করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]
অতীতের মহামারীগুলো কি ছোঁয়াচে ছিল?
যক্ষা, প্লেগ, কলেরা সহ আরো কিছু রোগ আছে, যেগুলোকেও ছোঁয়াচে বলে প্রচার করা হয়। করোনাভাইরাসের আগে পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময় ছোট-বড় অনেক মহামারী হয়েছে বলে আমরা জানি। এই মহামারীগুলোকে মহামারী বলা হয় বিশেষ করে এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এই মহামারীগুলোর সময় নির্দিষ্ট কিছু রোগ একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে রোগটি ভয়াবহ/ব্যাপক আকার ধারণ করার ফলে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে।
কিন্তু প্লেগ, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাপক মানুষকে আক্রমণ করাকে মহামারী বলে আখ্যায়িত করা হয় এই দৃষ্টিকোণ থেকে নয় যে, যে কোনো কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
শুধু 'নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট একটা রোগে অসংখ্য মানুষের আক্রান্ত হওয়া এবং প্রাণ হারানোর ঘটনা'কে মহামারী বলে আখ্যায়িত করতে অসুবিধা কোথায়? সেখানে রোগটি কি একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে ব্যাপক হয়েছে, নাকি একজন থেকে আরেকজনে ছড়ানো ছাড়া ব্যাপক হয়েছে, সেই বিষয়ের সাথে 'রোগটি ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা'কে মহামারী বলে আখ্যায়িত করা বা না করার সম্পর্ক কী?
কোনো সম্পর্ক নেই।
যক্ষা, প্লেগ, কলেরা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কনজাংটিভাইটিস এবং পক্স এরকম যে রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে মনে করা হয়, যদি পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলে যে কোনো সময় এই রোগগুলোতে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির আক্রান্ত হবার ঘটনাকে কোনো কারণ ছাড়াই আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রমাণ করা যেতো, তাহলে ধরে নেয়ার সুযোগ থাকতো প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিটি কোনো কারণ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে আর পরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তিটির (যদি যে কোনো মহামারীতে প্রথমে মাত্র ১ জন দিয়ে রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায়) আক্রান্ত হওয়াকে যেমন কখনোই কোনো কারণ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তেমনি পরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়াকেও আগের আক্রান্তদের কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। বিষয়টা সম্পূর্ণ অনুমান-নির্ভর।
কোনো পরিবারে বা এলাকায় একজনের এরকম কোনো রোগ হবার পর আরেকজন বা আরো কয়েকজন রোগটিতে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হবার ঘটনাগুলোই শুধু আমরা দেখি এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করেই রোগটি সম্পর্কে মনে মনে একটি ধারণা (ছোঁয়াচে হওয়া) লালন করি। কিন্তু দেখি না, ১. কোনো পরিবারে বা এলাকায় প্রথমে যে লোক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, সে কার কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে? ২. এমন অনেক পরিবারে/এলাকায় অনেক মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়, যার কাছ থেকে তার এলাকা, পরিবার বা কর্মস্থলের আর কেউ আক্রান্ত হয় না। ৩. মাঝে মাঝে এমন ঘটনাও ঘটে, কোনো পরিবার বা এলাকায় খুব কাছাকাছি সময়ে বা একই সাথে একাধিক সদস্য রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
এই বিষয়গুলো ভালোভাবে ভাবলে রোগগুলো নিয়ে আমাদের চোখের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। রোগগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা পাল্টে যেতে পারে। যারা রোগগুলোকে 'ছোঁয়াচে নয়' ভাবতে কষ্ট হয়, তাদের নিকট প্রশ্ন: ধরুন, একটি পরিবারে বা এলাকায় পর্যায়ক্রমে তিনজন লোক এই রকম কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আপনার কি মনে হয়, যদি ছোঁয়াচে না হতো তাহলে তিনজন একই দিনে একই সাথে রোগটিতে আক্রান্ত হতো? শুধু কি কোনো রোগ ছোঁয়াচে হলেই একসাথে সবাই ঐ রোগে আক্রান্ত না হয়ে একজনের পর আরেকজন আক্রান্ত হয়, ছোঁয়াচে না হলে এমন হতে পারে না? কোথায় বাধা?
যারা রোগগুলোকে ছোঁয়াচে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তারা কেউই এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গত উত্তর দিতে পারবেন না। সংক্রামক রোগ নয়, অসংক্রামক কোনো রোগও একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে একই দিনে সাধারণত আক্রমণ করে না। প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে যদি আপনি হিমশিম খান, তাহলে নতুন করে ভাবুন, ছোঁয়াচে না হলেও যদি একই পরিবারে একাধিক মানুষ রোগটিতে একসাথে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে, বরং কখনো একজনের পর আরেকজন, কখনো কয়েকজন একসাথে আক্রান্ত হয়, তাহলে রোগটি ছোঁয়াচে হয় কী করে? ছোঁয়াচে হিসেবে তখন তো রোগটির আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকে না!
কোনো রোগকে ছোঁয়াচে বলে অপবাদ দেয়ার আগে ভাবতে হবে, যদি তা সত্যিই ছোঁয়াচে হয়, তাহলে প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি কোত্থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হলো? যদি প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি ছোঁয়াচে হওয়া ছাড়া আক্রান্ত হতে পারে কোনো জানা বা অজানা কারণে, তাহলে একই কারণে প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হবার কাছাকাছি সময়ে বা পরে আরো আরো লোক ঐ রোগে আক্রান্ত হতে পারে ঐ কারণেই, যে কারণে প্রথমে আক্রান্ত এক বা একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে।
ছোঁয়াচে বলে প্রচারিত রোগগুলোকে যেভাবে ছোঁয়াচে বলে মানুষ বিশ্বাস করে, মনে হয় প্রথম আক্রান্ত লোকটি বা লোকগুলোও তার/তাদের পরে আক্রান্তদের কাছ থেকে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে!
ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত বলে মনে হওয়া কোনো রোগ কোনো পরিবার বা এলাকায় সংক্রমণ শুরুর পর রোগটি একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হবার ধারণাটা সম্পূর্ণ অনুমান-নির্ভর। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ধারেকাছে সুস্থ কেউ যাবার পর ঐ সুস্থ ব্যক্তিও যদি রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখনই ধরে নেয়া হয় রোগটি নিশ্চয়ই ছোঁয়াচে। কিন্তু এই অনুমান ছাড়া রোগটি ছোঁয়াচে হবার পেছনে কোনো প্রমাণ নেই।
কোন্ অনুমান বেশি সঠিক হতে পারে? ১. যে কোনো পরিবার বা এলাকায় প্রথম আক্রান্ত এক বা একাধিক লোক ছোঁয়াচে বলে মনে হওয়া কোনো রোগে নির্দিষ্ট কোনো কারণেই (হয়তো আমরা জানি না) আক্রান্ত হয়, নাকি ২. প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোনো কারণ ছাড়াই রোগটিতে আক্রান্ত হয় আর পরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রথমে আক্রান্ত লোক/লোকদের কাছ থেকেই আক্রান্ত হয়?
প্রথমে আক্রান্তরা নির্দিষ্ট কোনো কারণেই একটা রোগে আক্রান্ত হয়, এই কথা কি অবিশ্বাস করার সুযোগ আছে? নেই। কিন্তু পরে আক্রান্তরাও যেহেতু একই পরিবার বা এলাকার লোক, তাই পরের আক্রান্তরাও ঐ একই কারণে আক্রান্ত হতে পারবে না কেন? কোনো বাধা আছে?
পৃথিবীতে ইতোপূর্বে যে মহামারীগুলো হয়েছে, সেগুলোতে প্রথম যে বা যারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা যে এলাকায় বসবাস করতো, সে এলাকায় বসবাসকারী আরো লোক ঐ একই রোগে আক্রান্ত হওয়াকে ছোঁয়াচে মনে করার কী প্রয়োজন? ঐ এলাকায় বসবাসকারী প্রথম আক্রান্ত লোকেরা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, পরবর্তীতে আক্রান্ত লোকেরাও সে কারণেই আক্রান্ত হয়েছে। ঐ এলাকার বায়ু বা পরিবেশে নিশ্চয়ই কোনো দোষ ছিল। যে দোষ অসংখ্য মানুষকে রোগাক্রান্ত করে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। সবাইকে একই সাথে রোগাক্রান্ত না করে পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত করার মানে এটা নয় যে, মহামারীটি ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত ছিল।