করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য (পর্ব-৫) : ভাইরাসটি কি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়? এটি কি ছোঁয়াচে?

5 minute read
0
করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]


চতুর্থ অধ্যায়

প্রথম পরিচ্ছেদ : ভাইরাসটি কি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়? এটি কি ছোঁয়াচে?
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই সারা বিশ্বে এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, অন্য কোনো দেশেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। চীনে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে শুরু করলো। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে, চীনের সাথে প্রায় সব দেশের যোগাযোগ আছে; প্রায় সব দেশের মানুষ চীনে যাতায়াত করে এবং চীনের মানুষও প্রায় সব দেশে যাতায়াত করে। চীনের উহানে সংক্রমণের কিছু দিনের মধ্যেই নতুন নতুন দেশে করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া যেতে শুরু করায় মানুষ আরো বেশি আতঙ্কিত হতে শুরু করে।
চীন থেকে ভাইরাসটি অন্য দেশে ছড়ানো সম্পর্কে কিছু সংবাদ ও প্রতিবেদন সম্পর্কে আগে আমরা জেনে নিই।

'যুক্তরাষ্ট্রে ছড়াল চীনের ভাইরাস' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৩ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের রহস্যময় ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের খবর তারা পেয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিটি চীনের উহান শহর থেকে সম্প্রতি সিয়াটলে পৌঁছেছেন।'

প্রথম আলোয় ২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'চীনের দুটি শহর অবরুদ্ধ' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের আধা স্বায়ত্বশাসিত হংকংয়ে এই ভাইরাস সংক্রমিত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উহান থেকে এক নারী যিনি তাইওয়ানে গিয়েছিলেন, তাঁর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে ম্যাকাওয়ের ক্ষেত্রেও।'


'করোনাভাইরাসে মৃত্যু বাড়ছেই' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। এছাড়া গতকাল কানাডায় এই ভাইরাসে সংক্রমিত এক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি উহান থেকে কানাডার টরেন্টোতে গিয়েছিলেন।'


'ভয়ে চীন সীমান্ত সিলগালা' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাস সিঙ্গাপুরেও পৌঁছেছে। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত চীন ফেরত চারজনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/272201]




দৈনিক সমকালে ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ভারতের কেরালায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায়। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এক ভারতীয়ের শরীরের করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি সম্প্রতি চীন থেকে ভারতে আসেন। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার' [https://samakal.com/international/article/200111160]


'করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে' শিরোনামে দৈনিক নয়াদিগন্তে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মহামারী রূপ নেয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০০ মানুষ। এবার প্রথমবারের মতো চীনের বাইরে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে মারা গেছেন ৪৪ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক।

তিনি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন।' [https://www.dailynayadiganta.com/onnodiganta/477323]

'করোনাভাইরাস মোকাবেলায় 'দুর্বলতা ও ঘাটতি' স্বীকার চীনের' শিরোনামে দৈনিক নয়াদিগন্তে বিবিসি ও রয়টার্স সূত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে বলা হয়, 'গতকাল হংকং জানিয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ৩৯ বছর বয়সী আরটিএইচকে ব্রডকাস্টার। গত ২১ জানুয়ারি তিনি উহানে গিয়েছিলেন এবং পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন।' [https://www.dailynayadiganta.com/onnodiganta/477861]


'কেরালায় করোনাভাইরাস আতঙ্ক, ২২৩০ জন নজরদারিতে' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, 'চীন সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের ১৯টি দেশে পৌঁছে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যে।

সেখানে তিন জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে নিশ্চিত করা গেছে।...
এনডিটিভি জানায়, সোমবার উহান ফেরত এক ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
এর আগে এ ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত কি না, তা নির্ণয়ে ১৪০ জনের নমুনা কেরালার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৪৬ জনের শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি। তবে ৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত হয়। এ তিন আক্রান্ত চীনের উহান থেকে  ভারতে ফিরেছেন।' [https://www.jugantor.com/international/274909]

'চীন ফেরত ৩৬১ বাংলাদেশি থাকবেন হজ ক্যাম্পে' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ডব্লিউএইচও জানায়, চীন ছাড়া ১৮টি দেশে আরও ৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। অন্য দেশের যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই উহান শহরে ছিলেন।'

জার্মানের জনপ্রিয় রেডিও ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে 'করোনা ভাইরাস: চীনে এক দিনে ৬৫ জনের মৃত্যু' শিরোনামে ০৫.০২.২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'উহান নয়, এখন চীনের হুবেই থেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের খবর বেশি করে আসছে। মঙ্গলবার হুবেইতে মোট ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের উপদ্রব শুরু হওয়ার পর একদিনে সব থেকে বেশি মৃত্যুর খবর এল হুবেই থেকেই। ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে।

চীনের বাইরে সব চেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জাপানের মানুষ। সেখানে ইতিমধ্যে ৩৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। এরপরেই আছে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। সেখানে ২৫ ও ২৪ জন এই ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জার্মানিতে। আক্রান্তের সংখ্যা ১২। বেলজিয়ামে এই প্রথম এক জনের শরীরে করোনা ভাইরাস মিলেছে। উহান থেকে মোট নয় জন বেলজিয়াম ফিরেছিলেন, তার মধ্যেই একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।' [https://www.dw.com/bn/a-52261469]

'করোনাভাইরাসে প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক মারা গেছেন। বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস এমন খবর দিয়েছে।

এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এটাই প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা।'

এই প্রতিবেদনগুলো সম্মিলিতভাবে খুব শক্তভাবে প্রমাণ করে, চীনের বাইরে প্রথম প্রথম যেসব দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তারা প্রায় সবাই 'উহান ফেরত'। তার মানে উহান থেকে রোগটির উৎপত্তি হবার পর যারা উহানে গমন করেনি বা উহানে ছিল না, তারা এতে আক্রান্ত হচ্ছে না; শুধু চীন ছাড়া অন্যান্য দেশে তারাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, যারা উহানে ছিল বা গমন করেছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয়, রোগগুলো একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হচ্ছে না। আর যেহেতু এই ভাইরাসটির আক্রমণে মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় আর নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে না বলে আমরা প্রথমেই জানলাম, তাই এ ব্যাপারে আমরা অনেকটা নিশ্চিত, করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে না। এটা প্রচালিত অর্থে কোনো ভাইরাস নয়, বরং 'অন্য কিছু'।

অবশ্য পরবর্তীতে আরো কিছু দেশে করোনাভাইরাস এমন উৎস থেকে সংক্রমিত হতে থাকে, যে উৎস সম্পর্কে এখনো কেউই কিছু বলতে পারছে না। অর্থাৎ চীন বা উহানের সাথে বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারো সাথে সম্পর্ক ছাড়াই অনেক দেশের মানুষ এই 'ভাইরাসে' আক্রান্ত হতে শুরু করে। এ সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।

ষষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top