করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]
একটি নিরীক্ষা প্রমাণ করবে, ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত কোনো রোগ নেই
যে রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে বিশ্বাস করা হয়, সেরকম কোনো রোগে, যেমন নিউমোনিয়ায় তীব্রভাবে আক্রান্ত ১০ জন লোক নেয়া হোক, পাশাপাশি এমন ২০০ জন লোক নেয়া হোক, যারা নিউমোনিয়া থেকে পুরো সুস্থ। ২০০ জন লোককে ১০০ জন করে ২ ভাগ করা হোক। প্রথম ১০০ জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ঐ ১০ জন লোকের নিকট থাকতে দেয়া হোক অন্তত ৬ ঘন্টা। বাকি ১০০ জনকে যেকোনো নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লোক থেকে দূরে রাখা হোক। ১৫ দিন পর এটা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যে ১০০ জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লোকদের সংস্পর্শে রাখা হয়েছে, তাদের কেউ যেমন নিউমোনিয়ায় আক্রান্তই হয়নি, তেমনি যাদেরকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে, তাদের কেউও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়নি। কোনো কোনো সময় এমনও দেখা যেতে পারে, যে ১০০ জনকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত লোকদের সংস্পর্শে রাখা হয়েছে, ১৫ দিন পর তাদের মধ্যে কেউই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়নি, কিন্তু যাদেরকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে, তাদের দু'একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে (কারণ নিরীক্ষার অংশ না হলেও তারা অন্য সময় যেরকম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, এখনও সেরকম আক্রান্ত হয়েছে)। তবে এটা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, যাদেরকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে রাখা হয়েছে, ১৫ দিন পর তাদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার হার আর অবশিষ্ট ১০০ জনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার হারে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এভাবে নিরীক্ষা করা হলে, যে রোগগুলোকে বিশ্বব্যাপী ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত, ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াজনিত বলা হচ্ছে, সেই রোগগুলো এই অপবাদ থেকে চিরমুক্তি পাবে এবং ভাইরাস, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুগুলো 'মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হওয়া'র ধারণাটা মানবজাতি বা বিজ্ঞানের একটা মস্তবড় ভুল হিসেবে সাব্যস্ত হবে; সাথে সাথে জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি নিরীহ অনুপ্রাণীগুলোও শত বছর ধরে প্রচারিত একটা অপবাদ থেকে মুক্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।
বিশ্বের অনেক দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীদের অনেকে মাস্ক ব্যবহার করে না। এমতাবস্থায় হাসপাতালে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন কথিত ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে সেবা দিতে গিয়ে তারা যদি বার বার রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে যেতো, তাহলে তারা আবশ্যিকভাবে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। কিন্তু তারা আক্রান্তও হচ্ছে না সচরাচর, তাই মাস্কও ব্যবহার করছে না।
নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বা কলেরা রোগীর চিকিৎসা করা হয়, এমন কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে আমাদেরকে মাঝেমধ্যে যেতে হয়। আমাদেরকে সেখানে অনেক সময় অনেক রোগীর কাছাকাছিও যেতে হয়। কিন্তু আমরা কি কিছুদিনের মধ্যে এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি?
চীনে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে এবং করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা, এই সম্পর্কে উপরে উল্লেখিত প্রতিবেদন/নিবন্ধগুলোর সারাংশ নিয়ে পর্যালোচনা করার আগে ভূমিকা হিসেবে এই কথাগুলো বলতে হলো। এখন আমরা চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া প্রথম ঘটনাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করবো।
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করতে হবে ঘটনাগুলোর দিকে। চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এমন কিছু লোক, যারা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েছিলেন। তবে একেবারে প্রথমে শনাক্তকৃত ব্যক্তিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।
এখানে বলা হয়, প্রথমে আক্রান্ত হয়, (১) এমন 'কিছু লোক' (তার মানে একজন নয়, কয়েকজন লোক প্রথমে একসাথে আক্রান্ত হয়েছিল), যারা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েছিলেন; (২) তবে 'একেবারে প্রথমে' শনাক্তকৃত ব্যক্তিটির সাথে সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। কারণ সামুদ্রিক খাবারের বাজারে যেতে তাকে চার বা পাঁচটি বাস পাল্টাতে হতো, এমনকি তিনি অসুস্থ থাকায় নিজের আবাসস্থলের বাইরে যাননি।
এই তথ্য অনুযায়ী এটা নিশ্চিত, প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঘটনার সাথে সামুদ্রিক খাবারের বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই! এমনকি একেবারে প্রথমে আক্রান্ত এই ব্যক্তির সাথে এরপরে আক্রান্ত ওই 'কিছু লোক' এরও কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে না গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু পরের ব্যক্তিগুলো সামুদ্রিক খাবারের বাজারে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। এতে বুঝা যায়, সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সাথে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক থাকলে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে যাওয়া ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতো না।
একেবারে প্রথমে আক্রান্ত লোক এবং তার আক্রান্ত হবার অব্যবহিত পরেই আক্রান্ত ওই 'কিছু লোক' সবাই অন্য নির্দিষ্ট কোনো এক উৎস থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কী সেই উৎস?
প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্যমতে পরীক্ষাগারে যে ৪১ জন ব্যক্তির করোনাভাইরাস নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ২৭ জনই উহান সি ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। উহান সি ফুড মার্কেটে গিয়েই যদি এই ২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি ১৬ জন কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছেন? এই প্রশ্নও থেকে যায়, এই ২৭ জন যদি সি ফুড মার্কেটে না যেতেন, তাহলে কি আক্রান্ত হতেন না? ১৬ জন যদি সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হতে পারেন, এই ২৭ জন সি ফুড মার্কেটে না গেলে কি আক্রান্ত হবার কোনো সম্ভাবনা থাকতো না? যে কোনো কারণে সি ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছে বলে প্রচার করার ফলেই এই ২৭ জনের সি ফুড মার্কেটে যাওয়া দোষের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেবারে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি যেমন সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হয়ে গেছে, এই ২৭ জনও সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হতে পারতো। সি ফুড মার্কেটে যাবার সাথে এই রোগের উপদ্রবের সম্পর্ক সত্যিই থাকলে যে লোকগুলো সি ফুড মার্কেটে যায়নি, তারা আক্রান্ত হতো না। এটাই সত্য হবার সম্ভাবনা বেশি, ১৬ জন লোক যেভাবে সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও আক্রান্ত হয়েছে, এই ২৭ জনও সেভাবে সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হতো এমন কোনো উৎস থেকে, বাকি ১৬ জন যে উৎস থেকে আক্রান্ত হয়েছে এবং একেবারে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিও।
প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্যমতে পরীক্ষাগারে ৪১ জন ব্যক্তির করোনাভাইরাস নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই তথ্য থেকে বুঝা যায়, শুধু একজন লোক করোনাভাইরাসে প্রথমে আক্রান্ত হয়নি, ৪১ জন বা তারচে বেশি (একাধিক) লোক আক্রান্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই এতোগুলো লোক একসাথে কোত্থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো?
আরেক ঘটনায় ছয় জনের একটি পরিবার উহান ভ্রমণ করেছিলেন এবং পরে নিউমোনিয়া নিয়ে গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পাঁচজনকেই ২০১৯-এনসিওভিতে সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কেউই উহান সি ফুড মার্কেটে আসেনি, তবে দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিল।
এই পাঁচ জনের কেউই সি ফুড মার্কেটে না গিয়েও করোনা সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। গিয়েছিলেন শুধু উহানে। দোষটা তাহলে উহানের, সি ফুড মার্কেটের নয়।
তবে দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে যদি রোগটি ছড়াতো, তাহলে অন্য ঘটনায় বর্ণিত লোকগুলো হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া কিভাবে আক্রান্ত হলো?
দোষটা শুধু উহানে থাকা বা যাওয়ার সাথেই তর্কাতীতভাবে সম্পৃক্ত।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেন, যারা চীনের উহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোনো মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি।
এখানেও একই প্রশ্ন, চীনের উহানে মাছের বাজারের সাথে যদি এই ভাইরাস উপদ্রবের সম্পর্ক থাকে, তাহলে যারা মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি, তারা কোত্থেকে আক্রান্ত হয়েছেন?
যারা মাছের বাজারে যাওয়া ছাড়াই আক্রান্ত হয়েছে, তারা যদি মাছের বাজারে যাওয়া ছাড়াই আক্রান্ত হতে পারে, তাহেল যারা মাছের বাজারে গিয়েছিল, তারাও মাছের বাজারে না গেলেও আক্রান্ত হতে পারতো।
মাছের বাজারে গিয়েও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, আবার মাছের বাজারে না গিয়েও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে, তাই মাছের বাজারকে আক্রান্তস্থল (এপিসেন্টার) বলে স্থির করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
অন্যদিকে উহানে থেকে বা গিয়েই সবাই আক্রান্ত হয়েছে, উহানে না থেকে বা উহানে না গিয়ে কেউ আক্রান্ত হয়নি। যে ৪১ জনের কথা বলা হয়েছে, তারাও উহানের বাসিন্দা; যে ছয় জনের একটি পরিবারের পাঁচজনের আক্রান্ত হবার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা উহানের বাসন্দিা নয়, তবে উহানে ভ্রমণ করার পরই আক্রান্ত হয়েছে; একেবারে প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অন্য আক্রান্ত 'কিছু লোক'ও উহানের বাসিন্দা।
তাহলে উহানকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরে নিতে কোনো বাধা নেই। পাশাপাশি এটাও আমরা নিশ্চিত হলাম, উহানের মাছের বাজারের সাথে বা বাদুড়ের সাথে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কোনো সম্পর্ক নেই। তৃতীয় অধ্যায়েও এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, কী এমন হলো উহানে, উহান ছাড়া চীন বা বিশ্বের আর কোনো জায়গা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবস্থল হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারলো না? উহানের মাটি কি করোনাভাইরাস উৎপাদনের জন্য বেশ উর্বর ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে ভাইরাস এবং রোগজীবাণুর ধারণা সম্পর্কে একটু আলোচনা করা দরকার।