করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য (পর্ব-৭): এই ভাইরাসে মাস্ক কেন অকার্যকর?

12 minute read
0
করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]


তৃতীয় পরিচ্ছেদ

মাস্ক কেন এই ভাইরাসে অকার্যকর?
উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শুধু উহান শহরে বা হুবেই প্রদেশে নয়, প্রায় পুরো চীনজুড়েই মানুষ মাস্কের ভেতর ঢুকে গেলো। শুধু মাস্কের ভেতর নয়, অনেকে পুরো শরীরকে আবৃত করে চলাফেরা করতে শুরু করলো। বিশেষ করে চিকিৎসাকর্মীরা। প্রথমে এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য-প্রতিবেদন দেখা যাক।
'চীন এখন 'মাস্ক নগরী' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের এখনও কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এখন প্রতিরোধই এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। এজন্য সবার মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে মাস্ক। পুরো চীন এখন এক মাস্কের 'নগরী'তে পরিণত হয়েছে।...
দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, গত সপ্তাহে মাত্র দু’দিনে প্রায় আট কোটি মাস্ক বিক্রি করেছে আলিবাবার মালিকানাধীন তাওবাও। জানুয়ারির ১৯ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে জেডি ডটকম মাস্ক বিক্রি করেছে অন্তত ১২ কোটি ৬০ লাখ পিস।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/271337]

'থেমে নেই ভালবাসা...' শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীনের এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহর উহান থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের যানবাহন চলাচল। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে উৎকণ্ঠিত বাসিন্দাদের অস্বাভাবিক ভিড়। ফার্মেসিগুলোতে দেখা দিয়েছে ওষুধের সংকট। করোনাভাইরাস আতঙ্কে রয়েছে পুরো বিশ্ব। একডজনেরও বেশি দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। উহানে আটকা পড়েছেন বিদেশি নাগরিকরা। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। তাদের ফেরাতে চীনা সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার। ইতিমধ্যে কিছু কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হিসেবে সবাই মাস্ক পরছেন একরকম বাধ্য হয়েই। ফলে পুরো চীন এখন এক ‘মাস্ক নগরীতে’ পরিণত হয়েছে। মাস্ক কেনার হিড়িক পড়েছে অনলাইন ও অফলাইন দোকানগুলোতে। এতে মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে চীনে। বিপণনি কেন্দ্রগুলো তাই মাস্ক উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। - এএফপি' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/272203]


চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে চীনের প্রায় সব নাগরিক বাধ্যতামূলতভাবে মাস্ক পরছে। কিন্তু মাস্ক পরতে শুরু করার পর কি ভাইরাসটি মানুষকে আক্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে? মানুষ কি রক্ষা পাচ্ছে ভাইরাসটির আক্রমণ থেকে? মাস্ক ব্যবহার শুরু করার আগে ভাইরাসটি যত মানুষকে আক্রমণ করেছে, তার চেয়ে বেশি আক্রমণ করেছে মাস্ক ব্যবহারের পর। তার মানে মাস্ক ব্যবহার কোনো কাজেই আসছে না। রোগটি নিজ গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে কেউ রোধ করতে পারছে না রোগটির গতি। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, চিকিৎসাকর্মীরাও পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাসটিতে, যারা সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি অবরুদ্ধ করে রাখে শরীরকে।


৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'করোনাভাইরাস সতর্ককারী প্রথম সেই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মারা গেলেন করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ককারী প্রথম সেই চীনা চিকিৎসক। চীনা নাগরিকদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে যে সকল চিকিৎসকরা প্রথম সতর্ক করেছিলেন তাদের একজন ডাঃ লি ওয়েনলিয়াং। সবশেষ সেই চিকিৎসকও করোনাভাইরাসের কাছে হার মানলেন। চীনা সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৩৪ বয়সী এই চিকিৎসক। গত ৩০ ডিসেম্বর লি ওয়েনলিয়াং তার সহকর্মীদের ওই ভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।'

'করোনা ভাইরাসের বাহক মানুষও!' শিরোনামে বাংলা অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন লিখেন জাকিয়া আহমেদ, যা প্রকাশিত হয়, জানুয়ারি ২২, ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্তেরও খবর পাওয়া গেছে, যাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে দেশটির সরকারি হিসাবে সোমবার পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৩ জন। উহান ছাড়া বেইজিং ও সাংহাইতেও আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভাইরাসটি চীনের ১৩ প্রদেশে ছড়িয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ৪৪০ জন, আর মারা গেছেন ৯ জন। দুই দিনের মাথায় এত বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ভাইরাসটি 'রেপিডলি স্প্রেড' হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন চিকিৎসা কর্মীও রয়েছেন।' [https://www.banglatribune.com/others/news/605297]

'করোনাভাইরাসে ইউরোপের মধ্যে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'এদিকে করোনাভাইরাসে বিশাল একটা সংখ্যক চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সম্পর্কে চীনের কাছে তথ্য চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭৬০ স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে চীন।' [https://www.jugantor.com/international/278677]


'চীনে প্রায় দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত' শিরোনামে এএফপি ও রয়টার্স, বেইজিং সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'চীনের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গতকাল শুক্রবার বলেছে, এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এর মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন।...

উহানে বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করছেন প্রায় ৮০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, যে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই উহানের।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1639919]

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে, সংক্রামক বা বায়ুবাহিত রোগ নয়। সংক্রামক বা বায়ুবাহিত রোগ হলে উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক পরিহিত কেউ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো না। যেখানে শুধু মাস্ক পরিহিত সাধারণ মানুষকেই নয়, মাস্কসহ আপাদমস্তক মোড়ানো হাজারো চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকেও রোগটি আক্রমণ করে বসেছে, সেখানে রোগটিকে 'সংক্রামক রোগ' বলার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে? মাস্ক পরেও কেন এই 'ভাইরাসে'র আক্রমণ থেকে মানুষ রক্ষা পাচ্ছে না? কেউ কি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হলে 'নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লয়েঞ্জা এগুলো বায়ুবাহিত রোগ নয়', আগে এই কথা বিশ্বাস করতে হবে।


একটু ভাবলেই যে-কারো সহজেই এই বিশ্বাস সৃষ্টি হবে, উহানে সৃষ্ট এই নিউমোনিয়ার উপদ্রব 'ভাইরাস' হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে না; সামুদ্রিক মাছ, সাপ, বাদুড়, বনরুই যেদিকেই আপনার সন্দেহের দৃষ্টি যায়, আপনার সন্দেহের দৃষ্টি সেদিক থেকে একসময় ফিরে আসবেই এবং এই বিশ্বাস জন্ম হবে, এটা অন্য কিছু, যা বায়ুর সাথে মিশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের ওপর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার ফলে মানুষ মারাত্মকভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

এই 'অন্য কিছু' একজন থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হয় না। কারণ এটা কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নয়। বরং এই 'অন্য কিছু' থেকে একজন যেভাবে আক্রান্ত হয়, অন্যজনও সেভাবেই আক্রান্ত হয়। এই 'অন্য কিছু' থেকে সৃষ্ট নিউমোনিয়ায় প্রথম আক্রান্ত মানুষটিকে নির্বাসিত করা হলেও, সরিয়ে নিলেও, কোয়ারেন্টাইনে বন্দী করে রাখলেও, এমনকি মেরে ফেললেও একই এলাকার আরো আরো লোক এই 'অন্য কিছু'র কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবেই। এই 'অন্য কিছু' থেকে বাঁচার জন্য শুধু মাস্ক নয়, পুরো শরীর আবৃত করে ফেললেও কোনো লাভ নেই। কারণ খুব সম্ভবত এটা বায়ুর সাথে মিশে শরীরে প্রবেশ করে। বায়ু থেকে এই 'অন্য কিছু'কে আলাদা করার জন্য বা এর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরে কোনো লাভ নেই।

কিসে লাভ হতো/হবে, তা-ও পরবর্তীতে এ নিবন্ধে আলোচনা করা হবে। আপাতত মাস্ক ব্যবহার সত্যিই কোনো কাজে আসছে কিনা, এ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক।


'করোনাভাইরাস: মাস্ক পরে কি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'বিশ্বের বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। বিশেষ করে চীনে, যেখান থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা, সেখানেও মানুষ বায়ুর দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হরহামেশা নাক আর মুখ ঢাকা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়।

অবশ্য বায়ুুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক কতটা কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্টই সংশয়ে আছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা, যাদেরকে বলা হয় ভাইরোলজিস্ট।...
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের ডঃ ডেভিড ক্যারিংটন বিবিসিকে বলেন, "সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়।"
"বেশিরভাগ ভাইরাসই" বায়ুবাহিত, তিনি বলেন, এবং এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারেনা ঠিকঠাক। তাছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।
তবে হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে এই মাস্ক। আর হাত থেকে মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কিছু সুরক্ষা এটা দেয়।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51218534]

'করোনা মোকাবিলায় সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া যে কারণে সফল' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের মহামারিবিষয়ক অধ্যাপক বেঞ্জামিন কাউলিংয়ের ভাষ্য, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক পরা জাদুকরি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না। প্রত্যেকেই যদি হাত ধোয়া, সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরে, তাহলে হয়তো এটা কাজে দিতে পারে। বাকি সাবধানতাগুলো না মেনে শুধু মাস্ক পরে এই রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে না।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1646273]


'How does coronavirus spread and how can you protect yourself?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় কাতারভিত্তিক আল জাজিরা চ্যানেলের ওয়েবসাইটে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, 'While face masks are popular, scientists doubt their effectiveness against airborne viruses.

Masks may provide some protection to you and others, but because they are loose and made of permeable material, droplets can still pass through.' [https://www.aljazeera.com/news/2020/01/coronavirus-spread-protect-200130115539072.html]

'করোনাভাইরাস: টিকা আছে কি? আক্রান্তরা পুরো সেরে উঠছেন কি? এবং অন্যান্য নির্বাচিত প্রশ্ন' শিরোনামে একটি  প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বিবিসিকে মানুষের করা কিছু প্রশ্নের উত্তর বিবিসির পক্ষ থেকে দেয়া হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, 'মুখে মাস্ক পরলেই যে ভাইরাস প্রতিরোধে বড় ধরণের পরিবর্তন আনা যাবে, এমন খুব কম প্রমাণ আছে।' [https://www.bbc.com/bengali/news-51427768]

সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে ''Do face masks work? Medical experts explain how to protect yourself from coronavirus' শিরেনামে ২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Sam Meredith) বলা হয়, 'Epidemiologists and infectious disease experts have been at pains to emphasize against an unwarranted scramble for face masks in recent weeks, particularly because such hoarding behavior elevates the prospect of an equipment shortage for medical workers.

''Seriously people — STOP BUYING MASKS!'' U.S. Surgeon General Jerome Adams said via Twitter over the weekend.

''They are NOT effective in preventing general public from catching coronavirus, but if healthcare providers can't get them to care for sick patients, it puts them and our communities at risk!'' [https://www.cnbc.com/2020/03/02/coronavirus-do-face-masks-work-and-how-to-stop-it-from-spreading.html?recirc=taboolainternal]

করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর থেকে চীন বা উহানের মানুষ যেভাবে মাস্ক এবং শরীর আবৃতকারী বিভিন্ন পোশাক পরে চলাফেরা করছে, তাতে ভাইরাসটি এতো ব্যাপক মানুষকে আক্রমণ করা সুযোগ পাবার কথা নয়, যদি এটি সত্যিই কোনো 'ভাইরাস' হতো এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ বায়ুবাহিত বা সংক্রামক হতো। কেউ কি বলতে পারবেন, মাস্ক পরার পরও, শরীর ভালোভাবে আবৃত করে ফেলার পরও কেন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়?
'ইতালিতে ৫ হাজার চিকিৎসক-নার্স করোনায় আক্রান্ত' শিরোনামে দৈনিক সমকালে ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (ইউসুফ আলী, রোম থেকে) বলা হয়, 'ইতালিতে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার দু'জন চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন।
এদের একজন জিনো ফাসোলি (৭৩)। তিনি ৪ বছর আগে চিকিৎসক হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে নিজ ইচ্ছায় লোম্বার্দিয়ার উপশহর ব্রেসিয়ার একটি হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার তিনি প্রাণ হারান। এছাড়া ড. লিওনার্দো মার্কি যিনি 'ক্রেমোনা' অঞ্চলের কাজা দি কুরা সান কামিল্লো হাসপাতালের ডিরেক্টর। সোমবার তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।  
প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইতালি। করোনায় ইতালির উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত লোম্বাদিয়ায় উপশহরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সোমবার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 
চীনের চেয়ে ইতালিতে চিকিৎসাকর্মী আক্রান্তের হার দ্বিগুন। এটি বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটিতে। সরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এরপরও প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন সেবাদানকারীরা। ... ইতালির প্রায় ৪৭ শতাংশ আক্রান্ত রোগী বৃহত্তর লোম্বার্দিয়া অঞ্চলের। এ কারণে সরকার এ অঞ্চলটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে করোনার প্রকোপ হ্রাসের চেষ্টা  অব্যাহত রেখেছে।' [https://samakal.com/international/article/200316442]

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩টি প্রশ্ন:
১. কেউ কি বলতে পারবেন, মাস্ক পরার পরও, শরীর ভালোভাবে আবৃত করে ফেলার পরও কেন শুধু সাধারণ মানুষ নয়, চিকিৎসক-নার্সরাও ব্যাপকহারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়?
২. করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে মনে করেই চিকিৎসক-নার্সরা পিপিই ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে। তবু তারা আক্রান্ত হয় কেন?
৩. এতো সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করার পরও চিকিৎসক-নার্সদের ব্যাপকহারে করোনায় আক্রান্ত হওয়া কি এটা প্রমাণ করে না, 'করোনা ছোঁয়াচে নয়, বরং অন্য কিছু?'

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন তখনই, যখন মাথা থেকে এই ধারণা দূর করবেন, করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' নয় এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে না। নয়তো শুধু মাস্ক পরা শুরু করার পর মাস্ক পরিহিত কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতো না।
মাস্ক কি সত্যিই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়? এই প্রশ্নের জবাবে প্রথম যে দুটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়, তার প্রথমটিতে স্বীকার করা হয়, 'সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়'; দ্বিতীয়টিতে স্বীকার করা হয়, 'While face masks are popular, scientists doubt their effectiveness against airborne viruses.'

কিন্তু প্রথমটির শেষে আবার বলা হয়, 'এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারেনা ঠিকঠাক। তাছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।' আরেকটির শেষে বলা হয়, 'Masks may provide some protection to you and others, but because they are loose and made of permeable material, droplets can still pass through.'

উভয় প্রতিবেদনেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে মাস্কের অকার্যকারীতার কথা স্বীকার করার পর আবার মাস্কের অকার্যকারীতার কারণ হিসেবে মাস্কের 'ঢিলেঢালামী'কে দায়ী করা হয়। কিন্তু এ প্রসঙ্গে কারো চিন্তায় ভুলেও এটা আসে না, যার ভয়ে মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কি সত্যিই অস্তিত্বশীল কিনা! কথাটা হঠাৎ করে কিছুটা ধাঁধাপূর্ণ হয়ে গেছে। কথাটা পড়ে অনেকের চোখ হয়তো কপালে উঠে গেছে! বেশি কঠিন করে না বলে সহজ করে বললে বলতে হয়, যার ভয়ে আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি, তা কি সত্যিই হাঁচি-কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার শক্তি রাখে? মাস্কের অকার্যকারীতা চোখের সামনে পরিষ্কার হবার পর এই প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে কেউ একটিবারের জন্যও নতুন করে ভাববার প্রয়োজন মনে না করে মাস্কের ক্ষুদ্র ক্ষদ্র ত্রুটিকে এজন্য দায়ী করেই নিজেকে এবং অন্যকে একটা বুঝ দিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালায়। কোনো উত্তর না পেয়ে এমনও বলা হয়, যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত। এই কথা যারা বলেছেন, তারা কি উহানের চিকিৎসাকর্মীদের এমন কোনো ছবি দেখেননি, যেখানে চিকিৎসাকর্মীরা চোখ সহ পুরো শরীর আবৃত করে রেখেছে?

'করোনাভাইরাস: যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদের কী করতে হবে?' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আমি কি মুখে মাস্ক পরবো?
ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশন বলছে: "ভাইরাসটি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমরা মাস্ক পরার সুপারিশ করি না। এগুলো যে খুব একটা কার্যকর, তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এছাড়াও যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তারা মুখে মাস্ক পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।" [https://www.bbc.com/bengali/news-51802294]

'Medical experts have urged people to stop panic buying face masks, warning that such equipment is not an effective way to protect yourself from the fast-spreading coronavirus.

The advice comes at a time of intensifying concern about COVID-19, which has killed more than 3,000 people worldwide since late last year.
The outbreak was first identified in Hubei province, China, where over 90% of the deaths have been reported. More recently, the virus has been spreading at a faster rate outside China than inside the country.'

সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে 'Do face masks work? Medical experts explain how to protect yourself from coronavirus' শিরোনামে ২ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (By Sam Meredith) এই কথাগুলো বলা হয়। [https://www.cnbc.com/2020/03/02/coronavirus-do-face-masks-work-and-how-to-stop-it-from-spreading.html?recirc=taboolainternal]




সময় এসেছে গৎবাঁধা ধারণা ত্যাগ করার। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক পরে এবং আপাদমস্তক শরীর ঢেকেও যখন দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসাকর্মীরাও করোনাভাইরাসের আক্রমণ এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না, তখনও যদি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে বায়ুবাহিত মনে করে বসে থাকা হয় এবং নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এসব রোগ যে ছোঁয়াচে নয়, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তাহলে মনে হয় না, আর কোনোভাবে কোনো ঘটনা মানুষকে এটা বোঝাতে সক্ষম হবে, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বায়ুবাহিত নয়; নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ ছোঁয়াচে নয়।
বিজ্ঞানের অসংখ্য 'প্রমাণিত সত্য' একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আর কোনো 'প্রমাণিত সত্য' ভুল প্রমাণিত হবে না, এমন কি কোনো কথা আছে? যে 'প্রমাণিত সত্য' নিয়ে নতুন করে ভাববার কথা এখানে বলা হচ্ছে, তা আরো আগে না ভেবে আমরা এ পর্যন্ত কত বড় বড় বিপদে পড়েছি, তা সম্পর্কে একটু ধারণা দিলেই চমকে উঠতে পারে যে কোনো লোক। সে জন্য এই লেখার আরেকটু গভীরে যেতে হতে পারে।

অষ্টম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top