করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য (পর্ব-১৮) : 'চোখ ওঠা' এবং জলবসন্ত কি ছোঁয়াচে রোগ?

18 minute read
0

 করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য

[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]


'চোখ ওঠা' এবং জলবসন্ত কি ছোঁয়াচে রোগ?
[এক] গতকাল (৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯) একটা ক্লাসে পাঠ দিতে গিয়ে দেখলাম, উষা নামক একজন শিক্ষার্থীর চোখ লাল হয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমার চোখে কী হয়েছে?' সে বললো, 'আমার চোখ লইছে (চোখ ওঠা রোগ হয়েছে)।' অন্য শিক্ষার্থীরা আমাদের কথোপকথন শুনছিলো। আমি অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, 'উষা'র চোখ ওঠা রোগ হয়েছে, ওর এই রোগ ওর থেকে কি তোমাদেরও হতে পারে না?' প্রায় সবাই উত্তর দিলো, 'হতে পারে।' আমি বললাম, 'তোমরা ভয় পাবে না, ওর এই রোগ ওর থেকে তোমাদের কোনোভাবেই হবে না। যদি রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া তোমাদের কারো ভাগ্যে থেকে থাকে, ওর যেমন অন্য কারো থেকে রোগটি হয়নি, নতুন করে হয়েছে, তোমাদেরও তেমনি রোগটি হতে পারে, কিছুই করার নেই।

এখন বর্ষাকাল শেষের পথে এবং একইসাথে শীতকাল শুরুর পথে। প্রতি বছর এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। একজনের সাথে আরেকজনের কোনো যোগসূত্র ছাড়াই। এটা সিজনাল রোগ। তোমাদের মধ্যে অন্য অনেকেরও এখন রোগটি হতে পারে।

কেন বলছি এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়, এবার শুনো:
১. যদি রোগটি মৌসুমী রোগ না হয়ে ছোঁয়াচে রোগ হতো, তাহলে বছরের শুধু এই সময়টাতে নয়, বরং সারা বছর ধরে চক্রাকারে মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হতো। রোগটি থেকে মানুষ কোনো ঋতুতেই রক্ষা পেতো না।
২. রোগটি ছোঁয়াচে হলে বর্ষা-শেষের এই সময়টাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যারা প্রথমে রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তারা কার কাছ থেকে আক্রান্ত হচ্ছে?

যেহেতু সিজনাল রোগ, তাই সবাই যে একইসাথে একই দিনে আক্রান্ত হবে, এমন কোনো কথা নেই। এজন্য কারো এই রোগ হয়েছে দেখলে তাকে ঘৃণার চোখে দেখবে না। কারণ তার আগে তোমারও রোগটি হতে পারতো। আর এবছর সিজনালী তোমারও যে রোগটি হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই, উষা'র থেকে তোমার হওয়া দূরের কথা। তাই কারো রোগটি হয়েছে দেখে অহেতুক ভয় পাবে না। মানুষকে অনেক সময় বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়।

পাঁচ বছর আগে এরকম বর্ষা-শেষে আমারও রোগটি হয়েছিল। কিন্তু ঐ বছর আমাদের পরিবারের আর কারো রোগটি হয়নি। তাহলে রোগটি ছোঁয়াচে হলো কী করে! এ বছরও উষা’র যে এই রোগটি হয়েছে, সে প্রতিদিন রোগটি নিয়ে স্কুলে এলেও তোমরা দেখবে, স্কুলের সবাই রোগটিতে আক্রান্ত হবে না। ছোঁয়াচে রোগ হলে কিন্তু ওর থেকে আমরা সবাই না হলেও অনেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে যাবো। হয়তো স্কুলের আরো দু'একজন এবছর রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে, সেটা কি উষা থেকেই হয়েছে বলে আমরা মনে করবো? না, বরং উষা'র যেভাবে এমনিতেই হয়েছে নির্দিষ্ট ঋতু পরিবর্তনের কারণে, আমাদের মধ্যে অন্য কারো রোগটি হলে তাদের রোগটাকেও আমরা সেভাবেই হয়েছে বলে মনে করবো।'

[দুই] আমাদের দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক পরিবারে একাধিক লোক পর্যায়ক্রমে রোগটিতে আক্রান্ত হয়। শুধু এরকম ঘটনার প্রতি লক্ষ রেখেই মানুষ রোগটিকে নিশ্চিতভাবে ছোঁয়াচে রোগ বলে বিশ্বাস করে।

কোনো পরিবারে একজনের রোগটি হবার পর আরেকজন বা আরো কয়েকজন রোগটিতে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোই শুধু আমরা দেখি এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করেই রোগটি সম্পর্কে মনে মনে একটি ধারণা লালন করি। কিন্তু দেখি না, ১. কোনো পরিবারে প্রথমে যে লোক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, সে কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে? ২. এমন অনেক পরিবারে অনেক মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, যার কাছ থেকে পরিবারের অথবা তার কর্মস্থলের আর কেউ আক্রান্ত হয় না। ৩. এমন অনেক মানুষের সংস্পর্শে আমরা প্রায়ই আসি, যারা এই রোগে আক্রান্ত, তবু আমরা খুব কমই রোগটিতে আক্রান্ত হই! ৪. আমরা যারা এই রোগে কখনো আক্রান্ত হয়েছি, তখন এই রোগ নিয়ে যাদের সংস্পর্শে গিয়েছি, সবাই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েনি! ৫. মাঝে মাঝে এমন ঘটনাও ঘটে, কোনো পরিবারে খুব কাছাকাছি সময়ে বা একই সাথে একাধিক সদস্য রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এই বিষয়গুলো ভালোভাবে ভাবলে রোগটি নিয়ে আমাদের চোখের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। রোগটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পাল্টে যেতে পারে।
যারা রোগটিকে ছোঁয়াচে ভাবতে পছন্দ করেন, তাদের নিকট প্রথম প্রশ্ন: ধরুন, একটি পরিবারে পর্যায়ক্রমে তিনজন লোক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। আপনার কি মনে হয়, যদি ছোঁয়াচে না হতো তাহলে তিনজন একই দিনে একই সাথে রোগটিতে আক্রান্ত হতো?
যারা রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তারা কেউই এই প্রশ্নটির উত্তরে 'হ্যাঁ' বলতে পারবেন না। কারণ এটা সম্ভব নয়। সংক্রামক রোগ নয়, এমন কোনো রোগও একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে একই দিনে সাধারণত আক্রমণ করে না। যদি এই প্রশ্নটির উত্তর 'না' হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে ভাবুন, ছোঁয়াচে না হলেও যদি একই পরিবারে একাধিক মানুষ রোগটিতে একসাথে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে, বরং কখনো একজনের পর আরেকজন, কখনো কয়েকজন একসাথে আক্রান্ত হয়, তাহলে রোগটি ছোঁয়াচে হয় কী করে? ছোঁয়াচে হিসেবে তখন তো রোগটির আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকে না!

দ্বিতীয় প্রশ্ন: যেসব পরিবারে একাধিক মানুষ পরপর রোগটিতে আক্রান্ত হবার কারণে মানুষ মনে করে রোগটি ছোঁয়াচে, যদি সত্যিই ছোঁয়াচে হতো, তাহলে তাদের পরিবারে রোগটি সবার শেষে যার হয়েছে, তার থেকে আবার অন্যদের হয়না কেন? রোগটি ছোঁয়াচে হলে তাদের পরিবার রোগটি থেকে কি কখনো মুক্ত হতো? একজনের পর একজনের চক্রাকারে সারা বছর ধরে লেগে থাকে না কেন রোগটি? ঔষধেও কি তখন কোনো কাজ হতো?

তৃতীয় প্রশ্ন: ৬. বর্ষাকালের শেষদিকে যখন রোগটির উপদ্রব শুরু হয়, তখন কি পুরো দেশে মাত্র একজনের প্রথমে সমস্যাটি দেখা দেয়? তার কাছ থেকে কি একজন-দু'জন করে আক্রান্ত হয়ে হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোগটি বিস্তার লাভ করে?
মোটেই না। পুরো দেশে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্দিষ্ট মওসুমে হাজার হাজার মানুষ প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে রোগটিতে আক্রান্ত হয়। এরপর আরো আরো মানুষ আক্রান্ত হয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে বলতে হবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে হাজার হাজার মানুষ রোগটিতে কিভাবে আক্রান্ত হয়? কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়? সুস্থ মানুষ, যাদের এগুলো ছিল না, তাদের কাছ থেকে?! প্রথমে যারা আক্রান্ত হয়, তারা আক্রান্ত না হলে পরে কি আর কেউ আক্রান্ত হতো না? প্রথমে যারা আক্রান্ত হয়, তারা যে কারণে আক্রান্ত হয়, পরে যারা আক্রান্ত হয়, তারাও সেই একই কারণে আক্রান্ত হওয়া কি অসম্ভব??
যদি অসম্ভব না হয়, তাহলে আমরা কেন রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি করছি?
দেখা যায়, এমন অসংখ্য ঘটনা আছে, পরিবারের শুধু একজন বা দু'জন রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, অন্যদের রোগটি হয়নি, আমার ক্ষেত্রেও যেটা ঘটেছে। অহরহ এমন অসংখ্য ঘটনা দেখার পরও যারা রোগটিকে 'ছোঁয়াচে নয়' বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তাদেরকে বোঝানোর আর কোনো উপায় নেই।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, রোগটিকে চিকিৎসকরাই ছোঁয়াচে রোগ বলে সব সময় প্রচার করছে। দৈনিক যুগান্তরে ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে 'চোখ উঠলে কি করবেন' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সাফী খান। সেখানে বলা হয়, 'চোখ ওঠা ছোঁয়াছে রোগ, তাই যাদের চোখ ওঠেছে, তাদের সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। চোখ আক্রান্ত ব্যক্তির রুমাল, কাপড়চোপড়, তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য হাত তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে হবে।'
একই পরিবারের কয়েকজন রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে দেখেই সাধারণত সবাই এটিকে ছোঁয়াচে রোগ বলে বিশ্বাস ও প্রচার করছে। কিন্তু মানুষ যদি এদিকে লক্ষ্য করতো, রোগটি মৌসুমী রোগ, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়েই সাধারণত মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, সারাবছর নয়, তাহলে কোনোভাবেই রোগটিকে কেউ ছোঁয়াচে রোগ বলে সমাজে আতঙ্ক ছড়াতো না। যেহেতু নির্দিষ্ট একটি ঋতু পরিবর্তনের সময় প্রতিবছর মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে এক মৌসুমে কি মাত্র একজন লোকই রোগটিতে আক্রান্ত হবে বা এক মৌসুমে যারা আক্রান্ত হবার, তারা কি একই দিনে আক্রান্ত হবে?
শুধু ছোঁয়াচে বলে প্রচার করার কারণে মানুষ এখন এই রোগে আক্রান্ত কাউকে দেখলে ভয় পায়; মানুষ মনে মনে চায়, এসব লোক ঘরের বাইরে যেন বের না হয়! অনেকে এই রোগে আক্রান্ত কেউ তার বাড়িতে বেড়াতে আসুক, তা চায় না। সামাজিক এসব বিব্রতকর বিষয়ের একমাত্র কারণ রোগটিকে ছোঁয়াচে বলে মনে করা।

[তিন] শুধু এই রোগটি নয়, জলবসন্ত রোগকেও (চিকেন পক্স) একইভাবে ছোঁয়াচে রোগ বলে প্রচার করা হয়। দৈনিক যুগান্তরে ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে 'চিকেন পক্স হলে কী করবেন?' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন জ্বর ও যৌনব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আহসান। নিবন্ধটিতে বলা হয়, 'চিকেন পক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, হাঁচি-কাশি এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেই এটি বেশি ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে আলাদা একটি ঘরে রাখা উচিত। ব্যবহৃত পোশাক, গামছা এগুলো যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। পক্স ভালো হয়ে গেলে শিশুর ব্যবহৃত সব কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে গরম পানি এবং স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে দিন।'
ডাক্তারদের এইসব কথার সাথে বাস্তবতার তেমন কোনো মিল নেই। গত শীতকালে (২০১৮) আমার ছোট ভাই পক্সে আক্রান্ত হয়েছিল। ওর পক্স আমি নিজ হাতে স্পর্শ করে দেখেছি, সত্যিই পক্স কিনা, তবু আমার পক্স হয়নি। ওকে আমরা 'একঘরে' করে রাখিনি, তবু আমাদের পরিবারের আর কেউ ওর পক্সের সংক্রমণের শিকার হয়নি!
আমার স্ত্রী কয়েক বছর আগে পক্সে আক্রান্ত হয়েছে। সে এই রোগ নিয়ে তার বাবার বাড়িও গিয়েছে। কিন্তু সেখানে আর কেউ তার কাছ থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়নি। ২০০৪ সালে আমারও পক্স উঠেছিল। কিন্তু আমাদের পরিবারের আর কাউকে আমার পক্স গিয়ে ছোবল মারেনি। এরকম অনেক ঘটনা আমাদের অনেকের জানা আছে। কিন্তু আমরা এই ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে একই পরিবারে পরপর কয়েকজন রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিই। এতে রোগগুলো থেকে আমাদের নিস্তার লাভ কোনোভাবে সম্ভব নয়।
কারণ আমার আশপাশের কারো রোগটি না হলেও নির্দিষ্ট ঋতুতে রোগটি আমাকে আক্রমণ করতে পারে। আর যদি আমার আশপাশের অনেকে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও, তাদের সাথে সবসময় মেশা সত্ত্বেও ওই মৌসুমে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়া আমার ভাগ্যে লেখা না থাকে, তাহলে রোগটি অন্য কারো শরীর থেকে আমার শরীরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসতে পারবে না।
দেখবেন, এখন সমাজে তেমন কারো জলবসন্ত নেই। এক দু’মাস পরই শীত আসছে। শীতকাল আসতে শুরু করার পরই দেখা যাবে মানুষের পক্স দেখা দিচ্ছে। শীতকাল যখন শেষের দিকে, তখন অবশ্য পক্স বেশি হয় মানুষের।

আপনার কাছের কারো পক্স হলে আপনি যদি পক্সকে ছোঁয়াচে রোগ মনে করেন, তবু আপনি রোগটি থেকে এবছর বেঁচে যেতে পারেন; আর যদি আপনি পক্সকে ছোঁয়াচে রোগ মনে না করেন এবং আপনার কাছের কারো রোগটি না-ও হয়, তবু আপনি রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ? রোগটি সাধারণত শীত মৌসুমেই, বিশেষ করে শীতের শেষের দিকে হয়, অন্য মৌসুমে তেমন নয়। আর শীত মৌসুম চলে গেলে রোগটি থেকে আপনি আপাতত বেঁচে গেছেন এ বছরের জন্য, এমনটা ধরে নিতে পারেন। সুতরাং রোগ দু’টিকে ছোঁয়াচে রোগ বলে আর ভয় নয়; রোগ দু'টিতে আক্রান্ত কাউকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা বৃথা।

নিবন্ধটি এখন এই লেখার একটি অংশ হয়ে গেছে, পূর্বেই যা লেখা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ 'চোখ ওঠা (কনজাংটিভাইটিস) এবং বসন্ত (পক্স) কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়' শিরোনামে একটি ছোট্ট লেখা পোস্ট করা হয়েছিল ফেসবুকে।


২০১৯ সালে এসে শ্রেণিকক্ষে সংঘটিত একটা ঘটনার সূত্র ধরে তা আরো বড় পরিসরে লেখা হয়। লেখাটি পড়ার পর এমন কেউ হয়তো অবশিষ্ট থাকবে না, যার মনে এই দু'টি রোগ ছোঁয়াচে হবার বিশ্বাস থেকে যাবে। যারা ছোঁয়াচে বলে বিশ্বাস করতো আগ থেকেই, তাদেরকে যে তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তাদের টনক নড়বে, কোনো সন্দেহ নেই।

বুঝা যাচ্ছে, যুগের পর যুগ যে বিশ্বাস নিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেছে, যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অনেক মানুষ নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে, এমনকি যে বিশ্বাস নিয়ে অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে, সে বিশ্বাস ভুলও হতে পারে। আরেকটা ভিন্নমতের কথা শুনলে অনেকে নয়, সবাই চমকে যাবেন। ভাবতে পারেন এই ভিন্নমত কখনো কোনোভাবে সঠিক হতে পারে না। 'ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর' এমন বিশ্বাসের বয়স কয়েকশত বছর। সর্বশেষ দুই শতাব্দীর যে কোনো সময় পৃথিবীর মোট সচেতন জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ, যাদের বয়স অন্তত ১৫ বছর, এই বিশ্বাসের সাথে পরিচিত ছিল/আছে বলে স্বীকার করতে তেমন কেউ কুন্ঠিত হবে না। ভেতরে ভেতরে খুব সীমিত কিছু মানুষ এই ধারণা বিশ্বাস করে না। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে অনেক অনেক মানুষ আছে, এই ধারণা খুব শক্তভাবে বিশ্বাস করেন, কিন্তু ধূমপায়ী! অনেক খুঁজেও আপনি এই ধারণার পরিপন্থী কোনো গ্রন্থ/নিবন্ধ/বক্তব্য/প্রতিবেদন গুগলে বা কোথাও খুঁজে পাবেন না। কারণ ধূমপান বিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে লেখাও অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগের কোনো কোনো মাধ্যমে এই জাতীয় কিছু পোস্ট করা তাদের কম্যুনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘনের শামিল, যদিও বিশ্বের প্রায় সব দেশে ধূমপান চালু আছে, তবু। অবাক হবার মতো বিষয়, বিশ্বব্যাপী ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে এতো প্রচারণার পরও বিশ্বের খুব কম দেশ আছে, যেখানে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ। অনেক দেশে নিষিদ্ধ হলেও ফাঁক আছে। 'Smoking bans: How they vary around the world' শিরোনামে বিবিসির ওয়েবসাইটে ১ জুন ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ (By Rick Kelsey) পড়ে দেখতে পারেন, যার লিঙ্ক: http://www.bbc.co.uk/newsbeat/article/32958975/smoking-bans-how-they-vary-around-the-world

উইকিপিডিয়ায়ও এ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ আছে 'List of smoking bans' শিরোনামে। নিবন্ধটিতে এমন অনেক দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ, তবে সর্বত্র-সর্বক্ষেত্রে নয়। [https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_smoking_bans]

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত শুধু মনে হয়, ভুটান এবং তুর্কমেনিস্তানে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ধূমপান। 'যে দেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হল ধূমপান' শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে তুর্কমেনিস্তানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। [https://www.bd-pratidin.com/international-news/2016/08/03/161021]

'Bhutan smokers huff and puff over tobacco ban' শিরোনামে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে ভুটানে ধূমপান নিষিদ্ধ করা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। [https://www.aljazeera.com/indepth/features/2012/09/201292095920757761.html]

যদি সত্যিই ধূমপান ক্ষতিকর হতো, পৃথিবীর সব দেশ থেকে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হতো অনেক আগেই, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কেন করা হচ্ছে না, তা বুঝতে গভীরভাবে ভাববারও প্রয়োজন হবে না সচেতন কারো।
ধূমপান সম্পর্কে প্রচলিত বিশ্বাস নিয়ে যেই ভিন্নমতের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলো চলে এসেছে, সেই ভিন্নমত সম্পর্কে 'ধূমপান নয়, বরং মদপান ক্ষতিকর' শিরোনামে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ পড়তে পারবেন এই লিঙ্কে bit.ly/2V0sHRk গিয়ে। নিবন্ধটি পড়তে পড়তে একসময় আবিষ্কার করবেন ধূমপানের সাথে যে মারাত্মক ক্ষতিগুলোর সম্পর্ক সম্পর্কে আপনি জানেন, সেই ক্ষতিগুলো বাস্তবে ধূমপানের সাথে সম্পর্কিত নয়! নিবন্ধটি আপনাকে ধূমপানে উৎসাহিত করবে না, কারণ ধূমপানে মারাত্মক কোনো ক্ষতি না হলেও অন্তত দু'টি  ক্ষতি হয় বলে নিবন্ধটিও স্বীকার করে: অর্থের অপচয় এবং মুখে দুর্গন্ধ। নিবন্ধটি বেশ দীর্ঘ করেই লেখা হয়েছে, কারণ (১) ধূমপানের মারাত্মক সব ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ 'দীর্ঘ'দিন ধরেই শুনে আসছে, (২) নিবন্ধটির শেষ পর্যন্ত পৌঁছার আগেই পাঠকের ধারণা যেন পাল্টে যায়। যদি পূর্ব ধারণা পাল্টে যাবার আগেই পড়া শেষ হয়ে যায়, তাহলে কী লাভ হলো লিখে, কী লাভ হলো পড়ে!

এই লেখার পরবর্তী অংশ পড়ার আগে, 'ধূমপান নয়, বরং মদপান ক্ষতিকর' নিবন্ধটি পড়ে নিলে পরবর্তী অংশ বুঝা অনেকটা সহজ হবে। তবে এই নিবন্ধটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, এটা বুঝতে সহজ হওয়া যে, যুগের পর যুগ এমন অনেক বিশ্বাস নিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেছে, এমন অনেক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে অনেক মানুষ নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে, এমনকি এমন অনেক বিশ্বাস নিয়ে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণও করেছে, যেগুলোর কোনো কোনটি একদিন ভুলও প্রমাণিত হতে পারে।

ধূমপান সম্পর্কিত নিবন্ধটি আমরা সবাই না পড়লেও শুধু চোখ ওঠা এবং জলবসন্ত রোগ সম্পর্কিত নিবন্ধটি আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে পূর্ববর্তীদের আরোপিত এবং যুগের পর যুগ ধরে প্রচলিত ধারণা সঠিক না-ও হতে পারে। চোখ ওঠা এবং জলবসন্ত রোগ সংক্রান্ত আরো কিছু নিবন্ধ দেখা যাক:

'How Is Pink Eye Spread and How Long Are You Contagious?' শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হেলথলাইনের ওয়েবসাইটে ৩০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে (Medically reviewed by Gerhard Whitworth, RN Written by James Roland) বলা হয়, 
'Is pink eye contagious?
When the white part of your eye turns reddish or pink and becomes itchy, you may have a condition called pink eye. Pink eye is also known as conjunctivitis. Pink eye can be caused by a bacterial or viral infection, or it may be caused by an allergic reaction.

Bacterial and viral conjunctivitis are both highly contagious, and you may be contagious for up to two weeks after symptoms first appear. Allergic conjunctivitis is not contagious.

Most cases of pink eye are viral or bacterial, and can occur with other infections.

How is it spread?
A pink eye infection can be passed to someone else in the same ways other viral and bacterial infections can be spread. The incubation period (the time between becoming infected and symptoms appearing) for viral or bacterial conjunctivitis is about 24 to 72 hours.
If you touch something with the virus or bacteria on it, and then touch your eyes, you can develop pink eye. Most bacteria can survive on a surface for up to eight hours, though some can live for a few days. Most viruses can survive for a couple days, with some lasting for two months on a surface.
The infection can also be spread to others through close contact, such as a handshake, hug, or kiss. Coughing and sneezing can also spread the infection.
You're at increased risk for pink eye if you wear contact lenses, especially if they're extended-wear lenses. That's because bacteria can live and grow on the lenses.

How long should you stay home from school or work?
Pink eye is contagious once symptoms appear, and the condition remains contagious as long as there is tearing and discharge. If your child has pink eye, it's best to keep them home from school or daycare until symptoms disappear. Most cases are mild, with symptoms often clearing up within a few days.

If you have pink eye, you can return to work any time, but you will need to take precautions, such as washing your hands thoroughly after touching your eyes.
Pink eye isn't any more contagious than other common infections, such as a cold, but it does require effort to keep from spreading it or picking it up from someone else.' [https://www.healthline.com/health/is-pink-eye-contagious]

চিকেন পক্স সম্পর্কে সিডিসি'র (Centers for Disease Control and Prevention) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'Chickenpox (Varicella)' শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Chickenpox is a contagious disease caused by the varicella zoster virus. The virus spreads mainly by touching or breathing in the virus particles that come from chickenpox blisters, and possibly through tiny droplets from infected people that get into the air after they breathe or talk, for example. Symptoms of chickenpox include an itchy rash, fever, and tiredness. The disease can be serious – even fatal – especially for babies, adolescents, adults, pregnant women and people with a weakened immune system. The best protection against chickenpox is two doses of the chickenpox vaccine. Most people who get the vaccine will not get chickenpox. If a vaccinated person does get chickenpox, the symptoms are usually milder with fewer or no blisters (they may have just red spots) and mild or no fever.' [https://www.cdc.gov/dotw/chickenpox/index.html]

গুটিবসন্ত সম্পর্কে সিডিসি'র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত Smallpox শিরোনামের একটি নিবন্ধে বলা হয়,
'How does Smallpox Spread?
Before smallpox was eradicated, it was mainly spread by direct and fairly prolonged face-to-face contact between people. Smallpox patients became contagious once the first sores appeared in their mouth and throat (early rash stage). They spread the virus when they coughed or sneezed and droplets from their nose or mouth spread to other people. They remained contagious until their last smallpox scab fell off.

These scabs and the fluid found in the patient's sores also contained the variola virus. The virus can spread through these materials or through the objects contaminated by them, such as bedding or clothing. People who cared for smallpox patients and washed their bedding or clothing had to wear gloves and take care to not get infected.
Rarely, smallpox has spread through the air in enclosed settings, such as a building (airborne route).
Smallpox can be spread by humans only. Scientists have no evidence that smallpox can be spread by insects or animals.' [https://www.cdc.gov/smallpox/transmission/index.html]

কনজাংটিভাইটিস এবং পক্স সম্পর্কে এমন ভয়ানক ধারণা ছড়িয়ে দেয়াটা মানবজাতির কী উপকারে এসেছে, ফলাফল বের করতে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে অনেক। যদি রোগগুলোকে ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত, সংক্রামক ইত্যাদি বলে মানুষকে সতর্ক করার বিষয়টা সঠিক হতো এবং রোগাক্রান্ত মানুষকে বাড়িতে থাকতে বা 'একঘরে' থাকতে বলাটা এই রোগগুলো দমনের কার্যক উপায় হতো, তাহলে যে কোনো এলাকায় রোগগুলোর উপদ্রবের পরও যার সাথে এমন কোনো রোগীর দেখা হয়নি, সে কোনোভাবে  রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো না।
রোগগুলো ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত হলে ডাক্তারের কাছে মানুষ এগুলোর চিকিৎসার জন্য যেতে পারতো না, কারণ কোনো ডাক্তার ছোঁয়াচে হবার কারণে এগুলোতে আক্রান্ত হবার ভয়ে এগুলোর চিকিৎসা করতো না। সব ডাক্তার চেম্বারের সামনে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিতো, 'এখানে 'চোখ উঠা' এবং 'পক্স'- এই দু'টি রোগের চিকিৎসা করা হয় না'!

কোনো ডাক্তার অবশ্য এমন করেন না। ডাক্তাররা স্বাভাবিকভাবেই এসব রোগীর চিকিৎসা করে থাকেন। যদি সত্যিই রোগগুলো ছোঁয়াচে হতো, ডাক্তাররা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডেই কাটাতো বেশির ভাগ সময়! সুস্থ হয়ে উঠে নতুন কোনো রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে আবারও আক্রান্ত হয়ে আবারও হাসপাতালের বেডে চলে যেতো!

বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেও বিষয়টা সহজে বুঝা যাবে। যে কোনো এলাকায় রোগগুলোর উপদ্রবের পর ৫ জন রোগী এবং ২০০ জন লোক নিয়ে তাদেরকে ১০০ জন করে দুই ভাগ করার পর প্রথম ১০০ জনকে ঐ ৫ জন রোগীর সান্নিধ্যে ৫-৭ ঘন্টা রাখা হলে আর বাকি ১০০ জন লোককে এরকম যে কোনো রোগী থেকে দূরে রাখা হলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড পার হবার পরও দেখা যাবে, যে ১০০ জন লোককে রোগীদের সান্নিধ্যে রাখা হয়েছে, সেই ১০০ জন লোক এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার হার আর যে ১০০ জনকে দূরে রাখা হয়েছে, সেই ১০০ জন লোক এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার হারে তেমন একটা ব্যবধান নেই।

আমার বিশ্বাস, এরকম কোনো নিরীক্ষা পৃথিবীর কোথাও কখনো চালানো হয়নি। পূর্ববর্তীদের দৃষ্টি নিজেদের চোখে ইনস্টল করেই আমরা রোগগুলোকে দেখছি। রোগগুলো
 উপর এই অপবাদের লেবেল আরো বেশি সময় ধরে এঁটে রাখা ঠিক হবে না। পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই হালনাগাদ হচ্ছে। এই অপবাদের লেবেল এরপরও লাগিয়ে রাখা হলে আর কিছু না হোক, সমাজে মানুষে মানুষে দূরত্ব ঘুচবে না, অহেতুক কিছু ভয় সবসময় মানুষকে ভীত করে রাখবে।
নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা যে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত নয়, তা এই লেখার শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে। ডাক্তাররাও এগুলোকে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে থাকেন, কিন্তু নিয়মিত এসব রোগের চিকিৎসা করার কারণে নিয়মিত এসব রোগে ভোগেন না! সাধারণ মানুষের মতোই মাঝেমধ্যে ভোগেন।
এখানে আলোচনা করা হয়েছে কনজাংটিভাইটিস এবং পক্স ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত না হওয়া সম্পর্কে। এই আলোচনাগুলো নতুন। হ্যাঁ, নতুন আরেকটা বিষয়ে আলোচনার লিঙ্ক ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। 'ধূমপান নয়, বরং মদপান ক্ষতিকর'। পুরাতন কথা শুনতে শুনতে কান অনেক সময় ঝালাপালা করে। নতুন অনেক কিছুই সুন্দর।

নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত নয়, কনজাংটিভাইটিস এবং পক্সও ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত নয়, তাহলে পৃথিবীতে আর কোন্ রোগ আছে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত? কলেরা? যক্ষ্মা? একজিমা বা এলার্জিজাতীয় রোগগুলো? বাত?
প্রকৃতপক্ষে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগই নেই পৃথিবীতে। এই ধারণাটা বিজ্ঞানের ভুলে বা অজ্ঞতার ফলে সৃষ্ট। তবে সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব আছে। সেটা আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এগুলো নয়, বরং ক্যান্সার, একজিমা বা এলার্জিজাতীয় রোগ এবং বাত, এরকম কিছু রোগ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এগুলো যে বংশগত বা সংক্রামক নয়, তা নিয়ে 'দীর্ঘজীবন লাভের উপায়' শিরোনামে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ তৈরি করা আছে, যা বই আকারে প্রকাশ করলে ২৫০ পৃষ্ঠার বেশি বড় আকারের একটি বই হবে, কিন্তু এখনো বই আকারে প্রকাশিত হয়নি, আপাততঃ শুধু ব্লগে প্রকাশ করে রাখা হয়েছে (৫৫ পর্বে ধারাবাহিকভাবে, প্রথম পর্বের লিঙ্ক হচ্ছে: bit.ly/2V2ckDO)। লেখাটি পৃথিবীর সব মানুষের হাতে দ্রুত পৌঁছানো জরুরী, নয়তো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এই তিনটি রোগে মানবমৃত্যুর সংখ্যা কমানো যাবে না, বরং বাড়তেই থাকবে।

কলেরা, যক্ষ্মা এগুলো যে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাাহিত নয়, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করার দরকার নেই। এই লেখায় প্রদত্ত বিভিন্ন সূত্রের সাথে মিলিয়ে বুঝে নিতে হবে। আর একজিমা বা এলার্জিজাতীয় রোগগুলো এবং বাত ইত্যাদি রোগ সংক্রামক। পাশাপাশি ক্যান্সারও। এগুলো একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়, তবে স্পর্শের মাধ্যমে, বায়ুর মাধ্যমে বা শূন্যে লাফিয়ে লাফিয়ে নয়, বরং রক্তের মাধ্যমে। এগুলোতে তীব্রভাবে আক্রান্ত কারো শরীর থেকে অন্য কারো শরীরে রক্ত দেয়া হলে যাকে রক্ত দেয়া হয়েছে, তার শরীরে এই রোগগুলো সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এজন্য সন্তান গর্ভে আসার সময় বা গর্ভে থাকাকালীন স্বামী-স্ত্রী কেউ যদি এই রোগগুলোতে আক্রান্ত থাকে, সন্তানের শরীরেও রোগগুলো চলে আসে। কারণ এই রোগগুলো রক্তের দোষজনিত রোগ।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top