করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]
করোনাভাইরাস যখন 'ভাইরাস' নয়, গুজব
এক. করোনাভাইরাসের ফলে মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় আর নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ বলেই বিজ্ঞান আগ থেকে প্রচার করে আসছে, তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মানুষ যখন দেখেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ নিউমোনিয়ায় ভোগে আর নিউমোনিয়া একটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই মানুষ এটা বুঝে নিতে শুরু করেছে, এই ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়বে নিশ্চিতভাবে। অথচ নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, এই সত্যটা এই লেখার প্রথম পরিচ্ছেদেই পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। এমনকি এই সত্যটা বাস্তবেই যাচাই করে নেয়ার একটি কার্যকরী পন্থার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যে রোগ একজন থেকে আরেকজনে কোনোভাবে ছড়াতে পারে না, সে রোগের গায়ে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগের লেবেল লাগানো কি গুজব নয়? এই গুজবে পুরো বিশ্ব এখন অস্থির। যারা করোনায় আক্রান্ত, তারা তো মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত, যারা আক্রান্ত নয়, তাদেরও আতঙ্কের সীমা নেই। এই আতঙ্কটা শুধুই করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বা ছোঁয়াচে বলে প্রচার করার কারণে।
দুই. চীন বা উহানের সাথে সম্পর্ক নেই, বিগত কয়েক মাসে কোথাও ভ্রমণের রেকর্ডও নেই, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে কোনো সম্পর্কও নেই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের বিষয়টা গুজব ছাড়া আর কিছু নয়। যেমনটা ঘটেছে তাইওয়ান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে। 'Doctor who treated first US coronavirus patient says COVID-19 has been 'circulating unchecked' for weeks' শিরোনামে সিএনবিসি'র ওয়েবসাইটে ৬ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত ১১ মার্চ ২০২০ তারিখে হালনাগাদকৃত একটি নিবন্ধে (By Berkeley Lovelace Jr. and William Feuer) বলা হয়, Compton-Phillips (chief clinical officer of Providence St. Joseph Health) said some front-line workers had been saying 'if' when talking about the virus becoming widespread in the U.S. — until two weeks ago, when cases suddenly cropped up in Iran and Italy with no known connection to China. Then, ''we started saying, 'when,'' she said.' [https://www.cnbc.com/2020/03/06/doctor-who-treated-first-us-coronavirus-patient-says-covid-19-has-been-circulating-unchecked-for-weeks.html] এই এতোগুলো দেশে এমন অনেক মানুষ 'ভাইরাস'টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের সাথে না আছে চীন বা উহানের সম্পর্ক, না আছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সম্পর্ক। তবু এটা 'ভাইরাস' হলো কী করে? তবু আমরা কেন মনে করি 'ভাইরাস'টি ভয়ঙ্কর, বিপজ্জনক,; ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে? কে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে? যারা নিউমোনিয়াকে ছোঁয়াচে মনে করে, তাদের কাছে সত্যিই এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই।
৩৬ নং-এ উল্লেখিত আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, 'WHO chief Ghebreyesus in Geneva said he was concerned about cases outside China with 'no epidemiological link'.
"Although the total number of COVID-19 cases outside of China remains relatively small, we are concerned about the number of cases with no clear epidemiological link, such as travel history to China or contact with a confirmed case," he told reporters during a media briefing.'এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনা আপনিই মাথায় ঢুকে যাবে যখন নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগকে 'ছোঁয়াচে নয়' বলে স্বীকার করে নেয়া হবে। তখন উত্তরটা কী হবে? তখন ভাইরাসটিকে ছোঁয়াচে মনে না করার কারণে কোথাও মানুষ ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করলে যদি একই সময় অন্য কোথাও এভাবে কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন তার নিউমোনিয়াকে সাধারণ নিউমোনিয়া বলেই গণ্য করা হবে এবং তার সাথে 'একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সাথে যে রকম আচরণ করা হয়', সেরকম আচরণই করা হবে। শুধু তা-ই নয়, যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে নয়, তাই কোথাও মানুষ ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করলে, 'প্রথমে যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের কাছ থেকে নতুন কেউ আক্রান্ত হবে', এই চিন্তাটা না করে সবাই ভাবতো, ঐ জায়গায় কোনো বিষক্রিয়া বা দূষণের কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে, এটা ভেবে মানুষ ওই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতো। আর তারা অন্যত্র চলে গেলেও নতুন জায়গার কেউ 'তাদের কাছে থেকে এই রোগে নিজেরা আক্রান্ত হবে' এটা নিয়ে চিন্তিত হবার পরিবর্তে তাদের শুশ্রূষায় লেগে যেতো কোনো রকম দ্বিধায় না ভুগে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে?
কী হচ্ছে এসব? ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না কোনোভাবে। লিখে বুঝানো যাবে না কোনোভাবে। শুধু সারাবিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায়/ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভাষায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত এ সম্পর্কিত সংবাদ, প্রতিবেদন ও নিবন্ধগুলো একত্র করলে যা হবে, তা দিয়ে ৫০০ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট কয়েক হাজার বই হতে পারে। করোনাভাইরাসের উপর উইকিপিডিয়া এ পর্যন্ত মোট কতগুলো নিবন্ধ রচনা করেছে, আমার জানার দরকার হয়নি। শুধু উইকিপিডিয়ার নিবন্ধগুলো দিয়েই ৫০০ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট অনেকগুলো বই ছাপানো যেতে পারে! উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে শুধু উহান বা চীন নয়, গুজবে গুজবে, আতঙ্কে আতঙ্কে পৃথিবীবাসী নাকাল। আপাতত চীনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি করুণ। তিন হাজারের (৩০০০) উপর মানুষ অনেক আগেই মারা গেছে (অফিসিয়াল হিসাব মতে, ননঅফিসিয়াল হিসাবের বাস্তবতা ভিন্নও হতে পারে)। এটা ৪ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর খবর আসছে। জানি না, অন্য কোনো দেশের অবস্থা এর চেয়ে ভয়াবহ হয় কিনা! উহানে গণমৃত্যুসহ অনেক দেশেই ভাইরাসটি কেড়ে নিতে শুরু করেছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। ইতোমধ্যে অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত সবগুলো মহাদেশে পৌঁছে গেছে করোনাভাইরাস। পৃথিবী বার বার ধ্বংস হবার কথা (যদিও গুজব ছিল) জেনেও হয়তো মানুষ এতো বেশি আতঙ্কিত হয়নি, যতোটা আতঙ্কিত হয়েছে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কথা শুনে। আতঙ্ক দিন দিন এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়াচ্ছে। আতঙ্ক কমানোর উদ্যোগের চেয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর অপতৎপরতা আনুপাতিকহারে বেশি হতে পারে। এর একটা প্রধান কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ নিয়ে পুরাতন একটি ভ্রান্ত ধারণার পাশাপাশি মানবজীবনে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর 'কল্পিত' অপতৎপরতা।
উহান শহরকে তালাবদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগেই (২৩ জানুয়ারি), সেখানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর 'তালাবদ্ধ করা পর্যন্ত যারা ছিল', তাদেরকে ভেতরে রেখেই। '2020 Hubei lockdowns' শিরোনামে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে (সর্বশেষ ৪ মার্চ হালনাগাদকৃত) বলা হয়, 'In 23 January 2020, the central government of the People's Republic of China imposed a lockdown in Wuhan and other cities in Hubei province in an effort to quarantine the epicentre of an outbreak of coronavirus disease 2019 (COVID-19). This was the first known instance in modern history of locking down a major city of as many as 11 million people, and the incident was commonly referred to in the media as the "Wuhan lockdown" (Chinese: 武汉封城; pinyin: Wǔhàn fēng chéng). The World Health Organization (WHO), although stating that it was beyond its own guidelines, commended the move, calling it "unprecedented in public health history".' [https://en.wikipedia.org/wiki/2020_Hubei_lockdowns]
শুধু উহান নয়, পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে মানুষকে এভাবে বন্দী করার অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বিগত কয়েক দিনে। অনেককে নিজ গৃহেও বন্দী করে রাখা হয়েছে, তার 'ভাইরাস' অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায়। শুধু মানুষকে নয়, মানুষভর্তি জাহাজকেও কোয়ারেন্টাইন করে রাখার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো প্রথমবারের মতো।
কোয়ারেন্টাইনের ভেতরে যাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবেন, তাদের অনেকেই ভবিষ্যতে কখনো হয়তো তাদের এই বিভীষিকাময় জীবনের কাহিনী নিয়ে লোমহর্ষক উপন্যাস অথবা জবানবন্দীমূলক নিবন্ধ লিখতে পারেন। জানি না কেমন ভয়ঙ্কর ও শরীর শিউরে ওঠা গল্প হয় সেগুলো! আমরা তখন আরো গভীরভাবে জানতে পারবো তাদের জীবনের হৃদয়বিদারক কাহিনী সম্পর্কে। আপাতত ৩৩ মিনিটের একটি ভিডিও আমরা দেখে নিতে পারি তালাবদ্ধ উহানের উপর, যা 'The lockdown: One month in Wuhan' শিরোনামে ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, যার লিঙ্ক হচ্ছে এই: https://bit.ly/3cGDaH3
করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত (৪ মার্চ পর্যন্ত) শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীই মারা যায়নি, করোনাভাইরাস 'গুজব' হিসেবে ছড়িয়ে পড়ার কারণেও বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে বিভিন্নভাবে, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না।
করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে, এই আতঙ্কে ভারতে একজন সন্দেহভাজন করোনাভাইরাস রোগী নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভেবে আত্মহত্যা' শিরোনামে দৈনিক সমকালে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে চীনসহ প্রায় গোটা বিশ্ব। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতের বেশ কিছু শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রোগীরা। আতঙ্ক গ্রাস করছে সাধারণ মানুষকে। আর সেই আতঙ্কই প্রাণ নিল এক ব্যক্তির।অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ভেবে আত্মহত্যা করেছেন।...
শেষামনাইডু কান্দ্রিগা গ্রামের বাসিন্দা কে বালকৃষ্ণ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত খবর দেখে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনিও এই রোগে আক্রান্ত। সর্দি-কাশি ও জ্বরের জন্য তার চিকিৎসাও চলছিল। ডাক্তাররা জানান, ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তবে তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি।
তবে ডাক্তারের কথায় আমল দেননি বালকৃষ্ণ। নিজেকে করোনায় আক্রান্ত ভেবে তিনি পরিবারকে বাঁচানোর জন্য কঠিন পদক্ষেপ নেন। মঙ্গলবার স্ত্রী-সন্তানকে ঘরে তালাবন্দি করে রেখে মায়ের কবরস্থানে চলে যান তিনি। তার স্ত্রীর ডাকাডাকিতে প্রতিবেশীরা দরজা খুলে দেওয়ার পর সবাই ছুটে যান কবরস্থানে। তারা গিয়ে দেখেন, মায়ের কবরস্থানের পাশে একটি গাছের ডালে ঝুলছেন বালকৃষ্ণ।' [https://samakal.com/international/article/200212358]
বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের বাসিন্দা রতন রপ্তান (৩৫) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মা রেনুকা রপ্তানের (৫৬) মৃত্যু হয়েছে। দৈনিক নয়াদিগন্তে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় 'সাতক্ষীরায় ছেলের করোনাভাইরাসের গুজবে মায়ের মৃত্যু' শিরোনামে।' [http://www.dailynayadiganta.com/khulna/479970]
'সৌদিতে করোনা সন্দেহে বিদেশি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক সমকালে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশি এক শিক্ষার্থী সৌদি আরবে আত্মহত্যা করেছেন। জেদ্দার একটি হাসপাতাল থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। সন্দেহজনকভাবে হাসপাতালে তাকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। শনিবার সকালে তার মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টে করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে। রিপোর্ট আসার আগেই আত্মহত্যা করেন তিনি। তবে তিনি কোন দেশের নাগরিক, তা এখনও জানা যায়নি। খবর আরব নিউজের।' [https://samakal.com/todays-print-edition/tp-world/article/200226655]
বৃটেনের অন্যতম বিশ্বস্ত নিউজ ব্র্যান্ড দ্য মিররের অনলাইনে 'North Korea official suspected of having coronavirus 'shot dead for trip to public baths' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন (By Milo Boyd) প্রকাশিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'A North Korean official has reportedly been executed after he broke the terms of his coronavirus quarantine.
The trade official had been placed in medical quarantine after returning to the authoritarian country from China.After the government worker was caught going to a public bath however, he was arrested and immediately shot, North Korean sources told Donga.'
[https://www.mirror.co.uk/news/world-news/north-korea-official-suspected-having-21488373]
'Mumbai Man Allegedly Kills Brother For Leaving Home During Lockdown: Cops' শিরোনামে ভারতের এনডিটিভির ওয়েবসাইটে ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Mumbai: A man was arrested for allegedly killing his brother after they got into a fight over stepping out of their home amid the coronavirus lockdown in Mumbai's Kandivali, police said on Thursday.
The accused identified as Rajesh Laxmi Thakur killed his younger brother Durgesh after the former along with his wife stepped out of the house to buy groceries in the market on Wednesday afternoon.According to police, when the couple returned from the market, Durgesh questioned them about the urgency to buy groceries amid the lockdown. Following this, an argument ensued between the brothers and Durgesh slapped Rajesh's wife. Later, Rajesh attacked his younger brother with a kitchen knife.
As Durgesh had sustained serious injuries, the victim was rushed to a nearby hospital where he was declared brought dead. ' [https://www.ndtv.com/mumbai-news/mumbai-man-kills-brother-for-leaving-house-during-lockdown-over-coronavirus-spread-2201474]
[৪ মার্চের পরে সংঘটিত এরকম কিছু ঘটনা]
'ছেলের মৃত্যু খবরে পিতার মৃত্যু; করোনা রিপোর্ট এলো নেগেটিভ' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ১২ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'নারায়ণগঞ্জের (বাংলাদেশ) সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া রিমন সাউদ (২৪) এর পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে মৃত রিমনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও নাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুবেল হাওলাদার ও নাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ সাদরিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (১১ মে) রাত ৩টার দিকে অসুস্থ বোধ করলে রিমন সাউদ নিজ বাড়ীর ২য় তলা থেকে পায়ে হেটে গাড়িতে উঠেন। পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসাপাতলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু করোনার উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে কোনো হাসপাতালে ভর্তি নেয় নাই বলে জানায় তার পরিবার। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৫ টার দিকে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ছেলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে হার্ট এটার্ক করেন বাবা হাজী ইয়ার হোসেন।' [https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/05/12/529636]
'করোনা সন্দেহে ছেলেকে খুন করলেন ফুটবলার বাবা!' শিরোনামে কালের কন্ঠে ১৬ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ছেলে। নমুনার পরীক্ষার রিপোর্ট তখনও আসেনি। জানা যায়নি শিশুটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা। কিন্তু নিজেদের 'নিরাপত্তার জন্য' নিজের ৫ বছরের ছেলেকে খুন করে ফেলল ফুটবলার পিতা! ভয়াবহ এই ঘটনা ঘটেছে তুরস্কে। কোহভের তকতাস নামের এক ফুটবলার ছেলেকে খুন করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
তকতাস এর আগে তুরস্কের প্রথম সারির লিগে খেললেও বর্তমানে তিনি অপেশাদার লিগে বুরসা ইলদিরইমস্পুরের হয়ে খেলেন। তুরস্কের হাবেরতুর্ক চ্যানেলে জানানো হয়েছে, সেই ফুটবলার নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে স্বীকার করেন যে, তিনি নিজেই ছেলেকে বালিশে চাপা দিয়ে খুন করেছেন কারণ পুত্রকে তিনি মোটেই ভালোবাসেন না। অনুশোচনায় ভুগে ছেলের মৃত্যুর ১১ দিন পরে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু যার জন্য এই ভয়ানক ঘটনা, তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।
কারণ তকতাসের ছেলের নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ এসেছে। এপ্রিলের ২৩ তারিখে প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৫ বছর বয়সী শিশুটি। সেদিন তুরস্কে শিশু দিবস ছিল। ছেলেকে তার বাবার সঙ্গেই আইসলেশনে রাখা হয়। সেদিনই তার পুত্র কাশিমকে হত্যা করেন ফুটবলার পিতা।' [https://www.kalerkantho.com/online/sport/2020/05/16/912399]
ভারতের এনডিটিভি নিউজের ওয়েবসাইটে 'Indian-Origin Man Called "Chinese", Beaten Up In Israel Over Coronavirus' শিরোনামে ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন বলা হয়, 'Jerusalem : An Indian-origin Jew was badly beaten by two people who called him a "Chinese" and yelled ''Corona ! Corona " in Israel 's Tiberias city, in an apparent racist assault linked to the virus outbreak.
Am-Shalem Singson, 28, from the Bnei Menashe community, from Manipur and Mizoram, was admitted to the Poriya hospital with severe chest injuries, Channel 13 reported.
The police continues to search for the two suspects based on his description of the incident, the leading Israeli TV channel reported.
Mr Singson told the police that he tried very hard to explain to the attackers that he was not Chinese and was not infected by the coronavirus, but it did not help.
The incident happened on Saturday.
Mr Singson immigrated to Israel from India with his family three years ago, the report said.
There were no witnesses to the incident and the police search is primarily based on the security footage in the area.
"We were shocked to receive the report of the vicious and racist attack in Tiberias," Michael Freund, Chairman and Founder of Shavei Israel, the organisation that has been working on the immigration of Bnei Menashe to Israel, was quoted by the Channel as saying.
"I demand that the Israeli police investigate the incident immediately and prosecute those who committed this heinous act," Mr Freund said.' [https://www.ndtv.com/indians-abroad/indian-origin-man-called-chinese-beaten-up-in-israel-over-coronavirus-2195857]
সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, 'Mr Singson told the police that he tried very hard to explain to the attackers that he was not Chinese and was not infected by the coronavirus, but it did not help.'
এই বিষয়টার সাথে বাংলাদেশ ও ভারতে 'ছেলেধরা' গুজবের একটা দিক থেকে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ছেলেধরা গুজবেও ভিকটিম যতোই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে, আক্রমণকারীরা কোনোভাবেই তার কথায় কর্ণপাত করেনি, ভারতের এই লোকের সাথে ইসরাইলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায়ও সে যতোই নিজেকে 'ভারতীয় এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়' বলে বোঝাতে চেষ্টা করেছে, কোনো লাভ হয়নি; বিশ্বাস করা দূরের কথা, তার কথায় কেউ কর্ণপাতও করেনি।
এরকম অসংখ্য ঘটনা বিশ্বের নানা দেশে নানা প্রান্তে ঘটে থাকতে পারে, যার দশ হাজার ভাগের একভাগও এই নিবন্ধে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। কারণ সেগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত। পৃথিবীতে যদি এতোগুলো ভাষা না হতো, মানবজাতি যদি মাত্র একটা ভাষা-ই ব্যবহার করতো এবং এই নিবন্ধ তৈরিতে অনেকগুলো মানুষ একসাথে কাজ করতো, তাহলে এরকম বেদনাদায়ক আরো কিছু ঘটনা এই নিবন্ধে উল্লেখ করা যেতো (নিবন্ধটি হয়তো তখন আরো অনেক বড় হয়ে যেতো)। শুধু বাংলাভাষায় প্রকাশিত ঘটনাগুলো খুঁজে খুঁজে এ নিবন্ধে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হলেও নিবন্ধটির পরিধি আরো অনেক বেড়ে যাবে। অবশ্য সংগ্রহে আরো অনেকগুলো ঘটনা আছে। লেখাটি বড় হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়নি।
করোনাভাইরাস বা নিউমোনিয়া একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়, একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে লাফ দেয়, বিজ্ঞান মানুষকে যুগ যুগ ধরে এই বিষয়ে 'সচেতন' করে তোলার কারণে উহান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক মানুষ তার সাধারণ নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জাকেও করোনাভাইরাস ভেবে তার 'ভাইরাস' যেন আরেকজনকে আক্রান্ত করতে না পারে, সেই আশঙ্কায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে; অনেক মানুষ 'ভাইরাসে আক্রান্ত' ভেবে তার কাছের কাউকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করেনি; এরকম আরো কত বিচিত্র মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে দেশে দেশে!
'ছেলেধরা' বের হবার গুজবের সাথে এই গুজবের আরো একটি মিল লক্ষ্য করা যাক। গত বছর বাংলাদেশের কোথাও কোনো এক শিশু অপহরণকারীকে মানুষ হাতেনাতে ধরে ফেলার খবর চারদিকে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মানুষ এমন সব লোককে ছেলেধরা ভেবে গণপিটুনি দিতে এবং গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে শুরু করে, যাদের সাথে ছেলেধরা বা শিশু অপহরণকারীর কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ মিলে যায়। এভাবে চীনের উহানে কোনো 'বিষক্রিয়া বা দূষণে'র প্রতিক্রিয়া হিসেবে (বিস্তারিত আলোচনা পরে আসছে) মানুষ যখন ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে শুরু করে, তখন চীনের অন্যান্য স্থানে এবং বিশ্বের অনেক দেশে এমন সব মানুষকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা শুরু হয়, যাদের সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ মিলে যায় বা করোনাভাইরাস রোগীর শারীরিক বৈশিষ্টের সাথে যাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অনেক মিল পাওয়া যায়। এই মিলে যাবার ফলেই তাদেরকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বলেই ঘোষণা করা হয়। তারা আদৌ চীনে থেকে এসেছে কিনা বা চীন থেকে আগত কোনো করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে এসেছে কিনা, সে দিকে আর লক্ষ্য করার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। এরকম মানুষগুলোর উপর শুরু হয় চরম মানসিক নিপীড়ন। দক্ষিণ কোরিয়ার যে মহিলাকে 'সুপার স্প্রেডার' বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, ওই মহিলা বড়ই বিভীষিকাময় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, সেই ঘটনার পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সার্বিক পরিস্থিতিও হয়ে যায় অস্থিতিশীল। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
লাইভ সায়েন্স ডটকমের ওয়েবসাইটে ''Superspreader' in South Korea infects nearly 40 people with coronavirus' শিরোনামে একটি নিবন্ধ (By Nicoletta Lanese) প্রকাশিত হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'The number of coronavirus cases in South Korea has soared to about 602, according to The New York Times. More than half of those cases involve members of, or those somehow linked to, the religious sect, the Shincheonji Church of Jesus, where a so-called superspreader infected at least 37 people last week.
A so-called superspreader infected at least 37 people at her church with the new coronavirus, and dozens of additional worshippers are also showing symptoms of the disease, called COVID-19, according to news reports.
The 61-year-old woman attends the Shincheonji Church of Jesus the Temple of the Tabernacle of the Testimony in Daegu , South Korea , according to the international news outlet AFP. The city, located in the southern part of the country, is home to about 2.5 million people. The woman, called "Patient 31" by Korea's Centers for Disease Control and Prevention, developed a fever on Feb. 10 and attended four church services before being diagnosed with COVID-19.
Despite running a fever, the woman twice refused to be tested for the coronavirus, as she had not recently traveled abroad, according to The Guardian. So far, she and 37 other members of the church have tested positive for the novel coronavirus, called SARS-CoV-2, and 52 additional churchgoers have shown symptoms of infection but have not yet been tested. (SARS-CoV-2 is the name of the coronavirus that causes COVID-19.)
Authorities described the outbreak as a "super-spreading event," as the lone woman transmitted the infection to an unusually high number of people, according to Reuters. Current estimates suggest that a single person with the novel coronavirus spreads the infection to about 2.2 additional people, on average. The surge of infection at the church brings the total number of confirmed cases in South Korea to 104; one death associated with the virus has occurred in the country so far.
"We are in an unprecedented crisis," Daegu Mayor Kwon Young-jin said during a news conference this week, Reuters reported. "We've asked [all members of the church] to stay at home, isolated from their families." Additionally, Kwon advised residents of Daegu to stay indoors and ordered that all schools for young children and public libraries be shut down, according to The Guardian. Local and U.S. military forces stationed in the city have been forbidden from traveling off base or receiving outside guests.
"It's like someone dropped a bomb in the middle of the city. It looks like a zombie apocalypse," resident Kim Geun-woo told Reuters by phone in regard to the abandoned streets of the city.' [https://www.livescience.com/coronavirus-superspreader-south-korea-church.html] একজন মহিলা, যে কখনো দেশের বাইরে যায়নি, সে সাধারণ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে যাবার পর তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এমনকি তার মাধ্যমে নাকি তাৎক্ষণিক ৩৭ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে! এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় যা ঘটতে শুরু করে, তা প্রতিবেদনটিতেই উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে কোনো কারণেই হোক, হাসপাতালে জ্বর পরীক্ষায় মহিলাটির জ্বর যখন করোনাভাইরাস হিসেবে শনাক্ত হয়, তখন কেউ একবারের জন্যও এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি যে, সে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে গিয়েছিল কিনা! মূলত এখানেই ছেলেধরার সাথে করোনাভাইরাসের মিল।
মহিলাটি যদি উহানে না গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে উহানের করোনাভাইরাস কিভাবে 'ভাইরাস' হয়ে তাকে আক্রমণ করলো? উহানের সাথে সম্পর্কহীন একজন মহিলা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের হোতা, এটা কিভাবে সম্ভব? ওই নারীর করোনাভাইরাস যদি উহানে না গিয়ে হতে পারে, অন্যদেরও কেন হতে পারে না? বিজ্ঞান নিউমোনিয়াকে সংক্রামক বলার কারণেই এই প্রশ্নের উৎপত্তি। যদি এই মহিলা সত্যিই করোনাভাইরাসের রোগী হয়ে থাকেন, পাশাপাশি চীন বা উহানের সাথে, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে তার কোনো যোগসূত্র না থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, হয়তো (১) দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস অন্য কোনো উৎস থেকে ছড়িয়েছে, যার প্রথম শিকার এই মহিলা। কিন্তু সেই অজ্ঞাত উৎস কী? সময়ই হয়তো এর সঠিক উত্তর দিতে পারে; নয়তো (২) মহিলাটির করোনা পরীক্ষার ফলাফল সঠিক ছিল না।
ছেলেধরা গুজবের সাথে করোনাভাইরাস গুজবের অমিলও রয়েছে অন্তত একটি। ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পড়ার এক পর্যায়ে গুজবটি যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু অপরিচিত ও নিরীহ মানুষ যখন মানুষের হাতে খুন হতে শুরু করে, তখন একটা মর্মান্তিক মৃত্যু মানুষের 'গুজব-বিশ্বাসে' প্রবলভাবে আঘাত হেনে 'গুজব বিশ্বাস'টি ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দেয়; মানুষকে গুজবটিতে বিশ্বাসের ভয়াবহতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার ফলে মানুষ নিজেদের ভুল বুঝতে পারে; মানুষ 'ছেলেধরা বের হওয়া' গুজবে বিশ্বাস করা থেকে পিছু হটে। কিন্তু উহানের করোনাভাইরাস দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর গুজবটিকে এতোই শক্তভাবে মানুষ বিশ্বাস করে ফেলেছে, (১) বিগত কয়েক মাসে উহানের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না, এমনকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথেও কোনোভাবে সম্পর্ক নেই, এমন কিছু মানুষ নিজেদের নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জাকে করোনাভাইরাস ভেবে আত্মহত্যা করার পরও, (২) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ভেবে একজনকে গুলি করে হত্যা করার পরও, (৩) 'চীনের নাগরিক এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত' ভেবে একজন ভারতের নাগরিককে শারীরিক নির্যাতনের পরও, (৪) মেয়ের সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জাকে করোনাভাইরাস মনে করে আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবার পরও, (৫) এই চার রকম ঘটনার মতো আরো অনেক মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত গবার পরও, (৬) কোনোভাবে কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না এসেও অসংখ্য মানুষের করোনা 'ভাইরাস' শনাক্ত হবার পরও, (৭) পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য মানুষ সাধারণ নিউমোনিয়া/ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েও করোনায় আক্রান্ত বলে অভিযুক্ত হবার পরও, এমনকি মারা যাবার পরও আমাদের টনক নড়েনি; আমরা করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' মনে করা থেকে এখনো পেছনে আসতে পারিনি। বরং আমরা এখনও বিশ্বাস করছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে না এসেও, চীনে বা উহানে গত তিন-চার মাসে না গিয়েও মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে! জানি না আমাদের 'বোধ' জেগে উঠার জন্য আর কত ভয়াবহ ঘটনা সংঘটিত হওয়া দরকার!
করোনাভাইরাস নিয়ে গুজবের আরেকটা উদাহরণ দেখা যাক:
২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় 'করোনাভাইরাস : ভারতে ৪০ হাজার মানুষ 'সংক্রমিত' মাত্র একজনের কাছ থেকে' শিরোনামে। আতঙ্কিত হবার মতো সংবাদ। বিবিসির ইংরেজি ভার্সনের ওয়েবসাইটে অবশ্য সংবাদটি 'Coronavirus: India 'super spreader' quarantines 40,000 people' শিরোনামে প্রকাশিত হয় একই তারিখে। বলা হয়, 'Indian authorities in the northern state of Punjab have quarantined around 40,000 residents from 20 villages following a Covid-19 outbreak linked to just one man.
২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় 'করোনাভাইরাস : ভারতে ৪০ হাজার মানুষ 'সংক্রমিত' মাত্র একজনের কাছ থেকে' শিরোনামে। আতঙ্কিত হবার মতো সংবাদ। বিবিসির ইংরেজি ভার্সনের ওয়েবসাইটে অবশ্য সংবাদটি 'Coronavirus: India 'super spreader' quarantines 40,000 people' শিরোনামে প্রকাশিত হয় একই তারিখে। বলা হয়, 'Indian authorities in the northern state of Punjab have quarantined around 40,000 residents from 20 villages following a Covid-19 outbreak linked to just one man.
The 70-year-old died of coronavirus - a fact found out only after his death.
The man, a preacher, had ignored advice to self quarantine after returning from a trip to Italy and Germany , officials told BBC Punjabi's Arvind Chhabra.
However, experts worry that the real number of positive cases could be far higher. India has one of the lowest testing rates in the world, although efforts are under way to ramp up capacity.
There are fears that an outbreak in the country of 1.3 billion people could result in a catastrophe.
The man, identified as Baldev Singh, had visited a large gathering to celebrate the Sikh festival of Hola Mohalla shortly before he died.
The six-day festival attracts around 10,000 people every day.' [https://www.bbc.com/news/world-asia-india-52061915]
অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারে ৩১ মার্চ তারিখে প্রকাশিত করোনাভাইরাসের সর্বশেষ হালনাগাদে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ১,২৫১ জন মাত্র!
উভয় তথ্যই কি সঠিক? কিভাবে হতে পারে! গুজব শুধু বাংলাদেশেই ছড়ায় না, ভারত-বৃটেন থেকেও গুজব ছড়ায়, হয়তো বেশি নয়, কম। করোনাভাইরাস নিয়ে এরকম গুজবে গুজবে পুরো বিশ্ব অস্থির। একদিন না একদিন মানুষের নিকট তা পরিষ্কার হবেই।
এটা একটা চরম বিস্ময়কর বিষয়, করোনাভাইরাস এতো ভয়ঙ্কর গুজব হয়ে দেখা দিয়েছে যে, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে, তার ধারেকাছে যাওয়া সবাইকে আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মনে করে বসি। গুজব আর কাকে বলে! এমন খবরগুলোই সমাজে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এক কান থেকে একশ কানে, গুণিতক হারে। খারাপ খবর দ্রুত ছড়ায়। আমরাই এসব খবর ছড়াই অন্যকে সতর্ক করার জন্য। কিন্তু যেসব লোককে করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়, শেষে যখন পরীক্ষায় তাদের করোনা নেগেটিভ আসে, সেই খবর আর তেমন প্রচারিত হয় না বা প্রচারিত হলেও যারা গুজবের খবর শুনেছে, তাদের সবার কানে পৌঁছে না।
এভাবে করোনার উপদ্রবের এই সময় চীনের বাইরের এমন অনেকের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ খুঁজে পাওয়াকেও করোনাভাইরাস বলেই বিশ্বাস করি, যাদের সাথে সম্প্রতি চীনে যাতায়াত বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না! কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না, এটি কোনো ভাইরাস নয়, 'কোনো নির্দিষ্ট কারণে' একটা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের ব্যাপকহারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া মাত্র (যাকে অনেক জায়গায় বলা হয়েছে 'অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়া')। প্রশ্ন থেকে যায়, উহানের সাথে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সম্পর্ক ছাড়া যাদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে, করোনাভাইরাস যদি ছোঁয়াচে না হয়, তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব কিভাবে পাওয়া গেছে? যৌক্তিক প্রশ্ন। আমার বিশ্বাস, আর মাত্র এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া গেলে করোনাভাইরাসকে 'ভাইরাস' বলে বিশ্বাস করার শক্তি আমাদের অনেকের অনেকাংশে কমে যাবে। তবে বিজ্ঞানের প্রতি অতি বিশ্বাসী এবং পরিষ্কার ভিন্নমত বুঝে নিতে বা মেনে নিতে দ্বিধান্বিত কিছু লোক থেকেই যাবে, যারা হাজারো যুক্তি, তথ্য দিয়ে বুঝালেও নিজেদের মনে দীর্ঘদিন থেকে লালন করা এই ধারণাটা কোনোভাবে হাতছাড়া করতে রাজি হবেন না। এদের কাছ উপযুক্ত তথ্য/যুক্তি উপস্থাপন করা 'উলুবনে মুক্তা ছড়ানো' ছাড়া কিছু নয়।