ ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এগুলো এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের শরীরে কোনো রোগ ছড়িয়ে দেয়াটা সম্ভব নয়। একটা অসম্ভব ও অবাস্তব কিছু কিভাবে দেখা সম্ভব!

মাইক্রোস্কোপিক ক্যামেরায় ধারণ করা এমন কোনো ভিডিও কি কেউ দেখেছে, যেখানে দেখানো হচ্ছে একজন রোগী থেকে কোনো রোগের ভাইরাস বা জীবাণু হাঁচি, কাশি, থুথু ইত্যাদির মাধ্যমে বা ঐ রোগীর সাথে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে একজন সুস্থ মানুষের শরীরে সংক্রমিত হচ্ছে?
দেখেনি। কারণ এমন কোনো ভিডিও বাস্তবেই নেই। এমন কোনো ভিডিও ধারণ করাও সম্ভব নয়। সত্যিকারের কারণ, এই প্রক্রিয়ায় রোগ ছড়ানো অবাস্তব। কিন্তু বলা হতে পারে, একজন রোগীর সংস্পর্শে সুস্থ কেউ গেলে সাথে সাথেই রোগটি সুস্থ লোকের শরীরে সংক্রমিত হয় না, বরং সুস্থ লোকটি রোগটিতে আক্রান্ত হতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়, যাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়, এজন্য ভিডিও ধারণ করা সম্ভব নয়।
এই ইনকিউবেশন পিরিয়ডের অযুহাতে ভিডিও করা সম্ভব না হবার কথা বলে মানুষের চোখে ধুলো দেয়ার চেষ্টা করা হলেও আমরা আপাতত নিশ্চিত হতে পারি, ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এগুলো এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের শরীরে কোনো রোগ ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা কেউ কখনো খালি চোখেও দেখেনি, মাইক্রোস্কোপের সাহায্যেও নয়। না দেখেই সবাই বিষয়টা বলছে এবং প্রচার করছে!
ইনকিউবেশন পিরিয়ডের দোহাই দিয়ে ভিডিও করতে না পারার গোমর ফাঁসের জন্য আমরা একটা নিরীক্ষা করতে পারি।

একটি নিরীক্ষা প্রমাণ করবে, ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ নেই
যে রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে বিশ্বাস করা হয়, সেরকম কোনো রোগে, যেমন নিউমোনিয়ায় তীব্রভাবে আক্রান্ত ১০ জন লোক নেয়া হোক, পাশাপাশি এমন ২০০ জন লোক নেয়া হোক, যারা নিউমোনিয়া থেকে পুরো সুস্থ। ২০০ জন লোককে ১০০ জন করে ২ ভাগ করা হোক। প্রথম ১০০ জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ঐ ১০ জন লোকের নিকট থাকতে দেয়া হোক অন্তত ৬ ঘন্টা। বাকি ১০০ জনকে যেকোনো নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লোক থেকে দূরে রাখা হোক। ১৫ দিন পর এটা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যে ১০০ জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লোকদের সংস্পর্শে রাখা হয়েছে, তাদের কেউ যেমন নিউমোনিয়ায় আক্রান্তই হয়নি, তেমনি যাদেরকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে, তাদের কেউও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়নি। কোনো কোনো সময় এমনও দেখা যেতে পারে, যে ১০০ জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লোকদের সংস্পর্শে রাখা হয়েছে, ১৫ দিন পর তাদের মধ্যে কেউই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়নি, কিন্তু যাদেরকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে, তাদের দু'একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে (কারণ নিরীক্ষার অংশ না হলেও তারা অন্য সময় যেরকম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, এখনও সেরকম আক্রান্ত হয়েছে)। তবে এটা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, যাদেরকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে রাখা হয়েছে, ১৫ দিন পর তাদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার হার আর অবশিষ্ট ১০০ জনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার হারে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এভাবে নিরীক্ষা করা হলে, যে রোগগুলোকে বিশ্বব্যাপী ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত, ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াজনিত বলা হচ্ছে, সেই রোগগুলো এই অপবাদ থেকে চিরমুক্তি পাবে এবং ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুগুলো 'মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হওয়া'র ধারণাটা মানবজাতি বা বিজ্ঞানের একটা মস্তবড় ভুল হিসেবে সাব্যস্ত হবে; সাথে সাথে জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি নিরীহ অনুপ্রাণীগুলোও শত বছর ধরে প্রচারিত একটা অপবাদ থেকে মুক্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীদের অনেকে মাস্ক ব্যবহার করে না। এমতাবস্থায় হাসপাতালে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন কথিত ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে সেবা দিতে গিয়ে তারা যদি বার বার রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে যেতো, তাহলে তারা আবশ্যিকভাবে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। কিন্তু তারা আক্রান্তও হচ্ছে না সচরাচর, তাই মাস্কও ব্যবহার করছে না।

নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বা কলেরা রোগীর চিকিৎসা করা হয়, এমন কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে আমাদেরকে মাঝেমধ্যে যেতে হয়। আমাদেরকে সেখানে অনেক সময় অনেক রোগীর কাছাকাছিও যেতে হয়। কিন্তু আমরা কি কিছুদিনের মধ্যে এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি?
চীনে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে এবং করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা, এই সম্পর্কে উপরে উল্লেখিত প্রতিবেদন/নিবন্ধগুলোর সারাংশ নিয়ে পর্যালোচনা করার আগে ভূমিকা হিসেবে এই কথাগুলো বলতে হলো। এখন আমরা চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া প্রথম ঘটনাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করবো।

একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করতে হবে ঘটনাগুলোর দিকে। চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এমন কিছু লোক, যারা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েছিলেন। তবে একেবারে প্রথমে শনাক্তকৃত ব্যক্তিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।
এখানে বলা হয়, প্রথমে আক্রান্ত হয়, (১) এমন 'কিছু লোক' (তার মানে একজন নয়, কয়েকজন লোক প্রথমে একসাথে আক্রান্ত হয়েছিল), যারা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েছিলেন; (২) তবে 'একেবারে প্রথমে' শনাক্তকৃত ব্যক্তিটির সাথে সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। কারণ সামুদ্রিক খাবারের বাজারে যেতে তাকে চার বা পাঁচটি বাস পাল্টাতে হতো, এমনকি তিনি অসুস্থ থাকায় নিজের আবাসস্থলের বাইরে যাননি।
এই তথ্য অনুযায়ী এটা নিশ্চিত, প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঘটনার সাথে সামুদ্রিক খাবারের বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই! এমনকি একেবারে প্রথমে আক্রান্ত এই ব্যক্তির সাথে এরপরে আক্রান্ত ওই 'কিছু লোক' এরও কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে না গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু পরের ব্যক্তিগুলো সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। এতে বুঝা যায়, সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক থাকলে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে যাওয়া ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো না।
একেবারে প্রথমে আক্রান্ত লোক এবং তার আক্রান্ত হবার অব্যবহিত পরেই আক্রান্ত ওই 'কিছু লোক' সবাই অন্য নির্দিষ্ট কোনো এক উৎস থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কী সেই উৎস?

প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্যমতে পরীক্ষাগারে যে ৪১ জন ব্যক্তির করোনাভাইরাস নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ২৭ জনই উহান সি ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। উহান সি ফুড মার্কেটে গিয়েই যদি এই ২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি ১৬ জন কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছেন? এই প্রশ্নও থেকে যায়, এই ২৭ জন যদি সি ফুড মার্কেটে না যেতেন, তাহলে কি আক্রান্ত হতেন না? ১৬ জন যদি সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হতে পারেন, এই ২৭ জন সি ফুড মার্কেটে না গেলে কি আক্রান্ত হবার কোনো সম্ভাবনা থাকতো না? যে কোনো কারণে সি ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছে বলে প্রচার করার ফলেই এই ২৭ জনের সি ফুড মার্কেটে যাওয়া দোষের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেবারে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি যেমন সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হয়ে গেছে, এই ২৭ জনও সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হতে পারতো। সি ফুড মার্কেটে যাবার সাথে এই রোগের উপদ্রবের সম্পর্ক সত্যিই থাকলে যে লোকগুলো সি ফুড মার্কেটে যায়নি, তারা আক্রান্ত হতো না। এটাই সত্য হবার সম্ভাবনা বেশি, ১৬ জন লোক যেভাবে সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হয়েছে, এই ২৭ জনও সেভাবে সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হতো এমন কোনো উৎস থেকে, বাকি ১৬ জন যে উৎস থেকে আক্রান্ত হয়েছে এবং একেবারে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিও।

প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্যমতে পরীক্ষাগারে ৪১ জন ব্যক্তির করোনাভাইরাস নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই তথ্য থেকে বুঝা যায়, শুধু একজন লোক করোনাভাইরাসে প্রথমে আক্রান্ত হয়নি, ৪১ জন বা তারচে বেশি (একাধিক) লোক আক্রান্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই এতোগুলো লোক একসাথে কোত্থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো?

আরেক ঘটনায় ছয় জনের একটি পরিবার উহান ভ্রমণ করেছিলেন এবং পরে নিউমোনিয়া নিয়ে গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পাঁচজনকেই ২০১৯-এনসিওভিতে সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কেউই উহান সি ফুড মার্কেটে আসেনি, তবে দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিল।
এই পাঁচ জনের কেউই সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও করোনা সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। গিয়েছিলেন শুধু উহানে। দোষটা তাহলে উহানের, সি ফুড মার্কেটের নয়।
তবে দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে যদি রোগটি ছড়াতো, তাহলে অন্য ঘটনায় বর্ণিত লোকগুলো হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া কিভাবে আক্রান্ত হলো?
দোষটা শুধু উহানে থাকা বা যাওয়ার সাথেই তর্কাতীতভাবে সম্পৃক্ত।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি।
এখানেও একই প্রশ্ন, চীনের উহানে মাছের বাজারের সাথে যদি এই ভাইরাস উপদ্রবের সম্পর্ক থাকে, তাহলে যারা মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি, তারা কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছেন?

যারা মাছের বাজারে যাওয়া ছাড়াই আক্রান্ত হয়েছে, তারা যদি মাছের বাজারে যাওয়া ছাড়াই আক্রান্ত হতে পারে, তাহেল যারা মাছের বাজারে গিয়েছিল, তারাও মাছের বাজারে না গেলেও আক্রান্ত হতে পারতো।
মাছের বাজারে গিয়েও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, আবার মাছের বাজারে না গিয়েও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, তাই মাছের বাজারকে আক্রান্তস্থল (এপিসেন্টার) বলে স্থির করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।

অন্যদিকে উহানে থেকে বা গিয়েই সবাই আক্রান্ত হয়েছে, উহানে না থেকে বা উহানে না গিয়ে কেউ আক্রান্ত হয়নি। যে ৪১ জনের কথা বলা হয়েছে, তারাও উহানের বাসিন্দা; যে ছয় জনের একটি পরিবারের পাঁচজনের আক্রান্ত হবার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা উহানের বাসন্দিা নয়, তবে উহানে ভ্রমণ করার পরই আক্রান্ত হয়েছে; একেবারে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অন্য আক্রান্ত 'কিছু লোক'ও উহানের বাসিন্দা।

তাহলে উহানকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরে নিতে কোনো বাধা নেই। পাশাপাশি এটাও আমরা নিশ্চিত হলাম, উহানের মাছের বাজারের সাথে বা বাদুড়ের সাথে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কোনো সম্পর্ক নেই। তৃতীয় অধ্যায়েও এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, কী এমন হলো উহানে, উহান ছাড়া চীন বা বিশ্বের আর কোনো জায়গা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবস্থল হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারলো না? উহানের মাটি কি করোনাভাইরাস উৎপাদনের জন্য বেশ উর্বর ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা সম্পর্কে একটু আলোচনা করা দরকার।

ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা বিজ্ঞানের তৈরি করা ভুত!
পৃথিবীতে ভুত-প্রেত সত্যিই অস্তিত্বশীল কিনা, এই ব্যাপারে ভিন্নমত আছে। আগে এ সম্পর্কে কিছু নিবন্ধে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।

'Why Do People Believe in Ghosts?' শিরোনামে দ্য আটলান্টিকের ওয়েবসাইটে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত (TIFFANIE WEN কর্তৃক লিখিত) একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Recent surveys have shown that a significant portion of the population believes in ghosts, leading some scholars to conclude that we are witnessing a revival of paranormal beliefs in Western society. A Harris poll from last year found that 42 percent of Americans say they believe in ghosts. The percentage is similar in the U.K., where 52 percent of respondents indicated that they believed in ghosts in a recent poll. Though it’s tough to estimate how large the paranormal tourism industry is—tours of sites that are supposedly haunted (rather than staged haunted houses)—there are 10,000 haunted locations in the U.K. according to the country’s tourist board, and sites like HauntedRooms.co.uk list dozens of allegedly haunted hotels where curious visitors can stay. In the U.S., residents of places like Ellicott City in Howard County, Maryland, pride themselves on their haunted heritage.' [https://www.theatlantic.com/health/archive/2014/09/why-do-people-believe-in-ghosts/379072/]

'GHOSTS' শিরোনামে যুক্তরাজ্যের মিররে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভুতের সম্ভাব্য অনেকগুলো ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভূমিকা হিসেবে বলা হয়, 'Are ghosts real? Do spirits exist? These are questions millions of people ask themselves each day, as we search for proof of what happens after we die. Thousands of videos and pictures exist claiming to be proof of ghosts - but none of them have so far convinced everybody.' [https://www.mirror.co.uk/all-about/ghosts?pageNumber=1]

'Are Ghosts Real? — Evidence Has Not Materialized' শিরোনামে লাইভসায়েন্সের ওয়েবসাইটে  ১৮ মে ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Benjamin Radford) বলা হয়, 'There are many contradictions inherent in ideas about ghosts. For example, are ghosts material or not? Either they can move through solid objects without disturbing them, or they can slam doors shut and throw objects across the room. According to logic and the laws of physics, it's one or the other. If ghosts are human souls, why do they appear clothed and with (presumably soulless) inanimate objects like hats, canes, and dresses — not to mention the many reports of ghost trains, cars and carriages?' [https://www.livescience.com/26697-are-ghosts-real.html]

আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস হচ্ছে, ভুত নামক একটা কিছু পৃথিবীতে আছে। তবে অনাবাদী, নিরিবিলি জায়গা বা পরিত্যক্ত ভবনে এদের বসবাস বেশি। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের দেশে মানুষকে ভুতে-ধরার অনেক ঘটনার কথা শুনতাম। তখন নির্জন, ভুতুড়ে স্থান ছিল বেশি। এখন সমাজে মানুষের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্জন ও অনাবাদী জায়গাগুলো আবাদ হয়ে গেছে। এখন আর মানুষকে ভুতে-ধরার ঘটনাও বেশি শোনা যায় না। মানুষ যখন কম ছিল, তখন ভুতের উপদ্রব ছিল বেশি, মানুষ যখন বেড়ে গেছে, তখন ভুতের উপদ্রব কমে গেছে।
আমি নিজে কখনো ভুত দেখিনি, তবু ভুতে বিশ্বাস করি এই জন্য, কারণ বিভিন্ন সময় প্রসঙ্গক্রমে কৌতুহল বশত আমার চেয়ে প্রবীণ অনেককে জিজ্ঞেস করেছি ভুত সম্পর্র্কে। এমন অনেকেই নিজে ভুত দেখেছে বলে আমাকে বলেছে, যারা সাধারণত মনগড়া কথা বলে না। সবচেয়ে বড় কথা, ভুতের সাথে যেহেতু জাগতিক কোনো বিষয়ে কারো হিংসা-বিভেদ বা স্বার্থের সম্পর্ক নেই, তাই ভুত সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়ার সন্দেহ করা যায় না।

আমি নিজে ভুত না দেখলেও ভুতে-ধরা একজন মহিলা থেকে ভুত তাড়ানোর ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছি একবার, কেউ বিশ্বাস করুন, আর না-ই করুন। স্বামীর শরীরের সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় অনেকটা অজ্ঞান ঐ মহিলাকে ভুত তাড়াতে গিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার নাম কী? তখন ঐ মহিলা উত্তরে একজন পুরুষের নাম বললেন (বললেন, আমার নাম মাহফুজুর রহমান)। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি থাকো কোথায়? তখন মহিলা উত্তর দিলেন, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বড় একটি গাছে থাকি। এরপর ঐ মহিলাকে ঝাড়ফুঁক দেয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই মহিলাটি পুরো অজ্ঞান হয়ে তাঁর স্বামীর কোলে কিছুক্ষণের জন্য ঢলে পড়লেন। সাক্ষাৎ ভুতে-ধরা অবস্থায় আর কোনো মানুষকে কখনো দেখিনি। কিন্তু এই ঘটনা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পেরেছি, ভুত নামক কিছু একটা আছে। কারণ একজন মহিলা নিজের নাম বলার সময় কখনো পুরুষের নাম বলে না, পাগল হলেও। পাগলও কখনো বলে না, আমি গাছে থাকি।

আমার একজন সহপাঠী ছিল কাওসার নামে। আমার বয়স তখন ছিল ২২/২৩ বছরের মতো। একটা জ্বিন নাকি কাওসারের পিছু লেগে থাকতো সব সময়। অনেক সময় রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় কাওসারকে চেপে ধরতো। ওর শরীর প্রায়ই ভারী থাকতো। বিষয়টা আমাদের অন্যান্য সহপাঠীও জানতো। অনেক ওঝার কাছে যাবার পরও সে এই জ্বিনের কবল থেকে পুরোপুরি রক্ষা পায়নি। শেষে এমন একজন ওঝার কাছে গেলো, যে জ্বিনকে বশ করে জ্বিনের মাধ্যমে জ্বিনেধরা মানুষ থেকে জ্বিন তাড়াতো। ঐ ওঝা এমনভাবে কাওসারের জ্বিনকে তাড়িয়ে দিলো, জ্বিন এরপর আর কখনো ওর পিছু লাগেনি।

ভুত মানুষকে দেখে পালিয়ে যায় এবং অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে। এজন্য মানুষ ভুতকে দেখতে পায় না সহজে। মাঝে মাঝে ভুতের অজান্তে মানুষ ভুতকে দেখে ফেললেও ভুত তা টের পেলে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
বিজ্ঞান ভুতকে স্বীকার করে না। বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলগুলো এখনো ভুতের অস্তিত্বকে ধারণ (ক্যাপচার) করতে সক্ষম হয়নি। তাই বলে ভুত বলে কিছু নেই, বলা কি ঠিক হবে?

'বিজ্ঞানের অসাধ্য বলে কিছু নেই' বলতে চান যারা, তারাই বিজ্ঞানের এই 'ভুতে-অবিশ্বাস'কে মেনে নেবেন নিজেই কখনো ভুতের কবলে পড়া সত্ত্বেও! বিজ্ঞান এখনো যানবাহনে মানুষের মৃত্যু এড়ানোর শতভাগ কার্যকরী প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি; বিজ্ঞান এখনো পারেনি মানুষকে শৈশবে পুণরায় ফিরিয়ে নেয়ার উপায় বের করতে; বিজ্ঞান এখনো ক্যান্সার থেকে শতভাগ নিরাময়ের উপায় বের করতে পারেনি; পারেনি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, স্ট্রোক ইত্যাদির টীকা আবিষ্কার করতে; বিশ্বের প্রায় সব দেশে অসংখ্য অন্ধ মানুষ আছে, বিজ্ঞান এখনও পারেনি মানুষের সকল প্রকার অন্ধত্ব ঘোচানোর কার্যকরী উপায় বের করতে; পারেনি মানুষের মন থেকে লোভ, হিংসা, স্বার্থপরতা দূর করার কোনো ভ্যাক্সিন/মেডিসিন আবিষ্কার করতে; পারেনি বার্ধক্য-জরা এড়ানোর কৌশল বের করতে, পারেনি মানুষকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করার উপায় বের করতে; সর্বোপরি মানুষকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার উপায় বের করতেও পারেনি। বিজ্ঞানের না-পারার তালিকা আরো অনেক অনেক লম্বা করা যাবে। দরকার নেই।
তবে না-পারার তালিকা নিয়ে তেমন আক্ষেপ নেই। কারণ বিজ্ঞান চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর বিজ্ঞানের অপারগতা মানে মানুষেরই অপারগতা। অনেক অপারগতার উর্ধ্বে  উঠার শক্তি মানুষের নেই। কারণ মানুষ একটা ত্রুটিপূর্ণ, ধ্বংসশীল এবং অনেকটা অসহায় প্রাণী। আক্ষেপ আছে বিজ্ঞানের 'বাড়তি অনেক কিছু করে ফেলা' নিয়ে। বাড়তি এমন অনেক কিছু বিজ্ঞান করে ফেলেছে, যা মানুষের কোনো উপকারে তো আসেই না, বরং তা মানবজাতির জন্য সীমাহীন ক্ষতিকর; আরো সঠিকভাবে বললে বলতে হয়, মানুষের উপকারের জন্য নয়, বরং ধ্বংসের জন্য করেছে বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান বিধ্বংসী মারণাস্ত্র বানিয়েছে কেন, মানুষের কল্যাণের জন্য, নাকি ক্ষতির জন্য? এই প্রশ্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো ছাড়া অন্য দেশের এক কোটি মানুষকে জিজ্ঞেস করলে এমন ১০০ জন মানুষও কি খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা বলবে এগুলো মানুষের ধ্বংসের জন্য তৈরি করা হয়নি? সচেতন সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী এমন মাত্র একজন মানুষও খুঁজে পেতে কষ্ট হবে, যে বলবে, এগুলো মানুষের উপকারের জন্য তৈরি করা হয়েছে, ক্ষতির জন্যে নয়!
পৃথিবীতে ইতোমধ্যে আণবিক বোমার 'সফল' প্রয়োগও হয়ে গেছে। মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনাগুলোর একটি। লাখো মানুষের ধ্বংসের পেছনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যার বা যাদের হাত ছিল, তাদেরকে কি কোনো বিবেচনায় এই পৃথিবীর বা মানবজাতির 'শত্রু নয়' বলে গণ্য করার সুযোগ আছে?

যুগ যুগ ধরে কিছু দেশ পৃথিবীতে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা বা ধরে রাখার জন্য নানান অপতৎপরতা চালিয়েছে। সেই অপতৎপরতার-ই একটা অংশ মারণাস্ত্র তৈরি। এখনো মানুষ শিক্ষা নেয় না, এই পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করে লাভ নেই, আধিপত্য একদিন অন্যের হাতে চলে যায়, যেহেতু পৃথিবী সতত পরিবর্তনশীল। তাছাড়া যারা আধিপত্য বিস্তারের জন্য মানুষের সীমাহীন ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে না, তারাও অন্য আর দশজনের মতো একসময় মরে চিৎপটাং হয়ে যায়। এক হাজার বছর আগে যারা ব্যক্তিগত বা জাতীয় স্বার্থে মানবজাতির উপর ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেই লোকগুলোর কোনো প্রভাব কি এখন আছে? তাদের কারো কারো নামটা হয়তো এখনো জীবিত আছে, এই জীবিত থাকা বা অগণিত মানুষ তাদেরকে স্মরণ করার কোনো ফল কি তারা এখনো ভোগ করতে পারছে?

এখনও কিছু দেশের সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার (প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ) বলি হচ্ছে দেশে দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ। অল্প কিছু দেশ পুরো পৃথিবীর ত্রাসের কারণ। এই দেশগুলো অনেক সময় তার পাশের দেশ থেকেও শিক্ষা নেয় না। যেসব দেশ বেশ নিরীহভাবে চলে, অন্য দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক এবং সমন্বয় বজায় রেখে চলে, সেসব দেশের মানুষ কি কঠিন জীবন যাপন করছে? জাপান, নিউজিল্যান্ড, কানাডা যেভাবে ভাবে, সেভাবে ভাবুন, কিভাবে অন্য কারো পথচলায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করে নিজের চলার পথ খুঁজে নেয়া যায়।

অল্প কিছু দেশ নয়, বরং অল্প কিছু মানুষ পৃথিবীতে ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এরা কোনো নিয়মনীতি, নৈতিকতার ধার ধারে না। এদের কাছে মানুষত্ববোধের চেয়ে জাতীয়তাবোধ বড়। এদের কাছে প্রাণের মূল্যের চেয়ে অর্থের মূল্য বেশি। এই মানুষগুলোকে বুঝতে হবে, তাদের বয়সী আর দশজনের মতো, তাদের জীবন ফুরিয়ে গেলে, সব শেষ। এই পৃথিবীর সব মানুষ যদি একজন মৃত লোককে প্রতিদিন শ্রদ্ধা জানায়, তার সম্মানে এক মিনিট নয়, বরং এক ঘন্টা করে দাঁড়িয়ে থাকে, তার ছবি দিয়ে পুরো পৃথিবী, সব বইয়ের পাতা ভরে ফেলে, এসব থেকে ওই লোক কোনো সুবিধা লাভ করতে পারবে না। 'পৃথিবীর মানুষ আমাকে আমার মৃত্যুর পর স্মরণ রেখে কোনো লাভ নেই' এই বিশ্বাসটা আমাদের মনে ইনস্টল করে দিতে পারলে পৃথিবীতে আমাদের বাড়াবাড়ি অনেক কমে যাবে; আমরা আরো ভদ্র ও শান্ত হয়ে চলতে অভ্যস্ত হবো। একজন মানুষ হিসেবে শুধু নিজ দেশের নয়, সকল দেশের মানুষের ভালো চাওয়াটাই; জাতীয়তাবোধের চেয়ে মনুষত্ববোধের চর্চা করাটাই মনুষ্যসুলভ আবেগ, নয়তো সে মানুষও নয়, সে মানুষ নামের কলঙ্ক।

গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা পেতে চাইলে শুধু এক দেশের মানুষের নয়, সব দেশের মানুষের জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করাটাই বেশি বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, তবে নিজ দেশকে ঠকিয়ে নয়।

যাহোক, কেন জানি না, বিজ্ঞানের অগ্রসরতার সাথে পাল্লা দিয়ে ভুতেরা দিন দিন নিজেদেরকে মানব সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। ভুতের ভয় মানব সমাজ থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সুযোগে মানব সমাজে নতুন করে নতুন ভয়ের আবির্ভাব হচ্ছে। ভয়ের নাম ভাইরাস এবং রোগজীবাণু। বিজ্ঞান প্রাকৃতিক ভুত বিশ্বাস না করে বরং নিজেই কৃত্রিম ভুত সৃষ্টি করে সমাজে নতুন ভুতের আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। জানি না, ভুতেরাও ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ভয়েই মানবসমাজ থেকে নিজেদের আস্তানা দিন দিন গুটিয়ে নিচ্ছে কিনা!
একটু আগেই আমরা জেনেছি অতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু, ভাইরাস এগুলোর এমন ক্ষমতা নেই, মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করবে, এমনকি কোনো রোগ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে পৌঁছে দেবে। জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এগুলোর সাথে মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি এবং একজন থেকে আরেকজনে রোগ পাচারের তত্ত্ব বিজ্ঞানের সৃষ্টি, এরা নিজেরাও এটা জানে না! কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।


ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু ও ভাইরাস সম্পর্কে কিছু নিবন্ধ দেখা যাক:

ব্যাকটেরিয়া
'What Are Bacteria?' শিরোনামে লাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইটে ২৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Aparna Vidyasagar) বলা হয়, 'Bacteria are microscopic, single-celled organisms that thrive in diverse environments. These organisms can live in soil, the ocean and inside the human gut.


Humans' relationship with bacteria is complex. Sometimes bacteria lend us a helping hand, such as by curdling milk into yogurt or helping with our digestion. In other cases, bacteria are destructive, causing diseases like pneumonia and methicillin-resistant Staphylococcus aureus (MRSA).' [https://www.livescience.com/51641-bacteria.html]

'Bacterial Infections' শিরোনামে মেডিলিন প্লাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Bacteria are living things that have only one cell. Under a microscope, they look like balls, rods, or spirals. They are so small that a line of 1,000 could fit across a pencil eraser. Most bacteria won't hurt you - less than 1 percent of the different types make people sick. Many are helpful. Some bacteria help to digest food, destroy disease-causing cells, and give the body needed vitamins. Bacteria are also used in making healthy foods like yogurt and cheese.


But infectious bacteria can make you ill. They reproduce quickly in your body. Many give off chemicals called toxins, which can damage tissue and make you sick. Examples of bacteria that cause infections include Streptococcus, Staphylococcus, and E. coli.
Antibiotics are the usual treatment. When you take antibiotics, follow the directions carefully. Each time you take antibiotics, you increase the chances that bacteria in your body will learn to resist them causing antibiotic resistance. Later, you could get or spread an infection that those antibiotics cannot cure.' [https://medlineplus.gov/bacterialinfections.html]

'MICROBES AND DISEASE' শিরোনামে মাইক্রোবায়োলজি সোসাইটি'র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'A few harmful microbes, for example less than 1% of bacteria, can invade our body (the host) and make us ill. Microbes cause infectious diseases such as flu and measles.' [https://microbiologysociety.org/why-microbiology-matters/what-is-microbiology/microbes-and-the-human-body/microbes-and-disease.html]

'What magnification do I need to see bacteria?' শিরোনামে ওয়েস্টল্যাবের ওয়েবসাইটে ৯ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (Posted by westlabblogcanada) বলা হয়, 'Bacteria are tiny living microorganisms that live in enormous numbers in almost every environment on Earth. From deep within the soil to inside the digestive tract of humans. In order to see bacteria, you will need to view them under the magnification of a microscopes as bacteria are too small to be observed by the naked eye.

Most bacteria are 0.2 um in diameter and 2-8 um in length with a number of shapes, ranging from spheres to rods and spirals. Bacteria have colour only when they are present in a colony, single bacteria are transparent in appearance. At high magnification, the bacterial cells will float in and out of focus, especially if the layer of water between the cover glass and the slide is too thick. It takes a skilled person to be able to differentiate bacteria from small dust and dirt which may be present on the slide. Some bacteria are found in bunches and therefore, makes it difficult to see the individual cells.' [https://www.westlab.com/blog/2018/01/09/what-magnification-do-i-need-to-see-bacteria]

'Bacterial disease' শিরোনামে এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকা’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (WRITTEN BY: The Editors of Encyclopaedia Britannica) বলা হয়, 'Bacteria cause disease by secreting or excreting toxins (as in botulism), by producing toxins internally, which are released when the bacteria disintegrate (as in typhoid), or by inducing sensitivity to their antigenic properties (as in tuberculosis). Other serious bacterial diseases include cholera, diphtheria, bacterial meningitis, tetanus, Lyme disease, gonorrhea, and syphilis.' [https://www.britannica.com/science/bacterial-disease]

এই নিবন্ধগুলো থেকে আমরা যে বিষয়গুলো জানলাম:

(এক) ব্যাকটেরিয়া হলো একটি ক্ষুদ্র, জীবন্ত অণুজীব, ধুলো এবং ময়লা থেকেও যাকে পৃথক করা কঠিন।
(দুই) ব্যাকটেরিয়া কখনো কখনো আমাদের উপকার করে, যেমন, দুধকে দই বানাতে এবং আমাদের খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ক্ষতিও করে, যেমন, নিউমোনিয়া এবং মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্টাফিলোকোকাস আরিয়াসের মতো রোগ সৃষ্টি করে।
(তিন) অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া মানুষের ক্ষতি করে না। বিভিন্ন ধরনের ১ শতাংশেরও কম ব্যাকটেরিয়া মানুষকে রোগাক্রান্ত করে। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া মানুষের উপকার করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া খাদ্য হজমে সহায়তা করে, কিছু ব্যাকটেরিয়া রোগের কারণজনিত কোষগুলো ধ্বংস করে, কিছু ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন জোগায়; দই এবং পনীর জাতীয় স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরিতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়।
(চার) ব্যাকটেরিয়া অভ্যন্তরীনভাবে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তা নির্গত করার মাধ্যমে মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে।

ব্যাকটেরিয়া নামক একটি ক্ষুদ্র অণুজীব, যাকে ধুলো এবং ময়লা থেকেও পৃথক করা কঠিন, তা আমাদের কী এমন ক্ষতি করার শক্তি রাখে? যে অণুজীবের ১ শতাংশেরও কম অংশ মানুষকে রোগাক্রান্ত করে, সে অণুজীবকে নিয়ে এতো ভয় কেন? বলা হয়েছে, অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া মানুষের নির্দিষ্ট কিছু উপকার করে, যদি তা-ই হয়, তাহলে তাকে ধ্বংসের এতো প্রচেষ্টা কেন? মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য এই ক্ষুদ্র অণুজীবকে দায়ী করাটা কতোটুকু প্রমাণিত? আদৌ কি এই অভিযোগ সত্য? এই অভিযোগ কি সাধারণ মানুষের নিকট সঠিক বলে প্রমাণ করা যাবে? ‘ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করা'র প্রক্রিয়াটাকে কি কোনোভাবে রেকর্ড করা যাবে? ভুতকে রেকর্ড করতে পারেনি বলে বিজ্ঞান ভুতে বিশ্বাস করে না। ধরে নিলাম, ব্যাকটেরিয়া সত্যিই অস্তিত্বশীল। কিন্তু এই অতিক্ষুদ্র এককোষী অণুজীব কিভাবে মানুষের উপকার বা ক্ষতি করে, তা রেকর্ড করতে পারা ছাড়া বিজ্ঞান কিভাবে তা প্রচার করে? 'Could Humans Live Without Bacteria?' শিরোনামে লাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইটে ১২ আগস্ট ২০১০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Molika Ashford) বলা হয়, 'The idea that trillions of bacteria are swarming over your skin and through your body is enough to give anyone the creepy crawlies.


But as long as humans can't live without carbon, nitrogen, protection from disease and the ability to fully digest their food, they can't live without bacteria, said Anne Maczulak, a microbiologist and author of the book "Allies and Enemies: How the World Depends on Bacteria" (FT Press, 2010).

Most people learn about bacteria in the context of disease , so it's easy to think about the harm they do.
"It's a challenge to think about all the ways they help us because it tends to be more of a complex, multi-step process" Maczulak said.' [https://www.livescience.com/32761-good-bacteria-boost-immune-system.htmlএখানে বলা হয়, বেশিরভাগ মানুষ রোগের প্রসঙ্গে ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে শিখেন, তাই তারা কী কী ক্ষতি করেন তা নিয়ে ভাবাটা সহজ। কিন্তু তারা যেসব পন্থায় আমাদের সহায়তা করে, সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ এটি আরও জটিল, বহু-পদক্ষেপ প্রক্রিয়া হতে থাকে।

'Bacteria and Viruses' শিরোনামে অ্যামেরিকান লাঙ্গ এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 

'How can airborne viruses, bacteria affect health?
Bacteria and viruses can travel through the air, causing and worsening diseases. They get into the air easily. When someone sneezes or coughs, tiny water or mucous droplets filled with viruses or bacteria scatter in the air or end up in the hands where they spread on surfaces like doorknobs. Inhaling these viruses or bacteria can spread coughs, colds, influenza, tuberculosis and other infectious agents.' [https://www.lung.org/clean-air/at-home/indoor-air-pollutants/bacteria-and-viruses].


এখানে বলা হয়, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সহজেই বাতাসে প্রবেশ করে। যখন কেউ হাঁচি বা কাশি দেয়, তখন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াতে ভরা ছোট ছোট জল বা মিউকাস ফোঁটাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বা হাতে পৌঁছে যায় যেখানে তারা দরজার নবের মতো পৃষ্ঠগুলোতে ছড়িয়ে যায়। এই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াগুলো নিঃশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেয়াটা কাশি, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, যক্ষ্মা এবং অন্যান্য সংক্রামক এজেন্ট ছড়িয়ে দিতে পারে।

বলা হয়েছে, 'ছড়িয়ে দিতে পারে'। এটা কোনো নিশ্চয়তা নয়। কারণ দরজার নব, ডেস্ক, পাবলিক টয়লেট, পাবলিক ফোন, টাকা, এটিএম মেশিন এবং লিফটের সুইচ এই পৃষ্ঠগুলো নানা রকম মানুষের হাতের স্পর্শে আসে। অধিকাংশই হাতে গ্লাভ্স ব্যবহার করে না। কিছু কিছু দেশে তো এক হাজারে একজনও সচরাচর হাতে গ্লাভ্স ব্যবহার করে না। এমন কোনো জনবহুল দেশে, কোনো একদিন কোনো এক ব্যস্ততম এলাকায় স্থাপিত একটি এটিএম মেশিন যারা ব্যবহার করেছে, এমন ৩০০ জন মানুষ আর হাতে গ্লাভ্স ব্যবহারকারী এবং উপরে উল্লেখিত কোনো পৃষ্ঠ স্পর্শ করেনি, এমন ৩০০ জন মানুষকে আলাদা করে ১৫ দিন পর তাদের খোঁজ নেয়া হলে দেখা যাবে, যে রোগগুলোকে ব্যাকটেরিয়া-সৃষ্ট বলে অপবাদ দেয়া হয়, সে রোগগুলোতে প্রথম ৩০০ জন আক্রান্ত হবার হার আর পরের ৩০০ জন আক্রান্ত হবার হারে তেমন একটা ব্যবধান নেই।

আরো নিবিড়ভাবে নিরীক্ষা চালাতে হলে এমন কোনো জনবহুল দেশের পাবলিক টয়লেট ব্যবহারকারীদের খোঁজ নেয়া হোক, যেসব দেশের পাবলিক টয়লেটগুলো ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন থাকে না। এমন কোনো দেশের কোনো ব্যস্ত শহরের কোনো এক পাবলিক টয়লেট ব্যবহারকারী ১০০ জন মানুষের খোঁজ নেয়া হলে দেখা যাবে, ইনকিউবেশন পিরিয়ড পার হবার পরও কথিত ব্যাকটেরিয়া-সৃষ্ট রোগগুলো থেকে তারা প্রায় শতভাগ নিরাপদ। কেন? কারণ ব্যাকটেরিয়া মানুষের কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। একটা অতিক্ষুদ্র নিরীহ অণুজীবকে আমরা আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী করছি শুধুই ওই রোগগুলোর কোনো কারণ খুঁজে বের করতে অক্ষম হয়ে। আমরা অক্ষম হয়ে আরেকটা অক্ষমের উপর দোষ চাপাচ্ছি! 'যত দোষ নন্দঘোষ'।
বিষয়টা নিরীক্ষার আরো নিবিড় একটা উপায় হচ্ছে, কৃষিক্ষেতে কাজ করেন এবং এই কাজ করতে গিয়ে গোবরসহ নানারকম ময়লা-আবর্জনায় হাত দিতে হয়, এমন ১০০ জন কৃষককে যদি সাবান, শ্যাম্পু এরকম এন্টিব্যাক্টেরিয়াল কোনো উপাদান দিয়ে গোসল করতে না দিয়ে শুধু শরীরের ঘাম, ময়লা দূর করার জন্য শুধু পানি দিয়ে গোসল করতে দেয়া হয়, দেখা যাবে কথিত ব্যাকটেরিয়া-সৃষ্ট রোগে এই ১০০ জনের আক্রান্ত হবার হার আর যারা সচরাচর কোনো ময়লা-আবর্জনার ধারেকাছেও যায়না, এমনকি সবসময় এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান দিয়ে গোসল করে, তাদের এই সব রোগে আক্রান্ত হবার হারে তেমন কোনো ব্যবধান নেই। কারণ? কারণ ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে কোনো রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়, ব্যাকটেরিয়া নয়, বরং অন্য কিছু মানুষের শরীরে এসব রোগ সৃষ্টি হবার জন্য দায়ী।


এককথায় ব্যাকটেরিয়া মানুষের কোনো উপকার করতে যেমন অক্ষম, তেমনি ক্ষতি করতেও।

জীবাণু
'Germs and Hygiene'  শিরোনামে মেডিলিন প্লাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 

'What are germs?
Germs are microorganisms. This means that they can be seen only through a microscope. They can be found everywhere - in the air, soil, and water. There are also germs on your skin and in your body. Many germs live in and on our bodies without causing harm. Some even help us to stay healthy. But some germs can make you sick. Infectious diseases are diseases that are caused by germs.
The main types of germs are bacteria, viruses, fungi, and parasites.' [https://medlineplus.gov/germsandhygiene.html]

'How Do Germs Spread? 10 Facts & Myths' শিরোনামে 'পিজিসিয়ান ওয়ান আর্জেন্ট কেয়ারে'র ওয়েবসাইটে ১৯ আগস্ট ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (by Dr. Jeannie Kenkare) বলা হয়, 'Whether they’re viral or bacterial, germs lurk around every corner and atop nearly every surface. Most of the time, our bodies’ immune systems effectively prevent germs from causing noticeable illness. Other times, our immune systems can become overwhelmed, resulting in fever, nasal congestion and all the other telltale signs of infection. While most people understand the basic nature of illness, there are still widespread misconceptions about how germs get inside our bodies.

How do Germs Spread?
Bacteria and viruses can enter our bodies in a number of ways. Most of the time, we inadvertently collect germs by touching a tainted surface. We then transmit these germs to ourselves by eating with our hands or by touching our noses, ears, eyes or mouths. On the other hand, some germs also have the ability to spread from one person into the air, where they may be inhaled through our noses and mouths. It may seem pretty basic; however, countless myths persist about how and why we get sick.'
[https://physicianoneurgentcare.com/blog/germs-spread-10-facts-myths/]

'12 Places Germs Like to Grow That You Probably Need to Clean RN' শিরোনামে শেপ জার্নালে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Anna Roufos) বলা হয়, 'You're exposed to millions of germs and bacteria every day. What's actually harmful—and what's benign but just really gross?

Startling reports about germs—from coronavirus to colds to bugs hiding out on your phone case—seem to spread faster than the little buggers themselves these days. Your desk is dirtier than a toilet bowl! Your bathroom is cleaner than your desk! So where to germs grow, and are all of the millions of germs we're exposed to daily actually dangerous?

"Most of the germs we encounter don't come from inanimate objects. Door handles, phones, money, and ATM machines are not a major source of illness," says Elaine Larson, Ph.D., a professor of pharmaceutical and therapeutic research at Columbia University School of Nursing. ...

Should You Use Antibacterial Products?
Not unless someone in the house is sick. A recent study found no difference in infectious disease rates in 228 households that used antibacterial items (hand-washing soaps, cleaners, laundry detergent) versus those that used regular products. Plus, there's a potential drawback: A number of studies have suggested that triclosan, an ingredient used in many antibacterial items, may actually foster resistance to many germs. The researchers concluded they're useful only if someone in your home is ill or has a skin or gastrointestinal ailment. Otherwise, Larson says, alcohol- and bleach-based products work best at killing germs without promoting the growth of dangerous "superbugs." (Up Next: Could Mud Be the Secret Weapon Against Antibiotic-Resistant Bacteria?)' [https://www.shape.com/lifestyle/mind-and-body/where-do-germs-grow]

এখানে একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নিয়মিত পণ্য (অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল নয়, এমন) ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হবার হারের সাথে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল আইটেম (হাত ধোয়ার সাবান, ক্লিনার, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট) ব্যবহারকারী ২২৮ পরিবারের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হবার হারের মধ্যে কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

'What's the Difference Between Germs, Bacteria, and Viruses?' শিরোনামে কুইকএন্ডডার্টিটিপ্স নামক ওয়েবসাইটে ১৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Sabrina Stierwalt) বলা হয়,

'What are germs?
The word 'germ' is a catch-all phrase that can mean any microscopic particle that can cause illness in humans. The word germ comes from the Latin word germen, which means seed or sprout. That’s because early scientists studying germs thought about them as little seeds that spread between organisms.

The idea that disease-spreading organisms could pass from person to person existed as far back as ancient Greece. But before germ theory became widely accepted in the late 19th century, not all scientists believed in the idea of germs. In the Middle Ages—including during the time of the Black Death—the idea that tiny invisible things could make you sick if they touched you seemed far-fetched. Back then, the prevailing theory about how diseases spread was miasma theory. It held that rotting organic matter created a vaporous mist filled with disease-causing particles. It was believed that being in an area where "bad air" was present was the cause of disease.

Of course, we know that sanitation is important for controling the spread of disease. Although miasma theory got it wrong, the idea itself led to reforms and better sanitation. In fact, famous Crimean War nurse Florence Nightengale was a proponent of miasma theory. Her idea that foul-smelling vapors caused illness led to hospital sanitary reforms.

In the late 1800s, germ theory became widely accepted, thanks mainly to the experiments of Louis Pasteur and Robert Koch.

In modern times, the term 'germ' isn’t widely used in formal science. Instead, disease-causing objects are referred to by what type they are. Viruses and bacteria are types of germs, as are certain types of fungi, protists, and prions.' [https://www.quickanddirtytips.com/education/science/whats-the-difference-between-germs-bacteria-and-viruses]

এখানে বলা হয়েছে, রোগ-সংক্রমণকারী জীবগুলো ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে এমন ধারণাটি প্রাচীন গ্রীস পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তবে ১৯ শতকের শেষদিকে জীবাণু তত্ত্বটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার আগে, সমস্ত বিজ্ঞানী জীবাণুর ধারণাটি বিশ্বাস করতেন না। ক্ষুদ্র অদৃশ্য জিনিসগুলো আপনাকে ছুঁয়ে দিলেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই ধারণাকে ব্ল্যাক ডেথের সময়সহ মধ্যযুগে সুদূরের বিষয় মনে করা হতো। তারপরে, রোগগুলো কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সে সম্পর্কে মায়াসমা তত্ত্বটি প্রচলিত ছিল। তত্ত্ব অনুযায়ী, পঁচা জৈব পদার্থ একটি বাষ্প কুয়াশা তৈরি করে, যা রোগজনিত কণা দ্বারা ভরা। বিশ্বাস করা হতো, "খারাপ বাতাস" উপস্থিত, এমন একটি অঞ্চলে অবস্থান করা-টা রোগের কারণ ছিল।

এই নিবন্ধগুলো থেকে যে বিষয়গুলো জানা হলো:

(এক) জীবাণু হল অণুজীব। এটি খালি চোখে দেখা যায় না, কেবল মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা যায়। বায়ু, মাটি এবং পানি সবজায়গায় জীবাণু পাওয়া যায়। মানুষের ত্বকে এবং শরীরেও জীবাণু থাকে। অনেক জীবাণু মানুষের দেহে বাসা বেঁধে ক্ষতি করে না। এমনকি কিছু জীবাণু মানুষকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। তবে কিছু জীবাণু মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। সংক্রামক রোগ হল এমন রোগ, যা জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট।
(দুই) একটি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, নিয়মিত পণ্য (অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল নয়, এমন) ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হবার হারের সাথে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল আইটেম (হাত ধোয়ার সাবান, ক্লিনার, লন্ড্রি ডিটারজেন্ট) ব্যবহারকারী ২২৮ পরিবারের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হবার হারের মধ্যে কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।
(তিন) রোগ-সংক্রমণকারী জীবগুলো ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে এমন ধারণাটি প্রাচীন গ্রীস পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তবে ১৯ শতকের শেষদিকে জীবাণু তত্ত্বটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার আগে, সমস্ত বিজ্ঞানী জীবাণুর ধারণাটি বিশ্বাস করতেন না। ক্ষুদ্র অদৃশ্য জিনিসগুলো আপনাকে ছুঁয়ে দিলেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই ধারণাকে ব্ল্যাক ডেথের সময়সহ মধ্যযুগে সুদূরের বিষয় মনে করা হতো। তারপরে, রোগগুলো কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সে সম্পর্কে মায়াসমা তত্ত্বটি প্রচলিত ছিল। তত্ত্ব অনুযায়ী, পঁচা জৈব পদার্থ একটি বাষ্প কুয়াশা তৈরি করে, যা রোগজনিত কণা দ্বারা ভরা। বিশ্বাস করা হতো, "খারাপ বাতাস" উপস্থিত, এমন একটি অঞ্চলে অবস্থান করা-টা রোগের কারণ ছিল।
(চার) বেশিরভাগ লোকেরা অসুস্থতার প্রাথমিক প্রকৃতিটি বুঝতে পারলেও কীভাবে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে জীবাণু প্রবেশ করে তা নিয়ে এখনও প্রচুর ভুল ধারণা রয়েছে। আরো বলা হয়, কীভাবে এবং কেন আমরা অসুস্থ হই তা নিয়ে অজস্র কল্পকাহিনী অব্যাহত  রয়েছে। বলা হয়েছে, 'While most people understand the basic nature of illness, there are still widespread misconceptions about how germs get inside our bodies.'

প্রকৃতপক্ষে যারা রোগজীবাণু তত্ত্বের পক্ষে কথা বলেন, তারা কেউ এটা কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবেন না, জীবাণু মানুষকে রোগে আক্রান্ত করে। জীবাণু মানুষের শরীরে কিভাবে প্রবেশ করে, সে সম্পর্কেই সুস্পষ্ট কোনো ধারণা বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত নেই, মানুষকে রোগাক্রান্ত করার প্রমাণিত প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা থাকা দূরের কথা। জীবাণুর সাথে রোগের সম্পর্ক যারা সৃষ্টি করেছে, তারা মানবজাতির উপকার করেনি, বরং সীমাহীন ক্ষতি করেছে। কমপক্ষে এই ক্ষতি করেছে, জীবাণুর ভয়ে মানুষের মধ্যে শুচিবায়ু নামক একটা মানসিক রোগের জন্ম দিয়েছে, যে রোগ অনেক মানুষের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করছে। মেডিক্যালের পরিভাষায় এ রোগটিকে বলা হয় অবসেশিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার। অপরদিকে জীবাণুর একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, যে রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বলে মনে করা হয় তথা জীবাণুর মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় বলে মনে করা হয়, সে রোগগুলোতে যারা আক্রান্ত হয়, তাদেরকে সমাজে অভিশাপ মনে করা হয়, তাদেরকে 'একঘরে' করতে বা এলাকাচ্যুত ও সমাজচ্যুত করতে সবাই তৎপর হয়ে উঠে।

যদি এমন হতো, যারা জীবাণুনাশক বিভিন্ন জিনিস (সাবান, ক্রীম, শ্যাম্পু ইত্যাদি) নিয়মিত ব্যবহার করে, তারা এমন সব রোগে আক্রান্ত না হতো, যেগুলোতে আক্রান্ত হবার জন্য জীবাণুকে দায়ী করা হয়, তাহলেও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হতো, জীবাণু মানুষকে রোগাক্রান্ত করে। অথবা যারা নোংরা পরিবেশে বেশি সময় কাটায় বা যাদেরকে কাটাতে হয়, জীবাণুকে যেসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করা হয়, যদি তারা তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে সেসব রোগে বেশি আক্রান্ত হতো, তাহলেও জীবাণুকে নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করা যেতো।

ব্যাকটেরিয়ার মতো একই পদ্ধতিতে নিরীক্ষা চালালেও সহজেই স্পষ্ট হবে, জীবাণু মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
ক্ষুদ্র অদৃশ্য জিনিসগুলো ছুঁয়ে দিলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ার ধারণাটা মানব সমাজে ছড়িয়ে দেয়া একটা ভয় ছাড়া কিছু নয়। ভুতের ভয়ের মতোই। ভয়টা কখনো কখনো ভুতের চেয়েও ভয়ঙ্কর। বৃহৎ বৃহৎ অসংখ্য জিনিসের সাথে মানুষের সংস্পর্শ হয় বিভিন্ন সময়। অনেক বিষাক্ত প্রাণীর সংস্পর্শেও মানুষকে অনেক সময় আসতে হয়। বিষাক্ত কোনো প্রাণীর সংস্পর্শও যেখানে মানুষের কোনো ক্ষতির কারণ হতে পারে না, সেখানে ক্ষুদ্র, এমনকি অদৃশ্য কোনো জিনিসের সংস্পর্শ মানুষের ক্ষতির কারণ হওয়ার ধারণাটা শুধু চরম অবিশ্বাস্য নয়, বরং চূড়ান্ত হাস্যকর একটা বিষয়ে পরিণত হতে পারতো, যদি বিজ্ঞানের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা না হতো। জানি না, বিজ্ঞান এমন ধারণা ছড়িয়ে দিয়ে মানবজাতির কী উপকার করতে সমর্থ হয়েছে! মানুষকে কি রোগগুলো থেকে মুক্তি দিতে পেরেছে? কথিত জীবাণুর উপদ্রব থেকে কি বাঁচার কোনো উপায় খুঁজে দিতে পেরেছে?

শৈশবে নিজেদের গাছের আম খেতে গিয়ে অনেক সময় আমে থাকা বিভিন্ন রকম পোকা আমাদের মুখে চলে যেতো। অজান্তে তা আমের সাথে পেটেও চলে যেতো। গরু ঘাস খাওয়ার সময় প্রায়ই জোঁকসহ নানারকম কীটপতঙ্গ জীবন্ত অবস্থায় খেয়ে ফেলে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে কুকুর মানুষের মল, বাসি-পঁচা অনেক খাবার খেয়ে ফেলে, যেগুলোতে পোকা জন্মে যায়। হাঁস-মোরগ-পাখিরা অনেক পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ খেয়ে ফেলে। অনেক প্রাণী আরেক প্রাণী খেয়ে ফেলে জীবন্ত অবস্থায়। সবই হজম হয়ে যায়। কিন্তু এগুলোকে কখনো ক্ষতিকর বলা হয় না। এতো বড় বড় জীব যখন খেয়ে ফেলা হয়, তখন কিছু হয় না, তখন মারাত্মক অনেক কিছু হয়ে যায় চোখেও দেখা যায় না, এমন 'অনেকটা' কল্পিত অণুজীব দ্বারা, কিভাবে বিশ্বাস করা সম্ভব! এই গল্প রচনা করা হয়েছে শুধুই 'বিজ্ঞানী' সনদপ্রাপ্ত কিছু মানুষ কর্তৃক। বিজ্ঞানী সনদধারী না হয়ে কোনো সাধারণ মানুষ এসব বললে সে যে নিদারুণ তামাশার পাত্রে পরিণত হতো, এক পয়সা দাম পেতো না, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীদের যে বড় বড় অনেক ভুলও হয়ে থাকে, তা আমরা বেমালুম ভুলে যাই বলে এরকম অসম্ভব বিষয় আমরা সহজেই বিশ্বাস করি। এসব বিশ্বাসের বিপরীতে কথা বলতে গেলেও তামাশার পাত্র হবার ঝুঁকি নিতে হয়। কিন্তু কথা না বলেও অনেক সময় উপায় থাকে না। বিশেষতঃ যখন দেখা যায় এসব বিশ্বাস মানব সমাজে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছোঁয়াচে, জীবাণু এসব ধারণা মানব সমাজে কতো মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ, বিষয়টা যখন সবার সামনে পরিষ্কার হবে, যারা এসব ধারণার প্রবক্তা এবং এসব ধারণার পক্ষে তৎপর, তারা লজ্জায় মাথা কুটে মরতে চাইবে।

জীবাণু সত্যিই কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে, বিজ্ঞান নিজেই তা পরিষ্কারভাবে অবগত হওয়া ছাড়া অনুমাণনির্ভর ধারণা মানবসমাজে ছড়িয়ে দিয়ে কী লাভ হয়েছে! ১৯ শতকের শেষদিকে জীবাণু তত্ত্বটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার আগে, সমস্ত বিজ্ঞানী জীবাণুর ধারণাটি বিশ্বাস করতেন না। তার মানে এটা একটা বিতর্কিত/প্রশ্নবিদ্ধ ধারণা। এই ধারণার ফলে মানব সমাজে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নধর্মী/কৃত্রিম ভুতের ভয়। যে ভয় জয় করার সাধ্য মানুষের নেই। ভুতের উপস্থিতিও মানুষ অনেক সময় টের পায়, কিন্তু জীবাণুর উপস্থিতি কোনো মানুষের পক্ষে টের পাওয়া সম্ভব নয়। ব্যাকটেরিয়া একটা অস্তিত্বশীল বস্তু হলেও জীবাণুর অস্তিত্বকে ব্যাকটেরিয়া থেকে আলাদা করা এবং জীবাণু মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি ও সংক্রমণের প্রক্রিয়া রেকর্ড করার আগে জীবাণু এবং জীবাণু-সৃষ্ট ক্ষতির ধারণা প্রচার করাটা কোনোভাবেই সমীচিন হয়নি। আমার বিশ্বাস, জীবাণুর অস্তিত্ব একদিন অসার প্রমাণিত হবেই। জীবাণুর অস্তিত্ব অসার প্রমাণিত হলে জীবাণু-সৃষ্ট ক্ষতির ধারণাটাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে।
আপাততঃ একজন অবিজ্ঞানীর জীবাণু-অবিশ্বাসের গল্প দিয়েই জীবাণু সম্পর্কে এই আলোচনার সমাপ্তি টানা যাক।

''Germs are not a real thing': Fox News host says he hasn't washed hands in 10 years' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (by Sam Wolfson) বলা হয়, 'Pete Hegseth denies existence of germs, saying: 'I can't see them, therefore they're not real'
Donald Trump's favourite TV show, Fox & Friends, has a reputation for giving airtime to conspiracy theories that benefit the White House agenda. But host Pete Hegseth may now have managed to upset the famously germaphobic president – by revealing that he has not washed his hands in a decade.

The admission came as Hegseth discussed eating day-old pizza that had not been refrigerated. He did not see any issue with eating the pizza, he said, then added that he didn’t think he had washed his hands in 10 years.

''Really,'' he said. ''I don't really wash my hands ever.''

Met with laughter, he explained: ''I inoculate myself. Germs are not a real thing. I can't see them, therefore they’re not real.''
On Twitter on Monday, Hegseth gave mixed messages. He claimed he had been joking and paraphrased the president in blaming the media for being so ''self-righteous and angry''. He also said he supported drinking from hosepipes and riding bikes without a helmet.
The federal Centers for Disease Control and Prevention advises that regular hand washing ''is one of the best ways to remove germs, avoid getting sick, and prevent the spread of germs to others''. Being well educated about hand washing ''reduces the number of people who get sick with diarrhea by 23% to 40%'', it says. ... '
[https://www.theguardian.com/media/2019/feb/11/germs-are-not-real-fox-news-host-pete-hegseth]

ফক্স নিউজের হোস্ট পিট হেগসেথ ১০ বছর ধরে হাত ধৌত করেননি, কারণ তিনি খালি চোখে দেখতে পান না বলে জীবাণু বিশ্বাস করেন না। অনেক দিনের পুরোনো বা বাসি পিজ্জা বা যে কোনো বাসি ভেজা খাবার মানুষ সাধারণত না খেলেও অনেক প্রাণী খেয়ে থাকে। কিন্তু তাদের কী হয়? কিছুই না। তাহলে কি জীবাণু শুধু মানুষেরই শত্রু? জীবাণুর সাথে কি তাহলে অন্য প্রাণীদের সখ্যতা আছে? মানুষ এবং কাছাকাছি আকারের অন্য প্রাণীগুলোর মধ্যে শারীরিক গঠনগত দিক থেকে মিল বেশি, নাকি অমিল বেশি? অমিলের চেয়ে মিল বেশি নিশ্চয়। তাহলে যে খাবার অন্য প্রাণী খেলে ক্ষতি হয় না, যে খাবার অন্য প্রাণী খেলে জীবাণু তাদের ক্ষতি করতে পারে না, সে খাবার মানুষ খেলে জীবাণু-সৃষ্ট ক্ষতির ভয় দেখানোর কারণ কী?
পেশাদার ড্রেন পরিষ্কারক বা টয়লেটের মল পরিষ্কারক ২০ জন মানুষকে কাজ শেষে শরীর পরিষ্কারের জন্য ৫ বছর ধরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্যাভলন বা এজাতীয় জীবাণুনাশক ছাড়া শুধু পানি দিয়ে হাত ধৌত করতে এবং গোসল করতে দেয়া হলে দেখা যাবে, যেসব রোগকে জীবাণু-সৃষ্ট বলা হয়, সেসব রোগে তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার আর জীবাণু থেকে ১০ বছর ধরে সতর্ক ব্যক্তিদের এসব রোগে আক্রান্ত হবার হারে বড় ধরনের কোনো পার্থক্য নেই।
জীবাণু সত্যিই থাক বা না থাক, জীবাণু যে মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তা প্রমাণের জন্য এই রকম একটা নিরীক্ষাই যথেষ্ট।

ভাইরাস
'What Are Viruses?' শিরোনামে লাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইটে ৬ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Aparna Vidyasagar) বলা হয়, 'Viruses are microscopic parasites, generally much smaller than bacteria. They lack the capacity to thrive and reproduce outside of a host body.
Predominantly, viruses have a reputation for being the cause of contagion. Widespread events of disease and death have no doubt bolstered such a reputation. The 2014 outbreak of Ebola in West Africa, and the 2009 H1N1/swine flu pandemic (a widespread global outbreak) likely come to mind. While such viruses certainly are wily foes for scientists and medical professionals, others of their ilk have been instrumental as research tools; furthering the understanding of basic cellular processes such as the mechanics of protein synthesis, and of viruses themselves.

Discovery
How much smaller are most viruses in comparison to bacteria? Quite a bit. With a diameter of 220 nanometers, the measles virus is about 8 times smaller than E.coli bacteria. At 45 nm, the hepatitis virus is about 40 times smaller than E.coli. For a sense of how small this is, David R. Wessner, a professor of biology at Davidson College, provides an analogy in a 2010 article published in the journal Nature Education: The polio virus, 30 nm across, is about 10,000 times smaller than a grain of salt. Such differences in size between viruses and bacteria provided the critical first clue of the former's existence.

Toward the end of the 19th century the notion that microorganisms, especially bacteria, could cause disease was well established. However, researchers looking into a troubling disease in tobacco — the tobacco mosaic disease — were somewhat stumped as to its cause.

In an 1886 research paper titled ''Concerning the Mosaic Disease of Tobacco,'' Adolf Mayer, a German chemist and agricultural researcher, published the results of his extensive experiments. In particular, Mayer found that when he crushed up infected leaves and injected the noxious juice into the veins of healthy tobacco leaves it resulted in the yellowish speckling and discoloration characteristic of the disease. Mayer correctly surmised that whatever was causing tobacco mosaic disease was in the leafy juice. However, more concrete results eluded him. Mayer felt certain that whatever was causing the disease was of bacterial origin, but he was unable to isolate the disease-causing agent or identify it under a microscope. Nor could he recreate the disease by injecting healthy plants with a range of known bacteria.

In 1892, a Russian student named Dmitri Ivanovsky essentially repeated Mayer's juicing experiments but with a bit of a twist. According to a 1972 article published in the journal Bacteriological Reviews, Ivanovsky passed the juice from infected leaves through a Chamberland filter, a filter fine enough to capture bacteria and other known microorganisms. Despite the sieving, the liquid filtrate remained infectious, suggesting a new piece to the puzzle; whatever was causing the disease was small enough to pass through the filter. However, Ivanovsky also concluded that the cause of tobacco mosaic disease was bacterial, suggesting the filtrate ''contained either bacteria or a soluble toxin.'' It wasn't until 1898 when the presence of viruses was acknowledged. Dutch scientist Martinus Beijerinck, while confirming Ivanovsky’s results, suggested that the cause of tobacco mosaic disease was not bacterial but a ''living liquid virus,'' referring to it by the now outdated term, "filterable virus."

The experiments of Ivanovsky, Beijerinck and others that followed only pointed to the existence of viruses. It would take a few more decades before anyone actually saw a virus. According to a 2009 article published in the journal Clinical Microbiology Reviews, once the electron microscope was developed in 1931 by German scientists Ernst Ruska and Max Knoll, the first virus could be visualized with the new high resolution technology. These first images taken by Ruska and colleagues in 1939 were of the tobacco mosaic virus. Thus, the discovery of viruses came full circle.' [https://www.livescience.com/53272-what-is-a-virus.html]

 ড্রাগডটকম শিরোনামের ওয়েবসাইটে 'What's the difference between Bacteria and Viruses?' শিরোনামে ১৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (by Carmen Fookes) বলা হয়, 'A microscope is required to see viruses and they are 10 to 100 times smaller than the smallest bacteria.' [https://www.drugs.com/medical-answers/difference-between-bacteria-virus-3503840/]

'Are Viruses Alive?' শিরোনামে সায়েন্টিফিক আমেরিকার ওয়েবসাইটে ৮ আগস্ট ২০০৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Luis P. Villarreal) বলা হয়, 'Although viruses challenge our concept of what "living" means, they are vital members of the web of life.

In an episode of the classic 1950s television comedy The Honeymooners, Brooklyn bus driver Ralph Kramden loudly explains to his wife, Alice, ''You know that I know how easy you get the virus.'' Half a century ago even regular folks like the Kramdens had some knowledge of viruses—as microscopic bringers of disease. Yet it is almost certain that they did not know exactly what a virus was. They were, and are, not alone.

For about 100 years, the scientific community has repeatedly changed its collective mind over what viruses are. First seen as poisons, then as life-forms, then biological chemicals, viruses today are thought of as being in a gray area between living and nonliving: they cannot replicate on their own but can do so in truly living cells and can also affect the behavior of their hosts profoundly. The categorization of viruses as nonliving during much of the modern era of biological science has had an unintended consequence: it has led most researchers to ignore viruses in the study of evolution. Finally, however, scientists are beginning to appreciate viruses as fundamental players in the history of life.

Coming to Terms
It is easy to see why viruses have been difficult to pigeonhole. They seem to vary with each lens applied to examine them. The initial interest in viruses stemmed from their association with diseases—the word ''virus'' has its roots in the Latin term for ''poison.'' In the late 19th century researchers realized that certain diseases, including rabies and foot-and-mouth, were caused by particles that seemed to behave like bacteria but were much smaller. Because they were clearly biological themselves and could be spread from one victim to another with obvious biological effects, viruses were then thought to be the simplest of all living, gene-bearing life-forms.

Their demotion to inert chemicals came after 1935, when Wendell M. Stanley and his colleagues, at what is now the Rockefeller University in New York City, crystallized a virus— tobacco mosaic virus—for the fi rst time. They saw that it consisted of a package of complex biochemicals. But it lacked essential systems necessary for metabolic functions, the biochemical activity of life. Stanley shared the 1946 Nobel Prize— in chemistry, not in physiology or medicine—for this work.

Further research by Stanley and others established that a virus consists of nucleic acids (DNA or RNA) enclosed in a protein coat that may also shelter viral proteins involved in infection. By that description, a virus seems more like a chemistry set than an organism. But when a virus enters a cell (called a host after infection), it is far from inactive. It sheds its coat, bares its genes and induces the cell’s own replication machinery to reproduce the intruder’s DNA or RNA and manufacture more viral protein based on the instructions in the viral nucleic acid. The newly created viral bits assemble and, voilà, more virus arises, which also may infect other cells.

These behaviors are what led many to think of viruses as existing at the border between chemistry and life. More poetically, virologists Marc H. V. van Regenmortel of the University of Strasbourg in France and Brian W. J. Mahy of the Centers for Disease Control and Prevention have recently said that with their dependence on host cells, viruses lead ''a kind of borrowed life.'' Interestingly, even though biologists long favored the view that viruses were mere boxes of chemicals, they took advantage of viral activity in host cells to determine how nucleic acids code for proteins: indeed, modern molecular biology rests on a foundation of information gained through viruses.

Molecular biologists went on to crystallize most of the essential components of cells and are today accustomed to thinking about cellular constituents—for example, ribosomes, mitochondria, membranes, DNA and proteins—as either chemical machinery or the stuff that the machinery uses or produces. This exposure to multiple complex chemical structures that carry out the processes of life is probably a reason that most molecular biologists do not spend a lot of time puzzling over whether viruses are alive. For them, that exercise might seem equivalent to pondering whether those individual subcellular constituents are alive on their own. This myopic view allows them to see only how viruses co-opt cells or cause disease. The more sweeping question of viral contributions to the history of life on earth, which I will address shortly, remains for the most part unanswered and even unasked.' [https://www.scientificamerican.com/article/are-viruses-alive-2004/]

'Why are viruses considered to be non-living?' শিরোনামে কসমস ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (by Jake Port) বলা হয়, 'Viruses are responsible for some of the most dangerous and deadly diseases including influenza, ebola, rabies and smallpox. Despite their potential to kill, these potent pathogens are in fact considered to be non-living, as alive as the screen that you are reading this article on.

How is this possible? How can something as nasty as a virus spread so fast, reproduce and infect other living things but not be considered a living creature? The answer is complex and has been a subject of debate since the moment they were first named in 1898.' [https://cosmosmagazine.com/biology/why-are-viruses-considered-to-be-non-living]

এই নিবন্ধগুলো থেকে যে বিষয়গুলো জানা হলো:
(এক) ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে ভাইরাস অনেক অনেক ছোট।
(দুই) সবচেয়ে ছোট ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে ভাইরাস ১০ থেকে ১০০ গুণ ছোট।(তিন) ভাইরাস দেখতে মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন।
(চার) বাস্তবে কেউ ভাইরাস দেখতে হলে আরো কয়েক দশক সময় লেগে যাবে।
(পাঁচ) ভাইরাস জীবিত, না মৃত, তা নিয়েও এখনো রয়েছে বিতর্ক।
(ছয়) প্রায় ১০০ বছর ধরে, বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় ভাইরাস কী, তা নিয়ে বারবার তার সম্মিলিত মন পরিবর্তন করেছে। প্রথমে বিষ হিসাবে মনে করা হয়, তারপরে জীবন-রূপ হিসাবে, তারপরে জৈব রাসায়নিক হিসাবে, ভাইরাসগুলোকে আজ জীবিত ও অজীবিতের মধ্যে ধূসর অঞ্চলে বলে মনে করা হয়।
(সাত) বেশিরভাগ আণবিক জীববিজ্ঞানী ভাইরাসগুলো বেঁচে আছে কিনা তা নিয়ে খুব বেশি সময়ও ব্যয় করেন না।
(আট) ১৮৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ভাইরাস নামকরণের পর থেকে এখনো ‘ভাইরাস জীবিত, নাকি মৃত’ এই বিতর্কের অবসান হয়নি।

যে বস্তু জীবিত নাকি মৃত, তা নিয়েও এখনো বিতর্কের অবসান হয়নি; যে বস্তু সবচেয়ে ছোট ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও ১০ থেকে ১০০ গুণ ছোট, সে বস্তু কিভাবে মানুষকে ভয়াবহ অনেক রোগে আক্রান্ত করতে পারে, এমনকি একজনের রোগ আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে দিতে পারে? ভাইরাস কী, তা নিয়েও প্রায় ১০০ বছর ধরে মতানৈক্য বিদ্যমান, তা মানুষের ক্ষতি করতে পারাটা এবং একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে রোগ ছড়িয়ে দেয়াটা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে? এখানে বলা হয়, ভাইরাসকে প্রথমে বিষ হিসাবে মনে করা হয়, তারপরে জীবন-রূপ হিসাবে, তারপরে জৈব রাসায়নিক হিসাবে, সবশেষে ভাইরাসগুলোকে এখন জীবিত ও অজীবিতের মধ্যে ধূসর অঞ্চলে বলে মনে করা হয়। আরো বলা হয়, বেশিরভাগ আণবিক জীববিজ্ঞানী ভাইরাসগুলো বেঁচে আছে কিনা তা নিয়ে খুব বেশি সময়ও ব্যয় করেন না। তাহলে বুঝাই যায়, মাইক্রোস্কোপ দিয়েও এখনো ভাইরাস দেখা যায়নি। দেখা গেলে ভাইরাস জীবিত, নাকি মৃত, তা নির্ধারিত হয়ে যেতো। কারণ জীবন্ত হলে তা নিশ্চিতভাবে নড়াচড়া করতো দ্রুতগতিতে বা শ্লথ গতিতে। যদি ভাইরাস এখনো অদেখা জিনিস হয়ে থাকে, তাহলে ভাইরাসের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করাটা কি অবান্তর? ভাইরাস নিজেই যদি অস্তিত্বশীল না হয়, তাহলে ভাইরাসের ক্ষতি অস্তিত্বশীল হয় কোত্থেকে?

ভাইরাস বলে বলে পৃথিবীতে এখন (২০১৯ সালের শেষ সময় ধরে বিগত কয়েকমাস) যা চলছে, তাকে 'চরম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়' বললেও কম হবে। আজ ২৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যু ২,১১,৯৬৪ এবং মোট আক্রান্ত ৩০,৭৭,২৬৬ জন। শুধু মানবমৃত্যুর দিক বিবেচনা করে এর ভয়াবহতার চিত্র ফুটিয়ে তোলা যাবে না কোনোভাবে।

করোনাভাইরাসের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লকডাউন (দেশ, শহর, গ্রাম), কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, মানুষে মানুষে দূরত্ব। এই বিষয়গুলোর সাথে মানবজাতির পরিচয় ছিল খুব কম। কিন্তু করোনাভাইরাসের উপদ্রব এই বিষয়গুলোর সাথে মানবজাতিকে শুধু পরিচয় করিয়েই ছাড়েনি, হাড়ে হাড়ে টের করিয়ে দিয়েছে এগুলোর ভয়াবহতা! মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো 'ভাইরাস' নামকরণের কারণে এই রোগে আক্রান্ত কারো কাছে তার একেবারে কাছের কোনো আত্মীয়কেও যেতে না দেয়া, এমনকি এই রোগে আক্রান্ত কারো লাশ তার একেবারে কাছের মানুষও শেষবারের মতোও দেখার সুযোগ না পাওয়া। আরো কিছু পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হলো সাধারণ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত মানুষকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভেবে তার প্রতি অবর্ণনীয় দুর্ব্যবহার, অবজ্ঞা; চিকিৎসার অভাবে সাধারণ সর্দি-কাশি এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অসংখ্য মানুষের মৃত্যুবরণ; শুধু তাই নয়, অনেক দেশে চিকিৎসাসেবা অনেকাংশে করোনামুখী হয়ে যাবার কারণে অন্য রোগে আক্রান্ত অনেক মানুষের চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনা; অনেক ক্ষেত্রে অতিবৃদ্ধদেরকে রেখে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের চিকিৎসা দিতে যাবার ফলে অতিবৃদ্ধদের চিকিৎসাহীন মৃত্যু।

এই সব প্রাণ ফিরিয়ে আনা কারো পক্ষে কি সম্ভব? করোনাভাইরাসের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো বিমান চলাচল মারাত্মক পর্যায়ে সীমিতকরণের ফলে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ। আরো কিছু মারাত্মক পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যবসাবাণিজ্যে নজিরবিহীন ধস, লকডাউনের ফলে মাসের পর মাস ধরে কোটি কোটি মানুষের কর্মহীন জীবন যাপন, চরম অর্থাভাবে কঠিন জীবন যাপন করতে হওয়া, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। করোনাভাইরাসের কারণে এমনকি বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনাও বেড়েছে। 'করোনাভাইরাস: চীনে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ' শিরোনামে ১৮ মার্চ ২০২০ তারিখে ডেইলী স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনে বিবাহ বিচ্ছেদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে বলে দেশটির রেজিস্টার অফিসগুলো জানিয়েছে।
আজ বুধবার ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম সিচুয়ান প্রদেশের বিবাহ রেজিস্ট্রি ব্যবস্থাপক লু শিজন বলেছেন, গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারির পর থেকে ৩০০ জনেরও বেশি দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চীনের কর্মকর্তারা মনে করেন, করোনাভাইারাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন কোয়ারিন্টিনে থাকার কারণে এই বিচ্ছেদের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
লু বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। ফলে তারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে এবং বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।' [https://www.thedailystar.net/bangla/-139603]

'লকডাউনে দ্বিতীয় বিয়ে ফাঁস হওয়ায় সৌদিতে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ' শিরোনামে দৈনিক নয়াদিগন্তে ৪ জুন ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চলমান করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে যখন সারাবিশ্বে জমা হচ্ছে হাজারো বিয়ের আবেদন। তখন সৌদি আরবের হাওয়া বইছে বিপরীত দিকে। দেশটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েছে আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব’র প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে সৌদি আরবের পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহের প্রবণতা চলে আসছে। সৌদি আরবে একাধিক স্ত্রী রাখার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। সৌদি সংবাদ মাধ্যম দৈনিক ওকাজের খবরে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর দেশটিতে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে সংবাদ মাধ্যমটিতে বলা হয়েছে যে- সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ অধিকাংশ নারীরা লকডাউনের সময় তাদের স্বামীর গোপনে দ্বিতীয় স্ত্রী থাকার কথা আবিষ্কার করেছে।

প্রথম কারফিউ ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর শুধু ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে সাত হাজার ৪৮২টি তালাক হয়েছে। বেশিরভাগ তালাকের ঘটনা মক্কা ও রিয়াদে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত এপ্রিলে ঘোষণা করে, কোভিড -১৯'র কারণে পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে দুবাইয়ে অনলাইন বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে।'
সূত্র : দ্য নিউ আরব [https://www.dailynayadiganta.com/middle-east/505986]

করোনাভাইরাসের কারণে বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনাও। 'চিকিৎসা অবহেলায় করোনাভাইরাস রোগীর আত্মহত্যা' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্থানীয়দের পরিস্থিতি আড়াল করার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উহানে নিজ বাড়িতে এক নাগরিক আত্মহত্যা করেছেন।

সরকারি নোটিসে বলা হয়েছে, এই ব্যক্তি ফলপ্রসূ চিকিৎসা না পাওয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শহরটির জেনক্যাং এলাকার চার কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।-খবর ডেইলি মেইলের

উহানের সুপারভাইজরি কমিশন এই ঘটনা উদঘাটন করেছে। এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ বলছে, কিয়াওকোউ জেলার চ্যাংফ্যাং অ্যাভিনিউতে বসবাস করতেন চেং নামের ওই ব্যক্তি। সেখানকার কর্মকর্তারা ওই আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেনি। যদিও তারা জানতেন যে তিনি করোনাভাইরাসে সম্ভাব্য আক্রান্ত হয়েছেন।
অবহেলার কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তার সঠিক চিকিৎসা করেনি। পরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
কিন্তু চেং কখন এই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়নি সরকারি প্রতিবেদনে। এতে যে সমাজে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা স্বীকার করা হয়েছে।' [https://www.jugantor.com/international/279801]

'করোনার পাশাপাশি আত্মহত্যার আতঙ্ক' শিরোনামে ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে ৮ জুন ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এক নারীর আত্মহত্যা করোনা সংকট নিয়ে নতুন ভাবনায় ফেলেছে থাইল্যান্ডকে। কাজ হারানোর হতাশা আর দুর্ভাবনায় কেউ আত্মঘাতী হতে চাইলে তাকে বাঁচিয়ে রাখাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে প্রতিমাসে গড়ে ৩৬৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন। এ বছরের প্রথম চার মাসে তা ৩৫০-এ নেমে আসে। তবে করোনার কারণে লকডাউন শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আবার খারাপ হচ্ছে৷ কাজ হারানো অনেকেই খুঁজছেন আত্মহননের পথ।
লকডাউন শুরুর পর থেকে থাইল্যান্ডে আত্মহত্যা আবার বাড়ছে। এ বছরের প্রথম চারমাসে আত্মহত্যা আগের বছরের তুলনায় কমলেও মে মাসে আবার সংখ্যাটা আবার বাড়তে শুরু করে। জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক নাত্তাকর্ন চাম্পাথং মনে করেন, ''ছয় মাস পর (করোনা) সংকট শেষ হলে থাই সরকারকে খুব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।'' [https://p.dw.com/p/3dQkF]

'লকডাউনের কারণে ৫০ শতাংশ আত্মহত্যা বেড়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৭ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হানায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে লকডাউনে ঘরবন্দী থেকে। এতে মানুষ আরও বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছে, এমনটিই জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা। 
বিবিসি জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার ঝুঁকি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউনে পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং চাকরি ছাঁটাইয়ের ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে মানুষের মধ্যে।
গবেষকদের আশঙ্কা, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ৫০ শতাংশ বেশি মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে। প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় ৩ হাজারের মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। দেশটির সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য এ বছর অতিরিক্ত ৩৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/05/07/527937]

'লকডাউনের ফলে অর্থসঙ্কট, ভারতীয় অভিনেতার আত্মহত্যা' শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ১৭ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের সময় লকডাউনে থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন ভারতীয় টেলিভিশন অভিনেতা মানমিত গ্রেওয়াল (৩২)। তার পারিবারিক বন্ধু ও প্রযোজক মানজিত সিং রাজপুত ভারতীয় সংবাদমাধ্যকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।' [https://www.banglanews24.com/entertainment/news/bd/789055.details]

'লকডাউনে পেছাল বিয়ে, শোকে যুবকের আত্মহত্যা' শিরোনামে জাগোনিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ২৮ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের কারণে ঘোষিত লকডাউনের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিয়ে পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাত্র-পাত্রীর পরিবার। কিন্তু বিয়ে পেছানোর বেদনা বেশিদিন সইতে পারলেন না পাত্র। শোকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে। গত রোববার (২৪ মে) রাজ্যের জামশেদপুরের বিশ্বকর্মা নগরের বাড়ি থেকে পাত্র সঞ্জিত গুপ্তের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।' [https://www.jagonews24.com/international/news/585684]

পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ভয়াবহ বহুমাত্রিক মহাসঙ্কট আর কখনো সৃষ্টি হয়নি। এই মহাসঙ্কটের পেছনে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগের ধারণাও কম দায়ী নয়। বিজ্ঞান প্রাকৃতিক ভুত বিশ্বাস না করে বরং নিজেই কৃত্রিম ভুত সৃষ্টি করে সমাজে নতুন ভুতের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার ফলেই চীনে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর করোনাভাইরাসের সাথে ওই ভুতের ভয় যুক্ত হয়ে জঘণ্য অনেক পার্শ¦প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যদি বিজ্ঞানসৃষ্ট এই ভুত না থাকতো, তাহলে এতোসব পার্শ¦প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো না।

প্রশ্ন ছিল, কী এমন হলো উহানে, উহান ছাড়া চীন বা বিশ্বের আর কোনো জায়গা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবস্থল হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারলো না? উহানের মাটি কি করোনাভাইরাস উৎপাদনের জন্য বেশ উর্বর ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা পরিষ্কারভাবে জেনে নিলাম, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু এবং ভাইরাস অস্তিত্বশীল হোক বা না হোক, এগুলো যেমন মানুষের শরীরে কোনো রোগ সৃষ্টি করতে পারে না, কোনো রোগকে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরেও ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। আর তার-ও আগে আমরা জেনে নিলাম, ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ নেই!
তাহলে ফলাফল কী দাঁড়ায়?

    সপ্তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

    ষষ্ঠ অধ্যায়

    করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়
    কমপক্ষে এটা দাঁড়ায়, উহানের এই ভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়। কিভাবে এই ফলাফল দাঁড়ায়, তা আমরা সংক্ষেপে আবার জেনে নিই।
    (এক) করোনাভাইরাসকে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' বলেও আখ্যায়িত করা হয়। মূলত করোনায় আক্রান্ত মানুষ ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণে ভোগে। আর ফুসফুসে সংক্রমণকেই নিউমোনিয়া বলে অভিহিত করা হয়। আর নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এইরকম যেসব শারীরিক সমস্যার অন্যতম লক্ষণ হাঁচি-কাশি, সেসব রোগ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে না তথা সেসব রোগ ছোঁয়াচে/সংক্রামক নয় বলে আমরা প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিলাম।
    'Is Pneumonia Contagious?' শিরোনামে ফাস্টমেড শিরোনামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 

    'Pneumonia Is Not Contagious, But Viruses And Bacteria Are
    The most simple answer to the question ''is pneumonia infectious?'' is no. Pneumonia, in itself, is not contagious, but the germs that cause it often are. Germs and viruses that cause the flu, common cold, or bacterial infections are contagious and can lead to pneumonia.

    Who is most likely to get pneumonia?
    • People with weakened immune system due to medications
    • People with pre-existing medical conditions
    • Children under the age of 2
    • Adults over the age of 65'
    [https://www.fastmed.com/health-resources/is-pneumonia-contagious/]

    'What is pneumonia? Is pneumonia contagious? Symptoms, treatment and who's at risk' শিরোনামে টুডে শিরোনামের ওয়েবসাইটে ২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি নিবন্ধে (By A. Pawlowski and Jane Weaver) বলা হয়, '... The bacteria and viruses that can cause pneumonia are contagious, but pneumonia itself isn't, Azar said.

    Viral pneumonia can develop from, and has similar symptoms to, a cold or flu. Viral pneumonia can lead to the more serious bacterial pneumonia, which can cause a fever as high as 105 degrees Fahrenheit. A common cause of bacterial pneumonia is the pneumococcus germ, although doctors aren't always sure where a pneumonia infection comes from, according to the Centers for Disease Control and Prevention.' [https://www.today.com/health/pneumonia-contagious-t101430]

    (দুই) 'নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে/সংক্রামক রোগ' কথাটিকে এই দু'টি নিবন্ধে সরাসরি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে/সংক্রামক না হলেও নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এমন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো সংক্রামক।
    ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক হবার ধারণা প্রচলিত থাকার কারণেই নিবন্ধগুলোতে এমন মন্তব্য জুড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এই নিবন্ধে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি শুধু ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস নয়, জীবাণুও একজন মানুষের শরীর থেকে কোনো রোগকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে না, সংক্রমিত করার পেছনে কোনো প্রভাব ফেলতে সক্ষম নয়। সুতরাং নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এমন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলোও সংক্রামক নয়।

    নিউমোকোকাস জীবাণুকে ব্যাক্টেরিয়াল নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী করার কথা অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু দ্বিতীয় নিবন্ধে এ সম্পর্কে বলা হয়, 'রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর মতে, ডাক্তাররাও সর্বদা নিশ্চিত হতে পারেন না, নিউমোনিয়ায় সংক্রমণটি কোথা থেকে আসে।'
    নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণ সম্পর্কে এই নিবন্ধের শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে। এই রোগ দু'টির সাথে বেশি ঠান্ডা লাগা এবং ঠান্ডা-গরমের আকস্মিক মিশ্রণের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা এড়ানো এবং গরম পরিবেশ থেকে এসে বিশ্রাম নেয়ার আগে শরীরে ঠান্ডা লাগানো বা পানি পান করা এড়ানোর সাথে রোগ দু'টি প্রতিরোধ করাটা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। রোগ দু'টোকে জীবাণু/ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাস নামক ভুতের সাথে সম্পর্কিত করার কোনো অর্থ নেই।

    অনেকগুলো নিরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যে নিরীক্ষাগুলো সুস্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেবে, রোগ দু'টো নিজেই যেমন সংক্রামক নয়, রোগ দু'টোর 'কল্পিত স্রষ্টা' ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলোও সংক্রামক নয়।
    নিউমোনিয়া নিজে যদি সংক্রামক না হয়, নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলোও যদি সংক্রামক না হয়, তাহলে করোনাভাইরাস কিভাবে সংক্রামক হবে?

    (তিন) চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে যে প্রতিবেদনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেই প্রতিবেদনগুলো সম্মিলিতভাবে খুব শক্তভাবে প্রমাণ করে, চীনের বাইরে প্রথম প্রথম যেসব দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তারা প্রায় সবাই 'উহান ফেরত'। তার মানে উহান থেকে রোগটির উৎপত্তি হবার পর যারা উহানে গমন করেনি বা উহানে ছিল না, তারা এতে আক্রান্ত হয়নি; শুধু চীন ছাড়া অন্যান্য দেশে তারাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যারা উহানে ছিল বা গমন করেছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয়, রোগটি একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়নি। বরং সংক্রমিত হয়েছে উহান থেকে।
    এজন্য উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে যারা উহান থেকে বিভিন্ন দেশে ফেরত গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের করোনাভাইরাস নতুন কাউকে তেমন একটা আক্রান্ত করেনি। তারা ফেরত যাবার অনেক পর তারা যেসব দেশে ফেরত গিয়েছে, সেসব দেশে করোনাভাইরাসের উপদ্রব গুরুতর হতে শুরু করেছে। এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে উহান থেকে করোনাভাইরাসের রোগী গমন করার পরও, এমনকি করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণের পরও সেসব দেশে করোনাভাইরাস তেমন মারাত্মক আকার ধারণ করেনি, কোনো কোনো দেশে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে অনেক পর। চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখিত প্রতিবেদনগুলোর সূত্র ধরেই এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যাবে। এ সম্পর্কে পরে আরো আলোচনা করা হবে।

    (চার) উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শুধু উহান শহর বা হুবেই প্রদেশ নয়, পুরো চীনজুড়ে মাস্ক ব্যবহারের হিড়িক পড়ে যায়। চীনের পর অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর সেসব দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসাকর্মীরাও মাস্ক পরতে শুরু করে। কিন্তু কী লাভ হয়েছে? করোনাভাইরাস যদি সত্যিই কোনো 'ভাইরাস' হতো, তাহলে মাস্ক পরিহিত কেউ এতে আক্রান্ত হতো না। যেখানে শুধু মাস্ক পরিহিত সাধারণ মানুষকেই নয়, চীন, ইতালী, যুক্তরাষ্ট্রসহ করোনাভাইরাসের কবলে পড়া প্রায় সব দেশে মাস্কসহ আপাদমস্তক মোড়ানো অসংখ্য চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকেও রোগটি আক্রমণ করে বসেছে, সেখানে রোগটিকে 'ভাইরাস' বলার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে? মাস্ক এবং পিপিই পরেও এই 'ভাইরাসে'র আক্রমণ থেকে মানুষ যখন রক্ষা পায়নি, তখন একে ভাইরাস বলার মধ্যে কী মজা থাকতে পারে!
    অবশ্য চীনসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাসের আক্রমণ শুরু হবার পর যখন দেখা গেলো মাস্ক পরেও করোনাভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করা যাচ্ছে না, তখন এরকম অনেক গবেষণা-ফলাফল প্রকাশিত হতে শুরু করলো, মাস্ক পরেও লাভ নেই! এ সম্পর্কিত অনেকগুলো নিবন্ধ/প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি মাস্ক সম্পর্কিত আলোচনায় ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়। এখানে শুধু একটি উদ্ধৃতি পুণরোল্লেখ করা হচ্ছে।

    সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে 'Do face masks work? Medical experts explain how to protect yourself from coronavirus' শিরোনামে ২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Sam Meredith)  বলা হয়, 'Medical experts have urged people to stop panic buying face masks, warning that such equipment is not an effective way to protect yourself from the fast-spreading coronavirus.'
    [https://www.cnbc.com/2020/03/02/coronavirus-do-face-masks-work-and-how-to-stop-it-from-spreading.html?recirc=taboolainternal]

    জীবাণু বা ভাইরাসসৃষ্ট সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ইতিহাসে, বিশেষত বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ইতিহাসে ইতোপূর্বে কখনো মাস্কের অকার্যকারিতার কথাটা হয়তো এভাবে আর সবার সামনে পরিষ্কার হয়নি। কারণ? কারণ করোনাভাইরাস আসলেই কোনো ভাইরাস বা বায়ুবাহিত রোগ নয়, বরং অন্যকিছু। অন্তত এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে মাস্কের অকার্যকারীতার কথা বিবেচনা করেও 'ভাইরাস' হিসেবে প্রচারিত এই ভাইরাসকে 'ভাইরাস নয়' বলে উপলব্ধি করাটা সবার নিকট পরিষ্কার হবার কথা। 

    (পাঁচ) চতুর্থ অধ্যায়ের চতুর্থ পরিচ্ছেদে যে ৩৮টি নিবন্ধ/প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোতে উল্লেখিত সবগুলো ঘটনার বিবরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে পরিষ্কার হবে, (১) চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে যেসব করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের অধিকাংশই চীনের উহান থেকেই ফিরেছিল। উহানে থাকতেই তারা রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। উহান থেকে আক্রান্ত হয়ে অন্য দেশে গিয়ে মারা গেছে মাত্র। ইঁদুরের মতো। যেখানে ইঁদুরের উৎপাত বেশি, সেখানেই ইঁদুর মারার ঔষধ দেয়া হয়। কিন্তু ঔষধ খেয়ে সব ইঁদুর কি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়? কিছু ইঁদুর ঘটনাস্থলে প্রাণ না হারিয়ে অন্য জায়গায় গিয়েও প্রাণ হারায় কখনো কখনো। (২) চীনে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর পৃথিবীর অনেক দেশে এমন অনেক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যেসব দেশে চীন থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী গমন করেছে, কিন্তু যারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা এসব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে কোনো রকম সম্পর্ক ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। (৩) এমন অনেক দেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগী শনাক্ত হয়েছে, যেসব দেশে চীন-ফেরত কোনো করোনায় আক্রান্ত রোগী গমনই করেনি এবং স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত এসব লোকরাও বিগত কয়েক মাসের মধ্যে চীনের উহানে ছিল না বা যায়নি।

    এই তিনটা বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে করোনাভাইরাসকে ভাইরাস মনে হবে না কোনোভাবে। মনে হবে, চীনের উহানে একটা 'অদৃশ্য তাপহীন আগুন' লাগার মতো কিছু হয়েছিলো, সেই আগুনে পুড়ে অনেকে উহানেই মারা গেছে, অনেকে অন্য দেশে গিয়ে মারা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, (১) যেসব দেশে করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী যায়নি, সেসব দেশের মানুষও কোত্থেকে উহানের সেই করোনার 'অদৃশ্য ও তাপহীন' আগুনে দগ্ধ হয়েছে? (২) অন্য অনেক দেশের এমন অনেক মানুষ কোত্থেকে উহানের সেই করোনার 'অদৃশ্য ও তাপহীন' আগুনে দগ্ধ হয়েছে, যারা চীনে বা উহানে গমন করেনি? (৩) উহান থেকে করোনায় আক্রান্ত মানুষ গমন করেছে, এমন অনেক দেশে এমন অনেক মানুষ কিভাবে উহানের সেই করোনার 'অদৃশ্য ও তাপহীন' আগুনে দগ্ধ হয়েছে, যারা উহান-ফেরতও নয়, এমনকি উহান-ফেরত করোনায় আক্রান্ত লোকদের ধারে কাছেও যায়নি?

    এই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের পথ তখনই আলোকিত হবে, যখন- (১) মনে করা হবে করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' নয় এবং (২) স্মরণ করা হবে পৃথিবীতে অল্প কিছু মানুষ কখনো কখনো অসংখ্য মানুষের ধ্বংসের পেছনে ভূমিকা রাখে। আণবিক বোমা সর্বপ্রথম যাদের জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছিল, তারা কেউ আণবিক বোমা তৈরিতে ভূমিকা রাখেনি, তাদের সংখ্যাটা আণবিক বোমা তৈরিতে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের সংখ্যার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। অল্প কিছু 'ভিন্ন প্রকৃতির লোক' লক্ষ মানুষের জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছে।

    যারা আণবিক বোমা তৈরি করেছিল এবং নিক্ষেপ করেছিল, তাদের মনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য কাজ করেছিল কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিশ্বব্যাপী জরিপ চালানো হলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের রায় কী হতে পারে? অনেকে বলে ফেলতে পারেন, একজন মানুষও পাওয়া যাবে না, যে মনে করবে তাদের মনে সামান্য পরিমাণ মহৎ উদ্দেশ্যও ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় এখনও এমন কিছু মানুষ পাওয়া যাবে, যারা আণবিক বোমা তৈরির পেছনে কোনো না কোনো মহৎ উদ্দেশ্য ছিল বলে মতামত দেবে। যদি তা না হতো, তাহলে এখনও কেন কিছু মানুষ আণবিক বোমা তৈরিতে এতো মরিয়া? এখনো কেন দেশে দেশে আণবিক বোমা তৈরির প্রতিযোগিতা? কী করবে ওরা বোমাগুলো দিয়ে? কোন্ মহৎ উদ্দেশ্যে আণবিক বোমা তৈরি ও মজুতকরণে এতো উৎসাহ; আণবিক বোমা তৈরির পেছনে এতো খরচ? এমন অনেক দেশও আছে, যেখানে অসংখ্য মানুষ ঠিকমতো দু'বেলা খেতেও পায় না, যেখানে অসংখ্য মানুষ বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত, সেসব দেশেও পর্যাপ্ত আণবিক বোমা মজুত!

    আণবিক বোমা তৈরি ও প্রয়োগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দু'টি নিবন্ধ দেখা যাক
    দৈনিক কালের কন্ঠে ৯ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে 'ফিরে দেখা : হিরোশিমা-নাগাসাকির ভয়ংকর অভিজ্ঞতা' শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট হায়দার আকবর খান রনো। নিবন্ধটির একটা বড় অংশ উল্লেখ করা প্রয়োজন। তিনি লিখেন, 'ঠিক ৭০ বছর আগে ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের দুই শহরে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপ করেছিল। ৬ আগস্ট হিরোশিমা শহরে এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে। এটি ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে নৃশংস ও সবচেয়ে বর্বর ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে মারা গিয়েছিল দুটি শহরের মোট ছয় লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি- তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষ। মানবতার বিরুদ্ধে এত বড় অপরাধ আর কখনো সংঘটিত হয়নি। মহাত্মা গান্ধী এই অ্যাটম বোমা নিক্ষেপের ঘটনাকে 'বিজ্ঞানের সবচেয়ে শয়তানিপূর্ণ ব্যবহার' বলে অভিহিত করেছিলেন। মার্কিন প্রশাসন আজ পর্যন্ত এই জঘন্য অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়নি। এমনকি এটা যে অপরাধ ছিল সে কথাও বলেনি। সেই মার্কিন প্রশাসন যখন গণতন্ত্র ও মানবতার কথা বলে, তখন তা পরিহাস বলেই মনে হয়।

    পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধক্ষেত্রে দুইবার মাত্র অ্যাটম বোমা ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা করেছে একমাত্র একটি রাষ্ট্র- যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে একমাত্র দাগি আসামি। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ, যা এর পরও ২৮ বার পারমাণবিক বোমা প্রয়োগের হুমকি দিয়েছিল। তাহলে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই দরকার হবে দাগি আসামিকে নিরস্ত্র করা। কিন্তু আমরা দেখছি উল্টো ব্যাপার। অ্যাটম বোমা ব্যবহারকারী আমেরিকাসহ বড় শক্তিগুলোর হাতে পারমাণবিক বোমা থাকলে বিশ্ব সংস্থার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের কোনো ছোট দেশ এই বোমা রাখতে পারবে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে এক হাজারের বেশি আণবিক অস্ত্র আছে, যার সব কয়টিই উত্তরের দিকে তাক করা। এতে জাতিসংঘ নির্বিকার রয়েছে। কিন্তু যখন উত্তর কোরিয়া আত্মরক্ষার্থে পারমাণবিক বোমা বানায়, তখনই তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। বিভিন্ন সূত্র থেকে এটা নিশ্চিত যে ইসরায়েলের আছে দুই শতাধিক পারমাণবিক বোমা। পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। কিন্তু ইরান যখন শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণ করে, তখন মার্কিন প্রশাসন আপত্তি করে বসে। তার সঙ্গে যোগ দেয় বড় শক্তিগুলো। ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে- এই মিথ্যা অভিযোগে জাতিসংঘের আপত্তিকে গ্রাহ্য না করেই মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ দেশটি দখল করেছিল। এত বড় যুদ্ধাপরাধের জন্য ব্লেয়ার-বুশের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি। কারণ এখনো বিশ্বে গায়ের জোরই মূল কথা।

    হিরোশিমা-নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা ফেলে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ কেবল তাৎক্ষণিকভাবেই সাড়ে তিন লাখ মানুষ মারেনি। পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পরবর্তী সময়ে প্রায় সমসংখ্যক মানুষ মারা গেছে অথবা গুরুতর অসুস্থ হয়েছে। পরবর্তী এক দশকে জাপানে তেজস্ক্রিয়তার কারণে বহু বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিয়েছিল। আমেরিকায় অবস্থানরত বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন, কত ভয়ানক হতে পারে অ্যাটম বোমার ফলাফল। তাঁরা মার্কিন প্রশাসনকে এই ভয়ংকর বোমা ব্যবহার করতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান প্রশাসন তাঁদের কথা শোনেনি।

    এ কথা ঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া হাঙ্গেরীয় বিজ্ঞানী লিয়ো জিলার্ডের অনুরোধে মহান বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে অ্যাটম বোমা প্রকল্পের জন্য চিঠি লিখেছিলেন। ১৯৩৯ সালের ২ আগস্ট। পরবর্তী সময়ে তিনি এ জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, সম্ভবত হিটলারের জার্মানি এই ভয়ংকর অস্ত্রটি আবিষ্কার করে ফেলেছে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে। তার পরই অ্যাটম বোমার প্রকল্প হাতে নেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রথম সফল আণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল।

    এর আগেই ১৯৪৫ সালের ৮ মে হিটলারের জার্মানির পতন হয় সোভিয়েত লালফৌজের হাতে। তারপর বিজ্ঞানী জিলার্ড, আইনস্টাইনসহ প্রায় সব বৈজ্ঞানিক মার্কিন সরকারকে অ্যাটম বোমা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী জেমস ফ্রাংকের নেতৃত্বে মার্কিন সরকার যে কমিটি গঠন করেছিল, সেই কমিটি ১৯৪৫ সালের ১১ জুন মার্কিন প্রশাসনের যুদ্ধ সচিবের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করেছিল তাতে এই বোমা ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এই পরামর্শের কোনো মূল্য ছিল না যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রশাসনের কাছে।

    সেই সময় যুদ্ধ চলছিল। এই যুদ্ধে জাপানকে পরাজিত করার জন্য কি অ্যাটম বোমা নিক্ষেপ করাটা আসলেই প্রয়োজন ছিল? এর উত্তর যুদ্ধকালীন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের বক্তব্য থেকেই শোনা যাক। 'এটা মনে করা ভুল হবে যে অ্যাটম বোমার দ্বারা জাপানের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল। প্রথম বোমা নিক্ষেপের আগেই জাপানের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল।' প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ট্রুম্যানের আমলের চিফ অব স্টাফ মার্কিন সেনাপতি W. B. Leathy একই কথা বলেছেন। মার্কিন সেনাপতি ম্যাক আথরিও বলেছেন, সে সময় জাপান আত্মসমর্পণের জন্য পথ খুঁজছিল। যুদ্ধকালীন সেনাপতি ও পরবর্তী সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ারও বলেছেন যে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপের আগেই জাপান আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। কারণটাও খুব স্বাভাবিক। ইতিপূর্বে হিটলারের পতন হয়েছে। ইউরোপে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। একমাত্র পূর্ব দিকে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু জাপানের পরাজয়ও নিশ্চিত। তাহলে কেন সেদিন মার্কিন প্রশাসন জাপানে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?

    এর উত্তরও তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের কাছ থেকেই শোনা যাক। 'যুদ্ধ শেষে আমাদের শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে (dictate our own terms) এই বোমা আমাদের সুবিধাজনক অবস্থানে এনে দিয়েছে।' হ্যাঁ, জাপানকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে যাতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্য দরকার ছিল সারা বিশ্বকে অ্যাটম বোমার ভয় দেখানোর। অর্থাৎ অ্যাটম বোমাকে ব্ল্যাকমেইল করার উপযুক্ত হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেছিল মার্কিন প্রশাসন এবং সে জন্য লাখ লাখ মানুষ হত্যা করতে তাদের বাধেনি। সাম্রাজ্যবাদের কি কখনো নৈতিকতা বোধ থাকে?


    এ ছাড়া আরো একটি বড় কারণ ছিল। তা হলো সমাজতন্ত্রের অপ্রতিরোধ্য গতিকে থামিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পতন ঘটেছে সোভিয়েত লালফৌজের হাতে। পূর্ব ইউরোপে লালফৌজের জয়জয়কার। চীনের বিশাল অঞ্চলজুড়ে কমিউনিস্টদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অ্যাটম বোমার ভীতি প্রয়োগ করতে হবে। ট্রুম্যান প্রশাসনের যুদ্ধসচিব হেনরি স্টিমসনের স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ 'On Active Service'-এ অ্যাটম বোমা নিক্ষেপের ঘটনাকে "...a badly needed 'equilizer' in the diplomatic struggle with USSR" বলে অভিহিত করা হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপের তারিখটিও কিন্তু বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একটু পেছনের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিত্রশক্তির তিন প্রধান রাষ্ট্রনায়কের শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল- ইয়েলটা সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা স্তালিন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে মাঞ্চুরিয়াতে অবস্থিত সোভিয়েত লালফৌজ জাপানে আঘাত হানবে। তারিখটিও নির্দিষ্ট হয়েছিল ৮ আগস্ট। সে অনুসারে সোভিয়েত লালফৌজ প্রস্তুতি নিয়েছিল। সমুদ্রের অপর দিকে তারা অপেক্ষা করছিল জাপানে আক্রমণ করার জন্য। এরপর জার্মানির পরাজয় হয়। ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত চলে পোটসড্যাম সম্মেলন। তাতে উপস্থিত ছিলেন স্তালিন, চার্চিল ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান। (কারণ এর আগেই রুজভেল্ট মারা গেছেন।) সেখানেও একই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সোভিয়েত লালফৌজ জাপান আক্রমণ করবে। আর মাত্র কয়েক দিন পর- ৮ আগস্ট।

    ঠিক সেই সময়ই দুই-দুইটি শীর্ষ সম্মেলনের যৌথ সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে যুক্তরাষ্ট্র জাপানে অ্যাটম বোমা ফেলল। ৮ আগস্টের আগেই। ৬ আগস্ট। সমুদ্র পাড়ে অবস্থানরত সোভিয়েত বাহিনী স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। স্তালিন আপাতত জাপানে সৈন্য পাঠানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন। তার পরও মার্কিন প্রশাসন নিশ্চিত ছিল না। ভয় পেয়েছিল। যদি রাশিয়া পূর্ব সিদ্ধান্তমতো জাপানে পৌঁছে যায়। তাই তারা ৯ আগস্ট আরেকটি অ্যাটম বোমা ফেলল। একদিকে সম্মেলনে যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অপর দিকে সেই সিদ্ধান্তকে ভন্ডুল করার যে নোংরা কৌশল নিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন, তাও কিন্তু হঠাৎ করে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন সেক্রেটারি অব স্টেট Byrnes-এর একটা বক্তব্য তদানীন্তন মার্কিন নৌবাহিনীর সচিব জেমস ফরেস্টালের ডায়েরি থেকেও জানা যায়। (পরে তা Forrestal Diary নামে বই আকারে ছাপা হয়েছিল)। সেখানে তিনি লিখেছেন, মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট ইুৎহবং পোটসড্যাম সম্মেলনের সময় খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাপানে রাশিয়ার প্রবেশের আগেই যেন জাপানের ব্যাপারটি ফয়সালা হয়। তাই জাপানে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপের বিষয়টি ছিল সোভিয়েত অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করার পরিকল্পনারই অংশ। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী P.M.S. Blackelt অ্যাটম বোমা ফেলার তারিখটি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন "Fear, War and the Bomb" গ্রন্থে। তিনি এটিকেই শীতল যুদ্ধের সূচনা বলে উল্লেখ করেছেন। কী ভয়ংকর 'উত্তপ্ত' ঘটনার মধ্য দিয়ে 'শীতল' যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

    যুদ্ধের পরপর জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিল। জাতিসংঘ আণবিক এনার্জি কমিশনের প্রথম বৈঠকেই সোভিয়েত প্রতিনিধি এন্দ্রি গ্রোমিকো সব পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন ও মজুদ রাখা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রাখেন। তখনো পর্যন্ত অ্যাটম বোমার একচেটিয়া অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র তাতে রাজি হয়নি। অন্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোও (যথা- ব্রিটেন, ফ্রান্স, যাদের হাতে তখনো পর্যন্ত অ্যাটম বোমা ছিল না) রাজি হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও সোভিয়েতের এই প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পায়নি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র আবারও অ্যাটম বোমার পরীক্ষা চালাল। এবারও জাপানে। তবে সাগরে। ১৯৪৬ সালের ১ জুলাই।
    বছর তিনেকের মধ্যেই আমেরিকার মনোপলি ভেঙে দিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারাও অ্যাটম বোমা আবিষ্কার করল। ১৯৪৯ সালের ২৯ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম অ্যাটম বোমার পরীক্ষা চালাল। পঞ্চাশের দশকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স এবং ১৯৬৪ সালে লাল চীনও অ্যাটম বোমা বানিয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন (পরে চীনও) আবার জাতিসংঘে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব তুলেছিল। এবারও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র তাতে সম্মত হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন (ও পরে চীন) ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা কখনোই প্রথমে আণবিক বোমা ব্যবহার করবে না এবং যে দেশের এই বোমা নেই অথবা যে দেশে আণবিক ঘাঁটি নেই, সেই দেশের বিরুদ্ধেও এই বোমা ব্যবহার করবে না। সোভিয়েত ও চীন অন্যান্য আণবিক অস্ত্রধারী দেশের কাছ থেকেও অনুরূপ ঘোষণা দাবি করেছিল। না, এমন ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি মার্কিন, ব্রিটেন, ফ্রান্স দেয়নি। বস্তুত এ ঘটনা থেকেও পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্রের পার্থক্য চিহ্নিত হয়। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ হলো শোষক, পরদেশ লুণ্ঠনকারী, মানবতার শত্রু, বিশ্বশান্তিরও শত্রু। সমাজতন্ত্র হচ্ছে শান্তি ও শোষক মুক্তির দুর্গ।

    বর্তমান পৃথিবীতে সমাজতান্ত্রিক শিবির নেই। তাই কেন পারমাণবিক বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে না? যেখানে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে, সেখানে কেন আণবিক অস্ত্রসহ যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে এত বিপুল সম্পদের অপচয় করা হয়।

    হিরোশিমা-নাগাসাকির সেই বীভৎস নারকীয় হত্যাকান্ড ও পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের মৌলিক চরিত্রকেই উন্মোচিত করছে। ইতিহাসের এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ভুললে চলবে না।' [https://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2015/08/09/254124]

    'কী ছিল হিরোশিমা-নাগাসাকির মরণযজ্ঞের উদ্দেশ্য' শিরোনামে ১৯ আগস্ট ২০১৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে একটি নিবন্ধ লিখেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। নিবন্ধটিরও একটি বড় অংশ উল্লেখ করা প্রয়োজন। লেখক লিখেন, '...১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল। ইতিহাসবিদদের জিজ্ঞাসা হলো, এই মানব বিধ্বংসী নতুন অস্ত্র ব্যবহারের আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল কী? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ বা সেই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য এর দরকার আদৌ ছিল কী? এর জবাবের জন্য এই বোমাবর্ষণের আগের ঘটনাবলীর দিকে প্রথমে দৃষ্টি দেয়া যাক।

    ১৯৪৫-এর আগস্টের কিছুদিন আগে, জুলাইয়ের শেষদিকে, আমেরিকানরা টোকিও শহরের ওপর বিধ্বংসী বোমাবর্ষণ করেছে। টোকিও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। জাপানের সামরিক শক্তি প্রায় সম্পূর্ণরূপে চুরমার হয়ে গেছে। মে মাসে বার্লিন মুক্ত হওয়ার পর জার্মানির নাৎসি বাহিনী পরাজয় মেনে নিয়ে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে। মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট ইতালি শেষ। ইউরোপে যুদ্ধ শেষ! পূর্ব ইউরোপের দেশে দেশে কমিউনিস্টরা সরকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্জয় 'রেড আর্মি' ইউরোপের রণাঙ্গন ত্যাগ করে দুর্ধর্ষ সমরনায়ক মার্শাল জুকভের নেতৃত্বে এশিয়ার যুদ্ধে যোগদানের জন্য রওনা হয়ে গেছে। জাপানের ভূ-খন্ডে যৌথ অভিযানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জাপানের সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য ২৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। জাপানের হাই কমান্ড আত্মসমর্পণের কথা ভাবতে শুরু করেছে। ইউরোপের পর এবার এশিয়া যুদ্ধও শেষ হওয়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে। এসবই হলো প্রামাণ্য তথ্য।

    এসব তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য কিংবা এশিয়ার যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য হিরোশিমা-নাগাসাকিতে এটম বোমা নিক্ষেপের কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। এই বোমা নিক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা ছিল অন্যত্র। কী সে প্রয়োজনীয়তা, কী সে কারণ, যে কারণে নিমিষে অসংখ্য মানুষের প্রাণ হরণ করার মতো মারণাস্ত্র আমেরিকা ব্যবহার করেছিল? আণবিক বোমা আবিষ্কারের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছিল। অবশ্য আগেই কিছুটা আঁচ করা গিয়েছিল যে জার্মানরা এ ধরনের বোমা তৈরির জন্য গবেষণা চালাচ্ছে। ১৯৪২ সালে আমেরিকা 'ম্যানহ্যাটন প্রজেক্ট' নামে এ বিষয়ে গবেষণা কাজ শুরু করে। অত্যন্ত সংগোপনে কাজ এগিয়ে নিয়ে ১৯৪৫ সালের প্রথমার্ধে তারা পরীক্ষার জন্য 'থিন ম্যান' নামে পরিশুদ্ধ প্লুটোনিয়াম দিয়ে তৈরি একটি আণবিক বোমা প্রস্তুত করতে ও তা পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়। একই প্রযুক্তিতে আরো বড় একটি বোমা 'ফ্যাট ম্যান' নাগাসাকিতে ব্যবহার করা হয়। তবে আগে কোনো পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ব্যতিরেকেই, পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে তৈরি ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও ট্রিগারিং ব্যবস্থা সম্বলিত 'লিটল বয়' বোমাটি হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা হয়। ...

    হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত শুধু দু'টি বোমাতেই লক্ষাধিক মানুষ নিমিষে প্রাণ হারিয়েছিল। দেড় লক্ষাধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যে তাদেরও মৃত্যু হয়। বোমার তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের ফলে অচিরেই ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতার কথা বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে চার সপ্তাহ পরে। আমেরিকা একথা অনেকদিন গোপন রাখে যে এটি একটি তেজস্ক্রিয় এটম বোমা ছিল। ফলে আণবিক তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করার সুযোগ থেকে মৃত্যুপথযাত্রীদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। ফলে ডাক্তাররাও সঠিক ধারায় চিকিৎসা কাজ অগ্রসর করতে পারেনি। শুধু এ কারণেই মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। বোমার আঘাত ছিল বীভৎস, কিন্তু তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল আমেরিকান 'নীরবতার' ফলাফল।

    অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক উইলফ্রেড গ্রাহাম বুর্চেট এটম বোমা নিক্ষেপের এই ঘটনার চার সপ্তাহ পর ২ সেপ্টেম্বর টোকিও থেকে হিরোশিমা পৌঁছান। পরে তিনি তার চোখে দেখা বিবরণ পত্রিকার জন্য নিউজ ডেসপ্যাচ আকারে প্রেরণ করেন। সেই ডেসপ্যাচে বুর্চেট লিখেন, 'তিরিশতম দিনে হিরোশিমায় : যারা পালাতে পেরেছিলেন তারা মরতে শুরু করেছেন।... চিকিৎসকরাও কাজ করতে করতে মারা যাচ্ছেন। বিষাক্ত গ্যাসের ভয়। মুখোশ পরে আছেন সকলেই।' তিনি আরো লিখেন, 'হিরোশিমাকে বোমা বিধ্বস্ত শহর বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, দৈত্যাকৃতির একটি রোলার যেন শহরটিকে পিষে দিয়ে গেছে।... পঁচিশ বা তিরিশ বর্গমাইল জুড়ে একটিও অট্টালিকা দাঁড়িয়ে নেই।' তার ডেসপ্যাচে বুর্চেট আরো লিখেন, 'বোমায় অক্ষত থাকা মানুষগুলো দিন কয়েক পরে অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে ও হাসপাতালে যেতে থাকে। চিকিৎসকরা তাদের শরীরে ভিটামিন-এ ইনজেকশন দেয়। দেখা যায় যে, ইনজেকশনের জায়গায় মাংস পচতে শুরু করেছে। এমন মানুষদের একজনও বাঁচেনি। ৫ সেপ্টেম্বর বুর্চেটের ডেসপ্যাচটি 'ডেইলি এক্সপ্রেস' পত্রিকায় ছাপা হয়। সাহসী সাংবাদিক বুর্চেট নিজেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৩ সালে ক্যান্সারে মারা যান। সে বছরই তার লেখা 'শ্যাডো অফ হিরোশিমা' বইটি প্রকাশিত হয়।

    প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের শেষ নেই। টার্গেটের কেন্দ্রে তাপমাত্রা বেড়ে কয়েক হাজার সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। মানব দেহসহ সবকিছু মুহূর্তে সম্পূর্ণ 'নাই' হয়ে যায়। ভূ-পৃষ্ঠের পাথরে বা কংক্রিটে কেবল মানব-মানবীর দেহ অবয়বের একটি অস্পষ্ট ছায়াচিহ্ন থেকে যায়। চোখ ধাঁধানো আলো ও মহাপ্রলয়ঙ্করী ঝড় বয়ে যায়। ছাই-ভস্মসহ সবকিছু উড়ে যায় ঊর্ধ্বাকাশে এটম বোমার বিস্ফোরণের সিম্বল, ব্যাঙের ছাতা আকৃতির ধোঁয়ার বিশাল কুন্ডলিতে। হিরোশিমা-নাগাসাকির এই কুকীর্তির বোঝা আটষট্টি বছর পরেও বয়ে চলেছে সেখানকার সন্তান-সন্ততিরা। প্রতিটি মাকে ভয়ে ভয়ে দিন গুনতে হয়, যে সন্তানটি তার ভূমিষ্ঠ হবে সে বিকৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবয়ব নিয়ে জন্মাবে না তো!

    হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপের ঘটনাটি জাপানকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য করা হয়নি। এর আগেই জাপান পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। কিন্তু ঠিক সেই সময়টিতে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে এ্যাটম বোমা নিক্ষেপ করলো কেন? কী ছিল উদ্দেশ্য? হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আমেরিকার এ্যাটম বোমা নিক্ষেপের পেছনে প্রথম উদ্দেশ্য ছিল, ইয়ালটা চুক্তি অনুসারে ইউরোপে যুদ্ধ শেষের পর সোভিয়েত রেড আর্মি যেন এশিয়ার যুদ্ধে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। রেড আর্মি জাপানে বড় রকম অপারেশন শুরু করার আগেই আমেরিকার কাছে একতরফা জাপানি আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করা। এশিয়াকে কমিউনিজমের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার প্রয়াসের অংশ হিসেবেই আমেরিকাকে জরুরি ভিত্তিতে এটম বোমা নিক্ষেপ। কমিউনিজম বিরোধী মার্কিন এই ক্রুসেডের স্বার্থে লাখ লাখ নিরপরাধ জাপানি বেসামরিক নাগরিককে নিমিষে বলি দিতে মার্কিনীরা কুণ্ঠিত হয়নি।

    হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আমেরিকা এটম বোমা ফেলেছিল দ্বিতীয়ত যে কারণে তা হলো, নতুন উদ্ভাবিত এই অস্ত্রটি বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগের একটি পরীক্ষা চালিয়ে দেখা ও দেখানো। এর পরে হাজার হাজার পারমাণবিক বোমা তৈরি ও মজুদ করা হলেও এবং অনেক বড় বড় যুদ্ধের ঘটনা ঘটলেও কোনো ক্ষেত্রেই এখনো সক্রিয়ভাবে এটম বোমা ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি ভূ-পৃষ্ঠে আণবিক বোমার সবধরনের পরীক্ষাও বহু দশক ধরে নিষিদ্ধ রয়েছে। তাড়াহুড়ো করে আমেরিকা তার নব উদ্ভাবিত আণবিক বোমা ব্যবহার করেছিল তৃতীয় যে কারণে তা ছিল রাজনৈতিক। এ্যাটম বোমার মনোপলি তার হাতে থাকায় সেটিকে কাজে লাগিয়ে সোভিয়েত (ও বিশ্বের অন্যান্য সব দেশকে) ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যটি ছিল আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু সে পরিকল্পনা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। অচিরেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আরো শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছিল ও আমেরিকার আণবিক একাধিপত্য ভেঙ্গে দিয়েছিল। কিন্তু মানব ইতিহাসের যা ক্ষতি হওয়ার তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আত্মঘাতী পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এখন যে পরিমাণ পারমাণবিক বোমা আছে তা বিস্ফোরিত হলে এই ভূ-মন্ডল ১৪ বার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। সব পক্ষের হাতে এই মারণাস্ত্র থাকায় এবং বেশি বেশি করে থাকায় কেউ এটি ব্যবহার করতে সাহসী হবে না, এই ডেটারেন্ট (অর্থাৎ অপরকে নিবৃত্ত রাখা) তত্ত্বকে যুক্তি হিসেবে এক্ষেত্রে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। ডেটারেন্ট তত্ত্বকে MAD (Mutually Assured Destruction) নীতি বলে বলা হয়ে থাকে। পৃথিবী আজ আগ্নেয়গিরির মুখে রয়েছে। সব আণবিক বোমা ধ্বংস করে ফেলাসহ পরিপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ, তথা অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া ভূ-মন্ডল ও বিশ্ব সভ্যতাকে বিপদমুক্ত করা যাবে না। বিশ্ববাসীকে আজ বজ্র নিনাদে গর্জে উঠে বলতে হবে, '...ধ্বংস ও যুদ্ধ আর না, আর না!' [https://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDhfMTlfMTNfMV80XzFfNjQ2MzM=]

    আণবিক এবং হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার, প্রয়োগ এবং মজুতকরণের উদ্দেশ্য মানুষের কোনো কল্যাণ করা নয়। বরং উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদে অন্ধ মানুষদের হীণ স্বার্থ উদ্ধার করা। এই সব ভয়াবহ মারণাস্ত্র আবিষ্কার, তৈরি, প্রয়োগ এবং মজুতকরণের পেছনে পৃথিবীর কোনো সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। দায়ী হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং বিজ্ঞান। এই জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং বিজ্ঞান নামগুলোর পেছনে সর্বযুগে কাজ করে কিছু মানুষ; যারা ক্ষমতাধর কিছু দেশের শাসনকার্য এবং বিজ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত মানুষেরই একটা বিশেষ শ্রেণি। এই মানুষগুলো অধিকাংশ সময় এতোই বিবেকহীনতার পরিচয় দেন, ভাবতে ভুলে যান, যুদ্ধ মূলতঃ সৈন্যে সৈন্যে সংঘটিত হয়; সামরিক শক্তির সাথে সামরিক শক্তির সংঘর্ষের নাম যুদ্ধ; সাধারণ মানুষের সাথে যুদ্ধের সরাসরি সম্পর্ক নেই; নিরীহ মানুষের সাথে সামরিক শক্তির সংঘর্ষের নাম যুদ্ধ নয়; নিরীহ মানুষের ক্ষতি করাটা যুদ্ধনীতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। আণবিক বোমার ধারণা, আবিষ্কার, তৈরি, মজুতকরণ এবং প্রয়োগের পেছনে ন্যূনতম কোনো মহৎ উদ্দেশ্য থাকার কথা যদি কেউ বলে থাকে এবং সে নিজেকে ন্যূনতম বিবেকের অধিকারী বলেও দাবি করে, এ প্রশ্নের উত্তরে 'হ্যাঁ' বলা তার পক্ষে সম্ভব হবে না, 'আণবিক বোমা সাধারণ এবং নিরীহ জনগণ ছাড়া শুধু নির্দিষ্ট কোনো সামরিক শক্তির ওপর ব্যবহার করার কি কোনো সুযোগ আছে?'

    নেই। যদি না থাকে, তাহলে আণবিক অস্ত্র তৈরির পেছনে কোন্ মহৎ লক্ষ্য কাজ করে? আণবিক বোমা মানুষের কল্যানের জন্য, নাকি ধ্বংসের জন্য?
    আণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, নিউট্রন বোমা এইসব ভয়াবহ মারণাস্ত্র মানবজাতির কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণের জন্যই তৈরি করা হয়। তাহলে যারা এসব মারণাস্ত্র তৈরির পেছনে কাজ করে, তাদেরকে 'সাধারণ মানুষ' বলার কি কোনো সুযোগ থাকে? তারা 'ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ', দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ, তারা মানুষরূপী শয়তান। এরকম কিছু শয়তান সর্বযুগে মানবজাতির ক্ষতি করে এসেছে। এখনও দেশে দেশে এরকম দুষ্ট প্রকৃতির অনেক লোকের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান তৎপরতার কথা পৃথিবীর সচেতন অনেকেই জানে। এদের সব দুষ্টকর্মের কথা কি এরা প্রকাশ করবে; কোনো অপরাধ করে কি তা সবার কাছে বলে বেড়াবে? জাপানে বোমা ফেলার পর আমেরিকাও এই কথা অনেকদিন গোপন রাখে যে, এটি একটি তেজস্ক্রিয় এটম বোমা ছিল। হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতার কথা বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে চার সপ্তাহ পরে। ফলে আণবিক তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করার সুযোগ থেকে মৃত্যুপথযাত্রীদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। ফলে ডাক্তাররাও সঠিক ধারায় চিকিৎসা কাজ অগ্রসর করতে পারেনি। শুধু এ কারণেই মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।

    উপরের সব আলোচনার উপসংহার হিসেবে এটা ধরে নেয়া যায়, উহানের বাতাসে তেজস্ক্রিয় জাতীয় কিছু একটা ছড়িয়ে পড়েছিল বলে উহানের মানুষ ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করে এবং মারা যেতে শুরু করে। সেটা ভাইরাস জাতীয় কিছু ছিল না বলে অন্য অনেক দেশের অসংখ্য মানুষ উহানের সাথে সম্পর্ক ছাড়া এবং কোনো করোনারোগীর সংস্পর্শ ছাড়া একই ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করে, উহানে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর, আগে নয়। এই কথা প্রমাণ করে, করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' নয়, তেজস্ক্রিয় জাতীয় কিছু, যা উহানের বাতাসের সাথে মিশে যাবার কারণে উহানের মানুষ তীব্র ফসুফুসের সংক্রমণে ভুগতে শুরু করে, মাস্ক, পিপিই কোনো কাজে আসেনি। অসংখ্য চিকিৎসাকর্মীও, যারা এই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার সব উপায় অবলম্বনের পরও এতে আক্রান্ত হয়। ভাইরাস হলে অন্তত যারা পুরোপুরি সুরক্ষমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তারা আক্রান্ত হতো না। যদি কোনো ভাইরাস না হয়, তাহলে কিভাবে উহান এবং করোনারোগীর সাথে কোনো রকম সম্পর্ক ছাড়াই অন্য দেশের মানুষও এতে আক্রান্ত হয়, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা এটা খুঁজি, কেন উহানের বাতাসে তেজস্ক্রীয় কিছু মিশেছিল বলে মনে হচ্ছে এবং কোন্ ধরনের তেজস্ক্রীয় বস্তু মিশেছিল?

    উহানের বাতাসে তেজস্ক্রিয় জাতীয় কিছু একটা মিশেছিল, এই অনুমাণের কিছু কারণ:
    (এক) অতিক্ষুদ্র ভাইরাস নামক কিছু মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না, এটা এই লেখায় পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত যেগুলোকে করোনাভাইরাসের কারণ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, সেগুলো যে সত্যিই করোনাভাইরাসের কারণ নয়, সে সম্পর্কে তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা শেষে সেখানে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস কোত্থেকে জন্ম নিল বা করোনাভাইরাসের প্রকৃত কারণ কী, এই প্রশ্নের কোনো উত্তরই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
    যেসব বিষয়গুলোকে (সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারে গমন, বাদুড়, হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুড়, ভোঁদড়, বনরুই, সাপ, বেলুগা, তিমি, বাজারটিতে বিক্রিত অনেক জীবন্ত প্রাণী যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ খাওয়া) এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণ বলে প্রচার করা হয়েছে, সত্যিই সেসব কোনো কারণে করোনাভাইরাসের উপদ্রব হলে করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বলার সুযোগ থাকতো। কারণ সেসব কারণের সাথে 'ছোঁয়াচে' বা ভাইরাস হবার সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু প্রচারিত কোনো কারণ করোনাভাইরাসের উপদ্রবের জন্য দায়ী নয় বলে যখন সাব্যস্ত হলো, তখন করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বলার কি কোনো সুযোগ থাকে?

    ঐ অধ্যায়ের শেষে দৈনিক সংবাদে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত 'যেভাবে ছড়াল করোনাভাইরাস' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন থেকে একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়, যেখানে বলা হয়, 'নতুন এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ কোথা থেকে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।'

    'China reports 1st death from new type of coronavirus' শিরোনামে এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By The Associated Press) বলা হয়, 'China says the cause of the Wuhan outbreak remains unknown, but has sought to quash speculation that it could be a reappearance of the SARS epidemic, which killed hundreds in 2002 and 2003.' [https://abcnews.go.com/Health/wireStory/china-reports-1st-death-type-coronavirus-68209413]

    তাছাড়া করোনাভাইরাস সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত '2019–20 Wuhan coronavirus outbreak (নিবন্ধটির শিরোনাম বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো হালনাগাযোগ্য)' শিরোনামের একটি নিবন্ধসহ অনেক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনেক নিবন্ধ ও প্রতিবেদনে চীনের উহানের মানুষকে ব্যাপকহারে আক্রমণকারী এই রোগকে ‘অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া’ বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে।

    যেহেতু করোনাভাইরাসের কোনো কারণ এখনো সঠিক বলে প্রমাণ করা যায়নি, তাই যে কারণগুলো এ পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছে, সেগুলো সত্যিকারার্থে করোনাভাইরাসের কোনো কারণ নয়, বরং এগুলো নিছক অনুমাণ অথবা করোনাভাইরাসের কারণ বলে উদ্দেশ্যমূলক প্রচার। যদি কারণ বলে প্রমাণিত হতো, তাহলে হয়তো করোনাভাইরাস একটা ভাইরাস হবার সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু সত্যিকারার্থে করোনাভাইরাসের কোনো কারণ নেই। কিন্তু কারণ ছাড়া তো আর উহানের মানুষ আকস্মিকভাবে ব্যাপক হারে মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়ায় ভুগতে শুরু করেনি। যেহেতু সমস্যাটা ফুসফুস সংক্রমণ, তাই বুঝাই যায় এটা বাতাসের সাথে মিশে ফুসফুসে কিছু প্রবেশ করা থেকেই সৃষ্ট।

    (দুই) নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগগুলো বায়ুর মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে না বলে এ নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যদি ছড়াতে না পারে তাহলে করোনাভাইরাস কিভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়াবে, যেহেতু এর ফলে মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, এমনকি নিউমোনিয়ার লক্ষণে আর এ ভাইরাসের লক্ষণে তেমন একটা ব্যবধান নেই।
    যেহেতু নিউমোনিয়া একজন থেকে আরেকজনে ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই, তাই এটা হবার সম্ভাবনাই বেশি, উহানের বাতাসের সাথে কোনো বিষাক্ত বস্তু মিশে যাবার ফলেই মানুষ 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' তথা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। সেই বিষাক্ত বস্তু নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যেসব মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করেছে, তারাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

    (তিন) ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ নেই। শুধু নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা নয়, কনজাংটিভাইটিস এবং পক্সও যে ছোঁয়াচে নয়, সে সম্পর্কেও ইতোপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ না থাকে, তাহলে এই ভাইরাস কিভাবে 'ভাইরাস' হয়ে বায়ুর মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াবে! সম্ভব নয়। এটা উহানের মানুষকে সরাসরি আক্রমণকারী বায়ুতে মিশ্রিত কোনো বিষক্রিয়া থেকে সৃষ্টি হবার সম্ভাবনাই বেশি।

    অতীতের মহামারীগুলো কি ছোঁয়াচে ছিল?
    যক্ষা, প্লেগ, কলেরা সহ আরো কিছু রোগ আছে, যেগুলোকেও ছোঁয়াচে বলে প্রচার করা হয়। করোনাভাইরাসের আগে পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময় ছোট-বড় অনেক মহামারী হয়েছে বলে আমরা জানি। এই মহামারীগুলোকে মহামারী বলা হয় বিশেষ করে এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এই মহামারীগুলোর সময় নির্দিষ্ট কিছু রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে রোগটি ভয়াবহ/ব্যাপক আকার ধারণ করার ফলে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে।
    কিন্তু প্লেগ, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাপক মানুষকে আক্রমণ করাকে মহামারী বলে আখ্যায়িত করা হয় এই দৃষ্টিকোণ থেকে নয় যে, যে কোনো কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

    শুধু 'নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট একটা রোগে অসংখ্য মানুষের আক্রান্ত হওয়া এবং প্রাণ হারানোর ঘটনা'কে মহামারী বলে আখ্যায়িত করতে অসুবিধা কোথায়? সেখানে রোগটি কি একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে ব্যাপক হয়েছে, নাকি একজন থেকে আরেকজনে ছড়ানো ছাড়া ব্যাপক হয়েছে, সেই বিষয়ের সাথে 'রোগটি ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা'কে মহামারী বলে আখ্যায়িত করা বা না করার সম্পর্ক কী?
    কোনো সম্পর্ক নেই।

    যক্ষা, প্লেগ, কলেরা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কনজাংটিভাইটিস এবং পক্স এরকম যে রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে মনে করা হয়, যদি পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলে যে কোনো সময় এই রোগগুলোতে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির আক্রান্ত হবার ঘটনাকে কোনো কারণ ছাড়াই আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রমাণ করা যেতো, তাহলে ধরে নেয়ার সুযোগ থাকতো প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিটি কোনো কারণ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে আর পরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তিটির (যদি যে কোনো মহামারীতে প্রথমে মাত্র ১ জন দিয়ে রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায়) আক্রান্ত হওয়াকে যেমন কখনোই কোনো কারণ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তেমনি পরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়াকেও আগের আক্রান্তদের কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। বিষয়টা সম্পূর্ণ অনুমান-নির্ভর।

    কোনো পরিবারে বা এলাকায় একজনের এরকম কোনো রোগ হবার পর আরেকজন বা আরো কয়েকজন রোগটিতে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোই শুধু আমরা দেখি এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করেই রোগটি সম্পর্কে মনে মনে একটি ধারণা (ছোঁয়াচে হওয়া) লালন করি। কিন্তু দেখি না, ১. কোনো পরিবারে বা এলাকায় প্রথমে যে লোক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, সে কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে? ২. এমন অনেক পরিবারে/এলাকায় অনেক মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, যার কাছ থেকে তার এলাকা, পরিবার বা কর্মস্থলের আর কেউ আক্রান্ত হয় না। ৩. মাঝে মাঝে এমন ঘটনাও ঘটে, কোনো পরিবার বা এলাকায় খুব কাছাকাছি সময়ে বা একই সাথে একাধিক সদস্য রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

    এই বিষয়গুলো ভালোভাবে ভাবলে রোগগুলো নিয়ে আমাদের চোখের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। রোগগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা পাল্টে যেতে পারে। যারা রোগগুলোকে 'ছোঁয়াচে নয়' ভাবতে কষ্ট হয়, তাদের নিকট প্রশ্ন: ধরুন, একটি পরিবারে বা এলাকায় পর্যায়ক্রমে তিনজন লোক এই রকম কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আপনার কি মনে হয়, যদি ছোঁয়াচে না হতো তাহলে তিনজন একই দিনে একই সাথে রোগটিতে আক্রান্ত হতো? শুধু কি কোনো রোগ ছোঁয়াচে হলেই একসাথে সবাই ঐ রোগে আক্রান্ত না হয়ে একজনের পর আরেকজন আক্রান্ত হয়, ছোঁয়াচে না হলে এমন হতে পারে না? কোথায় বাধা?

    যারা রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তারা কেউই এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গত উত্তর দিতে পারবেন না। সংক্রামক রোগ নয়, অসংক্রামক কোনো রোগও একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে একই দিনে সাধারণত আক্রমণ করে না। প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে যদি আপনি হিমশিম খান, তাহলে নতুন করে ভাবুন, ছোঁয়াচে না হলেও যদি একই পরিবারে একাধিক মানুষ রোগটিতে একসাথে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে, বরং কখনো একজনের পর আরেকজন, কখনো কয়েকজন একসাথে আক্রান্ত হয়, তাহলে রোগটি ছোঁয়াচে হয় কী করে? ছোঁয়াচে হিসেবে তখন তো রোগটির আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকে না!

    কোনো রোগকে ছোঁয়াচে বলে অপবাদ দেয়ার আগে ভাবতে হবে, যদি তা সত্যিই ছোঁয়াচে হয়, তাহলে প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি কোত্থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হলো? যদি প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি ছোঁয়াচে হওয়া ছাড়া আক্রান্ত হতে পারে কোনো জানা বা অজানা কারণে, তাহলে একই কারণে প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হবার কাছাকাছি সময়ে বা পরে আরো আরো লোক ঐ রোগে আক্রান্ত হতে পারে ঐ কারণেই, যে কারণে প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে।
    ছোঁয়াচে বলে প্রচারিত রোগগুলোকে যেভাবে ছোঁয়াচে বলে মানুষ বিশ্বাস করে, মনে হয় প্রথম আক্রান্ত লোকটি বা লোকগুলোও তার/তাদের পরে আক্রান্তদের কাছ থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে!

    ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে মনে হওয়া কোনো রোগ কোনো পরিবার বা এলাকায় সংক্রমণ শুরুর পর রোগটি একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হবার ধারণাটা সম্পূর্ণ অনুমান-নির্ভর। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ধারেকাছে সুস্থ কেউ যাবার পর ঐ সুস্থ ব্যক্তিও যদি রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখনই ধরে নেয়া হয় রোগটি নিশ্চয়ই ছোঁয়াচে। কিন্তু এই অনুমান ছাড়া রোগটি ছোঁয়াচে হবার পেছনে কোনো প্রমাণ নেই।

    কোন্ অনুমান বেশি সঠিক হতে পারে? ১. যে কোনো পরিবার বা এলাকায় প্রথম আক্রান্ত এক বা একাধিক লোক ছোঁয়াচে বলে মনে হওয়া কোনো রোগে নির্দিষ্ট কোনো কারণেই (হয়তো আমরা জানি না) আক্রান্ত হয়, নাকি ২. প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোনো কারণ ছাড়াই রোগটিতে আক্রান্ত হয় আর পরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথমে আক্রান্ত লোক/লোকদের কাছ থেকেই আক্রান্ত হয়?

    প্রথমে আক্রান্তরা নির্দিষ্ট কোনো কারণেই একটা রোগে আক্রান্ত হয়, এই কথা কি অবিশ্বাস করার সুযোগ আছে? নেই। কিন্তু পরে আক্রান্তরাও যেহেতু একই পরিবার বা এলাকার লোক, তাই পরের আক্রান্তরাও ঐ একই কারণে আক্রান্ত হতে পারবে না কেন? কোনো বাধা আছে?
    পৃথিবীতে ইতোপূর্বে যে মহামারীগুলো হয়েছে, সেগুলোতে প্রথম যে বা যারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা যে এলাকায় বসবাস করতো, সে এলাকায় বসবাসকারী আরো লোক ঐ একই রোগে আক্রান্ত হওয়াকে ছোঁয়াচে মনে করার কী প্রয়োজন? ঐ এলাকায় বসবাসকারী প্রথম আক্রান্ত লোকেরা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, পরবর্তীতে আক্রান্ত লোকেরাও সে কারণেই আক্রান্ত হয়েছে। ঐ এলাকার বায়ু বা পরিবেশে নিশ্চয়ই কোনো দোষ ছিল। যে দোষ অসংখ্য মানুষকে রোগাক্রান্ত করে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। সবাইকে একই সাথে রোগাক্রান্ত না করে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত করার মানে এটা নয় যে, মহামারীটি ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত ছিল।

    চীনে অবশ্য প্রথমে কতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, এ সম্পর্কে আগেও আলোচনা করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আবারো এই সম্পর্কে আলোচনা করতে হচ্ছে। এক বর্ণনামতে প্রথমে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। ''চীনে 'ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যজনক' ভাইরাস, আক্রান্ত ৪৪'' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ''চীনের মধ্যাঞ্চল ইউহান শহরে 'রহস্যজনক' নিউমোনিয়ার আক্রমণ দেখা দিয়েছে যাতে এখনো পর্যন্ত অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে।
    শুক্রবার কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত রহস্যজনক এই ভাইরাসে ৪৪ জন আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর।'' [https://www.bbc.com/bengali/news-50991318]

    এক বর্ণনায় বলা হয়েছে প্রথমে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৪১ জনকে। 'China reports 1st death from new type of coronavirus' শিরোনামে এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The Wuhan Municipal Health Commission said seven other people were in critical condition among a total of 41 who were suffering from pneumonia caused by a "preliminarily determined new type of coronavirus” as of Friday.' [https://abcnews.go.com/Health/wireStory/china-reports-1st-death-type-coronavirus-68209413]

    এক বর্ণনামতে প্রথমে আক্রান্ত ২৬৬ জন। 'First Covid-19 case happened in November, China government records show – report' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ১৩ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (by Helen Davidson in Hong Kong) বলা হয়, 'The first case of someone suffering from Covid-19 can be traced back to 17 November, according to media reports on unpublished Chinese government data.

    The report, in the South China Morning Post, said Chinese authorities had identified at least 266 people who contracted the virus last year and who came under medical surveillance, and the earliest case was 17 November – weeks before authorities announced the emergence of the new virus.
    The Chinese government was widely criticised over attempts to cover up the outbreak in the early weeks, including crackdowns on doctors who tried to warn colleagues about a new Sars-like virus which was emerging in the city of Wuhan in Hubei province.' [https://www.theguardian.com/world/2020/mar/13/first-covid-19-case-happened-in-november-china-government-records-show-report]

    আরেক বর্ণনামতে প্রথমে আক্রান্ত হয় প্রায় ২০০ জনের মতো মানুষ। জার্মানের ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে 'চীনে নতুন ভাইরাস, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা' শিরোনামে ২০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মারণ ভাইরাসের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে চীনে। মধ্য চীনের ইউহান প্রদেশে নতুন করে ১৩৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। বেজিং জানিয়েছে, এই নিয়ে মোট ২০০ জন আক্রান্ত হলেন করোনা ভাইরাসে।' [https://www.dw.com/bn/a-52064423]

    প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি কে, একজন, নাকি অনেক, তা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে কেউ আসতে পারছে না। দৈনিক জনকন্ঠে 'করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি কে?' শিরোনামে ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৪৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখন্ডেই মারা গেছে দুই হাজার ৪৪৪ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ হাজার ৯৪৭ জন। এই অবস্থায় চীন কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির (জিরো পেশেন্ট) খোঁজ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
    যে কোনো একটা বিশেষ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটিকে বলা হয় 'পেশেন্ট জিরো'। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকে চিহ্নিত করা খুবই জরুরি। কেন, কীভাবে এবং কোথায় এই সংক্রমণের সূচনা হয়েছিল, তা কেবল তার মাধ্যমেই জানা সহজ হবে। কেননা নিঃসন্দেহে তিনিই চলমান এই করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎস।

    সংক্রমণের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতে এর প্রাদুর্ভাব ঠেকানো-দু কারণেই পেশেন্ট জিরোকে চিহ্নিত করা জরুরি। তবে সেই ব্যক্তি আসলে কে-চীনের কর্তৃপক্ষ আর বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে একমত নন। তাকে চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান এখনও চলছে।' [https://www.dailyjanakantha.com/details/article/482607]

    'Who is 'patient zero' in the coronavirus outbreak?' শিরোনামে বিবিসি ফিউচারে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Fernando Duarte) বলা হয়, 'Do we know who patient zero is in the Covid-19 coronavirus outbreak that started in China?
    The short answer is – no.' [https://www.bbc.com/future/article/20200221-coronavirus-the-harmful-hunt-for-covid-19s-patient-zero]

    করোনাভাইরাসে প্রথমে কতজন লোক আক্রান্ত হয়েছে, সে সম্পর্কে এই প্রতিবেদনগুলো থেকে পরিষ্কার ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়। তবে অধিকাংশ প্রতিবেদন প্রথমে একাধিক লোক একসাথে আক্রান্ত হবার পক্ষে কথা বলে। এমনকি সবশেষে উল্লেখিত প্রতিবেদন সরাসরি বলে দেয়, চীনে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে পেশেন্ট জিরো নামে কেউ নেই! তার মানে একাধিক লোক একসাথে প্রথমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে বলতে হবে এই একাধিক লোকের কে কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাদের মাথা ঘুরে যাবে, যারা এই ধরনের মহামারীকে ছোঁয়াচে বলে ভাবতে পছন্দ করে।

    যদি প্রথমে একাধিক লোক একসাথে আক্রান্ত হতে পারে, তাহলে যে কারণে প্রথমে আক্রান্তরা আক্রান্ত হয়েছে, সে কারণেই একই এলাকার পরে আক্রান্তরা আক্রান্ত হতে পারবে না কেন? কেন?

    বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে আমরা প্রথমে আক্রান্তদের আক্রান্ত হবার পেছনের কারণ নিয়ে না ভেবে বা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে ছোঁয়াচে রোগের ধারণায় অতি বিশ্বাসী হবার কারণে পরে আক্রান্তদের আক্রান্ত হবার মনগড়া কারণকেই (ছোঁয়াচে হওয়া) করোনাভাইরাস ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণ ধরে নিয়ে সে অনুযায়ী মহামারীটিকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়েছি বলেই মহামারীটি তার নিজ গতিতেই এগিয়ে যেতে থাকে, আমাদের প্রতিরোধের চেষ্টা চেষ্টাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়, কোনো কাজে আসে নি।

    যেমন উহানকে ২৩ জানুয়ারি লকডাউন করা হয়েছে, উহানের সব মানুষ নিজেদের বাসায় স্বেচ্ছাবন্দী জীবন কাটাতে শুরু করেছে, উহানের যে মাছের বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা বা প্রচার করা হয়, ওই বাজারটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, উহানের মানুষ মাস্ক ব্যবহার সহ ছোঁয়াচে রোগ বা ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার জন্য আরো যা যা করা দরকার, করেছে, তবু কি রোগটির আক্রমণ থেকে বাঁচতে পেরেছে? বাঁচতে পারেনি, কারণ ছোঁয়াচে রোগ বলে ধরে নিয়ে সব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ফলে রোগটির প্রকৃত কারণটি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে; যতক্ষণ ধরে আক্রমণ করার কথা, ততক্ষণ আক্রমণ করেছে কোনো বাধা না পেয়ে আর চুপি চুপি হেসেছে একটি চরম ভুলধারণায় মানুষের অতিবিশ্বাস এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া দেখে।

    'করোনাভাইরাস একটি ভাইরাসজনিত বা ছোঁয়াচে রোগ' পুরো পৃথিবীর সবাই এই ধারণায় বিশ্বাস করার কারণে করোনাভাইরাসে যারা আক্রান্ত হয়নি, তাদের জীবনেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, নেমে এসেছে রাজ্যের অন্ধকার। শুধু তাই নয়, এই ধারণা মাথায় রেখে করেনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যেসব পদক্ষেপ (লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন ইত্যাদি) নেয়া হয়েছে সেসব পদক্ষেপ কয়েক মাসের জন্য করোনায় আক্রান্ত হয়নি, এমন কোটি কোটি মানুষের জীবনকেও নরক বানিয়ে ছেড়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ভেবে দেশে দেশে অসংখ্য মানুষ নানাভাবে প্রাণ হারিয়েছে করোনায় আক্রান্ত না হয়েই। অনেকে চিকিৎসায় সীমাবদ্ধতার কারণেও মারা গেছে। কোটি কোটি মানুষ সাময়িক বেকার হয়ে গেছে; ২৪ ঘন্টা একসাথে থাকার কারণে অনেক দম্পতির মধ্যে দাম্পত্য কলহের মাত্রা তীব্র হয়ে ছাড়াছাড়িও হয়ে গেছে; অনেক মানুষ অভাব ও ক্ষুধার জ্বালায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে; সর্বোপরি কোটি কোটি মানুষ করোনাভুত এবং মৃত্যুভয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছে সীমাহীন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে।
    করোনাকে ছোঁয়াচে রোগ হিসেবে প্রচার করা না হলে প্রতিরোধব্যবস্থা এবং পৃথিবীর অবস্থা কী হতো, তা নিয়ে একটু পরেই আলোচনা করা হবে।

    উহানে প্রথমে অনেকগুলো মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাই বেশি। এ সম্পর্কিত অধিকাংশ প্রতিবেদন এই মতামতের পক্ষেই কথা বলে। প্রথমে যদি একসাথে অনেকগুলো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে তারা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, পরবর্তীতে আক্রান্তরা সেই একই কারণে আক্রান্ত হওয়াটা কি অসম্ভব? পরবর্তীতে আক্রান্তদেরকে প্রথমে আক্রান্তদের কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে গণ্য করাটা পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ সুযোগ ছিল করোনাকে ছোঁয়াচে বলে ঘোষণা না দেয়ার। কিন্তু খুব সম্ভবত তিনটা কারণে করোনাকে ছোঁয়াচে বলে ঘোষণা দেয়া হলো: (১) নিউমোনিয়াসহ অনেকগুলো রোগকে বিজ্ঞান আগ থেকেই ছোঁয়াচে বলে প্রচার করে, (২) জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এরকম কিছু অদৃশ্য বস্তুকে বিজ্ঞান মানুষ থেকে মানুষে রোগ ছড়ানোর জন্য আগ থেকেই দায়ী করে আসছে, (৩) প্রথম দু'টো বিষয় অনুকূলে থাকার কারণে যখন দেখা গেলো উহানে বিষাক্ত কিছু অসাবধানতাবশতঃ বা ইচ্ছাকৃত ছড়িয়ে পড়েছে/ছড়ানো হয়েছে, তখন তা ঢাকার জন্য বিজ্ঞানের প্রথম দু'টো ধারণার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখার প্রয়াস চালানো হলো মাত্র।

    মূলত করোনাভাইরাস উহানের সি ফুড মার্কেট থেকেও ছড়ায়নি। উহানের বায়ুতে মিশ্রিত কোনো কৃত্রিম বিষ থেকেই মানুষ ব্যাপক হারে নিউমোনিয়ায় ভুগতে শুরু করে।
    'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটির সন্ধান চলছে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনে যে ৭৫ হাজারেরও বেশি লোকের দেহে এ সংক্রমণ ঘটেছে- তার ৮২ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে এই হুবেই অঞ্চল থেকে। এ তথ্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির।

    কিন্তু চীনা গবেষকদের এক জরিপ যা ল্যান্সেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয় কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণ চিহ্নিত হয় একজন লোকের দেহে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর।
    সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে উহান শহরের ওই বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে এটি ঠিক যে, প্রথম দিকে যে ৪১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন- তার মধ্যে ২৭ জনই উহানের সেই বাজারের সংস্পর্শে এসেছিলেন।' [https://www.jugantor.com/international/281953]

    এখানে যে ব্যক্তিটিকে প্রথমে আক্রান্ত বলে মনে করা হয়েছে, সে প্রথম আক্রান্ত না হলেও করোনায় আক্রান্ত, এটা নিশ্চিত এবং এটাও নিশ্চিত, সে উহানের সি ফুড মার্কেট থেকে আক্রান্ত হয়নি। করোনাভাইরাস যদি উহানের সি ফুড মার্কেট থেকে ছড়াতো, তাহলে সে ঐ সি ফুড মার্কেটের সাথে সম্পর্কিত হওয়া ছাড়া কিভাবে আক্রান্ত হলো?
    করোনাভাইরাস কোনো ছোঁয়াচে রোগও নয়। যদি ছোঁয়াচে হতো, তাহলে ৪১ জনের মধ্যে যে ১৪ জন উহানের সি ফুড মার্কেটে যায়নি, এমনকি সি ফুড মার্কেটে যাওয়া ২৭ জনের সাথে সম্পর্কিত নয়, তারা কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হলো?

    (চার) আমরা আগেই আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জেনেছি, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু  বা ভাইরাস একজন মানুষের শরীর থেকে কোনো রোগ আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। যদি না রাখে, তাহলে করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ হবে কিভাবে? যদি ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত না হয়, তাহলে উহানে প্রথম অল্প কিছু লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হতো না। প্রথমে অল্প কিছু লোক আক্রান্ত হবার পরও উহানের হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা প্রমাণ করে, উহানের বাতাসে কিছু একটা মিশে গিয়েছিল, যা যার নিঃশ্বাসের সাথেই ফুসফুসে প্রবেশ করেছে, সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

    (পাঁচ) সাধারণ নিউমোনিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিকে উপকার হতো। কিন্তু উহানে ছড়িয়ে পড়া 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' সাধারণ নিউমোনিয়ার চেয়ে একটা জায়গায় বেশ ভিন্ন : এই নিউমোনিয়া সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো অ্যান্টেবায়োটিকে সারে না। তাই শুধু একে ‘'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া' বললে হবে না; বলতে হবে 'অজ্ঞাত কারণে এবং অ্যান্টেবায়োটিক অকার্যকরী নিউমোনিয়া'। এই নিউমোনিয়া কেন ভিন্ন একটা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলো, তা খুঁজতে গেলেই এই অনুমাণ সত্যের কাছাকাছি চলে আসবে, করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়া কোনো তেজস্ক্রিয়ারই ক্ষতিকর ফল।

    (ছয়) বিশ্বের আর কোনো দেশে নয়, চীনে কেন এই ভাইরাসের উপদ্রব দেখা দিলো? যেসব দেশ নিরীহ, যেসব দেশের কাছে পরমাণু অস্ত্র নেই, যেসব দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চেতনা নেই, যেসব দেশের বিশ্ববাজার একচেটিয়া দখল করার দুরন্ত মানসিকতা নেই, বাণিজ্যযুদ্ধে আগ্রহ নেই যেসব দেশের, চীনের মতো যেসব দেশে সি ফুড মার্কেট আছে, সেসব কোনো দেশে এই ভাইরাসের উপদ্রব না হয়ে চীনে কেন হলো?

    ভাবনার দিক আরেকটু পরিবর্তন করা যাক।


    (সাত) চীনের অতি প্রসিদ্ধ শহর বেইজিং, সাংহাই, শেনজেন, গুয়াংজৌ ইত্যাদিকে বাদ দিয়ে করোনাভাইরাস কেন হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানকে বেছে নিল নিউমোনিয়া প্রসবের উত্তম স্থান হিসেবে? অন্য প্রদেশের কোনো শহরের কথা না হয় বাদ দিলাম, হুবেই প্রদেশেও কি উহান ছাড়া আর কোনো শহর ছিল না?

    উহান শহরে সি ফুড মার্কেট ছিল বলে? সি ফুড মার্কেট কি চীনে আর কোনো শহরে নেই?
    এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সহায়তা করতে পারে একটি প্রতিবেদন, যা দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে ২৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'রাসায়নিক অস্ত্রের কারখানা থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাস?' শিরোনামে। পুরো প্রতিবেদন দেখা যাক:
    'সার্স বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের মতো উপসর্গ। পরিণতি ভয়ঙ্কর মৃত্যু। রহস্যময় নোভেল করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি) সংক্রমণ কি সত্যিই উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছে?

    আর পাঁচটা করোনাভাইরাসের থেকে আলাদা এই ভাইরাসের উৎস কোথায়? সত্যিই কি ভাইরাস, না মারণাস্ত্র? এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
    ইসরাইলি সেনা-গোয়েন্দা এবং মাইক্রোবায়োলজিস্টদের মতে এই ভাইরাসের জন্মদাতা উহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল-৪ (বিএসএল-৪) ল্যাবরেটরি।
    ১০ বছর ধরে নির্মিত এ কারখানাটি ২০১৮ কার্যক্রম শুরু করে চীন। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ।
    প্রশ্ন আরও উঠেছে। সত্যিই কি ল্যাবরেটরি থেকে অসতর্কতাবশত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা। ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে কি নিজেদের শক্তি জাহির করতে চাইছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি? সম্প্রতি এক রিপোর্টে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের দাবি, সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড এই আরএনএ ভাইরাসকে তৈরি করা হয়েছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবলে শত শত প্রাণনাশ করা সম্ভব। উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল দীর্ঘ সময় ধরেই। হয় সেখান থেকেই ভাইরাস কোনোও ভাবে বাইরে চলে গেছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
    চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নানাবিধ অপকর্ম বিষয়ক গবেষক মাইলস গুয়ো ভারতীয় দৈনিক জিনিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভাইরাস যে দুর্ঘটনাক্রমে কারখানা থেকেই ছড়িয়েছে পরিস্থিতি শান্ত হলেই তা স্বীকার করবে সিসিপি। সরকারের সবুজসংকেত পেলেই এ ঘোষণা দেবে দল। দুর্ঘটনার পরপরই গোপনে কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান।

    ২৫ জানুয়ারির ওই সাক্ষাৎকারে গুয়ো আরও বলেন, 'সংক্রমণ ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে এবং ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হবে- কারখানা ঘুরে এসে নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সে কথাই বলেছিলেন কিশান।'
    ২০১৫ সালে রেডিও ফ্রি এশিয়ার একটি রিপোর্টে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে ভয়ংকর, প্রাণঘাতী সব ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এর অর্থ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে বেইজিং। পরবর্তীকালে ইজরাইলি সেনা-গোয়েন্দা দফতরের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম বলেছিলেন, বায়ো-ওয়ারফেয়ারের জন্য তৈরি হচ্ছে চীন।

    জিনের কারসাজিতে এমন ভাইরাস তৈরি করা হচ্ছে যার প্রভাব হবে সাঙ্ঘাতিক। প্রতিরোধের আগেই মহামারীর চেহারা নেবে এসব ভাইরাসের সংক্রমণ। যে দেশের ওপর আঘাত হানা হবে, সেখানে মৃত্যুমিছিল শুরু হবে।
    ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল। মহামারীর আকার নিয়েছিল 'সার্স' (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)। চীনের মূল ভূখন্ডেই মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৪০০ জনের। হংকংয়ে অন্তত ৩০০।

    ২০০৯ সালে ফের সোয়াইন ফ্লুয়ের ছোবল। শয়ে শয়ে মৃত্যু। সরকারি হিসেবেই সংখ্যাটা ছিল সাতশ'র কাছাকাছি। সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তো বটেই আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDCP) জানিয়েছিল, ওই ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস নিয়ে কাজ হলেও গবেষকরা অনেক বেশি সচেতন থাকেন।

    ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে এই ল্যাবরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং, যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু।

    রিপোর্টে বলা হয়, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর থেকেই উহানে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে- এই তথ্যও মানতে রাজি নন ইসরাইলি মাইক্রোবায়োলজিস্টরা। তাদের দাবি, অনেক আগে থেকেই নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল।

    ডাক্তাররা বলেছিলেন উহান নিউমোনিয়া রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চুপিচুপি চিকিৎসা চলছিল। পরে মানুষের থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে হু হু করে। উহানের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ৪১ জন রোগীর প্রথম চেস্ট এক্স-রে হয়, তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেও দেখা যায়- কোনো খোলা বাজার থেকে বা পশুপাখির সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়নি।
    এই সংক্রমণের পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। চীন সরাসরি না বললেও মার্কিন এ দৈনিকের খবর, সব ক্ষেত্রেই নাকি দেখা গেছে, ভাইরাসটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়ায়নি। তাহলে কি সত্যি এটি জৈব-রাসায়নিক মারণাস্ত্র? উত্তর এখনও অধরা।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/272558]

    এই প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত যে তথ্যগুলোকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই, সেগুলো হলো:

    (এক) চীনের উহানে রয়েছে জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা, যা ১০ বছর ধরে নির্মাণ করার পর ২০১৮ সালে কার্যক্রম শুরু করে।
    (দুই) উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল দীর্ঘ সময় ধরেই।
    (তিন) ২০১৫ সালে রেডিও ফ্রি এশিয়ার একটি রিপোর্টে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে ভয়ংকর, প্রাণঘাতী সব ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এর অর্থ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে বেইজিং। পরবর্তীকালে ইজরাইলি সেনা-গোয়েন্দা দফতরের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম বলেছিলেন, বায়ো-ওয়ারফেয়ারের জন্য তৈরি হচ্ছে চীন।
    (চার) ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে এই ল্যাবরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং, যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু।
    (পাঁচ) চীন সরাসরি না বললেও মার্কিন এ দৈনিকের খবর, সব ক্ষেত্রেই নাকি দেখা গেছে, ভাইরাসটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়ায়নি।

    এই তথ্যগুলো সামনে রেখে যদি এই প্রতিবেদন উল্লেখের আগে সর্বশেষ পয়েন্টে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তর খোঁজা হয়, তাহলে এই প্রতিবেদনের বক্তব্যকে বা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সম্ভাবনাকে প্রশ্নগুলোর নিশ্চিত উত্তর হিসেবে মেনে নিতে কোনো সচেতন মানুষের আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রশ্নগুলো আর এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো সামনে রাখলে কোনো সম্ভাবনামূলক কথাকেই 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বলে চালিয়ে দেয়ার আর সুযোগ থাকবে না।

    এই ল্যাবরেটরি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর এই ল্যাবরেটরির নামের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু চীন কি নিজ দেশের নাগরিকদের কাছে বা বিশ্বের কাছে কখনো এই ল্যাবরেটরি স্থাপনের কোনো উদ্দেশ্যের কথা প্রকাশ করেছে? মনে হয় না। চীন কেমন নিয়ন্ত্রিত দেশ, তা বিশ্ববাসী জানুক আর না জানুক, চীন নিজে তা ভালোভাবে জানে। উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বমিডিয়ার চীনে বা চীনের উহানে প্রবেশে শক্ত বিধিনিষেধ ছিল, কেন ছিল সেই বিধিনিষেধ? অন্তত এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সামান্য ভাবলেই প্রশ্নগুলোর উত্তরের সহজ সূত্র বের হয়ে পড়বে। চীন একটি নিয়ন্ত্রিত দেশ হওয়াটাও এই প্রতিবেদনের সম্ভাবনাকে নিশ্চয়তার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। চীন কি এই প্রশ্নের উত্তরে 'হ্যাঁ' বলবে, যদি চীন না হয়ে চীনের মতো প্রভাবশালী, তবে এতোটা নিয়ন্ত্রিতও নয়, এমন কোনো দেশের এরকম কোনো ল্যাবরেটরি থেকে জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র ছড়িয়ে পড়তো (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে), সেই দেশ কি তা স্বীকার করতো? কখনোই না। যেহেতু এরকম মারণাস্ত্র তৈরির বৈধতা নেই।

    লেজ দেখে আমরা অনেক প্রাণীর মাথা সম্পর্কে অবগত হতে পারি; অদৃশ্য বাতাসের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হই বাতাসের প্রবাহ অনুভব করে, বাতাসের প্রবাহের কারণে গাছের পাতার নড়াচড়া দেখে; চোখ বন্ধ করে নাকের সামনে থাকা কোনো ফলের ঘ্রাণ শুঁকে ফলের নাম বলে দিতে পারি নিশ্চিতভাবে; দেয়ালের ওপাশে আগুণ জ্বললে দেয়ালের এপাশ থেকে শুধু ওই আগুণের ধোঁয়া দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় দেয়ালের ওপাশে আগুণ জ্বলছে; পথের পাশে গোবর পড়ে থাকতে দেখে বুঝা যায় এই পথ দিয়ে গরু চলাচল করেছে; এভাবে অনেক কিছুই সরাসরি না দেখে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যায় শুধু তার ক্রিয়া দেখে। চীনের উহান, উহানে স্থাপিত জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের ল্যাবরেটরী এবং উহানে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এই তিনটি বিষয়ের সম্পর্ক খুঁজতে গেলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে বাধ্য। চীন কখনোই স্বীকার করবে না, যেভাবে জাপানে আণবিক বোমা নিজ হাতে গিয়ে নিক্ষেপ করার পরও চার সপ্তাহ ধরে স্বীকার করেনি আমেরিকা যে, এটা আণবিক বোমা ছিল। চীন স্বীকার না করে বরং 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকা'র চেষ্টা করেছে।

    'First Covid-19 case happened in November, China government records show – report' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ১৩ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (by Helen Davidson in Hong Kong) বলা হয়, 'The Chinese government was widely criticised over attempts to cover up the outbreak in the early weeks, including crackdowns on doctors who tried to warn colleagues about a new Sars-like virus which was emerging in the city of Wuhan in Hubei province.


    The data obtained by the Post, which the Guardian has not been able to verify, said a 55-year-old from Hubei province could have been the first person to contract Covid-19. For about one month after that date there were one to five new cases reported each day, the report said, and by 20 December there were 60 confirmed cases.' [https://www.theguardian.com/world/2020/mar/13/first-covid-19-case-happened-in-november-china-government-records-show-report]

    'How China can be held legally accountable for coronavirus pandemic (কিভাবে চীনকে করোনাভাইরাস মহামারির জন্য আইনগতভাবে দায়ী করা যেতে পারে)' শিরোনামে ফক্স নিউজের ওয়েবসাইটে ২০ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Hollie McKay) চীনের লুকোচুরি নিয়ে অনেক লম্বা আলোচনা শেষে বলা হয়েছে, 'Titus Nichols, a federal attorney, and professor at the University of Georgia School of Law, contended that, under international custom, foreign governments are immune to lawsuits from citizens. However, individual families could potentially bring a lawsuit against the Chinese government under the Foreign Sovereign Immunities Act of 1976 (FSIA).

    "The act is the primary means for bringing a lawsuit against a foreign sovereign or its agencies and instrumentalities," he said. ...
    "There is evidence that China took steps to prevent knowledge about the virus from being shared," Nichols added.' [https://www.foxnews.com/world/china-legally-accountable-coronavirus]

    প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রাদুর্ভাব ঢাকার চেষ্টা করার কারণে চীন সরকার ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। শেষের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করা রোধ করতে চীন পদক্ষেপ নিয়েছিল, এমন প্রমাণ রয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, কেন চীনের এই অপতৎপরতা? সি ফুড মার্কেট থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকলে কি চীন এমন লুকোচুরির পথ বেছে নিতো?

    এ সম্পর্কে আরো দু'টি প্রতিবেদন দেখা যাক:
    'China asked WHO to cover up coronavirus outbreak: German intelligence service' শিরোনামে তাইওয়ান নিউজে ৯ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (By Matthew Strong, Taiwan News, Staff Writer) বলা হয়, 'TAIPEI (Taiwan News) — Chinese leader Xi Jinping (習近平) asked World Health Organization (WHO) Director-General Tedros Adhanom Ghebreyesus to suppress news about the Wuhan coronavirus (COVID-19) outbreak, the German intelligence agency BND found, according to a report by German magazine Der Spiegel.


    During a conversation on Jan. 21, Xi reportedly asked Tedros not to announce that the virus could be transmitted between humans and to delay any declaration of a coronavirus pandemic.
    It took until the end of January before the WHO declared that the coronavirus outbreak needed to receive international attention. Because of China’s delay, the world wasted four to six weeks it could have used to better counter the spread of the virus, the BND concluded.

    Germany's Robert Koch Institute also said that China failed to reveal all the relevant information at the outset of the epidemic, leading it to turn to the BND for advice, CNA cited a report in the Sueddeutsche Zeitung as saying.
    In response to the reports by German media, Chinese diplomats said the opposite was true, arguing that the communist country's handling of the virus had bought time that was then wasted by other governments. [https://www.taiwannews.com.tw/en/news/3931126]

    'COVID-19: After German intelligence, now CIA believes China tried to coerce WHO' শিরোনামে ভারতের দ্য উইক নিউজের ওয়েবসাইটে ১৩ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The geopolitical impact of how the coronavirus originated and spread is continuing to rattle ChinaLast week, German media outlet Der Spiegel reported that Germany's federal intelligence service had information that Chinese President Xi Jinping had personally called the WHO director-general seeking to delay issuing of a global warning on the coronavirus.


    The WHO on May 9 issued a statement, denying the report in Der Spiegel on a purported phone conversation between Xi and WHO Director-General Dr Tedros Adhanom Ghebreyesus on January 21. Calling the report "unfounded" and "untrue", WHO said, "Dr Tedros and President Xi did not speak on 21 January and they have never spoken by telephone."

    However, the charge that China influenced the WHO on coronavirus has not gone away. Newsweek reported on Tuesday that the CIA believed China had sought to prevent WHO from issuing a global health warning on coronavirus in January.
    Newsweek reported that a CIA report claimed, "China threatened the WHO that the country would stop cooperating with the agency's coronavirus investigation if the organisation declared a global health emergency" over coronavirus.
    WHO declared the coronavirus a global health emergency on January 30. At the time of the declaration, Dr Tedros Adhanom Ghebreyesus noted, "This declaration is not a vote of no confidence in China. On the contrary, WHO continues to have confidence in China's capacity to control the outbreak."

    The CIA report and the claims of German intelligence are likely to bolster suspicion that China had hid the extent of the spread of COVID-19. "The timeline of the CIA document, called U.N.-China: WHO Mindful But Not Beholden to China, and the German report dovetail with another analysis conducted by the US Department of Homeland Security that said China suppressed information about the outbreak in January, so it could hoard medical supplies from around the world," Newsweek claimed.

    The DHS analysis, which was reported by the Associated Press, on May 1 claimed, "Beijing imported 2.5 billion pieces of epidemic personal protective equipment (PPE)—which included more than two billion masks—during a six-week period starting mid-January".

    Newsweek notes that China first informed WHO of the novel coronavirus on December 31 and confirmed human-to-human transmission on January 20. The WHO voted twice, on January 22 and 23, on whether to declare the coronavirus as a global health emergency, but came to a decision only a week later.

    In April, the Associated Press reported the Chinese government understood it was dealing with a epidemic in a meeting held on January 14. However, Xi issued a public warning only on January 20, even as people travelled and fled from Wuhan and other areas of Hubei that were affected by the coronavirus. 
    [https://www.theweek.in/news/world/2020/05/13/covid-19-after-german-intelligence-now-cia-believes-china-tried-to-coerce-who.html]

    চীনের উহানে স্থাপিত এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা ১০ বছর ধরে নির্মাণ করার পর ২০১৮ সালে কার্যক্রম শুরু করে। কার্যক্রম শুরুর বছর খানেকের মধ্যে উহানের মানুষ 'অজ্ঞাত কারণে সৃষ্ট এবং এন্টিবায়োটিক অকার্যকরী প্রাণঘাতি নিউমোনিয়া'য় ব্যাপকহারে আক্রান্ত হতে শুরু করে কেন? এই কারখানা স্থাপনের আগে কখনো এমন হয়নি কেন? অন্য যেসব শহরে এরকম কারখানা নেই, সেসব শহরে এমন মহামারী দেখা দেয়নি কেন কখনো? উহানে কারখানা স্থাপনের আগে উহানে কি সি ফুড মার্কেট ছিল না? আগে কখনো এই সি ফুড মার্কেট থেকে এরকম ভয়াবহ কোনো মাহমারীর উপদ্রব হয়নি কেন? অন্য যেসব শহরে এরকম সি ফুড মার্কেট আছে, সেসব শহরের সি ফুড মার্কেট থেকে কখনো এমন মহামারীর উপদ্রব হয়নি কেন?

    এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলেও উপরের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সম্ভাবনাকে 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ রহিত হবে এবং দিবালোকের মতো পরিষ্কার হবে, উহানে স্থাপিত জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের ল্যাবরেটরী থেকেই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে জৈব রাসায়নিক পদার্থ উহানের বাতাসের সাথে মিশিয়ে দেয়ার ফলেই এই মহামারীর জন্ম।
    উহানে ছড়িয়ে পড়া অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া উহানের সি ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছিল বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে চীন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণ সম্পর্ক এই নিবন্ধের শুরুর দিকে আলোচনা করতে গিয়ে প্রমাণিত হলো, চীনের এই দাবি ভুয়া। উহানের মাছের বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি। 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটির সন্ধান চলছে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনে যে ৭৫ হাজারেরও বেশি লোকের দেহে এ সংক্রমণ ঘটেছে- তার ৮২ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে এই হুবেই অঞ্চল থেকে। এ তথ্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির।

    কিন্তু চীনা গবেষকদের এক জরিপ যা ল্যান্সেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয় কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণ চিহ্নিত হয় একজন লোকের দেহে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর।

    সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে উহান শহরের ওই বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে এটি ঠিক যে, প্রথম দিকে যে ৪১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন- তার মধ্যে ২৭ জনই উহানের সেই বাজারের সংস্পর্শে এসেছিলেন।' [https://www.jugantor.com/international/281953]

    এই প্রতিবেদনও প্রমাণ করে করোনাভাইরাস উৎপত্তির সম্পর্ক সম্পর্কে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ল্যাবরেটরি থেকে মাছের বাজারের দিকে নিয়ে যাবার চীনা চেষ্টা 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকা'র ব্যর্থচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। কারণ এই প্রতিবেদনে যে ব্যক্তিকে প্রথম আক্রান্ত বলে মনে করা হয়েছে, সে ব্যক্তির সাথে যেমন মাছের বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না, তেমনি প্রথম দিকে যে ৪১ জন সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন- তার মধ্যে ১৪ জনের সাথেই ওই মাছের বাজারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাহলে বুঝা যায়, বাকি ২৭ জন যে উৎস থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে, এই ১৪ জনও সেই উৎস থেকেই সংক্রমিত হয়েছে। কারণ এটা এক অদৃশ্য উৎস।

    উইকিপিডিয়ায় '2020 coronavirus pandemic in Iran' শিরোনামের নিবন্ধে (হালনাগাদযোগ্য) বলা হয়,

    'Background
    On 12 January, the World Health Organization (WHO) confirmed that a novel coronavirus was the cause of a respiratory illness in a cluster of people in Wuhan CityHubei Province, China, who had initially come to the attention of the WHO on 31 December 2019. This cluster was initially linked to the Huanan Seafood Wholesale Market in Wuhan CityHowever, some of those first cases with laboratory confirmed results had no link to the market, and the source of the epidemic is unknown.' [https://en.wikipedia.org/wiki/2020_coronavirus_pandemic_in_Iran]

    তবে চীন উহানের এই সংক্রমণকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি এখনো পর্যন্ত ল্যাবরেটরিটির দিকে থেকে ফিরিয়ে মাছের বাজারের দিকে নিবদ্ধ রাখতে যেমন সফল হলো, তেমনি করোনাভাইরাসের উপদ্রবের সাথে ল্যাবরেটরির সম্পর্ক সম্পর্কে অভিযোগগুলোকেও 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বলে উড়িয়ে দিতে মোটামুটি সফল হলো।

    কিন্তু অনেকেরই হয়তো মনে নেই, করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর চীন কিন্তু প্রথমেই করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করতে শুরু করেনি। একটু সময় নিয়েছে। এ সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:

    'চীনের 'রহস্যময়' ভাইরাস নিয়ে নানা শঙ্কা' শিরোনামে প্রথম আলোয় ১৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীন দাবি করেছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪১ জন। তবে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যা ১ হাজার ৭০০-র কাছাকাছি। তাঁরা ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়ে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন। যদিও চীন বলছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে।
    আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, রোগ প্রাদুর্ভাববিষয়ক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক নিল ফেরগুসন নতুন ভাইরাসটি প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছেন, 'বাস্তবিকভাবে আমি এক সপ্তাহ আগের চেয়ে এখন আরও বেশি উদ্বিগ্ন।' ...
    চীন জানিয়েছে, ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। তাদের মতে, ভাইরাসটি এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে সংক্রমণের স্বাভাবিক প্রতিরোধ পার হয়ে এসেছে। আর তা সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে।
    এ ব্যাপারে অধ্যাপক ফেরগুসন বলেছেন, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও সবার বিবেচনায় রাখা উচিত।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1634978]

    এখানে বলা হয়েছে, 'চীন জানিয়েছে, ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা।'

    দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ডা, সেবরিনা ফ্লোরা (ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইসিডিডিআরের পরিচালক) বলছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি এবং ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/269371]

    এখানে বলা হয়েছে, 'ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।'

    'চীনে 'ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যজনক' ভাইরাস, আক্রান্ত ৪৪' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের মধ্যাঞ্চল ইউহান শহরে 'রহস্যজনক' নিউমোনিয়ার আক্রমণ দেখা দিয়েছে, যাতে এখনো পর্যন্ত অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। ...
    এছাড়া মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। যাই হোক, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শহরের একটি সি-ফুড বা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে কাজ করতো। যার জেরে ওই এলাকা পরিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।' [https://www.bbc.com/bengali/news-50991318]

    এখানে বলা হয়েছে, 'মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।'
    এই  প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর প্রথম অবস্থায় করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে মনে করা হয়নি বা ছোঁয়াচে বলে প্রচার করতে চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বিধা করছিল। তাহলে পরে কী কারণে একে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করা শুরু হলো?

    'চীনের নতুন ভাইরাস এবার যুক্তরাষ্ট্রেও' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গত সোমবার চীন প্রথম স্বীকার করে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। এর আগে চীন দাবি করেছিল, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। আর ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান। তাঁদের হিসাবে চীন যা বলছে, তার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।' [https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1635600]

    এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর প্রথম দিকে চীন একে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করতে দ্বিধা করছিল, কিন্তু পরে এসে তা প্রচার করতে শুরু করে। কী কারণে এই মত পরিবর্তন?

    যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে ২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'Emerging understandings of 2019-nCoV' শিরোনামে বলা হয়, ''There is an emergency in China, but it has not yet become a global health emergency...WHO is following this outbreak every minute of every day'', said Dr Tedros Ghebreyesus, Director-General of WHO, on Jan 23. A novel coronavirus (2019-nCoV) outbreak is emerging, but it is not yet a Public Health Emergency of International Concern (PHEIC). As we went to press, more than 500 cases have been confirmed in China, as well as in JapanSouth KoreaThailand, and the USThe virus can cause a severe respiratory illness, like SARS and MERS, and human-to-human transmission has been confirmed. These characteristics are driving China's urgent public health actions, as well as international concern. But much remains unknown. The pieces of the puzzle that is 2019-nCoV are only now beginning to come together.

    Today, we publish the first clinical data from individuals confirmed to be infected with 2019-nCoV from WuhanChina. Chaolin Huang and colleagues provide comprehensive findings for the first 41 laboratory-confirmed cases. 27 of these 41 cases had direct exposure to the Wuhan seafood market that is thought to be the initial site of infection from an animal source. All had viral pneumonia. The severity of illness is concerning: almost a third of patients developed acute respiratory distress syndrome requiring intensive care; six patients died; five had acute cardiac injury; and four required ventilation.

    Separately, Jasper Fuk-Woo Chan and colleagues report clinical and microbiological data from a family of six people who had travelled to Wuhan and later presented with pneumonia to Shenzhen Hospital in Guangdong province. Five were identified as infected with 2019-nCoV. Notably, none had been to the Wuhan market, but two had visited a Wuhan hospital. The authors suggest these findings confirm human-to-human transmission. Together, these Articles provide an important initial picture of the clinical spectrum and transmission of this new disease. ...

    There are still many gaps in our understanding. The early experiences of these patients and the response to their symptoms before cases were reported remain undocumented. The exposure and possible infection of health workers remain extremely worrying. We will not know for some time the consequences of the quarantine imposed in Wuhan on Jan 23, 2020. Chinese public health authorities are under enormous pressure to make difficult decisions with an incomplete, and rapidly changing, understanding of the epidemic. The shutdowns may seem a drastic step—whether they represent an effective control measure deserves careful investigation and much will likely depend on maintaining trust between authorities and the local population. News media that worsen fears by reporting a “killer virus“ only harm efforts to implement a succesful and safe infection control strategy.' [https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(20)30186-0/fulltext]

    এই প্রতিবেদনে প্রথমে বলা হয়েছে, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে; পরে আবার বলা হয়েছে, তবে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ নিশ্চিত হবার কথা বলেছে কোত্থেকে? সম্ভবতঃ এর উত্তরে পরে বলা হয়েছে, জ্যাস্পার ফুক-উন চ্যান এবং সহকর্মীরা আলাদাভাবে ছয়জনের একটি পরিবার থেকে ক্লিনিক্যাল এবং মাইক্রোবায়োলজিক্যাল তথ্য রিপোর্ট করেছেন যারা পরে উহান ভ্রমণ করেছিলেন এবং পরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পাঁচজনকে ২০১৯-এনসিওভিতে সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, কেউই উহান বাজারে আসেনি, তবে দু'জন একটি উহান হাসপাতালে গিয়েছিল। লেখকরা পরামর্শ দেন যে, এই ফলাফলগুলি মানুষের থেকে মানবিক সংক্রমণকে নিশ্চিত করে।

    এই প্রতিবেদনও নিশ্চিত করে, উহানের মাছের বাজারে যাওয়া ছাড়াই এই পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে এটা নিশ্চিত, উহানের মাছের বাজার থেকে ভাইরাস ছড়ায়নি। তাহলে কোত্থেকে?
    এই ছয়জন লোক উহানে ভ্রমণ করার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এদের দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই দু'জন আগে আক্রান্ত হয়েছেন, নাকি পরে, তা কিন্তু এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। আগে হোক বা পরে, এরা উহানে গমন করার কারণেই মূলত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ উহানের বাতাস বিষাক্ত ছিল। কিন্তু এই বিষাক্ত হবার কথাটা গোপন থাকার কারণেই গবেষকরা হাসপাতালে যাওয়াকেই এদের করোনায় আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করে বসলেন, এমনকি করোনাকে ছোঁয়াচে বলেও মন্তব্য করলেন। এই মন্তব্য করাটাই হয়তো মানবজাতির জন্য সীমাহীন অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
    এই প্রতিবেদনে করোনাকে ছোঁয়াচে বলে মন্তব্য করার পর আবার বলে দেয়া হলো, 'আমাদের বোঝার মধ্যে এখনো অনেক ফাঁক রয়ে গেছে।' এই মন্তব্যের দিকে কেউ আর ভ্রক্ষেপ করার প্রয়োজন মনে করেনি।

    'Radiological findings from 81 patients with COVID-19 pneumonia in Wuhan, China: a descriptive study' শিরোনামে ল্যানসেটে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Most of the initial cases of coronavirus disease 2019 (COVID-19), the disease caused by SARS-CoV-2, were epidemiologically linked to exposure to Wuhan's Huanan seafood market, where wild animals are traded. Although the market has been closed since Jan 1, 2020, as part of efforts to contain the outbreak, patients without exposure to the market but with a history of travel to Wuhan or close physical contact with a patient confirmed to have COVID-19, including health-care workers, have also been identified, suggesting strong human-to-human transmission. The number of cases has been increasing rapidly: by Feb 15, 2020, more than 60000 cases of COVID-19 pneumonia had been reported in China and in other countries worldwide (including ThailandJapanSouth Korea, and the USA), and 1524 patients had died, equivalent to a mortality rate of around 2%.' [https://www.thelancet.com/journals/laninf/article/PIIS1473-3099(20)30086-4/fulltext]

    ল্যানসেটের এই নিবন্ধে এসে আবার উহানের সি ফুড মার্কেটকে করোনার প্রাদুর্ভাবস্থল বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার বলা হয়, প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যদিও ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মার্কেটটি বন্ধ ছিল, তবু বাজারটিতে গমন করা ছাড়াই স্বাস্থ্যকর্মীসসহ অনেক মানুষ শুধু উহানের ভ্রমণের কারণে অথবা কোনো রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হতে থাকাটা দৃঢ়ভাবে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের পরামর্শ দেয়।

    এখানে সি ফুড মার্কেটের কথা বাদ দিয়ে উহানে ভ্রমণের সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে সম্পর্কিত করা হয়েছে। আবারও নিশ্চিত হওয়া গেলো মাছের বাজারটির সাথে করোনাভাইাসের সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক উহানের সাথে। উহানে অবস্থিত বায়োলজিক্যাল ল্যাব থেকেই যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, তা বুঝার জন্য আর কোনো প্রমাণ দরকার?

    করোনায় আক্রান্ত রোগীর সাথে শারীরিক যোগাযোগের যে কথা এখানে বলা হয়েছে, তার কোনো অর্থ আর থাকে না, যখন দেখা যায় মানুষ শুধু উহানে থাকলেই বা ভ্রমণ করলেই করোনায় আক্রান্ত হয়। উহানের বাতাস যাদের নাকে প্রবেশ করেছে, তাদের মধ্যে কি স্বাস্থ্যকর্মীরা নেই? স্বাস্থ্যকর্মীরা আরেকজন থেকে কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হবে, মাস্ক, পিপিই সহ নভোচারীদের মতো পোষাকে বন্দী হয়ে থাকার পরও? আর দশজন যেভাবে উহানের বাতাস ফুসফুসে গ্রহণের পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেভাবে আক্রান্ত হতে বাধা কোথায়? নিঃশ্বাস নেয়া তো বন্ধ করে না!

    'করোনা ভাইরাসের বাহক মানুষও!' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে, যা প্রকাশিত হয় জানুয়ারি ২২, ২০২০ তারিখে, তৈরি করেছেন জাকিয়া আহমেদ। সেখানে বলা হয়, 'জানা যায়, সম্প্রতি চীনের উহান শহরের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে নতুন করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেটি জাপান, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়েছে।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্তেরও খবর পাওয়া গেছে, যাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে।' [https://www.banglatribune.com/others/news/605297]

    যখন স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছে, তখন সবাই ভাবতে শুরু করেছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা অবশ্যই কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। তাই এই রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্ত হবার পর যখন দেখা গেছে, তাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন, তখন থেকেই ধারণা করা হয়, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু এই তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়নি, ঐ পরিবারের তিনজন লোকের মধ্যে মাছের বাজারে যে গেছে, সে আগে আক্রান্ত হয়েছে, নাকি বাকি দু’জন; নাকি তিনজনই একসাথে। মূলত ছোঁয়াচে রোগের ধারণা প্রচলিত থাকা এবং নিউমোনিয়া জাতীয় রোগকে আগ থেকেই ছোঁয়াচে মনে করার কারণে এই বিষয়টা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করা হয়নি এবং এই কথাটাও মাথায় আসেনি, ঐ পরিবারের যে লোকটি মাছের বাজারে গেছে, সে সেখানে না গেলেও আক্রান্ত হতে পারতো। ছোঁয়াচে মনে করার আরেকটা কারণ হচ্ছে, যখন কর্তৃপক্ষ প্রাদুর্ভাবস্থল বা প্রাদুর্ভাবের উৎস হিসেবে মাছের বাজারের দিকেই আঙ্গুলি নির্দেশ করেছে, তখন আক্রান্ত কেউ ঐ বাজারের নামও কেউ মুখে নিয়েছে কিনা, তার উপর ভিত্তি করে রোগটি ছোঁয়াচে হবার বিষয়টা যাচাই করা শুরু করলো।

    সবচেয়ে বড় কথা, যখন প্রমাণিত হয়েই গেলো মাছের বাজারের সাথে এই ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই, তখন মাছের বাজারের সাথে এই রোগের ছোঁয়াচে হবার সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার চিন্তাটা ভুল। এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, ঐ পরিবারের অন্য দু’জন যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, মাছের বাজারে গমন করা ব্যক্তিও সেই কারণেই আক্রান্ত হয়েছে। রোগীরা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই কারণেই আক্রান্ত হয়েছে প্রতিরক্ষামূলক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও।

    করোনাভাইরাস সত্যিই ছোঁয়াচে কিনা, তা নিয়ে আরেকটি বিভ্রান্তির উদাহরণ দেখা যক:
    health protection agency, Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর ওয়েবসাইটে 'Coronavirus Disease 2019 (COVID-19)' শিরোনামের নিয়মিত হালনাগাদকৃত নিবন্ধে বলা হয়, 
    'How 2019-nCoV Spreads
    Most often, spread from person-to-person happens among close contacts (about 6 feet). Person-to-person spread is thought to occur mainly via respiratory droplets produced when an infected person coughs or sneezes, similar to how influenza and other respiratory pathogens spread. These droplets can land in the mouths or noses of people who are nearby or possibly be inhaled into the lungs. It's currently unclear if a person can get 2019-nCoV by touching a surface or object that has the virus on it and then touching their own mouth, nose, or possibly their eyes.' [https://www.cdc.gov/coronavirus/about/transmission.html]

    এই নিবন্ধটি এরকসময় এই রকম ছিল। কিন্তু পরে আবার শেষ বাক্যটি এডিট করে সেখানে বলা হয়, 'It may be possible that a person can get COVID-19 by touching a surface or object that has the virus on it and then touching their own mouth, nose, or possibly their eyes, but this is not thought to be the main way the virus spreads.'

    ২১ মার্চ ২০২০ তারিখেও এরকম ছিল। পাশাপাশি আরও বলা হয়, 
    'Can someone spread the virus without being sick?
    People are thought to be most contagious when they are most symptomatic (the sickest).
    Some spread might be possible before people show symptoms; there have been reports of this occurring with this new coronavirus, but this is not thought to be the main way the virus spreads.'

    নিবন্ধটিতে ৪ মে ২০২০ তারিখে বিষয়টা উল্লেখ করা আছে এভাবে(১) COVID-19 মূলত সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে শ্বাসের ফোঁটায় করে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড় বলে 'মনে করা হয়'। (২) COVID-19 একটি নতুন রোগ এবং এটি কীভাবে এটি ছড়ায় এবং অসুস্থতার তীব্রতা সম্পর্কে আমরা এখনও শিখছি।
    সিডিসি এখনো বলছে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে 'মনে করা হয়'; কিন্তু সারাবিশ্ব অনেক আগে থেকেই বিষয়টা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে। সিডিসি এখনো শিখছে কিভাবে এটা ছড়ায়, কিন্তু সারাবিশ্ব একে ছোঁয়াচে মনে করে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছে/নিচ্ছে।
    চীন উহানের এই সংক্রমণকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি এখনো পর্যন্ত ল্যাবরেটরিটির দিকে থেকে ফিরিয়ে মাছের বাজারের দিকে নিবদ্ধ রাখতে যেমন সফল হলো, তেমনি করোনাভাইরাসের উপদ্রবের সাথে ল্যাবরেটরির সম্পর্ক সম্পর্কে অভিযোগগুলোকেও 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ' বলে উড়িয়ে দিতে মোটামুটি সফল হলো।

    ''American coronavirus': China pushes propaganda casting doubt on virus origin' শিরোনামে গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ১৩ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (Lily Kuo in Hong Kong) বলা হয়, 'For weeks, Chinese state media pointed to a seafood market in Wuhan as the likely origin for the virus while researchers said the source had not yet been determined, but few have floated the idea that it came from outside of China. Another respected Chinese researcher, Zhang Wenhong, said in an interview with the China Daily that he did not believe the virus had been imported into China.
    ''If that was the case, we should have seen patients emerging from different regions in the country around the same time rather than their concentration in Wuhan,'' he said, in comments that later appeared to have been removed from the interview.

    ''I think the consensus is still clearly that the virus did originate in China'' said Jane Duckett, professor at the Scottish Centre for China Research, University of Glasgow, focusing on Chinese policy and health.

    ''This would appear to be a nationalist narrative aimed at countering criticism of the Chinese government for not better managing the outbreak in its early stages,'' she said.

    Shifting the narrative may also be important as China tries to move forward, now that new infections appear to have levelled off. This week, the Chinese leader, Xi Jinping, visited Wuhan for the first time since the outbreak began as state media pronounced ''victory is near''. State media showed elaborate celebrations marking the closure of the last of the temporary hospitals in Wuhan.' [https://www.theguardian.com/world/2020/mar/12/conspiracy-theory-that-coronavirus-originated-in-us-gaining-traction-in-china]

    সুতরাং এই সম্পর্কে এই আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার, করোনাভাইরাস উহানের সি ফুড মার্কেট থেকে যেমন ছড়ায়নি, তেমনি এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগও নয়, বরং এটা উহানের বায়োলজিক্যাল মারণাস্ত্রের কারখানা থেকে বায়ুতে ছড়ানো বিষক্রিয়ার ফল। এই সম্পর্কে আরো কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:
    'Coronavirus may have originated in lab linked to China's biowarfare program' শিরোনামে ওয়াশিংটন টাইমসের ওয়েবসাইটে ২৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Bill Gertz) বলা হয়, 'Editor's note (March 25, 2020): Since this story ran, scientists outside of China have had a chance to study the SARS-CoV-2 virus. They concluded it does not show signs of having been manufactured or purposefully manipulated in a lab, though the exact origin remains murky and experts debate whether it may have leaked from a Chinese lab that was studying it.
    The deadly animal-borne coronavirus spreading globally may have originated in a laboratory in the city of Wuhan linked to China's covert biological weapons program, said an Israeli biological warfare analyst.

    Radio Free Asia last week rebroadcast a Wuhan television report from 2015 showing China’s most advanced virus research laboratory, known the Wuhan Institute of Virology. The laboratory is the only declared site in China capable of working with deadly viruses.
    Dany Shoham, a former Israeli military intelligence officer who has studied Chinese biological warfare, said the institute is linked to Beijing's covert bio-weapons program.

    ''Certain laboratories in the institute have probably been engaged, in terms of research and development, in Chinese [biological weapons], at least collaterally, yet not as a principal facility of the Chinese BW alignment,'' Mr. Shoham told The Washington Times.
    Work on biological weapons is conducted as part of dual civilian-military research and is ''definitely covert,'' he said in an email.
    Mr. Shoham holds a doctorate in medical microbiology. From 1970 to 1991, he was a senior analyst with Israeli military intelligence for biological and chemical warfare in the Middle East and worldwide. He held the rank of lieutenant colonel.
    China has denied having any offensive biological weapons, but a State Department report last year revealed suspicions of covert biological warfare work.
    A Chinese Embassy spokesman did not return an email seeking comment.

    Chinese authorities said they do not know the origin of the coronavirus, which has killed at least 80 and infected thousands.
    Gao Fu, director of the Chinese Center for Disease Control and Prevention, told state-controlled media that initial signs indicated the virus originated from wild animals sold at a seafood market in Wuhan.
    One ominous sign, said a U.S. official, is that false rumors circulating on the Chinese internet claim the virus is part of a U.S. conspiracy to spread germ weapons. That could indicate China is preparing propaganda outlets to counter any charges that the new coronavirus escaped from one of Wuhan’s civilian or defense research laboratories.

    The World Health Organization is calling the microbe novel coronavirus 2019-nCoV. At a meeting Thursday in Geneva, the organization stopped short of declaring a public health emergency of international concern.
    China has deployed military forces to Wuhan to halt all travel out of the city of 11 million people in an effort to contain the outbreak of the virus, which causes pneumonialike symptoms.
    The Wuhan institute has studied coronaviruses including the strain that causes severe acute respiratory syndrome (SARS), H5N1 influenza virus, Japanese encephalitis and dengue. Researchers at the institute also have studied the germ that causes anthrax, a biological agent once developed in Russia.

    ''Coronaviruses [particularly SARS] have been studied in the institute and are probably held therein,'' Mr. Shoham said. ''SARS is included within the Chinese BW program, at large, and is dealt with in several pertinent facilities.''
    It is not known whether the institute’s coronaviruses are specifically
    included in China’s biological weapons program but it is possible, he said.
    Asked whether the new coronavirus may have leaked, Mr. Shoham said: ''In principle, outward virus infiltration might take place either as leakage or as an indoor unnoticed infection of a person that normally went out of the concerned facility. This could have been the case with the Wuhan Institute of Virology, but so far there isn't evidence or indication for such incident.''
    After researchers sequence the genome of the new coronavirus, they might be able to determine or suggest its origin or source.

    Biological weapons convention
    Mr. Shoham, now with the Begin-Sadat Center for Strategic Studies at Bar Ilan University in Israel, said the virology institute is the only declared site in China known as P4 for pathogen level 4. That status indicates the institute uses the strictest safety standards to prevent the spread of the most dangerous and exotic microbes being studied.
    The former Israeli military intelligence doctor also said suspicions were raised about the Wuhan Institute of Virology when a group of Chinese virologists working in Canada improperly sent to China samples of what he described as some of the deadliest viruses on earth, including the Ebola virus.

    In a July article in the journal Institute for Defense Studies and Analyses, Mr. Shoham said the Wuhan institute was one of four Chinese laboratories engaged in some aspects of biological weapons development.
    He said the secure Wuhan National Biosafety Laboratory at the institute was engaged in research on the Ebola, Nipah and Crimean-Congo hemorrhagic fever viruses.
    The Wuhan virology institute is under the Chinese Academy of Sciences, but certain laboratories within it ''have linkage with the PLA or BW-related elements within the Chinese defense establishment,'' he said.

    In 1993, China declared a second facility, the Wuhan Institute of Biological Products, as one of eight biological warfare research facilities covered by the Biological Weapons Convention, which China joined in 1985.
    The Wuhan Institute of Biological Products is a civilian facility but is linked to the Chinese defense establishment. Mr. Shoham said it is thought to be involved in the Chinese Biological Weapons Convention program. China’s vaccine against SARS is probably produced there.
    ''This means the SARS virus is held and propagated there, but it is not a new coronavirus unless the wild type has been modified, which is not known and cannot be speculated at the moment,'' he said.

    The annual State Department report on arms treaty compliance stated last year that China engaged in activities that could support biological warfare.
    ''Information indicates that the People's Republic of China engaged during the reporting period in biological activities with potential dual-use applications, which raises concerns regarding its compliance with the BWC,'' said the report, adding that the United States suspects China failed to eliminate its biological warfare program as required by the treaty.

    ''The United States has compliance concerns with respect to Chinese military medical institutions’ toxin research and development because of the potential dual-use applications and their potential as a biological threat,'' the report said.
    The biosafety lab is about 20 miles from the Hunan Seafood Market, which reports from China say may have been the origin point of the virus.
    Rutgers University microbiologist Richard Ebright told London's Daily Mail that ''at this point there's no reason to harbor suspicions'' that the lab may be linked to the virus outbreak.' [https://www.washingtontimes.com/news/2020/jan/26/coronavirus-link-to-china-biowarfare-program-possi/]

    অষ্টম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

    'করোনাভাইরাস: উহানেই জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির ২ পরীক্ষাগার' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদন অনুসারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত  হয়। [https://www.jugantor.com/international/272415]

    'ড. ফ্রান্সিস বয়েলের দাবি : 'করোনা' ভাইরাস নয়, শক্তিশালী জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র!' শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠে ১৭ মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'জিনের গঠন বদলে আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে ৩৮০ বার জিন বদলে বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। সাধারণ করোনার থেকে এর বিষ অনেক বেশি। 'জেনেটিক্যালি মডিফায়েড' এই করোনাভাইরাসের জন্মদাতা চীনের উহানের বায়োসেফটি ল্যাবোরেটরি লেভেল ফোর। আর এই কথা আগে থেকেই জানত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আন্তর্জাতিক একটি সাংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন মার্কিন আইনজীবী, রাসায়নিক মারণাস্ত্র বিরোধী সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. ফ্রান্সিস বয়েল।

    ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস কলেজের আইনের অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস বয়েল। রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংগঠনেরও অন্যতম মাথা তিনি। তাঁর উদ্যোগেই ১৯৮৯ সালে 'বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্ট' বিল পাশ হয়। নোভেল করোনাভাইরাস যে নিছকই কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ নয়, সে বিষয়ে আগেও মুখ খুলেছিলেন ড. ফ্রান্সিস। ইজরায়েলি গোয়েন্দা ও মাইক্রোবায়োলজিস্টদের দাবির সমর্থন জানিয়েই ড. ফ্রান্সিস বয়েল বলেন, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিতে অতি গোপনে রাসায়নিক  মারণাস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেখান থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। সি-ফুড মার্কেটের ব্যাপারটা নেহাতই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। আর এই কথা বিলক্ষণ জানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সব জেনেও গোটা বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার কৌশলী চেষ্টা চলছে।

    ড. ফ্রান্সিস বয়েল বলেছেন, উহানের এই বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিকে সুপার ল্যাবোরেটরির তকমা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হয়েছিল, এই ল্যাবে ভাইরাস নিয়ে কাজ হলেও তা অনেক বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ। ল্যাবোরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।
    ড. ফ্রান্সিস বলেন, সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু। নোভেল করোনাভাইরাসের জিনগত বদল ঘটানো হয়েছে এবং উহানের এই ল্যাবোরেটরি থেকেই যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেটাও  জানেন ডব্লিউএইচও'র অনেক গবেষকই।
    নোভেল করোনাভাইরাস যে রাসায়নিক মারণাস্ত্র, নিশ্চিত করেছেন মার্কিন সিনেটর টম কটনও। তাঁর দাবি, চীন জীবাণুযুদ্ধের জন্য বানাচ্ছিল ওই ভাইরাস। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কথাটা লুকোতে চাইছেন কারণ আন্তর্জাতিক আইনে জীবাণুযুদ্ধ নিষিদ্ধ। তাঁরা ওই নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন জানাজানি হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
    ২০১৫ সালে রেডিও ফ্রি এশিয়া তাদের রিপোর্টে দাবি করেছিল, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে ভয়ঙ্কর, প্রাণঘাতী সব ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এর অর্থ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে বেইজিং।'
    সূত্র- গ্রেটজেমি  ইন্ডিয়া। [https://www.kalerkantho.com/online/world/2020/03/17/887101]

    সর্বশেষ এই প্রতিবেদন সরাসরি ঐ মতের পক্ষে কথা বলেছে, যে মত সবার সামনে পরিষ্কার করার জন্য এই লেখার জন্ম। মানে করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়, এটা ল্যাবরেটরী থেকে ছড়ানো রাসায়নিক মারণাস্ত্র। এখানে আরো বলা হয়, সি-ফুড মার্কেটের ব্যাপারটা নেহাতই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। এককথায় এটা স্পষ্ট, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে ছড়ানো বিষাক্ত কোনো কেমিক্যাল উহানের বাতাসে মিশে যাবার ফলেই উহানের মানুষ ব্যাপকাকারে ফুসফুসের রোগ নিউমোনিয়ায় তীব্রভাবে ভুগতে শুরু করে এবং মরতে শুরু করে; এন্টিবায়োটিকেও কোনো কাজ হয় না। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসাকর্মীরাও, মাস্ক এবং পিপিই পরিহিতরাও রোগটি থেকে রক্ষা পায়নি, শুধু উহানের বিষাক্ত বাতাস ফুসফুসে গ্রহণ করার কারণে।

    এবার দেখা যাক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মূলক একটি প্রতিবেদন:
    'কে ছড়ালো করোনাভাইরাস? যা বলছেন বিজ্ঞানীরা' শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠে ২৬ মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কে ছড়ালো করোনাভাইরাস- যুক্তরাষ্ট্র, চীন না ব্রিটেন? আসলেই কি এটি জীবজন্তুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ঢুকেছে নাকি জীবাণু অস্ত্রের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে?
    সংক্রমণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
    শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়াই এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ছয়লাব তাই-ই নয়, কিছু দেশের মূলধারার কিছু কিছু মিডিয়াও এসব তত্ত্ব প্রচার করছে।
    ষড়যন্ত্র এসব তত্ত্বগুলো আসছে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইরান থেকে। এসব দেশের সরকারগুলো সরাসরি এসবের পেছনে না থাকলেও, সরকারের সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তির কথায় এবং মিডিয়ায় এগুলো স্থান পাচ্ছে।

    কে কাকে সন্দেহ করছে?
    চীন এবং ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
    চীনের ভেতর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন হরদমসে লিখছে এবং শেয়ার করছে যে চীনকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র হিসাবে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে।
    শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, একজন চীনা কূটনীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।
    চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও ঝাও লিজিয়ান টুইটারে মার্চের ১১ তারিখে মার্কিন একটি কংগ্রেস কমিটির সামনে সেদেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের একটি শুনানির ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করেছেন। ঐ ফুটেজে রেডফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ইনফ্লয়েঞ্জা-জনিত মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে বলছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-নাইন্টিনের কারণেই ঐ মৃত্যু।
    যদিও রেডফিল্ড বলেননি কখন ঐসব মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু চীনা ঐ কূটনীতিক টুইটারে ঐ ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে সাথে লিখেছেন, "সিডিসি ধরা পড়ে গেছে। কখন প্রথম রোগীটি যুক্তরাষ্ট্রে মারা গিয়েছিল? কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল? কোন কোন হাসপাতালে? হতে পারে যেসব মার্কিন সেনা উহানে ঐ ভাইরাস এনেছিল তারাই... স্বচ্ছ হোন। মানুষকে সত্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাই।"
    ঝাওয়ের ঐ টুইট চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিভি সিসিটিভিতে প্রচার হয়। গ্লোবাল টাইমসেও তা ছাপা হয়।
    এছাড়াও, চীনের ভেতর থেকে একাধিক বিজ্ঞানী বলেই চলেছেন করোনাভাইরাসের মহামারি চীনে শুরু হলেও, এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হয়নি।

    ইরানের অঙ্গুলি আমেরিকার দিকে
    চীনের পাশাপাশি ইরানের ভেতরেও ব্যাপক মানুষের বিশ্বাস এই জীবাণু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।
    এমনকি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি সরাসারি বলেছেন, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র।
    গত পাঁচই মার্চ জে. সালামি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চীনে এবং পরে ইরানের বিরুদ্ধে "জীবাণু-অস্ত্রের সন্ত্রাসী হামলা" চালিয়েছে
    পরদিনই ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে মন্তব্য করেন, "ট্রাম্প এবং পম্পেও করোনা নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন...এটা কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটা ইরান এবং চীনের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্রের হামলা।"

    রাশিয়ার ভূমিকা
    রাশিয়ার ভেতর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও রাশিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়ায় চীন এবং ইরানের এসব অভিযোগ-তত্ত্ব জোরেসোরে প্রচার করা হচ্ছে।
    ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইইউ'এর একটি মনিটরিং দল মার্চের ১৬ তারিখ পর্যন্ত দুমাসের এক অনুসন্ধানে ৮০টি প্রমাণ পেয়েছে যে ক্রেমলিনের সাথে ঘনিষ্ঠ মিডিয়ায় করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরণের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
    রুশ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দায়ী করা হচ্ছে।
    সরকার সমর্থিত স্পুটনিক রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বাধ্য করতে ব্রিটেন এই কান্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
    রুশ একটি জনপ্রিয় টিভি টকশোতে (দি বিগ গেম) ইগর নিকুলিন নামে রুশ একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেন, ব্রিটেন এই করোনা 'অস্ত্র' তৈরি করেছে।
    তিনি বলেন, "(ব্রিটেনের) পোর্টান ডাউনে একটি গবেষণাগারে বহুদিন ধরেই নানা জীবাণু এবং রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে।"
    তবে রুশ সরকার দাবি করেছে, এসব বক্তব্যের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

    আমেরিকার তীর চীনের দিকে
    আমেরিকার ভেতরেও করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছে।
    প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং ঘুরে ফিরে বলেই চলেছেন, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী।
    মি ট্রাম্পের সমর্থক হিসাবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলছেন, করোনাভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র।
    ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কংগ্রেসে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন এক রিপাবলিকান রাজনীতিক জোয়ান রাইট টুইট করেছেন, "উহান ল্যাবরেটরিতে এই করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছে, এবং ঐ গবেষণায় চীনাদের সহায়তা করেছেন বিল গেটস।"
    সমালোচনার মুখে পরে তিনি ঐ টুইট ডিলিট করে দেন।
    তবে আমেরিকার কট্টর ডানপন্থী বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনো শেষ নেই।

    যা বলছেন বিজ্ঞানীরা
    পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে তারা বলেছেন, "জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়, গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে।" 
    এছাড়া ইতোমধ্যেই পৃথিবীর অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর বিজ্ঞানী ও গবেষকরা অনেক গবেষণাপত্রে প্রমাণ দিয়েছেন যে এই ভাইরাস মানুষের তৈরি কোনো জীবাণু বা জৈব অস্ত্র না।
    বিজ্ঞানীরা এরমধ্যেই এই SARS-CoV-2 বা করোনা ভাইরাসের দুই প্রকার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য- আলফা ও বিটাকরোনাভাইরাসের জিনেটিক তথ্যের তুলনামূলক কাঠামোগত বিশ্লেষণ এবং জৈব-রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখাইছেন, এই ভাইরাস মানুষের তৈরি করা কোনো কৃত্রিম জীবাণু না।
    ১৭ই মার্চ নেচারমেডিসিনে প্রকাশিত 'দা প্রক্সিমাল অরিজিন অভ SARS-CoV-2 নামক আর্টিকেলে গবেষকরা দেখান, এই ভাইরাসের জিনের প্রোটিনে যে ছয় ধরণের অ্যামইনো অ্যাসিড সম্বলিত 'রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেইন' বা জইউ পাওয়া যায়, তা এই ভাইরাসের বাহক- এইক্ষেত্রে মানুষের ACE2 রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হইলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হইতে পারেন। এই ACE2 রিসেপ্টরের সাথে SARS-CoV-2-র স্পাইক প্রোটিনের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা 'প্রাকৃতিক নির্বাচন'এর কারণে হয় বলে গবেষকরা ধারণা করেন।

    এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতই এই করোনা ভাইরাসের প্রোটিন স্পাইকের সাবইউনিটে পাওয়া পলিবেসিক ফিউরিন ক্লিভেজ সাইট প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসরে তার বাহক খুঁজতে সাহায্য করে। গবেষকরা ধারণা করেন, এই ভাইরাস প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মানুষকে আক্রমণ করার আগে অন্য প্রাণীকে প্রাথমিক আধার হিসাবে ব্যবহার করে এবং পরবর্তীতে ঐ প্রাণীর মাধ্যমে এই 'জুনোসিস' বা প্রাণিবাহিত রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায়। মানুষের চাইতে যেসব প্রাণীর জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি এবং যেসব প্রাণীর মানুষের মত ACE2 রিসেপ্টর আছে, সেসব প্রাণীকেই এই ভাইরাস প্রাথমিক আধার হিসাবে ব্যবহার করে।
    দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, এই ভাইরাসের পূর্বসূরী ভাইরাস কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ না করে অনেক আগে থেকেই মানুষের শরীরে বাস করছিলো, পরবর্তীতে প্রাণীবাহিত নতুন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ফলে প্রাথমিক ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। করোনা গোত্রীয় আরেকটা ভাইরাস MERS-CoV এই পদ্ধতিতে মরু অঞ্চলের এক প্রকার উট থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিলো।

    অনেকের মতে আবার, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রায় কয়েক লক্ষ বছর আগে বরফ-যুগে মাটির নিচে চাপা পড়া 'পারমাফ্রস্ট' হয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসেরা পৃথিবীতে ফেরৎ আসা শুরু করেছে।
    ২০১৬ সালে প্রায় ৭০ বছর আগের এই ধরণের পারমাফ্রস্টেড এ্যানথ্রাক্স জীবাণু তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলে বাইরে বের হয়ে আসে। এবং তাতে আক্রান্ত হয়ে সাইবেরিয়ান তুন্দ্রা অঞ্চলে বেশ কিছু রেইনডিয়ার এবং মানুষ মারা যান। শুধু এ্যানথ্রাক্স না, বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা ১৯১৮ সালের ভয়ানক স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাস, স্মল পক্স এবং মধ্যযুগের বিউবনিক প্লেগের ভাইরাসেরও পৃথিবীতে আবার ফেরৎ আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন অনেক বিজ্ঞানী।'
    সুত্রঃ বিবিসি বাংলা, দ্য গার্ডিয়ান [https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2020/03/26/890948]

    এখন দেখা যাক এই প্রতিবেদন অনুসারে কে কাকে দোষারোপ করছে?

    চীন এবং ইরানের ভেতর থেকে সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
    রুশ সরকার নয়, বরং রুশ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দায়ী করা হচ্ছে।
    আমেরিকা বলছে, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী।
    এদিকে বিজ্ঞানীরা নানা রকম বিশ্লেষণ করে বলছেন, এই ভাইরাস মানুষের তৈরি করা কোনো কৃত্রিম জীবাণু নয়। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রায় কয়েক লক্ষ বছর আগে বরফ-যুগে মাটির নিচে চাপা পড়া 'পারমাফ্রস্ট' হয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসেরা পৃথিবীতে ফেরৎ আসা শুরু করেছে।

    প্রথমে আসা যাক বিজ্ঞানীদের কথায়। তারা বলছে, এটা মানুষের তৈরি নয়। আরো বলেছে, 'এই ভাইরাস প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মানুষকে আক্রমণ করার আগে অন্য প্রাণীকে প্রাথমিক আধার হিসাবে ব্যবহার করে এবং পরবর্তীতে ঐ প্রাণীর মাধ্যমে এই 'জুনোসিস' বা প্রাণিবাহিত রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায়।' কিন্তু কোন প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস, তা উল্লেখ করেনি। এই নিবন্ধে করোনাভাইরাসের কারণ নিয়ে সর্বপ্রথম যে আলোচনা করা হয়েছে, যতগুলো প্রাণীকে এই ভাইরাসের বাহক মনে করা হচ্ছে, সেখানে আলোচনা করে বলা হয়েছে এসব কোনো প্রাণীই করোনাভাইারসের বাহক নয়। আর লক্ষ বছর আগের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসেরা মানুষকে আবার আক্রমণ করতে শুরু করেছে, এমন গল্পগুলো হয়তো বাজারে আর চলবে না।

    চীন ও ইরান সন্দেহ করছে যুক্তরাষ্ট্রকে; রুশ মিডিয়া দায়ী করছে ব্রিটেনকে; যুক্তরাষ্ট্র বলছে চীন দায়ী। আপনি কার কথা সঠিক বলবেন আর কার কথা ভুল বলবেন! কারো কথাকে সঠিক বলতে গেলে অন্যরা আপনার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলবে। আমরা এসব ‘সন্দেহের তীর নিক্ষেপকারী’দের কথায় কান না দিয়ে একটু বিকল্প পথ খুঁজি।

    করোনাভাইরাসের উপদ্রব শুরু হয় চীনে, এটাতো সত্য, মিথ্যা বা ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য নয়! চীন শুরু থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে অনেক লুকোচুরি খেলেছে। চীনের পর বিশ্বের অনেক দেশে এই ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো দেশের বিরুদ্ধে এরকম লুকোচুরি বা তথ্য গোপনের অভিযোগ নেই। চীনের করোনাভাইরাস নিয়ে লুকোচুরির একটা উল্লেখযোগ্য দিক এটাও যে, চীনে করোনাভাইরাসে সত্যিই কতজন আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে, তা কেউ নিশ্চিত হতে পারছে না। কেন? শুধুই লুকোচুরির কারণে। উদাহরণ দেখা যাক:

    'চীনে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ২৫ হাজার: তাইওয়ান মিডিয়ার দাবি' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব। করোনাভাইরাসের কারণে অচল হয়ে পড়েছে চীন। চীনের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

    দেশটির সরকারি তথ্যমতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে চীনে। এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ১৮ জন।
    তবে শুরু থেকেই চীনের গণমাধ্যমগুলো থেকে করোনাভাইরাসের মৃত্যুর সংখ্যা লুকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
    মৃতের সঠিক সংখ্যা জানালে চীনজুড়ে আতঙ্ক বেশি ছড়িয়ে পড়বে এমন যুক্তিতেই সঠিক তথ্য জানাচ্ছে না চীনের সরকার।
    এমন অভিযোগের মধ্যে নতুন এক তথ্য দিল চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট।
    প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবপেজে বলা হয়েছে, ৫৬৮ নয় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৫৮৯ জনের। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ জন। তাইওয়ান নিউজের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
    খবরে বলা হয়, গত শনিবার টেনসেন্টের ওয়েবপেজে ‘মহামারি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ’ শিরোনামে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৮৯ জন। অথচ সরকারি তথ্যে হাজারের কাছাকাছিও নয়। এছাড়া ওই ওয়েবপেজে আক্রান্তের সংখ্যা বলা হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ জন। যা সরকারি তথ্য আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে দশগুণ বেশি। তবে এমন তথ্য দেয়ার কিছুক্ষণ পরই তথ্য সংশোধন করে নেয় ওয়েবপেজ কর্তৃপক্ষ। এরপরই সরকারি হিসাবটি লিখে দেয়া হয় সেখানে।
    কিন্তু এরইমধ্যে ওয়েবপেজের আগের পরিসংখ্যানটির স্ক্রিনশট করে নিয়ে নেয় অনেকে। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। উহান থেকে ছড়িয়ে যাওয়া নভেল করোনাভাইরাস বিষয়ে ওয়েবপেজের এই পরিসংখ্যান নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি ভুল নাকি টেনসেন্টের তথ্য ফাঁস, এমন প্রশ্নই এখন চলছে নানা মহলে।' [https://www.jugantor.com/international/275480]


    একই রকম আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'তথ্য ফাঁস: করোনা ভাইরাসে চীনে ২৫ হাজারের মৃত্যু!' শিরোনামে। সেখানে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৫ শত ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে চীন সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস করেছে চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট।

    সরকারি তথ্য অনুযায়ী হুবেই প্রদেশের উহানে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে চীনে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৩ জনের। আর হংকং এবং ফিলিপাইনে মৃত্যু হয়েছে আরও দুইজনের। সবমিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৬৫। এ রোগে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজারের বেশি। খবর ডেইলি মেইল অনলাইন'র। ...
    উহান থেকে ছড়িয়ে যাওয়া নভেল করোনা ভাইরাস বিষয়ে চীনা সরকারের পরিসংখ্যান নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরমধ্যে টেনসেন্টের এই পরিসংখ্যান চীনা কর্তৃপক্ষকে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। উহানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তাদের মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে বলেও অভিযোগ রয়েছে।' [https://www.ekushey-tv.com/91410]

    'চীনে করোনা আক্রান্তদের মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরা সাংবাদিক নিখোঁজ' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা এক সাংবাদিক নিখোঁজ রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না চেন কুইউশি নামের ওই সাংবাদিকের । তিনি করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান শহরের করুণ দৃশ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন বলে জানা গেছে। খবর ডেইলি মেইল এর।

    চীনে ভাইরাসে 'জাতীয় নায়ক'খ্যাত চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং (৩৪) এর মৃত্যুর পরই এই সাংবাদিক নিখোঁজের খবরটি সামনে এসেছে। এ ঘটনায় চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ করেছেন অনেকেই। ডেইলি মেইল বলছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনে একাধিকবার রিং দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি বলে ঐ সাংবাদিকের পরিববার অভিযোগ করেছেন।

    সাংবাদিক কুইউশি তার প্রতিবেদনে উহান শহরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরবর্তী শহরের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছিলেন। হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের আত্ম-চিৎকার, রোগীতে ঠাসাঠাসি হাসপাতালের পরিবেশ ও রাস্তায় পড়ে থাকা মরদেহ নিয়ে তৈরি তার প্রতিবেদনগুলো ছিল অত্যন্ত মানবিক আবেদনে ভরা ও মর্মস্পর্শী। তার একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, হুইল চেয়ারে মরে পড়ে থাকা স্বজনের পাশে বসে ফোনে আত্মীয়দের সঙ্গে বিলাপের সুরে কথা বলছেন।
    এদিকে, চীনে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৩ জনে। এখন পর্যন্ত প্রতিষেধকবিহীন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৮০০ জন। এর মধ্যে চীনের হুবেই প্রদেশে ২৭ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ও নিহতের এই চিত্রটা চীনের সরকারি তথ্য হলেও মূলত ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৫৮৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩ জন। এমনই তথ্য ফাঁস করেছে চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/02/09/500231]

    এই প্রতিবেদনটি ডেইলী মেইলের সূত্রে তৈরি করা হয়। ডেইলী মেইলে 'Three Beijing activists 'disappear after saving backup copies of censored coronavirus-related reports' শিরোনামে এএফপি'র সূত্রে তৈরিকৃত ২৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Three Beijing-based internet activists have disappeared and are believed to be detained by police for saving backup copies of censored coronavirus news stories online, according to a relative.


    China has faced criticism over its handling of the outbreak, including punishing whistleblowers who tried to warn about the new virus.

    Multiple activists and journalists have allegedly vanished after criticising Beijing's handling of the epidemic.

    Chen Mei, Cai Wei and Cai's girlfriend surnamed Tang -- who contributed to a crowd-sourced project on the software development platform GitHub -- went missing on April 19, according to Chen's brother Chen Kun.

    The volunteer-driven project, named Terminus2049, preserved articles that were blocked or removed from mainland news outlets and social media by China's aggressive online censorship.

    Two of the volunteers, Cai and Tang, were charged with 'picking quarrels and provoking trouble' and are currently under 'residential surveillance at a designated location', according to a notice from Beijing's Chaoyang District police received by their families, and seen by AFP.

    Chen Kun said that he is still waiting on official confirmation from Chaoyang police that his younger brother, aged 26, has been detained.

    'I understand that Cai and Tang disappeared around the same time as Chen Mei,' Chen told AFP.

    'Given that both Chen and Cai were contributors to the Terminus2049 project, we suspect their disappearance was related and relevant to the project.'

    News of Chen and Cai's apparent disappearance was first reported by a Twitter account, known as 'southern_idiot', on April 25.

    The account also released a picture of a notice issued by police to Cai's family.

    The online project included many sensitive coronavirus stories published in recent months, such as personal narratives by Wuhan citizens and an infamous interview with Wuhan Central Hospital doctor Ai Fen, one of the earliest virus whistleblowers.

    The article, published by 'People' magazine in March, was widely circulated by Chinese netizens in a number of languages and formats -- including Morse code -- to evade censorship after it was abruptly pulled from the internet.

    As China tries to control the domestic narrative surrounding the chaotic initial months of the outbreak, similar crowd-sourced initiatives have flourished on GitHub, which is used by an increasing number of tech-savvy Chinese as a last frontier against ever-tightening internet censorship.

    Owned by Microsoft, the US-based website remains accessible in China although the Terminus2049 page is blocked.

    News of the Terminus2049 trio's disappearance made a stir online in Chinese activist circles.

    'What quarrels were they picking, and what troubles were they provoking? Show me legal proof,' said the outspoken Tsinghua University sociology professor Guo Yuhua on Twitter Sunday, referring to Cai and Tang's charges.

    'Picking quarrels and provoking trouble' is a vaguely defined charge often used by Chinese authorities to target activists and dissidents, which carries a prison sentence of up to five years.

    The administrators of 2019nCoVMemory -- another GitHub coronavirus archive -- made the 'protective' move to restrict access to its site to members only, according to an email sent to subscribers that was circulated on Weibo.

    Chaoyang public security bureau and the administrators of 2019nCoVMemory have not responded to requests for comment.

    'Residential surveillance in a designated location', which Cai and Tang are reportedly under, is often arbitrarily used by the Chinese authorities to silence people who are critical of government leaders, especially of President Xi Jinping, according to Patrick Poon, a former researcher at Amnesty International.
    Mr Poon previously told MailOnline: 'The provision's justification is that allowing lawyers' visit might interfere with the police's investigation.
    'As nobody except for the police would know where the person is detained. It's de facto incommunicado detention, and thus secret detention, which violates international human rights law.
    'Without access to a lawyer of the person's choice or their family, the person can be subject to torture and other ill-treatment.'
    Emerging in the Chinese city of Wuhan in December, the coronavirus pandemic has killed more than 207,000 people and infected around three million.
    Three Chinese citizen journalists have gone missing while reporting about the outbreak from Wuhan independently.
    Two of them, Chen Qiushi and Fang Bin, disappeared in February after uploading videos of corpses being loaded and hospital overrun by patients to YouTube and Twitter, both banned in mainland China.
    The third journalist, Li Zehua, re-appeared last week after vanishing from public sight fore more than two months. He claimed he was detained and forcibly quarantined by police.
    Chen, Fang and Li were among several Chinese citizens who were believed to be punished for speaking out about the pandemic.
    Ren Zhiqiang, a tycoon and prominent Communist party member, went missing after calling President Xi a 'clown' over his handling of the crisis.
    The 69-year-old is being investigated on suspicion of a 'severe violation of discipline and law', a Chinese authority said last week.
    An outspoken activist who openly called Chinese President Xi 'not clever enough' and demanded the leader step down over 'the coronavirus catastrophe' could be facing months of torture in secret detention, human rights groups have warned.

    Xu Zhiyong, a former law lecturer, has allegedly been charged with 'inciting state subversion' after being detained on February 15.
    The 47-year-old is being kept in a classified location and at 'serious risk' of torture and ill-treatment, according to experts.
    Ai Fen, a Wuhan doctor who was among the first to alert other medics about the spread of coronavirus was also thought to be detained, reports suggest.
    The ER doctor said she was safe and working in a short video uploaded to her social media account on April 13.

    Coronavirus whistle-blowers remain missing two months after exposing the true scale of the outbreak from Wuhan

    Two whistle-blowers who tried to inform the world about the true scale of the coronavirus outbreak in Wuhan are still missing two months after vanishing from the public sight.

    The whereabouts of Chen Qiushi and Fang Bing have been a mystery since February, and Chinese officials have not publicly commented on them.
    The citizen journalists had sought to expose the true scale of the outbreak from the then epicentre by uploading videos to YouTube and Twitter, both banned in mainland China.
    All of their dispatches revealed a grim side of Wuhan unseen on state-run Chinese media outlets.
    Chen, 34, has not been heard from since 7pm local time on February 6.
    He arrived in Wuhan just before the city went into lockdown in hopes of providing the world with the truth of the epidemic, as he said himself.
    His reports detailed horrific scenes including a woman frantically calling family on her phone as she sits next to a relative lying dead in a wheelchair and the helpless situation of patients in the overstretched hospitals.
    He had been planning to visit a 'fang cang' makeshift hospital before evaporating.
    His disappearance was revealed by a post on his Twitter account, which has been managed by a friend authorised to speak on his behalf.
    His mother has posted a video calling for his safe return.
    One of his latest posts on his Twitter read: 'Who can tell us where and how Chen Qiushi is right now? When will anyone get to speak with him again?
    'Chen Qiushi has been out of contact for 79 days after covering coronavirus in Wuhan. Please save him!!!'
    Fang Bin, a Wuhan resident, went missing on February 9 after releasing a series of videos, including one showing piles of bodies being loaded into a bus.
    He had been arrested arrested briefly before disappearing, it is alleged.

    His last video showed hazmat-donning officers knocking on his door to measure his body temperature.
    Fang is seen in the video trying to fend off the officers by telling them his temperature is normal, according to Radio Free Asia (RFA).
    Another journalist Li Zehua, 25, also disappeared for about two months.
    A former employee of state broadcaster CCTV, Li was reporting from Wuhan independently. He was said to be last heard on February 26 before going missing.
    Before that, he had visited a series of sensitive venues in Wuhan, such as the community that held a huge banquet despite the epidemic and the crematorium which was hiring extra staff to help carry corpses, RFA added.

    The news outlet said Li was likely targeted by secret police after visiting the Wuhan Institute of Virology.
    The £34million institute has been at the centre of conspiracy theories, which suggest that the killer virus originated there.
    On April 22, Li reappeared in a public sight through a video on Twitter.
    He claimed he was detained by plainclothes police on February 26 and was interrogated for 24 hours at a police station for 'visiting sensitive places' in Wuhan.
    He said he was then taken into quarantine, first in a hotel then in his hometown.
    He stressed that officers had treated him politely. He said he was given three meals a day and allowed to watch the state news programmes.' [https://www.dailymail.co.uk/news/article-8261025/Three-Beijing-activists-missing-preserving-virus-articles-online.html]

    এই প্রতিবেদনের শেষ দিকে লি জেহুয়া নামক একজন সাংবাদিকের নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি পরিদর্শন করার পরে লি সম্ভবত গোপন পুলিশের টার্গেটে পড়েছিল।
    কিন্তু করোনাভাইরাসের উপদ্রব চলাকালে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি পরিদর্শন করতে বিধিনিষেধ ছিল কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কী বলবে চীন?
    এই নিবন্ধ এই পর্যন্ত যারা পড়েছে, এই প্রশ্নের উত্তর তারা সহজেই বুঝে নিতে পারবে।

    এবার আরেকটি প্রশ্ন। 'কথায় কথায় করোনাভাইরাস' শিরোনামে প্রথম আলোয় ১৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের উহান শহরের সেন্ট্রাল হসপিটালে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন লি ওয়েনলিয়াং। তিনিই মারাত্মক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে তাঁর সহকর্মীদের প্রথম সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকে চীনের জননিরাপত্তা ব্যুরোর হেনস্তারও শিকার হতে হয়। পরে তো সবাই জানতে পারে ভাইরাস সম্পর্কে লির কথাই সত্যি। তত দিনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় লি চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবুতে তাঁর গল্প শেয়ার করেছিলেন। পোস্টে চিকিৎসাধীন অবস্থার একটি ছবিও দিয়েছিলেন। চীনের স্থানীয় সময় ৬ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় লি মারা যান।' [https://www.prothomalo.com/pachmisheli/article/1644766

    'করোনাভাইরাস: চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার মামলা, যা জেনে রাখতে পারেন' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২২ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে এই মামলাটি করা হয়েছে। রাজ্যের অ্যাটোর্নি জেনারেল এরিক শ্মিট বলেছেন, "চীনা সরকার বিশ্বের কাছে মিথ্যা বলেছে। এই ভাইরাসের বিপদ ও সংক্রমণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়নি। যারা সতর্ক করার ছিল তাদের মুখে কুলুপ এটে দিয়েছে। এই রোগটি থামাতে তারা সাহায্য করেনি।" [https://www.bbc.com/bengali/52377778]

    প্রশ্ন হচ্ছে, মারাত্মক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেয়ার জন্য তাঁকে কেন চীনের জননিরাপত্তা ব্যুরো হেনস্তা করেছিল? এটা কেন তাঁর অপরাধ হলো? এটা তো বরং চীনের জন্য ভালো হবার কথা!

    এই রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার পর সম্ভাব্য উত্তর এবং চীন ও করোনাভাইরাসের আনুষাঙ্গিক সব বিষয় একত্রে সামনে আনলে সম্ভাবনাটা সত্যের একেবারে কাছাকাছি চলে আসে। শুধু চীন তা স্বীকার করলেই নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু চীন কি কখনো স্বীকার করবে? যেই চীন শুরু থেকেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছে, শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের উপদ্রবের ঘটনা প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, করোনাভাইরাস যখন চীনের সীমানা ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ভয়াবহ মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে, তখন সেই চীন কোন বিবেচনায় আর প্রকৃত ঘটনা স্বীকার করবে!

    আরো কিছু লুকোচুরি সম্পর্কে জানা যাক:
    'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে মেরে ফেলতে চায় চীন! ' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে  ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে মেরে ফেলতে চীন সরকার আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
    সম্প্রতি ab-tc.com-City News নামক একটি সংবাদমাধ্যমের একটি রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম 'এই সময়'।
    ওই রিপোর্টের শিরোনামে লেখা হয়েছে, ২০ হাজার করোনভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের প্রাণে মারতে উদ্যোগী হয়ে কোর্টের অনুমতি চাইছে চীন সরকার।
    রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, সংক্রমণ যাতে আর না ছড়িয়ে পড়ে তা বন্ধ করতেই মূলত এই চিন্তাভাবনা করছে জিনপিংয়ের দেশ। আর এই খবর বহু মানুষ নানান সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

    তবে ইংরেজিতে লেখা সেই রিপোর্টের প্রথম বাক্যেই China কে লেখা হয়েছে Chhina লেখা হয়েছে, 'করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে মারতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম পিপলস কোর্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় সরকার'।
    ওই রিপোর্টে একটি ডকুমেন্টের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে 'স্টেট' কোর্টের কাছে লিখছে, 'এই দেশটা হয়তো সব নাগরিকদেরই হারাবে, যদি না খুব শিগগিরই ওই আক্রান্তরা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য আরও মানুষকে বাঁচান।'
    তবে ab-tc.com ওয়েবসাইটটি কোনো বাইলাইন (রিপোর্টারের নাম) ছাড়াই কেবলমাত্র স্থানীয় সংবাদদাতা লিখেই এই গুরুতর খবরটি প্রকাশ করেছে।
    এই ওয়েবসাইটটি ছাড়া আর কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়া এ ধরনের কোনো খবর প্রকাশ করেনি।

    যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তার নীচে কোনো ডিসক্লেইমার দেয়া হয়নি। এমনকি রিপোর্টটি ফিকশন নাকি স্যাটায়ার তারও কিছুই জানানো হয়নি।
    এদিকে Snopes fact-check-এর পক্ষ থেকে এই রিপোর্টের সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কীভাবে দিনের পর দিন একটা ওয়েবসাইট এই ধরনের ভুয়ো খবর প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, এই ধরনের ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য এই ওয়েবসাইটকে বিশ্বাস করা যাবে না।
    চীনের সুপ্রিম পিপলস কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এই ধরনের কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়নি।' [https://www.jugantor.com/international/276090]

    'বাড়ি বাড়ি ঢুকে রোগী ধরছে চীন' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন কর্মকর্তারা। কারও দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। এরপর হাসপাতাল কিংবা কোনো ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ ক্যাম্পে যেতে না চাইলে জোর করেই নেয়া হচ্ছে তাকে। দেশজুড়ে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে ব্যাপক নজরদারি চালানো হচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন ও রোবটের মতো উন্নত সব প্রযুক্তি। রোগীর কাছে খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিতেও রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। করোনার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এর বিরুদ্ধে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী সুন চুনলুনের 'গণযুদ্ধে'র ডাক দেয়ার পরই আরও সোচ্চার হয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে চীন সরকার মেরে ফেলতে চায় বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষ আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। খবর রয়টার্সের।

    একজন রোগীকে আটক করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এমন একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, উহানের চাংকিংয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে কোয়ারিন্টিনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সুট-প্যান্ট-টাই পরা কর্মকর্তারা। কিন্তু ওই ব্যক্তি হঠাৎ করেই দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। হতচকিত কর্মকর্তারা দ্রুত তার পিছু ধাওয়া করেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংহাইয়ের কাছাকাছি সুঝৌ এলাকায় প্রতিরোধক পোশাক পরিহিত কর্মকর্তারা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে তার বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনছেন।

    চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার উহানের সব সন্দেহভাজন রোগী এবং যাদের সঙ্গে কোয়ারিন্টিনে রাখা ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন সবাইকে কোয়ারিন্টিনে রাখার আদেশ দিয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী সান চুনলুন জানিয়েছেন, চার ধরনের লোককে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারিন্টিন বা সাময়িক অন্তরীণ কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে- নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত, সন্দেহভাজন ব্যক্তি, আক্রান্ত দু'জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এমন ব্যক্তি এবং যাদের দেহে জ্বর রয়েছে। এদিকে, চীন সরকার করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের হত্যা করতে আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। চীনা একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের বরাতে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম 'এই সময়' জানায়, সংক্রমণ বন্ধ করতেই মূলত এই চিন্তাভাবনা করছে শি জিনপিংয়ের দেশ। রিপোর্টে একটি ডকুমেন্টের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে 'স্টেট' কোর্টের কাছে লিখছে, 'এই দেশটা হয়তো সব নাগরিকদেরই হারাবে, যদি না খুব শিগগিরই ওই আক্রান্তরা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য আরও মানুষকে বাঁচান।'

    অন্য দিকে, করোনাভাইরাস শনাক্তে মানুষের তাপমাত্রা পরীক্ষায় রোবট নামিয়েছে চীন। সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়াতেই ব্যবহার করা হচ্ছে এই রোবট। এই ভারাইসটি শনাক্ত করতে গিয়ে চীনে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী। এরই মধ্যে গুয়াংডং প্রদেশের গুয়াংঝু শহরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছে ফাইভজি চালিত রোবট। শরীরের তাপমাত্রা দেখার পাশাপাশি মাস্ক না পরেই কেউ ঘোরাফেরা করছেন কিনা সেদিকে নজর রাখছে তারা। এটি একসঙ্গে অনেকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন রোবটটির নির্মাতা ঝাং শাওফেই। যখনই কারো শরীরে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা পড়ছে এটি সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির ছবি তুলছে। এছাড়া রোগীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে রোবট। চীনের নানজিংয়ের এক হাসপাতালে এমন রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। তাই রোগীর সংস্পর্শেই ছড়িয়ে যাচ্ছে ভাইরাস। একজন রোগীকে দেখভালের জন্য চিকিৎসককে তার কাছে যেমন যেতেই হচ্ছে, তেমনি ওষুধপত্র নিয়ে তার কাছে যাচ্ছেন নার্সরা। রোগীর খাবারদাবার পৌঁছে দিতে হাসপাতাল কর্মীরাও তার কাছে যাচ্ছেন। এসব ঝুঁকি এড়াতে রোবট ব্যবহার করছে চীন।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/276962]

    চীন এই দু'টি প্রতিবেদনের বক্তব্য সরাসরি গুজব বলেই উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু চীনে যদি শুরু করোনাভাইরাস নিয়ে লুকোচুরি, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, সাংবাদিক নিখোঁজ ইত্যাদির মতো কোনো ঘটনা না ঘটতো, তাহলে চীন নয়, অন্যরাও এগুলোকে গুজব বলেই বিশ্বাস করতে পারতো। অবশ্য তখন চীনে এমন ঘটনাও ঘটতো না আর ঘটলেও গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে সংবাদগুলো চলে আসতো। অথচ এখন কী হচ্ছে? অনেক তথ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে আসার পরও তা মুছে দিতে হচ্ছে, কোনো সংবাদ মাধ্যম অনেক সাহসের সাথে কোনো কোনো তথ্য প্রকাশের পরও বিভিন্ন ফেক্ট চেকার ওয়েবসাইট তা ভুল প্রমাণের চেষ্টা করছে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সেরকম সংবাদ প্রকাশ না হওয়াতে।

    একটু আগে ডেইলী মেইলের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারলাম, 'Fang Bin, a Wuhan resident, went missing on February 9 after releasing a series of videos, including one showing piles of bodies being loaded into a bus (একটি বাসে লাশের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এমন ছবি দেখানো একটি ভিডিওসহ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশের পরে ফুং বিন নামে একজন উহানের বাসিন্দা নিখোঁজ হন)।' এই নিখোঁজ হবার সাথে এই দু’টি প্রতিবেদনের কি কোনো সাদৃশ্য নেই? সচেতন মানুষ এর জবাব দেবে।

    চীনের উহানে অবস্থিত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো রাসায়নিক মারণাস্ত্রের বিষক্রিয়ার ফলেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এটা উহানের মাছের বাজার থেকেও সৃষ্ট নয়, ছোঁয়াচেও নয়; রাসায়নিক মারণাস্ত্রের বিষক্রিয়ার ফলেই সৃষ্ট। এই কথাটা বিশ্বাস করার জন্য এই লেখার শুরু থেকে এই পর্যন্ত সব কথা বলা হয়েছে। তবু কারো যদি এখনো তা বিশ্বাস করতে দ্বিধা থাকে, তাদের জন্য আর মাত্র দু'টো বিষয় উল্লেখ করা হবে।

    (১) প্রথমে কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:

    'Up to 10 percent of recovered coronavirus patients test positive again, report says' শিরোনামে ৩০ মার্চ ২০২০ তারিখে ফক্স নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Jackie Salo | New York Post) বলা হয়, 'As many as 10% of recovered coronavirus patients in China tested positive again after being discharged from the hospital, according to a report.

    Doctors on the front lines of the outbreak in Wuhan, China — where the virus emerged — reported that between 3 and 10% of cured patients became reinfected with the illness, though it's unclear whether they were contagious the second time, the South China Morning Post reported.

    Tongji Hospital, which identified the first COVID-19 case, confirmed that five of 145 patients — a little over 3% — tested positive again in nucleic acid tests, according to state broadcaster CCTV.
    ''So far there is no evidence to suggest that they are infectious,'' said Wang Wei, the hospital’s president.

    He said the five patients who tested positive again did not have any symptoms and none of their close contacts had been infected.
    Wang added that surveillance of similar patients showed that 80 to 90% had no trace of the virus in their system one month after being discharged from the hospital, according to the report.

    But, he said, these are just ''small samples'' and ''not enough to assure us of the validity of our initial findings.''

    ''We need a large-scale epidemiological study to guide our disease surveillance and prevention works,'' Wang said.

    Meanwhile, other quarantine facilities in Wuhan have seen about 5 to 10% of their recovered patients test positive again. The findings were reported by the health news outlet Life Times, which is affiliated with state-run newspaper People's Daily.

    The studies come as health officials around the world are testing the concept of taking plasma from someone who has been infected, processing it and injecting the antibodies into a sick person to stimulate their immune system.' [https://www.foxnews.com/health/up-to-10-percent-of-recovered-coronavirus-patients-test-positive-again-report-says]


    'মাত্র ২৪ ঘণ্টাতেই আক্রান্ত ৯৯, ফের করোনা-আতঙ্কে কাঁপছে চিন' শিরোনামে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় ১২ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চিনে ফের নতুন করে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক! চিনের মূল ভূখন্ডে এক দিনেই প্রায় একশো জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার সে দেশে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯৯ জনের দেহে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। সংখ্যার নিরিখে যা শুক্রবারের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। চিনের সরকারি মাধ্যমে টুইট করে জানানো হয়েছে, এক দিনে আক্রান্তের নিরিখে এটি একটি রেকর্ড।
    চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এএইচসি) জানিয়েছে, গত ৬ মার্চের পরে এই প্রথম চিনে এক দিনে এত জন করোনায় সংক্রমিত হলেন। চিনে এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৯৬ জন। বিশ্বের করোনা-আক্রান্তের নিরিখে আমেরিকা, স্পেন, ইটালি, ফ্রান্স এবং জার্মানির পরেই ছ’নম্বরে রয়েছে শি চিনফিংয়ের দেশ। ওই দেশের হুবেই প্রদেশের উহান থেকেই প্রথম এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে। ইতিমধ্যেই হুবেই প্রদেশে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২১৯ জনের।
    এক দিকে, নতুন করে এই রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণের ফলে যেমন চিন্তিত চিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক, অন্য দিকে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের বাহ্যিক উপসর্গ নেই, অথচ সংক্রমণ ঘটেছে, এমন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হারও। গত কাল চিনে এ ধরনের ৬৩টি কেস সামনে এসেছে। সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুক্রবার ওই সংখ্যাটা ছিল ৩৪। পাশাপাশি, যে ৯৯ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র দু'জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা বিদেশফেরত।

    ওই ৯৯ জন সংক্রমিতের মধ্যে বেশির ভাগই ছড়িয়ে রয়েছেন চিনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইতে। সেখানকার মিউনিসিপ্যাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, গত কাল সাংহাইতে ৫২ জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ওই ৫২ জনের প্রত্যেকেই বিদেশফেরত। এর মধ্যে ৫১ জনই শুক্রবার একই উড়ানে রাশিয়া থেকে সাংহাইতে ফিরেছিলেন। অন্য এক জন কানাডা থেকে ফিরেছিলেন। সাংহাইয়ের মতো চিনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। হেইলংজিয়াং প্রদেশে যে ২১ জন সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁরাও সকলে রাশিয়া থেকে দেশে ফিরেছিলেন বলে জানিয়েছে চিন।

    বিদেশফেরতদের মাধ্যমে করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। রাশিয়ার দিকে সুইফেনহে সীমান্ত আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেইলংজিয়াং প্রশাসন।' [https://www.anandabazar.com/international/coronavirus-99-new-coronavirus-cases-within-24-hours-in-china-dgtl-1.1135233]

    'ভয়ংকর তথ্য! সুস্থ হয়েও আবারও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে চীনে' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২৭ মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের উহান থেকে বিশ্বের অন্তত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে আঘাত হানে করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫,৪১০ জন। এছাড়াও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৬৫,০৪৪ এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১,২৯,৩০৯ জন। 
    এদিকে, করোনাভাইরাসের করাল গ্রাস থেকে অনেকটাই নাকি নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে চীন। এই আশার বাণীর মধ্যেই নতুন করে শোনা গেল এক ভয়াবহ তথ্য। চীনে সুস্থ হয়ে যাওয়া করোনা আক্রান্তদের ১০ শতাংশের শরীরে ফের মিলেছে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি।
    একটি রিপোর্ট অনুযায়ী চীনের সুস্থ হয়ে যাওয়া করোনা আক্রান্তদের মধ্যে তিন থেকে দশ শতাংশের দেহরসের পরীক্ষায় ফের করোনাভাইরাস পজিটিভ মিলেছে। তবে নতুন করে করোনা আক্রান্তরা একইরকম ছোঁয়াচে কিনা, তা এখনও সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে সেরে যাওয়ার পরেও নতুন করে করোনায় সংক্রামিত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে চীনজুড়ে।
    চীনের উহানেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। নতুন করে আক্রান্তদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
    উহানের তোংজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ১৪৫ জনের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।' সূত্র: এইসময়। [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/03/27/514807]

    'চরিত্র বদলাচ্ছে করোনা, চীনে সুস্থ হওয়া ৩ থেকে ১০ শতাংশ ফের আক্রান্ত!' শিরোনামে কালের কণ্ঠে ২৮ মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। একের পর এক দেশে মহামারির মতো অবস্থা। ভয়াল হচ্ছে মৃত্যু মিছিল। যদিও যে শহর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র বলছে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে চীনের। চীনে করোনা সংক্রমণ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের তিন থেকে ১০ শতাংশ ফের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর পরীক্ষা করে তাদের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। আর তা এখন যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    চীনের উহান শহর ছিল করোনা ভাইরাসের মূল কেন্দ্রবিন্দু। শহরটির টোংজি হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুব কাছ থেকে দেখেছেন করোনা জীবাণুর চরিত্র বদল। টোংজি হাসপাতাল জানিয়েছে, নিউক্লিয়ার অ্যাসিড টেস্টে দেখা যাচ্ছে, ১৪৭ জন রোগীর মধ্যে পাঁচজন; অর্থাৎ তিন থেকে পাঁচ শতাংশ সেরে ওঠা রোগী ফের করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও তাদের শরীরে কোনো উপসর্গ ছিল না, তাদের সংস্পর্শে থাকা কারো শরীরে এই রোগ ছড়ায়নি এখনো পর্যন্ত। তাও সবাইকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। 

    চীনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার পেরিয়েছে, মৃতের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। সংক্রমিত ৯০ শতাংশের বেশি রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চার হাজার তিনশর মতো রোগীর এখনো চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এই পরিস্থতিতে নতুন করে সংক্রমণ ভাবাচ্ছে দেশাটর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। 
    তবে এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা চলছে। গবেষকরা খতিয়ে দেখছেন যে, করোনা রোগীরা সেরে ওঠার পর ফের তাদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা আছে। টোংজি হাসপাতালের চিকিৎসকরাই প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ চিহ্নিত করেন। অন্য দেশের তুলনায় চীনে রোগীরা অনেক বেশি সংখ্যায় সেরে ওঠায় তাদের গবেষণা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

    হাসপাতালটির প্রেসিডেন্ট ওয়াং বলেছেন, হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার এক মাস পর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর শরীরে করোনা সংক্রমণ মেলেনি। যদিও তার মতে, খুব অল্প কয়েকজনের মধ্যে পরীক্ষা চলেছে, তাই তাদের অনুসন্ধান চূড়ান্ত কি-না তা বোঝার সময় এখনো হয়ে ওঠেনি। ইউহানের অন্যান্য হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠার পরেও ফের করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।'

    সূত্র : কলকাতা টোয়েন্টিফোর। [https://www.kalerkantho.com/online/world/2020/03/28/891828]

    এই চারটি প্রতিবেদন মতে চীনে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ একেবারে শূণ্যের ঘরে নেমে আসার পর নতুন করে মানুষ আবার করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করে। উহানে এমন সব লোক নতুন করে আক্রান্ত হতে শুরু করে, যারা উহানেরই বাসিন্দা। অন্যদিকে উহান ছাড়া অন্য শহরে যাদের করোনা শনাক্ত হয়, তাদের প্রায় সবাই বিদেশফেরত। দ্বিতীয় প্রতিবেদন দেখলেই বুঝা যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের সংস্পর্শে থাকা কারো শরীরে এই রোগ ছড়ায়নি এখনো পর্যন্ত। এটাও বলা হয়, এখনো পর্যন্ত সেগুলোকে সংক্রামক বলে প্রমাণ করার মতো কোনো প্রমাণ নেই।

    মূলকথা হলো, চীনের উহান ছাড়া অন্য যেসব শহরে পরে করোনা রোগী পাওয়া গেছে, সেসব শহরে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি, বরং ছড়িয়েছে বিদেশ থেকে সংক্রমিত হয়ে করোনা নিয়ে ফেরা করোনা রোগী। আর উহানে উহানের বাসিন্দরাই নতুন করে করেনায় আক্রান্ত হয়েছে। এসবের কারণ কী?
    কারণ হচ্ছে উহানের বাতাসে ছড়িয়ে পড়া রাসায়নিক মারণাস্ত্রের অস্তিত্ব পুরোপুরি মিলিয়ে না যাওয়ার কারণেই নতুন করে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, সি ফুড মার্কেটের সাথে সম্পর্ক ছাড়াই। আর উহান ছাড়া অন্য শহরের বাতাসে যেহেতু আগেও রাসায়নিক মারণাস্ত্র মেশেনি, তাই সেসব শহরের অধিবাসীরা করোনায় আক্রান্তু হয়নি, সেসব শহরে শুধু বিদেশ থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগী ফিরে এসেছে, রোগ ফিরেনি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, উহানে করোনায় সংক্রমণ শূন্যের ঘরে নিয়ে আসার পর উহানের যারা নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন, তারা কার কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন? যদি কারো কাছ থেকে সংক্রমিত না হয়ে থাকেন, তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রামক বা ভাইরাস হয় কী করে? কখনোই হতে পারে না।

    এই প্রশ্নের চেয়েও বড় প্রশ্ন, যদি সংক্রামক না হয়, তাহলে তারা কোত্থেকে করোনায় আক্রান্ত হলো?
    এই বিষয়গুলো নিয়ে যতোই ভাবা হবে, ততোই জট খুলবে রহস্যের।
    তারা করোনায় আক্রান্ত হলো, কারণ উহানের বাতাস থেকে তখনও ওই ক্যামিকেল পুরোপুরি দূর হয়নি, যে ক্যামিকেল উহানে স্থাপিত বায়োলজিক্যাল ল্যাব থেকে গত বছরের শেষদিকে উহানের বাতাশে মিশে যাবার ফলে উহানের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে শুরু করে।

    নিরপেক্ষ মন নিয়ে এই নিবন্ধ শুরু থেকে এই পর্যন্ত যারা পড়েছে, তারা আর কোনোভাবেই ভাবতে পারবেন না, করোনাভাইরাস একটি ভাইরাস, যা ছোঁয়াচে হবার কারণে এক জন থেকে আরেকজনে ছড়ায়; করোনাভাইরাস চীনের উহানের সি ফুড মার্কেট থেকে ছড়ায়নি, কোনো প্রাণী থেকে ছড়ায়নি; বরং উহানের ল্যাবরেটরি থেকেই ছড়িয়েছে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে। এটা কিন্তু কোনো অভিযোগ নয়, অনেকটা প্রমাণিত সত্য।

    যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে বলে আসছে চীনের ল্যাব থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। ১ মে ২০২০ তারিখে জার্মানির ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে রয়টার্স ও এপি'র সূত্রে 'উহানের পরীক্ষাগার থেকেই করোনা ছড়িয়েছে: ট্রাম্প' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ফের চীনকে আক্রমণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক সম্মেলনে ফের ট্রাম্প দাবি করলেন, উহানের পরীক্ষাগার থেকেই করোনা ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কাছে প্রমাণ আছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এক হাত নিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, সংস্থাটি চীনের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে।

    প্রায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের জন্য চীনকে কাঠগড়ায় তোলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে একাধিকবার তিনি বলেছেন, চীন চাইলে করোনার সংক্রমণ রোধ করতে পারতো। উহানের ভাইরোলজির ল্যাব থেকে করোনা ছড়িয়েছে বলেও আগে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, অ্যামেরিকা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, তাঁর হাতে প্রমাণ আছে। কিন্তু ঠিক কী প্রমাণ আছে, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সময় মতো সব প্রকাশ পাবে।

    একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এ দিন ফের আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, সংস্থাটি চীনের মুখপত্র হয়ে কাজ করছে। চীন তাদের যা বলতে বলছে, সংস্থাটিও ঠিক তা-ই বলছে। এ বিষয়েও অ্যামেরিকা তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
    ট্রাম্পের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকে মুখপাত্র গেং শুয়াং বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, 'কী ভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তা বিজ্ঞানের এক জটিল বিষয়। বিজ্ঞানীরা তা নিয়ে কাজ করছেন, আলোচনা করছেন। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরাই এ বিষয়ে মন্তব্য করলে ভালো।' ট্রাম্পকে তাঁর পরামর্শ, 'আপনি নিজের দেশে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করুন।' বস্তুত উহানের যে ভাইরোলজির পরীক্ষাগার নিয়ে এত প্রশ্ন, তারাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও ভাবেই তাদের ল্যাবরেটরি থেকে করোনার সংক্রমণ হয়নি। যদিও শুধু ট্রাম্প নন, বিশেষজ্ঞদের একাংশ বার বার ওই পরীক্ষাগারের দিকেই আঙুল তুলছেন। প্রশ্ন উঠছে, এমনটা যে হতে পারে চীন কি তা আগেই জানতো? নইলে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কী করে দ্রুত চীন তার চরিত্র বুঝে গেল এবং লকডাউন ঘোষণা করে দিল? চক্রান্ত মূলক এমন বেশ কিছু তত্ত্ব হাওয়ায় ঘুরছে। ...' [https://www.dw.com/bn/a-53300517]

    (২) আবার আসি ষড়যন্ত্র তত্ত্বে। উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর চীন ছাড়াও অনেক দেশকে দোষারোপ করা হয়। চীনের উহানে যদি ল্যাবটি না থাকতো; করোনাভাইরাসের উপদ্রব ঐ ল্যাব থেকে হয়নি, এই ব্যাপারে যদি চীন নিশ্চিত থাকতো, তাহলে চীন কি করোনাভাইরাসের উপদ্রব এবং আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে লুকোচুরি করতো? অন্য দেশের প্রতি সন্দেহের কথা চীন কি শুরু থেকেই বলে বেড়াতো না? চীন কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই বিষয়ে তদন্ত করতে পরামর্শ বা চাপ দিতো না?
    এখনো, করোনাভাইরাসের উপদ্রব চীন থেকে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাবার পরও চীন জোরগলায় অন্য দেশকে দোষারোপ করছে না কেন? এখনো আমেরিকা যখন চীনকে দোষারোপ করছে, চীন কেন বলছে, 'কী ভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তা বিজ্ঞানের এক জটিল বিষয়। বিজ্ঞানীরা তা নিয়ে কাজ করছেন, আলোচনা করছেন। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরাই এ বিষয়ে মন্তব্য করলে ভালো।' অন্য কোনো দেশকে দোষারোপ না করে বিজ্ঞানের উপর ছেড়ে দিচ্ছে কেন?

    এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চীন কী দেবে, জানি না। তবে বিশ্ববাসীর কাছে এই খবর আছে, ‘দুর্ঘটনার পরপরই গোপনে কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান। [দৈনিক যুগান্তরে ২৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'রাসায়নিক অস্ত্রের কারখানা থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাস?' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ আছে। পুরো প্রতিবেদন উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।] এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের সাথে এই তথ্যের নিবিড় সম্পর্ক আছে।


    নবম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

    সপ্তম অধ্যায়

    করোনাভাইরাস যদি ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত না হয়, তাহলে অন্য দেশে পৌঁছলো কী করে?
    করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ নয়, কোনো ভাইরাসও নয়, এই কথাটা পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য এই নিবন্ধে এই পর্যন্ত অনেক দিক থেকে আলোচনা করা হয়েছে। যদি কারো এখনো বিষয়টা বুঝে না আসে, তাহলে তাকে এই নিবন্ধ প্রথম থেকে আবার পড়তে হবে। বুঝে আসবে না কেন! অবশ্যই বুঝে আসবে। যদি এরপরও বুঝে না আসে, তাহলে তার উচিত তার ১০০ জন কাছের লোককে পড়তে দেয়া, দেখা যাবে, তারা ঠিকই বুঝবে। শুধু চার ধরনের লোকের এই কথা বুঝতে বা মেনে নিতে কষ্ট হতে পারে- (১) নতুন ধারণা মেনে নিতে সবসময় যাদের কষ্ট হয়, (২) সবাই যা বলে, তা বিশ্বাস করতে যারা অভ্যস্ত; নিজে বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখার সামর্থ নেই, (৩) বিজ্ঞানের যে কোনো ধারণা যারা চিন্তাভাবনা করা ছাড়াই বিশ্বাস করতে পছন্দ করেন এবং (৪) এই কথা বুঝে নিলে বা মেনে নিলে নিজে দোষী হয়ে যাবে, এমন কিছু লোক।
    যে কোনো নিরপেক্ষ লোক, চীনের প্রতি যাদের কোনো বিদ্বেষ নেই, বাড়তি ভালোবাসাও নেই, তাদের এই কথা বুঝতে কোনো কষ্ট হবার কথা নয়। উপরের চার শ্রেণির লোকের সৌজন্যে আরো দু’টি তথ্য উল্লেখ করতে হচ্ছে।

    'What is coronavirus, how did it start and how big could it get?' শিরোনামে যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফের ওয়েবসাইটে ৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Sarah Newey and Anne Gulland) বলা হয়,

    'Is the coronavirus airborne?
    There is some debate about whether the disease is airborne – there is no evidence for it yet, but that could change. Airborne viruses linger for a longer period of time than those spread by droplets and can also be spread in air conditioning and ventilation systems.
    The current advice is that the disease can only be spread between close contacts – defined as spending more than 15 minutes within two metres of an infected person.' [https://www.telegraph.co.uk/news/2020/04/07/what-coronavirus-where-covid-19-came-from/]

    এখানে বলা হয়েছে, এটি বায়ুবাহিত হবার পক্ষে এখনও (৭ এপ্রিল তারিখ পর্যন্তও) কোনো প্রমাণ নেই! ১১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে 'New COVID-19 study shows science must come before politics' শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে (by Tom Fowdy) বলা হয়, 'The world is still learning about this virus and in turn making sharp judgements about it whilst experts still puzzle themselves to make sense of all the facts.' [https://news.cgtn.com/news/2020-04-11/New-COVID-19-study-shows-science-must-come-before-politics-PATmnK2yze/index.html]

    এখানে বলা হয়েছে বিশ্ব এখনও (১১ এপ্রিল পর্যন্ত) এই ভাইরাস সম্পর্কে শিখছে। বিশ্ব এই ভাইরাস সম্পর্কে ভালোভাবে শেখা শেষ হবার আগেই এই ভাইরাস নিয়ে অসংখ্য ধারণা আমরা আমাদের মনে পাকাপোক্তভাবে গেঁথে নিয়েছি এবং সেই অনুযায়ী দেশে দেশে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
    এই ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রোগটি বায়ুবাহিত বা ছোঁয়াচে। শুধু এই রোগ নয়, 'বায়ুবাহিত কোনো রোগই নেই পৃথিবীতে', এই কথাটা উপরে যথাযথভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। কারোই বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীতে যদি কোনো বায়ুবাহিত রোগ না থাকে, তাহলে করোনাভাইরাস কিভাবে উহান থেকে অন্যান্য দেশে, পৃথিবীর ২০০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে?

    এই প্রশ্নের উত্তর এই নিবন্ধের কাছে না চেয়ে (১) যারা ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগের ধারণার জন্ম দিয়েছে; (২) যারা পৃথিবীতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নামক কল্পিত ভুতের ধারণা ছড়িয়েছে; (৩) যারা করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর একে 'ভাইরাস' বলে আখ্যায়িত করেছে এবং একে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে বলে জোরোশোরো প্রচার করেছে বা এখনো করছে, এই তিন শ্রেণির মানুষের নিকট চাওয়া উচিত।
    এই তিন শ্রেণির মানুষের কারণেই, এদের 'বাস্তবতাবিবর্জিত এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণহীন' অনুসিদ্ধান্তের কারণেই বিশ্বের মানুষ নানারকম বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত এবং রোগটির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারছে না; এই তিন শ্রেণির মানুষের কারণেই করোনাভাইরাসকে সবাই ছোঁয়াচে/সংক্রামক রোগ ধরে নিয়ে বিভিন্ন ঘটনা বিচার করেছে; চীনে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর চীনসহ পুরো পৃথিবী মানুষের জন্য এক ভয়াবহ গ্রহে অথবা নরকে পরিণত হয়েছে।

    এই তিন শ্রেণির মানুষের কারণেই করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর আপাতদৃষ্টিতে যেসব ঘটনা দেখে 'করোনাভাইরাসকে একটি ছোঁয়াচে/সংক্রামক রোগ' মনে হয়েছে, সেসব ঘটনাকে আরো জঘণ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর যেসব ঘটনায় করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে/সংক্রামক রোগ মনে হয়নি, সেসব ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে; অথবা হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, এমনকি সেসব ঘটনা প্রকাশও করা হয়েছে খুব কম।
    এই তিন শ্রেণির মানুষও এই নিবন্ধ শুরু থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে নিজেদের ধারণা ছুঁড়ে ফেলে নতুন ধারণা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না। এরা করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে মন্তব্য করেছে সহজেই, কিন্তু যখন প্রমাণিত হলো করোনাভাইরাস কোনো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়, তখন এদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়, কিভাবে তাহলে অন্য দেশে রোগটি ছড়িয়েছে, এরা সঠিক উত্তর দিতে হিমশিম খাবে। এদের কারণেই এখন প্রমাণ করতে খুব কষ্ট হবে, ছোঁয়াচে রোগ না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তাহলে অন্য দেশগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে? এই নিবন্ধের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হবে প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে বের করতে, হয়তো সন্তোষজনক উত্তর দেয়া যাবে না। সেজন্য এই নিবন্ধ কিন্তু দায়ী হবে না, দায়ী হবে তারাই, যারা শুরু থেকে করোনাকে ছোঁয়াচে/সংক্রামক বলে পরিস্থিতি জটিল এবং ঘোলাটে করে ফেলেছে।

    উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা রোগী অন্য দেশে করোনা ছড়ায়নি
    প্রথমে আমরা জানবো চীনের উহানে যে রোগের জন্ম, তা বায়ুবাহিত বা ছোঁয়াচে হওয়া ছাড়া পৃথিবীর ২০০টির বেশি দেশে কিভাবে ছড়িয়ে পড়লো? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা আগে পরখ করে দেখি, সত্যিই কি উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্য দেশে যারা গিয়েছে, তারাই কি সেসব দেশে করোনা ছড়িয়েছে?

    চীনের উহানে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আক্রান্ত মানুষ অন্য দেশে যাবার কারণে মনে হয়েছে ভাইরাসটিও অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আসলে কিন্তু তা নয়। ভাইরাসটি অন্য দেশে ছড়ায়নি, ছড়িয়েছে ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ। যেহেতু এই নিবন্ধে ইতোমধ্যে প্রমাণ করা হয়েছে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু মানুষের শরীরে না পারে কোনো রোগের জন্ম দিতে, না পারে এক মানুষের শরীরে বিদ্যমান কোনো রোগ অন্য মানুষের শরীরে ছড়িয়ে দিতে। চীনের উহানে বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ল্যাব থেকে মানুষের জীবন সংহারকারী কোনো ক্যামিকেল উহানের বাতাসে ছড়িয়ে পড়া বা ছড়িয়ে দেয়ার কারনে উহানের মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকরী মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ধুঁকতে ধুঁকতে মরতে শুরু করে। ওই ক্যামিকেল যাদের নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করেছে, তাদের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়ে তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। যাদের ফুসফুসে প্রবেশ করেনি, তারা কিভাবে আক্রান্ত হবে? একজন লোককে বিষাক্ত কোনো সাপ দংশন করেছে। সাপ দংশনের কারণে ওই লোকের রক্তের সাথে সাপের বিষ মিশ্রিত হয়ে সে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ওই লোকের কাছে কেউ গেলে বা ওই লোকের সাথে কারো সংস্পর্শ হলে ওই লোকের রক্তে মিশ্রিত বিষ কি যে লোক তার সাথে মিশেছে বা তার সংস্পর্শে এসেছে, তার শরীরে সংক্রমিত হবে? কোনোভাবেই না।

    উহানের বাতাসে উহানে অবস্থিত বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ল্যাব থেকে প্রাণঘাতি ক্যামিকেল যাদের নাকে প্রবেশ করেছে, তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বাতাসে মিশে তাদের নিঃশ্বাসের সাথে তাদের নাক দিয়ে তাদের শরীরে বা ফুসফুসে 'কোনো রোগ' কিন্তু প্রবেশ করেনি, প্রবেশ করেছে ক্যামিকেল মিশ্রিত 'বিষাক্ত বাতাস'। যার শরীরে ওই ধরনের 'বিষাক্ত বাতাস' প্রবেশ করেনি, 'বিষাক্ত বাতাস' প্রবেশ করার কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে যাবার ফলে’ই শুধু সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবে কিভাবে? কোনো রোগ একজনের শরীর থেকে বায়ুর মাধ্যমে শূন্যে লাফিয়ে আরেকজনের শরীরে যেতে পারে না, এ সম্পর্কে এই নিবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ কোনো রোগ যেমন বায়ুবাহিত বা ছোঁয়াচে নয়, তেমনি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নামক কোনোকিছু মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না বলেও এই নিবন্ধে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং এটা পরিষ্কার, উহানে যারা নির্দিষ্ট এক কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, উহান ছাড়া অন্য এলাকার কেউ শুধু তাদের সংস্পর্শে যাবার কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে না। যে বিষাক্ত বাতাস উহানের নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের ফুসফুসে প্রবেশ করেছে, সেই বিষাক্ত বাতাস পৃথিবীর অন্য এলাকার যাদের ফুসফুসে প্রবেশ করেনি, তারা উহানের নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে এলে কিভাবে একই ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবে? অসম্ভব বিষয়।

    এই জন্যই উহানের এই 'অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকরী নিউমোনিয়া'কে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে প্রচার করা হলেও, এমনকি 'ভাইরাস' নাম দেয়া হলেও এই কথিত ভাইরাসে আক্রান্তরা প্রথম প্রথম যখন অন্য এলাকায় বা দেশে গিয়েছে, তাদের কাছ থেকে সেখানকার কেউ আক্রান্ত হয়নি। উহানে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর শুরুর দিকে (বিশেষ করে জানুয়ারি মাসে) যেসব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ উহান থেকে অন্য এলাকায় বা দেশে গিয়েছে, তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে, তাদের খোঁজ যদি এখন পাওয়া যায়, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তারা কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। এই নিবন্ধ যারা শুরু থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে এসেছে, এই কথা তাদের অবশ্যই বিশ্বাস হবে। শুধু বিশ্বাস নয়, বাস্তবতাও তা-ই বলবে, যদি সঠিকভাবে খোঁজ নেয়া হয়। উহান থেকে যেসব করোনাভাইরাসের রোগী শুরুর দিকে (বিশেষ করে জানুয়ারি মাসে) অন্য এলাকায় বা দেশে গিয়েছে, তাদের কাছ থেকে অনেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে যেসব খবর মিডিয়ায় এসেছে, তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, সেসব খবর গুজব হিসেবেই প্রমাণিত হবে। শুধু করোনাভাইরাসকে ভাইরাস নাম দেয়ার কারণে এই গুজবের সৃষ্টি। 'ছেলেধরা বের হওয়া' বা 'কান নিয়েছে চিলে'র মতো। (এক লোকের কানের পাশ দিয়ে একটি চিল উড়ে গেলো। সে একটু ভয় পেয়ে গেলো। একটু দূর থেকে একজন লোক ঐ লোকটিকে বললো, 'তোমার কান মনে হয় চিলটি নিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি চিল থেকে কান উদ্ধার করো।' ব্যস, লোকটি চিলের পেছনে পেছনে ছুটতে লাগলো কান উদ্ধারের জন্য আর চিৎকার করতে লাগলো এই বলে, 'কে কোথায় আছো, বেরিয়ে এসো, চিল আমার কান নিয়ে গেছে!' অনেকে বের হয়ে এসে তার সাথে চিলের পেছনে পেছনে ছুটতে লাগলো। একজন লোক হঠাৎ ঐ লোকটিকে প্রশ্ন করলো, 'তুমি যে চিলের পেছনে ছুটছো কান উদ্ধারের জন্য, চিল সত্যিই তোমার কান নিয়ে গেছে কিনা, তুমি কি তোমার কানে হাত দিয়ে দেখেছো?' সে বললো, 'না তো!' এই বলে সে তার কানে হাত দিয়ে দেখে কান কানের জায়গাতেই আছে!)

    প্রথমে আমরা এ সম্পর্কিত তিনটি প্রতিবেদন দেখি:
    (১) 'China reports 1st death from new type of coronavirus' শিরোনামে এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By The Associated Press) বলা হয়, 'Health authorities in the central Chinese city of Wuhan are reporting the first death from a new type of coronavirus that has stirred fears of an outbreak similar to that of the deadly SARS virus more than a decade ago.


    Possible cases of the same illness have been reported in Hong KongSouth Korea and Taiwan involving recent travelers to Wuhan. Health authorities elsewhere in China have yet to announce similar cases, despite the high population density around Wuhan and its role as a travel hub for central China.

    University of Hong Kong disease expert Yuen Kwok-yung was quoted by the city's official news agency as saying that the genetic makeup of the novel coronavirus was 80% similar to SARS as it had been found in bats, civet cats and humans.

    Yuen said that it was unclear whether the virus could further change to become more lethal, as the SARS virus had, but that Hong Kong had a robust system for detecting more severe problems among patients.

    "So we have to take every measure and closely monitor the situation,” Yuen said, according to Radio Television Hong Kong.' [https://abcnews.go.com/Health/wireStory/china-reports-1st-death-type-coronavirus-68209413]

    (২) 'চীনের নতুন ভাইরাস এবার যুক্তরাষ্ট্রেও' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের 'রহস্যময়' নতুন ভাইরাসে সংক্রমিত এক রোগী যুক্তরাষ্ট্রেও শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই করোনা ভাইরাসে প্রথম কোনো রোগী সংক্রমিত হয়েছে বলে শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়।
    ভাইরাসটি চীনের উহান শহর থেকে ছড়ায়। এখন পর্যন্ত ৩০০ জন এতে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। তাঁরা সবাই চীনের নাগরিক।
    যুক্তরাষ্ট্রের আগে থাইল্যান্ডে দুজন এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাঁরা সবাই উহান থেকে ফেরেন। ...
    গত সোমবার চীন প্রথম স্বীকার করে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। এর আগে চীন দাবি করেছিল, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। আর ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান। তাঁদের হিসাবে চীন যা বলছে, তার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।' [https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1635600]

    (৩) 'করোনাভাইরাস: চীনের বাইরে ফিলিপিন্সে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে' শিরোনামে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের বাইরে ফিলিপিন্সে প্রথম কোন ব্যক্তির করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। করোনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে ফিলিপিন্সে প্রথম কোন ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
    ৪৪ বছর বয়সী ওই চীনা ব্যক্তি হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে এসেছিলেন, যেখানে প্রথম ভাইরাসটি সনাক্ত করা হয়েছিল।
    ফিলিপিন্সে পৌঁছানোর আগেই তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
    এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তিনশ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার জনেরও বেশি। ...

    এই মৃত্যু সম্পর্কে যা জানা গেছে
    ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি উহান থেকে হংকং হয়ে ফিলিপিন্সে গিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন ৩৮ বছর বয়সী এক চীনা নারী।
    গত সপ্তাহে ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা গেছে বলে ফিলিপিন্সের স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে।
    কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে শুরুতে ওই ব্যক্তিকে রাজধানী ম্যানিলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার গুরুতর নিউমোনিয়া দেখা দেয়।

    ফিলিপিন্সে ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি রবীন্দ্র আবেসিংহে, সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন: "করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে এটিই প্রথম কোন মৃত্যুর ঘটনা। তবে, আমাদের মনে রাখা দরকার যে স্থানীয় কারও সাথে এমনটি হয়নি। এই রোগী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল থেকেই এসেছিলেন।"

    মিঃ ডিউক বলেছেন, "এই রোগটি প্রতিরোধে বর্তমানে আমরা চীনা দূতাবাসের সাথে কাজ করছি। আর যে ক'জন এতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের যেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়, সেটাই চেষ্টা করা হচ্ছে।"
    ওই ব্যক্তির মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হবে বলেও জানান তিনি। এখন ওই ব্যক্তির সাথে কারা একই ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছেন তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে ফিলিপিন্সের স্বাস্থ্য অধিদফতর। যাতে তাদেরকে আলাদা করে রাখা যেতে পারে। তাছাড়া, ওই ব্যক্তি পরে অন্য যাদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন যেমন হোটেল কর্মী, তাদের সবাইকে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

    চীন থেকে আসা বিদেশী যাত্রীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ফিলিপিন্স।
    এর আগে কেবল হুবেই প্রবেশ থেকে আসা ভ্রমনকারীদের প্রবেশ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল যা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51345489]

    এই তিনটি প্রতিবেদনে চীনের বাইরে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জাপান এবং ফিলিপিন্সে প্রথম বারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কথা বলা হয়েছে। দেখা যায়, চীনের বাইরে এসব দেশে প্রথমে যাদেরকে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হিসেবে পাওয়া গেছে, তারা এসব কোনো দেশে থাকা অবস্থায় অন্য কোনো রোগী থেকে এই 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হয়নি, বরং এরা সবাই 'উহান ফেরত'। উহানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এরা এসব দেশে গেছে। এখন দেখার বিষয়, এই লোকগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের কেউ করোনা 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হয়েছে কিনা?

    হংকং
    প্রথমে দেখা যাক হংকংয়ের ক্ষেত্রে। 'COVID-19 pandemic in Hong Kong' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The COVID-19 pandemic was first confirmed to have spread to Hong Kong on 23 January 2020. Confirmed cases were generally transferred to Princess Margaret Hospital's Infectious Disease Centre for isolation and centralised treatment. On 5 February, only after a 4-day strike by front line medical workers did the Hong Kong government close all but three border control points – Hong Kong International Airport, Shenzhen Bay Control Point, and Hong Kong-Zhuhai-Macao Bridge Control Point remaining open. As of 7 May 2020, Hong Kong had 1,045 confirmed cases, 944 recovered cases (including 1 probable case) and four death cases.


    Hong Kong was relatively unscathed by the first wave of the COVID-19 outbreak and had a flatter epidemic curve than most other places, which observers consider remarkable given its status as an international transport hub. Furthermore, its proximity to China and its millions of mainland visitors annually would make it vulnerable. Some experts now believe the habit of wearing masks in public since the SARS epidemic of 2003 may have helped keep its confirmed infections at 845, with four deaths, by the beginning of April. In a study published in April 2020 in the Lancet, the authors expressed their belief that border restrictions, quarantine and isolation, social distancing, and behavioural changes such as wearing masks likely all played a part in the containment of the disease up to the end of March. ...

    TIMELINE
    January
    Upon learning of the outbreak, the government required disclosure by those who had been to wet markets in Wuhan. The government widened the criteria for notification on 3 January – anyone who had visited Wuhan within 14 days before the onset of any respiratory symptoms of illness would need to inform health authorities.
    The HK government declared a "serious response level" to the virus outbreak centred on Wuhan on 4 January, when Hong Kong announced eight suspected cases; the eight cases turned out negative for the disease from Wuhan. Medical experts in Hong Kong urged mainland authorities to be more forthcoming with Wuhan patient information that could aid epidemiological study. Although Wuhan health authorities said there was "no obvious evidence" of human-to-human transmission of the then-unidentified virus, University of Hong Kong infectious diseases expert Dr Ho Pak-leung suspected such transmission had happened among cases in Wuhan, and urged "the most stringent" precautionary measures. However, press reported that border checks at the West Kowloon high-speed rail terminal were not yet operational. On 8 January, Hong Kong's Centre for Health Protection (CHP) added "Severe respiratory disease associated with a novel infectious agent" to their list of notifiable diseases to expand their authority on quarantine. The Hong Kong government also shortened hospital visits and made it a requirement for visitors to wear face masks. Screening was tightened at airports and train stations with connections to Wuhan. In the first week of 2020, 30 unwell travellers from Wuhan were tested. Most had other respiratory viruses.

    On 22 January, a 39-year-old man from mainland China who had travelled from Shenzhen and who arrived in Hong Kong by high-speed rail developed symptoms of pneumonia. Resident in Wuhan, he had arrived in Shenzhen by highspeed rail with his family. He tested positive for the virus and was hospitalised in Princess Margaret HospitalKowloon. The same day, a 56-year-old man from Ma On Shan, who had visited Wuhan in the previous week, also tested positive. These two cases were listed as "Highly Suspected Cases", they were confirmed positive the following day. ...'
    [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_Hong_Kong]


    উপরে উল্লেখিত তিনটি প্রতিবেদনের প্রথমটি অনুযায়ী হংকংয়ে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া যায় ১১ জানুয়ারির আগে। কিন্তু উইকিপিডিয়ায় বলা হয়, ২৩ জানুয়ারি হংকংয়ে করোনাভাইরাস প্রথমবারের মতো ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানি না, কোনটি সঠিক। উইকিপিডিয়ার ভাষ্যকে আপাতত সঠিক ধরে নেয়া হলে দেখা যায়, এই প্রতিবেদনে হংকংয়ে যেসব নিশ্চিত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব ঘটনার যেগুলো জানুয়ারি মাসে ঘটেছে, তার সবগুলো 'উহান ফেরত' মানুষের সাথে সম্পর্কিত। একটা সময় ছিল যখন চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও করোনাভাইরাসকে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর পক্ষে কোনো পরিষ্কার প্রমাণ পাচ্ছিল না। হংকংয়ের অবস্থাও প্রথমে এমন ছিল। এক সময় হংকংয়ে ৮টি সন্দেহজনক মামলা ছিল। পরে দেখা গেলো সবগুলোই নেগেটিভ। এভাবে দেখা যায়, হংকংয়ে প্রথম যারা আক্রান্ত হয়েছিল, তারা সবাই ছিল উহান ফেরত। আর যেহেতু উহান থেকে হংকংয়ে শুধু করোনাভাইরাসের রোগী এসেছে, কিন্তু উহানের ক্যামিকেলমিশ্রিত বিষাক্ত বাতাস (বায়োলজিক্যাল ওয়েপন) আসেনি, তাই উহান ফেরত আক্রান্তদের কাছ থেকে হংকংয়ের সুস্থ কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি, আক্রান্ত হবার কথাও নয়। 'চীনে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হংকংয়ের নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'হংকংয়ে করোনাইভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর চীনের বাইরে এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দুজন মারা গেলেন। রোববার একজন মারা গেছেন ফিলিপাইনে।
    মঙ্গলবার ভাইরাসটির তীব্র সংক্রমণের কারণে হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যাক্তির নাম পরিচয় জানানো হয়নি।
    রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মৃত এই ব্যক্তি জানুয়ারিতে চীনের উহান শহরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানকেই নতুন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ...' [https://www.jugantor.com/international/274816]

    দক্ষিণ কোরিয়া
    উইকিপিডিয়ায় 'COVID-19 pandemic in South Korea' শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The ongoing COVID-19 pandemic spread to South Korea on 20 January 2020, when the first case was announced. ...


    20 January – 17 February
    On 20 January, the first confirmed case was identified as a 35-year-old Chinese woman. The first South Korean national to be infected occurred three days later was a 55-year-old man who worked in Wuhan and returned for a checkup with flu symptoms. The two infection reports were publicly released on 24 January.

    On 26 January, a third case as a 54-year-old South Korean man. He had used a rental car and visited three restaurants, a hotel, a convenience store and met his family before admitting himself to hospital. All these places were disinfected.
    On 27 January, a fourth case was reported as a 55-year-old South Korean man who returned from Wuhan on 20 January. He first experienced flu symptoms on 21 January and suffered further complications four days later, eventually turning himself in. Both cases were tallied into formal records on 27 January.

    On 1 February, an update on the first four patients indicated that the first three patients were showing weaker symptoms and recovering well while the fourth patient was getting treatment from pneumonia. Rumours circulated that the fourth patient had died which health authorities denied.
    Two more confirmed cases were reported on 30 January with the fifth patient being a 32-year-old South Korean man who returned from his work at Wuhan on 24 January. The sixth patient was the first case in South Korea who had never visited Wuhan. The 56-year-old man caught the virus when visiting a restaurant with the third patient.
    On 31 January, a seventh patient was reported as a 28-year-old South Korean man returning from Wuhan on 23 January. He developed symptoms on 26 January, and was admitted to the hospital on 28 January. On the same day, four more patients were admitted into the record as the eighth patient, 62-year-old South Korean woman, returned from Wuhan. The ninth patient caught the virus from the fifth patient through direct contact while the tenth and the eleventh patient were the wife and child who were infected while visiting the sixth patient.

    On 1 February, a 49-year-old Chinese national working in Japan as a tour guide was confirmed as the twelfth patient. He caught the virus while visiting a Japanese patient in Japan and entered South Korea through Gimpo International Airport on 19 January. The KCDC confirmed an additional three cases on 2 February, bringing the total to fifteen.
    A woman, who had returned from Thailand after a five-day vacation, was tested positive and confirmed as the sixteenth case on 4 February. Three more cases were confirmed on 5 February, bringing the total case count to 19. The seventeenth and nineteenth patients had attended a conference in Singapore and been in contact with an infected individual there. The very same day the KCDC announced that the second patient had been released from hospital after being tested negative in consecutive tests, becoming the country's first coronavirus patient to fully recover.

    Details of the first 30 confirmed cases in South Korea (As of 17 February 2020)

    18 February – 29 February
    On 18 February, South Korea confirmed its 31st case in Daegu, a member of the Shincheonji religious organisation. The patient continued to go to gatherings of Shincheonji days after showing symptoms, which are typically held with people in very close proximity and include physical contact of the members. Many of the patient's close contacts would turn out to be infected, triggering a drastic escalation of the South Korean spread of confirmed cases of SARS-CoV-2 infection.
    On 19 February, the number of confirmed cases increased by 20. On 20 February 70 new cases were confirmed, giving a total of 104 confirmed cases, according to the KCDC. According to Reuters, KCDC attributed the sudden jump of 70 cases linked to "Patient No. 31", who had participated in a gathering in Daegu at the Shincheonji Church of Jesus the Temple of the Tabernacle of the Testimony.' [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_South_Korea]

    উইকিপিডিয়ার এই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলেও ফেব্রুয়ারির ১৯-২০ তারিখের দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা ব্যাপকতা লাভ করে। শুরুর দিকে যারা আক্রান্ত হয়েছে, যদি তাদের কাছ থেকে তাদের সংস্পর্শে আসা সব মানুষ আক্রান্ত হতো, তাহলে ১৯ ফেব্রুয়ারির আগেই সংক্রমণ ব্যাপকতা লাভ করতো। কিন্তু ২০ জানুয়ারির পর নির্দিষ্ট ইনকিউবেশন পিরিয়ড পার হবার পরও ব্যাপকতা লাভ করতে অনেক সময় লাগাটা প্রমাণ করে, শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাদেরকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাওয়া গেছে, তাদের কাছ থেকে তেমন কেউ সংক্রমিত হয়নি।
    আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, হংকংয়ের মতোই দক্ষিণ কোরিয়ায়ও প্রথম দিককার আক্রান্ত প্রায় সবাই উহান ফেরত। দু'একজন আছেন স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত। স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত মানে অন্য কোনো করোনায় রোগী সাথে সম্পর্ক ছাড়াই আক্রান্ত।  তাছাড়া ১৯-২০ ফেব্রুয়ারির দিকে যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের অধিকাংশের আক্রান্ত হওয়াকে 'রোগী ৩১' থেকে সংক্রমণ বলে মনে করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই 'রোগী ৩১' কি উহান ফেরত কারো কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে, নাকি নিজেই উহান ফেরত ছিল?

    এনবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'Coronavirus updates: South Korea reports big jump in cases, virus spreading in Chinese prisons' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The total number of COVID-19 cases stemming from ''patient 31'' in the city of 2.5 million people — which is two hours south of the capital, Seoul — comes to 58, and of the total 42 made contact at the church. ...
    Little is known about the woman known as "patient 31" except that she is in her early 60s, had no recent record of overseas travel and was diagnosed with pneumonia last weekend. — Stella Kim' [https://www.nbcnews.com/news/world/coronavirus-update-south-korea-reports-big-jump-cases-virus-spreading-n1140201]

    লাইভ সায়েন্স ডটকম এর ওয়েবসাইটে ''Superspreader' in South Korea infects nearly 40 people with coronavirus' শিরোনামে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Nicoletta Lanese - Staff Writer) বলা হয়, 'The number of coronavirus cases in South Korea has soared to about 602, according to The New York Times. More than half of those cases involve members of, or those somehow linked to, the religious sect, the Shincheonji Church of Jesus, where a so-called superspreader infected at least 37 people last week.

    A so-called superspreader infected at least 37 people at her church with the new coronavirus, and dozens of additional worshippers are also showing symptoms of the disease, called COVID-19, according to news reports.
    The 61-year-old woman attends the Shincheonji Church of Jesus the Temple of the Tabernacle of the Testimony in DaeguSouth Korea, according to the international news outlet AFP. The city, located in the southern part of the country, is home to about 2.5 million people. The woman, called "Patient 31" by Korea's Centers for Disease Control and Prevention, developed a fever on Feb. 10 and attended four church services before being diagnosed with COVID-19.
    Despite running a fever, the woman twice refused to be tested for the coronavirus, as she had not recently traveled abroad, according to The Guardian. So far, she and 37 other members of the church have tested positive for the novel coronavirus, called SARS-CoV-2, and 52 additional churchgoers have shown symptoms of infection but have not yet been tested. (SARS-CoV-2 is the name of the coronavirus that causes COVID-19.)

    Authorities described the outbreak as a "super-spreading event," as the lone woman transmitted the infection to an unusually high number of people, according to Reuters. Current estimates suggest that a single person with the novel coronavirus spreads the infection to about 2.2 additional people, on average. The surge of infection at the church brings the total number of confirmed cases in South Korea to 104; one death associated with the virus has occurred in the country so far.' [https://www.livescience.com/coronavirus-superspreader-south-korea-church.html]

    এই দু'টি প্রতিবেদন মতে 'রোগী ৩১' নামে অভিহিত করা হয়েছে যে মহিলাকে, সে শুধু উহানে ভ্রমণ করেনি, তা নয়, সে অন্য কোনো স্থানেও ভ্রমণ করেনি। বলা হয়েছে, ওই মহিলা সম্পর্কে খুব কমই জানা হয়েছে। মহিলাটি সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি বলে দু'বার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবু কেন এই মহিলাকে করোনাভাইরাস সংক্রামক বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে?
    'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় এক দিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছড়িয়েছে ভয়াবহ করোনাভাইরাস। দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এক দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির একটি হাসপাতালে অন্য অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
    তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1641278]
    এই প্রতিবেদন থেকে পরিষ্কারভাবে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে দ্বিগুণ হবার সাথে চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

    ''Patient 31' and South Korea's sudden spike in coronavirus cases'' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ৩ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (by Kelly Kasulis) বলা হয়, "The situation here was not really serious until mid-February. It began to get very serious starting with patient 31," said Hwang Seung-sik, a spatio-temporal epidemiologist at Seoul National University.


    "Before patient 31, our strategies to contain the virus were working. But after countless people were infected by patient 31, it became very difficult to control." [https://www.aljazeera.com/news/2020/03/31-south-korea-sudden-spike-coronavirus-cases-200303065953841.html]

    এখানে বলা হয়েছে, "Before patient 31, our strategies to contain the virus were working. But after countless people were infected by patient 31, it became very difficult to control."

    বিষয়টা সচেতন সবাইকে অবাক করার কথা। এই মহিলাকে একদিকে "রোগী ৩১" নামে অভিহিত করা হয়, অপরদিকে 'সুপারস্প্রেডার' বলেও অপবাদ দেয়া হয়।
    সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি বলে মহিলাটি দু'দুবার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে অস্বীকার করেছিল, তবু তাকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী মনে করা হচ্ছে, এমনকি তাকে সুপারস্প্রেডার বলেও অপবাদ দেয়া হচ্ছে।
    শুধু করোনাভাইরাসকে একটি 'ভাইরাস', সংক্রামক/ছোঁয়াচে রোগ মনে করা এবং করোনাভাইরাস শণাক্তকরণে ফাঁক থাকার কারণে এভাবে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত কত মানুষ বিপদগ্রস্থ হয়েছে, সংকটাপন্ন হয়েছে, কেউ বলতে পারবে না।
    করোনাভাইরাসকে ভাইরাস মনে না করলে এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগকে ছোঁয়াচে বলে মনে না করলে মহিলাটিকে কোনোভাবেই সুপারস্প্রেডার নয়, শুধু 'স্প্রেডার' মনে করারও অবকাশ থাকতো না।

    সবচেয়ে বড় কথা, যদি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম প্রথম চীন ফেরত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে নতুন কেউ আক্রান্ত হতো, তাহলে 'রোগী ৩১' এর আগেই করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতো। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চীনের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই ভাইরাসটি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
    সুতরাং প্রথমে যারা করোনাভাইরাস নিয়ে উহান থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছে, তারা 'করোনাভাইরাস সংক্রামক' হবার সম্ভাবনা একেবারে কম। পরে অন্য কোনো কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।

    তাইওয়ান
    'COVID-19 pandemic in Taiwan' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The COVID-19 pandemic has had a much smaller impact in Taiwan than in most industrialised countries, with six deaths total as of 5 May 2020. The number of active cases peaked on 6 April at 307 cases.


    The virus was confirmed to have spread to Taiwan on 21 January 2020, from a 50-year-old woman who had been teaching in WuhanChina. ...

    The Journal of the American Medical Association states that Taiwan engaged in 124 discrete action items to prevent the spread of the disease, including early screening of flights from Mainland China and the tracking of individual cases.

    Taiwan's handling of the outbreak has received international praise for its effectiveness in quarantining people and by using the "electronic fence" to slow down the virus, despite being unable to gather WHO information due to being barred by China, and is seen as the model for other countries to learn from. As of 17 April, 51,603 tests had been conducted in Taiwan with the vast majority not confirming a coronavirus diagnosis. ...

    January
    On 21 January, the first case in Taiwan was confirmed in a 50-year-old woman who had just returned to Taoyuan International Airport from her teaching job in Wuhan. She reported on her own initiative and was hospitalised without formal domestic entry. The first domestic case was diagnosed in Taiwan on 28 January who was in his 50s which was believed to be transmitted by his wife who was confirmed before him.

    February
    The first death in Taiwan was confirmed on 16 February involving a man in his 60s who had Hepatitis B and diabetes. A woman in Taiwan was reported to have tested positive for novel coronavirus on 19 February 2020, though she had not travelled outside of Taiwan for two years. Five new cases of coronavirus were reported in Taiwan on 29 February 2020, four of which marked the first transmission of the disease in a hospital setting. Taiwan's fiftieth case of coronavirus was confirmed on 13 March 2020, an American expatriate who hosted four United States citizens at his home in Taiwan. The next day, three new cases of coronavirus were confirmed to have been imported from Europe. A Taiwanese national aboard the Diamond Princess tested positive on 6 February. As of 19 February, five Taiwanese nationals aboard the ship tested positive. Two Taiwanese who fell ill on the Diamond Princess were discharged from Japanese hospitals in February 2020. The nineteen other Taiwanese passengers on the Diamond Princess were quarantined in Taiwan until 7 March 2020. All tested negative for coronavirus, and were released. The index case for coronavirus in Taiwan recovered from the disease and was discharged from hospital on 6 February 2020. Approximately a week later, a second Taiwanese national, the tenth case of coronavirus, had also recovered. Though community spread within the Taiwanese society did not necessarily break out, but a hospital cluster was recorded after case 34, a female patient with numerous diabetes and cardiovascular disease, transmitted the virus to 8 people contacted throughout February and March. She later died due to heart failure on 30 March.

    March
    On 15 March, Taiwan announced six new cases, all imported. Taiwan's health minister has advised people to remain in Taiwan and avoid travel. After discovering the mass imports of foreign cases, the CECC announced to retrace travelers arrived from Europe within 3 and 14 March on 17 March. On 20 March 2020, Taiwan reported 27 new cases, the highest single-day increase. The second death linked to coronavirus in Taiwan was announced on 20 March, and involved a man in his 80s, who had no recent travel history, but did have hypertension, diabetes and relied on kidney dialysis. The death of a guide who had led tours to Austria and the Czech Republic was reported on 29 March. The next day, two Taiwanese nationals who had travelled to Spain were reported to have died of coronavirus.

    April
    A Taiwanese man who had toured Egypt in March died of coronavirus on 9 April. On 18 April 2020, three Republic of China Navy cadets were confirmed to have contracted coronavirus following a military operation in Palau. Other personnel on the ship were confirmed to have contracted the disease as part of the first cluster to affect the Republic of China Armed Forces. As more cases from that cluster were identified, President Tsai Ing-wen asked the Ministry of National Defense to investigate the situation. Defence minister Yen Teh-fa stated that vice admiral Kao Chia-pin and rear admiral Chen Tao-hui had been removed from their posts as commander of Republic of China Naval Fleet Command and leader of the ROCN's Friendship Fleet, respectively. On 30 April 2020, an employee of the Taipei Representative Office in France was confirmed to have fallen ill with coronavirus, becoming the first Taiwanese diplomat stationed overseas to contract the disease.'
    [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_Taiwan]

    তাইওয়ানে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৯ ফেব্রুয়ারি। এর মাঝখানে সংক্রমণের যে ঘটনাগুলো ঘটে, সেগুলোর অধিকাংশই ছোঁয়াচে নয়। প্রায় সবগুলোই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে দু’টো অবাক করা ঘটনাও ঘটেছে। ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত একজন মহিলা রোগী, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ জুড়ে তার সাথে যোগাযোগ করা ৮ জনের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণ করেছিল, পরে ৩০ মার্চ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। করোনাভাইরাসের রোগী না হয়ে তিনি কিভাবে অন্য ৮ জনের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়েছেন, বিজ্ঞানের কোনো সূত্রও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে মনে করার কারণেই এই গোঁজামিল বা অদ্ভুত ঘটনার জন্ম।
    তাইওয়ানে করোনাভাইরাসের সাথে যুক্ত দ্বিতীয় মৃত্যু ঘোষিত হয়েছিল ২০ মার্চ। মৃত্যুটি ছিল ৮০ বছর বয়সী একজন লোকের, যার সাম্প্রতিক ভ্রমণ ইতিহাস ছিল না, তবে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এবং কিডনি জটিলতা ছিল। কোথাও ভ্রমণ করেননি, তবু হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এবং কিডনি জটিলতায় ভোগা একজন লোক কিভাবে করোনাভাইরাস পজেটিভ হলেন, কেউ কি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন? খুব সম্ভবত করোভাইরাসের প্রচলিত টেস্ট পদ্ধতির কারণে তিনি করোনা নেগেটিভ হয়েও টেস্টে পজিটিভ হয়ে গেলেন; মারাও গেলেন যে রোগগুলোয় ভুগছিলেন, সেগুলোর তীব্রতায়; কিন্তু অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন করোনাভাইরাসে মৃতদের তালিকায়!

    এবার তাইওয়ানে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্যগুলো একটু আলাদাভাবে যাচাই করে দেখা যাক:

    'করোনাভাইরাসে তাইওয়ানে প্রথম মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের মূল ভূখন্ড থেকে করোনাভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এ ভাইরাসে প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ানে প্রথম একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দ্বীপদেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শিহ-চুং রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।
    এতে তিনি বলেন, ষাটের কোঠায় থাকা বৃদ্ধ ওই ব্যক্তি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ছিলেন।
    কোভিড-১৯ নামে নভেল করোনাভাইরাসবাহী নতুন এই রোগে তাইওয়ানে এর আগে কেউ মারা যায়নি। তবে সব মিলে আক্রান্ত হয়েছে ২০ জন।
    এর আগে চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হংকং, ফিলিপিন্স, জাপান ও ফ্রান্সে একজন করে মৃত্যু হয়।' [https://www.jugantor.com/international/279109]

    'Taiwan reports first death from coronavirus' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'A taxi driver has died from the coronavirus in Taiwan, marking the first such death on the island and the fifth fatality outside mainland China from an epidemic that has curbed travel and disrupted global supply chains.

    The health minister, Chen Shih-chung, said during a news conference on Sunday that the deceased was a 61-year-old man who had diabetes and hepatitis B. Taiwan has to date reported 20 confirmed cases.
    The man who died had not travelled abroad recently and was a taxi driver whose clients were mainly from Hong Kong, Macau and mainland China, the minister said. One of his family members was also confirmed to have the virus.
    The pair constituted Taiwan’s first local transmission cases, the minister said, adding that the authorities were trying to find out the source. “So far, we are not able to gather his contact history, so we are actively making investigations, hoping to find out the source of the contraction,” Chen said.' [https://www.theguardian.com/world/2020/feb/16/taiwan-reports-first-death-from-coronavirus]

    'Taiwan Scours Dead Taxi Driver’s Data to Trace Coronavirus Path' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন (By Samson Ellis) প্রকাশিত হয় ব্লুমবার্গে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'Health authorities in Taiwan are scouring travel histories, phone records and security camera footage in an effort to map out everyone who came into contact with a taxi driver who became Taiwan’s first confirmed death from the coronavirus.

    The victim, a man in his 60s from central Taiwan who died Saturday, had not recently traveled overseas and had no recorded contact with any of the 19 other people diagnosed with the coronavirus in Taiwan, according to a statement from Taiwan’s Centers for Disease Control.'  [https://www.bloomberg.com/news/articles/2020-02-17/taiwan-scours-dead-taxi-driver-s-data-to-trace-coronavirus-path]

    প্রথম প্রতিবেদন থেকে জানা গেলো, ষাটের কোঠায় থাকা বৃদ্ধ ওই ব্যক্তি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ছিলেন। দ্বিতীয় প্রতিবেদন থেকে জানা গেলো, যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন তিনি সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি এবং তিনি ছিলেন ট্যাক্সি ড্রাইভার, যার ক্লায়েন্টরা মূলত হংকং, ম্যাকাও এবং চীনের মূল ভূখন্ডের ছিলেন। তবে তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ভাইরাস থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তৃতীয় প্রতিবেদন থেকে জানা গেলো, যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন, তিনি সম্প্রতি বিদেশে ভ্রমণ করেননি এবং তাইওয়ানের করোনাভাইরাস শনাক্তকৃত ১৯ জন ব্যক্তির কারও সাথেই তার কোনও যোগাযোগ ছিল না।

    শেষ দুটি প্রতিবেদনের বক্তব্যের মধ্যে বৈপরীত্ব রয়েছে। তিনটি প্রতিবেদনের বক্তব্য থেকে অন্তত এই বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া যায়, লোকটি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ছিলেন, সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণ করেননি এবং কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন, তা নিশ্চিত নয়। সুতরাং এই প্রথম মৃত্যুটাও দ্বিতীয় মৃত্যুর মতোই। দুজনের ক্ষেত্রেই টেস্টে ভুল ফলাফল আসার সম্ভাবনাই বেশি এবং করোনাভাইরাসে নয়, আগে থেকে আক্রান্ত রোগের তীব্রতায় মৃত্যুবরণের সম্ভাবনাই বেশি। চীনে করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাব দেখা না দিলেও হয়তো এই সময়েই এই দু’জন মারা যেতেন। হয়তোবা করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ ফলাফল আসাতে দুশ্চিন্তায় একটু আগেই মারা গেলেন!

    সর্বোপরি তাইওয়ানে উহান ফেরত করোনাভাইরাসের রোগী আগমনের পরও করোনাভাইরাস তাদের কাছ থেকে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। এটাই প্রমাণ করে চীনের উহান থেকে প্রথম প্রথম অন্য এলাকায় বা দেশে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি, শুধু করোনাভাইরাসের রোগী ছড়িয়েছে। সেই রোগীদের শরীর থেকে নতুন এলাকায় বা দেশে অন্য কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। কারণ করোনাভাইরাস নামে 'ভাইরাস' হলেও একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে না। শুধু যে কারণে উহানের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সে কারণের মুখোমুখি হলেই করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে মাঝে মাঝে গুজব বা আতঙ্কের আতিশয্যে অন্য রোগে আক্রান্তরাও করোনাভাইরাসের রোগী হয়ে যায় বা টেস্টের ত্রুটির কারণে করোনাভাইরাস নেগেটিভ হয়েও ফলাফলে অনেকের পজিটিভ চলে আসে।

    শুধু চীনের উহান থেকে নয়, পরবর্তীতে অন্য অনেক দেশ থেকে তাইওয়ানে করোনাভাইরাসের রোগী আগমনের পরও তাইওয়ানে করোনাভাইরাস ব্যাপকতা লাভ করেনি। ১ মে ২০২০ তারিখে ভ্যাকসিন ইমপ্যাক্টের ওয়েবসাইটে 'TAIWAN: No Lockdowns, No Closed Businesses, Non-WHO Member, and Relatively Unaffected by COVID-19' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (by Brian Shilhavy) বলা হয়, 'Johns Hopkins University had predicted that Taiwan would have the second most COVID-19 cases in the world, due to its close proximity to Mainland China.


    But astonishingly, in spite of being only 80 miles from the coast of China with over 400,000 of its 24 million citizens working in China, as of mid-April, the country only had 400 cases of COVID-19, and only 6 deaths. And the vast majority of their 400 cases came into the country from abroad.

    All of this has happened without shutting down the country with lock downs, and with almost all of its businesses continuing to operate.' [https://vaccineimpact.com/2020/taiwan-no-lockdowns-no-closed-businesses-non-who-member-and-relatively-unaffected-by-covid-19/]

    তাইওয়ান হয়তো করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিন্নরকম অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু যে দেশগুলোতে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সেই দেশগুলো তাইওয়ানের মতো পদক্ষেপ নিলেও কি তাইওয়ানের মতো করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকতো? চীনের খুব কাছের দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাইওয়ানে করোনাভাইরাস ভয়াবহতা সৃষ্টি করতে পারেনি, চীনের অনেক দূরের অনেক দেশে কিভাবে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করলো, তা বিশ্ববাসীর প্রশ্ন।


    যুক্তরাষ্ট্র
    'চীনের 'রহস্যময়' ভাইরাস এবার যুক্তরাষ্ট্রে' শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময়ে ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের 'রহস্যময়' ভাইরাস এবার ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে উহান শহর সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
    চীন থেকে সিয়াটলে আসা এক মার্কিন অধিবাসী এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের (সিডিসি) বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
    ওই প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ওই মার্কিন অধিবাসীর বয়স ৩০ বছর। গত ১৫ জানুয়ারি তিনি উহান থেকে সিয়াটলে ফেরেন। অসুস্থ হয়ে ওই রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে রোগের লক্ষণ এবং রোগীর ভ্রমণ ইতিহাস দেখে প্রাথমিকভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন চিকিৎসকরা।
    পরে গবেষণাগারে পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল নমুনা থেকে ২০ জানুয়ারি ভাইরাস আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে ওই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
    এই করোনা ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হওয়ার আগে থাইল্যান্ডে দুজন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে একজন করে এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়। তারা প্রত্যেকে চীনের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন।[http://www.dainikamadershomoy.com/post/237876]

    'চীনের নতুন ভাইরাস এবার যুক্তরাষ্ট্রেও' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের 'রহস্যময়' নতুন ভাইরাসে সংক্রমিত এক রোগী যুক্তরাষ্ট্রেও শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই করোনা ভাইরাসে প্রথম কোনো রোগী সংক্রমিত হয়েছে বলে শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়।
    ভাইরাসটি চীনের উহান শহর থেকে ছড়ায়। এখন পর্যন্ত ৩০০ জন এতে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। তাঁরা সবাই চীনের নাগরিক।
    যুক্তরাষ্ট্রের আগে থাইল্যান্ডে দুজন এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাঁরা সবাই উহান থেকে ফেরেন।

    আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, চীন থেকে সিয়াটলে আসা এক মার্কিন অধিবাসী এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। তিনি ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষ। গত ১৫ জানুয়ারি তিনি উহান থেকে সিয়াটলে ফেরেন।
    সিডিসি এক বিবৃতিতে জানায়, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে ওই রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর ভ্রমণ ইতিহাস এবং রোগের লক্ষণ দেখে স্বাস্থ্যবিষয়ক পেশাজীবীরা তাঁকে নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন। পরে গবেষণাগারে পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল নমুনা থেকে ২০ জানুয়ারি ভাইরাস আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
    ভাইরাসের ঘটনায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উত্তর কোরিয়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য তাদের সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান ও জাপান উহান থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরেও গত সপ্তাহ থেকে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহে শিকাগো ও আটলান্টা বিমানবন্দরে এই পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।'

    [https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1635600]

    এই দু'টি প্রতিবেদন অনুসারে, চীন থেকে ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে আসা ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষ মার্কিন অধিবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। গবেষণাগারে পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল নমুনা থেকে ২০ জানুয়ারি ভাইরাস আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
    আরো জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরেও গত সপ্তাহ থেকে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহে শিকাগো ও আটলান্টা বিমানবন্দরে এই পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

    'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে এক দিনে আক্রান্ত ৫৯৪' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না। কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির নাম-পরিচয় গোপন রেখে জানিয়েছে, তিনি একজন বয়স্ক নারী এবং তিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।'
    [https://www.prothomalo.com/international/article/1642376]

    ক্যালিফোর্নিয়ায় এমন এক রোগীকে দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না; যিনি বয়স্ক এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। ওই মহিলার করোনাভাইরাসে সংক্রমণ যে প্রচলিত অর্থে কোনো ভাইরাসজনিত নয়, এতে কি কোনো সন্দেহ আছে? বরং এই সম্ভাবনাই বেশি, করোনাভাইরাস শনাক্তকরন পরীক্ষা আর নিউমোনিয়া শনাক্তকরণ পরীক্ষা প্রায় একই রকমভাবে করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্তরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে মনে হয়।

    'Doctor who treated first US coronavirus patient says COVID-19 has been 'circulating unchecked' for weeks' শিরোনামে সিএনবিসি’র ওয়েবসাইটে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Berkeley Lovelace Jr. and William Feuer) বলা হয়, 'That's all changed since last weekend. There are now well over two dozen cases in the U.S. of person-to-spread, many of which are proving to have been transmitted openly in the community, and it appears to be getting worse, according to state health officials. 


    State and local health have confirmed community transmission cases in California, Washington state, New York and North Carolina — where a woman contracted the virus on a trip to Washington state in what appears to be the nation’s first domestic travel-related infection. ...

    Some hospitals still haven't instituted strict isolation protocols for everyone being tested, and some state officials are even starting to relax hospital quarantine rules for patients who test positive. One woman in New York is under self-quarantine at her home in Manhattan.

    State health officials said a California patient was not under quarantine as doctors appealed to the CDC to test her. Since she hadn’t been to Wuhan, or been in contact with anyone who was, she was out and about in her community.' [https://www.cnbc.com/2020/03/06/doctor-who-treated-first-us-coronavirus-patient-says-covid-19-has-been-circulating-unchecked-for-weeks.html]

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ব্যক্তিগতভাবে ছড়িয়েছে' বলে মনে করা দুই ডজনেরও বেশি মামলা বিশ্বাস করা তখনই সম্ভব হবে, যখন করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' মনে করা হবে না, নতুবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়, তবু পরীক্ষার ত্রুটির কারণে অনেকের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়, এই কথাটা বিশ্বাস করা হবে।
    যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক এবং উত্তর ক্যারোলাইনাতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ কিভাবে সম্ভব? মানুষ কি এতোই বোকা হয়ে গেছে, এসব অদ্ভুতুড়ে সংবাদ শুনেই বিশ্বাস করে ফেলবে!
    ক্যালিফোর্নিয়ায় এক রোগীকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকরা সিডিসির কাছে আবেদন করেছিলেন, যিনি উহানে ছিলেন না বা এমন কারও সাথে যোগাযোগ করেননি, যিনি উহানে ছিলেন; তিনি বাইরে ছিলেন এবং তার সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলেন। তবু কিভাবে তাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হলো?
    করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী এতো ভয়ানক 'ভাইরাসে' পরিণত হলো, যারা করোনাভাইরাসের গায়ে 'ভাইরাস' বা ছোঁয়াচে তকমা লাগিয়েছিল, তারাও হয়তো ভাবতে পারেনি বিষয়টা এতোদূর গড়াবে!

    ভক্স মিডিয়ার ওয়েবসাইটে 'The CDC's rocky effort to get Americans tested for coronavirus, explained' শিরোনামে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Brian Resnick and Dylan Scott) বলা হয়, 'The CDC confirmed eight days ago that the virus was in community transmission in the United States—that it was infecting Americans who had neither traveled abroad nor were in contact with others who had.


    In South Korea, more than 66,650 people were tested within a week of its first case of community transmission, and it quickly became able to test 10,000 people a day. The United Kingdom, which has only 115 positive cases, has so far tested 18,083 people for the virus.' [https://www.vox.com/science-and-health/2020/3/6/21168087/cdc-coronavirus-test-kits-covid-19]

    সিডিসি আট দিন আগে নিশ্চিত করেছে যে, ভাইরাসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে রয়েছে, এটি এমন অনেক আমেরিকানদের সংক্রমিত করেছে যারা বিদেশে ভ্রমণ করেনি বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসেনি।
    দক্ষিণ কোরিয়ার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কথাও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
    কিন্তু কিভাবে এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত বিশ্বের কারো কাছে নেই। শুধু করোনাভাইরাসকে 'ছোঁয়াচে' বলে বিশ্বাস করার কারণেই, 'ভাইরাস' নাম দেয়ার কারণেই কেউই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।
    সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে: করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় বড় ধরনের ত্রুটি থাকার কারণে অনেক সময় সাধারণ নিউমোনিয়া রোগীও করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়। অথবা 'অন্য কোনো কারণে' একাধিক দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস আক্রমণ করেছে, এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের কোনো সংস্পর্শ বা যোগাযোগ ছাড়া। কিন্তু সেই কারণ কী হতে পারে, তা না ভেবে আপাতত আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যেসব করোনাভাইরাসের রোগী চীনের উহান বা অন্য দেশ থেকে আগমণ করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস বিস্তৃতি লাভের জন্য পুরো দায়ী নয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রে না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ঠিকই পেঁছে যেতো।

    'New coronavirus cases of unknown origin found on West Coast' শিরোনামে এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By ROBERT JABLON, LISA BAUMANN and ANDREW SELSKY) বলা হয়, 'Health officials in California, Oregon and Washington state worried about the novel coronavirus spreading through West Coast communities after confirming three patients were infected by unknown means.


    The patients — an older Northern California woman with chronic health conditions, a high school student in Everett, Washington and an employee at a Portland, Oregon-area school — hadn't recently traveled overseas or had any known close contact with a traveler or an infected person, authorities said.' [https://abcnews.go.com/US/wireStory/coronavirus-cases-unknown-origin-found-west-coast-69301250]

    ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটন রাজ্যে তিনটি রোগী অজানা উপায়ে সংক্রমণের ঘটনায় সবাই উদ্বিগ্ন। এসব রোগী সম্প্রতি বিদেশে ভ্রমণ করেননি বা কোনও ভ্রমণকারী বা আক্রান্ত কারো সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল না। তবু কেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো? এই সব উদাহরণ এটাই প্রমাণ করে, চীনের উহানে বা অন্য কোনো দেশে আক্রান্ত কেউ যুক্তরাষ্ট্রে গমনের কারণে সেখানে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করেনি। তাহলে? হতে পারে গুজব, না হয় প্রচলিত টেস্টে ত্রুটি বা অন্য কিছু। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাই গুজব বা টেস্টের ত্রুটি এতো বিশাল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া দূরের কথা, আক্রান্তও করতে পারে না। তাই 'অন্যকিছু' নিয়ে ভাবতে হবে।

    এরকম আরো কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:
    '1,000 Quarantined after New York Family's COVID-19 Diagnosis' শিরোনামে ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইটে ৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Health officials seeking to prevent the spread of COVID-19 in New York state focused Wednesday on a suburban community where four members of the same family and a neighbor have been diagnosed with the virus, ordering new testing and putting about 1,000 people in self-quarantine. ...


    Gov. Andrew Cuomo detailed the procedures after meeting with local officials in Westchester County, north of New York City, where test results came back positive for the wife, two children and neighbor of a lawyer hospitalized with the disease. The new results brought the number of confirmed cases in the state to six.

    Cuomo said people who've come into contact with them will be tested and should sequester themselves in their homes. They include eight people who worked with the lawyer and his wife at their law firm and hospital workers who treated him, as well as the neighbor's children.

    ''Whenever you find a case, it is about containment and doing the best you can to keep the circle as tight as possible,'' Cuomo said.

    The 50-year-old lawyer, who commuted by train from New Rochelle to work at a small Manhattan law firm, has an underlying respiratory illness that potentially put him in more danger from the disease, officials said. He is being treated in the intensive care unit of a Manhattan hospital.

    Cuomo said the lawyer had no known travel history to countries where the outbreak of the new coronavirus has been sustained. State and city officials said the man had done some other traveling recently, including an early February trip to Miami.''
    [https://www.voanews.com/science-health/coronavirus-outbreak/1000-quarantined-after-new-york-familys-covid-19-diagnosis]

    'How the rapidly spreading coronavirus evolved in the US' শিরোনামে সিএনএনের ওয়েবসাইটে ৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Faith Karimi, CNN) বলা হয়, '(CNN) Just a week ago on February 29, there was one confirmed death from coronavirus in the United States. Now the rapidly-spreading virus has killed 22 people and affected more than 30 states and the District of Columbia, turning into a health crisis.

    Here's how the disease quickly evolved in the US:

    First case of the virus in the US
    Federal health officials announced the first case of coronavirus in the US on January 20. The patient was in Washington state, and had just returned five days prior from WuhanChina, where the outbreak started.

    Biggest major outbreak outside China
    The largest coronavirus outbreak outside of mainland China at the time was a cruise ship floating in Japanese waters. The Diamond Princess cruise ship announced a total of more than 700 passengers had coronavirus. Over 3,600 people, including 428 Americans, were stuck on the cruise ship that had been docked in Yokohama since February 4.

    First major warning on likely spread
    A top federal health official warned Americans on February 25 that coronavirus would spread in the United States. "It's not so much a question of if this will happen anymore, but rather more a question of exactly when this will happen and how many people in this country will have severe illness," said Dr. Nancy Messonnier, director of the CDC's National Center for Immunization and Respiratory Diseases.

    First coronavirus death in the US
    A patient infected with coronavirus in Washington state died on February 29, marking the first fatality due to the virus in the United StatesThe man in his 50s had underlying health conditions, and there was no evidence he had close contact with an infected person or a relevant travel history that would have exposed him to the virus.

    First coronavirus confirmation in New York City
    New York confirmed its first case of coronavirus on March 1. The patient contracted the virus while in Iran, officials said. "There is no reason for undue anxiety -- the general risk remains low in New York. We are diligently managing this situation," Gov. Andrew Cuomo said.

    First death outside Washington state
    A death reported in Northern California on March 4 became the first fatality outside Washington state.
    The victim was an elderly man with underlying health conditions, who was probably exposed to the virus on a trip aboard a Princess Cruises ship that traveled from San Francisco to Mexico in February.

    Ship is held at sea in the US due to coronavirus
    A ship carrying more than 3,500 people was held at sea off the coast of California as it traveled from Hawaii on March 4. The Grand Princess previously carried a passenger who became the first person to die from coronavirus in California, and was ordered to stay at sea for days as it awaited test results. Officials later confirmed 21 positive cases of coronavirus.

    First deaths outside the West Coast
    Florida authorities announced March 6 that two coronavirus patients in the state died. It was the first deaths believed to be linked to the virus on the East Coast. The state also confirmed more than a dozen cases, considered the second largest cluster on the East Coast after New York.

    First infection in the nation's capital
    The first case of coronavirus infection in the District of Columbia was reported on March 7. The patient was a resident in his 50s who appeared to have no history of international travel and no close contacts with a confirmed case, Mayor Muriel Bowser announced. ...'
    [https://edition.cnn.com/2020/03/08/health/coronavirus-evolved/index.html]

    চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ব্যাপক হবার জন্য সেসব ঘটনাকে পুরোপুরি দায়ী করার সুযোগ নেই। তাহলে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস এতো ভয়াবহ আকার ধারণ করলো? প্রশ্নটি বিশ্ববাসীর। আপাতত আমাদের জানা হলো চীন থেকে করোনাভাইরাসের রোগী যুক্তরাষ্ট্রে গমনই যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ব্যাপক হবার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখেনি। তার মানে উহানে সৃষ্ট করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে অন্য এলাকায় বা দেশে পৌঁছেনি।

    'Coronavirus in the US: how many people have it and how serious is the risk?' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (by Adam Gabbatt) বলা হয়,

    'Am I in danger?
    ''The immediate risk of this new virus to the American public is believed to be low at this time,'' the CDC says. The virus has only been identified in people who have recently traveled to Wuhan.
    Person-to-person spread of the coronavirus is occurring in China, but such transmission has not yet been detected in the US, although the CDC said it ''would not be surprising if person-to-person spread in the United States were to occur''.' [https://www.theguardian.com/science/2020/jan/28/coronavirus-in-the-us-risk-cdc-health]

    'US reports fourth coronavirus infection of unknown origin' শিরোনামে ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে ইকোনোমিক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'LOS ANGELES: US health officials reported Friday a fourth case of novel coronavirus of unknown origin, indicating the disease was spreading in the country.

    The latest case is a boy under 18 in Washington State who tested "presumptive positive," local authorities said without releasing further details about the patient.

    He is currently in home isolation in Snohomish County. The high school he attends will be shut until March 3 while it is deep cleaned, the Washington State Department of Health said.

    In neighboring Oregon, authorities said Friday an adult who had had contact with people at an elementary school had been hospitalized and was also considered "presumptive positive."

    A positive test is treated as "presumptive" until the results have been confirmed by the Centers for Disease Control and Prevention.
    "We've been expecting this and we're prepared for it," Oregon's Health Authority director Patrick Allen told reporters.
    The school will be closed until March 4 as it undergoes a deep clean, officials said, adding they would talk to employees and parents.

    Earlier Friday, Californian health authorities said an older woman was confirmed infected with unknown origin -- the second such case in the northern part of the state.
    "This new case indicates that there is evidence of community transmission but the extent is still not clear," said Sara Cody, director of public health for Santa Clara County.' [https://economictimes.indiatimes.com/news/international/world-news/us-reports-fourth-coronavirus-infection-of-unknown-origin/articleshow/74413825.cms]

    এই প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখিত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়ায়নি, বরং অন্য কোনো 'অজানা উৎস (যাকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে unknown origin)' থেকে ছড়িয়েছে। কিন্তু কী সেই উৎস?

    থাইল্যান্ড
    'COVID-19 pandemic in Thailand' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The COVID-19 pandemic was confirmed to have reached Thailand on 13 January 2020, when the country made the first confirmation of a case outside China. Surveillance among incoming travellers revealed a small number of cases throughout January, almost all of whom were visitors or residents returning from China. The first reported local transmission was confirmed on 31 January. The number of cases remained low throughout February, with forty confirmed by the end of the month. Cases saw a sharp increase in mid-March, which was attributed to several transmission clusters, the largest of which occurred at a Muay Thai fight at the Lumpinee Boxing Stadium on 6 March. Confirmed cases rose to over a hundred per day over the following week, and public venues and businesses were ordered to close in Bangkok and several other provinces. Prime Minister Prayut Chan-o-cha declared a state of emergency, effective on 26 March. A curfew has been announced, effective since night of 3 April 2020.


    The Thai government's response to the outbreak was initially based on surveillance and contact tracing, in accordance with the Department of Disease Control's three-stage response model. Temperature and symptom screening for coronavirus testing was implemented at international airports, as well as at hospitals for patients with travel or contact history. Investigations were performed in response to outbreak clusters. Public education focused on self-monitoring for at-risk groups, practising hygiene (especially hand washing), and avoiding crowds (or wearing masks if not possible). While residents returning from high-risk countries were encouraged to self-quarantine, travel restrictions were not announced until 5 March, when four countries were designated as "disease-infected zones" and travellers subject to quarantine, while those arriving from other high-risk countries are placed under observation. Further restrictions were announced on 19 March, requiring medical certification for international arrivals, and also health insurance for foreigners.

    The government has been sharply criticised for various aspects of its response to the crisis. In early February, in response to concerns over hoarding and price gouging of face masks, the government issued price controls and intervened in their distribution. The move failed to prevent shortages among hospitals, and became a scandal over perceived corruption and siphoning of supplies. Criticism was also aimed at the government's inconsistent policy over international travel and quarantine requirements, indecisiveness and slowness to act, and poor communication — many official announcements were made available to the public, only to be quickly retracted or contradicted by other government units, and later changed. The abrupt closure of Bangkok businesses prompted tens of thousands of workers to travel to their hometowns, risking further spread and reflecting the failure among agencies to coordinate a unified response.

    Background
    On 12 January, the World Health Organization (WHO) confirmed that a novel coronavirus was the cause of a respiratory illness in a cluster of people in Wuhan CityHubei Province, China, who had initially come to the attention of the WHO on 31 December 2019.

    Unlike SARS of 2003, the case fatality ratio for COVID-19 has been much lower, but the transmission has been significantly greater, with a significant total death toll.
    On 13 January, the Ministry of Public Health announced the first confirmed case, a 61-year-old Chinese woman who is a resident of Wuhan. She had not visited the Huanan Seafood Wholesale Market, but was noted to have been to other markets. She developed a sore throat, fever, chills and a headache on 5 January, flew directly with her family and a tour group from Wuhan to Suvarnabhumi Airport on 8 January, where she was detected using thermal surveillance and then hospitalised. Four days later she tested positive.

    Thailand's second case occurred in a 74-year-old woman who arrived in Bangkok on a flight from Wuhan on 17 January. On 21 January, Nakornping Hospital reported a suspected case of a 18-year-old male patient who arrived in Chiang Mai from Wuhan with a high fever; his blood samples were sent to King Chulalongkorn Memorial Hospital in Bangkok for further analysis. His condition had improved according to an official statement released by Maharaj Nakorn Chiang Mai Hospital on 31 January.

    On 22 January, the MOPH announced two additional confirmed cases. The third was a 68-year-old man, a Chinese tourist as in previous cases. The fourth case was the first case for a Thai citizen; a 73-year-old woman hospitalised at Nakhon Pathom Hospital [th] in Nakhon Pathom Provincearriving from Wuhan.

    The fifth case was confirmed on 24 January involving a 33-year-old Chinese woman arriving from Wuhan with her 7-year-old daughter who was not infected. She admitted herself to Rajvithi Hospital, three days after her arrival in Bangkok on 21 January.

    On 25 January, the government of Hua Hin District in Prachuap Khiri Khan Province reported a case for a 73-year-old Chinese woman patient who had arrived from Wuhan since 19 January before entering a private hospital in Hua Hin on 23 January. Initial blood sample analysis tested positive; however, authorities are awaiting results from another lab for confirmation.

    On 26 January, the Thai Ministry of Public Health said eight cases were confirmed, including one from Hua Hin. All were Chinese, except for a woman from Nakhon Pathom. The first five patients were discharged.

    Another six cases were confirmed on 28 January, with five from the same family in Wuhan and another from Chongqing. Thailand began scanning all travellers from China.

    Timeline
    January
    On 31 January, an additional five cases were reported, bringing the cumulative number of confirmed cases to 19. One was a local taxi driver who had no records of travelling to China and was thus suspected to have been infected by a Chinese tourist he picked up, making this the first case of human-to-human virus transmission within the country. The taxi driver was reported to have come into contact with at least thirteen other individuals, mostly family members, before seeking treatment. The other cases were Chinese nationals.

    February
    On 2 February, doctors from the Rajavithi Hospital in Bangkok announced that they had seen the success in treating severe cases of COVID-19 using a combination of drugs for flu (oseltamivir) and HIV (lopinavir and ritonavir), with initial results showing vast improvement 48 hours after applying the treatment. However, it was still too soon to confirm that this approach can be applied to all cases.

    On 4 February, the Thai government dispatched a Thai AirAsia plane to retrieve 138 citizens who were trapped in Wuhan following the lockdown, which landed at U-Tapao International Airport at 7:00 p.m. local time. Among the evacuees, six were hospitalised with high temperatures, with the rest subsequently sent to be quarantined in Sattahip Naval Base for two weeks. Three citizens were not evacuated, which included two students with high fever and another with an overstayed visa. On the same day, Thailand confirmed another six cases, including a Thai couple who had just returned from Japan; it was unclear whether they had contracted the virus while travelling or after returning to Thailand. Two new cases were also reported in drivers who had picked up Chinese passengers.

    On 8 February, another six cases were confirmed involving two Chinese, and one passenger on board the evacuation flight from 4 days ago and two other Thais who had exposure to tourists. These six cases brought the total count of confirmed cases to 32.

    On 11 February, another new case was confirmed, bringing the total count to 33.

    On 15 February, the 35th case was found in a 35-year-old Thai woman who worked in a private hospital, marking the first infection in a health worker. An investigation found that she did not wear a mask and protective suit while treating a patient. Several previous reports erroneously claimed that she worked for Bamrasnaradura Institute, which was later refuted and clarified by the MOPH.

    After 8 days with no reported cases, two more cases were confirmed on 24 February, bringing the number to 37. Two days later, the number of confirmed cases went up to 40, two of which were Thai nationals who had recently been to Japan. The elderly couple, who had just returned from Hokkaido, had already spread their virus to their 8-year-old grandson at home before seeking treatment. 101 high-risk individuals whom they came into contact with were tested for the virus, including fellow tour group members, family members, passengers on their returning flight, medical workers and the grandson's classmates; 97 tested negative while 4 are still awaiting confirmation. The grandfather was criticised by Public Health Minister Anutin Charnvirakul for initially refusing to disclose his travel history when interrogated by doctors, as he was at risk of becoming a super-spreader.

    On 29 February, a new case was confirmed, bringing the total count to 42. A 21-year-old salesman whose job brought him exposures to foreign travellers tested positive for SARS-CoV-2.

    March
    A social distancing practice by marking seats at King Chulalongkorn Memorial HospitalBangkok
    On 1 March, MOPH reported the first confirmed death in Thailand, a 35-year-old Thai who was originally diagnosed with dengue fever at a private hospital in late January. He was later transferred to Bamrasnaradura Institute on 5 February after testing positive for COVID-19, where he received treatment and had since fully recovered by 16 February. However, the damage the virus had done to his lungs was beyond recovery and he died from multiple organ failure on 29 February. The ministry is currently carrying out investigations to find out which disease is the main cause of his death. On the same day, King Power issued a statement identifying the man who had died as one of the company's partner-product consultants at their Sivaree branch store. The branch has been closed since the day he tested positive for the virus and all staff examined by health officials.

    On March 22, Thailand reported 188 new cases, the largest single-day rise since the virus reached the country. Most of the cases are still under investigation. On March 24, three new deaths were announced, all of whom were Thai nationals: a 70-year-old male who had tuberculosis, a 79-year-old male linked to the Lumpinee Boxing Stadium cluster, and a 45-year-old male who had diabetes. Four medical workers were also announced to have been infected with the virus after coming in contact with patients who refused to reveal their travel history while seeking treatment.'
    [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_Thailand]

    এই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, (১) চীনের বাইরে প্রথমে করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে, ১৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। (২) জানুয়ারি মাসজুড়ে থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, তার প্রায় সবগুলোই ছিল চীন ফেরত। (৩) ৩১ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম স্থানীভাবে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। (৪) ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের ঘটনা একেবারে  কম ছিল। (৫) মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এই বৃদ্ধি পাবার জন্য করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনাগুলোকে দায়ী করার সুযোগ হয়নি। (৬) আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজনীয়তা, সিদ্ধান্তহীনতা, কাজ করতে ধীরগতি এবং দুর্বল যোগাযোগের বিষয়ে অসামঞ্জস্য নীতির কারণে থাইল্যান্ড সরকার সমালোচিতও হয়েছিল। (৭) থাইল্যান্ডে প্রথম যিনি করোনাভাইরাস নিয়ে আসেন, তিনি চীনের উহান থেকে আসেন, তবে উহানের সি ফুড মার্কেটে তিনি  যাননি। এই ব্যাপারে আগেই অনেকবার আলোচনা করা হয়েছে যে, ওই সি ফুড মার্কেট থেকে করোনাভাইরাস উৎপত্তি হবার কথাটা মানুষের দৃষ্টি উহানের বায়োলজিক্যাল ল্যাব থেকে সরিয়ে রাখার একটা অপচেষ্টা ছিল। (৮) ২৫ জানুয়ারি উহান থেকে আগত ৭৩ বছর বয়সী যে চীনা মহিলার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে, তাঁর প্রাথমিক রক্তের নমুনা বিশ্লেষণের পরীক্ষা ইতিবাচক; তবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ফলাফলের জন্য অন্য ল্যাবের দ্বারস্থ হয়। (৯) ৩১ শে জানুয়ারি অতিরিক্ত যে পাঁচটি মামলার খবর পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি লোকাল ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিল যার চীন ভ্রমণের কোনও রেকর্ড ছিল না এবং সন্দেহ করা হয়েছিল যে তিনি একজন চীনা পর্যটক দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল। ট্যাক্সি ড্রাইভারটি অন্তত ১৩ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। (১০) ২৬ ফেব্রুয়ারি যে দম্পতির করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল, তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল এমন ১০১ জন উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল, যাদের ৯৭ টি ফলাফল আসে নেগেটিভ। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এই দম্পতি ১০১ জনের সাথে যোগাযোগের পরও সুপার স্প্রেডার হননি! (১১) ১ মার্চ আগে থেকে ডেঙ্গুতে ভোগা একজনের করোনা পজিটিভ আসার পর চিকিৎসার পর তিনি পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। পরে মৃত্যুবরণ করেন। (১২) ২৪ মার্চ যে ৩ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন, তাদের একজন করোনার পাশাপাশি যক্ষ্মায়ও আক্রান্ত ছিলেন, আরেকজন করোনার পাশাপাশি আক্রান্ত ছিলেন ডায়াবেটিসেও।

    এই ১২টি তথ্য বিশ্লেষণ করলে অন্তত এটা বুঝা যায়, থাইল্যান্ডে প্রথম যারা শরীরে করোনাভাইরাস বহন করে নিয়ে এসেছিল, তারা থাইল্যান্ডে করোনা ছড়ানোর জন্য বহুলাংশে দায়ী নয়। কোনো কোনো ঘটনায় অন্য কোনো আক্রান্ত লোক থেকে আরেকজনের আক্রান্ত হবার যে সন্দেহেরে কথা বলা হয়েছে, খুঁজে দেখলে দেখা যাবে, সেসব ভিত্তিহীন। করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' নাম দেয়ার কারণে এবং ছোঁয়াচে বলে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কারণেই এই গন্ডগোল, যার একটা স্পষ্ট প্রমাণ ১০ নং তথ্য। ৯ নং তথ্য যাচাই করলেও এই সত্য বের হয়ে আসবে।
    এই তথ্যগুলো থেকে আমরা এটাও বুঝতে পারি, করোনাভাইরাস নিরূপণের প্রচলিত পরীক্ষা ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। আরো বুঝতে পারি, অন্য রোগে আক্রান্তদের করোনা টেস্ট করলেও মাঝে মাঝে পজিটিভ ফলাফল চলে আসে। ১১ নং তথ্য যাচাই করলে বিষয়টা বুঝা সহজ হবে।

    'New coronavirus infection in Thailand takes tally to 42' শিরোনামে ইকোনোমিক টাইমসের ওয়েবসাইটে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'BANGKOKThailand recorded a new coronavirus infection, taking its tally to 42 cases since January, a health official said on Saturday.

    The victim is a 21-year-old Thai salesman whose job brought him exposure to foreign tourists, the permanent secretary of the health ministry, Sukhum Kanchanaphimai, told a news conference.
    Thailand has not yet had a death from the virus, although 28 patients have recovered and 14 are being treated in hospital.'
    [https://economictimes.indiatimes.com/news/international/world-news/new-coronavirus-infection-in-thailand-takes-tally-to-42/articleshow/74412287.cms]

    বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী একজন ২১ বছর বয়সী থাই বিক্রয়কর্মী, চাকরির কারণে তাকে বিদেশী পর্যটকদের সংস্পর্শে যেতে হয়েছিল। তার মানে এই বিক্রয়কর্মী এবং অন্য ৪১ জন করোনা শনাক্ত ব্যক্তি ছাড়া আরো এক বা একাধিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোক থাইল্যান্ডে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এটা শুধুই অনুমাণ। থাইল্যান্ড এবং হংকংয়ের ঘটনা সামনে রাখলে অন্তত একটি মিল এবং একটি অমিল পাওয়া যায়। মিল হচ্ছে উভয় দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারেনি। আর অমিল হচ্ছে হংকং করোনা প্রতিরোধে শুরু থেকেই তৎপরতার কারণে প্রশংসিত হয়েছিল, অন্যদিকে থাইল্যান্ড করোনা নিয়ন্ত্রনে তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সমালোচিত হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, এই বড় অমিল থাকার পরও উভয় দেশে করোনা ভয়াবহ আকার ধারনের ক্ষেত্রে প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে থাকতে সক্ষম হলো কিভাবে?

    এটা হচ্ছে ১৩ মে'র হিসাব। উভয় দেশের এই মিলের কারণ পরিষ্কার হতে পারে পরবর্তী আলোচনায়। উত্তর খুঁজে নিতে হবে।
    আপাতত আমরা এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডে যেসব রোগী গমন করেছিল, থাইল্যান্ডের করোনা নিয়ন্ত্রণে তড়িৎ পদক্ষেপের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাসকে মহামারীর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ করোনাভাইরাস নামে ভাইরাস হলেও কার্যত এটা ভাইরাস নয়, ছোঁয়াচেও নয়।


    দশম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

    জাপান
    'COVID-19 pandemic in Japan' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The COVID-19 pandemic was first confirmed to have spread to Japan in January 2020. Cases have been recorded in each of the 47 prefectures except for Iwate. The country has seen over 10,000 confirmed cases.
    The Japanese government confirmed its first outbreak of the coronavirus disease 2019 (COVID-19) in the country on 16 January 2020 in a resident of Kanagawa Prefecture who had returned from WuhanChina. This was followed by a second outbreak that was introduced by travellers and returnees from Europe and the United States between 11 March and 23 March. According to the National Institute of Infectious Diseases, the majority of viruses spreading in Japan derive from the European type while those of the Wuhan type have been disappearing since March. ...
    First Wave (January–March)
    January
    On 16 January, Kanagawa Prefecture confirmed its first case of COVID-19 when a man in his 30s who had previously travelled to Wuhan tested positive for it, marking the first confirmed case in Japan. ...

    February
    On 1 February, a passenger of the Diamond Princess cruise ship who had disembarked in Hong Kong on 25 January tested positive for COVID-19. The ship received quarantine orders from the Japanese government in Naha on that same day. ...

    Second Wave (March-present)
    March
    On 25 March, MHLW officials announced 71 people tested positive, including 41 cases in Tokyo. Governor Yuriko Koike held an emergency press conference in the late afternoon. She said that "the current situation is a serious situation where the number of infected people may explode." Koike also asked "if possible, work at home and refrain from going out at night as much as possible on weekdays." Koike asked people returning from abroad to refrain from going out for 14 days. The request from the governor appears to have punctured the relaxed mood in Tokyo. Panic buying began to trend on Twitter, with users posting pictures of empty shelves and lines outside supermarkets. At the Don Qujiote store in Nakameguro, customers hurried to grab instant noodles and canned goods immediately following Koike's late-evening speech. ...

    April
    On 3 April, Japan expanded its entry ban, effectively barring entrance to the country for visitors from 73 countries and regions.

    On 7 April, Abe proclaimed a state of emergency from 8 April to 6 May for Tokyo and the prefectures of Kanagawa, Saitama, ChibaOsaka, Hyogo and Fukuoka. He also said there would be no lockdown like in other countries, and that public transportation and other services needed to keep the economy and society going would be maintained as much as possible. This was the first emergency declaration in Japan. Abe also stated that the pandemic had created the nation's greatest economic crisis since the end of World War II.

    A second wave of infections hit Hokkaido, prompting the prefectural government to declare a second state of emergency that closed schools and that asked residents to avoid non-essential trips. ...

    On 27 April, minister Yasutoshi Nishimura was criticized for getting tested for the virus before other people who were showing symptoms. He took the test after a person in the response team he is part of tested positive for the virus, though he claimed to have not been in direct contact with the infected person. ...

    May
    On 1 May, smaller towns and villages began distributing the 100,000 yen stimulus payment to residents. Larger municipalities are expected to follow suit within the next two months. ...'
    [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_Japan]

    এই নিবন্ধ থেকে আমরা জানলাম, (১) জাপানে দু'বার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ১৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে উহান থেকে ফেরা একজন লোকের মাধ্যমে জাপানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল। এরপরে ১১ ই মার্চ থেকে ২৩ শে মার্চের মধ্যে দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাব ঘটে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ভ্রমণকারী এবং ফিরে আসা জাপানী ব্যক্তিগণের মাধ্যমে। (২) জাপানের প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ জাহাজ থেকে ২৫ জানুয়ারি হংকংয়ে অবতরণকারী একজন যাত্রী কভিড-১৯ এর জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছিলেন ১ মার্চ। জাহাজটি সেদিনই নাহায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার আদেশ পেয়েছিল জাপান সরকারের কাছ থেকে।

    আমরা এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো। প্রথমে এ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:

    'Elderly woman dies of coronavirus in Japan' শিরোনামে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে যুক্তরাজ্যের ডেইলী মেইলের অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'And, today, an 80-year-old woman in Japan has died with the coronavirus to become the country's first recorded victim, taking the toll to 1,370. ...
    Health minister Katsunobu Kato confirmed the woman's death today, February 13. She had been living in the Kanagawa region close to Tokyo.
    Mr Kato said that authorities are not certain that the woman was killed by the virus, but that she is the first person to die after testing positive for the infection.

    'The relationship between the new coronavirus and the death of the person is still unclear,' he said at a government briefing.' [https://www.dailymail.co.uk/health/article-7999851/Elderly-woman-dies-coronavirus-Japan.html]

    এই মহিলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল কিনা, কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত নয়, তবু মহিলাটি করোনাভাইরাসে ইতিবাচক পরীক্ষার পর মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তি হলো কিভাবে? বলা হয়, নতুন করোনাভাইরাস এবং এই ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক এখনও অস্পষ্ট।
    এই অস্পষ্টতার কারণ কি আদৌ উদঘাটিত হয়েছে? না হবার সম্ভাবনাই বেশি। এই অস্পষ্টতা সেই দিন কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে, যেদিন করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় বড় ধরনের ত্রুটির বিষয়টা সামনে আনা হবে। করোনাভাইরাসে যারা সত্যিই আক্রান্ত হয়নি, করোনাভাইরাস নিরূপনের পরীক্ষা তাদেরকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দলে জোর করে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, এসব ঘটনা তা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।

    'করোনাভাইরাস: চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লো কেন?' শিরোনামে  বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বৃহস্পতিবার জাপানে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘোষণা এসেছে - টোকিওর দক্ষিণ-পশ্চিমে কানাগাওয়া শহরের বাসিন্দা ওই নারীর বয়স ছিল প্রায় ৮০ বছরের মতো।
    জাপানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওই নারীর মৃত্যুর পরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই রোগের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং এই প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের সাথে তার কোনও সুস্পষ্ট যোগসূত্র নেই।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51499092]

    এই প্রতিবেদন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, চীনের উহানের সাথে কোনো যোগসূত্র ছাড়াই ওই নারী করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়। যারা করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বলে প্রচার করেছে, ছোঁয়াচে বলছে বেশ নিশ্চয়তার সাথে, তারা এই নারীর করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে কী ব্যাখ্যা দেবে?

    'Coronavirus: Japan's low testing rate raises questions' শিরোনামে বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ৩০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Rupert Wingfield-Hayes) বলা হয়, 'Why is Japan not in lockdown? It's a question I've been asked numerous times by friends all over the world. That's not surprising given what's going on in Europe and America. But it is perhaps the wrong question. Taiwan, Hong Kong, South Korea and most of mainland China, have also never had full lockdowns.

    For those trying to understand what's going on in Japan, the much more puzzling question is why there is so little testing for Covid-19.
    When you look at Germany or South KoreaJapan's testing figures look like they're missing a zero.

    Take Tokyo, population 9.3 million, and centre of Japan's epidemic. Since February, just 10,981 people have been tested for Covid-19. Of those, just over 4,000 were positive.

    But those figures are striking both because the number tested is so small and because the percentage testing positive is so high.

    What it shows is Japan is only testing people who are already quite sick. In fact, the official guidelines for doctors say they should only recommend a test if the patient has pneumonia.

    When we asked why the level of testing done is about half of the capacity weeks after the government has started to ramp up its testing, a health ministry official explained it reflects the number of tests doctors are prescribing.

    This is leading to some rather extraordinary stories from those trying to get tested.

    Jordain Haley is an American working in Japan as a business analyst and volunteer translator. Via Skype she told me what happened when she helped a friend, who doesn't speak fluent Japanese, to get a test.

    On 10 April, her friend had developed a fever and cough, but waited four days, as per the guidelines.

    "By then she was having trouble breathing and was dizzy from lack of oxygen," Jordain tells me. "I called the Covid hotline. They refused to help. They said if she's sick she should call an ambulance."

    The following day (Wednesday 15 April) her friend found a clinic where they gave her a chest X-ray. The doctor said she probably had Covid-19, but not bad enough to be hospitalised. He sent her home and told her to isolate.

    Late on Thursday night Jordain's friend called. She was in distress.

    "I could hear the EMT (ambulance crew) in the background. She was coughing and wheezing so much I couldn't make out what she was saying. It took them two hours to find a hospital that would accept her. The whole time her breathing was getting worse and worse."

    The hospital did another chest X-ray and told her friend to get tested for Covid-19 at her local health centre. But the doctor wouldn't write a recommendation. Instead she was sent home in a taxi.

    "They said she should roll down the windows in the cab, and that it would be ok," Jordain says, rolling her eyes.

    On Friday 17 April Jordain called the local health centre. For two hours she was passed from one desk to another. She answered scores of questions. Finally, she got her friend an appointment. But it came with a warning.

    "She must use the side entrance." Jordain was told. "She must not tell anyone where this testing is taking place. It could cause a commotion."

    Apart from the distress caused to someone who thinks their life is in danger, why does this matter? After all, Japan has very few deaths from Covid-19, still below 400.

    On social media I am often told: "Japan is identifying those who really need help and its medical care is excellent, and that's why so few are dying."

    This is not untrue according to Professor Kenji Shibuya of Kings College London.

    "From the physician's point of view, it makes sense," he says. "Forget about mild cases, focus on cases with major symptoms and save lives. Focus testing on those who have symptoms."

    But, says Professor Shibuya, from a public health point of view, Japan's refusal to test more widely is incredibly risky.

    He points to a study done by Keio University in Tokyo.

    Last week, the University hospital published a study of Covid tests done on patients admitted for non-Covid related illnesses and procedures. It found that around 6% of them tested positive for Covid-19.

    It is a small sample and not "generalisable". But Professor Shibuya still describes it as "very shocking".

    "We are definitely missing a lot of asymptomatic and mildly symptomatic cases," he says. "There is clearly widespread community transmission. I am very worried by this situation."

    How many? He is not sure. But based on the Keio results he thinks it could be from 20 to 50 times the official figure. That would mean between 280 and 700 thousand people might be infected in Japan.

    Without more testing it is impossible to know. But anecdotal evidence supports the idea that infections are far wider than reported.

    Among the small number of deaths are famous comedian Ken Shimura and actress Kumiko Okae. High profile infected people include seven sumo wrestlers, a TV presenter, two former professional baseball players, and a famous screen writer.

    "Currently 70%-80% of new infections recorded in Tokyo do not come from any previously known cluster," says Dr Yoshitake Yokokura, the head of the Japan Medical Association. "We need more prompt testing and we need the results more quickly."

    According to official figures, the number of new infections in Tokyo has now been falling for over a week. Good news? Not necessarily.

    "I would like to believe the numbers are really decreasing," says Dr Yokokura, "but the number of tests is insufficient to tell that."

    This has direct implications for Japan's ability to lift its state of emergency, which is currently supposed to end on 6 May.

    "It is not possible to lift the state of emergency at this stage," says Dr Yokokura. "We need a sustained decrease in new cases, and we need the reproduction rate (the number of people that one infected person will pass the virus onto, on average) to be well below one to do that."

    This week Japan begins its 'Golden Week' holiday. According to the governor of Okinawa, 60,000 people have booked flights to the island during the holiday.

    Governor Denny Tamaki is pleading with them to stay away.

    "I am sorry to tell you but Okinawa is under a state of emergency," he wrote on social media. "Please cancel your trip to Okinawa now."

    The weather for the next week is looking hot and sunny. People will be tempted to head to the beaches and mountains and, without knowing it, some percentage will inevitably be taking the virus with them.
    Professor Shibuya says it is imperative that Japan now abandon its current strategy and increase testing."Without much wider testing," he says, "it will be very hard to end this pandemic."[https://www.bbc.com/news/world-asia-52466834]

    এই  প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,(১) জাপানের মহামারী কেন্দ্র ৯.৩ মিলিয়র জনসংখ্যার শহর টোকিওতে ফেব্রুয়ারি থেকে কোভিড-১৯-এর জন্য মাত্র ১০,৯৮১ জনকে পরীক্ষা করার পর ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে ৪ হাজারের বেশি। অবাক করার মতো বিষয় নয়? যদি এভাবে সবাইকে পরীক্ষা করা হতো, তাহলে হয়তো মিলিয়নের কাছাকাছি মানুষের করোনা পজিটিভ ফলাফল চলে আসতো! এজন্যই জাপান টেস্টের পথ বাদ দিয়ে দেয়। তাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করা হলেও তেমন কিছুই হয়নি। প্রথম তরঙ্গের এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। (২) "Currently 70%-80% of new infections recorded in Tokyo do not come from any previously known cluster," says Dr Yoshitake Yokokura, the head of the Japan Medical Association.

    জাপান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ডঃ যোশিতাকে যোকোকুরা বলেছেন, "বর্তমানে টোকিওতে রেকর্ড হওয়া নতুন সংক্রমণের ৭০% -৮০% কোনো পূর্ববর্তী ক্লাস্টার থেকে নয়।"
    এই বক্তব্যের পরও কেউ কি জাপানে করোনাভাইরাসের প্রথম উপদ্রবকে উহান থেকে উৎসারিত বলে মন্তব্য করতে পারবেন? উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছিল, জাপানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী উহান ফেরত। কিন্তু উহান ফেরত প্রথম রোগী বা রোগীরা জাপানে করোনাভাইরাসের নরমাল স্প্রেডার বা সুপার স্প্রেডার কিছুই হতে পারেনি। জাপানে করোনায় প্রথম মৃত ব্যক্তিটিও কিন্তু উহান ফেরত নয়। যদি বাস্তব অবস্থা এমনই হয়, তাহলে কিভাবে জাপানে করোনার উপদ্রবকে উহান থেকে উৎসারিত বলা যাবে?

    'Japan's 2nd COVID-19 wave from US, Europe: research' শিরোনামে গ্লোবাল টাইমসের (চীন) ওয়েবসাইটে ২৯ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Liu Caiyu and Xing Xiaojing) বলা হয়, 'Research in Japan shows the peak of a new coronavirus outbreak in the country starting in March may be triggered by imported infections from Europe and the US, adding to evidence of how Europe and the US failed to curb the spread of the coronavirus and dragged down the worldwide fight against the pandemic.

    Europe and the US are responsible for Japan's second wave of the COVID-19 outbreak as they did not act when the alarm was sounded, and their domestic outbreaks are the result of rampant community infections rather than imported cases, analysts said.

    Japan is experiencing its second wave and likely to have a third or fourth, as it failed to stem the coronavirus infections from Europe and the US, Japan's National Institute of Infectious Diseases said based on research on virus strains, Japan News Network reported.

    After studying the virus genotype of 5,037 patients, Japanese scientists found the second wave of cases with an unknown transmission route in various parts of Japan since March were likely caused by imported infections from Europe and the US.

    Kazunori Oishi, the director of Japan's Hygiene Research Institute in Toyama, who participated in the research, told the Global Times on Wednesday that the first outbreak that originated from the cruise Diamond Princess was contained around February. But Japan failed to stop imported cases from Europe and the US starting March, which caused the second wave.

    Those imported cases were brought by tourists and returning personnel. March is also the peak season for Japanese students to have graduation trips usually to Europe and the US and they eventually brought back the virus to Japan, Oishi said.

    The study also suggested Japan is likely to have a third or fourth wave, and called for epidemic control measures in Japan not to be relaxed.

    To curb imported cases, Japan tightened its borders to visitors from the US in late March when the US saw a spike in COVID-19 deaths. Imported cases made up about 1 in 4 infections in Japan at that time, Japan Times reported. ...'

    এই প্রতিবেদনে প্রথমে বলা হয়, জাপানের গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চ মাসে শুরু হওয়া দেশে নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শিখরটি ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত সংক্রমণের দ্বারা উদ্ভূত হতে পারে। বলা হয়েছে, 'হতে পারে।' পরে বলা হয়েছে, ৫,০৩৭ জন রোগীর ভাইরাস জিনোটাইপ অধ্যয়ন করার পর, জাপানি বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে, মার্চের পর থেকে জাপানের বিভিন্ন স্থানে 'অজানা ট্রান্সমিশন রুট'যুক্ত মামলার দ্বিতীয় তরঙ্গ সম্ভবত ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত সংক্রমণের কারণে ঘটেছে।
    এখানে দ্বিতীয় তরঙ্গকে প্রথমে বলা হয়েছে 'জাপানের বিভিন্ন স্থানে 'অজানা ট্রান্সমিশন রুট'যুক্ত মামলা'; পরে আবার বলা হয়েছে, 'সম্ভবত ঘটেছে'।
    দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় জাপানে করোনাভাইরাসের ঘটনাগুলোকে যখন 'অজানা ট্রান্সমিশন' বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে, তখন সেই তরঙ্গের সাথে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পর্কিত করার কোনো অর্থ থাকতে পারে না।
    আর যেহেতু এই পুরো নিবন্ধের শুরু থেকে এই বিষয়টা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়েছে, কোনো রোগ একজনের শরীর থেকে শূন্যে লাফিয়ে আরেকজনের শরীরে যেতে পারে না, তাই জাপানে প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয় তরঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকেও অন্য কোনো দেশ থেকে আগত করোনা রোগীর সাথে সম্পর্কিত করার সুযোগ নেই।

    'করোনাভাইরাস: দ্বিতীয়বার লকডাউন করতে বাধ্য হওয়া জাপানের শহরের ঘটনা যে বার্তা দিচ্ছে' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১৯ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে জাপানের যে অঞ্চলের গল্প কিছুদিন আগেও সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো - যখন তারা সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল - সেই হোক্কাইডো অঞ্চলই দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ...
    গত সপ্তাহে হোক্কাইডোতে ১৩৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দফায় সংক্রমণের সাথে এবারের পার্থক্য ছিল, এবার বিদেশ থেকে আসা কারো মাধ্যমে শহরের মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেরকম কোনো প্রমাণ নেই।
    নতুন আক্রান্তদের কেউই বিদেশি নন, তাদের মধ্যে কেউ গত একমাসের মধ্যে জাপানের বাইরে ভ্রমণও করেননি
    লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক কেনজি শিবুইয়া মনে করেন হোক্কাইডো শহর শুরুতে যথাযথভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি।
    "একদম শুরুতে পদক্ষেপ নিলে ক্লাস্টার শনাক্ত করা, আইসোলেট করা কন্টাক্ট ট্রেস করা সহজ। হোক্কাইডোর কর্তৃপক্ষ এভাবে প্রথম দফায় সংক্রমণ সামলেছে।"
    এই ক্ষেত্রে হোক্কাইডোর উদাহরণটি অনেকটা দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরের মত। সেখানে ধর্মীয় এক জমায়েত থেকে অনেকের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ায়। আক্রান্তদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা ও কন্টাক্ট ট্রেসিং করার পর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
    কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গণহারে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা জাপান সরকার করেনি।' [https://www.bbc.com/bengali/news-52336712]



    এই প্রতিবেদনের বক্তব্যের পরও কি এমন কোনো সম্ভাবনা বাকি থাকে, জাপানে দ্বিতীয় তরঙ্গের করোনাভাইরাসের সাথে অন্য কোনো দেশ থেকে ফেরত আসা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কোনো সম্পর্ক আছে?
    জাপানে মূলত করোনাভাইরাসে তেমন কেউ আক্রান্তও হয়নি, মারাও যায়নি। জাপানে করোনাভাইরাস টেস্টে যেসব ঘটনায় পজিটিভ ফলাফল এসেছে, সেসবের অধিকাংশই পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির ফল। এজন্য দুই তরঙ্গে জাপানে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও জাপানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনুপাতে মৃতের হার জাপানের চেয়ে ছোট অন্য অনেক দেশের চেয়েও কম।

    জাপান সম্পর্কে এই আলোচনা শেষের আগে আরো একটি বিষয় জানা দরকার। জাপানের প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে করোনা রোগী এসে জাপানে করোনার বিস্তার ঘটায় বলে বলা হয়। কিন্তু প্রমোদতরীটিতে কিভাবে করোনার উপদ্রব হলো, তা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। 'প্রমোদতরীতে নতুন ৪৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, ২৯ জনই জাপানি' শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'জাপানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, প্রমোদতরীটির যাত্রীদের ৮০ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। ত মাসে জাহাজে থাকা হংকংয়ের ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর আরোহীদের পরীক্ষা করা শুরু হয়। কেটো জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন কিন্তু আগে থেকে অসুস্থ ৮০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি, কিংবা যারা ডায়মন্ড প্রিন্সেসের জানালাবিহীন ঘরে আছেন তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে।' [https://www.ittefaq.com.bd/worldnews/130470]

    'করোনাভাইরাস: জাপানে কোয়ারেন্টিন করা জাহাজ থেকে দেশে ফিরেছেন মার্কিন নাগরিকেরা' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টিন করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে দুইটি উড়োজাহাজে করে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
    সোমবার ভোররাতে টোকিওর হ্যানেডা বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পাঠানো বিমান ছেড়ে যায় বলে জানাচ্ছে কিওডো নিউজ এজেন্সি।
    চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার কারণে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে গত ৩রা ফেব্রুয়ারি থেকে আটকে আছে ডায়মন্ড প্রিন্সেস।
    জাহাজটিতে ৩৫৫ জনেরও বেশি লোকের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
    চীনের বাইরে একক কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এই জাহাজেই।
    ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে প্রায় ৪০০ মার্কিন যাত্রী ছিলেন, এদের মধ্যে অন্তত ৪০জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। তাদের চিকিৎসা জাপানেই হবে।
    ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজটিকে প্রায় ৩,৭০০ যাত্রী নিয়ে ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টিন করা হয়।
    জাহাজের একজন যাত্রী হংকং এ নেমে যাবার পর তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজটিকে আটক করা হয়।
    এরপর থেকে জাহাজের যাত্রীদের মধ্যে প্রবল ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51527451]

    ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে জাহাজে থাকা হংকংয়ের ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর আরোহীদের পরীক্ষা করা শুরু হয়। অন্যদিকে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজের একজন যাত্রী হংকং এ নেমে যাবার পর তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজটিকে আটক করা হয়।
    কোন তথ্যটি সঠিক? বিবিসি বাংলার বক্তব্য সঠিক ধরে নেয়া হলে প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে জাহাজে থাকা অবস্থায় লোকটি কিভাবে করোনা 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হলো?

    ফিলিপিন্স
    'COVID-19 pandemic in the Philippines' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The ongoing pandemic of coronavirus disease 2019 (COVID-19), a novel infectious disease caused by severe acute respiratory syndrome coronavirus 2 (SARS-CoV-2), spread to the Philippines on January 30, 2020, when the first case of the disease was confirmed in Metro Manila. It involved a 38-year-old Chinese woman who was confined in the San Lazaro Hospital in Manila. The second case was confirmed on February 2, that of a 44-year-old Chinese man who died a day earlier, which was also the first confirmed death from the disease outside mainland ChinaThe first case of someone without travel history abroad was confirmed on March 5, a 62-year-old male who frequented a Muslim prayer hall in San Juan, Metro Manila, raising suspicions that a community transmission of COVID-19 is already underway in the Philippines. The man's wife was confirmed to have contracted COVID-19 on March 7, which was also the first local transmission to be confirmed.

    As of May 15, 2020, there have been 12,091 confirmed cases of the disease in the country. Out of these cases, 2,460 recoveries and 806 deaths were recorded. The Philippines has the third most number of cases in Southeast Asia, after Indonesia and Singapore. The largest single-day increase in the number of confirmed cases was on March 31, when 538 new cases were announced. Meanwhile, the smallest single-day increase since the last week of March was on April 4, when only 76 new cases were announced. ...

    The first case of COVID-19 in the Philippines was confirmed on the same day. The diagnosed patient was a 38-year-old Chinese woman from Wuhan, the origin of the disease, who had arrived in Manila from Hong Kong on January 21. She was admitted to the San Lazaro Hospital in Manila on January 25 after she sought a consultation due to a mild cough. At the time of the confirmation announcement, the Chinese woman was already asymptomatic.

    The second case was confirmed on February 2, a 44-year-old Chinese male who was the companion of the first case. His death on February 1 was the first recorded outside China. He suffered from coinfection with influenza and Streptococcus pneumoniae.

    On February 5, the DOH confirmed a third case in a 60-year-old Chinese woman who flew into Cebu City from Hong Kong on January 20 before she traveled to Bohol where she consulted a doctor at a private hospital on January 22, due to fever and rhinitis. Samples taken from the patient on January 24 returned a negative result, but the DOH was notified on February 3 that samples taken from the patient on January 23 tested positive for the virus. The patient upon recovery on January 31 was allowed to go home to China.

    March 2020 – early spread
    After a month of reporting no new cases, on March 6, the DOH announced two cases consisting of two Filipinos. One is a 48-year-old man with a travel history to Japan, returning on February 25 and reported symptoms on March 3. The other is a 60-year-old man with a history of hypertension and diabetes who experienced symptoms on February 25 and was admitted to a hospital on March 1 when he experienced pneumonia. He had last visited a Muslim prayer hall in San Juan. The DOH confirmed that the fifth case had no travel history outside the Philippines and is, therefore, the first case of local transmission. A sixth case was later confirmed, that of a 59-year-old woman who is the wife of the fifth case. Since then, the Department of Health recorded a continuous increase in the number of COVID-19 cases in the country.

    Cases abroad involving foreigners with travel history in the Philippines were reported in early March 2020. The first three recorded cases involving an Australian, a Japanese, and a Taiwanese national had a history of visiting the Philippines in February 2020. Though it was unconfirmed whether or not they had contracted the virus while in the Philippines, speculations arose on undetected local transmissions in the country due to prior confirmation of the Philippines' first case of local transmission. ...

    April 2020
    President Duterte on April 7 accepted the recommendation of the Inter-Agency Task Force on Emerging Infectious Diseases (IATF-IED) to extend the ECQ in Luzon until April 30.

    On April 17, it was reported that the country has been able to bring down the viral disease' reproduction number to 0.65 from 1.5, which means that the average number of people a person can infect decreased from more than one to less than one. Recent data at the time suggest that the country is doing better in "flattening the curve", but was warned of "resurgence" and must ramp up mass testing in order to isolate cases and avoid further transmission of COVID-19.

    Sometime in late April, local government units no longer cannot imposed quarantine measures without the consent of the IATF. Prior to that period, localities could impose such measures with coordination with the DILG.

    May 2020
    The ECQ in Luzon was extended until May 15 in some areas. This includes Metro Manila, Calabarzon, Central Luzon (except Aurora), Pangasinan, Benguet, and Baguio. ECQ measures were also extended in the provinces of Iloilo and Cebu province as well as in Cebu City and Davao City. Other areas were downgraded or placed under general community quarantine (GCQ).

    After May 15, the Philippine government revised its quarantine classifications in correspondence on earlier announcement that "Science and Economics will be considered for any changes of the lockdown measures." A modified enhanced community quarantine (MECQ) was applied to NCR, Laguna, and Cebu City, while GCQ was raised to 41 provinces and 10 cities with moderate risk. Meanwhile, 40 provinces and 11 cities who are considered low risk areas were supposed to be released from community quarantine measures, but were eventually upgraded to modified general community quarantine (MGCQ) after "an honest mistake" and receiving requests from LGUs.

    Once again, the Philippine government revised its announcements and declared the entire country under GCQ, except for NCR, Laguna, and Cebu City who were earlier placed under MECQ. This is temporary until guidelines of MGCQ for low-risk areas is finalized. IATF is also reportedly considering the reclassification of provinces and cities in Central Luzon as high risk areas under MECQ.

    After receiving petitions from LGUs, IATF revised its quarantine policies yet again. Cebu City and Mandaue City were placed under ECQ, while NCR, Laguna, and Central Luzon (except Aurora and Tarlac) are all on MECQ. The remaining parts of the country are still on GCQ.'
    [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_the_Philippines]

    এই নিবন্ধ থেকে যে তথ্যগুলো জানা যায়, (১) করোনাভাইরাস রোগের চলমান মহামারী ২০১৯ (COVID-19) ফিলিপাইনে ছড়িয়ে পড়ে ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে, যার সাথে জড়িত এক ৩৮ বছর বয়সী চীনা মহিলা। (২) সংক্রমণের দ্বিতীয় ঘটনা নিশ্চিত হয়েছিল ২ ফেব্রুয়ারি, যার সাথে জড়িত ছিল একজন ৪৪ বছর বয়সী চীনা ব্যক্তি; এটা করোনাভাইরাসে ফিলিপাইনে প্রথম মৃত্যু, একই সাথে চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে এই রোগে প্রথম নিশ্চিত মৃত্যুও ছিল এটি। (৩) ৫ ফেব্রুয়ারি, ডিওএইচ ৬০ বছর বয়সী চীনা মহিলার ক্ষেত্রে তৃতীয় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, মহিলাটি ২০ শে জানুয়ারি হংকং থেকে সিবু সিটি গিয়েছিলেন বোহল ভ্রমণ করার আগে। ২৪ শে জানুয়ারি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া নমুনাগুলির ফলাফল এসেছিল নেতিবাচক, তবে ডিওএইচকে ৩ ফেব্রুয়ারি জানানো হয়েছিল যে, ২৩ শে জানুয়ারি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া নমুনাগুলির ফলাফল ভাইরাসের জন্য ইতিবাচক ছিল। ৩১ জানুয়ারী সুস্থ হওয়ার পরে রোগীকে চীনে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। (৪) তৃতীয় ঘটনার পর এক মাসের মধ্যে নতুন কোনো সংক্রমণ ঘটেনি। এক মাস পর, মার্চ মাসে, ডিওএইচ দুজন ফিলিপিনো নিয়ে গঠিত দুটি মামলা ঘোষণা করে। একজন হলেন ৪৮ বছর বয়সী মানুষ, যিনি জাপান থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছিলেন এবং ৩ মার্চ লক্ষণগুলি জানিয়েছেন। (৫) আরেকজন হলেন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সী একজন মানুষ, ফিলিপাইনের বাইরে যার কোনো ভ্রমণ ইতিহাস ছিল না। এটা ছিল ফিলিপাইনে স্থানীয় সংক্রমণের প্রথম ঘটনা। (৬) ষষ্ঠ মামলাটি ছিল ৫৯ বছর বয়সী একজন মহিলার ক্ষেত্রে, যিনি ছিলেন পঞ্চম মামলার সাথে সম্পৃক্ত লোকের স্ত্রী। এর পর থেকে ফিলিপাইনে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। (৭) ফিলিপাইনে ভ্রমণের পর বিদেশীদের করোনাভাইরাসে সংক্রমণের কিছু ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে। প্রথম তিনটি ঘটনার সাথে একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন জাপানী এবং তাইওয়ানীয় নাগরিক জড়িত, যাদের ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিলিপাইন ভ্রমণ করার ইতিহাস ছিল। এই তিনটি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়, তারা ফিলিপাইনে থাকাকালীন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে কিনা, তা অনিশ্চিত ছিল; এমনকি ফিলিপাইনের স্থানীয় সংক্রমণের প্রথম ঘটনার পূর্বে নিশ্চিত হওয়ার কারণে দেশে শনাক্তহীন স্থানীয় ট্রান্সমিশন নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল।
    এই তথ্যগুলোর সারাংশ এরকম হয়, (১) ফিলিপাইনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দু’টি ঘটনার সাথেই সম্পৃক্ত ছিল চীন ফেরত মানুষ। (২) তৃতীয় ঘটনায় সম্পৃক্ত মহিলার করোনা পরীক্ষার ফলাফল প্রথমে নেগেটিভ, পরে পজিটিভি এসেছিল। (৩) তৃতীয় ঘটনার পর এক মাসের মধ্যে আর কোনো সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। (৪) ফিলিপাইনে স্থানীয় সংক্রমণের শিকার প্রথম ব্যক্তিটি ছিল ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী। লোকটি বিদেশ ভ্রমণ ছাড়াই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। (৫) স্থানীয় সংক্রমণের এই প্রথম ঘটনার সাথে সম্পর্কিত লোকটির ৫৯ বছর বয়সী স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়। স্থানীয় সংক্রমণের এই দুটি ঘটনার পর ফিলিপাইনে করোনার উপদ্রব বেড়ে যায়। (৬) ফিলিপাইনে স্থানীয়ভাবে করোনা সংক্রমণের কোনো ঘটনা ঘটার আগেই ফিলিপাইন থেকে অন্য দেশে গমন করা ৩ জন লোক করোনায় আক্রান্ত হয়।

    এই সারাংশ থেকে কিছু সমীকরণে পৌঁছা যায় সহজে: (১) ফিলিপাইনে চীন ফেরত মানুষের কারণে করোনার প্রসার হয়নি। কারণ প্রথম তিনটি সংক্রমণের ঘটনার সাথে চীনের সম্পৃক্ততা ছিল। কিন্তু সেই তিনটি ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ফিলিপাইনে করোনার প্রসার ঘটে। চীন ফেরত করোনায় আক্রান্ত মানুষগুলো থেকে ফিলিপাইনে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারতো, কারণ তখনও ফিলিপাইনে করোনা নিয়ন্ত্রণের বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি; কেউ তখনো ভালোভাবে সচেতন হয়নি। কিন্তু চীন ফেরত প্রথম তিন ঘটনার কোনোটিই সুপার স্প্রেডার হয়নি। (২) ফিলিপাইনে করোনা পরীক্ষায় ত্রুটির কারনে একই ব্যক্তির ফলাফল একবার নেগেটিভ এবং একবার পজিটিভ। এতে বুঝা যায় পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির কারণে অন্য অনেক দেশের মতো ফিলিপাইনেও অনেক 'করোনা নেগেটিভ' মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়ে যায়। বিশেষত বয়স্ক লোকেরা, যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত, তারা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়ে যায়, অন্য দেশে ভ্রমণের কোনো ইতিহাস না থাকা সত্ত্বেও। করোনা পরীক্ষায় ত্রুটির আরেকটি প্রমাণ হতে পারে ফিলিপাইন থেকে গমন করে অন্য দেশে যাওয়া তিন জন লোকের করোনা শনাক্ত হওয়া। ফিলিপাইনে স্থানীয়ভাবে করোনা সংক্রমণের আগেই তারা শুধু ফিলিপাইন ভ্রমণের কারণে কিভাবে করোনা সংক্রমিত হতে পারে?

    এবার সিএনএনের একটি প্রতিবেদন (By Xave Gregorio, CNN Philippines) দেখা যাক, যা প্রকাশিত হয় ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। বলা হয়, 'Metro Manila (CNN Philippines, February 2) — The Department of Health announced Sunday the country's first death of a patient who tested positive for novel coronavirus (2019-nCoV) — the first reported death due to the virus outside of China.
    A 44-year-old Chinese man, who is also the Philippines' second confirmed case of 2019-nCoV, died Saturday, the DOH said. He was the partner of the 38-year-old Chinese woman who last week became the first confirmed case of the new virus in the country.
    DOH Secretary Francisco Duque III said the man was admitted to San Lazaro Hospital on January 25. He had penumonia, fever, cough and a sore throat.
    ''Over the course of the patient's admission he developed severe pneumonia. In his last few days, the patient was stable and showed signs of improvement. However, the condition of the patient deteriorated within the last 24 hours resulting in his demise,'' Duque said.
    He added that aside from being infected with 2019-nCoV, the man was also infected with Influenza B virus and Streptococcus pneumoniae bacteria.
    "Many of the [deaths] in China have been observed ... the first 40, most of those really with underlying medical problems," Duque said.
    In contrast, the man's partner only sought consultation due to mild cough and was already free of any symptoms of infection by the time the DOH announced Thursday that she is positive for 2019-nCoV.
    The DOH said they are now working with the Chinese embassy and will cremate the remains of the man.
    "When we have persons who died of infectious illness, part of the protocol is to dispose the body or even cremate the remains as soon as possible," DOH spokesperson Eric Domingo said.
    Duque said the San Lazaro Hospital has isolated the man and his partner, while health personnel who came in contact with them practiced stringent infection control measures and wore appropriate personal protective equipment.
    The Health chief also said that the Epidemiology Bureau is tracing passengers aboard the flights of the couple, who came to the Philippines from Wuhan — the Chinese city at the center of the 2019-nCoV outbreak — via Hong Kong on January 21.
    The bureau is also tracing people who could have come in contact with the couple in Cebu, Dumaguete and other places where they stayed and traveled to.
    The World Health Organization stressed that while this is the first death due 2019-nCoV outside of China, this is not a locally-acquired case.
    The DOH also said that there are still no reports of community spread of the new virus.
    Cebu Pacific said the couple were aboard January 21 on flight 5J 241 from Hong Kong to Cebu and flight DG 6519 from Cebu to Dumaguete. Philippine Airlines also disclosed that the couple were onboard flight PR 2542 from Dumaguete to Manila on January 25.
    The two airline companies said it is contacting passengers on those flights. Crew aboard those flights have been placed under quarantine and the planes used have been disinfected, airline officials said.
    Those who have not been contacted by Cebu Pacific who were aboard the abovementioned flights can call +632 87020886 from 7 a.m. to 10 p.m. daily.
    Four more being tested
    The DOH said that as of Saturday, they have put 36 people under observation for possible 2019-nCoV infection. Thirty of them have tested negative for the virus, while four more are still being tested at the Research Institute for Tropical Medicine.
    Ten have been discharged from hospitals. A 29-year-old Chinese man from Yunnan province under observation earlier died due to pneumonia, but he tested negative for 2019-nCoV.
    All of the remaining patients under investigation are stable. ...'
    [https://www.cnnphilippines.com/news/2020/2/2/novel-coronavirus-cases-death-Philippines.html]

    ফিলিপাইনে প্রথম সংক্রমিত দু'জন লোকের যেসব সহযাত্রীদের খোঁজ নেয়ার কথা এখানে বলা হয়েছে, তাদের খোঁজ নেয়ার পরের তথ্য পাওয়া যায়নি। এটাই সত্য হবে, তাদের কোনো সহযাত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। কারণ কোনো রোগ বাহ্যিক সংস্পর্শের মাধ্যমে বা বায়ুর মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনা।
    চীনের উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরও তা অন্য দেশে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ায়নি, ফিলিপাইনেও উহান ফেরত কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ায়নি। ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি ডট কম শিরোনামের ওয়েবসাইটে ৩১ মার্চ ২০২০ তারিখে 'Coronavirus in Philippines: The COVID-19 risk, impact and measures' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (By Praveen Duddu) বলা হয়, 'Philippines, one of the high-risk countries from the Wuhan coronavirus outbreak, recorded the first death outside China. The government has announced lock-down of Metro Manila, followed by the entire Luzon island and is mulling over more localised lock-downs. The Philippines government declared a state of calamity in the country for six months on 17 March.
    When did coronavirus reach the Philippines?

    The first case of novel coronavirus (2019-nCoV, now COVID-19) in the Philippines was confirmed on 30 January 2020, in a 38-year old woman who arrived from Wuhan. Two days later, the Philippines recorded the first death outside China on 01 February 2020.
    The Philippines government declared a health emergency on 09 March, following a spike in new confirmed cases and local transmission. The move will release funds to local governments and healthcare officials to handle any further surge in cases.
    The COVID-19 Code Alert system was revised upwards to Red Sublevel 2 on 12 March.

    Coronavirus: Philippines COVID-19 cases and deaths
    As of 31 March, the total Philippines coronavirus cases stand at 1,546. One of the coronavirus-confirmed on 06 March was confirmed to be a human-to-human transmission putting the nation on a high alert. The man attended prayer in late February, which increases the concerns of possible transmission to other devotees who attended the same.'
    [https://www.pharmaceutical-technology.com/features/coronavirus-affected-countries-philippines-measures-impact-tourism-economy/]

    ফিলিপাইনে করোনাভাইরাস বিস্তারের পেছনে স্থানীয় সংক্রমণই দায়ী। কিন্তু স্থানীয় সংক্রমণ কোত্থেকে হলো, সে প্রশ্নের উত্তর কেউ না খুঁজে ফিলিপাইনে ভাইরাসটি বিস্তারের পেছনে চীন ফেরত আক্রান্ত মানুষ খুঁজতে গিয়ে কি কোনো লাভ হবে?
    ফিলিপাইনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে চাহিদামতো অনেক তথ্য পাওয়া যায় না। 'Nine doctors die from coronavirus in Philippines' শিরোনামে ব্যাংকক পোস্টের ওয়েবসাইটে ২৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'MANILA: Nine doctors have died in the Philippines from the coronavirus, the country's top medical association said Thursday, as hospitals were overwhelmed and medics complained about a lack of protection on the front lines.
    The announcement of the doctors' deaths heightened fears that the scale of the health crisis in the Philippines is much worse than is being officially reported, with the confirmed virus death toll at just 38.
    The main island of Luzon, home to 55 million people, is in the second week of a lockdown to contain the spread of the disease, however medics are warning there is a surge in cases.
    The Philippine Medical Association said Thursday a ninth doctor had died of the virus, and that health workers were not getting enough protection.
    "If it were up to me, test the frontliners first and test them again after seven days. Doctors could be carriers themselves," Benito Atienza, vice president of the Philippine Medical Association told AFP.
    Three large Manila hospitals announced Wednesday they had reached full capacity and would no longer accept new coronavirus cases.

    Hundreds of medical staff are no longer accepting patients because they are undergoing 14-day self-quarantines after suspected exposure, the hospitals said.
    Just under 2,000 people had been tested in the Philippines as of Tuesday from those with severe symptoms and those considered most vulnerable to Covid-19, such as the elderly, those with life-threatening ailments, and pregnant women.'
    [https://www.bangkokpost.com/world/1887020/nine-doctors-die-from-coronavirus-in-philippines]

    'করোনা: সুরক্ষার অভাবে আক্রান্ত ৯ ফিলিপাইনি চিকিৎসকের মৃত্যু' শিরোনামে বাংলাদেশের দৈনিক দেশ রূপান্তরে ২৬ মার্চ, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ফিলিপাইনের নয়জন চিকিৎসক। খবর আলজাজিরা।
    অপর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও ফিলিপাইনি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তারাও।
    বৃহস্পতিবার ফিলিপাইন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আরও একজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ চিকিৎসক। ...' [https://www.deshrupantor.com/international/2020/03/26/206840]
    এরকম আরো অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফিলিপাইনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন চিকিৎসকের মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশিত হয় প্রায় কাছাকাছি তথ্য নিয়ে। কিন্তু কোথাও স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না কিভাবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ।
    যাহোক ফিলিপাইনে করোনাভাইরাস যে চীন বা উহান থেকে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইনে গমনকারী কারো মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেনি, তা স্পষ্ট।
    বেশ কয়েকটি দেশের উপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে আমরা নিশ্চিত হলাম, উহান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা গিয়ে অন্য দেশে করোনার বিস্তার ঘটায়নি। তাহলে কিভাবে অন্য দেশগুলোতে করোনা বিস্তৃতি লাভ করেছে?

    অনেক দেশে করোনা ছড়ায়নি, ছিল পরীক্ষা পদ্ধতির ভুল
    কয়েকভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। (১) করোনা সংক্রমিত অধিকাংশ দেশে অসংখ্য করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে উহান থেকে ফেরা কোনো রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে নয়, বরং প্রচলিত পরীক্ষার ত্রুটির কারণে। প্রচলিত আরটি পিসিআর পরীক্ষাটি মূলত করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য আবিষ্কৃত হয়নি। আবিষ্কৃত হয়েছে সাধারণ নিউমোনিয়াসহ নির্দিষ্ট কিছু রোগ নির্ণয়ের জন্য। করোনাভাইরাস লক্ষণ ও ক্ষতির দিক থেকে নিউমোনিয়ার একেবারে কাছাকাছি রোগ হবার কারণে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর নিউমোনিয়ায় ব্যবহৃত পরীক্ষা পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কারণে সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অনেকেও করোনা পজিটিভ রোগী হয়ে গেছে অনেক অনেক দেশে। যেহেতু উভয়টা ফুসফুস সংক্রমণের রোগ। করোনাভাইরাস পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পদ্ধতিগত ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

    এইজন্য যেসব দেশে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে, সেসব দেশে 'প্রকৃত করোনা'য় সংক্রমিত নয়, এমন অনেক মানুষও করোনা পজিটিভ হয়ে গেছে। এদের অনেকে তাই চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে গেছে। যেমন রাশিয়া। 'রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কম কেন' শিরোনামে ২২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা। পরীক্ষাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের বড় উপায়। রাশিয়ার এই সংস্থার প্রধান মেলিটা ভুজোনভিক বলেছেন, রাশিয়া এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে জানুয়ারির শেষ দিক থেকেই। এর পাশাপাশি রাশিয়া সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়ায় এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কিট আছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য। রাশিয়া এত আগে ব্যবস্থা নিলেও যুক্তরাষ্ট্র মার্চের শুরু থেকে নড়েচড়ে বসেছে।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1646294]

    'রাশিয়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধি, ঝুঁকিতে ইউরোপ' শিরোনামে প্রথম আলোয় ১৪ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বর্তমানে যেসব দেশে একেবারে লাগামহীন, সেই সব দেশের অন্যতম রাশিয়া। দেশটিতে ৭ মে পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার। গতকাল বুধবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার। ফলে করোনার এখন অন্যতম কেন্দ্র এই রাশিয়া। ...
    করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো, দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ও যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ হাজার করে রোগী বাড়ছে রাশিয়ায়। তবে দেশটির আক্রান্তের তুলনায় মৃতের হার এখনো কম। এ পর্যন্ত মারা গেছেন দুই হাজার দুই শর বেশি মানুষ। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, দেশটিতে মৃত্যুর হার কম থাকার অন্যতম কারণ হলো, তারা ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলোর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তারা দ্রুত রোগী ও ঝুঁকিপূর্ণদের আইসোলেশনে নিচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষার সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়িয়েছে দেশটি। ফলে মৃদু সংক্রমিত রোগীদের চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ...
    প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে দেশটি। ...'
    এটা ১৬ মে ২০২০ এর হিসাব।
    জাপানে করোনাভাইরাস সম্পর্কে একটু আগে উল্লেখিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাপানে করোনাভাইরাস পরীক্ষা এবং পজিটিভ ফলাফলের অনুপাতিক হার খুব কাছাকাছি। কিন্তু মৃত্যু কম। কারণ 'প্রকৃত করোনাভাইরাস' জাপানে আক্রমণ করেনি।
    জাপানের ব্যাপকভাবে পরীক্ষা না করার বিষয়ে একটু আগে জাপান সম্পর্কে আলোচনায় বিবিসি'র যে  রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, তার সঠিকত্ব নিয়ে যদি প্রশ্ন করা হয়, তাহলে এই প্রশ্নও সৃষ্টি হয়, জাপানে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা কিভাবে ঘটলো? স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে, এমন ১০ টি দেশ নিয়ে এর আগেও আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে জাপানের উদাহরণও উল্লেখ করা হয়েছে। 

    জাপানে কম্যুনিটি ট্রান্সমিশনের আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক:
    'জাপানের করোনা মোকাবিলার সফল মডেল ‘টিটিটি' শিরোনামে ডেইলী স্টার বাংলায় ১৬ মে ২০২০ তারিখে একটি নিবন্ধ লিখেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী ড. আশির আহমেদ। সেখানে বলা হয়, 'আমাদের ফুকুওকা শহরে প্রথম যিনি করোনা আক্রান্ত হন, তার হিস্ট্রি থেকে জানা গেল, তিনি কখনো বিদেশে যাননি। এমনকি এরমধ্যে টোকিওতেও যাননি। চিন্তার বিষয়। তার করোনা এলো কোথা থেকে? নিশ্চয়ই আরও আক্রান্ত আছে অথবা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে। একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ জানালেন, একজন শনাক্ত হওয়া মানে হলো, সে ইতোমধ্যে আরও ৫০ জনকে সংক্রমিত করতে করতে হাসপাতালে এসেছে। তাই টেস্ট সংখ্যা বাড়ানো উচিত। তবে, উপসর্গ দেখা গেলে তারপর টেস্ট।' [https://www.thedailystar.net/bangla/150730]

    স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে, এমন ১০ টি দেশ নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা ছাড়াও একটু আগে চীন ফেরত করোনা রোগী থেকে করোনা বিস্তার লাভ করেনি, এমন কয়েকটি দেশের উপর যে আলোচনা করা হয়েছে, সেই আলোচনা থেকেও এটা স্পষ্ট হতে পারে, বিশ্বের যেসব দেশে করোনা ছড়িয়েছে, সেসব দেশের অসংখ্য করোনা রোগী টেস্টের ভুলে পজিটিভ হয়ে গেছে; উহানের 'প্রকৃত করোনা'য় তারা আক্রান্ত হয়নি। এই 'টেস্টের ভুলে করোনা পজিটিভ হওয়া'কেই এই নিবন্ধের শুরুতে গুজব বলা হয়েছে।
    স্থানীয় সংক্রমণের রহস্য করোনা পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যেই নিহিত আছে। এই ব্যাপারে সন্দেহ দূর করতে হলে দরকার একটা এক্সপেরিমেন্ট। যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ তেমন একটা ঘটেনি বা করোনা সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে বা যে কোনো দেশের সাধারণ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১০০০ রোগীর করোনা পরীক্ষা করা হলে অনেকেরই করোনা পজিটিভ ফলাফল চলে আসবে। করোনার উপদ্রব কখনো বিশ্ব থেকে পুরো শেষ হয়ে গেলেও নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তদের এই টেস্ট করলে অনেকের করোনা পিজিটিভ চলে আসবে। মূলত স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলো এভাবেই ঘটেছে।
    শুধু যেসব দেশ ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা করেছে, সেসব দেশ নয়, যেসব দেশ ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা করেনি, সেসব দেশেও অসংখ্য রোগী টেস্টের ভুলে করোনায় আক্রান্ত না হয়েও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, এটা বিশ্বাস করা অমূলক হবে না। বিশেষত যখন দেশে দেশে চীন বা অন্য দেশ ভ্রমণ ছাড়া, এমনকি কোনো করোনা রোগীর সংস্পর্শ ছাড়া অসংখ্য মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হতে দেখা যায়, তখন করোনা টেস্টের ত্রুটিকে এর জন্য দায়ী না করে উপায় থাকে না।

    করোনা টেস্টে ব্যবহৃত 'আরটি পিসিআর' পদ্ধতি যে অনেক সময় ভুল ফলাফল দেয়, তা অনেকের জানা নেই বা এই পদ্ধতির প্রতি আস্থার কোনো অভাব নেই বলে দেশে দেশে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলোর প্রতি প্রথমে প্রশ্ন সৃষ্টি হলেও অনেকে শেষে নিজেদেরকে এই উত্তর দিয়ে থাকেন, যেহেতু করোনা একটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই চীন বা করোনার উপদ্রব আছে, এমন কোনো দেশের সাথে সম্পর্ক ছাড়াই, এমনকি কোনো  করোনা রোগীর সাথে সম্পর্ক ছাড়াই এসব লোক করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যখন জানলাম, (১) করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' নয়; (২) কোনো রোগ বায়ুবাহিত হতে পারে না; (৩) কোনো রোগ ছোঁয়াচে হতে পারে না; (৪) ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না;  (৫) একজনের শরীরে থাকা কোনো রোগ রক্ত ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে না, তখন আর স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদেরকে এই বুঝ দেয়ার সুযোগ থাকে না যে, করোনা একটি ছোয়াঁচে বা ভাইরাস হবার কারণেই স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলো ঘটে। বরং এই সম্ভাবনা প্রবল হয়ে যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষা নিউমোনিয়াসহ অন্য কিছু রোগে আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষায় ব্যবহৃত মেশিন দিয়ে করানোর ফলেই এই বিভ্রান্তি।

    পরীক্ষা পদ্ধতির ভুল বা বিভ্রান্তির আরো কিছু উদাহরণ দেখা যাক:
    জাপানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ সংস্থা কিয়োডো নিউজের ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে '2 elderly passengers of virus-hit ship die in Japan' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Two elderly Japanese passengers from the Diamond Princess, a coronavirus-hit cruise ship quarantined in Yokohama, have died, the health ministry said Thursday.
    The deaths of the 87-year-old man from Kanagawa Prefecture and the 84-year-old woman from Tokyo raised the number of fatalities in Japan of people infected with the COVID-19 virus to three, the Ministry of Health, Labor and Welfare said.
    The man, who had bronchial asthma and other pre-existing illnesses, was hospitalized on Feb. 11 after displaying symptoms such as fever and breathing difficulties, according to the ministry. He tested positive for the new coronavirus on Feb. 12.
    The woman broke out in a fever on Feb. 5 but was not initially tested for the virus. She was finally hospitalized on Feb. 12 due to the persistent fever and other symptoms, and was confirmed to be infected with the virus the following day, the ministry said.
    She had no pre-existing conditions and died on Thursday of pneumonia believed to be caused by the virus, it said.'
    [https://english.kyodonews.net/news/2020/02/24c3b1bf4030-breaking-news-2-elderly-passengers-of-virus-hit-ship-died-japan-govt-source.html]

    'COVID-19 Global Death Toll Surpasses 1,100 as Slower Pace of New Confirmed Cases in Outbreak's Epicenter Offers Some Hope' শিরোনামে টাইম ডট কম ওয়েবসাইটে ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (BY HILLARY LEUNG , SANYA MANSOOR , AMY GUNIA , JASMINE AGUILERA , TARA LAW AND JOSIAH BATES) বলা হয়, 'A San Diego hospital says an American citizen who was also evacuated from Wuhan was temporarily discharged after initial testing suggested they had not been infected with the virus. But further testing revealed that the patient had actually contracted the disease and they subsequently returned to the hospital. Health officials said on Tuesday that the error occurred because of a labeling error on samples.'
    [https://time.com/5772481/china-coronavirus-latest/]

    'করোনাভাইরাস: প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, '১৪ দিনের বেশি কোয়ারেন্টিনে থাকার পর আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ না থাকায় ইয়োকোহামার একটি ক্রুজ জাহাজ থেকে যাত্রীদের নামা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
    জাপানের উপকূলে কোয়ারেন্টিন জাহাজ থেকে আরোহীদের নামিয়ে আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যাইহোক, কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজে থাকা ১৮ জন আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানের পর পরীক্ষায় জানা গেছে যে তারা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর পর আরো প্রায় ৩০০ জন মার্কিন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন।
    জাহাজটি থেকে দেড় শতাধিক অস্ট্রেলীয় নাগরিক এরইমধ্যে ডারউইনে পৌঁছেছেন, যেখানে তারা আরো দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
    শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডারউইনে পৌঁছানোর পর ছয় জন অসুস্থতা বোধ করায় তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই জনের সংক্রমণ রয়েছে। তবে এর আগে জাপান ছাড়ার আগে করা পরীক্ষায় পাওয়া গিয়েছিল যে, তাদের সংক্রমণ নেই।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51596145]

    'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামে আল জাজিরায় ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Man with coronavirus in Egypt recovering, no longer a carrier: WHO
    The World Health Organization (WHO) said that the person previously confirmed as having coronavirus in Egypt is on his way to recovery, after latest tests showed he was "no longer carrying the virus".
    "He will remain in quarantine until the full 14-day period is over and will be undergoing further required tests to ensure he was fully recovered," WHO spokeswoman Inas Hamam said in an email.'
    [https://www.aljazeera.com/news/2020/02/cloneofcloneofcloneof200215224437270-20021623180-200218231013395.html]

    'করোনা পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (শিশির মোড়ল কর্তৃক তৈরিকৃত) বলা হয়, 'রাজধানীর (ঢাকা, বাংলাদেশ) উত্তরায় নিজের মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারছিলেন না চিকিৎসক ছেলে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো কোভিড ১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফল দেখতে চেয়েছিল। রাজধানীর একটি ছোট ক্লিনিকে রেখে তাঁর মায়ের নমুনা পরীক্ষা হয়। ১২ এপ্রিল আইইডিসিআরে দেওয়া সনদে দেখা যায়, মা করোনায় আক্রান্ত নন।
    চিকিৎসক ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, 'সনদ পাওয়ার পরপরই মাকে আমরা রাজধানীর একটি বড় হাসপাতালে ভর্তি করাই। মাকে তারা লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যায়।' কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত আইইডিসিআরকে দিয়ে পরীক্ষা করায়, যা পরিবারের সদস্যরা জানতেন না। ১৩ এপ্রিল আইইডিসিআরের দেওয়া সনদে দেখা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। ওই চিকিৎসক প্রশ্ন করেছেন, 'এক দিনের ব্যবধানে কি এটা সম্ভব?'
    ওই হাসপাতাল চিকিৎসকের মাকে আর রাখেনি। বাধ্য হয়ে তাঁকে উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে স্থানান্তর করেন ছেলেরা। তিনি ভালো হয়ে উঠছিলেন। সরকারি ওই হাসপাতাল নমুনা পরীক্ষা করায়। ২২ এপ্রিল আইইডিসিআরের সনদ বলছে, তাঁর শরীরে করোনা ছিল না। ১০ দিনের ব্যবধানে এটা কি হওয়া সম্ভব? ...'
    [https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1653422]

    এভাবে একই লোকের দু'রকম ফলাফল আসার অনেক ঘটনা ঘটতে পারে আমাদের অজান্তেও। এমন অনেক ঘটনাও ঘটে, একই লোকের একই সাথে করা পরীক্ষায় দুই ল্যাবে দু'রকম ফলাফল! কিছুদিন আগে প্রথম আলোয় চিঠিপত্র বিভাগে একজন লোক পরীক্ষা পদ্ধতির এই বিভ্রান্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমার এক বন্ধুও সেদিন এরকম একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন। বলেছেন, 'আমাদের এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। তবে একটা তথ্য দিতে পারি। আমার পরিচিত একজনের পুরো পরিবারের করোনা পজিটিভ আসে। কিন্তু ৩ দিনের ব্যবধানে তারা আবার টেস্ট করালে নেগেটিভ আসে। প্রথমবার টেষ্ট করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে, পরে খুলনা থেকে করায়।'

    'যবিপ্রবি'র পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা পজেটিভ, আইইডিসিআরে নেগেটিভ!' শিরোনামে সময় নিউজের ওয়েবসাইটে ৯ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ঝিনাইদহে করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন আক্রান্তরা। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হলেও মাত্র চার দিনের ব্যবধানে একই রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ঢাকার আইইডিসিআর থেকে নেগেটিভ হওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন অন্তত ১৫ জন। কেন এমন হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি সিভিল সার্জন।
    ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হন বলে জানা যায়। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো নমুনায় তাদের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। কিন্তু বেশিরভাগেরই কোনো উপসর্গ না থাকায় তাদের নমুনা আবারও সংগ্রহ করে দ্বিতীয় দফায় ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। শুক্রবার আসা সাতজনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। দুই দিনের ব্যবধানে সংগ্রহ করা নমুনায় রিপোর্ট পাল্টে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ভুক্তভোগীরা। তবে দুই ল্যাব থেকে দুই প্রকার রিপোর্ট আসার সঠিক কারণ জানাতে পারেননি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা।
    সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, এটার অনেক কারণ থাকে। কানেকশন বা ট্রান্সপোর্টে নিয়ে যাওয়া অনেক কিছুর ব্যাপার থাকে। এছাড়া ভাইরোলোজির যারা তারা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।
    গত ২৮ এপ্রিল আক্রান্তদের দ্বিতীয় দফায় নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো ১৫ টি নমুনার সবগুলোই নেগেটিভ আসে বলে জানান জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা।
    জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, ১৫ জনের যাদের জানানো হয়েছিল করোনা পজেটিভ তাদের কেউই করোনায় আক্রান্ত নন।
    সচেতনমহল বলছেন, করোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পরীক্ষায় স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সচেতন হতে হবে।
    সনাক সদস্য আমিনুর রহমান টুকু বলেন, মেশিনের কোনো ত্রুটি থাকতে পারে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তাদের ভুল হতে পারে। তবে তাদের সতর্ক হতে হবে।

    জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, এ পর্যন্ত জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬০৩ টি। যার মধ্যে ফলাফল পাওয়া গেছে ৩১৯ টির। [https://www.somoynews.tv/pages/details/212589]

    আরেকটি প্রতিবেদন দেখা যাক। 'প্রথম আলোয় ৩০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত (আপডেট: ১৭ মে ২০২০) ''করোনা 'পজিটিভ হয়ে' মৃত্যু, দ্বিতীয় পরীক্ষায় 'নেগেটিভ'' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রাজশাহীতে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এক ব্যক্তি মারা যান গত রোববার। প্রথম দফা নমুনা পরীক্ষায় করোনা 'পজিটিভ' ছিলেন তিনি। সে হিসেবে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তি তিনি। তবে এক সন্দেহ থেকে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার জন্য মৃত্যুর আগের দিন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন 'নেগেটিভ' এসেছে।
    বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই ব্যক্তির ফুসফুসে পানি ও বাতাস জমায় চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি বলে জানান তিনি।

    ৮০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি বাঘা উপজেলার একটি গ্রামে। তাঁকেই রাজশাহীতে করোনায় মৃত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। নিশ্চিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে আর কারও মৃত্যু হয়নি।
    হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল ওই বৃদ্ধ জ্বর ও প্র¯্রাবের যন্ত্রণা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এক্স-রে করার পর চিকিৎসকেরা সন্দেহ করেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসকেরা তাঁর নমুনা পরীক্ষা করান। পরীক্ষার প্রতিবেদন 'পজিটিভ' আসে। তার পর থেকে তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়। কিন্তু এর আগেই অনেক চিকিৎসক ও নার্স ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এমন ৪২ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া ওই রোগীর সঙ্গে থাকা তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় একটি প্রতিবেদনও 'পজিটিভ' আসেনি। ফলে চিকিৎসকেরা ওই রোগীর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। গত শনিবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরের দিন সেই নমুনা পরীক্ষার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

    এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা কমিটির সিদ্ধান্ত, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত সবাইকে নগরের ভেতরে নির্ধারিত জায়গায় দাফন করা হবে। তাই ওই বৃদ্ধের লাশ বাঘা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে নিতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে নির্ধারিত কবরস্থানেও লাশ দাফন করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত নগরের হেতেমখাঁ কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
    রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, দ্বিতীয় পরীক্ষায় ওই ব্যক্তির প্রতিবেদন করোনা  'নেগেটিভ' এসেছে। তিনি আসলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তাঁর ফুসফুসে পানি ও বাতাস জমেছিল। এ কারণেই তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।' [https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1653900]

    প্রাসঙ্গিক আলোচনা:
    প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ''প্রথম দফা নমুনা পরীক্ষায় করোনা 'পজিটিভ' ছিলেন তিনি। সে হিসেবে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তি তিনি। তবে এক সন্দেহ থেকে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার জন্য মৃত্যুর আগের দিন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন 'নেগেটিভ' এসেছে।''
    একই রোগীর করোনা পরীক্ষায় দু'বার দু'রকম ফলাফল কিভাবে সম্ভব? রাজশাহী জেলায় ''করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তি'' হিসেবে যাকে গণ্য করা হয়, তিনি মৃত্যুর আগের দিনের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ছিলেন! তবু তিনি কিভাবে ''করোনায় মৃত'' বলে সাব্যস্ত হলেন?
    প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ''নিশ্চিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে আর কারও মৃত্যু হয়নি।''
    রাজশাহীতে আর কেউ তাঁর আগে করোনায় মৃত্যুবরণ না করাটা কয়েকটি প্রশ্নের সৃষ্টি করে: (১) রাজশাহীতে তাঁর আগে তাহলে কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে? (২) তিনি কোত্থেকে, কার কাছ থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন?
    প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ''চিকিৎসকেরা তাঁর নমুনা পরীক্ষা করান। পরীক্ষার প্রতিবেদন 'পজিটিভ' আসে। তার পর থেকে তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়। কিন্তু এর আগেই অনেক চিকিৎসক ও নার্স ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এমন ৪২ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া ওই রোগীর সঙ্গে থাকা তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় একটি প্রতিবেদনও 'পজিটিভ' আসেনি।''
    প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, করোনাভাইরাস যদি সত্যিই ভাইরাস এবং ছোঁয়াচে হয়, তাহলে 'করোনা পজিটিভ' ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে আসা ৪২ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর করোনা পরীক্ষায় একটি প্রতিবেদনও 'পজিটিভ' আসেনি কেন? উত্তর কে দেবে?

    প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ''রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, দ্বিতীয় পরীক্ষায় ওই ব্যক্তির প্রতিবেদন করোনা 'নেগেটিভ' এসেছে। তিনি আসলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তাঁর ফুসফুসে পানি ও বাতাস জমেছিল। এ কারণেই তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।''

    যদি তা-ই হয়, তাহলে প্রথমবারের পরীক্ষায় কেন ফলাফল 'পজিটিভ' এসেছিল? এমনকি তাঁকে কেন রাজশাহীতে ''করোনায় মৃত প্রথম ব্যক্তি'' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল?


    করোনাভাইরাসের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এর আগের আলোচনায় একটি প্রতিবেদনের রেফারেন্স দেয়া হলো। এখানে আবার ওই প্রতিবেদনের দু'টি বাক্য উল্লেখ করতে হচ্ছে। 'করোনাভাইরাস: শনাক্তকরণ পরীক্ষা পদ্ধতি কি ত্রুটিপূর্ণ?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিনিধি জেমস গ্যালাঘার কর্তৃক তৈরিকৃত) বলা হয়, ''আরটি-পিসিআর' নামে এই পরীক্ষা এইচআইভি এবং ইনফ্লয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এবং এটা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।'
    'নতুন করোনাভাইরাস সনাক্তের জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষাটি ত্রুটিযুক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ভিত্তিক।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51523745]

    চীন থেকে করোনাভাইরাস অন্য দেশে ছড়ায়নি বলে আমরা জানলাম, এটাও জানলাম, চীন ছাড়া অন্য অনেক দেশে 'অসংখ্য মানুষ' করোনাভাইরাস পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে পরীক্ষাপদ্ধতির ত্রুটির কারণে। এই 'অসংখ্য মানুষ' ছাড়া বাকিরা কোত্থেকে করোনায় আক্রান্ত হলো, শুধু আক্রান্তই হয়নি, হাজারে হাজারে লক্ষে লক্ষে মারাও গেলো? আজ ১৬ মে করোনায় বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৩,১৩,২৬৩ জন; আক্রান্ত ৪৭,২১,৮৯০ জন।
    এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমরা একটু দেখি করোভাইরাস কতগুলো দেশে ছড়িয়েছে, করোনাভাইরাসে কোন দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, কোন দেশগুলো কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে?
    ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মে পর্যন্ত মোট ২১৫ টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ১৫০টির মতো দেশে মৃতের সংখ্যা ১০০ এর চেয়ে কম। মৃতের সংখ্যা ৪০০০ এর উপরে, এমন দেশ আছে ১৪টি। বাকি ৫১টি দেশে মৃতের সংখ্যা ১০০ এর চেয়ে বেশি, ৪০০০ এর চেয়ে কম। মৃতের সংখ্যা ৪০০০ এর চেয়ে বেশি, এমন দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ইতালী, ফ্রান্স, জার্মানী, তুর্কী, ইরান, চীন, কানাডা, বেলজিয়াম, মেক্সিকো এবং নেদারল্যান্ডস।

    এই দেশগুলোর মধ্যে কিছু দেশ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:
    ফ্রান্স
    'ফ্রান্সে বাড়ছে করোনাভাইরাসে মৃত-আক্রান্তের সংখ্যা' শিরোনামে সময় নিউজের ওয়েবসাইটে ১১ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (তৈরি করেছেন লুৎফুর রহমান বাবু) বলা হয়, 'ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ফলে পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। সংস্কৃতি মন্ত্রী সহ পাঁচ জন সংসদ সদস্যসহ প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। আর প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
    সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ওয়াই শহরের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশি মানুষের সমাগম হতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।'  [https://www.somoynews.tv/pages/details/202170]

    'Sweden probably had Covid-19 cases in NOVEMBER, country's virus chief claims, after French man is found to have been infected in December' শিরোনামে যুক্তরাজ্যের ডেইলী মেইলে ৫ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (By TIM STICKINGS and ALICE CACHIA) বলা হয়, 'Sweden likely had coronavirus cases as early as November last year, the country's virus chief has revealed.
    State epidemiologist Anders Tegnell claimed individual cases would have been detected among travellers from Wuhan.
    He said: 'There wasn't any spread [of infection] outside Wuhan until we saw it in Europe later.
    'But I think that you could find individual cases among Wuhan travellers who were there in November to December last year. That doesn't sound at all strange, but rather very natural.'

    The country's first official coronavirus case was a woman in Jönköping who tested positive on January 31st after a trip to China. The woman has since recovered from the illness.
    Around 100 people from the Swedish Armed Forces attended the 2019 Summer Military World Games in Wuhan in late October and stayed in the city for two weeks.
    Several competitors fell ill and were screened for the virus, although none were reported to have tested positive.
    Sweden - one of the only countries in Europe to resist a lockdown - has no plans to implement large-scale sample testing of patients who received care for respiratory symptoms or flu last year to see if they had coronavirus.
    'It's not something that's being discussed in a structured way,' said Tegnell.

    'At the moment it feels like we don't want to burden the healthcare sector with this type of investigation. They have a lot of other things to do, and this would not lead to any measure.'
    He added: 'Instead, what could be interesting to find out is how the virus spread in China and how it behaved in the early stages of its spread. If it was an individual spread from an animal to a person or if it spread to a group of people over a longer period of time.'

    'There aren't many instances where we have been able to track a contagion of a completely new virus from animals to humans. We don't have much knowledge of how this happens in reality,' he explained.
    'It would be valuable to see how people could protect themselves against this type of development in the future.'
    While Sweden has avoided introducing a lockdown, it has banned visitors from care homes in one of its few restrictive measures.
    Swedish prime minister Stefan Lofven has previously said that 'it is not the number of hours of sunshine or temperature that decides whether to listen to the advice of the authorities or not.'

    The government advises people to wash their hands and practise social distancing, but most measures are not enforced.
    There have so far been close to 23,000 cases of coronavirus in Sweden and nearly 2,800 deaths recorded.
    Tegnell's revelations follows new report than a man in France was infected with coronavirus in December.
    Amirouche Hammar, 43, revealed himself as France's potential 'patient zero' who was infected with coronavirus last December.

    He came forward after a hospital near Paris revealed it had re-tested old flu samples and found a positive test for coronavirus on December 27.
    The Algerian-born fish market worker had not travelled to China, and the result suggests the virus was spreading in France well before January 24 when the country confirmed its first case.

    Speaking to BFMTV, Hammar said he had suffered 'very serious' chest pains but said doctors had been mystified by his illness before eventually diagnosing a lung infection.
    Although experts have urged caution about the findings, the WHO said today it was 'not surprising' that a case had occurred in December and said that more such discoveries were possible.
    'It's also possible there are more early cases to be found,' WHO spokesman Christian Lindmeier told a UN briefing in Geneva.

    He encouraged other countries to check records for cases in late 2019, saying this would give the world a 'new and clearer picture' of the outbreak.
    It is not clear how Hammar caught the virus, because he has no direct links to China where the outbreak began late last year.
    Hammar's wife works at a supermarket near Charles de Gaulle Airport in Paris where passengers are known to go shopping after they land.

    The doctor who revealed the case said the patient's wife had worked at a fish market with colleagues of Chinese origin.
    'We're wondering whether she was asymptomatic,' said Dr Yves Cohen of the Avicenne hospital where Hammar was treated.
    Hammar, who lives in Bobigny, said Dr Cohen had contacted him in recent days and informed him he was '100 per cent positive' for the virus.
    At the time, he had symptoms including a fever, cough and breathing problems which are now known to be symptoms of Covid-19.
    He initially suspected flu, but was puzzled by the symptoms and went to hospital where he was given a breathing mask.
    'At 5am I decided to take my car and I went straight to the hospital,' he said.

    'I said we must call the doctor right away, something is wrong, I have chest pain,' he said, saying it was affecting his breathing.
    Medics struggled to identify what was wrong with the 43-year-old, but told him it may be a lung infection and warned that his illness was 'very serious'.
    After several days in hospital he returned home and eventually recovered, not realising he had been infected with the new virus.
    China reported the new virus to the World Health Organisation on December 31, but there were no confirmed cases abroad until January 13 and France did not officially record its first until January 24.

    Dr Cohen said scientists at two hospitals had re-tested samples from 24 patients, of which one came back positive.
    The results, published in the International Journal of Antimicrobial Agents, showed that Hammar was infected 'one month before the first reported cases in our country'.
    The samples had all been collected to detect flu using PCR tests, the same screening process that can also be used to detect the presence of coronavirus.
    Each sample was re-tested several times to ensure there were no errors, he added.

    Dr Cohen said it was too early to say for sure whether Hammar was France's 'patient zero'.
    'He may be the 'patient zero', but perhaps there are others in other regions,' he said.
    'All the negative PCRs for pneumonia must be tested again. The virus was probably circulating.'
    'He was amazed, he didn't understand how he had been infected. We put the puzzle together and he had not made any trips. The only contact that he had was with his wife,' he said.
    Olivier Bouchaud, head of the hospital's infectious diseases department said the virus could have spread 'quietly in the population, without anyone detecting its presence'.
    Evidence of earlier infections would confirm what many scientists had already suspected, he said.

    Stephen Griffin, an expert at the University of Leeds' Institute of Medical Research, said it was 'a potentially important finding' and added: 'We must be cautious when interpreting these findings.'
    Jonathan Ball, a professor of molecular virology at the University of Nottingham, said it was 'not impossible that it was an early introduction, but the evidence isn't conclusive by any means'.'  [https://www.dailymail.co.uk/news/article-8288599/Sweden-probably-Covid-19-cases-NOVEMBER-countrys-virus-chief-claims.html]

    ফ্রান্সে 'শূন্য রোগী' হিসেবে পরিচিত এই লোক কোত্থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন, কেউ জানে না।

    'যে গির্জার মাধ্যমে ফ্রান্স-জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতি করোনা' শিরোনামে দৈনিক নয়াদিগন্তে ৩০ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ফ্রান্সের একটি গির্জার মধ্যে একজন ধর্মযাজক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, হে প্রভু! আজ আমরা একটি উৎসবের জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি।' এরপর উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, 'আপনারা সকলেই কি আনন্দিত? ' সমস্বরে সবাই বলে উঠল, 'হ্যাঁ'।
    ধর্মীয় উৎসব উদযাপন উপলক্ষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জায় সমবেত শত শত মানুষ এভাবেই উৎসবে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রতি বছরের মতো এই ধর্মীয় সমাবেশে ফ্রান্সের মূল ভূখন্ডে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড থেকেও এসেছিল লক্ষাধিক মানুষ। পাঁচ দিন ধরে চলে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান। কিন্তু আদতে ওই উপাসনালয়-ই হয়ে উঠেছে দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল ক্ষেত্র। কারণ সেদিন ওই গির্জায় উপস্থিত কোনো এক ব্যক্তি নিজ শরীরে বয়ে এনেছিলেন ওই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এমনই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
    বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ফ্রান্সের স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, ওই চার্চে সেদিন ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়া প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। সকলের অজান্তেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিম আফ্রিকার রাজ্য বুরকিনা ফাসো, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা, সুইজারল্যান্ডসহ একটি ফরাসি পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্রে।

    সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর জার্মানি ফ্রান্সের সাথে তার সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৫ বছরে এই প্রথম দুই দেশ তাদের অবাধ চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলো। ...
    রয়টার্সের সূত্র মতে, গত ২০ মার্চ ফ্রান্সে করোনা রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যাদের অধিকাংশই ওই গির্জার মুলহাউসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
    স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ভার্নি বলেন, আক্রান্তদের বেশিরভাগের সঙ্গে মুলহাউসের গির্জার যোগসূত্র রয়েছে।' সূত্র : রয়টার্স [https://www.dailynayadiganta.com/europe/492218]

    এখানে বলা হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে একটি গির্জায় অনুষ্ঠিত একটি উৎসব থেকে ফ্রান্সে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল। ধারণা করা হয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কোনো এক ব্যক্তি নিজ শরীরে বয়ে এনেছিলেন ওই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। কিন্তু এই ধারণার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। ধারণাকৃত লোকটি কি চীন থেকে এসেছে, তা-ও কেউ বলতে পারছে না। আর 'চীন থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ এলেও তার কাছ থেকে অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারবে না', এই নিবন্ধে এই বিশ্বাসে দৃঢ় বিশ্বাসী হবার পক্ষে শুরু থেকেই আলোচনা করা হয়েছে। আরেকটি প্রতিবেদন দেখা যাক:

    'করোনাভাইরাসে ইউরোপের মধ্যে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে প্রথম চীনের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। উহান রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর এশিয়ার বাইরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে প্রথমবারের মতো আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়েছে।
    ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাগনেস বুজিন বলেন, হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ১৬ জানুয়ারি ফ্রান্সে আসেন। ২৫ জানুয়ারি তাকে প্যারিসের হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়।
    এর আগে চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে কেবল তিনটি দেশে হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়।
    জানুয়ারির শেষের দিকে ১১ জনকে শনাক্ত করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ইউরোপীয় দেশ হয়ে ওঠে ফ্রান্স। এদের মধ্যে ছয় জন এখনও হাসপাতালে রয়েছেন।
    স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নিহত চীনা গুরুতর অবস্থায় উত্তর প্যারিসের বিসাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে ফুসফুসের সংক্রমণে তার মৃত্যু হয়।
    অ্যাগনেস বলেন, এই লোকের মেয়েও সংক্রমিত, তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। ...' [https://www.jugantor.com/international/278677]

    এখানে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর সাথে যে লোকের সম্পর্ক করা হয়েছে, সে ছিল চীনের এক পর্যটক। চীন থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সে ফ্রান্সে আসার পরও, এমনকি ফ্রান্সে মৃত্যুবরনের পরও সে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসের 'শূন্য রোগী' হিসেবে পরিগনিত হয়নি, ফ্রান্সে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সাথেও কোনোভাবে সম্পর্কিত হয়নি।
    সব মিলিয়ে বুঝাই যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের ওই গির্জায় অনুষ্ঠিত উৎসবটিতে কোনো করোনায় আক্রান্ত রোগী এলেও ক্ষতি হতো না, যেহেতু করোনা ছোঁয়াচেও নয়, ভাইরাসও নয়। অন্য কোনোভাবেই সেই অনুষ্ঠান থেকে ফ্রান্সে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। ভাবতে হবে, কিভাবে?

    ইতালি
    'যে ভুলে ইতালিতে করোনার মহামারি' শিরোনামে সময় নিউজের ওয়েবসাইটে ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'কডোনো শহরের যে রোগী থেকে সারাদেশে করোনায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে ওই রোগী প্রথমে সামান্য অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে যান। তার পারিবারিক চিকিৎসক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠান। দুদিন পর শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সমস্যা দেখা দিলে ওই রোগী আবার হাসপাতালে যান। কিন্তু তখনো প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর ফলে ওই রোগীর কাছ থেকে করোনাভাইরাস অন্য রোগী ও হাসপাতালের কর্মীসহ পুরো ১৬ হাজার বাসিন্দার পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
    জানা গেছে, কডোনো শহরের ওই রোগী চীন ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু তার ওই বন্ধু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই রোগীর ভাইরাসের উৎস জার্মানির মিউনিখ বা ফিনল্যান্ড হতে পারে। কিন্তু কিভাবে ওই রোগীর করোনায় আক্রান্ত হলেন তা জানা যায়নি।

    তবে অধ্যাপক মিকেলাঞ্জেলে গুইদা এক্ষেত্রে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করেন। তার মতে, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কডোনো শহরের সঙ্গে বড় শহরগুলোর যোগাযোগ আছে। পড়ালেখাসহ বিভিন্ন কাজে কডোনো ও আশপাশের শহরগুলোতে যাতায়াতের জন্য লোকজন গণপরিবহন ব্যবহার করে। সেখান থেকে খুব সহজেই পুরো ইতালিতে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।
    দেশটিতে প্রথম মৃত্যুর পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইতালি সরকার ১১টি শহরকে 'রেডজোন' ঘোষণা করে। একইসঙ্গে সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়। পুরো এলাকাকে 'কোয়ারেন্টিন' করা হয়। তারপরেও মার্চ মাসের শুরু থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ৪ মার্চ ইতালি সরকার দেশজুড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এরপর যখন সরকার বুঝতে পারে করোনাভাইরাস আর প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না, তখন পুরো দেশের ছয় কোটিরও বেশি বাসিন্দাকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দেয়।

    করোনা প্রথম ধরা পড়া দেশ চীন থেকে ভৌগলিকভাবে ইতালির এত দূরে অবস্থান হলেও কেনো দেশটিতে এমন মহামারি আকারে ছড়ালো? এক্ষেত্রে চীনা পর্যটকদের উচ্চ সংখ্যাই বড় সন্দেহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ৩১ লাখ চীনা পর্যটক ইতালি সফর করেছে। তবে ইতালিতে মৃত্যুহার এতো বেশি হওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা কারণ হিসেবে দেখছেন, সেখানকার প্রবীণ জনসংখ্যার হারকে। ডেমোগ্রাফিক সায়েন্স জার্নালের এক নিবন্ধে অক্সফোর্ডের গবেষকরা লিখেছেন, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিরা অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ইতালির মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।' [https://m.somoynews.tv/pages/details/203627]

    এখানে বলা হয়, কডোনো শহরের যে রোগী থেকে সারাদেশে করোনায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে সে চীন ফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু তার ওই বন্ধু করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই রোগীর ভাইরাসের উৎস জার্মানির মিউনিখ বা ফিনল্যান্ড হতে পারে। কিন্তু কিভাবে ওই রোগীর করোনায় আক্রান্ত হলেন তা জানা যায়নি।

    ওই রোগী প্রথমবার হাসপাতালে যাবার পর কিছু হয়নি। দ্বিতীয়বার হাসপাতালে যাবার পর ওই রোগীর কাছ থেকে করোনাভাইরাস অন্য রোগী ও হাসপাতালের কর্মীসহ পুরো ১৬ হাজার বাসিন্দার পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে বলে মনে করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাসই নয় বলে আমরা ইতোমধ্যে এই নিবন্ধ থেকে পরিষ্কারভাবে জানার পর এটা বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ থাকে না যে, লোকটি থেকে পুরো কডোনা শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মেনে নিতেই হবে, হাসপাতালটি থেকে অন্য কোনোভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। কিন্তু কিভাবে?

    'ইতালিতে যেসব কারণে এত মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইতালিতে। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭৭ জনের। আর সংক্রমিত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৯২৭ জন। অথচ ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে মারা গেছেন ৩ হাজার ২২৭ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ১৭১ জন।
    বৈশ্বিক এই মহামারিতে ইতালিতেই কেন এত মানুষ সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছেন তার কিছু কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

    কিন্তু কেন ইতালির এমন অবস্থা?
    বিশেষজ্ঞরা এর পেছনের কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। তারা মনে করছেন, ইতালির অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর জন্য নতুন শিক্ষা নিয়ে এসেছে। ইতালির এমন পরিস্থিতির জন্য বেশকিছু বিষয়কে দায়ী করেছেন তারা। ...
    ইতালির উত্তরাঞ্চলের কনডঙ্গো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান স্টেফিনো পাগলিয়া মনে করেন, সময়মত করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করার কারণে করোনা শনাক্ত করা যায়নি।
    ইতালিতে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর লক্ষণ ও উপসর্গ যেমন জ্বর কিংবা শুকনো কাশি আছে এমন ব্যক্তিদেরকেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হতো।
    তবে ইতালি নিয়ে এত গবেষণা-আলোচনার পরেও অনেকে মনে করেন আলোচিত কোনো কারণই এই মহামারির জন্য দায়ী নয়। চূড়ান্তভাবে কোনো কিছুকে দায়ী করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত এখনো আমাদের হাতে নেই।
    জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসচা মৌক মনে করেন ইতালিতে করোনাভাইরাস মহামারির আসলে স্পষ্ট কোনো কারণই নেই!' [http://www.dainikamadershomoy.com/post/247803]

    ইতালিতে করোনাভাইরাস মহামারির আসলে 'স্পষ্ট' কোনো কারণই নেই, এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছার একটা কারণ, চীন বা অন্য দেশ থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে আগমণকারী কারো সাথে ইতালির করোনাভাইরাসের উপদ্রবকে সম্পর্কিত করার কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই বলে কি ইতালিতে করোনা ছড়ানোর কোনো কারণ নেই? অবশ্যই আছে। কী হতে পারে সেই কারণ?

    'More than 100 medics have died during Italy's coronavirus crisis, including two nurses who took their own lives, as many struggle with the trauma of seeing colleagues die'  শিরোনামে ডেইলী মেইলে ৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (By JEMMA CARR) বলা হয়, 'Traumatised hospital staff have asked 'who will be the next' after 80 doctors and 21 nurses died from the bug.
    Two nurses took their own lives since the outbreak, which has killed more than 15,800 and infected 124,600 in Italy, began.
    A total of 300 medics were infected in one hospital in Lombardy - the area worst affected by the bug - while 12,000 hospital staff have been diagnosed nation-wide. ' [https://www.dailymail.co.uk/news/article-8191785/More-100-medics-died-Italys-coronavirus-crisis.html?ito=push-notification&ci=12356&si=1707374]

    'লাশ রাখার জায়গা নেই ইতালির হাসপাতালে' শিরোনামে সময় নিউজের ওয়েবসাইটে ১৮ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাসে ইতালিতে দিন দিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ইউরোপের করোনা ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ ইতালির। ফলে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে দেশটিতে। সোমবার একদিনেই দেশটিতে মারা গেছেন ৩০০ জনের বেশি।
    এ নিয়ে করোনার শিকার হলেন কমপক্ষে ২১০০ ইতালীয়। এ সংখ্যা চীনের বাইরে সবথেকে বেশি। সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা লোমবার্ডির। ইউরোপের করোনা ভাইরাস বিস্তারের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শহরটি। সেখানে হাসপাতালের মর্গে আর লাশ রাখার জায়গা হচ্ছে না।

    জানা গেছে, মৃতদের সৎকারেও কড়াকড়ি করছে ইতালি সরকার। ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য শেষ প্রার্থনায় অল্প কিছু নিকটজনকে অনুমতি দেয়া হয় অংশগ্রহণে। পরিবারের সদস্যরাও তাতে মাস্ক পরে যোগ দেন। ইতালির আরেক গ্রাম জোঙ্গোতে স্থানীয় পাদ্রিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তারা দিনে একবার মৃত্যু ঘণ্টা বাজাবেন। কারণ করোনায় মৃত্যুর মিছিল বড় হতে থাকায় সারাদিনই ঘণ্টা বাজাতে হচ্ছিল।
    ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের শেষ বিদায় দিতে পারছেন না স্বজনরা। হাসপাতালের আইসোলেটেড কক্ষে বন্ধু ও পরিবার ছাড়াই মারা যাচ্ছেন ইতালীয়রা। স্থানীয় গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে অনেকেই সজনের মৃত্যুর খবর জানছেন।

    স্থানীয় পত্রিকা লেকো দি বারগামো প্রতিদিন মৃতদের তালিকা প্রকাশ করে একটি পাতা বের করতো। কিন্তু করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করার পর থেকে তাদের এ পাতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত শুক্রবার তারা ১০ পাতায় মৃতদের তালিকা প্রকাশ করে।
    এদিকে সৎকারে যারা কাজ করছেন তারাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন করোনাতে। এতদিন মনে করা হতো মৃত্যুর পর মরদেহ থেকে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে না।' [https://www.somoynews.tv/pages/details/203385?fbclid=IwAR3HvBqZ96ItXr1HX7kTxzLYkEdOKvcFwf97tcENSZmU-QMLOFMvo_8dyQ4]

    ইতালির লোম্বার্ডি শহরের অবস্থাকে কি চীনের উহানের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায় না? উহানের মতো একই অবস্থা হলো কেন শহরটির?
    শেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এদিকে সৎকারে যারা কাজ করছেন তারাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন করোনাতে। এতদিন মনে করা হতো মৃত্যুর পর মরদেহ থেকে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে না।' প্রশ্ন হচ্ছে, করোনাভাইরাস যেহেতু কোনো ভাইরাস বা ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে এই নিবন্ধে অনেক দিক থেকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, তবু করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির সৎকার কাজ করতে গিয়েও মানুষ আক্রান্ত হয় কিভাবে, যেভাবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে গিয়ে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত চিকিৎসাকর্মীরাও চীন, ইতালিসহ অনেক দেশে আক্রান্ত হয়েছে? এমন হতে পারে শুধু এক সূত্র থেকেই, যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার বায়ু যে কোনো কারণে বিষাক্ত হয়ে থাকে।

    করোনাভারাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে যেভাবে চিকিৎসাকর্মীরা পিপিই, মাস্ক ব্যবহার করাসহ সুরক্ষামূলক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে, করোনাভাইরাসে মৃতদের সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও সেভাবে অবশ্যই সুরক্ষামূলক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবু আক্রান্ত হয় কিভাবে? চীনে যেভাবে বায়ুতে অদৃশ্য বিষ মিশে যাবার ফলে এমন অবস্থা হয়েছে, ইতালিতেও কি সেরকম কিছু?

    'উহানের মতো 'ভুতুড়ে নগরী'তে পরিণত ইতালির যে শহর' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রাস্তাঘাটে কোনো যানবাহন নেই। ফুটপাতে নেই কোনো পথচারীর হাঁটার শব্দ। দোকানপাটও সব বন্ধ। একেবারে পিনপতন নীরবতার শহরে পরিণত ইতালির কডোঙ্গো।
    এ যেন আরেক উহান। বলতে গেলে উহানের মতো 'ভুতুড়ে শহরে' পরিণত হয়েছে ইতালির কডোঙ্গো।
    উত্তর ইতালির লোদিপ্রদেশের ছোট্ট শহর কডোঙ্গো। সম্প্রতি শহরটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত দুই রোগীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ৫০ জনের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে।
    এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস আতঙ্কে নিশ্চুপ হয়ে গেছে শহরটি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যাচ্ছে না। বের হয়েও লাভ নেই কোনো। কারণ করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে শহরের স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, শপিংমলের অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে।
    স্থানীয় সময় শনিবার রাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাওলা নামের এক বাসিন্দা বলেন, 'কডোঙ্গো এখন একটা ভুতুড়ে শহর। করোনাভাইরাস আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি করেছে। মানুষজন তাদের ঘরে ঘরে বন্দি, কোনো মানুষ রাস্তায় নেই। এমনটি বেশি দিন চললে করোনায় নয়, না খেয়েই মরতে হবে আমাদের।'
    তিনি বলেন, 'স্টেশন বন্ধ রয়েছে। কেউ টিকিট বিক্রি করছে না। আর আমার মতো কোনো যাত্রীও ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে নেই। হেঁটেই বাড়ি যাচ্ছি।'
    শহরের ভেন্ডিং মেশিন থেকে হালকা খাবার ও পানীয় কেনার জন্য ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন এরিকা নামের এক নারী।
    এএফপিকে এরিকা বলেন, '৫০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত শুনে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সবাই সাবধানে থাকছি। ঘরে কোনো খাবার নেই। অনন্যোপায় হয়ে বের হয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে, সুপারমার্কেটগুলো আদৌ খোলা থাকবে কিনা।'
    সবকিছু বন্ধ থাকলেও কডোঙ্গোতে ফার্মেসিগুলো খোলা রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
    এ বিষয়ে এএফপিকে রোসা কাভালিল নামের এক ফার্মেসি মালিক বলেন, 'প্রচন্ড ভয় নিয়ে কাজ করছি আমরা। সরকারের নির্দেশ না থাকলে ফার্মেসি বন্ধই রাখতাম। আমাদের এখন ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।'
    তিনি বলেন, 'এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মাস্ক। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাকটেরিয়া রোধক, অ্যালকোহল এবং ব্লিচিং পাউডার কিনে মজুদ করে রাখছেন।'
    উল্লেখ্য, লোম্বার্ডি অঞ্চলের শহর কডোঙ্গোকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিস্তারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দাবি করছেন ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
    গত শুক্রবার ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তাদের নিজেদের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। শনিবার মারা যান আরও একজন।
    এর পর লোম্বার্ডিতে ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়।
    এ ঘটনার পর পরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব শহরের জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্কুল, বার, চার্চ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
    ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি।
    যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কেউ চীন সফর করেননি।

    ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেন, অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার সাবধানতা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানান তিনি।' [https://www.jugantor.com/international/281931]

    প্রশ্ন: ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজন ব্যক্তি চীন সফর না করা সত্ত্বেও কী করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন?
    এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খাবে তারা, যারা করোনাভাইরাসকে চীনের উহানে প্রথমে আক্রান্ত হওয়া এক বা একাধিক মানুষ থেকে সারা বিশ্বে ছোঁয়াচে হয়ে ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক ও বিধ্বংসী ধারণার জন্ম দিয়েছে।

    একাদশ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

    ইংল্যান্ড
    'COVID-19 pandemic in the United Kingdom' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'The ongoing COVID-19 pandemic spread to the United Kingdom in late January 2020. By 18 May there had been 246,406 confirmed cases and 34,796 deaths overall. More than 90% of those dying had underlying illnesses or were over 60 years old. The infection rate is higher in care homes than in the community, which is inflating the overall infection rate. There is large regional variation in the outbreak's severity. London has the highest number of infections while North East England has the highest infection rate. England and Wales are the UK countries with the highest recorded death rate per capita, while Northern Ireland has the lowest per capita. Healthcare in the UK is devolved to each country.' [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_the_United_Kingdom]

    'Coronavirus: Latest patient was first to be infected in UK' শিরোনামে বিবিসি’র ওয়েবসাইটে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The latest patient diagnosed with the coronavirus in England is the first to catch it in the UK.

    It is unclear whether this was directly or indirectly from someone who recently returned from abroad, England's chief medical officer said.
    The man is a resident of Surrey who had not been abroad recently himself.
    It takes the total number of UK cases to 20 and comes after a British man in his 70s became the first UK citizen to die from the virus. ...

    Prof Whitty said the case was being investigated and contact tracing has begun.
    The Department of Health and Social Care said the virus was passed on in the UK but the original source was "unclear" and there was no "immediately identifiable link" to overseas travel.' [https://www.bbc.com/news/uk-51683428]

    ইংল্যান্ডেও অন্য অনেক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত দেশের মতো 'উৎসবিহীন' করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোক পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসকে সারা বিশ্ব শুরু থেকেই জানতো, এটি একটি 'ভাইরাস' বা ছোঁয়াচে রোগ, যা একজন আক্রান্ত লোক থেকে আরেকজন সুস্থ লোকের শরীরে হাঁচি, কাশি, শারীরিক স্পর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু ৩ বা ৬ ফুট নয়, ২৭ ফুট দূরের কাউকে আক্রান্ত করার কথাও চলে এসেছে। '২৭ ফুট দূর থেকেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস! ' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'শুধু ৩ বা ৬ নয়, ২৭ ফুট দূর থেকেও করোনাভাইরাসে যে কেউ সংক্রমিত হতে পারে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সহযোগী অধ্যাপক লিডিয়া বুরিবা। খবর ইউএসএ টুডে'র।

    করোনা সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলেছে, যে কারো কাছ থেকে ৬ ফুট দূরে থাকলেই করোনা সংক্রমনের ভয় থাকবে না। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইনে বলা হয়েছে, দুজন মানুষের মধ্যে ৩ ফুট দূরত্ব থাকলেই নিরাপদ। নিউইয়র্ক পোস্ট, ইউএসএ টুডে, ফক্স নিউজ।

    হু এবং সিডিসি'র সেই গাইডলাইনকে ভুল বলে অভিহিত করলেন অধ্যাপক লিডিয়া বুরিবা। তিনি বলেছেন, এই গাইডলাইন একদম সেকেলে ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ১৯৩০ সালের গবেষণায় পাওয়া তথ্যের সঙ্গে বর্তমান বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

    লিডিয়া অনেক বছর ধরে কাজ করছেন মানুষের কফ ও হাঁচির গতিপ্রকৃতি নিয়ে। গত সপ্তাহে আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ১০০ বছর আগের সেই তথ্যউপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে করোনা ঠেকানোর যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি ভুল। করোনাভাইরাসের মতো রোগ সৃষ্টিকারী জীবানু ২৩ থেকে ২৭ ফুট দূরত্ব অনায়াসেই অতিক্রম করতে পারে। নির্দিষ্ট কক্ষপথে বিচরণকারী ভাইরাসটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকতে সক্ষম। করোনা ভাইরাস বেশিক্ষণ বাঁচে না, এই ধারণারও তীব্র বিরোধিতা করেছেন লিডিয়া।
    চীনের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের উদহারণ টেনে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালের যে রুমে থাকছেন, সেই রুমের বাতাস চলাচলের পথে জায়গা করে নেয় ভাইরাসটির ক্ষুদ্রাংশ। এই ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসিকে অবশ্যই তাদের গাইডলাইন সময়োপযোগী করতে হবে।
    লিডিয়া বুরিবার দাবিকে উড়িয়ে দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এমআইটি গবেষকের দেয়া নতুন তথ্যের প্রেক্ষিতে সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হু অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কঠিন এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আরো তথ্য পাওয়া গেলে সংস্থাটি অবশ্যই করোনার ব্যাপারে পরামর্শ ও গাইডলাইন হালনাগাদ করবে।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/04/01/516363]

    লিডিয়া যদি বুঝতেন, করোনাভাইরাস মূলত কোনো 'ভাইরাস' নয়, তাহলে চীনের এই উদাহরণে বিভ্রান্ত হতেন না। লিডিয়া চীনের এই উদাহরণ এবং হয়তো এরকম আরো কিছু বিষয় দেখে অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, শুধু ৩ বা ৬ নয়, ২৭ ফুট দূর থেকেও করোনাভাইরাসে যে কেউ সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু দেশে দেশে যে অসংখ্য মানুষ চীন বা আক্রান্ত অন্য এলাকার ২৭ বা ২৭০০ ফুট দূরত্বে থেকে নয়, সম্পূর্ণ উৎসবিহীনভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সেই উদাহরণগুলো তাঁর চোখের সামনে এলে তিনি কোন্ অনুসিদ্ধান্তে পোঁছবেন? উদাহরণগুলোর কোনোটিই এই নিবন্ধের তৈরি বা মনগড়া নয়।

    পরিশেষে সবাইকে এই অনুসিদ্ধান্তেই আসতে হবে, করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়, ছোঁয়াচেও নয়; বরং অদৃশ্য একটা বিষের ছোবলের প্রতিক্রিয়া। ইংল্যান্ডেও কি এমন কিছু হতে পারে না?

    যুক্তরাষ্ট্র
    'Coronavirus: US, Australia and Thailand report first deaths' শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ানে ১ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবদেনে (by Lily Kuo) বলা হয়, 'The US, Australia and Thailand have reported their first deaths from coronavirus as two frontline doctors in China died and more countries put in place bans on large gatherings and travel restrictions.
    On Saturday, US officials said a man in his 50s in Washington state had died, after being tested for the disease on Thursday. Authorities said they did not know how he had contracted the virus because he did not have any history of travel to affected areas or contact with known Covid-19 cases.
    On Sunday, China reported its sharpest increase in new infections in a week with 573 new cases, the highest daily rise in a week. Chinese health authorities reported 35 new deaths on Sunday, a drop from the previous day's toll of 47.

    A 32-year-old doctor named Zhong Jinxing in the southern province of Guangxi reportedly died from ''overwork'' on Friday after working for 33 consecutive days. Another doctor, Jiang Xueqing, 55, died on Sunday after having been infected with Covid-19, according to Chinese state media.'
    [https://www.theguardian.com/world/2020/mar/01/coronavirus-us-australia-and-thailand-report-first-deaths]

    আক্রান্ত এলাকায় কোনো ভ্রমণ ইতহাস ছাড়া এবং কোনো কোভিড ১৯ রোগীর সাথে সম্পর্ক ছাড়া ওয়াশিংটনেও কিভাবে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো? চীন বা অন্য কোনো আক্রান্ত এলাকা থেকে কি ওয়াশিংটন মাত্র ৩ বা ৬ বা ২৭ ফুট দূরে অবস্থিত? তাদের নিকট উত্তর প্রত্যাশিত, যারা একে 'ভাইরাস' নাম দিয়ে গত কয়েখ মাসে বিশ্ব ব্যবস্থাকে লন্ডভন্ড করে ছেড়েছে; মানুষের জীবনকে করেছে বিভীষিকাময়, অচল, বিধ্বংস।

    'Coronavirus: 'Millions' of Americans could be infected, expert warns' শিরোনামে বিবিসির ওয়েবসাইটে ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখে  প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'New York is at the heart of the US outbreak and is home to just under half the total cases across the country.
    On Saturday, President Trump said he was considering quarantining the state in a bid to slow the spread of the virus.
    He later commented that it was not necessary after Mr Cuomo said doing so would be "preposterous".
    Mr Trump tweeted that instead of quarantine, a "strong travel advisory" would be issued to New York, New Jersey and Connecticut by the Centers for Disease Control and Prevention (CDC).'
    [https://www.bbc.com/news/world-us-canada-52086378]

    'ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় আরো ৭২৭ জনের মৃত্যু' শিরোনামে কালের কণ্ঠ অনলাইনে ১ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাতশ ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার একশ ৫৫ জনে। ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ইতালিতে প্রায় সবকিছু বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। ...

    এদিকে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বুধবার জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৯৮ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় চার হাজার তিনশ ৬৫ জন মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র নিউইয়র্ক শহর। তবে নিউ অরলিন্স, শিকাগো ও ডেট্রয়েটে দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে সেসব অঞ্চলের মেয়র জানিয়েছেন।' [https://www.kalerkantho.com/online/world/2020/04/01/893576]

    'COVID-19 pandemic in New York (state)' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, 'During the COVID-19 pandemic, the first case of COVID-19 in the U.S. state of New York was confirmed on March 1, 2020. As of May 17, 2020, there have been 1.4 million tests, of which there were 350,100 confirmed cases (an increase of 1,900 from the day before) in the state, and of those 22,619 people have died (up 141 overnight). New York has the highest number of confirmed cases of any state in the United States, with three times as many cases as neighboring New Jersey (the state with the second-most confirmed cases) and seven times that of neighboring Pennsylvania (which has the fifth-most). New York also has more cases than any country, with the exception of the United States, of which it is a part, with nearly one-and-a-half times as many as Russia, the country with the second-most cases.

    As of mid-May 2020, nearly one-fourth of known U.S. cases are in New York state (down from one-third in April). More than half of the state's cases are in New York City, where nearly half the state's population lives.

    As of March 26, the United States had more known cases than any other country. As of April 9, the US could hold this position even if only cases in New York state were considered, due to the high concentration of cases there. The countries with the next highest number of cases as of April 9 were Spain and Italy, each of which had fewer cases than New York state.

    Origins
    Genetic analysis confirmed that most cases of the virus had mutations indicating a European origin, meaning travelers flying to New York City from Europe brought the virus in. Two independent studies both arrived at this conclusion. Americans visiting Italy in late February and returning to New York on March 1 were not asked by customs if they had spent time in Italy, even though the State Department had urged Americans not to travel to Italy on Feb. 29 (the same day Italy reported 1,100 COVID cases). An American who spent months in Milan and returned to New York's JFK Airport on March 3 was only asked if she had been to China or Iran; the same day Italy reported 2,200 COVID cases. According to statistical models, New York City already had 600 COVID-19 cases in mid-February, and as many as 10,000 cases by March 1.
    March 1 saw the first confirmed case of COVID-19 in New York State, a 39-year-old woman health care worker who lived in Manhattan, who had returned from Iran on February 25 with no symptoms at the time. She went into home isolation with her husband.

    On March 3, a second case was confirmed, a lawyer in his 50s who lived in New Rochelle, Westchester County, immediately north of New York City, and worked in Midtown Manhattan. He had traveled to Miami in February, but had not visited areas known to have widespread transmission of the coronavirus. Two of his four children had recently returned from Israel. After first feeling ill on February 22, he was admitted to a hospital in Westchester on February 27, diagnosed with pneumonia, and released from isolation after testing negative for the flu. Instances of panic buying in New York were reported after his case was confirmed.

    On March 4, the number of cases in New York State increased to 11 as nine people linked to the lawyer tested positive, including his wife, a son, a daughter, a neighbor, and a friend and his family.

    On March 5, New York City mayor Bill de Blasio said that coronavirus fears should not keep New Yorkers off the subway, riding from Fulton Street to High Street in a public press attempt to demonstrate the subway's safety.
    On March 6, eleven new cases were reported, bringing the state caseload to 33. All the new cases were tied to the first community transmission case, the lawyer. At the end of the day, an additional 11 new cases were reported by the governor, bringing the total caseload to 44, with 8 of the new cases in Westchester County, and 3 in Nassau County on Long Island. Also on March 6, an article appeared in the New York Post stating that while Mayor de Blasio assigned responsibility for the lack of N95 masks and other personal protective equipment to the federal government, the city never ordered the supplies until that date.

    On March 7, Governor Andrew Cuomo declared a state of emergency in New York after 89 cases had been confirmed in the state, 70 of them in Westchester County, 12 in New York City and 7 elsewhere.

    On March 8, the state reported 16 new confirmed cases and a total of 106 cases statewide. New York City issued new commuter guidelines amid the current outbreak, asking sick individuals to stay off public transit, encouraging citizens to avoid densely packed buses, subways, or trains. ...'
    [https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_New_York_(state)]

    এই তিনটি প্রতিবেদন/নিবন্ধ থেকে জানা যায়, (১) যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে একটি জিনগত বিশ্লেষণ ও দুটি স্বাধীন গবেষণা এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, নিউইয়র্কে ইউরোপ থেকে যাত্রীরা ভাইরাসটি নিয়ে এসেছিল। (২) ম্যানহাটনে বসবাসকারী ৩৯ বছর বয়সী একজন মহিলা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ২৫ ফেব্রুয়ারি ইরান থেকে কোনও লক্ষণ ছাড়াই নিউইয়র্কে ফিরে আসার পর ১ মার্চ কোভিড ১৯ এ শনাক্ত হওয়ার ঘটনাই হলো নিউইয়র্কে কোভিড ১৯ এর প্রথম নিশ্চিত ঘটনা। (৩) ৩ মার্চ দ্বিতীয় ঘটনা নিশ্চিত হয় পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন আইনজীবীর ক্ষেত্রে, যিনি নিউইয়র্ক সিটির উত্তরে ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টির নিউ রোচেলে বাস করতেন এবং ম্যানহাটনে কাজ করতেন। তিনি ফেব্রুয়ারিতে মিয়ামি ভ্রমণ করেন, তবে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ রয়েছে বলে পরিচিত কোনো অঞ্চলে যাননি। এই আইনজীবির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে স্থানীয় সংক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হয়। (৪) ৪ মার্চ নিউইয়র্কে মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ জনে, ওই উকিলের স্ত্রী, একটি ছেলে, একটি মেয়ে, এক প্রতিবেশী, এক বন্ধু এবং তার পরিবার সহ তার সাথে সম্পর্কিত ৯ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। (৫) ৬ মার্চ এগারোটি নতুন মামলা রিপোর্ট করা হয়, যা রাজ্যের মামলার সংখ্যা ৩৩-এ নিয়ে আসে। এই ১১ টি ঘটনার সবগুলো প্রথম স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনার সাথে যুক্ত আইনজীবির সাথে সম্পর্কিত ছিল।

    এই ৫টি তথ্যের সারাংশ এমন হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দু নিউইয়র্কে ইউরোপ থেকে করোনা ছড়িয়েছে বলে মনে করা হলেও প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী কিন্তু ইউরোপ ফেরত নয়; এমনকি প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোক নিউইয়র্কে করোনা বিস্তারে ভূমিকা রাখেনি। ভূমিকা রেখেছে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত প্রথম ব্যক্তি, যিনি নিউইয়র্কে শনাক্তকৃত দ্বিতীয় ব্যক্তি। ৪ মার্চ নতুন শনাক্তকৃত ৯ জন এবং ৬ মার্চ নতুন শনাক্তকৃত ১১ জন, এই মোট ২০ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে ঐ আইনজীবির সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে, যিনি নিজেই স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের শিকার। তাহলে প্রশ্ন: (১) নিউইয়র্কে করোনা ছড়ানোর জন্য অন্য দেশ থেকে আগত আক্রান্তদেরকে কি দোষারোপ করার সুযোগ আছে? (২) ওই আইনজীবি কার কাছ থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে? (৩) যে ২০ জনের আক্রান্ত হওয়াকে ওই আইনজীবির সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে, তার সাথে সম্পর্কিত না হলে কি ওই ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হতে পারতো না ঐ উৎস থেকে, যে উৎস থেকে ওই আইনজীবি আক্রান্ত হয়েছে?

    মূলত একই এলাকার মানুষ হবার কারণে ওই আইনজীবির সাথে যেসব মানুষ বসবাস করতো, তারাও ওই আইনজীবির মতোই আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে ঐ উৎস থেকে, যে উৎস থেকে ওই আইনজীবি আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কী সেই অজ্ঞাত উৎস, যা থেকে ওই আইনজীবি আক্রান্ত হয়েছে এবং তার সাথে সম্পর্কিত ২০ জন আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে?

    নিউইয়র্কের ভয়াবহ অবস্থাকে কি চীনের উহানের মতোই মনে হয় না? উহানে যেরকম একসাথে গুচ্ছে গুচ্ছে ৪১ জন, ২৭ জন করে শনাক্ত হয়েছে, নিউইয়র্কেও এভাবে ৯ জন, ১১ জন করে গুচ্ছে গুচ্ছে শনাক্ত হয়েছে কেন?

    স্থানীয়ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই আইনজীবি সম্পর্কে সামান্য ভিন্ন তথ্য নিয়ে '1,000 Quarantined after New York Family's COVID-19 Diagnosis' শিরোনামে ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইটে ৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Health officials seeking to prevent the spread of COVID-19 in New York state focused Wednesday on a suburban community where four members of the same family and a neighbor have been diagnosed with the virus, ordering new testing and putting about 1,000 people in self-quarantine. ...
    Gov. Andrew Cuomo detailed the procedures after meeting with local officials in Westchester County, north of New York City, where test results came back positive for the wife, two children and neighbor of a lawyer hospitalized with the disease. The new results brought the number of confirmed cases in the state to six.
    Cuomo said people who've come into contact with them will be tested and should sequester themselves in their homes. They include eight people who worked with the lawyer and his wife at their law firm and hospital workers who treated him, as well as the neighbor's children.

    ''Whenever you find a case, it is about containment and doing the best you can to keep the circle as tight as possible,'' Cuomo said.
    The 50-year-old lawyer, who commuted by train from New Rochelle to work at a small Manhattan law firm, has an underlying respiratory illness that potentially put him in more danger from the disease, officials said. He is being treated in the intensive care unit of a Manhattan hospital.

    Cuomo said the lawyer had no known travel history to countries where the outbreak of the new coronavirus has been sustained. State and city officials said the man had done some other traveling recently, including an early February trip to Miami.'
    [https://www.voanews.com/science-health/coronavirus-outbreak/1000-quarantined-after-new-york-familys-covid-19-diagnosis]

    'New coronavirus cases of unknown origin found on West Coast' শিরোনামে এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By ROBERT JABLON, LISA BAUMANN and ANDREW SELSKY) বলা হয়, 'Health officials in California, Oregon and Washington state worried about the novel coronavirus spreading through West Coast communities after confirming three patients were infected by unknown means.

    The patients — an older Northern California woman with chronic health conditions, a high school student in Everett, Washington and an employee at a Portland, Oregon-area school — hadn't recently traveled overseas or had any known close contact with a traveler or an infected person, authorities said.' [https://abcnews.go.com/US/wireStory/coronavirus-cases-unknown-origin-found-west-coast-69301250]

    'দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে এক দিনে আক্রান্ত ৫৯৪' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় যাননি বা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও ছিলেন না। কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তির নাম-পরিচয় গোপন রেখে জানিয়েছে, তিনি একজন বয়স্ক নারী এবং তিনি নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1642376]

    ভক্স মিডিয়ার ওয়েবসাইটে 'The CDC's rocky effort to get Americans tested for coronavirus, explained' শিরোনামে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Brian Resnick and Dylan Scott) বলা হয়, 'The CDC confirmed eight days ago that the virus was in community transmission in the United States—that it was infecting Americans who had neither traveled abroad nor were in contact with others who had.'
    [https://www.vox.com/science-and-health/2020/3/6/21168087/cdc-coronavirus-test-kits-covid-19]

    'Doctor who treated first US coronavirus patient says COVID-19 has been 'circulating unchecked' for weeks' শিরোনামে সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (By Berkeley Lovelace Jr. and William Feuer) বলা হয়, 'That's all changed since last weekend. There are now well over two dozen cases in the U.S. of person-to-spread, many of which are proving to have been transmitted openly in the community, and it appears to be getting worse, according to state health officials.
    State and local health have confirmed community transmission cases in California, Washington state, New York and North Carolina — where a woman contracted the virus on a trip to Washington state in what appears to be the nation’s first domestic travel-related infection. ...

    Some hospitals still haven't instituted strict isolation protocols for everyone being tested, and some state officials are even starting to relax hospital quarantine rules for patients who test positive. One woman in New York is under self-quarantine at her home in Manhattan.

    State health officials said a California patient was not under quarantine as doctors appealed to the CDC to test her. Since she hadn't been to Wuhan, or been in contact with anyone who was, she was out and about in her community.'  [https://www.cnbc.com/2020/03/06/doctor-who-treated-first-us-coronavirus-patient-says-covid-19-has-been-circulating-unchecked-for-weeks.html]

    ওয়াশিংটন এবং নিউইয়র্কের মতো ক্যালিফোর্নিয়া এবং নর্থ ক্যারোলিনার মতো রাজ্যে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলোর রহস্য কী? উহান বা অন্য কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহর থেকে এসব শহরে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি, এটা নিশ্চিত হবার পর এসব শহরে করোনাভাইরাস কোত্থেকে বিস্তার লাভ করেছে, তা নিয়ে তদন্তের কোনো পথ কেউ খুঁজে না পাবার কারণ কি করোনাভাইরাসকে জঘণ্য প্রকৃতির ছোঁয়াচে রোগ মনে করা?

    কিন্তু যখন প্রমাণিত হলো করোনাভাইরাস একজন থেকে আরেকজনে কোনোভাবে ছড়াতে পারে না এবং এসব রাজ্যেও এরকম কোনো ঘটনা করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী নয়, তখন এসব রাজ্যে করোনা ছড়ানোর রহস্য নিয়ে তদন্ত করা কি খুব জরুরী নয়?

    ইরান
    'Two die of coronavirus in Iran, first fatalities in Middle East' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় "Two elderly people have died due to coronavirus in the city of Qom, south of Tehran," Alireza Vahabzadeh, an adviser to Iran's health minister, told Al Jazeera on Wednesday.

    "The two victims had suffered acute lung infections due to their infection with the coronavirus," he added.

    Earlier in the day, Kianoush Jahanpour, spokesman for Iran's ministry of health, said the two people had tested positive for the virus in preliminary results and died due to immune deficiencies and old age.
    There was no immediate information about the gender and the exact age of the victims.'
    [https://www.aljazeera.com/news/2020/02/die-coronavirus-iran-fatalities-middle-east-200219171007605.html]

    বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে 'করোনাভাইরাসে ২ ইরানি নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানের দুই নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
    দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা (আইআরএনএ) এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে সংস্থাটি নিহত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেনি।
    স্থানীয় সময় বুধবার ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলিরেজা বাহাবজাদেহের বরাত দিয়ে আইআরএনএ জানায়, নিহত দুইজনই করোনা ভাইরাসের জীবাণু বহন করছিলেন। তারা ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম নামক এলাকার বাসিন্দা। এর বাইরে নিহতদের বিষয়ে আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
    এর আগে বুধবারই ইরানের স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির আরেক বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানায়, করোনাভাইরাসে ইরানের দুই জন নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। পরে কর্মকর্তারা আক্রান্ত দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তারা বয়স্ক ব্যক্তি।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/02/20/503739]

    'করোনাভাইরাস: গত ২৪ ঘন্টায় বিশ্ব-মহামারী ঠেকানোর সুযোগ কি আরও কমে গেছে?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিবিসির মেডিক্যাল করেসপন্ডেন্ট ফারগাস ওয়ালশ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান এবং ইটালিতে করোনাভাইরাসের যে সার্বিক অবস্থা, তাকে একটি বিশ্ব-মহামারীর প্রাথমিক ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
    "এই প্রত্যেকটি দেশেই আমরা দেখছি করোনাভাইরাস এমনভাবে ছড়াচ্ছে যার সঙ্গে চীনের কোন সম্পর্ক নেই। ইরানের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ সেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন একই সঙ্গে কয়েকটি শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। লেবাননে যে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেটিও ইরান থেকে ফেরা এক মানুষের মাধ্যমে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।" ...
    ইরান গতকাল জানিয়েছিল সেখানে করোনাভাইরাসের ৪৩টি ঘটনা ধরা পড়েছে, বেশিরভাগই পবিত্র কোম নগরীতে। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে এত মানুষ আর কোথাও মারা যায়নি।

    কোমের একজন এমপি আজ অভিযোগ করেছেন যে সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আসল চিত্র আড়াল করার চেষ্টা করছে। তার মতে, কেবল কোম নগরীতেই ৫০ জনের মতো মানুষ মারা গেছে। তবে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51615567]

    এই তিনটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, (১) ইরানে একই সঙ্গে কয়েকটি শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। (২) তবে চীনের রাজধানী তেহরান বা অন্য কোনো শহর নয়, কোম শহরে করোনাভাইরাসের উপদ্রব তীব্র হয়েছে। (৩) বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান এবং ইতালি এই দেশগুলোতে করোনাভাইরাস এমনভাবে ছড়াচ্ছে যার সঙ্গে চীনের কোন সম্পর্ক নেই।

    প্রশ্ন: (১) চীনের সাথে কোনো সম্পর্ক ছাড়া এসব দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোটাকে কোনোভাবে কি 'চীন থেকে ছড়ানো ভাইরাস' বলে আখ্যায়িত করা যায়? (২) যদি চীনের সাথে কোনো সম্পর্ক ছাড়াই এসব দেশে করোনাভাইরাস ছড়ায়, তাহলে করোনাভাইরাসকে কি ছোঁয়াচে বলার সুযোগ থাকে? তবু কেন ছোঁয়াচে বলে বলে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবনকে কোনঠাসা এবং বিভীষিকাময় করে ফেলা হয়েছে? (৩) চীনের সাথে সম্পর্ক ছাড়া ইরান, ইতালি এসব দেশে কিভাবে করোনাভাইরাস থাবা বিস্তার করেছে? আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, যে যা-ই বলুক, করোনাভাইরাস চীনের উহানের কোনো মাছের বাজার থেকেও ছড়ায়নি, ছড়ায়নি বাদুড়, বনরুই এরকম কোনো প্রাণী থেকে; বরং উহানের ভাইরোলজি ল্যাব থেকে  ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অদৃশ্য বিষ উহানের বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া  বা যাবার কারণে উহানের মানুষ ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণের কবলে পড়ার মাধ্যমে উহানে নিউমোনিয়ার মহামারী সৃষ্টি হওয়াটাই করোনাভাইরাস। (৪) উহানের সাথে সম্পর্ক ছাড়া একই রকম অদৃশ্য বিষে কিভাবে উহানের পর ইরান, ইতালি এসব দেশের মানুষও গণহারে আক্রান্ত হতে শুরু করলো?

    স্পেন
    'স্পেনে পরিত্যক্ত বৃদ্ধাশ্রমে বিছানায় লাশ' শিরোনামে জার্মানীর জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনা ভাইরাসের কারণে 'লকডাউন' স্পেনে বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে অসুস্থ মানুষেরা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছেন। তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া সেনাসদস্যরা কয়েকজনের মৃতদেহ বিছানা থেকে উদ্ধার করেছেন বলে জানায় দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
    কেন অসহায় ওই বৃদ্ধ মানুষগুলোকে এভাবে ফেলে রাখা হয়েছিল তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্পেনে বৃদ্ধাশ্রমগুলো জীবাণুমুক্ত করতে গিয়ে হৃদয়বিদারক এ ঘটনার মুখোমুখি হন সেনাসদস্যরা।
    প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবলস বলেন, ''বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে থাকা বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর এবং অত্যন্ত অনমনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে।''
    ''সেনাসদস্যরা হঠাৎ করে সেগুলোতে গিয়ে এ অবস্থা দেখতে পায়। করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বৃদ্ধাশ্রমের কর্মীরা তাদের স্রেফ ফেলে রেখে চলে গেছে।''
    ইউরোপে করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোর একটি স্পেন। জন হপকিন্সের তথ্যানুযায়ী সেখানে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই হাজার ৩১৮ জন। স্পেনে সোমবার একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬২ জনের মৃত্যু হয়।
    স্পেনে এখন স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের দেহ প্রথমে হিমঘরে রাখা হচ্ছে এবং পরে প্রশাসন থেকে অন্তোষ্টিক্রিয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত্যু হলে মৃতদেহ বিছানাতে রাখা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত না যথাযথ সুরক্ষা পোশাক পরে প্রশাসন থেকে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
    সবচেয়ে আক্রান্ত রাজধানী মাদ্রিদে এত মানুষ মারা যাচ্ছেন যে, এই কাজে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে। সংকট দিন দিন এতটাই খারাপ হচ্ছে যে মাদ্রিদ পৌরসভার ফিউনেরাল হোম থেকে সুরক্ষা যন্ত্রের অভাবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সংগ্রহ মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।' [https://www.dw.com/bn/a-52901543]

    'করোনাভাইরাস: স্পেন মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়েছে, বৃদ্ধদের ফেলে রেখে যাচ্ছেন কর্মীরা, পরিস্থিতি আরো খারাপ ইউরোপে' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে  বলা  হয়, 'বুধবার পর্যন্ত স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় দেশে মারা গেছেন ৭৩৮ জন, আর করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সাত হাজার ৯৭৩ জন।
    একদিনে স্পেনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা এটিই। দেশটিতে এখন করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬১০ জন।
    এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রয়েছে কাতালোনিয়ায়। তবে সবচেয়ে খারাপভাবে আক্রান্ত হয়েছে রাজধানী মাদ্রিদ, সেখানে ১৪ হাজার ৫৯৭ জনের মধ্যে সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-52045006]

    'স্পেনে ৯ হাজারের বেশি চিকিৎসাকর্মী করোনা আক্রান্ত' শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে ২৮ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে বেড়েছে আট হাজার। ভয়াবহ বিষয় হলো স্পেনের সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশটিতে ৯ হাজার ৪৪৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশটিতে সব মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৭০০ জন।
    স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি দুঃখজনক। স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের দিক দিয়ে স্পেন এখন বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালের এক ডাক্তার বলছেন, মৃদু লক্ষণ প্রকাশে আমরা এখন রোগীদের হাসপাতালে আসতে না করছি। কারণ হাসপাতালে এসে তারা সংক্রমিত হতে পারে। সূত্র : আল জাজিরা' [https://www.dailyinqilab.com/article/278820]

    আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, করোনাভাইরাস মূলত কোনো ভাইরাস নয়, কোনো ছোঁয়াচে রোগও নয়; বরং চীনের উহানে অবস্থিত ভাইরোলজি ল্যাব থেকে ছড়ানো অদৃশ্য বিষের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু সেই অদৃশ্য বিষ বা অদৃশ্য বিষের প্রতিক্রিয়া চীনের সীমানা পেরিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে স্পেনের বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো কিভাবে? 'চীনের প্রতিবেশী হয়েও করোনা রুখে বিশ্বের মডেল তিন দেশ!' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আক্রান্ত দেশের সংখ্যা প্রায় ১৬৭। আক্রান্তু এবং মৃত্যুর নিরিখে চীনকে ছাপিয়ে গিয়েছে ইতালি। মৃত্যুমিছিল বাড়ছে ইরান আর স্পেনেও। হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান এই তিনটি দেশ চীনের খুব কাছে হলেও এখানে করোনা সেইভাবে থাবা বসাতে পারেনি।

    হংকংয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৬, তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র চারজনের। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে ৪৫৫ জন আক্রান্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মাত্র দুজনের। তাইওয়ানেও ১৯৫ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/03/24/513958]

    চীনের কাছে অবস্থিত হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া সহ আরো অনেক দেশে করোনা ভয়াবহ থাবা বিস্তার না করা আর চীন থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত ইতালি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন এসব দেশে করোনা ভয়াবহ থাবা বিস্তার করার মধ্যে কি কোনো রহস্য থাকতে পারে না?

    চীন, ইতালির মতো স্পেনেও অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়াকে 'করোনাভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ' হিসেবে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। 'Radiological findings from 81 patients with COVID-19 pneumonia in Wuhan, China: a descriptive study' শিরোনামে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Most of the initial cases of coronavirus disease 2019 (COVID-19), the disease caused by SARS-CoV-2, were epidemiologically linked to exposure to Wuhan's Huanan seafood market, where wild animals are traded. Although the market has been closed since Jan 1, 2020, as part of efforts to contain the outbreak, patients without exposure to the market but with a history of travel to Wuhan or close physical contact with a patient confirmed to have COVID-19, including health-care workers, have also been identified, suggesting strong human-to-human transmission. The number of cases has been increasing rapidly: by Feb 15, 2020, more than 60 000 cases of COVID-19 pneumonia had been reported in China and in other countries worldwide (including Thailand, Japan, South Korea, and the USA) and 1524 patients had died, equivalent to a mortality rate of around 2%.' [https://www.thelancet.com/journals/laninf/article/PIIS1473-3099(20)30086-4/fulltext]

    কিন্তু এই ধরনের ঘটনাগুলো 'করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে রোগ নয়' বলে প্রমাণিত হবার ক্ষেত্রেই যুক্তি হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারতো। কেন হয়নি? এইজন্য যে, পৃথিবীতে আগে থেকেই ছোঁয়াচে এবং বায়ুবাহিত রোগের ধারণা প্রচলিত ছিল; প্রচলিত ছিল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু এসব অতি ক্ষুদ্র অণুজীব মানুষের বৃহৎ ক্ষতি করতে পারার ধারণা। যদি এসব ধারণা প্রচলিত না থাকতো, তাহলে উহানে মহামারী সৃষ্টি হবার পর যখন দেখা যেতো আপাদমস্তক মোড়ানো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরাও ব্যাপক হারে রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন সহজেই মাথায় আসতো এই ধারণা, নিশ্চয়ই উহানের বাতাস নিজেই দূষিত বা বিষাক্ত। ঠিক একইভাবে স্পেন বা অন্যদেশেও যখন দেখা যেতো, আপাদমস্তক মোড়ানো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির সৎকার কাজে নিয়োজিত লোকরাও করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিস্তার পাচ্ছে না, তখন এসব দেশের বাতাসেও কোনো অদৃশ্য বিষ মিশ্রিত হয়ে গেছে বলে মানুষের সাধারণ জ্ঞান সহজেই ধরে ফেলতো।

    জার্মানী
    'জার্মানিতে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস শনাক্ত' শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইউরোপের দেশ জার্মানিতে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। দেশটির বাভারিয়া অঙ্গরাজ্যে এক ব্যক্তির শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে রাজ্যের স্টার্নবার্গ এলাকায় আলাদা করে রাখা হয়েছে।
    সোমবার রাতে জার্মান স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তি এখনও পর্যন্ত ভালো আছেন। তার কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেয়। সূত্র : ডয়চে ভেলে, আনাদোলু এজেন্সি।' [https://www.banglatribune.com/foreign/news/606404]

    'লাফিয়ে বাড়ছে জার্মানিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা' শিরোনামে এনটিভি'র ওয়েবসাইটে ২২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (হাবিবুল্লাহ আল বাহার কর্তৃক তৈরিকৃত) বলা হয়, 'বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরনঘাতী করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে সংক্রামিত হচ্ছে জার্মানিতে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৯৩৭ জন এবং এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৯৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে চিন, ইতালি, স্পেন এবং আমেরিকার পরেই জার্মানির অবস্থান। ...
    সব চেয়ে বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে। এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত এ রাজ্যে ৭৩৬১ জন করনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই রাজ্যের একটি এলাকা হাইন্সবেরগে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়েছে এই ভাইরাসটি। আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে বাডেমবুটেমবার্গ প্রদেশ (আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮১৮ জন) এবং তৃতীয় অবস্থানে বেভারিয়া বা বায়ার্ন মিউনিখ প্রদেশ (আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৯৫ জন) এবং এই প্রদেশটি লকডাউন করা হয়েছে গতকাল শনিবার থেকে। সম্প্রতি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি।' [https://europentv.ntvbd.com/germany]

    'ইটালি, ফ্রান্স থেকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য তুলে আনছে জার্মানি' শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকায় (কলকাতা, ভারত) ৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লেখক শান্তনু মাইতি (ডি-৫২৪২৫, জুয়েলিখ, জার্মানি) লিখেন, 'করোনা সংক্রমণে জার্মানির যে স্টেট সবচেয়ে বেশি জেরবার, তার নাম- 'নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া'। সংক্ষেপে, 'এনআরভি'। এখনও পর্যন্ত শুধু এই স্টেটেই আক্রান্তের সংখ্যাটা ১৫ হাজার ৪২৭। রূঢ় শিল্পাঞ্চল এনআরভি স্টেটটি রাইন নদীর উপত্যকায়। জার্মানির সবচেয়ে বড় ৯টি শহরের মধ্যে ৪টিই রয়েছে জনবহুল এই স্টেটে। যেখানে আমি এখন থাকি কর্মসূত্রে, সপরিবারে। এই স্টেটটি জার্মানির একেবারে পশ্চিমে। নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামের সীমান্ত সংলগ্ন শহর আখেনে আমার বাড়ি। পাশেই রয়েছে জার্মানির হাইন্সবার্গ শহর, যা এখন জার্মানির 'উহান' অর্থাৎ, করোনা সংক্রমণের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

    আমি এবং আমার স্ত্রী দু'জনেই আখেন থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে হেলমহোলৎজ ফাউন্ডেশনের সর্ববৃহৎ রিসার্চ-ল্যাব 'জুলিখ রিসার্চ সেন্টার'-এ পোস্টডক্টরাল রিসার্চার। এলাকাটি হাইন্সবার্গ শহরের আরও কাছে। তাই খুব কাছ থেকে দেখেছি কী ভাবে কোভিড-১৯ সুনামির মতো আছড়ে পড়ল জার্মানিতে।
    জানুয়ারির শেষাশেষি মিউনিখ শহরে প্রথম ধরা পড়ল করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগী। তার পর জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এক জন/দু'জন করে করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলতে শুর করল। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বেশ কিছু প্রান্তিক খবর আসতে শুরু করল। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে যা ব্যাপক আকার নিল এনআরভি-সহ গোটা জার্মানিতে।

    যার শুরুটা হয়েছিল একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে। জার্মানি তথা 'রাইনল্যান্ড'-এর সবচেয়ে বড় উৎসব 'কোলন কার্নিভাল'। যা কি না জার্মানির 'পঞ্চম ঋতু' হিসাবে বিবেচিত হয়। কথায় আছে, রোমানরা কার্নিভালকে রাইনল্যান্ডে এনেছিল। স্যাটার্নালিয়া উৎসব চলাকালীন। এটি এখন এনআরভির সমস্ত ছোট-বড় শহরেই পালিত হয়। সপ্তাহব্যাপী কার্নিভালের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি হয় বর্ণাঢ্য এক শোভাযাত্রা দিয়ে। আমরাও ছিলাম এ বার 'আখেন কার্নিভাল'-এর শোভাযাত্রায়। অন্যান্য বারের মতো এ বারেও অসংখ্য দেশি-বিদেশি দর্শক জমায়েত হয়েছিলেন এই কার্নিভালকে কেন্দ্র করে। থিম-কেন্দ্রিক ওই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার পাশাপাশি জার্মানরা সে দিন বিভিন্ন রং-বেরঙের কস্টিউম পরে একে অন্যকে কোলাকুলি, নাচানাচি করছিল। আর আমাদের মতো দর্শকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন স্থানীয় কাল মিষ্টি ও বিয়ার বিনিময়ের মাধ্যমে।
    জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে করোনার এমন দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ার সূত্রপাত হাইন্সবার্গ শহরের কার্নিভালকে কেন্দ্র করেই। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অফিস থেকে ই-মেল পেলাম, আমাকে 'হোম কোয়রান্টিনে' যেতে হবে। কারণ, আমার এক সহকর্মী ওই কার্নিভালে অংশ নিয়েছিলেন। যাঁর থেকে বেশ কয়েক জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এরই মধ্যে কিন্তু সেই সহকর্মীর সঙ্গে আমার দু'দিন মিটিং হয়ে গিয়েছে। দু’দিন বাড়িতে থাকার পর সেই সহকর্মীর রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট 'নেগেটিভ' শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিলাম!
    হাইন্সবার্গে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪০০। সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৩৭ জনের। আমার শহর আখেনে সংক্রমণের সংখ্যা ১১০০ ছুঁইছুঁই। সংখ্যার নিরিখে জার্মানি চিনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রথম দিকে মৃত্যুর হার অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের তুলনায় অনেক কম থাকলেও, এখন সেই সংখ্যাটা ১২০০। দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
    সংক্রমণ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় দেরিতে হলেও, গত ২২শে মার্চ জার্মান সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের মতো কঠোর কার্ফু জারি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার পথে হাঁটেনি অবশ্য। বিশ্বাস রেখেছে জনগণের সচেতনতা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রার উপর। কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকলেও আমাদের মতো বিজ্ঞানের গবেষণাগার আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো কিন্তু এখনও খোলা রয়েছে। গণপরিবহণও স্বাভাবিকই। সুপারমার্কেট, ওষুধের দোকান, ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সবই (রেস্তোঁরা, মল, পাব, সেলুন ইত্যাদি) বন্ধ। শহর এক রকম নিশ্চল, নিস্তব্ধ। কফিশপে ভিড় নেই, যাত্রীহীন বাস। শহরের ঐতিহাসিক টুরিস্ট স্পটগুলো ফাঁকা। আবার অন্য দিকে, পার্কে ভিড় কম থাকলেও শরীরসচেতন জার্মানরা হাঁটতে, দৌড়োতে বেরচ্ছেন নিয়মিত। সরকারের তরফে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে, 'এক সঙ্গে দু'জনের বেশি বাইরে বেরনো যাবে না।' নির্দেশ লঙ্ঘন করলে মোটা অঙ্কের জরিমানারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
    গত তিন সপ্তাহ ধরে আমরা 'হোম অফিস'-এ আছি। নিত্যসামগ্রীর প্রয়োজনে সুপারমার্কেট যেতে হয় অবশ্য। সেখানে টিস্যু পেপার আর পাস্তা ছাড়া প্রয়োজনীয় সব কিছুর জোগান রয়েছে। শৃঙ্খলা মেনে ক্রেতারা সেখানে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে লাইন দিয়ে বাজার করেন। তরুণদের দল অবশ্য করোনা-ভয়কে উপেক্ষা করেই নেমে পড়েছে প্রবীণ ও হোম কোয়রান্টিনে থাকা মানুষদের কাছে দৈনন্দিন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে। ...'
    [https://www.anandabazar.com/editorial/letters-to-the-editor/coronavirus-germany-bringing-covid-19-patients-from-italy-france-dgtl-1.1131602]



    ব্রাজিল
    'ব্রাজিলকে বিশ্বের কবরস্থান বলছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৯ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস মহামারীতে এখন পুরোপুরি বিপর্যস্ত ব্র্রাজিল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড করেছে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশটি। এমনকি একদিনের মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। দাফনের জন্য খোঁড়া হচ্ছে বড় বড় গণকবর। বলা যায় সবচেয়ে বেশি গণকবর খোঁড়া হচ্ছে ব্রাজিলেই। গবেষকদের পূর্বাভাস বলছে, আগামী এক মাসের মধ্যেই মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। মৃত্যুহারের এ সীমাছাড়া ঊর্ধ্বগতির লক্ষণ দেখে ব্রাজিলকে ইতোমধ্যেই 'বিশ্বের কবরস্থান' হিসেবে অভিহিত করেছে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান।
    ওয়ার্ল্ডওমিটার ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্রাজিলে মোট আক্রান্ত করোনার রোগীর সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৬১। আর মৃত্যু ২৫ হাজার ৬৯৭। মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরে এখন দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ১ লাখ ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্ত ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৩।
    সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলে মারা যায় ৮০২ জন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় ৬২০ জন। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগস্টের শুরু পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত হতে পারে। কমপক্ষে তিন লাখ ৭৭ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্রাজিলের একদিনের মৃত্যু ১ হাজার ১৪৮ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৫৩৬। হাজার হাজার মানুষের দাফন দিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ। একসঙ্গে বহু মানুষের দাফনের জন্য খুঁড়তে হচ্ছে বড় বড় গণকবর। ভয়াবহ করোনাকবলিত ব্রাজিলের অন্যতম বড় শহর সাও পাওলো। [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/310402]

    জার্মানীর নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া স্টেট, হাইন্সবার্গ শহর; স্পেনের কাতালোনিয়া, মাদ্রিদ; ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত কোম নগরী; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা; ইতালির লোমবার্ডি শহর; যুক্তরাজ্যের লন্ডন, উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ড; ফ্রান্সের প্যারিস, ওয়াই শহর; ব্রাজিলের সাও পাওলো শহর এই শহরগুলোর কোনোটির অবস্থা চীনের উহানের কাছাকাছি, কোনোটির অবস্থা উহানের চেয়েও ভয়াবহ কেন? এসব স্থানেও কি উহানের মতো স্থানীয় কোনো সি ফুড মার্কেট থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে? না, এখনো পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ তোলেনি।
    তাহলে কেন উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পর্যায়ক্রমে এসব স্থানেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়?

    এই প্রশ্নের উত্তর এতোদিন বিশ্ববাসীর কাছে এভাবে ছিল, যেহেতু করোনাভাইরাস একটি 'ভাইরাস' এবং ছোঁয়াচে রোগ, তাই চীনের উহানে এটি সৃষ্টি হবার পর সেখান থেকে অনেক রোগী অন্য দেশে যাবার কারণে তাদের মাধ্যমে সেসব দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা যখন দেখলাম, (১) ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে কোনো রোগ নেই পৃথিবীতে; (২) ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এসব মাইক্রোস্কোপিক অণুজীবগুলো যদি বাস্তবে অস্তিত্বশীল হয়েও থাকে, সেগুলো মানুষের কোনো ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না; (৩) যেসব দেশে উহান থেকে করোনাভাইরাসের রোগী গিয়েছে, সেসবের অধিকাংশ দেশেই উহান ফেরত রোগী থেকে করোনাভাইরাস অন্য কারো দেহে সংক্রমিত হয়নি; (৪) অধিকাংশ দেশেই করোনা সংক্রমিত হয়েছে স্থানীয়ভাবে; উহানে বা করোনায় সংক্রমিত কোনো দেশ/এলাকায় ভ্রমণ ছাড়াই; এমনকি কোনো করোনায় আক্রান্ত রোগীর সাথে সম্পর্ক ছাড়াই, তখন কিভাবে বলা যায় অন্য দেশে করোনার উপদ্রব উহান থেকেই হয়েছে?
    চীন ছাড়া অন্য যেসব দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেসবের অধিকাংশতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে 'অজানা কারণে'। কিছু প্রতিবেদন/নিবন্ধ দেখা যাক এ সম্পর্কে:

    'What is coronavirus and what are the symptoms?' শিরোনামে বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের সংবাদদাতা জেমস গালাঘর কর্তৃক তৈরিকৃত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়,
    'How fast is it spreading?
    Thousands of new cases are being reported each day. However, analysts believe the true scale could be 10 times larger than official figures.
    Outbreaks have now occurred in South Korea, Italy and Iran, raising fears that it could become a pandemic. A pandemic is declared when an infectious disease threatens different parts of the world simultaneously.
    The WHO has said it is concerned about the number of cases with no clear link to China or other confirmed cases. It has said the window of opportunity to contain the virus was "narrowing".
    With colds and flu tending to spread fastest in the winter, there is hope the turning of the seasons may help stem the outbreak.
    However, a different strain of coronavirus - Middle East respiratory syndrome - emerged in the summer, in Saudi Arabia, so there's no guarantee warmer weather will halt the outbreak.' [https://www.bbc.com/news/health-51048366]

    'China coronavirus outbreak: All the latest updates' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'WHO chief Ghebreyesus in Geneva said he was concerned about cases outside China with 'no epidemiological link'.
    "Although the total number of COVID-19 cases outside of China remains relatively small, we are concerned about the number of cases with no clear epidemiological link, such as travel history to China or contact with a confirmed case," he told reporters during a media briefing.

    The WHO chief said he was concerned about the potential for COVID-19 to spread in countries with "weaker health systems".'
    [https://www.aljazeera.com/news/2020/02/cloneofcloneofcloneofcloneofcloneof2002152244372-200220231446112.html]

    উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দু'এক মাসের মধ্যেই পৃথিবীর অন্য অনেক দেশে করোনাভাইরাসের উপদ্রব হয়েছে 'অজানা কারণে' বা স্থানীয়ভাবে, এই সম্পর্কে এই নিবন্ধে অনেক অনেক উদাহরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার 'অজানা কারণ' কী?
    জার্মানির হাইন্সবার্গ শহরকে কেন জানি একটু আগে উল্লেখিত আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের লেখক জার্মানির 'উহান' (করোনা সংক্রমণের ভরকেন্দ্র) বলে আখ্যায়িত করে ফেলেছেন!
    একটু আগে 'কিভাবে বলা যায় অন্য দেশে করোনার উপদ্রব উহান থেকেই হয়েছে?' এই প্রশ্ন যে ৪টি ভিত্তির উপর করা হয়েছে, যদি যে কোনো সচেতন ব্যক্তি ভিত্তিগুলো নিয়ে একটু ভাবে, তার মনে এই উত্তরটিই সবচেয়ে বেশি সঠিক মনে হতে পারে, এসব শহরে/স্থানেও উহানের মতোই কিছু ঘটেছে। যে কারণে উহানে করোনাভাইরাসের উপদ্রব দেখা দিয়েছে, সেই রকম কোনো কারণেই অন্য দেশেও করোনাভাইরাসের উপদ্রব দেখা দেয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
    এই অনুমানের পেছনে কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। আচ্ছা বলুন, এরকম কর্মকান্ডে মানুষ কি সচরাচর কোনো প্রমাণ পায়? নাকি যারা এরকম কর্মকান্ড ঘটায়, তারা কোনো প্রমাণ বা চিহ্ন রাখে? অনেক কিছু পূর্বাপর ঘটনার যোগফল মিলিয়ে বুঝে নিতে হয়। যেমন কোথাও কোনো দেয়ালের এক পাশ থেকে দেখা যাচ্ছে, দেয়ালের বিপরীত পাশ থেকে ধোঁয়া উড়ছে, তখন এটা নিশ্চিত হওয়া যায়, দেয়ালের বিপরীত পাশে নিশ্চয়ই আগুন জ্বলছে।

    এবার দুটো গল্প দেখা যাক:
    (এক) এক লোক অনেক পরিশ্রমের পর একটা যন্ত্র তৈরি করেছে। যন্ত্রের কাজ হচ্ছে ১০০ ফুট দূরে থেকেও যে কোনো ফলের গাছের দিকে যন্ত্রটি কিছুক্ষণ তাক করে ধরে রাখলে ৮-১০ দিনের মধ্যে গাছের ফলগুলো এমনভাবে পঁচে ঝরে যায়, যেন মনে হয় সেগুলো এমনি এমনি নষ্ট হয়ে গেছে। তার যন্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য পুরোপুরি মহৎ ছিল না। ভেবেছে, কেউ তার ফল বাগানের কোনো ক্ষতি করলে যে লোক এই ক্ষতি করবে, তার ফল বাগানের ফলগুলো যন্ত্রটি দিয়ে নষ্ট করে ফেলবে, যেন সে বুঝতে না পারে। তার এই যন্ত্র তৈরির কথা এলাকার মানুষের জানা ছিল। তবে কেউ জানতো না যন্ত্রটি সত্যিই কিভাবে কাজ করবে।
    একদিন তার অল্প বয়সী ছেলে খেলার ছলে যন্ত্রটি হাতে নিয়ে সবার অজ্ঞাতে পাশের বাড়ির একজনের ফল বাগানে তাক করে ধরে রাখে। কিছুদিনের মধ্যেই ঐ লোকের ফলবাগানের ফলগুলো পঁচে গিয়ে ঝরে যেতে থাকে। লোকটি ছেলেটির এই কান্ডের কথা পরে জানতে পেরে বিষয়টা ধামাচাপা দেয়ার জন্য দুটো কাজ করে: (১) নির্ভরযোগ্য কিছু মানুষের মাধ্যমে প্রচার করতে শুরু করে, ঐ লোকের গাছের ফল পঁচে গেছে গাছের পাশে থাকা একটি নর্দমার দুর্গন্ধে। এই প্রচারণায় সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে। কারণ সমাজের গ্রহণযোগ্য লোকদের পক্ষ থেকেই এমন মতামত আসতে শুরু করে। (২) লোকটি সুযোগ বুঝে ৩০০-৪০০ ফুট দূরের কিছু বাড়িতেও কয়েকজনের এমন কিছু ফল গাছে যন্ত্রটি তাক করে ধরে রাখে, যেগুলোর পাশে কোনো নর্দমা আছে। কিছু দিনের মধ্যে সেসব বাড়ির ওই ফল গাছগুলোর ফলও পঁচে যেতে শুরু করে। মানুষ তখন স্বভাবতই ভাবতে থাকে, যে লোকের ফল গাছের ফল প্রথমে পঁচতে শুরু করেছে, সেই লোকের ফল গাছের পাশে যেভাবে নর্দমা থাকার কারণে তার ফল পঁচে গেছে, আমাদের ফলগাছের পাশেও নর্দমা থাকার কারণে আমাদের গাছের ফলগুলোও পঁচে যাচ্ছে।
    ব্যস, লোকটির ছেলে ভুলক্রমে যে ক্ষতি করেছে, তা নিয়ে আর কেউ ভাবলো না। সবাই নর্দমার দোষ দিয়ে নর্দমা পরিষ্কারে মনোনিবেশ করলো।
    এই ঘটনার সাথে চীনের ঘটনা মিলে যেতে পারে। তবে যেভাবে কোনো মানুষের জীবনের কোনো ঘটনা অন্য মানুষের জীবনের কোনো ঘটনার সাথে কখনো শতভাগ না মিলে গেলেও প্রধান কিছু অংশ মিলে যায়, এই ঘটনা তেমনি চীনের সাথে পুরোপুরি না মিললেও প্রধান কিছু অংশ মিলে যাবার সম্ভাবনা প্রবল।

    (দুই) এক বনে ছিল এক চালাক শেয়াল। সে একদিন খাবারের খোঁজে লোকালয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সে মানুষের তৈরি একটি শেয়াল ধরার ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। অনেক চেষ্টার পর সে ছাড়া পায়, তবে তার লেজটা কাটা পড়ে যায়। এরপর সে নিজের এলাকায় ফিরে আসে। ফিরে আসার পর সে ভাবতে থাকে, লেজ ছাড়া অন্য শেয়ালদের কাছে গেলে তারা তাকে লেজ হারানোর কথা জিজ্ঞেস করলে সে কী উত্তর দেবে! ফাঁদে আটকে লেজ হারানোর কথা বললে তার আত্মসম্মানে লাগবে। এজন্য সে ভাবতে থাকে কী করা যায়। শেষে তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। একদিন সে অন্য শেয়ালদের নিয়ে একটি সভা করে তাদেরকে বুঝাতে থাকে, 'আমাদের লেজের কোনো প্রয়োজন নেই। লেজ আমাদের জন্য একটা বোঝা, যা কোনো কাজে আসে না। লেজ কেটে ফেললে আমাদেরকে বরং সুন্দর দেখায়। এই দেখো, আমি নিজেই আমার লেজ কেটে ফেলেছি এসব ভেবে। লেজ কেটে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে গেছি। তোমরাও তোমাদের লেজ কেটে ফেলতে পারো।' শেয়ালেরা তার কথা শুনে ভাবছিল কী করা উচিত। সভায় উপস্থিত এক প্রবীণ শেয়াল ধূর্ত শেয়ালটির চালাকি বুঝতে পারে। সে সবাইকে বলে, 'ধূর্ত শেয়াল নিজে হয়তো কোনো ফাঁদে পড়ে তার লেজ হারিয়ে ফেলেছে। এখন সবাইকে বলছে সবার লেজ কেটে ফেলতে, যেন সবাই ওর মতো লেজকাটা হয়ে যায়। তাহলে কেউ কাউকে নিন্দা করার সুযোগ পাবে না। তোমরা কেউ ওর ফাঁদে পা দেবে না।' এই কথা শোনার পর সবাই ধূর্ত শেয়ালের লেজ হারানো এবং তাদেরকে নিজের লেজ কেটে ফেলার পরামর্শের রহস্য বুঝতে পারে।

    এই গল্পে শেয়াল দিয়ে মূলত সমাজের এক ধরনের চালাক মানুষকে বোঝানো হয়েছে। কারণ শেয়ালকে যতোই ধূর্ত বলে মনে করা হোক, শেয়াল এতো ধূর্ত প্রাণী নয়। মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণী মানুষের মতো ধূর্ত হতে পারে কিনা, জানা নেই। মানুষের চেয়ে ক্ষীপ্র, হিংস্র হতে পারে, কিন্তু হয়তো চালাক বা ধূর্ত হতে পারে না। শেয়ালের এই কাল্পনিক গল্পের সাথে করোনাভাইারাসের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের মিল বা সম্পর্ক নেই, এই দীর্ঘ নিবন্ধ পড়ার পর তা ভাবা খুবই কষ্টকর হতে পারে।
    তবে এই দু'গল্পের চেয়ে একটু ভিন্নও হতে পারে চীনের উহান থেকে উৎসারিত করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের গল্প। সেক্ষেত্রে প্রথম গল্পটি এরকম হতে পারে:
    লোকটি যন্ত্রটি তৈরি করেছিল এই উদ্দেশ্যে, যেন বাজারে শুধু তার গাছের ফলই বিক্রি হয়, অন্য কেউ বা তার প্রতিদ্বন্দীরা যেন বাজারে ফল বিক্রি দূরের কথা, ফল উৎপাদনই করতে না পারে। সেজন্য সে যন্ত্রটি তৈরি করার পর আগে নিজের এক গাছে প্রয়োগ করে দেখলো ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা! যখন দেখলো, কাজ ঠিকমতো করছে, তখন সে তার কিছু প্রতিদ্বন্দীর গাছেও প্রয়োগ করলো তাদের অজান্তে। পরে সমাজের কিছু গ্রহণযোগ্য লোক তার পক্ষে প্রচার করতে লাগলো, লোকটির গাছের নিকট একটি নর্দমা থাকার কারণে তার একটি গাছের ফল নষ্ট হয়ে গেছে। সেই গাছ থেকে কীটপতঙ্গ অন্য মানুষের গাছেও রোগটি ছড়িয়ে দিয়েছে। (লোকটি এসবের কিছু জানে না।)
    করোনাভাইরাস নিয়ে এই দীর্ঘ নিবন্ধের এই পর্যায়ে এসে এই তিন গল্পের কোনো একটিকে সঠিক বলে অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছাই যায়। তবে শতভাগ না মিললেও কাছ ঘেঁষে চলে যাবে।

    তবে যেহেতু বিষয়টা শুধুই অনুমান, তাই চীন ছাড়া অন্য দেশে ছড়ানোর পেছনে ভিন্ন দুষ্কৃতিকারীর হাত থাকার বিষয়টাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, (১) কিছু মানুষ আছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে অভ্যস্ত। সত্য একদিন প্রকাশ পেতেই পারে। (২) অদৃশ্য বিষ নিয়ে শুধু উহানেই গবেষণা হয় না, আরো অনেক দেশেই হয়।
    ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মে পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪০০০ এর চেয়ে বেশি, এমন দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি দেশে উহানের মতো অদৃশ্য বিষ ছড়িয়ে দেয়ার সম্ভাব্যতা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এই সম্ভাব্যতার পেছনে অন্তত ৪টি ভিত্তি থাকার কথা একটু আগে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অবশিষ্ট দেশগুলোতে যদি অদৃশ্য বিষ ছড়িয়ে দেয়া না হয়, তবু সেগুলোতে করোনাভাইরাসে চার-পাঁচ হাজারের বেশি মৃত্যু না হলেও এতো বেশি মৃত্যুর কারণ কী?

    সম্ভাব্য কিছু কারণ:
    (এক) কিছু লোক 'প্রকৃত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত' কোনো দেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে এসব দেশে এসে মৃত্যুবরণ করেছে। (দুই) পরীক্ষার ভুলে অনেক মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের শরীরে আগে থেকেই অন্য রোগ থাকার কারণে সেসব রোগের তীব্রতায় তারা মারা গেছে, করোনাভাইরাসে নয়। (তিন) পরীক্ষার ভুলে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, তাদের অনেকে সংশ্লিষ্ট দেশে চিকিৎসার অভাবে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সাময়িক স্থবিরতা বা সীমাবদ্ধতার কারণে মারা গেছে। যেমন ফিলিপাইনে এবং ফিলিপাইনের মতো অনেক দেশে করোনার উপদ্রবের পর অনেক চিকিৎসক নিজেই চলে গেছেন কোয়ারেন্টাইনে। ফলে চিকিৎসাব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে সাময়িক সংকট। অনেক হাসপাতালও বন্ধ হয়ে গেছে। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে রোগীরা আইসোলেশনে থেকে থেকে মারা গেছে। (চার) পরীক্ষার ভুলে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, সত্যিই করোনাভাইরাস মনে করে করোনাভাইরাসের রোগীর মতোই তাদের চিকিৎসা করার কারণে অনেকে মারা গেছে। এটা সবাই জানে, করোনাভাইরাসে এন্টিবায়োটিক অকার্যকর। 'করোনাভাইরাস: কোথা থেকে এসেছে, কিভাবে ছড়ায়, কতটা ভয়ংকর, চিকিৎসা কী?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই, এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51206037]

    ''What Is Coronavirus?' শিরোনামে হপকিন্স মেডিসিনের ওয়েবসাইটে ১৯ মে ২০২০ তারিখে সর্বশেষ আপডেটকৃত একটি নিবন্ধে (Reviewed By: Lauren M. Sauer, M.S.) উল্লেখ করা হয়, 

    'How is COVID-19 treated?
    As of now, there is not a specific treatment for the virus. People who become sick from COVID-19 should be treated with supportive measures: those that relieve symptoms. For severe cases, there may be additional options for treatment, including research drugs and therapeutics.' [https://www.hopkinsmedicine.org/health/conditions-and-diseases/coronavirus]

    Australian Government Department of health - এর ওয়েবসাইটে 'Coronavirus (COVID-19)' শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'There is no treatment for coronavirus, but medical care can treat most of the symptoms. Antibiotics do not work on viruses. If you have been diagnosed with coronavirus, isolate yourself in your home.' [https://www.health.gov.au/health-topics/novel-coronavirus-2019-ncov]

    চিকিৎসাহীনভাবে সেল্ফ আইসোলেশনে থেকে অনেকে মারা গিয়ে থাকতে পারে। (পাঁচ) সর্দি-কাশি বা ঠান্ডাজনিত রোগ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ায় এমনিতেই বিশ্বের সব দেশে সব সময় অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করে। যেসব দেশের কথা এখন বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক মাসে সেসব দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না হলেও যেসব লোক এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের অনেকে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ায় মারা যেতো। কিন্তু তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়াটা পরীক্ষার ভুলে করোনাভাইরাস বলে পরিগণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুকে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
    যেসব দেশে উহানের মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, সেসব দেশের তালিকা এমন হতে পারে: ইরান, ইতালি, জার্মানী, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং ব্রাজিল।
    এছাড়া ৪০০০ এর বেশি মৃত্যুবরণ করেছে, এমন বাকি দেশগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা, সন্দেহ আছে। আক্রান্ত অনেক বেশি, কিন্তু মৃত্যু অনেক কম, এরকম দেশ আছে রাশিয়া এবং ভারত। এসব দেশে বেশি পরীক্ষা করার কারণে বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এই কথাটা প্রমাণিত হবে তখন, এসব দেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব নিঃশেষ হয়ে যাবার বছর খানেক পর আবার এরকম ব্যাপক হারে করোনা টেষ্ট করে, বিশেষ করে সর্দি, কাশি, হাঁচি এরকম উপসর্গ বিশিষ্ট বা নিউমোনিয়া/ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত মানুষদের করোনা টেস্ট করে যখন দেখা যাবে এখনকার মতো তখনো অনেক অনেক মানুষের করোনা পজিটিভ হচ্ছে।

    একটি প্রতিবেদন দেখা যাক:
    'আইসল্যান্ডের গবেষণা : ভয়ঙ্কর তথ্য, অর্ধেকের বেশি মানুষ কোনো লক্ষণ ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত!' শিরোনামে কালের কন্ঠে ২৬ মার্চ ২০২০তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে করোনা পরিস্থিতি। মহামারিটি এরই মধ্যে বিশ্বের ১৯৮ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯০ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩৬৭ জনের। মারাত্মক প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে রুখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গৃহবন্দি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। এরই মধ্যে ৩৮০ বারেরও অধিকবার জিনের বদল ঘটিয়ে ভাইরাসটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। একে কিভাবে রুখা যাবে সেটা খুঁজতেই গলদঘর্ম বিশ্বের তাবৎ বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা।

    তবে সংক্রামক এই রোগের উৎস সম্পর্কে জানতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন আইসল্যান্ডের গবেষকরা। ইউরোপের ছোট্ট এই দেশটিতে জনসংখ্যা মাত্র  ৩ লাখ ৬৪ হাজার। সে জন্য সরকার সেখানে কোনো লকডাউন বা কারফিউ চাপিয়ে না দিয়ে দেশের সব জনগণের করোনা টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেই দেখা গেছে অবাক করা সেই তথ্য।
    রবিবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বায়োটেকনোলজি ফার্ম ডিকোড জেনেটিক্স ১০ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষকে পরীক্ষা করেছেন। এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে মাথাপিছু পরীক্ষার তুলনায় আইসল্যান্ডের এই সংখ্যা অনেক বেশি। এটাই মাথাপিছু হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় করোনা পরীক্ষা বলে দাবি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

    তবে আইসল্যান্ডের পরীক্ষা অন্যান্য দেশের মতো নয়। অন্যদেশে লোকদের মাঝে করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই কেবল পরীক্ষা করা হয়। অথবা কোন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে পরীক্ষা করা হয়। আইসল্যান্ড একমাত্র দেশ যারা করোনার কোন লক্ষণ না থাকলেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করেছে। এমনকি এসব লোকেরা কোন করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শেও আসেননি। এমনকি পর্যায়ক্রমে দেশের সব মানুষকে করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
    গবেষণায় আইসল্যান্ডে ২১৮ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় যে ২১৮ জন করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে তাদের অর্ধেকের মাঝে করোনা ভাইরাসজনিত কোনো লক্ষণ ছিল না। এই তথ্য করোনাভাইরাস গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

    এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন ধারা সুচিত করেছে। এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করেছে যে, ভাইরাসজনিত লক্ষণ নেই এমন লোকদের মধ্যেও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এমনকি যাদের মাঝে অসুস্থতার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেই তাদের মাঝেও সুপ্ত অবস্থায় ছড়িয়েছে মারণ এই ভাইরাস।
    অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, ১০ শতাংশেরও বেশি রোগী ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত এমন ব্যক্তির দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন তবে এখনও তাদের মাঝে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়নি।

    আইসল্যান্ডের চিফ এপিডেমিওলজিস্ট থোরলফার গনসন বাজফিড নিউজকে বলেছেন, 'ডিকোড জেনেটিক্সের প্রাথমিক ফলাফলগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, সাধারণ জনসংখ্যার কম সংখ্যক ভাইরাস সংক্রামিত হয়েছে এবং যারা পজেটিভ হয়েছেন তাদের প্রায় অর্ধেকই লক্ষণহীন। বাকি অর্ধেক মানুষের মাঝে মাঝারি শীত-জাতীয় লক্ষণ দেখা যায়।'
    আইসল্যান্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, তারা বিশ্বের অন্য কোথাও যেখানে উচ্চ জনসংখ্যার হার রয়েছে সেখানে সাধারণ নাগরিকদের মাঝে একই ধরণের পরীক্ষা চালাবেন। সিদ্ধান্তে আসার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    গনসন বলেছিলেন, আইসল্যান্ডের স্বল্প জনসংখ্যা দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ ও চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ডিকোড জেনেটিক্সের এমন বৃহত্তর পরীক্ষার জন্য দারুন ভুমিকা রেখেছে। এখন গবেষকরা এটা বৃহত্তর স্কেলে টেস্টিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই তথ্য ভবিষ্যতে ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য একটি মূল্যবান উপাত্ত হবে।'
    উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ওমিটারের দেওয়া তথ্য মতে, আইসল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ৭৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।' সূত্র- আল-আরাবিয়া। [https://www.kalerkantho.com/online/world/2020/03/26/890963]

    এখানে বলা হয়েছে, 'আইসল্যান্ডের পরীক্ষা অন্যান্য দেশের মতো নয়। অন্যদেশে লোকদের মাঝে করোনার লক্ষণ দেখা দিলেই কেবল পরীক্ষা করা হয়। অথবা কোন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে পরীক্ষা করা হয়। আইসল্যান্ড একমাত্র দেশ যারা করোনার কোন লক্ষণ না থাকলেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করেছে। এমনকি এসব লোকেরা কোন করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শেও আসেননি। এমনকি পর্যায়ক্রমে দেশের সব মানুষকে করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।'

    আইসল্যান্ডে যদি 'করোনার কোনো লক্ষণ নেই এবং করোনায় আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে যায়নি, এমন লোক'দের পরীক্ষা না করে শুধু যাদের শরীরে করোনার লক্ষণ আছে, তাদের পরীক্ষা করা হতো, তাহলে পরীক্ষাকৃত লোকের তুলনায় করোনা পজিটিভ রোগীর হার অনেক বেশি হতো। যেখানে করোনার কোনো লক্ষণ নেই, এমনকি কোনো করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শেও আসেননি, এমন লোকদের করোনা পরীক্ষা করেও অনেক মানুষের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে, সেখানে করোনার লক্ষণ আছে, শুধু এমন লোকদের করোনা পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ রোগীর হার নিশ্চিতভাবে আরো বেশি হতো। এর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব রোগ নির্ণয় করা হয় যে পদ্ধতিতে, সেই 'আরটি পিসিআর' পদ্ধতিতেই করোনা পরীক্ষা করার ফলে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত অনেকে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হতেই পারে। উপরে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সহজ কথায় পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির কারণে অনেক দেশে অসংখ্য মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যারা সত্যিকারার্থে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। এরা অনেক অবহেলায় বা চিকিৎসার অভাবে বা হতাশায় ভুগে বা অ্যন্টিবায়োটিক ছাড়া চিকিৎসা করানোর ফলে বা শরীরে আগ থেকে বিদ্যমান অন্য রোগের (যেমন: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, যক্ষা ইত্যাদি) তীব্রতায় বা  মারা গেছে। দোষ হয়েছে শেষে ঐ করোনারাই। তাছাড়া স্বয়ং নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জায়ও অনেকে মারা যায়, দুর্নাম হয় করোনাভাইরাসের। কারণ তাদের নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। আর বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বছরের সব সময় নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগে অনেক মানুষ মারা যায়।

    আরেকটি প্রশ্নের উত্তর
    করোনাভাইরাস যে ছোঁয়াচে নয়, এমনকি এটি কোনো ভাইরাস নয়, এই বিষয়ে এই নিবন্ধের শুরু থেকে এই পর্যন্ত যা আলোচনা করা হয়েছে, তাতে মানুষের নিকট বিষয়টা প্রায় শতভাগ পরিষ্কার হয়ে যাবার কথা। তবু বোঝাবোঝিটা আরো গাঢ় করার জন্য সংশয়বাদীদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকা একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাখতে হয়। প্রশ্নটি কী, তা পরে উল্লেখ করা হবে। আগে উত্তর।
    পৃথিবীর প্রায় সব দেশে, বছরের প্রায় সব সময়, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়, এমন অনেক ঘটনা ঘটে, দেখা যায় একটি পরিবারে পাঁচ জন সদস্য। তাদের অনেকেই একই সাথে, বা একজনের পর আরেকজন, বা একজনের পর দুজন, বা দুজনের পর একজন, বা দুজনের পর দুজন নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এরকম সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হয়। আমি যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি, সেখানে অনেক সময় এমনও দেখা যায়, একটি শ্রেণিতে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী। কোনো কোনো দিন তাদের মধ্যে ৪/৫ জন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার কারণে ছুটি নিয়ে চলে যায়। কোনো কোনো দিন দেখা যায় একই শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনপুস্থিত। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের বেশিরভাগ সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় ভুগছে।

    আমাদের পরিবারে পাঁচ জনের বেশি সদস্য। আমার বুঝজ্ঞান হবার পর থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্যবার একাধিক সদস্য একই সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় ভুগেছে। আমাদের শৈশবে আমরা ছয় ভাই বোন যখন বাড়িতেই থাকতাম, দেখা যেতো অনেক সময় আমাদের মধ্যে দু'তিনজন একই সাথে সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় ভুগছে। হয়তো কেউ আগে, কেউ পরে আক্রান্ত হয়েছে বা একই সাথে কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে। দু'তিন বছর আগেও আমাদের ঘরে তিনজন একই সাথে সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় ভুগেছে। অনেক সময় দেখা গেছে, একজন সুস্থ হবার কয়েক দিন পর আরেকজন সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

    আমাদের বিদ্যালয়ের অনেক অভিভাবক আমাদেরকে অনেক সময় বলেন, তাঁর ঘরে কয়েকজন একই সাথে সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যা আক্রান্ত। এই বিষয়টা সারা বিশ্বে সাধারণ বিষয়। এই 'একই সাথে বা কাছাকাছি সময়ে একই পরিবারের একাধিক লোকের সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হওয়াটা'কে ছোঁয়াচে মনে করা যে ভুল, তা এই নিবন্ধের প্রথম অধ্যায়েই আলোচনা করা হয়েছে।

    অনেক সময় দেখা যায় একই পরিবারের কয়েকজন আক্রান্ত, কয়েকজন সুস্থ। ছোঁয়াচে হলে কেউই রক্ষা পেতো না, এমনকি চক্রাকারে পরিবারের সবার রোগটি লেগে থাকতো, একজন থেকে আরেকজন, আরেকজন থেকে আরেকজন, একজন রোগ থেকে সুস্থ হবার পর পরিবারের আক্রান্ত আরেকজনের কাছ থেকে সে আবার আক্রান্ত হয়ে পড়তো, কোনো কালে রোগটি থেকে তারা মুক্তি পেতো না। ছোঁয়াচে নয়, বরং সিজনাল বা ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট রোগ এগুলো। এজন্য কখনো কখনো দেখা যায় একটি পরিবারে একই সাথে একাধিক সদস্য আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, একজনের কাছ থেকে আরেকজন আক্রান্ত হবার কোনো প্রশ্ন ছাড়াই।

    নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যা যে ছোঁয়াচে নয়, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, এমন অসংখ্য ঘটনা সমাজে ঘটে, দেখা যায় একটি পরিবারের একজন এগুলোতে আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হবার আগে ঐ পরিবারের আর কেউ এগুলোতে আক্রান্ত হয়নি। একাধিক সদস্য আক্রান্ত হবার তুলনায় শুধু এক সদস্য আক্রান্ত হবার ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই অনেক অনেক বেশি।
    আরেকটা প্রমাণ, শৈশবে আমাদের কারো এই জাতীয় রোগ হলে আমাদের মা ২৪ ঘন্টা আমাদের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। কিন্তু খুব কম সময় তিনি আমাদের অসুস্থতার সময় আমাদের সেবা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। শুধু তিনি নন, আমরা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের বাবাও সব সময় অসুস্থ হয়ে পড়তেন না। এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য না করে শুধু একই সাথে একই পরিবারের কয়েকজন সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঘটনাগুলো দেখেই সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যাকে ছোঁয়াচে মনে করা কি ঠিক হবে? হবে না।

    নিবন্ধের প্রথমেই এই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এটা প্রমাণ করা হয়েছে, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। ছোঁয়াচে রোগ না হওয়া সত্ত্বেও একই সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে একই পরিবারের একাধিক সদস্য রোগগুলোতে আক্রান্ত হতে পারে ঐ কারণে, যে কারণে প্রথম সদস্য আক্রান্ত হয়েছে।

    এই অনুচ্ছেদের আগের অনুচ্ছেদে এবং এর আগের কয়েকটা অনুচ্ছেদেও এটা স্পষ্ট করা হয়েছে, 'পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির কারণে অনেক দেশে অসংখ্য মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যারা সত্যিকারার্থে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না।' করোনাভাইরাসের 'প্রকৃত কারণ' হানা দেয়নি, এমন সব দেশে একই পরিবারের একাধিক সদস্য করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হবার অনেক ঘটনা ঘটতেই পারে। কিভাবে? যেহেতু একই পরিবারের একাধিক সদস্য অন্য সময়ও সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় ভুগে থাকে ছোঁয়াচে হওয়া ছাড়াই, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সময় সেরকম ঘটনা ঘটবে না কেন? সেরকম ঘটনার ক্ষেত্রে যদি একই পরিবারে সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত সব রোগীর করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়, তাহলে সেগুলোকে পরীক্ষার ভুল মনে করতে অসুবিধা কোথায়? অন্য সময় যখন একই পরিবারের একাধিক সদস্য একই সময় বা কাছাকাছি সময় সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যা আক্রান্ত হয়, করোনাভাইরাসের এই সময়ও সেরকম হওয়া অসম্ভব হতে পারেনা।

    পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন অসংখ্য মানুষের করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হবার অনেকগুলো ঘটনা এই নিবন্ধে ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা বিগত কয়েক মাসে চীন বা অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করেননি, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সাথেও তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এই ঘটনাগুলোকে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা বলেই বলা হয়েছে সব জায়গায়। কেন এমন ঘটনাগুলো ঘটেছে? করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতাকে এজন্য দায়ী না করে উপায় থাকে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষত যেসব দেশে করোনাভাইরাসের 'প্রকৃত কারণ' হানা দেয়নি, সেসব দেশে একই পরিবারের একাধিক লোকের করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়াটাকে পরীক্ষার ভুল বলা ছাড়া উপায় নেই। কারণ করোনা যেমন কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, করোনাভাইরাসের 'প্রকৃত কারণ'ও পৃথিবীর অল্প কয়েকটা দেশেই শুধু হানা দিয়েছে বলে আমরা এই নিবন্ধ থেকে আরো আগেই অবগত হয়েছি। তাই এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছা বেশ সহজ হয়ে দাঁড়ায়, করোনা নয়, পৃথিবীর যেসব দেশে করোনাভাইরাসের 'প্রকৃত কারণ' হানা দেয়নি, সেসব দেশে মানুষের সাধারণ সর্দি-জ্বরই পরীক্ষার ভুলে করোনাভাইরাস বলে পরিগণিত হয়েছে।

    এবার একটি গল্প
    আমার বড় মামার বড় ছেলে। নাম মুহাম্মদ। লক্ষ্মীপুর শহর থেকে প্রধান সড়ক ধরে পূর্ব দিকে চার-পাঁচ কিলোমিটার আসার পর জকসিন বাজার। আরো পূর্ব দিকে এক কিলোমিটার এলে যাদৈয়া নামক একটি স্থান আছে। সেখানে সড়কের দক্ষিণ পাশে একটু ভেতরে আমার নানার বাড়ি। নাম রেয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া বাড়ি। সেদিন আমার ছোট ভাইয়ের কাছে আমার বড় মামার পরিবারে কয়েকজনের সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হবার কথা জেনে বিষয়টা আরো কাছ থেকে জানার জন্য ফোন করলাম মুহাম্মদের কাছে। কুশল বিনিময়ের পর ওকে বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলাম। সেও উত্তর দিলো। তার উত্তরগুলোর সারাংশ এই, ''আমার বাবা (আমার মামা) কিছুদিন আগে প্রচন্ড জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পর আমার মেয়েটিও (দু'বছরের কম বয়সী) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু প্যারাসিটামল দিয়ে ওদের চিকিৎসা হচ্ছিলো। এরই মধ্যে আমাদের ইব্রাহিমও (মুহাম্মদের দ্বিতীয় ভাই) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লো। আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। আমরা আশঙ্কা করতে লাগলাম, হয়তো করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এরা সবাই। বিশেষ করে ইব্রাহিমের জ্বরটাকে করোনা বলে বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না। কারণ বিভিন্ন রকম অনেক রোগী যেমন ওর কাছে আসে (একজন গ্রাম্য ডাক্তার হওয়াতে), তেমনি সেও অনেক রোগীকে দেখতে যায়। এদের সবার চিকিৎসা চলতে লাগলো প্যারাসিটামলের পাশাপাশি লেবুর রস ইত্যাদি দিয়ে। কিছু দিনের মধ্যে আমার মেয়ের অবস্থার উন্নতি হলো। বাবার অবস্থা কখনো একটু উন্নতি হয়, আবার মাঝে মাঝে অবনতির দিকেও চলে যায়। কিন্তু ইব্রাহিমের কোনো উন্নতি হচ্ছিলো না। এরই মধ্যে ফারুক (মুহাম্মদের তৃতীয় ভাই) ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার পর সেও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার জ্বরের কারণ হলো, সে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে আসার পথে কয়েকবার বৃষ্টিতে ভিজেছে। বৃষ্টিতে ভিজেই তার জ্বর হয়েছে। আমার বাবারও জ্বরের কারণ আছে। তিনি গরমের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে আসার পর পুকুরে গোসল করেছেন।

    তবু ওরা হয়তো সাধারণ জ্বরের পরিবর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ভেবে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ আমাদের এলাকায় ইতোমধ্যে কয়েকজনের করোনাভাইরাস পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। ইব্রাহিমের অবস্থা একেবারে শোচনীয় হয়ে গেলো। সে দুশ্চিন্তায় খাওয়া-দাওয়াও ছেড়ে দিলো। আমরা একবার ভাবলাম, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসবো। কিন্তু শেষে তা না করে করোনা পরিষেবার হটলাইন নাম্বারে ফোন করলাম। ওরা লক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলো। লক্ষণ বলার পর ওরা বললো, 'ভয় পাবেন না। এটা করোনা নয়, বরং সাধারণ সর্দি-জ্বর। আপনারা প্যারাসিটামল খান ৬ ঘন্টা পর পর, বেশি সমস্যা হলে এজিথ্রোমাইসিন খাবেন।'
    এই আশ্বাস এবং পরামর্শের পর আমরা সাহস পেলাম। এরপর ইব্রাহিমকে এজিথ্রোমাইসিন খাওয়ানো শুরু করার পর ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে উঠলো। তার শরীরে শুধু ক্ষুধামন্দা রয়ে গেলো। পরে তা-ও ভালো হয়ে গেলো। আমার বাবাকে এবং ফারুককে কয়েকদিন শুধু প্যারসিটামল খাওয়ানোর পরই তারা সুস্থ হয়ে উঠলো। এর কিছু দিন পর আমার বাবার আবার জ্বর উঠলো। এবার তাঁকে এজিথ্রোমাইসিন খাওয়ানো শুরু করা হলো। তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। এখন শুধু তাঁর কাশি আছে। মাঝখানে আমারও জ্বর এলো। দু'দিন শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ার পরই আমার জ্বর সেরে গেছে, এজিথ্রোমাইসিন বা কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়নি।''

    নিজেদের পরিবার সম্পর্কে এই কথাগুলো বলার পর কথায় কথায় মুহাম্মদদের এলাকা প্রসঙ্গে আলোচনা চলে এলো। ওদের এলাকার কয়েকটা ঘটনার কথা সে উল্লেখ করলো। (১) ওর এক চাচা (ওর বাবার চাচাতো ভাই) আনোয়ার ভুঁইয়া, যিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কিছু দিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হলেন। চিকিৎসার এক পর্যায়ে নিজ থেকে আগ্রহী হয়ে তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে এলেন। ফলাফল আসার আগে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন। সুস্থ হবার পর ফলাফল আসে তিনি করোনা পজিটিভ! তাঁকে লকডাউনের বন্দীদশায় নিক্ষেপ করা হলো। তাঁর জীবনে এখন চলছে বিভীষিকাময় অবস্থা। এখন তিনি শারীরিকভাবে পুরো সুস্থ, তবে মানসিকভাবে পুরো অসুস্থ! (২) শুধু ওর ওই চাচা আনোয়ার ভুঁইয়া নয়, মান্দারী এলাকায় (মুহাম্মদদের নিকটবর্তী এলাকা) নাকি এরকম আরো ৭/৮ জন রোগী আছে, যারা জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে এসেছে। কিন্তু 'করোনা পজিটিভ' ফলাফল আসার আগেই জ্বর থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছে! এখনও ওরা সুস্থ। (৩) যাদৈয়া রাস্তার মাথায় আহমদ সরকার নামে একজন প্রবীণ লোকের বসবাস। তাঁর একটি ছেলে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হবার কয়েকদিন পর তাঁর করোনা পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনিও করোনা পজিটিভ রোগী। কিন্তু বিগত কিছুদিন এলাকায় এবং বাজারে যাদের সংস্পর্শে তিনি গিয়েছেন, যাদের সাথে মিশেছেন, কেউই করোনায় আক্রান্ত হয়নি! (৪) মুহাম্মদের আরেক চাচা কামাল ভুঁইয়া (আনোয়ার ভুঁইয়ার ভাই) কিছুদিন আগে মামুন নামে আরেকজন লোকের সাথে একই মোটরসাইকেলে চড়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে এলেন। শেষে দেখা যায়, যার সাথে একই মোটরসাইকেলে গিয়েছেন, তিনি  করোনা পজিটিভ, আর কামাল ভুঁইয়া করোনা নেগেটিভ! আরো চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে, করোনা নেগেটিভ হয়ে কামাল ভুঁইয়া যেমন এখনও সুস্থ, করোনা পজিটিভ হয়েও মামুন নামক ঐ লোকও সুস্থ! অথচ মামুন লকডাউনে, কামাল বাইরে! (৫) মুহাম্মদের বড় চাচাও (মানে আমার মেঝো মামা) কিছুদিন আগে বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। শেষে মুহাম্মদের ভাই ইব্রাহিম তাঁর চিকিৎসা করতে গিয়ে প্যারাসিটামল খেতে পরামর্শ দেয়ার কয়েকদিন পরও যখন তাঁর জ্বর যাচ্ছিলো না, তখন তাঁকে করোনা পরীক্ষা না করে টাইপয়েড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিলো। টাইপয়েড পরীক্ষার পর দেখা গেলো তিনি টাইপয়েডে আক্রান্ত। টাইপয়েডের ঔষধ খাওয়ার পর তিনি এখন পুরো সুস্থ। (৬) মুহাম্মদের চাচা আনোয়ার ভুঁইয়া সম্পর্কে আরেকটি তথ্য দিলো মুহাম্মদ। আনোয়ার ভুঁইয়া করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসার পর যেদিন ফলাফল এসেছে, তার আগের দিন সন্ধ্যায় একদিন একটি চায়ের দোকানে এলাকার ৫/৬ জন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। মুহাম্মদ কোনো এক দরকারে ঐ দোকানে গিয়ে যখন আনোয়ার ভুঁইয়াকে এই অবস্থায় দেখলো, তখন বললো, কাকা, আপনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে এসে এখন দোকানে বসে চা খাচ্ছেন, ধূমপান করছেন। এটা কি ঠিক হচ্ছে? আনোয়ার ভুঁইয়া উত্তর দিলেন, আরে আমি তো নমুনা দিয়ে এসেছি এমনি এমনি। মনে হালকা একটা সন্দেহ ছিল বলে। আমার কি করোনা আছে?
    কিন্তু শেষে দেখা গেলো তিনি করোনায় পজিটিভ!

    একটু বিশ্লেষন করা যাক
    মুহাম্মদদের পরিবারে যদি সবার আগে ইব্রাহিম জ্বরে আক্রান্ত হতো, পরে অন্যরা আক্রান্ত হতো, তাহলে ওদের পরিবারের সবার মনে মহা আতঙ্ক বিরাজ করতো। সবাই ভেবে নিতো কোনো করোনায় আক্রান্ত রোগীর সাথে সাক্ষাতের কারণে সে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, এমনকি তার কাছ থেকে ঘরের অন্যদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। আর যদি ফারুক প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হবার পর ঘরের অন্যরা জ্বরে আক্রান্ত হতো, তখনও সবাই ভেবে নিতো, এটা জ্বর নয়, বরং করোনা। ফারুক ঢাকা থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এসেছে এবং তার কাছ থেকে ঘরের অন্যরা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এই দুইটার কোনোটাই হয়নি।

    কিছু প্রশ্ন
    (এক) আনোয়ার ভুঁইয়া এবং মান্দারী এলাকার আরো ৭/৮ জন লোক শরীরে জ্বর থাকার সময় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসার পর ফলাফল পজিটিভ আসার আগেই সুস্থ হয়ে যাবার ঘটনা কি এই দিকে ইঙ্গিত দেয় না, করোনা পরীক্ষার প্রচলিত নিয়মে করোনায় আক্রান্ত হয়নি, এমন লোকও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়? 
    (দুই) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থেকে কারো শরীরে রোগ না ছড়ানোর জন্য তিন ফুট দূরত্বে থাকার কথা বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হবার পরও কামাল ভুঁইয়া এবং মামুন এরা একই মোটরসাইকেলে একসাথে করোনা পরীক্ষার জন্য যাবার পরও কেন মামুন থেকে কামাল করোনায় আক্রান্ত হলো না? শুধু হ্যান্ডশেক নয়, করোনায় আক্রান্ত কারো সাথে কোলাকুলি করলেও করোনায় আক্রান্ত হবার বিশ্বাসে কি এরকম ঘটনাগুলো ফাটল ধরায় না?
    (তিন) আনোয়ার ভুঁইয়া এবং আহমদ সরকার করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়ে লকডাউনে অন্তরীন হবার আগে যাদের সংস্পর্শে গেছেন, তাদের কেউ করোনায় আক্রান্ত না হওয়াটা কি করোনা ছোঁয়াচে না হবার পক্ষে জাজ্বল্যমান উদাহরণ নয়?
    (চার) আমার বড় মামার পরিবারে পাঁচ জন লোক সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে কোনো ব্যাকরণ না মেনে। তাঁদের কারোই করোনা হয়নি। যদি তাদের কোনো একজনের করোনা পরীক্ষা করার পর সে পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হতো, তাহলে অন্যরাও ভেবে নিতো তারাও করোনায় আক্রান্ত। হয়তো তাদের সবার করোনা পরীক্ষা করার পর তারাও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হতো আনোয়ার ভুঁইয়া এবং মান্দারী এলাকার আরো ৭/৮ জন লোকের মতো। শুধু অতি উৎসাহী হয়ে টেস্ট করতে চলে যায়নি বলেই হয়তো তাদের সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যাটি করোনায় পরিণত হয়নি। কিন্তু দেশে দেশে, বিশেষ করে যে দেশগুলোতে করোনার 'মূল কারণ' হানা দেয়নি, সেসব দেশে এরকম একই পরিবারের একাধিক লোকের সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত হবার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেসব ঘটনায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার পর কেউই করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়নি, এমন নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবে?
    মুুহাম্মদদের এলাকায় যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাদের কেউই করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগীর সংশ্রবে যায়নি। যেভাবে বিশ্বের অনেক অনেক দেশে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেভাবেই ছোঁয়াচে হবার কোনো নামগন্ধ ছাড়াই এরাও উড়ে আসা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত কোনো দেশে যাওয়া ছাড়াই, এমনকি করোনায় আক্রান্ত কারো সাথে কোনো সম্পর্ক ছাড়াই এভাবে দেশে দেশে অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এই ঘটনাগুলো পরীক্ষার ভুল হিসেবে ধরে নেয়াটা ভুল হবে কেন?

    এমনও হতে পারে, আমার মামার মতো এমন কোনো লোক, যার শরীরে অন্তর্নিহিত রোগ (আগে থেকেই বিদ্যমান কোনো রোগ, যেমন: হৃদরোগ, যক্ষা, ডায়াবেটিস, টাইপয়েড ইত্যাদি) আছে, সে জ্বরে আক্রান্ত হবার পর পরই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসার পর তার জ্বর না যেতেই ফলাফল এলো করোনা পজিটিভ। এরপর তাকে লকডাউনে বা আইসোলেশনে নিক্ষেপ করে এন্টিবায়োটিক বাদ দিয়ে (যেহেতু করোনার কোনো চিকিৎসা নেই এবং করোনায় এন্টিবায়োটিকও কার্যকর নয়) সাদামাটাভাবে চিকিৎসা করা হয়, সে শুশ্রূষাহীনতা, মৃত্যু-আতঙ্ক, জ্বরের তীব্রতা, অন্তর্নিহিত রোগের তীব্রতা এবং হতাশা এগুলোর যে কোনো এক বা একাধিক কারণে মারা যেতে পারে। হয়তো পরীক্ষার ভুলেই সে করোনা পজিটিভ হয়েছে। কিন্তু মারা গেছে পরিস্থিতির শিকার হয়ে অন্য কারণে। কেউ বুঝতে বা জানতে পারলো না। সবাই ধরে নিলো করোনাতেই মারা গেছে। এরকম অসংখ্য ঘটনা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘটে থাকতে পারে। এই ঘটনাগুলো কি করোনাভাইরাসে মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ নয়?
    দেশে দেশে আমার মামার পরিবারের মতো অসংখ্য পরিবারে একই সাথে বা কাছাকাছি সময়ে কয়েকজন লোকের শরীরে হানা দেয়া ইনফু¬য়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এরকম সর্দি-জ্বর জাতীয় সমস্যাগুলো পরীক্ষার ভুলে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়নি, এমন কোনো নিশ্চয়তা কি দেয়া যাবে? এরকম ঘটনায় কয়েকজনের মধ্যে দু'একজন মারা যাবারা ঘটনাও ঘটেছে। সেই মৃত্যুগুলোকে 'করোনায় মৃত্যুর তালিকা'য় অন্তর্ভক্ত করা কি ঠিক হবে? হবে না।

    'আরেকটি প্রশ্নের উত্তর' শিরোনাম দিয়ে এই পরিচ্ছেদ শুরু করা হয়েছে। প্রশ্নটি কী, তা কি এখনো কারো বুঝার বাকি আছে? হ্যাঁ, প্রশ্নটি হলো, 'করোনা যদি ছোঁয়াচে না হয়, তাহলে একই পরিবারের একাধিক সদস্য কেন কখনো কখনো করোনায় আক্রান্ত হয়?'
    এখানে ঐসব দেশের প্রেক্ষাপট থেকে উত্তরটি দেয়া হয়েছে, যেসব দেশে করোনার 'মূল কারণ' ঘটেনি। মূল কারণে যেসব দেশে করোনার উপদ্রব দেখা দিয়েছে, সেসব দেশে একই পরিবারের যতজন মানুষ নির্দিষ্ট 'বিষাক্ত বাতাস' এর আওতায় আসার ফলে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ওই বাতাস গ্রহণ করেছে, তারা সবাই করোনা 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হয়েছে। একজনের করোনা আরেকজনের শরীরে ছড়ানোর প্রয়োজন হয়নি। বুঝে নেয়া সহজ। আর এই নিবন্ধে আগেই বুঝিয়ে বলা হয়েছে, একজনের শরীর থেকে কোনো রোগ আরেকজনের শরীরে শূন্যে লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে পারে না। কোনো এলাকার বাতাস বা পানি ইত্যাদি কোনো কারণে দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে গেলে ঐ বাতাস বা পানি যে বা যারা গ্রহণ করবে, সে বা তারা কোনো রোগে আক্রান্ত হবে। যারা গ্রহণ করবে না, তারা শুধু 'ঐ রোগে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে যাওয়া'র কারণে ঐ রোগে আক্রান্ত হতে পারে না। যেহেতু কোনো রোগ উড়তে বা লাফাতে পারে না। রোগ মানুষের অন্ত্রে মিশে থাকে। শুধু রক্তদুষ্টিজনিত রোগগুলো রক্তের মাধ্যমে এক শরীর থেকে আরেক শরীরে প্রবাহিত হতে পারে। আর ভাইরাস? ভাইরাস কিভাবে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে রোগ ছড়ায়, তা বিজ্ঞান কোনোভাবে রেকর্ড করে দেখাতে পারবে না। অনেকগুলো নিরীক্ষার কথা এই নিবন্ধে এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এবার একটি চ্যালেঞ্জ। যে রোগগুলোকে বায়ুবাহিত বা ছোঁয়াচে মনে করা হয়, সেই রোগগুলোতে আক্রান্ত ১০ জন রোগীর সাথে ১০ জন সুস্থ রোগী হ্যান্ডশেক করলে ১৪ দিন নয়,  ২৪ দিন পরও সুস্থ ১০ জন লোক সবাই ঐ রোগে আক্রান্ত হবে না। দু'একজন 'হতে পারে', নিশ্চিত নয়, না হবার সম্ভাবনাই বেশি। তবু 'হতে পারে' বলা হয়েছে কেন? অসুস্থদের সাথে হ্যান্ডশেক না করলেও এরা আক্রান্ত হতো ঐ কারণে যে কারণে অসুস্থ লোকগুলো ঐ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু এই চ্যালেঞ্জ সমাজ থেকে চিরতরে দূর করতে পারে 'ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু মানুষের শরীরে রোগ ছড়ানো'র শত বছর ধরে প্রচলিত ধারণা/বিশ্বাস।
    যে প্রশ্নের উত্তরের জন্য এই পরিচ্ছেদ, সেই প্রশ্ন করার আগে যেসব পরিবারে একাধিক লোক করোনায় আক্রান্ত, সেসব পরিবারের দিকে লক্ষ্য করার পাশাপাশি ঐসব পরিবারের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত ছিল, যেসব পরিবারে সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়নি; যেমন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কোনো পরিবারে মাত্র একজন আক্রান্ত হয়েছে, বাকি চার জন আক্রান্ত হয়নি বা চার জন আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু একজন আক্রান্ত হয়নি। এরকম ঘটনা বেশি খুঁজে পাবেন। আমার মামার পরিবারে করোনা হানা না দেয়া সত্ত্বেও সর্দি-জ্বরেও কিন্তু সবাই আক্রান্ত হয়নি। মুহাম্মদের স্ত্রী এবং আমার মামি বাকি ছিল! খুব কম পরিবার পাবেন, যেখানে পরিবারের এ-টু জেড সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। একই পরিবারের একাধিক মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলো এই দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা উচিত, ওই পরিবারের কেউ করোনার হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে কিনা! একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে অকারণে নিজেকে অস্থিরতায় ফেলবেন না!

    নিবন্ধটির মূল আলোচ্য বিষয়ে যাবার আগে আরো কয়েকটা বিষয়ে আলোচনা করে নেয়া হোক: 
    আগে আমরা কিছু উদাহরণ দেখি যেগুলো দেখলে মনে হবে, করোনাভাইরাস সত্যিই ছোঁয়াচে নয়।

    করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে না হবার পক্ষে কিছু উদাহরণ
    করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে নয়, এই কথার পক্ষে এর আগেও অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমতঃ এমন অনেক ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে, চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্য কোনো দেশে গিয়েও সেখানে তার কাছ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি বা চীন ফেরত লোকেরা সেই দেশের 'পেশেন্ট জিরো'তে পরিণত হয়নি। দ্বিতীয়তঃ চীন ছাড়া অন্য অনেক দেশে অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে স্থানীয়ভাবে; চীন বা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আছে, এমন কোনো দেশে ভ্রমণের ইতিহাস ছাড়া এবং নিজের দেশে অন্য দেশ থেকে আগত কোনো করোনাভাইরাসের রোগীর সাথে কোনোরকম সম্পর্ক ছাড়া।
    বাকি আছে শুধু এমন উদাহরণ, যেখানে দেখা যাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সংস্পর্শের পরও মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। এরকম উদাহরণ খুঁজে নেয়াটা বেশ কষ্টকর। কারণ করোনাভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ হিসেবে ভয়ানকভাবে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে গিয়ে নতুন কেউ করোনায় আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোর দিকেই নজর ছিল সবার, কিন্তু করোনায় আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে গিয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়নি, এরকম অসংখ্য ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত হবার পরও ঘটনাগুলোকে মাথায় প্রোথিত বিশ্বাসের (করোনা একটি ছোঁয়াচে রোগ) সাথে সাংঘর্ষিক দেখার পর এর পক্ষে কোনো ব্যাখ্যা না পেয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে ভেবে প্রকাশ করা হয়নি। সবকিছুর পরও দু'একটা সত্য প্রকাশিত হয়েই যায়। দেখা যাক অল্প কিছু উদাহরণ:

    (এক) 'South Korea reports 10th COVID-19 death, 144 new cases' শিরোনামে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার ওয়েবসাইটে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'The Korea Centers for Disease Control and Prevention (KCDC) confirmed 144 new infections, taking the tally to 977, the largest national total anywhere outside China, where the virus first emerged.
    More than 80 per cent of the infections have been in South Korea's fourth-largest city Daegu and neighbouring North Gyeongsang province. ...
    The leader of the main opposition United Future party Hwang Kyo-ahn had to be tested along with other senior party officials as they had come into contact with the patient, but all tested negative.' [https://www.channelnewsasia.com/news/asia/south-korea-covid-19-deaths-virus-feb-25-12467816]

    (দুই) 'সিঙ্গাপুরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১৯ জনের মধ্যে ১০ জনই বাংলাদেশি' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুই বাংলাদেশি এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। এদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। প্রথম যিনি শনাক্ত হয়েছিলেন, দ্বিতীয় শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি তার সংস্পর্শেই ছিলেন। এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
    তিনি জানান, এই দুই রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন এমন ১৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে সিঙ্গাপুর সরকার। এর মধ্যে ১০ জনই বাংলাদেশি।
    বুধবার করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি নতুন এ তথ্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর।
    সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত দুজনের বিষয়ে আরও বলেন, তারা দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে একজন আইসিইউতে রয়েছেন, আরেকজন সাধারণভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিঙ্গাপুর সরকার তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে আমাদের দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আর দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
    তবে এই দুই রোগীর সংস্পর্শে আসা ১৯ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্যই কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি। তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।' [https://www.jugantor.com/national/277971]

    (তিন) 'করোনা পজিটিভ স্বামীর সেবা করেও স্ত্রীর নেগেটিভ!' শিরোনামে দৈনিক কালের কন্ঠে ৮ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস পজিটিভ নিয়ে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি রংপুরের সেই শ্রমজীবী ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পরও তাঁর স্ত্রীর শরীরে করোনার উপস্থিতি মেলেনি। ওই ব্যক্তির সঙ্গে হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছিলেন স্ত্রী। কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই স্বামীর সেবাও করেছেন তিনি। এর পরও পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসার ঘটনাটিকে মিরাকল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।' [https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2020/04/08/896107]

    (চার) 'করোনাভাইরাস: সংক্রমণ রোধে যেভাবে কাজ করেছেন সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দারা' শিরোনামে ২১ মার্চ ২০২০ বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রথমদিকে যে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, সিঙ্গাপুর তার মধ্যে একটি। সেখানে গোয়েন্দারা সম্ভাব্য ভাইরাস সংক্রমণের শিকার ব্যক্তি শনাক্ত করার চেষ্টা করছে যেন ভাইরাসের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন তারা।
    তারা কীভাবে এই কাজ করছেন? বিশ্বের বাকি জায়গাগুলো কী এই ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দেরি করে ফেলেছে?
    জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চীনের গুয়াংশি শহর থেকে ২০ জন পর্যটকের একটি দল চীনা নববর্ষ উদযাপনের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করে। দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কয়েকটি জায়গা ভ্রমণ করে তারা।
    তারা চীনা প্রথাগত একটি ওষুধের দোকানও ভ্রমণ করেছিলেন যেখানে কুমিরের তেল ও বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ বিক্রি করা হয়। চীনের মূল ভূখন্ডের পর্যটকদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় দোকান।
    একজন বিক্রয়কর্মী ঐ দলটিকে তাদের দোকানের জিনিসপত্র দেখান। এমনকি তাদের হাতে ঔষধি তেলও মালিশ করে দেন।
    ঐ চীনা দলটি তাদের ভ্রমণ শেষ করে চীনে ফেরত যায়, তবে ফেলে রেখে যায় অদৃশ্য কিছু জিনিস। ...
    ঐ সময়ে সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিল ১৮ জনের মধ্যে, যেগুলোর সবগুলোই চীনের মূল ভূখন্ড থেকে আসা মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ সিঙ্গাপুরের সরকার জানায় যে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভাইরাস ছড়িয়েছে, যার প্রথম গুচ্ছটি ইয়ং থাই হ্যাং চাইনিজ ঔষধের দোকানে ছিল। প্রথম দুইজন অসুস্থ হওয়া ব্যক্তি ছিলেন স্থানীয় একজন ট্যুর গাইড ও একজন বিক্রয়কর্মী।
    ঐ একটি দোকান থেকে নয় জন সংক্রমিত হয়, যার মধ্যে বিক্রয়কর্মীর স্বামী, তার ছয় মাস বয়সী সন্তান এবং তাদের ইন্দোনেশিয়ান গৃহকর্মী ছিলেন। ঐ দোকানের আরো দু'জন কর্মীর মধ্যেও ভাইরাস ছড়ায়।
    তাদের সবাই এখন সুস্থ আছেন। তবে পরিস্থিতি আরো অনেক ভয়াবহ হতে পারতো যদি সিঙ্গাপুরের কার্যকর কন্টাক্ট ট্রেসিং বা সংস্পর্শের ইতিহাস নির্ণয় করার পদ্ধতি না থাকতো। ভাইরাসটি একজন থেকে কীভাবে আরেকজনের মধ্যে সংক্রমিত হয় তা নির্ণয় করা, ঐ ব্যক্তিদের শনাক্ত করা, তাদের এবং ভাইরাস ছড়ানোর আগে তাদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে কার্যকর ভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয় এই পদ্ধতিতে।
    মাউন্ট এলিজাবেথ নভেনা হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এভং সিঙ্গাপুর সরকারের উপদেষ্টা লেয়ং হো নাম মন্তব্য করেন, "আমাদের অবস্থা উহানের মত হয়ে যেত। হাসপাতালগুলো উপচে পড়তো।"

    ১৬ই মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৪৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে যার মধ্যে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। সংক্রমিতদের প্রায় ৪০% মানুষের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যাওয়ার আগেই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয় পরীক্ষা করতে এবং নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে।
    ১৬ই মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে মোট ৪ হাজার মানুষ ভাইরাস আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছিল বলে নিশ্চিত করা গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের তদন্ত এবং পুরনো ধাঁচের গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মানুষগুলোকে শনাক্ত করা গেছে, অনেক সময়ই যার শুরু হয়েছে একটি টেলিফোনের মাধ্যমে। ...

    ধাঁধাঁর উত্তরের খোঁজে গোয়েন্দারা
    সিঙ্গাপুরের যেই কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হয়, তার একটি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। ঐ হাসপাতালের যে তিনজন কন্টাক্ট ট্রেসিং করেন বা ভাইরাস সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসতে পারেন এমন মানুষদের খুঁজে বের করেন, কনসেসাও এডউইন ফিলিপ তাদের মধ্যে একজন।
    হাসপাতালে আসা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন এবং কোথায় কোথায় গিয়েছেন, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে তার দল। তিনি জানান, "আমরা যখন পরীক্ষার পর কাউকে পজিটিভ পাই তখন সব কাজ বাদ দিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত তার সাথে কথা বলি। পরেরদিন সকালে আবারো সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়।"
    ঐ তথ্য তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে, এরপর পদক্ষেপ নেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
    এডউইন ফিলিপ বলেন, "প্রথম তথ্যটি ছাড়া বাকিগুলোর যোগসূত্র মেলানো সম্ভব না। এটি অনেকটা ধাঁধাঁর মত, সবগুলো টুকরো আপনাকে মেলাতে হবে।"
    ঐ কাজের জন্য নিয়োজিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব দল কাজ করে, সেরকম একটি দলের নেতৃত্ব দেন জুবাইদা সাইদ। তথ্য একত্রিত করার ক্ষেত্রে অনেকসময়ই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তার দল। অনেক সময়ই আক্রান্তরা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত শারীরিক অবস্থায় থাকেন না যা তাদের কাজকে আরো কঠিন করে তোলে।
    তখন শুরু হয় তৃতীয় ধাপের কাজ। এ ধরণের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সহায়তাও নেয় সিঙ্গাপুর। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার লিয়াম ঘিম হুয়া ইমেইল করে বিবিসিকে জানান, "তথ্য আদান প্রদানের জন্য পুলিশ ও মন্ত্রণালয় নিয়মিত টেলি-কনফারেন্স করে।"
    "গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন অফিসার প্রতিদিন কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য নিয়োজিত থাকেন। কোনো কোনো দিন এই দায়িত্বে ১০০ জন অফিসারও থাকেন।" পুলিশ তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশিই এই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ করে থাকে। সিঙ্গাপুরের অপরাধের হার কম থাকার কারণে একসাথে দুই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ বিভাগ। এই কাজে তদন্ত বিভাগ কখনো কখনো মাদক বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগেরও সহায়তা নিয়ে থাকে। সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্য চিত্রায়ন এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অচেনা কন্টাক্টদের শনাক্ত করা হয়।

    এই পদ্ধতির কার্যকারিতা জুলির ঘটনা দিয়েই বোঝা যায়। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে হাসপাতালে যান তিনি। জুলি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন, এই তথ্য চিকিৎসকরা তাকে জানানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই কর্মকর্তারা কাজ করা শুরু করে দেয় কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের। "হাসপাতালের বিছানায় থাকার সময়ই আমি প্রথম ফোনটি পাই", বলেন জুলি। এরপর শুরু হয় আগের সাতদিন তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন এবং কার কার সংস্পর্শে এসেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন।

    "আমি কার সাথে ছিলাম, কী করছিলাম সেগুলো সহ যাদের সাথে ছিলাম তাদের সাথে যোগাযোগের পন্থাও তারা জানতে চায় আমার কাছে।" কর্মকর্তারা বিশেষ করে জানতে চাইতেন ২ মিটার দূরত্বে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে কার কার সাথে তিনি সময় যাপন করেছেন। "কারো সাথে যদি আমার ধাক্কা লেগে যায় সেবিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। যাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় পার করেছি, তাদের বিষয়ে জানতে চাইছিল তারা।"

    জুলি কন্টাক্ট ট্রেস করা কর্মকর্তার সাথে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে কথা বলেন। ফোন রাখার পর দেখা যায় তিনি ৫০ জনকে শনাক্ত করেছেন যাদের সবার সাথে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রত্যেককে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের আদেশ দেয়া হয়। ঐ ৫০ জনের একজনের মধ্যেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেনি।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51977095]

    এই প্রতিবেদনে বলা হয়, '১৬ই মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে মোট ৪ হাজার মানুষ ভাইরাস আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছিল বলে নিশ্চিত করা গেছে।' ওই ৪ হাজার মানুষের খোঁজ নিলে এখন দেখা যাবে, এদের ১০০ জনও পরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।

    (পাঁচ) 'জাপানের করোনা মোকাবিলার সফল মডেল 'টিটিটি'' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ডেইলী স্টার বাংলায় ১৬ মে ২০২০ তারিখে, লিখেন ড. আশির আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সেখানে উল্লেখ করা হয়, 'গত ১৪ মে জাপানের ৪৭টি অঞ্চলের (জেলা) মধ্যে ৩৯টি থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। বাকি আটটির জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারলে এই শহরগুলোও জরুরি অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। যে বেগে করোনা উধাও হচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২১ মে'র মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ধাপে ধাপে শুরু করতে পারবে জাপান। ...

    আমাদের ফুকুওকা শহরে প্রথম যিনি করোনা আক্রান্ত হন, তার হিস্ট্রি থেকে জানা গেল, তিনি কখনো বিদেশে যাননি। এমনকি এরমধ্যে টোকিওতেও যাননি। চিন্তার বিষয়। তার করোনা এলো কোথা থেকে? নিশ্চয়ই আরও আক্রান্ত আছে অথবা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে। একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ জানালেন, একজন শনাক্ত হওয়া মানে হলো— সে ইতোমধ্যে আরও ৫০ জনকে সংক্রমিত করতে করতে হাসপাতালে এসেছে। তাই টেস্ট সংখ্যা বাড়ানো উচিত। তবে, উপসর্গ দেখা গেলে তারপর টেস্ট। ...
    আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনের করোনা শনাক্ত হলো ১৭ মার্চ। কোনোরকম গুজব ছড়ানোর আগে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রেস রিলিজ দিলেন। প্রেস রিলিজের ভাষা খুব সহজ। রোগীর ব্যক্তিগত কোনো তথ্য যেন প্রকাশ না পায়, তার ওপর আলাদা গুরুত্ব দিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন একজন মুখপাত্র। জ্বী, একজন। যাতে সংবাদে কোনো ধরনের ভুল অথবা অসামঞ্জস্য না থাকে।
    আক্রান্ত ব্যক্তি একজন বিদেশি ছাত্রী। নাম বলা নেই। দেশের নাম বলা নেই। মেয়েটি একটি স্টাডি ট্যুরে ইউরোপে গিয়েছিলেন। সঙ্গে দুই জন শিক্ষক ও তিন জন সহপাঠী ছিলেন। প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ৩০'র ঘরে, বিদেশি, ছাত্রী। ৩ মার্চ ইউরোপে স্টাডি ট্যুরে গিয়ে ৯ মার্চ ফুকুওকাতে ফিরে আসে। ১০ মার্চ জ্বর-জ্বর ভাব। ১৬ মার্চ পিসিআর টেস্ট। ১৭ মার্চ ফলাফলে করোনা পজিটিভ।

    টেস্টের পর শুরু হল ট্রেস। সহযাত্রী সবার সঙ্গে যোযাযোগ করা হলো। একজন দেশের বাইরে। বাকি সবাইকে বাসা থেকে বের না হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
    বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সদর দপ্তর (এখানে লক্ষ্য করুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অলরেডি নির্বাচন কমিশনের মতো সদর দফতর তৈরি করা হয়েছে) ফুকুওকা সিটি অফিসের সঙ্গে কাজ করবে। এই রোগ যেন আর সংক্রমিত না হতে পারে, তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
    মেয়েটি যে প্রোগ্রামে ইউরোপে গিয়েছিল, সেই প্রোগ্রামের ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমি কিছুটা জড়িত। ১৭ মার্চ রাত দেড়টা পর্যন্ত মেইল চালাচালি হলো। ১৮ মার্চ সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে পরবর্তী স্টেপগুলো নির্ধারিত হলো। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী স্টেপগুলো নিয়ে নির্দেশনামা পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এই হলো ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে জাপানি কাজের স্পিড।

    কীভাবে এই স্পিড আর নিখুঁত সিদ্ধান্ত সম্ভব?
    সোজা। 'ভূমিকম্প' আসলে কী করতে হবে, মহামারি আসলে কী করতে হবে, এসব গাইডলাইন আগেই তৈরি করা আছে। কনসেপ্ট টেস্টিং অ্যান্ড প্রুফ করা। 'আগে আসুক তারপর দেখা যাবে', এমন রীতি ৭০ বছর আগেই জাপান বিদায় করেছে।
    সংক্রামক ব্যাধি তো এটা প্রথম নয়। করোনাও প্রথম নয়। সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম), মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) সবই তো করোনা। তবে, এবারের নভেল করোনার স্পিড আলাদা।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বিভাগ আছে, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট। তাদের ওয়েবসাইটে করোনা নিয়ে শিক্ষার্থী ও স্টাফদের নির্দেশাবলী দেওয়া আছে। 'কী ঘটলে কী করতে হবে', তা সুন্দর ডায়াগ্রাম দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে একটি হটলাইনে ফোন করতে হবে। হটলাইন ২৪ ঘণ্টা খোলা। ১৮টি ভাষায় কথা বলা যাবে। কারণ, এখানে বিদেশিরাও থাকেন, যারা জাপানি বলতে পারেন না। তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। এটা ফুকুওকা সিটি অফিস মেইন্টেইন করে। জাপানের ৪৭টি জেলার মোটামুটি সব জেলাতেই হটলাইনের ব্যবস্থা করা।
    রোগীর সহযাত্রীদের নিয়ে পিসিআর টেস্ট করতে গেলাম। জাপানে সবাই পিসিআর টেস্ট করার জন্য যোগ্য নন। রোগীর সহযাত্রী টেস্টের যোগ্য। তার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলাম ১৮ মার্চ বিকালে।
    হাসপাতালে গেলাম গাড়ি নিয়ে। আমাদের গাড়িতে অপেক্ষা করতে বলা হলো। দুই জন নার্স এলেন। ফকফকে সাদা পোশাক পরা। আমি ভেবেছিলাম হয়তো মহাকাশযাত্রীদের মতো ড্রেস পরে আসবেন। একেবারেই স্বাভাবিক ড্রেস। শুধু মুখমন্ডল একটা স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। অনেকটা বিয়ের পাগড়ি যে ধরনের বাক্সের মধ্যে থাকে, তার শুধু প্লাস্টিক অংশটার মতো। আমার মনে হয় রোগী যেন আতঙ্কিত না হয়, এর জন্য তারা সাধারণ, কিন্তু সুরক্ষিত পোশাক ব্যবহার করছেন।
    ভেতরে গেলাম। সাধারণ একটি রুম। রুমে ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দিলেন।
    একটা লম্বা কটনবাডের মতো নল নাকে ঢুকিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলেন। তিন মিনিটের কাজ। পরদিন বেলা ২টায় ফলাফল এলো। সহযাত্রী সবাই নেগেটিভ। তবে, দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ...' [https://www.thedailystar.net/bangla/150730]

    (ছয়) 'ব্রিটেনে করোনায় বাংলাদেশীর মৃত্যু' শিরোনাম দৈনিক নয়াদিগন্তে ১০ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ব্রিটেনে রোববার যে তৃতীয় ব্যক্তি করোনাভাইরাসে মারা গেছেন, তিনি ব্রিটিশ-বাংলাদেশী। সংক্রমণ ধরা পড়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ম্যানচেস্টারের এক হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার ছেলে বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে বর্ণনা করেছেন কিভাবে ইতালিতে বেড়াতে গিয়ে তার বাবা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেনঃ
    "প্রতি বছরের শুরুতে আমার বাবা ইতালিতে বেড়াতে যান দুই-তিন সপ্তাহের জন্য। এটা তার একটা প্রিয় বেড়ানোর জায়গা। কারণ বহু বছর তিনি ইতালিতে ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইতালি আসেন। তখন তিনি বয়সে তরুণ।
    উত্তর ইতালির যে শহরে আমরা থাকতাম সেটা মিলান থেকে ৫০ মাইল দূরে। সেখান থেকে সুইটজারল্যান্ডের সীমান্তও বেশি দূরে নয়। বহু বছর আমরা সেখানে ছিলাম। আমার জন্ম সেখানেই। বড় হয়েছি সেখানে।
    পাঁচ-ছয় বছর আগে আমরা পাকাপাকিভাবে ব্রিটেনে চলে আসি। আমরা থাকি ম্যানচেস্টারের কাছে। কিন্তু আমার বাবা ইতালিতে বেড়াতে যেতে পছন্দ করতেন। আমরাও প্রতি বছর গ্রীষ্মে পরিবারের সবাই মিলে সেখানে বেড়াতে যেতাম। তবে বাবা প্রতি বছরের শুরুতে নিয়ম করে বেড়াতে যেতেন ইতালিতে তার পুরোনো শহরে । এ বছরও গিয়েছিলেন।

    ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি সেখানে যান। তখনও ইটালিতে করোনাভাইরাস এত ব্যাপকভাবে ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। কিন্তু তিনি যে দুই সপ্তাহ ইতালিতে ছিলেন, তার মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। ব্যাপকভাবে সেখানে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
    ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ বাবা ফিরে আসলেন ইতালি থেকে। তখনও তিনি সুস্থ। কিন্তু তিন দিন পর সব যেন ওলট-পালট হয়ে গেল।
    মার্চের তিন তারিখ, মঙ্গলবার। সেই মঙ্গলবারটা ছিল আর যেকোনো দিনের মতোই। আমাদের বাড়ির কাছে যে হেলথ সেন্টার, বাবা সেখানে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।
    বাবার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার নানা ধরনের অসুস্থতা ছিল, যা নিয়ে তিনি বেশ ভুগছিলেন। কোলেস্টরেল, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট। তবে এসবের পরও তিনি মোটামুটি ভালোই ছিলেন। তিনি এক শ' ভাগ সুস্থ ছিলেন, এটা বলা যাবে না, কিন্তু মোটামুটি ভালো ছিলেন।
    করোনা ভাইরাস নিয়ে যেহেতু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই আমি কিছু মাস্ক কিনেছিলাম। আমি আমার মা-বাবাকে বললাম, বাইরে যাওয়ার সময় যেন তারা মাস্ক পরে বের হন।
    গত মঙ্গলবার বাড়ির কাছের হেলথ সেন্টারে যখন বাবা গেলেন, তখন ডাক্তার ও নার্সরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। তিনি বললেন, মাত্র দুদিন আগে তিনি ইতালি থেকে এসেছেন।

    সাথে সাথে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। তাকে আলাদা করে ফেলা হলো। নর্থ ম্যানচেষ্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটা জরুরি দল চলে এলো। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
    তার সঙ্গে আমাদের সেদিনই শেষ দেখা। আমরা বুঝতে পারিনি যে আর কোনো দিন তার সঙ্গে আর দেখা হবে না।
    হাসপাতালে প্রথম কয়েক দিন তিনি বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু তারপর ডাক্তাররা বলছিলেন, তার রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছে না। তার হার্টবিট অনিয়মিত। এভাবেই চলছিল কয়েকদিন। তারপর রোববার তিনি মারা গেলেন।
    এদিকে বাড়িতে আমাদেরও রীতিমত আলাদা করে রাখা হয়েছিল। আমরা ঘর থেকে বেরুতে পারছিলাম না। কোথাও যেতে পারছিলাম না। বাবার খবরাখবর আমরা পেতাম টেলিফোনে।
    যে ওয়ার্ডে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে আমরা ফোন করতাম। সেখান থেকেই আমরা খবর পেতাম। আমরা তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারতাম না।
    রোববার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন এলো আমাদের কাছে। তারা বললো, আধ ঘন্টা আগে বাবা মারা গেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খবরটা শুনে ধাতস্থ হতে আমার কয়েক ঘন্টা সময় লেগেছিল। আমার বাবাকে আমি আর কোনদিন দেখতে পাবো না!
    এরকম একটা খবর যখন আপনি পান, সেটা বুঝতেই আপনার অনেক সময় লেগে যায়। আমি ছিলাম শোকাহত। আমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল।
    বাবার মৃত্যুর খবর পেলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না, কোথাও যেতে পারছি না। কারণ আমাদের সবাইকে 'আইসোলেশনে' রাখা হয়েছে। প্রতিদিন পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড থেকে আমাদের সবার কাছে টেক্সট আসে। তারা জানতে চায়, আমাদের সব ঠিক আছে কীনা। আমাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন লক্ষণ আছে কীনা। প্রতিদিন আমাদের সেই টেক্সটের জবাব দিতে হয়। এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই।
    আমরা এক সপ্তাহ এই অবস্থায় আছি। আরো এক সপ্তাহ থাকতে হবে।' [https://www.dailynayadiganta.com/uk/486957]

    (সাত) 'চীনের সেই দিনগুলো' শিরোনামে ইউএন নিউজ, বেজিং সূত্রে প্রথম আলোয় ২০ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ''করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এখন কমে এলেও এর সঙ্গে জড়িত মানসিক যাতনার কথা সুস্থ হয়ে ফেরা ব্যক্তিদের মুখে উঠে আসছে। এমনই একজন ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) চীনের অফিসে কর্মরত এক ইন্টার্নি। এই তরুণী বলেছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে কয়েক দিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয়, যা ছিল তাঁর জন্য অত্যন্ত আতঙ্কের কয়েকটি দিন।
    এই তরুণী বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। তাঁকে জানানো হয়, তাঁর এক বন্ধুর কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। ওই বন্ধু কয়েকদিন আগেই তাঁর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। এখন তাঁকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ফোনের পাশ থেকে আসা কন্ঠস্বর জানায়, এই তরুণী ও তাঁর পরিবারকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর্মী না আসা পর্যন্ত তাঁদের বাড়িতেই থাকতে বলা হয়। বাড়িতে এসেই এক স্বাস্থ্যকর্মী এই ইন্টার্নির পুরো বাড়ি জীবাণুমুক্ত করেন। আরও দুজন স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর ও তাঁর মা-বাবার স্বাস্থ্যগত তথ্যাবলী নেন এবং সম্প্রতি ভ্রমণে যাওয়া এলাকাগুলো চিহ্নিত করেন। এর পাশাপাশি এই তরুণীর বন্ধু বাড়িতে আসার পর তাঁরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের তালিকাও করেন।
    পরে হাসপাতালে যাওয়ার পর এই ইন্টার্নির পরিবারের তিনজনেরই সিটি স্ক্যানে কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। প্রথম নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষাতেও তাঁদের সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। এরপর তাঁর মা-বাবাকে বাড়ি যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু এই তরুণীর সামান্য জ্বর থাকায় তাঁকে হাসপাতালেই রেখে দেওয়া হয়। ওই সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে এই তরুণী বলেন, 'আমি যদি বলি, তখন আমি আতঙ্কগ্রস্ত হইনি, তা হবে মিথ্যা। তখন আমি প্রচুর পানি খেয়েছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। চিকিৎসক আমার নমুনা নেন ও আরেকবার আমার ফুসফুসের পরীক্ষা করেন। দুটি পরীক্ষার ফলই ভালো এসেছিল। কিন্তু আমার জ্বর তিন দিন ছিল। তখন আমার মনে হচ্ছিল, জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছি আমি। তখন আমি এই ভাইরাসে মৃত্যুহারজনিত খবরগুলো এড়িয়ে চলছিলাম।'
    এত কিছুর পরও ভালো কিছুও যে সে সময়ে হয়েছিল, সে কথা বলতে গিয়ে এই তরুনী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বাবা তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাংক কার্ড ও পরিবারের বীমার কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়েছিলেন, যদিও এর কিছুই ব্যবহার করতে হয়নি। কারণ, সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মাস্ক এমনকি খাবারও বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করে জানান, সংক্রমিত হলেও সব ব্যয়ভারই রাষ্ট্র বহন করবে।''
    করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সংস্পর্শে এসেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হবার এরকম আরো আরো উদাহরণ থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলোর প্রতি লক্ষ না করে যে উদাহরণগুলো থেকে মনে হয় করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে, সেগুলো ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে, হচ্ছে; বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানোর পেছনে সেগুলোও দায়ী। কিন্তু কিভাবে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটলো, যেগুলো দেখে মনে হয় বা বিশ্বাস হয়, করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে?
    এই প্রশ্নের উত্তর জটিল। যখন প্রমাণিত হলো করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে নয়, তখন যারা প্রথম থেকে একে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করে জটিলতা সৃষ্টি করেছে, তাদের নিকট এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া উচিত। তবু এই নিবন্ধের পক্ষ থেকে একটু চেষ্টা করে দেখা যাক, সত্যিই কেন অনেক ঘটনা দেখে মনে হয়েছে করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে?

    আমরা উহানে যাই। সেখানে অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, একই সাথে কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গুচ্ছ গুচ্ছ ভাবে। এরকম ঘটনা ঘটার পর যখন দেখা গেছে কোনো গুচ্ছ ঘটনায় একজন প্রথমে আক্রান্ত হয়েছে, পরে অন্যরা, তখন সবাই ভাবতে শুরু করলো, প্রথমে আক্রান্ত ঐ লোক থেকেই পরে আক্রান্তরা আক্রান্ত হয়েছে, তাই রোগটি ছোঁয়াচে। কিন্তু এটা ভাবলো না, প্রথমে যে লোক আক্রান্ত হয়েছে, সে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারণে আক্রান্ত হয়েছে। পরে আক্রান্তরাও সেই কারণেই আক্রান্ত হতে পারে। সবাই তো আর সেই কারণে একই সাথে একই দিনে আক্রান্ত হবে না। কেউ আগে, কেউ পরে আক্রান্ত হতেই পারে। কিন্তু মানুষ প্রথমে আক্রান্ত লোকের আক্রান্ত হবার কারণ না খুঁজে বা খুঁজে না পেয়ে পরে আক্রান্তদের কারণ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে যাবার কারণেই এই বিভ্রান্তি। মানুষ সহজে এটা ভেবে নেয়, পরে আক্রান্তরা প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আক্রান্ত হতে পারে, কারণ পৃথিবীতে অনেক অনেক রোগ আছে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত, এই রোগটিও বায়ুবাহিত বা ছোঁয়াচে হতে পারে।

    উহানের মতোই সারাবিশ্বে ছোঁয়াচে হবার মাপকাঠি নির্ণয় করা হয়েছে এরকম ঘটনাগুলোকে। যদি পৃথিবীতে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগের ধারণা প্রতিষ্ঠিত না থাকতো; জীবাণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াকে মানুষ রোগ সৃষ্টি বা ছড়ানোর ক্ষমতা না দিতো, তাহলে উহানের মতো কোনো ঘটনা থেকে মানুষ ছোঁয়াচে হবার ঘ্রাণ খুঁজে পেতো না কোনোভাবে। মানুষ আরো আগেই উহানের ঘটনার রহস্য খুঁজে বের করতে পারতো। মাছের বাজারের সাথে উহানের প্রাদুর্ভাবের সম্পর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ পেতো না কেউ, এমনকি কোনো দুষ্কৃতিকারী অন্য দেশে উহানের পর পরই উহানের মতো একই মহামারী সৃষ্টি করার সুযোগ বা সাহস পেতো না।

    লক্ষণ ছাড়াই কি কেউ করোনা ছড়িয়ে দিতে পারে?
    মূল কথায় যাবার আগে আরেকটা বিষয় আলোচনা করা যাক। লক্ষণ প্রকাশিত হবার আগেই নাকি করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়টা সঠিক কিনা, তা জানার জন্য একটু আগে উল্লেখ করা ব্রিটেনের ঘটনার দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। সেখানে দেখা গেছে, একজন লোক ইতালি বেড়াতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে ফিরে এসেছে। ব্রিটেনে এসে তার শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশের আগে তিন তিনটি দিন নিজের পরিবারের সাথে কাটানোর পরও তার পরিবারের কেউই করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তাহলে কিভাবে এই ধারণা সঠিক হয়?

    'The biggest questions about the new coronavirus and what we know so far' শিরোনামে ওয়াশিংটন পোস্টে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (By Carolyn Y. Johnson and Lena H. Sun) বলা হয়, 'A case report that showed the illness could spread before symptoms occurred turned out to be incorrect, although a top U.S. official has said he still believes it can spread without symptoms, based on discussions with Chinese experts. Figuring out exactly how easily it spreads and who is infectious will be necessary for designing public health measures that are more likely to work.' [https://www.washingtonpost.com/health/2020/02/07/biggest-questions-about-new-coronavirus-what-we-know-so-far/]

    কোনো ভাইরাস নয়, বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া একটি অদৃশ্য বিষ মানুষকে করোনায় আক্রান্ত করছে, এই কথা এখন প্রমাণিত। সেই অদৃশ্য বিষ যার নাক দিয়ে প্রবেশ করে, সে ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগে করোনায় আক্রান্ত হয়। এই বিষ নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করার পরপরই মানুষের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। কয়েকদিন সময় লেগে যায়। একে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে। ১৪ দিনের কাছাকাছি সময়। এজন্য দেখা গেছে, অনেক মানুষ চীনের উহান থেকে অন্য দেশে ফিরে যাবার সময় রোগটিতে আক্রান্ত থাকে না। অন্য দেশে যাবার পর তার শরীরে রোগটি দেখা দেয়। যদি কেউ বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করার পর অন্য দেশে  চলে যায়, যেখানে বিষাক্ত বাতাস নেই, তার শরীরে লক্ষণ প্রকাশ হবার আগে বা পরে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারবে না। কারণ তার সংস্পর্শে আসা কেউ তো বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করেনি। তাছাড়া করোনাভাইরাস ছোঁয়াচেও নয়। কিন্তু যে এলাকার বাতাসের সাথে অদৃশ্য বিষ মিশ্রিত, সে এলাকার হাজার হাজার মানুষ একজনের পর আরেকজন বা একসাথে কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে যখন দেখা যায়, এমন একজন লোকের সাথে আরেকজনের সংস্পর্শ হয়েছে, যে পরে করোনায় শনাক্ত হয়েছে এবং তার সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিও শেষে করোনায় শনাক্ত হয়েছে, তখন মনে হয় প্রথম জন লক্ষণ প্রকাশ পাবার আগেই পরের জনের শরীরে করোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু অদৃশ্য বিষের কথা জানা নেই, তাই পরের জনও যে আগের জনের মতোই অদৃশ্য বিষের সংক্রমণের শিকার, তা না বুঝে মনে করা হয় আগের জনের সাথে সংস্পর্শের কারণে লক্ষণ প্রকাশিত হবার আগেই পরের জন সংক্রমিত হয়েছে।

    তবে ভালো খবর হচ্ছে, এই ধারণাকে ভুল সাব্যস্ত করে 'উপসর্গহীন করোনা ভয়ের কারণ নয়' শিরোনামে ৯ জুন ২০২০ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জার্মানীর ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়, 'লক্ষণহীন করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এ ধরনের রোগীদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা অতি বিরল বলেই মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

    করোনা ভাইরাস কি অ্যাসিম্পটমেটিক বা লক্ষ্যণহীন রোগীর মাধ্যমে ছড়াতে পারে? প্রশ্নটি নতুন নয়। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশে প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দেশগুলিতে লক্ষণহীন রোগীর সংখ্যা বেশি। ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, এ দেশে এখনও পর্যন্ত যা করোনা পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশই লক্ষণহীন রোগী। অর্থাৎ করোনার কোনও উপসর্গ তাদের শরীরে ছিল না। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা মনে করছিলেন, এই লক্ষণহীন রোগীদের মাধ্যমেই গোষ্ঠীর ভিতর করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছে, লক্ষণহীন রোগীর মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অসম্ভব না হলেও বিরল। ফলে এই বিষয়টি নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

    গোটা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৪। মৃত্যু হয়েছে চার লাখ আট হাজার মানুষের। সুস্থ হয়েছেন ৩৫ লাখ। সংখ্যার নিরিখে এখনও সব চেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অ্যামেরিকায়। তারপরেই ব্রাজিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ব্রাজিলকে ঘিরে দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। অন্য দিকে, ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে খুলে গিয়েছে দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস। মানুষ ঘরের বাইরে বেরোতে শুরু করে দিয়েছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখেই সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিটি দেশ এবং জনগণকে সতর্ক করেছে। তাদের বক্তব্য, প্রায় ছয় মাস ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই চলছে। সেই লড়াই একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন একটু অসতর্ক হলে এতদিনের সমস্ত প্রয়াস নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, অতীত নয়, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই তাদের সব চেয়ে বেশ উদ্বেগ। এবং সে কারণেই বার বার তারা সতর্ক করছে।
    দীর্ঘ লকডাউনের পরে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ভারতে। প্রথম দিনেই বোঝা গিয়েছে, সাধারণ মানুষকে ঘরের ভিতর আটকে রাখা যাবে না। কলকাতা, দিল্লিতে বাসে বাঁদুর ঝোলা হয়ে মানুষ কাজে গিয়েছে। ভারতের ভিতর মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। সেখানেও সোমবার বহু মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় নিয়েই চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ। আনলক পর্বে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না তো?

    অনেকেই বলছেন, ভারতে করোনার সর্বোচ্চ সময় এখনও আসেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অনেকের আশঙ্কা, যত লোকের শরীরে করোনা ধরা পড়ছে তার চেয়েও বেশি মানুষের শরীরে করোনার জীবাণু লুকিয়ে আছে। লক্ষণহীন বলে তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আনলক পর্বে তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু সোমবার এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে, যাঁদের শরীরে করোনার লক্ষণ নেই, তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কম। প্রায় নেই বললেই চলে। ...' [https://p.dw.com/p/3dTsC]

    এই নিবন্ধ কেন?
    (এক) সেলফোন ব্যবহার শুরুর পর অধিকাংশ সেলফোনই ব্যবহার করেছি চীনের তৈরি। বর্তমানে ব্যবহৃত ফিচার ফোনটিও চীনেরই তৈরি। এজন্য চীনের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই বছরের জানুয়ারির দিকে যখন পত্রপত্রিকায় চীনে উপদ্রুত করোনাভাইরাসের সংবাদ বেশি বেশি আসতে শুরু করে, তখন আর দশজনের মতোই বিষয়টা একটা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেই ভাবনা এবং ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে আগের ভাবনার যোগফলের সাথে মিলিত হয় চীনে নতুন করে উপদ্রুত করোনাভাইরাসের সাথে উহানের ভাইরোলজি ল্যাবের সম্পর্ক থাকা বা না থাকার ভাবনাটা। ভাবনাগুলোকে একটা সমীকরণে পৌঁছানোর জন্য এই নিবন্ধ। করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, নাকি দরকার নয়, তা স্পষ্ট হওয়াও এই নিবন্ধ তৈরির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। এই নিবন্ধ তৈরির পেছনে লেগে থাকার কারণে করোনাভাইরাস নিয়ে তেমন একটা উদ্বেগ কখনো মনে সৃষ্টি হয়নি। কাছের লোকদেরকেও সাহস দিতে পেরেছি।

    (দুই) চীনের প্রতি কোনো বিদ্বেষ কখনো ছিল না। বিদ্বেষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এসব সাম্রাজ্যবাদী দেশের প্রতি। গত বিশ বছরের ইতিহাসে মানবজাতির তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করেছে যে দেশগুলো, সেগুলোর তালিকায় চীনের নাম নেই। এর আগের বিশ বছরের ইতিহাসেও মানবজাতির উপর যারা হিংস্র থাবা বিস্তার করেছে, সেই দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ দশেও চীনের নাম নেই। বিগত একশত বছরের ইতিহাসে যে যুদ্ধগুলো হয়েছিল, সেগুলোর পেছনে চীনের হাত কম। বিগত কয়েকশত বছরে ব্রিটেন বন্দী করে রেখেছে অসংখ্য দেশের স্বাধীনতা। চীনের সেরকম তৎপরতার ইতিহাস এখনো তেমন নেই।
    পৃথিবীতে মানবজাতির অন্যতম শত্রু মারণাস্ত্র। এই মারণাস্ত্র তৈরি, উৎপাদন এবং বাণিজ্যের জন্য চীন বিখ্যাত নয়। গত ত্রিশ বছরে পৃথিবীতে দেশে দেশে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মানুষের হাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে, সেসব মানুষের ক্ষতি ও প্রাণ হারানোর জন্য চীন বেশ একটা দায়ী নয়। এইসব কারণে চীনকে কখনো বেশ খারাপ দেশের তালিকায় ফেলা যায়নি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক মাসে পৃথিবীতে যে ভয়াবহ বহুমাত্রিক সংকট নেমে এসেছে, সেজন্য চীন কি নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারবে? চীন যে নিজের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী চেতনা লালন করছে, এটা কে না জানে!

    (তিন) চীন এবং অন্য সব অশান্ত দেশকে এখন ভাবতে হবে, (১) 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'। আমি যার জন্য মারণাস্ত্র তৈরি করছি, সেও আমার জন্য তৈরি করার সুযোগ আছে। করছেও। (২) মারণাস্ত্র আবিষ্কার, উৎপাদন, মজুত, মারণাস্ত্রের বাণিজ্য ছাড়া কি কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব কল্পনা করা যায় না? (৩) জাতীয়তাবাদী চেতনা কি আমাদের মন থেকে মানুষত্ববোধকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না? (৪) পৃথিবীতে অল্প কয়েকটি দেশ দাপট দেখাচ্ছে। বাকি দেশগুলো শান্তির পথ বেছে নেয়ার কারণে কি সবার কাছে গুরুত্বহীন? ইউরোপের অসংখ্য দেশ আছে, নিরিবিলি, নাগরিকরা বেশ সুখী। পৃথিবীতে দাপট দেখানো ছাড়া কি নাগরিকরা সুখে থাকে না? (৫) এমন কোনো দেশ কি আছে, যেখানে নাগরিকরা শুধু যুদ্ধ কামনা করে? অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এসব দেশের মানুষের জীবনে বড় ধরনের কোনো সংকট আছে? আমরা নাগরিকদের জন্য এর চেয়ে বেশি কী চাই? যুদ্ধ দিয়ে কি সব সংকট দূর করা যায়? (৬) যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে কি মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায়? মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে না পারলে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করে কী লাভ! (৭) যুদ্ধ করে করে বহু মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেছে। মস্ত বড় যোদ্ধা ছিল, কিন্তু নিজের জীবনটা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে পরাজিত হয়েছে, এমন ঘটনার অভাব নেই ইতিহাসে। কিন্তু সেই সব ইতিহাস আমাদেরকে কি কোনো শিক্ষা দেয় না? (৮) চেঙ্গিস খান, নেপোলিয়ন, হালাকু খান, হিটলারের উত্থান যেমন মানুষ দেখেছে, তাদের পতনও দেখেছে। আমরা যারা এখন গায়ের জোরে আমাদের মতো সহ¯্র লাখো মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছি, আমাদের পতন দেখার সময়ও অপেক্ষা করছে নিশ্চিতভাবে। পালাবার পথ নেই! (৯) দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন অভাবে ভুগছে, তাদের অভাব দূর করার চেয়ে মারণাস্ত্রের পেছনে খরচ করাটা কি মনুষত্ববোধের মধ্যে পড়ে? (১০) ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে আলাদা চোখে দেখে কি আমরা মনুষত্ববোধের চেতনাকে অপমাণ করছি না? (১১) পৃথিবীর সব মানুষকে এক জাতি, এক ধর্ম এবং এক বর্ণের গন্ডিতে নিয়ে আসতে না পরলেও সব মানুষকে মনুষত্ববোধের গন্ডিতে কি নিয়ে আসার চেষ্টা এ পর্যন্ত করা হয়েছে? (১২) পৃথিবী থেকে যুদ্ধ নামক অন্যতম মানব-শত্রুকে কি বিদায় জানানো যায় না? (১৩) মানুষের জীবনের মূল্য কি আমরা বুঝি? মোটেই বুঝি না। বুঝলে মারণাস্ত্র তৈরিতে অগ্রসর না হয়ে একজন ভিক্ষুকের হাত ধরে তাকে ভিক্ষাহীন জীবনের পথে নিয়ে যেতাম। (১৪) বিগত ৫০ বছরে যে দেশগুলো যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে, তাদের অবস্থা কি বেশ করুণ? (১৫) যুদ্ধ ছাড়া বিশ্ব কল্পনা করতে আমরাই পারি। আমাদের সদিচ্ছাই বিশ্বকে, বিশ্বের মানুষকে একটি যুদ্ধহীন পৃথিবী উপহার দিতে পারে। কাজটা কঠিন নয়, বেশ সহজ।

    (চার) চলুন, আমরা সবাই মিলে অস্ত্র ফেলে দিই। মানুষের জন্য কাজ করি, মানুষের বিপক্ষে নয়; মানুষের জন্য কাজ করি, শুধু নিজ জাতির জন্য নয়। আমাদের যাদের অন্যায় আছে, যাদের উপর অন্যায়টা হয়েছে, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অন্যায়ের পথ পরিহার করি তাদের সামনে নিজের অস্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লিখি। শুরু হোক মারণাস্ত্র এবং যুদ্ধহীন নতুন পৃথিবীর পথচলা। দেখা যাক, সেই পথে অগ্রদূত হয় কে?

    শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

    অষ্টম অধ্যায়
    মহামারী দেখা দিলে করণীয় (মূল আলোচ্য বিষয়)
    'মহামারির ইতিহাস থেকে যে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন' শিরোনামে ডেইলী স্টার বাংলায় ৭ মে ২০২০ তারিখে একটি নিবন্ধ লিখেন ড. মো. জহুরুল ইসলাম (পোস্টডক্টরাল গবেষক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ)। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, 'মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সারা পৃথিবীতে ৪০ লাখের কাছাকাছি মানুষ নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না!

    এত ক্ষুদ্র অস্তিত্বের এমন ভয়াল থাবা বর্তমান পৃথিবীর কোনো মানুষ (কিছু শতবর্ষী মানুষ ছাড়া) জীবদ্দশায় দেখেননি। যদিও মহামারির এমন ভয়াবহ চিত্র পৃথিবীতে আগেও দেখা গেছে। এইতো গত শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯১৮ সালে লোমহর্ষক 'স্প্যানিশ ফ্লু' মহামারিতে পৃথিবীর প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।
    একশ বছর পর দুনিয়াতে আবার সেই একইরকম ভয়াল সংক্রামক রোগের মহামারি হানা দিল ২০১৯ সালে! অতীতে মানুষ কীভাবে বিশ্ব-মহামারি মোকাবিলা করেছে? মহামারি পরবর্তী বিশ্বই বা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল? অতীতে বিশ্ব-মহামারির প্রকোপ ও তৎপরবর্তী সময়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সার্বিক সমাজ ব্যবস্থায় যে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছিল সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি আমরা।
    পৃথিবীতে মানুষের বিচরণ যেমন বহুকালের, সংক্রামক রোগের মহামারির ইতিহাসও সেরকম অনেক প্রাচীন। সময়ের বিবেচনায় বলতে গেলে প্রথমেই আসে 'এথেনিয়ান প্লেগে'র ইতিহাস। সেই ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই বিশ্ব-মহামারি ইথিওপিয়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে ছড়িয়ে পড়েছিল মিশর ও গ্রিসে।

    দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এ মহামারিতে রোগের উপসর্গ ছিল কিছুটা ইবোলা ভাইরাসের লক্ষণের মতো তীব্র জ্বর ও রক্তবমিসহ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু। উল্লেখ্য যে, ইবোলা ভাইরাস পৃথিবীতে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ সুদানে। ধারণা করা হয় গ্রিসের এক-তৃতীয়াংশ মানুষই এ মহামারির সময় সংক্রমিত হয়। বেশি সংক্রমিত হয় ডাক্তার ও রোগীর সেবা প্রদানকারীরা।
    এথেনিয়ান প্লেগ মানুষকে এতোটাই প্রভাবিত করেছিল যে তারা ধর্ম বা নিয়মনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সমাজে শ্রদ্ধাবোধের রীতি বিনষ্ট হয়েছিল। মানুষ মৃত্যুভয়ে ছিল আড়ষ্ট।
    তারপর কয়েক শতাব্দী পর, ১৬৫-১৮৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে পৃথিবীতে হানা দেয় 'এন্টোনাইন প্লেগ'। চীনে উৎপত্তি হয়ে এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও মিশর, গ্রিস, ইতালিসহ সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যে সৈনিকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি।
    ধারণা করা হয়, এ মহামারির কারণ ছিল গুটিবসন্তের জীবাণু। সে সময় রোমান সাম্রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই সংক্রমিত হয় এন্টোনাইন প্লেগে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে মানুষের অবিশ্বাস্য পরিবর্তন হয় তখন। যার ফলস্বরূপ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের গোড়াপত্তনও হয় তখন থেকেই। মহামারি পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুত নতুন নতুন কুসংস্কার আর নতুন ধর্মের বিস্তার শুরু হয় সেসময়।
    এরপর ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে আসে ইতিহাসের আরেক ভয়াবহ মহামারি। এর নাম 'জাস্টিনিয়ান প্লেগ'। মহামারির নামকরণ হয় তখনকার রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ানের নামানুসারে। এ মহামারির জীবাণু ছিল ''Yersinia Pestis' নামক ব্যাকটেরিয়া; যা ইঁদুর ও একধরণের মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চলসহ রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপলে।
    খুব ক্ষিপ্রবেগে ছড়িয়ে পড়া এ রোগের উপসর্গ ছিল জ্বর, বিষফোঁড়া ও রক্তবমি। মৃতের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে লোকালয়ে মানুষকে কবর দেওয়ার মতো জায়গা ছিল না! বিশালাকার গর্ত করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল।
    শেষ পর্যন্ত গর্তও সংকুলান না হওয়ায় শহরগুলির চারপাশে ভাগাড়ের মতো লাশের স্তুপ জমে ছিল। রাস্তাঘাট মরুভূমির মতো জনশূন্যে পরিণত হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভীষণ খাদ্য সংকটে না খেতে পেয়ে অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল।
    শুরুটা ৫৪১ সালে হলেও বছরান্তে চক্রাকারে এ মহামারি চলতে থাকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। মোট আড়াই কোটির বেশি মানুষ মারা যায় এ মহামারিতে। ধারণা করা হয় ইউরোপের অর্ধেক মানুষই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এ সময়।

    আবার, প্রায় ৬০০ বছর পর ১৩৩৪ সালে চীনে দেখা দেয় 'বিউবনিক প্লেগ' যা ইতিহাসে 'ব্ল্যাক ডেথ' হিসেবে পরিচিত। এ মহামারির জীবাণুও ছিল 'Yersinia Pestis' নামক ব্যাকটেরিয়া যা ইঁদুর ও একধরণের মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল। উপসর্গ ছিল জ্বর, বিষফোঁড়া, রক্তবমি ও নিউমোনিয়া। সংক্রমিত মানুষের প্রায় ৫০ শতাংশই মারা গিয়েছিল।

    শুরুটা চীনে হলেও মধ্য এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশ পাড়ি দিয়ে ১৩৪৭ সালে প্রথম ইতালির সিসিলি হয়ে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। সারা বিশ্বে পঞ্চাশ বছর ধরে এ মহামারির তান্ডব চলে ১৫০ মিলিয়ন মানুষ পৃথিবী থেকে মুছে যায়! তখন বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে কমে ৩০০ মিলিয়নে নেমে আসে। মৃত্যুভয় ও আতঙ্কে মানুষ বিভিন্ন কুসংস্কার আর ধর্মীয় কোন্দলে জড়িয়ে পরে। শ্রমিক সংকটে পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় থেমে যায়। ফলে সমাজে ধনী-গরিবের শ্রেণিবিন্যাস বদলে যায়। অনেক ধনী মানুষ সর্বশান্ত হয়ে যায়। আবার অনেক গরিব মানুষ ধনী হতে শুরু করে। এভাবে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব হয় এ মহামারি-পরবর্তী সময়ে।
    'ব্ল্যাক ডেথ'র সময় থেকেই কোয়ারেন্টিন ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সংক্রামক রোগের মহামারি নিয়ন্ত্রণে কোয়ারেন্টিনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বিশ্বব্যাপী।
    বর্তমান সময়ের নিকটতম অতীতের সব থেকে ভয়াবহ মহামারির নাম 'স্প্যানিশ ফ্লু'। যাকে বলা হয় 'সব মহামারির জননী'। ইনফ্লয়েঞ্জা ভাইরাসের বিশেষ জাত H1N1 দ্বারা সংক্রমণকারী এ মহামারিই ছিল আসল বিশ্ব-মহামারির দৃষ্টান্ত। মানুষ-শুকর-পাখি এই তিন সম্ভাব্য প্রাণী থেকে উৎপত্তি হওয়া H1N1 ভাইরাস ১৯১৮ সালের শুরু থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে সংক্রমণ করে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে। আর প্রাণ কেড়ে নেয় প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের।
    যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, স্পেন অথবা অস্ট্রিয়ার কোথাও উৎপত্তি হয়ে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বে। ঐতিহাসিক নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, 'স্প্যানিশ ফ্লু' মহামারির ভাইরাস জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে বারবার রূপ পরিবর্তন করে তিনটি ভিন্ন ধাপে আঘাত হানে। ১৯১৮ সালের মার্চে প্রথম ধাপে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে। প্রথম ধাপে সংক্রমণের গতি ছিল খুব ক্ষিপ্র। কিন্তু মৃত্যুহার ছিল অনেক কম। ছয় মাস পর সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হলে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। এ ধাপে মৃত্যুহার ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হয় ১৯১৯ সালের শুরুর দিকে।

    'স্প্যানিশ ফ্লু' আক্রান্তদের বেশিরভাগই ছিল যুবক আর সুস্থ মানুষ। তবে সংক্রমিতদের মৃত্যুহার ছিল বেশি। অনেক বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি 'স্প্যানিশ ফ্লু'তে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও শুরুতে মানুষ অনেক আতঙ্কিত ও দিশেহারা ছিল। তবে মহামারি শেষ হওয়ার অল্পদিনের মধ্যে মানুষ সবকিছু ভুলে গিয়ে দ্রুত আবার নতুন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে। এ জন্য 'স্প্যানিশ ফ্লু'কে অনেক সময় বলা হয় 'ভুলে যাওয়া মহামারি'।

    উল্লেখিত মহামারিগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে অন্তত এটুকু অনুমান করা যায় যে অতীতের সব মহামারির সঙ্গেই নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। যেমন, ছড়িয়ে পড়ার গতি, সংক্রমণের ব্যাপকতা ও বৃহৎ ভৌগলিক অঞ্চলে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া। তাই অতীতের ভালো-খারাপ দুই ধরণের দৃষ্টান্তই বর্তমানের জন্য হতে পারে দারুণ শিক্ষা। যা এই বিজ্ঞান-তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুনিক পৃথিবীতে আমাদের জন্য হতে পারে পাথেয়। ...' [https://www.thedailystar.net/bangla/148894]

    নিবন্ধটি অনেক বড়। বৈশ্বিক মহামারীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরার জন্যেই নিবন্ধটির একটা বিশেষ অংশ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতের বিভিন্ন মহামারীর কারণ এবং আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় সম্পর্কে যেসব কথা নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা এখানে উদ্দেশ্য নয়।

    বর্তমান নিবন্ধ পড়ার পর যে ধারণাগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া যাবে:
    (এক) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া কোনো ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ নয়।
    (দুই) কনজাংটিভাইটিস এবং পক্সও কোনো ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ নয়।
    (তিন) যক্ষ্মা এবং কলেরাও ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ নয়।
    (চার) পৃথিবীতে বায়ুবাহিত এবং ছোঁয়াচে কোনো রোগই নেই। কোনো রোগ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে বায়ুর মাধ্যমে লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়ার ধারণা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। শারীরিক ছোঁঁয়ার মাধ্যমেও কোনো রোগ এক শরীর থেকে আরেক শরীরে প্রবাহিত হতে পারে না। রোগ একটা শারীরিক সমস্যা। শরীরের সাথে মিশে থেকে মানুষকে যন্ত্রণা দেয়। মানুষ কোনো না কোনো কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কোনো কারণের সাথে সম্পর্কিত নয়, এমন কেউ কোনো রোগীকে স্পর্শ করলে রোগটি ঐ লোকের শরীরে চলে যেতে পারে না। এজন্য ছোঁয়াচে হওয়াটাও সম্পূর্ণ কাল্পনিক ধারণা।
    (পাঁচ) ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর ধারণা বিজ্ঞানেরই সৃষ্টি (বিজ্ঞান বলে, এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না; এগুলো দেখতে মাইক্রোস্কোপ লাগে; সাধারণ মানুষ সচরাচর এগুলো দেখার সুযোগ পায় না)। এগুলো সত্যিই অস্তিত্বশীল হয়ে থাকলেও এগুলো মানুষের কোনো ক্ষতি করার শক্তি বা ক্ষমতা রাখে না; মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি এবং একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে কোনো রোগ ছড়িয়ে দেয়া দূরের কথা।

    ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নিয়ে যারা চর্চা করেন, তাদেরকে একটু পেছনে আসতে হবে। ভাবতে হবে পূর্ববর্তীরা উপকার করতে গিয়ে বুঝার ভুলে কি মানুষের ক্ষতির পথই খুলে গেছে? এই নিবন্ধে সেই ভাবনার পথের দিকে শুধু ইঙ্গিত দেয়া হয়নি, বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু বিজ্ঞানের সৃষ্টি করা ভুত। বাস্তবের ভুত অস্তিত্বশীল থাকলেও বিজ্ঞানের সৃষ্ট এই ভুত অস্তিত্বহীন।
    (ছয়) করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়, উহানে স্থাপিত ভাইরোলজি ল্যাব থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে উহানের বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য বিষের প্রতিক্রিয়া মাত্র। নামে ভাইরাস হলেও করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' তো নয়ই, ছোঁয়াচে বা সংক্রামকও নয়।
    (সাত) চীন ছাড়া অন্য কয়েকটি দেশেও উহানের মতোই অদৃশ্য বিষ ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ফলে সেসব দেশেও করোনাভাইরাসের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। উহান থেকে এই রোগ অন্য কোনো দেশে ছড়ায়নি।
    (আট) বিজ্ঞানের তৈরি অদৃশ্য যে বিষ উহান এবং অন্য কিছু দেশের বাতাসে মিশে যাবার কারণে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সেই বিষ অন্য এলাকার যাদের নাকে প্রবেশ করেনি, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।
    (নয়) (ক) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে কোনোভাবে যাওয়া ছাড়া বিভিন্ন দেশে যারা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছে, বিশেষত স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত রোগীরা এবং (খ) যেসব দেশে অদৃশ্য বিষ ছড়ানো হয়নি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ সেসব দেশে যাবার পর তাদের সংস্পর্শে আসার পর যারা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, এই দুই শ্রেণির মানুষ পরীক্ষার ভুলেই করোনায় 'আক্রান্ত' হয়েছে, বাস্তবে নয়। কারণ করোনা রোগীর সংস্পর্শে না এসে কারোনায় আক্রান্ত হওয়া দূরের কথা, করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার পরও কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে না, অসংখ্য ঘটনা এবং তথ্য/প্রতিবেদন দ্বারা এটা প্রমাণিত।

    যে কোনো কারণে কোনো এলাকার বাতাস বা পানি দূষিত বা বিষাক্ত হলে সেই এলাকার মানুষ বিষের ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রোগে ব্যাপক হারে আক্রান্ত হতে শুরু করে। এটাকেই মহামারী বলে। মহামারী বা যে কোনো কথিত ছোঁয়াচে রোগে প্রথমে যে বা যারা আক্রান্ত হয়, পরে যারা আক্রান্ত হয়, তারাও সে কারণেই আক্রান্ত হয়। প্রথমে আক্রান্তদেরকে মাটিতে জীবন্ত প্রোথিত করে ফেললেও পরে আক্রান্তরা ওই রোগে আক্রান্ত হতো প্রথমে আক্রান্তরা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, সে কারণেই। যেহেতু কোনো রোগ একজন থেকে বায়ু বা ছোঁয়ার মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে না এবং কোনো এলাকায় বাতাস বা পানি দূষিত বা বিষাক্ত না হলে সে এলাকায় ঐ নির্দিষ্ট রোগ ছড়াতে পারে না, তাই কোনো এলাকায় মহামারী দেখা দিলে মহামারী থেকে বাঁচতে কী করা উচিত?

    এই নিবন্ধ পুরোটা মনোযোগ সহ পড়ার পর এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবলে সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী অনেক মানুষ এই প্রশ্নের সম্ভাব্য সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে সক্ষম হবে।

    ধরা যাক, ভবিষ্যতে উহানের মতো কোনো এলাকায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর যখন সবার মনে এই বিশ্বাস থাকবে, কোনো রোগ একজন থেকে আরেকজনের শরীরে বায়ু বা স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে না এবং কোনো এলাকায় মহামারী তখনই দেখা দিতে পারে, যখন সে এলাকার বাতাস বা পানি কোনো কারণে দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে যায়, তখন সবাই কী করবে? নিশ্চয়ই এলাকাটি ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাবে, যেখানে এরকম কোনো সমস্যা নেই। আর ইতোমধ্যে যারা রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, তাদেরকে কী করবে? তাদেরকে আক্রান্ত এলাকায় রেখে চলে যাবে? নাকি হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরে পুরো শরীর ত্রুটিমুক্তভাবে ঢেকে তাদেরকে ধরে নিয়ে জীবন্ত পুড়ে ফেলবে বা মাটিতে পুঁতে ফেলবে? কেন, তাদের কাছ থেকে যদি অন্য কেউ আক্রান্ত হতে না পারে, তাহলে তাদেরকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে তাদের চিকিৎসা এবং সেবা করলে কী ক্ষতি হবে?

    কোনো ক্ষতি হবে না।

    বিজ্ঞানের অনেক ধারণা মানবজাতির মহাক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। মানুষের কল্যাণের জন্য ধারণাগুলোর সৃষ্টি হলেও নিবিড়ভাবে চিন্তাভাবনা এবং পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া ধারণাগুলো বাজারে ছেড়ে দেয়ার ফলে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। বিজ্ঞানের ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত রোগের ধারণা; ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু মানুষের ক্ষতি করার ধারণা এ পর্যন্ত মানুষের কত গুরুতর ক্ষতি করেছে, একটু ভাবলেই সবার বুঝে আসবে। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ক্ষতি তার সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ। আইসোলেশন, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, সোশাল ডিসটেন্স এ রকম নতুন অসামাজিক আইনগুলো বিজ্ঞানের আগের কিছু ভুল ধারণার বিষাক্ত ফল। সেই বিষাক্ত ফলের বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাপক বেকারত্ব, ক্ষুধা, অভাব, হতাশা, আত্মহত্যা, ক্ষুধার জ্বালায় দেশে দেশে জনগণের সাথে প্রশাসনের সংঘর্ষ ইত্যাদি আরো কতো কী!

    ''Coronavirus: Chile protesters clash with police over lockdown' শিরোনামে ১৯ মে ২০২০ তারিখে বিবিসি নিউজে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, 'Protesters and police have clashed on the outskirts of the Chilean capital Santiago amid tension over food shortages during lockdown.

    Local television showed police using tear gas and water cannon to quell unrest on the streets of El Bosque, where poverty is high.

    President Sebastián Piñera, in a televised address after the protests, pledged to get food to those in need.

    Chile has more than 46,000 cases of Covid-19 so far, with 478 deaths.

    A recent surge in cases prompted the national capital to go under a strict and total lockdown this weekend.
    In a separate development on Monday, dozens of members of Chile's senate and two government ministers went into preventative isolation following recent contact with infected colleagues.

    Why were there protests?
    Groups of protesters were seen throwing stones and setting fires in parts of the El Bosque neighbourhood.
    District mayor Sadi Melo told local radio it was facing a "very complex situation" because of "hunger and lack of work".

    In a statement, local officials said they had distributed about 2,000 aid packages but warned the government they could not meet demand.' [https://www.bbc.com/news/world-latin-america-52717402]

    'Coronavirus: in Zimbabwe, people risk Covid-19 death just to fetch water' শিরোনামে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে ১৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (by Tonderayi Mukeredzi) বলা হয়, 'Spread of coronavirus will be harder to control without running water, essential for hygiene
    Zimbabwe's public health system faces total collapse if most of population becomes infected
    Dry taps are forcing residents in cities across Zimbabwe to spend time outside collecting water at community bore holes, instead of staying indoors for a 21-day coronavirus national lockdown.

    Even as the country enters possibly the last days of isolation, bore holes have emerged as possible vectors for the spread of deadly Covid-19 disease, as urbanites, mostly women and children, are forced to disregard social distancing rules to fill buckets to take home.
    The southern African country of 14.5 million people has so far recorded 23 cases and three deaths since global outbreak began, but the actual number could be much higher. Zimbabwe has only one public Covid-19 test centre, at a government hospital in the capital Harare, where over 600 tests have been carried out.

    Zimbabwe's public health care system, already under the strain of a crippled economy, faces shortages of basic drugs and lacks essential equipment and even running water. Health experts say Covid-19 will be harder to control in places without running water, and many people could die.
    That's a horrible scenario for people like Marian Chiroodza, who lives in Chitungwiza, a densely populated satellite town 30km southeast of Harare.

    ''It is a double-edged sword. If I stay home without water, I could still die from cholera or typhoid. I need water for cooking and for use in the toilet daily apart from other uses,'' the 48-year-old mother of four said. ''So, I have no choice but to patronise the bore hole every other day to fetch water because tap water scarcely comes.''

    In Zengeza, another suburb in Chitungwiza, Cuthbert Ngonyama owns a bore hole and makes brisk business selling water to hordes of people.'
    [https://www.scmp.com/news/world/africa/article/3080374/zimbabwe-people-risk-covid-19-death-just-fetch-water]

    এরকম আরো কত সংঘর্ষের ঘটনা কত দেশে ঘটেছে, কোনো হিসাব নেই। সবই লকডাউনের নেতিবাচক ফলাফল। উহানে লকডাউন দিয়ে কি কোনো লাভ হয়েছে? ইতালিতে? লাম্বার্ডিতে? ইরানের কোম শহরে? নিউইয়র্কে? ইতালির 'কডোঙ্গো' শহরে লকডাউনের প্রভাব সম্পর্কে দৈনিক যুগান্তরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে 'উহানের মতো 'ভুতুড়ে নগরী'তে পরিণত ইতালির যে শহর' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রাস্তাঘাটে কোনো যানবাহন নেই। ফুটপাতে নেই কোনো পথচারীর হাঁটার শব্দ। দোকানপাটও সব বন্ধ। একেবারে পিনপতন নীরবতার শহরে পরিণত ইতালির কডোঙ্গো।
    এ যেন আরেক উহান। বলতে গেলে উহানের মতো 'ভুতুড়ে শহরে' পরিণত হয়েছে ইতালির কডোঙ্গো।
    উত্তর ইতালির লোদিপ্রদেশের ছোট্ট শহর কডোঙ্গো। সম্প্রতি শহরটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত দুই রোগীর মৃত্যু হয় সেখানে। এ ছাড়া ৫০ জনের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে।

    এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস আতঙ্কে নিশ্চুপ হয়ে গেছে শহরটি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যাচ্ছে না। বের হয়েও লাভ নেই কোনো। কারণ করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে শহরের স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, শপিংমলের অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে।
    স্থানীয় সময় শনিবার রাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে পাওলা নামের এক বাসিন্দা বলেন, 'কডোঙ্গো এখন একটা ভুতুড়ে শহর। করোনাভাইরাস আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর এক অবস্থা তৈরি করেছে। মানুষজন তাদের ঘরে ঘরে বন্দি, কোনো মানুষ রাস্তায় নেই। এমনটি বেশি দিন চললে করোনায় নয়, না খেয়েই মরতে হবে আমাদের।'
    তিনি বলেন, 'স্টেশন বন্ধ রয়েছে। কেউ টিকিট বিক্রি করছে না। আর আমার মতো কোনো যাত্রীও ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে নেই। হেঁটেই বাড়ি যাচ্ছি।'
    শহরের ভেন্ডিং মেশিন থেকে হালকা খাবার ও পানীয় কেনার জন্য ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন এরিকা নামের এক নারী।
    এএফপিকে এরিকা বলেন, '৫০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত শুনে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সবাই সাবধানে থাকছি। ঘরে কোনো খাবার নেই। অনন্যোপায় হয়ে বের হয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে, সুপারমার্কেটগুলো আদৌ খোলা থাকবে কিনা।'
    সবকিছু বন্ধ থাকলেও কডোঙ্গোতে ফার্মেসিগুলো খোলা রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

    এ বিষয়ে এএফপিকে রোসা কাভালিল নামের এক ফার্মেসি মালিক বলেন, 'প্রচন্ড ভয় নিয়ে কাজ করছি আমরা। সরকারের নির্দেশ না থাকলে ফার্মেসি বন্ধই রাখতাম। আমাদের এখন ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।'
    তিনি বলেন, 'এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মাস্ক। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাকটেরিয়া রোধক, অ্যালকোহল এবং ব্লিচিং পাউডার কিনে মজুদ করে রাখছেন।'
    উল্লেখ্য, লোম্বার্ডি অঞ্চলের শহর কডোঙ্গোকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিস্তারের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দাবি করছেন ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
    গত শুক্রবার ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তাদের নিজেদের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। শনিবার মারা যান আরও একজন।
    এর পর লোম্বার্ডিতে ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়।
    এ ঘটনার পর পরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব শহরের জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্কুল, বার, চার্চ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
    ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসকও রয়েছেন। ইতালিতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটা করোনাভাইরাসের প্রথম ঘটনা এটি।
    যে পাঁচজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কেউ চীন সফর করেননি।
    ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেন, অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার সাবধানতা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানান তিনি।' [https://www.jugantor.com/international/281931]

    উহান বা কডোঙ্গোর মতো যেসব শহরে বা দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ হয়েছে, সেসব শহর বা দেশে লকডাউন দিয়ে কী লাভ হয়েছে? লকডাউন কার্যকর করার ১৪ বা ২০ দিন পর কি আক্রান্ত হওয়া বন্ধ হয়েছে? কমে গেছে? কেন বন্ধও হয়নি, কমেওনি?

    কেন, তা ভেবে দেখা দরকার। এখন (নিবন্ধের এই পর্যায়ে এসে) অবশ্য সামান্য ভাবলেই একমাত্র কারণটাও সহজেই পরিষ্কার হবে। উহানের বায়ুতে অদৃশ্য রাসায়নিক অস্ত্র মিশ্রিত হবার পর যতদিন উহানের বায়ুতে সেই রাসায়নিকের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল, ততদিন উহানের মানুষ আক্রান্ত হতে থাকলো। বায়ুপ্রবাহের কারণে যখন ধীরে ধীরে বায়ু থেকে ওই রাসায়নিকের অস্তিত্ব লোপ পেতে লাগলো, তখন মানুষের আক্রান্ত হবার হারও কমে যেতে লাগলো। এভাবে অন্য দেশের যেসব শহরের বায়ুতে উহানের মতো অদৃশ্য রাসায়নিক মিশেছিল, সেসব শহরেও লকডাউন দিয়ে লাভ হয়নি। সময়ের ব্যবধানে বায়ুতে রাসায়নিকের উপস্থিতি লোপ পেতে লাগলো, মানুষের আক্রান্ত হবার হারও কমতে লাগলো। লকডাউনের সাথে মানুষের আক্রান্ত হবার হার হ্রাস পাবার কোনো সম্পর্ক ছিল না। বরং লকডাউনের সাথে, সংশ্লিষ্ট শহরের মানুষের আক্রান্ত হবার হার বৃদ্ধি পাবার সরাসরি সম্পর্ক ছিল। কেন সম্পর্ক ছিল? যেহেতু করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে নয়, বরং বায়ুতে ছড়িয়ে দেয়া অদৃশ্য রাসায়নিক বিষের প্রতিক্রিয়া, তাই লকডাউন করার কারণে যারা আক্রান্ত হবার আগে শহর থেকে বের হতে পারেনি, বরং লকডাউন করার ফলে শহরে অবরুদ্ধ হয়ে গেছে, সময়ের ব্যবধানে ঐ রাসায়নিক বিষ তাদের ফুসফুসেও প্রবেশ করেছে এবং তারাও নিউমোনিয়ায় (করোনাভাইরাসে) আক্রান্ত হয়ে গেছে। এজন্য দেখা যায়, বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ চীনে করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর কিছুদিনের মধ্যে নিজ দেশের অনেক নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে এনেছে। এদের অধিকাংশই তখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। অল্প কিছু মানুষ আক্রান্ত হলেও তাদের সাথে একই ফ্লাইটে ফিরে আসা কেউ তাদের কাছ থেকে আক্রান্ত হয়নি। যদি এদেরকে চীন থেকে কোনো কারণে ফেরত আনা না হতো, কী অবস্থা হতো, ভাবলেই বুঝা যায়।

    শুধু ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া নামক বিজ্ঞানের সৃষ্ট কল্পিত ভুত অস্তিত্বশীল থাকার কারণে এবং উহানে উৎসারিত 'অজ্ঞাত কারণ নিউমোনিয়া'কে ছোঁয়াচে বলে প্রচারের কারণে মানবজাতির এই দুর্দশা। নয়তো অনেক অনেক মৃত্যু হতো না; অনেক অনেক অঘটন ঘটতো না; করোনাভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাবে তেমন কারো মৃত্যু হতো না; মানুষে মানুষে দূরত্ব কমতো না; মনুষত্ববোধের অপমান আরো কম হতো; সর্বোপরি উহানে উৎসারিত 'অজ্ঞাত কারণ নিউমোনিয়া'র রহস্য উদঘাটিত হতো আরো আগে, খুব সহজে।

    এই নিবন্ধের শিরোনামের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, 'করোনাভাইরাস বিজ্ঞানের অজ্ঞতা এবং নিষ্ঠুরতার ফল'।
    বিজ্ঞানের অজ্ঞতা কী, আশা করি কারো বুঝার বাকি নেই। আর নিষ্ঠুরতা কী, তা কারো এখনো বুঝে না এলে আবার তাকাতে হবে করোনাভাইরাসের উৎসের দিকে। বুঝে আসবে এটা কোনো ভাইরাস নয়, বিজ্ঞানের নিষ্ঠুরতা।

    এটা কোনো ভাইরাস নয় এবং ছোঁয়াচে রোগও নয়, এই সম্পর্কে অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে এই পর্যন্ত। আমরা আরো একবার দেখি, চীনে কী হয়েছে? চীনে উপদ্রুত 'ভাইরাস' চীনের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেলো অনেক অনেক দূরে, কিন্তু চীনের কী হলো?

    চীন থেকে অনেক অনেক দূরের বেশ ছোট দেশ নয়, তবু পুরো দেশকে লকডাউন করা হলো, এমন একটি দেশ ইতালি। কিন্তু পুরো চীনকে লকডাউন করতে হয়নি। শুধু ইতালি নয়, আরো অসংখ্য দেশে বৃহৎ পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করতে হলো, কিন্তু চীনের কাছের ছোটবড় অনেকগুলো দেশকেও পুরোপুরি লকডাউন করতে হয়নি। এমনকি উহান ছাড়া চীনের আর কোনো শহরে বৃহৎ পরিসরে লকডাউন ঘোষনা করতে হয়নি। কেন? ভাইরাস কাছের দেশ বা শহরে আক্রমণ না করে দূরে গিয়ে থাবা দিলো কেন? দূরের লোকদের প্রতি কি ভাইরাসের কোনো ক্ষোভ ছিল? কাছের দেশগুলোর সাথে খাতির! যেন ঠিক মানুষের মতো আচরণ! ভাইরাসের আচরণ মানুষের মতো হয় কী করে! ভাইরাসেরও কি মানুষের মতো বুদ্ধি আছে? চিন্তাশক্তি আছে? ভাইরাসও কি পরিকল্পনামফিক চলে?

    করোনাভাইরাস সম্পর্কে ইতোমধ্যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, লক্ষণ প্রকাশ পাবার আগেই এটি একজন আক্রান্ত লোক থেকে সুস্থ লোকে ছড়িয়ে পড়ে। উহানে যখন করোনার উপদ্রব শুরু হলো, তখন উহানকে লকডাউন করার আগে উহান থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ কি চীনের অন্যান্য শহরে/এলাকায় যায়নি? গিয়েছে। অনেক আক্রান্ত রোগী গিয়েছে। কিন্তু যেসব শহরে গিয়েছে, সেসব শহরকে লকডাউন করা ছাড়া কেন সেসব শহরে করোনাভাইরাস লোম্বার্ডি, কোম, মাদ্রিদ, সাও পাওলো, নিউইয়র্কের মতো ভয়াবহ হয়নি? লোম্বার্ডি, কোম, মাদ্রিদ, নিউইয়র্ক এসব শহরকে লকডাউন করেও যে ভাইরাসের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, সে ভাইরাস কিভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলো চীনের এমন সব শহরে, যেখানে উহান থেকে করোনায় আক্রান্ত অনেকে গিয়েছে?

    চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস চীন থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত বিশ্বের অনেক দেশে 'উহানের চেয়েও ভয়াবহ' রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু 'চীনের কাছের কোনো দেশে' অন্য অনেক দেশের মতো ভয়াবহ হয়নি। শুধু তা-ই নয়, চীনের উহান ছাড়া খোদ 'চীনের অন্য কোনো শহরে'ও ভয়াবহ হয়নি। উহানে করোনার উপদ্রবের পর প্রথম অবস্থায় উহান থেকে আক্রান্ত অনেক মানুষ চীনের অন্য অনেক শহরে ফিরে গেছে। কিন্তু কোনো লকডাউনও দিতে হয়নি কোনো শহরকে! এমনকি উহান ছাড়া কোনো শহরে সর্বোচ্চ ১০০ জন মানুষও মারা যায়নি! সর্বোচ্চ ২২ জন মারা গেছে হেনান শহরে। উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত ৮ জুনের পরিসংখ্যান এখানে দেয়া হলো।
    কিন্তু কেন?

    'চীনের নতুন ভাইরাস এবার যুক্তরাষ্ট্রেও' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গত সোমবার চীন প্রথম স্বীকার করে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। এর আগে চীন দাবি করেছিল, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। আর ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান। তাঁদের হিসাবে চীন যা বলছে, তার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।
    বেইজিং ও সাংহাইসহ চীনের বড় শহরগুলোতে ২৯১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই উহান শহরের। শহরটির ১ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এখন এই প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে গত বছর। রোগের প্রাদুর্ভাব সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই বাজারে জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণীও বিক্রি হয়।' [https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1635600]

    'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রতিদিনই নতুন কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা গত এক সপ্তাহেই তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে। চীনের মধ্যাঞ্চলের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন এক ভাইরাস দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে।
    উহান কর্তৃপক্ষ গত দু'দিনে ১৩৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।চীনা নববর্ষের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের ঘরে ফেরার যজ্ঞের মধ্যে রাজধানী বেইজিংয়ে দু'জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।'  [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/269371]

    কেন এই নিবন্ধের নাম এভাবে রাখা হয়েছে, তা যদি কারো বুঝতে বড্ড কষ্ট হয়, তারা এই দুটি প্রতিবেদনের নিচে দাগ দেয়া বাক্যগুলোর সাথে এর আগের কথাগুলো মিলিয়ে নিন। এরপরও না বুঝলে বুঝে নিতে হবে, নিবন্ধটি যে লিখেছে, সে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বোধ।

    এই নিবন্ধ নিয়ে দু'টি কথা
    এই নিবন্ধে শত শত ত্রুটি থেকে যেতে পারে, অসংখ্য অসঙ্গতি থেকে যেতে পারে। কারণ (১) এটা একটা খসড়া মাত্র। (২) এই নিবন্ধ তৈরির সময় সব সময় মনে হয়েছে, এমন একজন লোককে একা একা এই নিবন্ধ তৈরি করতে হচ্ছে, যে জন্ম থেকে বেশ দুর্বল মেধার অধিকারী এবং বাংলা ব্যতীত ইংরেজি ভাষাটাও যার পূর্ণ দখলে নেই। যদি শক্তিশালী মেধার অধিকারী এবং কয়েকটা ভাষায় পারদর্শী অন্য কেউ বা যে এই নিবন্ধ তৈরি করছে, তার মতো ১০০ জন লোক মিলে তৈরি করতো, তাহলে এটি এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, নিবন্ধটি তৈরির কাজে একজন দুর্বল মেধার অধিকারী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনভিজ্ঞ এবং মাত্র একটি ভাষায় পারদর্শী লোককে হাত দিতে হয়েছে।
    এটা একটা খসড়া মাত্র। প্রথম বিমান আবিষ্কারটা যেভাবে ছিল একটা খসড়া। কিন্তু সেই বিমানই মানুষকে আকাশে ওড়ার অসম্ভব কাজটা সম্ভব প্রমাণ করেছে। পরবর্তীতে বিমানে আরো অনেক সংযোজন এসেছে, আরো আধুনিকায়ন এসেছে। কিন্তু খসড়া হলেও প্রথম বিমান যা প্রমাণ করা দরকার, তা প্রমাণে যথেষ্ট ছিল।

    'বিশ্বাস থেকে স্বপ্ন, তারপর অর্জন' শিরেনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি ক্ষুদে নিবন্ধে বলা হয়, '১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১০টা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাতাসের চেয়ে ভারী শক্তিচালিত এক যান নিয়ে মানুষ সফলভাবে আকাশে উড়ল, হাজার বছর ধরে যা ছিল শুধু এক অসম্ভব কল্পনা। আর তা করলেন দুভাই- উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট। মজার ব্যাপার হল, তারা কেউ কিন্তু কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংক, পদার্থবিজ্ঞান বা অ্যারোনটিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তাদের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি ছিল না, এমনকি হাইস্কুলের গন্ডিও তারা পেরোন নি। ডেটনের দুজন বাইসাইকেল মিস্ত্রি কি করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন? ছোটবেলায় বাবার এনে দেয়া একটি উড়ন্ত খেলনা থেকেই দুভাইয়ের মাথায় প্রথম উড়ে যাওয়ার চিন্তা জাগে। তারপর বছরের পর বছর ধরে গবেষণা, চেষ্টা, ব্যর্থতার পর তারা লাভ করেন এ সাফল্য।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/tutorials/259785]

    এই নিবন্ধে আরো সংযোজন তো হতেই পারে, কিছু বিয়োজনও হতে পারে পরবর্তীতে। যে কোনো নিবন্ধে এই সংযোজন ও বিয়োজনের বিষয়টা বেশ স্বাভাবিক। কিছুটা অস্বাভাবিক হতে পারে উপন্যাসের ক্ষেত্রে। তবু উপন্যাসেও এরকম হয়ে থাকে মাঝে মধ্যে। একটা উদাহরণ দেখা যাক:

    'দ্য আইস অব ডার্কনেস : রহস্যজনক এক বই' শিরোনামে  প্রথম আলোয় ২০ মার্চ ২০২০ তারিখে একটি প্রতিবেদন (তৈরি করেন: মারুফ ইসলাম) প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, 'হঠাৎ করেই একদিন নিখোঁজ হয়ে যায় ড্যানি। খুঁজে খুঁজে হয়রান তার মা ক্রিশ্চিয়া ইভানস। জানেন না ছেলে বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে। অনেক পরে জানা যায়, ছেলে দুর্ঘটনাবশত মানুষের তৈরি বিষাক্ত এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আটকা পড়ে আছে চীনের এক সামরিক গবেষণাগারে। এমন একটি প্লট নিয়ে গত শতকের ১৯৮১ সালে একটি থ্রিলার উপন্যাস লিখেছিলেন মার্কিন ঔপন্যাসিক ডন কুন্টজ। সেই উপন্যাস সম্প্রতি নতুন করে উঠে এসেছে আলোচনায়। ফলে হু হু করে বেড়ে গেছে এর বিক্রি। বই বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আমাজন ডটকমের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় বইটি এখন রয়েছে ৩ নম্বরে।
    এ বইয়ের নাম দ্য আইস অব ডার্কনেস।

    আর ভাইরাসটির নাম? উহান-৪০০! ...

    মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৮১ সালে প্রকাশিত দ্য আইস অব ডার্কনেস এ প্রথমে ভাইরাসটির নাম উহান-৪০০ ছিল না। তখন তার নাম ছিল 'গোর্কি-৪০০'। এটি রাশিয়ার একটি শহরের নাম। পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১ সালে বইটির নতুন সংস্করণে কুন্টজ চীনকে একটি খলরাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং ভাইরাসের নাম চীনের উহান শহরের নাম অনুসারে 'উহান-৪০০' রাখেন।
    কেন নবতর সংস্করণে কুন্টজ এমন পরিবর্তন আনলেন? সে ব্যাপারেও মুখ খুলছেন না এই মার্কিন ঔপন্যাসিক।'  [https://www.prothomalo.com/onnoalo/article/1645839]

    একটি উপন্যাস (কাল্পনিক গল্প) রচনার ১০ বছর পর যদি উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে, এই নিবন্ধে আসতে পারবে না কেন! তবে এই নিবন্ধে দ্য আইস অব ডার্কনেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা, বলা না গেলেও ছোটোখাটো বিষয়ে পরিবর্তন আসতে পারে পরবর্তী সংস্করণে।

    এই নিবন্ধের সৌজন্যে কিছু ভবিষ্যদ্বানী
    (এক) টীকা বা কোনো প্রতিষেধক দিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া থেকে মানুষ কখনোই পুরোপুরি মুক্তি লাভ করবে না।
    (দুই) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ প্রতিরোধের কোনো টীকা বা প্রতিষেধক কখনো আবিষ্কার করা যাবে না। এই তিনটি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে দীর্ঘজীবন লাভের উপায় সম্পর্কে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ তৈরি করা আছে, যা এখনো বই আকারে প্রকাশিত হয়নি। নিবন্ধটির প্রথম পর্ব এই লিঙ্কে গিয়ে পড়া যাবে: https://bit.ly/2V2ckDO
    প্রতি পর্ব শেষে পরবর্তী পর্বের লিঙ্ক সংযুক্ত করা হয়েছে।
    (তিন) কোনো রোগ মানুষের মধ্যে ছোঁয়াচের মতো করে ছড়িয়ে দেয়া যাবে না। অন্য কথায়, বায়ুতে বা পানিতে কোনো রোগ ছড়িয়ে দেয়া যাবে না।
    (চার) বিজ্ঞান এমন কোনো ভাইরাস আবিষ্কার করতে পারবে না, যা বায়ুতে বা পানিতে ছড়িয়ে দিলে তা একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়বে। বরং বিজ্ঞান শুধু আবিষ্কার করতে পারবে এমন কোনো পদার্থ বা ক্যামিক্যাল, যা বায়ুতে বা পানিতে ছড়িয়ে দিলে মানুষ সেই ক্যামিকেলের বিষক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যেমন মশার কয়েল বা স্প্রে বাতাসে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করার ফলে মশা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
    (পাঁচ) জীবাণু অস্ত্র নামে কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব নয়; সম্ভব রাসায়নিক অস্ত্র। রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগের ফলে বায়ুর স্বাভাবিকত্ব যে কোনোভাবে ক্ষুন্ন হতে পারে অথবা রাসায়নিক অস্ত্রের তেজস্ক্রিয়তা বায়ুর সাথে মিশে যাবার ফলে মানুষ নিঃশ্বাস নিতে গেলে ঐ তেজস্ত্রিয়ায় মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে মানুষ নিউমোনিয়া বা অন্য কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।
    কিন্তু যারা মৃত্যুকে স্বীকার করে; মৃত্যু এড়ানোর কোনো কৌশল এখনো খুঁজে পায়নি; মৃত্যুর পর দিন যতো যাবে, পৃথিবীতে তত নিজের নাম ধূসর হতে থাকবে, এই বিষয়টা 'ভালোভাবে' বুঝে; কমপক্ষে এটা বুঝে, আমি যতো কিছুই হই না কেন, বেশি দিন বাকি নেই, সকল চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে, তারা পৃথিবীতে মুনষত্বের চেতনা বিরোধী কোনো কাজ করবে না, করতে পারে না।

    শুধু 'নিজ দেশের মানুষ'কে নয়, আমরা 'মানুষ'কে ভালোবাসবো।
    .....................................................................
    [প্রথম পর্ব থেকে পড়তে হলে যেতে হবে এই লিঙ্কে: https://www.facebook.com/nurahmad.bangladeshi/posts/149460373326356?__tn__=K-R-R-R-R-R-R

    বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১১ জুন। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪১৬। চাহিদা জানালে কুরিয়ারে/ডাকযোগে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে ইনবক্সে যোগাযোগ করতে হবে : https://www.facebook.com/nurahmad.teacher

    নিবন্ধ/বইটি গভীরভাবে মনোযোগসহ পুরো পড়ে থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাবেন অবশ্যই। জানাতে পারেন, বইটি পড়ে আপনার কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উপকারে এসেছে বা ভালো লেগেছে। জানাতে পারেন বইটি সম্পর্কে আপনার অনুভূতি, অভিমত। এই পেইজে গিয়েও মতামত জানাতে পারেন: https://www.facebook.com/nurahmad.bangladeshi/posts/149460373326356?__tn__=K-R]

    Post a Comment

    0Comments
    Post a Comment (0)
    To Top