করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]
প্রথম অধ্যায়
নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কি হাঁচি-কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচলিত একটি বিশ্বাস হচ্ছে, হাঁচি-কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অনেক রোগ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলোকে (যেমন: সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া) সংক্রামক রোগ বলেই মনে করা হয় এবং সর্বত্র প্রচার করা হয়। গভীরভাবে আমাদের বিশ্বাস জন্মে গেছে এই কথায়, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এই রোগগুলোতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্য যে কোনো লোক এগুলোতে আক্রান্ত হতে পারে। ডাক্তারদের মুখে এমন কথা/সতর্কবাণী শুনে শুনেই ধারণাটি আমাদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় ডা. প্রশান্ত পালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে, 'নিউমোনিয়া থেকে সাবধান' শিরোনামে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, 'নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে?', তিনি উত্তরে বলেন, 'নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে 'ড্রপলেট ইনফেকশন' বলা হয়। সাবধানতার জন্য, যাঁরা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকেন, তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করা দরকার।' [https://www.anandabazar.com/lifestyle/beware-of-pneumonia-1.938611]
এই ডাক্তার অবশ্য বলেছেন 'ছড়াতে পারে', সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন, নিশ্চয়তার কথা নয়; অন্যরা হয়তো বাড়িয়ে বলে। শুধু ডাক্তাররা নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ প্রায় সকল নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এটাই বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো ছোঁয়াচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে Pneumonia শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Pneumonia can be spread in a number of ways. The viruses and bacteria that are commonly found in a child's nose or throat, can infect the lungs if they are inhaled. They may also spread via air-borne droplets from a cough or sneeze. In addition, pneumonia may spread through blood, especially during and shortly after birth. More research needs to be done on the different pathogens causing pneumonia and the ways they are transmitted, as this is of critical importance for treatment and prevention.' [https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia]
উইকিপিডিয়ায় Influenza শিরোনামের নিবন্ধে বলা হয়, 'Influenza can be spread in three main ways: by direct transmission (when an infected person sneezes mucus directly into the eyes, nose or mouth of another person); the airborne route (when someone inhales the aerosols produced by an infected person coughing, sneezing or spitting) and through hand-to-eye, hand-to-nose, or hand-to-mouth transmission, either from contaminated surfaces or from direct personal contact such as a handshake. The relative importance of these three modes of transmission is unclear, and they may all contribute to the spread of the virus. In the airborne route, the droplets that are small enough for people to inhale are 0.5 to 5 μm in diameter and inhaling just one droplet might be enough to cause an infection. Although a single sneeze releases up to 40,000 droplets, most of these droplets are quite large and will quickly settle out of the air. How long influenza survives in airborne droplets seems to be influenced by the levels of humidity and UV radiation, with low humidity and a lack of sunlight in winter aiding its survival.' [https://en.wikipedia.org/wiki/Influenza]
কিন্তু এই ধারণা সত্যিই সঠিক কিনা, তা অন্তত আগে ভালো করে যাচাই করা উচিত ছিল।
প্রথমে আমাদের পরিষ্কারভাবে জানা দরকার, কেন মানুষ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়?
নিউমোনিয়া সাধারণত শিশুদের বেশি হয়। বড়রাও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তবে পরিমাণে কম। আর শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার সবচেয়ে বড় বা প্রধান কারণ হলো, শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা, ঠান্ডায় শরীরে কাঁপুনি আসা। বড়রাও অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। অবশ্য সবার ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার ভিন্ন কিছু কারণও থাকতে পারে। সেসব একেবারে ব্যতিক্রম। নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি রোগ। ফুসফুসে ঠান্ডা লেগেই মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিতে ডা. প্রশান্ত পাল বলেন, 'সামান্য ঠান্ডা লাগা থেকেও কেউ কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সকলেই যে সামান্য ঠান্ডা লাগলেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবেন তা নয়। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে সামান্য ঠান্ডা লাগা থেকে নিউমোনিয়া সাধারণত হয় না। তবে যাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, বিশেষ করে শিশু কিংবা প্রবীণ মানুষের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশ বেশিই।'
দৈনিক যুগান্তরে ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত' যেসব লক্ষণে বুঝবেন নিউমোনিয়া, বাঁচতে কী করবেন?' শিরোনামের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, 'ভারতের বিখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাট জানান, শীত পড়তে শুরু করলেই নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার সময় বুকে ব্যথা হয়। এ সময় দ্রুত চিকিৎসা রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারে। তাঁর মতে, নিউমোনিয়ায় ছোঁয়াচে নয়। তবে রোগী কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। একে 'ড্রপলেট ইনফেকশন' বলা হয়।' [https://www.jugantor.com/lifestyle/265762]
ডা. গৌতম বরাট নিশ্চিভাবে বললেন, 'নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে নয়', আর সম্ভাবনার ভিত্তিতে বললেন, 'তবে রোগী কাশি বা হাঁচি থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।' এই 'ছড়াতে পারে' সম্ভাবনাকে সারা বিশ্বে 'ছড়ায়' বলেই বিশ্বাস করে। কিন্তু কেউ বলতে পারবে না, এই বিশ্বাসের ভিত্তি কী?
এই জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত Pneumonia শীর্ষক নিবন্ধে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ সম্পর্কে বলা হয়, 'Pneumonia can be spread in a number of ways. The viruses and bacteria that are commonly found in a child's nose or throat, can infect the lungs if they are inhaled. They may also spread via air-borne droplets from a cough or sneeze. In addition, pneumonia may spread through blood, especially during and shortly after birth. More research needs to be done on the different pathogens causing pneumonia and the ways they are transmitted, as this is of critical importance for treatment and prevention.' [https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/pneumonia]
নিউমোনিয়া নিয়ে এতো বছর ধরে গবেষণা করার পরও এখানে নিউমোনিয়া সংক্রমণ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এগুলো কাশি বা হাঁচি থেকে বায়ুবাহিত ফোঁটাগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আবারো বলছি, বলা হচ্ছে, 'ছড়িয়ে পড়তে পারে।' এখানেও সম্ভাব্যতা, নিশ্চয়তা নয়। এমনকি এই নিবন্ধে আরো একটি চমকপ্রদ কথা বলা হয়। বলা হয়, 'নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী বিভিন্ন রোগজীবাণু এবং সেগুলো কীভাবে সংক্রমিত হয়, সে সম্পর্কে আরও গবেষণা করা দরকার। কারণ চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
বলা হয়েছে, আরো গবেষণা করা দরকার। কিন্তু এই গবেষণা শেষ হবে কবে? গবেষণা শেষ হতে হতে মানুষের কত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, উপলব্ধিও করতে পারছে না এখনো অনেকে! এই লেখা শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি নতুন একটা উপলব্ধি সবার মনে সৃষ্টি হবে। আর এই 'অনেকটা চিরন্তন' সম্ভাব্যতা চিরকালের জন্য দূর করার একটা কৌশল এই লেখার পক্ষ থেকে বলে দেয়া হবে। কৌশলটি প্রয়োগ করলে এই সম্ভাব্যতা পরিণত হবে নিশ্চয়তায়, এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিন্ত হতে পারেন।
আর সর্দি-কাশি, যাকে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা বলা হয়, এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় মানুষ কী কারণে আক্রান্ত হয়, তা শুধু ডাক্তাররা নয়, সচেতন অনেকেই বুঝেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হবার কিছু কারণ হলো- (ক) ঋতু পরিবর্তনের ফলে জলবায়ুতে ঠান্ডা-গরমের ভারসাম্যহীনতা বা হঠাৎ মিশ্রণের কারণে। (খ) গরম পরিবেশ থেকে এসে বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে যখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে, তখন কিছুটা বিশ্রাম না নিয়ে শরীরে আকস্মিক ঠান্ডা লাগালে বা পানি পান করলে। (গ) শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে। এই রকম কিছু কারণে মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়।
কিন্তু তবুও কেউ এই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে ডাক্তাররা তাকে হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় নাক-মুখ রুমাল/টিস্যু দিয়ে চেপে ধরে রাখতে বলেন, আলাদা প্লেট-গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করতে বলেন, যাতে রোগটির ভাইরাস অন্যদের মাঝে সংক্রমিত হতে না পারে।
এবার সবার নিকট কিছু প্রশ্ন:
(এক) আপনার কি মনে আছে, সর্বশেষ যখন আপনি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন, আপনি আক্রান্ত হবার আগে আপনার কাছের কেউ কি রোগটিতে আক্রান্ত ছিল? 'কাছের কেউ' বলতে আপনার পরিবারের কেউ বা আপনার কর্মস্থলের কেউ বা আপনার সাথে যারা বেশি সময় থাকে, এমন কেউ।
(দুই) অথবা এমন কি কখনো হয়েছে, আপনি আক্রান্ত হবার আগে আপনার কাছের কেউ রোগটিতে আক্রান্ত ছিল না, তবে আপনি আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হতে না হতেই আপনার কাছের কেউ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে?
(তিন) অথবা এমন কি কখনো হয়েছে, আপনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার আগে আপনার পরিবারের বা যাদের সাথে সময় কাটান বেশি, তাদের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল, এমনকি আপনি সুস্থ হতে না হতেই নতুন করে আপনার কাছের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলো?
(চার) কখনো কি এমন হয়েছে, আপনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলেন, আপনি আক্রান্ত হবার আগে আপনার কাছের কেউ রোগটিতে আক্রান্ত ছিল না, এমনকি আপনি আক্রান্ত হবার পর কিছু দিন চলে গেছে, তবু আপনার কাছের অন্য কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়নি?
আমার বিশ্বাস, সর্বশেষ ২ মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ১০০ জন রোগীর খোঁজ নেয়া হলে শুধু ৪নং প্রশ্নের উত্তরে 'না' উত্তর প্রদানকারী মানুষের সংখ্যা অন্য তিনটি প্রশ্নের উত্তরে 'না' উত্তর প্রদানকারী মানুষের সংখ্যার সমষ্টির চেয়ে অনেক বেশি হবে। ১০০ জন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অন্তত ৮০ জন এমন পাওয়া যাবে, যারা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার আগে তাদের কাছের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল না, এমনকি সুস্থ হবার আগে তাদের কাছের কেউ নতুন করে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়নি। আর এটা সবাই জানে, আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত মানুষ রুমাল, টিস্যু ইত্যাদি খুব কম ব্যবহার করে।
ধরা যাক, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে সবাই রুমাল, টিস্যু ইত্যাদি ব্যবহার করে। তবু যদি সর্বশেষ এক মাসের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ১০০ জন রোগীর খোঁজ নেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশই (অন্তত ৮০ জন) ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে নতুন করে, তাদের পরিবারের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার আগেই। এই বিষয়টা নিয়ে যদি তবু কারো সংশয় থাকে, তারা দয়া করে এর পর থেকে বিষয়টা বাস্তবের সাথে মেলানোর চেষ্টা করবেন। যদি সম্ভব হয়, একটা জরিপ করে ফেলুন, সঠিকভাবে জরিপ করলে আপনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন, অধিকাংশ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয় নতুন করে। এটা প্রমাণিত হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটাও প্রমাণিত হয়ে যাবে, যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবার জন্য আগে থেকেই কাছের কেউ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত থাকা শর্ত নয়, তাই একজন আক্রান্ত হবার পরও একই পরিবেশে থাকা অন্য কেউ নতুন করে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে কোনো বাধা নেই! একই পরিবারের একজন যখন নতুন করে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে পারে, তখন পরে আরো এক বা একাধিক ব্যক্তি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে পারে সেই একই কারণে, যে কারণে প্রথম ব্যক্তিটি আক্রান্ত হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা যে কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, তা এভাবে যাচাই করলে অবশ্যই প্রমাণিত হবে। বিষয়টা আরো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে (লিখতে) পারলে ভালো হতো। কিন্তু কিছু লোক আছে, যাদেরকে আরো বিস্তারিতভাবে লিখে বুঝালেও বুঝবে না বা বুঝতে চাইবে না। এদের কাছে পুরনো ধারণাই সঠিক।
এবার আমার নিজের কথা একটু বলি। জানুয়ারির (২০২০) ২৮ তারিখ থেকে আমার সর্দি-কাশি শুরু হয়েছে। এখনো (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০) পুরোপুরি ভালো হয়নি। মাঝখানে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ দিন (সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) আমি একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি আমাদের জেলা শহরে। আমরা সেখানে ৩২ জন ছিলাম। আমার মতো সর্দি-কাশি নিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন আরো ২ জন। আমরা কেউই রুমাল, টিস্যু ব্যবহার করিনি। তবু নতুন করে সেখানকার কেউ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়নি। এমনকি আমাদের ঘরের কেউই (আমি ছাড়াও আরো ৬ জন) এখনো আমার সর্দি-কাশি'র অংশীদার হতে পারেনি! হয়তো আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবার অনেক দিন পর কেউ আক্রান্ত হতে পারে। যদি হয়, সেটাকে কি আমার এই সর্দি-কাশির সংক্রমণ বলা যাবে?
অতীতে বহুবার আমার সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে। খুব কম সময় দেখেছি আমার আগে বা পরে আমার কাছের কারো ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে। আমার বিশ্বাস, এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষের ডায়েরী আমার সাথে মিলে যাবে। হয়তো ঐসব ডাক্তারদের সাথে মিলবে না, যারা ইনফ্লুয়েঞ্জাকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করছেন! হয়তো যতবারই ওদের ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে, ততবার অন্য কারো কাছ থেকেই হয়েছে এবং ওদের নিজেদের ভালো হতে না হতেই যাদের থেকে ওরা এটা পেয়েছে, তারা এদের থেকে আবার ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে!
নিউমোনিয়ার ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। একই পরিবারের একাধিক শিশুর বা ব্যক্তির একইসাথে নিউমোনিয়া হয়েছে, এমন ঘটনার অস্তিত্ব খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১ হাজার রোগীর খোঁজ নিলেও এমন ঘটনা দু'একটা পাওয়া যায় কিনা, সন্দেহ। জানি না, তবু নিউমোনিয়াকেও কেন ছোঁয়াচে রোগ বলে অপবাদ দেয়া হয়! বলা হয়, নিউমোনিয়াও নাকি হাঁচি, কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়; বলা হয়, নিউমোনিয়াও নাকি এক ধরনের ভাইরাস! জানি না, কোন দিন বিজ্ঞান এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো কোনো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়, নয় কোনো ভাইরাস; বরং জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত কিছু কারণে এগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়! রুমাল, টিস্যু বা মাস্ক ব্যবহার করে এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।
এই লম্বা আলোচনার পরও যদি কারো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে রোগ নয়, তাহলে একটি সরেজমিন জরিপ করে ফেলুন। ১০০০ (এক হাজার) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া রোগীর তথ্য নেয়া হোক। আমার বিশ্বাস, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০০ জন এমন পাওয়া যেতে পারে, যারা এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার আগে তাদের কাছের কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত ছিল। বাকি ৯০০ জনের ক্ষেত্রে এমন পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ শতকরা ৯০ জনই নতুন করে রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে, বাস্তবে এমনই পাওয়া যেতে পারে। বাকি ১০ শতাংশ যে নতুন করে আক্রান্ত হয়নি, অন্য কারো থেকে আক্রান্ত হয়েছে, তা প্রমাণ করার কোনো পন্থা কি কারো জানা আছে? জানা নেই। এই বাকি ১০ শতাংশও যে ঐ কারণেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়নি, যে কারণে ৯০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে, তা কি কেউ কোনোভাবে প্রমাণ করতে পারবে? পারবে না। তাহলে এটা বিশ্বাস করতে কেন আর কষ্ট হবে, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া ছোঁয়াচে রোগ নয়?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু এবং নিউমোনিয়া এই রোগগুলোর গায়ে 'ছোঁয়াচে' তকমা লাগানোটা মানবজাতির কতটুকু উপকার করেছে, বলতে অনেকের কষ্ট হবে, কিন্তু এতে মানবজাতির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা বুঝতে পারলে হতভম্ব হয়ে যাবেন সবাই।