করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য
[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]
এই নিবন্ধ কেন?
(এক) সেলফোন ব্যবহার শুরুর পর অধিকাংশ সেলফোনই ব্যবহার করেছি চীনের তৈরি। বর্তমানে ব্যবহৃত ফিচার ফোনটিও চীনেরই তৈরি। এজন্য চীনের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই বছরের জানুয়ারির দিকে যখন পত্রপত্রিকায় চীনে উপদ্রুত করোনাভাইরাসের সংবাদ বেশি বেশি আসতে শুরু করে, তখন আর দশজনের মতোই বিষয়টা একটা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেই ভাবনা এবং ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে আগের ভাবনার যোগফলের সাথে মিলিত হয় চীনে নতুন করে উপদ্রুত করোনাভাইরাসের সাথে উহানের ভাইরোলজি ল্যাবের সম্পর্ক থাকা বা না থাকার ভাবনাটা। ভাবনাগুলোকে একটা সমীকরণে পৌঁছানোর জন্য এই নিবন্ধ। করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার, নাকি দরকার নয়, তা স্পষ্ট হওয়াও এই নিবন্ধ তৈরির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। এই নিবন্ধ তৈরির পেছনে লেগে থাকার কারণে করোনাভাইরাস নিয়ে তেমন একটা উদ্বেগ কখনো মনে সৃষ্টি হয়নি। কাছের লোকদেরকেও সাহস দিতে পেরেছি।
(দুই) চীনের প্রতি কোনো বিদ্বেষ কখনো ছিল না। বিদ্বেষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এসব সাম্রাজ্যবাদী দেশের প্রতি। গত বিশ বছরের ইতিহাসে মানবজাতির তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করেছে যে দেশগুলো, সেগুলোর তালিকায় চীনের নাম নেই। এর আগের বিশ বছরের ইতিহাসেও মানবজাতির উপর যারা হিংস্র থাবা বিস্তার করেছে, সেই দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ দশেও চীনের নাম নেই। বিগত একশত বছরের ইতিহাসে যে যুদ্ধগুলো হয়েছিল, সেগুলোর পেছনে চীনের হাত কম। বিগত কয়েকশত বছরে ব্রিটেন বন্দী করে রেখেছে অসংখ্য দেশের স্বাধীনতা। চীনের সেরকম তৎপরতার ইতিহাস এখনো তেমন নেই।
পৃথিবীতে মানবজাতির অন্যতম শত্রু মারণাস্ত্র। এই মারণাস্ত্র তৈরি, উৎপাদন এবং বাণিজ্যের জন্য চীন বিখ্যাত নয়। গত ত্রিশ বছরে পৃথিবীতে দেশে দেশে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মানুষের হাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে, সেসব মানুষের ক্ষতি ও প্রাণ হারানোর জন্য চীন বেশ একটা দায়ী নয়। এইসব কারণে চীনকে কখনো বেশ খারাপ দেশের তালিকায় ফেলা যায়নি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক মাসে পৃথিবীতে যে ভয়াবহ বহুমাত্রিক সংকট নেমে এসেছে, সেজন্য চীন কি নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে পারবে? চীন যে নিজের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী চেতনা লালন করছে, এটা কে না জানে!
(তিন) চীন এবং অন্য সব অশান্ত দেশকে এখন ভাবতে হবে, (১) 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'। আমি যার জন্য মারণাস্ত্র তৈরি করছি, সেও আমার জন্য তৈরি করার সুযোগ আছে। করছেও। (২) মারণাস্ত্র আবিষ্কার, উৎপাদন, মজুত, মারণাস্ত্রের বাণিজ্য ছাড়া কি কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব কল্পনা করা যায় না? (৩) জাতীয়তাবাদী চেতনা কি আমাদের মন থেকে মানুষত্ববোধকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না? (৪) পৃথিবীতে অল্প কয়েকটি দেশ দাপট দেখাচ্ছে। বাকি দেশগুলো শান্তির পথ বেছে নেয়ার কারণে কি সবার কাছে গুরুত্বহীন? ইউরোপের অসংখ্য দেশ আছে, নিরিবিলি, নাগরিকরা বেশ সুখী। পৃথিবীতে দাপট দেখানো ছাড়া কি নাগরিকরা সুখে থাকে না? (৫) এমন কোনো দেশ কি আছে, যেখানে নাগরিকরা শুধু যুদ্ধ কামনা করে? অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এসব দেশের মানুষের জীবনে বড় ধরনের কোনো সংকট আছে? আমরা নাগরিকদের জন্য এর চেয়ে বেশি কী চাই? যুদ্ধ দিয়ে কি সব সংকট দূর করা যায়? (৬) যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে কি মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায়? মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে না পারলে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করে কী লাভ! (৭) যুদ্ধ করে করে বহু মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেছে। মস্ত বড় যোদ্ধা ছিল, কিন্তু নিজের জীবনটা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে পরাজিত হয়েছে, এমন ঘটনার অভাব নেই ইতিহাসে। কিন্তু সেই সব ইতিহাস আমাদেরকে কি কোনো শিক্ষা দেয় না? (৮) চেঙ্গিস খান, নেপোলিয়ন, হালাকু খান, হিটলারের উত্থান যেমন মানুষ দেখেছে, তাদের পতনও দেখেছে। আমরা যারা এখন গায়ের জোরে আমাদের মতো সহ¯্র লাখো মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছি, আমাদের পতন দেখার সময়ও অপেক্ষা করছে নিশ্চিতভাবে। পালাবার পথ নেই! (৯) দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন অভাবে ভুগছে, তাদের অভাব দূর করার চেয়ে মারণাস্ত্রের পেছনে খরচ করাটা কি মনুষত্ববোধের মধ্যে পড়ে? (১০) ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে আলাদা চোখে দেখে কি আমরা মনুষত্ববোধের চেতনাকে অপমাণ করছি না? (১১) পৃথিবীর সব মানুষকে এক জাতি, এক ধর্ম এবং এক বর্ণের গন্ডিতে নিয়ে আসতে না পরলেও সব মানুষকে মনুষত্ববোধের গন্ডিতে কি নিয়ে আসার চেষ্টা এ পর্যন্ত করা হয়েছে? (১২) পৃথিবী থেকে যুদ্ধ নামক অন্যতম মানব-শত্রুকে কি বিদায় জানানো যায় না? (১৩) মানুষের জীবনের মূল্য কি আমরা বুঝি? মোটেই বুঝি না। বুঝলে মারণাস্ত্র তৈরিতে অগ্রসর না হয়ে একজন ভিক্ষুকের হাত ধরে তাকে ভিক্ষাহীন জীবনের পথে নিয়ে যেতাম। (১৪) বিগত ৫০ বছরে যে দেশগুলো যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে, তাদের অবস্থা কি বেশ করুণ? (১৫) যুদ্ধ ছাড়া বিশ্ব কল্পনা করতে আমরাই পারি। আমাদের সদিচ্ছাই বিশ্বকে, বিশ্বের মানুষকে একটি যুদ্ধহীন পৃথিবী উপহার দিতে পারে। কাজটা কঠিন নয়, বেশ সহজ।
(চার) চলুন, আমরা সবাই মিলে অস্ত্র ফেলে দিই। মানুষের জন্য কাজ করি, মানুষের বিপক্ষে নয়; মানুষের জন্য কাজ করি, শুধু নিজ জাতির জন্য নয়। আমাদের যাদের অন্যায় আছে, যাদের উপর অন্যায়টা হয়েছে, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অন্যায়ের পথ পরিহার করি তাদের সামনে নিজের অস্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লিখি। শুরু হোক মারণাস্ত্র এবং যুদ্ধহীন নতুন পৃথিবীর পথচলা। দেখা যাক, সেই পথে অগ্রদূত হয় কে?