করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]
লক্ষণ ছাড়াই কি কেউ করোনা ছড়িয়ে দিতে পারে?
মূল কথায় যাবার আগে আরেকটা বিষয় আলোচনা করা যাক। লক্ষণ প্রকাশিত হবার আগেই নাকি করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়টা সঠিক কিনা, তা জানার জন্য একটু আগে উল্লেখ করা ব্রিটেনের ঘটনার দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। সেখানে দেখা গেছে, একজন লোক ইতালি বেড়াতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে ফিরে এসেছে। ব্রিটেনে এসে তার শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশের আগে তিন তিনটি দিন নিজের পরিবারের সাথে কাটানোর পরও তার পরিবারের কেউই করোনায় আক্রান্ত হয়নি। তাহলে কিভাবে এই ধারণা সঠিক হয়?
'The biggest questions about the new coronavirus and what we know so far' শিরোনামে ওয়াশিংটন পোস্টে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (By Carolyn Y. Johnson and Lena H. Sun) বলা হয়, 'A case report that showed the illness could spread before symptoms occurred turned out to be incorrect, although a top U.S. official has said he still believes it can spread without symptoms, based on discussions with Chinese experts. Figuring out exactly how easily it spreads and who is infectious will be necessary for designing public health measures that are more likely to work.' [https://www.washingtonpost.com/health/2020/02/07/biggest-questions-about-new-coronavirus-what-we-know-so-far/]
কোনো ভাইরাস নয়, বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া একটি অদৃশ্য বিষ মানুষকে করোনায় আক্রান্ত করছে, এই কথা এখন প্রমাণিত। সেই অদৃশ্য বিষ যার নাক দিয়ে প্রবেশ করে, সে ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগে করোনায় আক্রান্ত হয়। এই বিষ নিঃশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করার পরপরই মানুষের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। কয়েকদিন সময় লেগে যায়। একে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে। ১৪ দিনের কাছাকাছি সময়। এজন্য দেখা গেছে, অনেক মানুষ চীনের উহান থেকে অন্য দেশে ফিরে যাবার সময় রোগটিতে আক্রান্ত থাকে না। অন্য দেশে যাবার পর তার শরীরে রোগটি দেখা দেয়। যদি কেউ বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করার পর অন্য দেশে চলে যায়, যেখানে বিষাক্ত বাতাস নেই, তার শরীরে লক্ষণ প্রকাশ হবার আগে বা পরে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারবে না। কারণ তার সংস্পর্শে আসা কেউ তো বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করেনি। তাছাড়া করোনাভাইরাস ছোঁয়াচেও নয়। কিন্তু যে এলাকার বাতাসের সাথে অদৃশ্য বিষ মিশ্রিত, সে এলাকার হাজার হাজার মানুষ একজনের পর আরেকজন বা একসাথে কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে যখন দেখা যায়, এমন একজন লোকের সাথে আরেকজনের সংস্পর্শ হয়েছে, যে পরে করোনায় শনাক্ত হয়েছে এবং তার সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিও শেষে করোনায় শনাক্ত হয়েছে, তখন মনে হয় প্রথম জন লক্ষণ প্রকাশ পাবার আগেই পরের জনের শরীরে করোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু অদৃশ্য বিষের কথা জানা নেই, তাই পরের জনও যে আগের জনের মতোই অদৃশ্য বিষের সংক্রমণের শিকার, তা না বুঝে মনে করা হয় আগের জনের সাথে সংস্পর্শের কারণে লক্ষণ প্রকাশিত হবার আগেই পরের জন সংক্রমিত হয়েছে।
তবে ভালো খবর হচ্ছে, এই ধারণাকে ভুল সাব্যস্ত করে 'উপসর্গহীন করোনা ভয়ের কারণ নয়' শিরোনামে ৯ জুন ২০২০ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জার্মানীর ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়, 'লক্ষণহীন করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এ ধরনের রোগীদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা অতি বিরল বলেই মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনা ভাইরাস কি অ্যাসিম্পটমেটিক বা লক্ষ্যণহীন রোগীর মাধ্যমে ছড়াতে পারে? প্রশ্নটি নতুন নয়। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশে প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দেশগুলিতে লক্ষণহীন রোগীর সংখ্যা বেশি। ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, এ দেশে এখনও পর্যন্ত যা করোনা পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশই লক্ষণহীন রোগী। অর্থাৎ করোনার কোনও উপসর্গ তাদের শরীরে ছিল না। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা মনে করছিলেন, এই লক্ষণহীন রোগীদের মাধ্যমেই গোষ্ঠীর ভিতর করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছে, লক্ষণহীন রোগীর মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অসম্ভব না হলেও বিরল। ফলে এই বিষয়টি নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
গোটা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৪। মৃত্যু হয়েছে চার লাখ আট হাজার মানুষের। সুস্থ হয়েছেন ৩৫ লাখ। সংখ্যার নিরিখে এখনও সব চেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অ্যামেরিকায়। তারপরেই ব্রাজিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ব্রাজিলকে ঘিরে দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। অন্য দিকে, ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে খুলে গিয়েছে দোকান, রেস্তোরাঁ, অফিস। মানুষ ঘরের বাইরে বেরোতে শুরু করে দিয়েছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখেই সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিটি দেশ এবং জনগণকে সতর্ক করেছে। তাদের বক্তব্য, প্রায় ছয় মাস ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই চলছে। সেই লড়াই একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন একটু অসতর্ক হলে এতদিনের সমস্ত প্রয়াস নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, অতীত নয়, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই তাদের সব চেয়ে বেশ উদ্বেগ। এবং সে কারণেই বার বার তারা সতর্ক করছে।
দীর্ঘ লকডাউনের পরে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ভারতে। প্রথম দিনেই বোঝা গিয়েছে, সাধারণ মানুষকে ঘরের ভিতর আটকে রাখা যাবে না। কলকাতা, দিল্লিতে বাসে বাঁদুর ঝোলা হয়ে মানুষ কাজে গিয়েছে। ভারতের ভিতর মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। সেখানেও সোমবার বহু মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় নিয়েই চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ। আনলক পর্বে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না তো?
অনেকেই বলছেন, ভারতে করোনার সর্বোচ্চ সময় এখনও আসেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অনেকের আশঙ্কা, যত লোকের শরীরে করোনা ধরা পড়ছে তার চেয়েও বেশি মানুষের শরীরে করোনার জীবাণু লুকিয়ে আছে। লক্ষণহীন বলে তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আনলক পর্বে তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু সোমবার এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে, যাঁদের শরীরে করোনার লক্ষণ নেই, তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কম। প্রায় নেই বললেই চলে। ...' [https://p.dw.com/p/3dTsC]