করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য (পর্ব-৩০) : উপদ্রবের শুরুতেই চীন করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করেনি কেন?

11 minute read
0

 করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য

[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়]


কিন্তু অনেকেরই হয়তো মনে নেই, করোনাভাইরাসের উপদ্রবের পর চীন কিন্তু প্রথমেই করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করতে শুরু করেনি। একটু সময় নিয়েছে। এ সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন দেখা যাক:

'চীনের 'রহস্যময়' ভাইরাস নিয়ে নানা শঙ্কা' শিরোনামে প্রথম আলোয় ১৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীন দাবি করেছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪১ জন। তবে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যা ১ হাজার ৭০০-র কাছাকাছি। তাঁরা ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়ে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন। যদিও চীন বলছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে।
আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, রোগ প্রাদুর্ভাববিষয়ক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক নিল ফেরগুসন নতুন ভাইরাসটি প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছেন, 'বাস্তবিকভাবে আমি এক সপ্তাহ আগের চেয়ে এখন আরও বেশি উদ্বিগ্ন।' ...
চীন জানিয়েছে, ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। তাদের মতে, ভাইরাসটি এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে সংক্রমণের স্বাভাবিক প্রতিরোধ পার হয়ে এসেছে। আর তা সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ফেরগুসন বলেছেন, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও সবার বিবেচনায় রাখা উচিত।' [https://www.prothomalo.com/international/article/1634978]

এখানে বলা হয়েছে, 'চীন জানিয়েছে, ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা।'

দৈনিক যুগান্তরে ২১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'এশিয়ায় ছড়াচ্ছে নয়া ভাইরাস' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ডা, সেবরিনা ফ্লোরা (ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইসিডিডিআরের পরিচালক) বলছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি এবং ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/269371]

এখানে বলা হয়েছে, 'ভাইরাস ছোঁয়াচে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।'

'চীনে 'ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যজনক' ভাইরাস, আক্রান্ত ৪৪' শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চীনের মধ্যাঞ্চল ইউহান শহরে 'রহস্যজনক' নিউমোনিয়ার আক্রমণ দেখা দিয়েছে, যাতে এখনো পর্যন্ত অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করতে কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। ...
এছাড়া মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। যাই হোক, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শহরের একটি সি-ফুড বা সামুদ্রিক খাবারের বাজারে কাজ করতো। যার জেরে ওই এলাকা পরিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।' [https://www.bbc.com/bengali/news-50991318]

এখানে বলা হয়েছে, 'মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।'
এই  প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর প্রথম অবস্থায় করোনাভাইরাসকে ছোঁয়াচে বলে মনে করা হয়নি বা ছোঁয়াচে বলে প্রচার করতে চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বিধা করছিল। তাহলে পরে কী কারণে একে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করা শুরু হলো?

'চীনের নতুন ভাইরাস এবার যুক্তরাষ্ট্রেও' শিরোনামে প্রথম আলোয় ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গত সোমবার চীন প্রথম স্বীকার করে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। এর আগে চীন দাবি করেছিল, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষ নয়, প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা। আর ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে সামুদ্রিক খাবার থেকে। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান। তাঁদের হিসাবে চীন যা বলছে, তার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।' [https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1635600]

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর প্রথম দিকে চীন একে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করতে দ্বিধা করছিল, কিন্তু পরে এসে তা প্রচার করতে শুরু করে। কী কারণে এই মত পরিবর্তন?

যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে ২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'Emerging understandings of 2019-nCoV' শিরোনামে বলা হয়, ''There is an emergency in China, but it has not yet become a global health emergency...WHO is following this outbreak every minute of every day'', said Dr Tedros Ghebreyesus, Director-General of WHO, on Jan 23. A novel coronavirus (2019-nCoV) outbreak is emerging, but it is not yet a Public Health Emergency of International Concern (PHEIC). As we went to press, more than 500 cases have been confirmed in China, as well as in JapanSouth KoreaThailand, and the USThe virus can cause a severe respiratory illness, like SARS and MERS, and human-to-human transmission has been confirmed. These characteristics are driving China's urgent public health actions, as well as international concern. But much remains unknown. The pieces of the puzzle that is 2019-nCoV are only now beginning to come together.

Today, we publish the first clinical data from individuals confirmed to be infected with 2019-nCoV from WuhanChina. Chaolin Huang and colleagues provide comprehensive findings for the first 41 laboratory-confirmed cases. 27 of these 41 cases had direct exposure to the Wuhan seafood market that is thought to be the initial site of infection from an animal source. All had viral pneumonia. The severity of illness is concerning: almost a third of patients developed acute respiratory distress syndrome requiring intensive care; six patients died; five had acute cardiac injury; and four required ventilation.

Separately, Jasper Fuk-Woo Chan and colleagues report clinical and microbiological data from a family of six people who had travelled to Wuhan and later presented with pneumonia to Shenzhen Hospital in Guangdong province. Five were identified as infected with 2019-nCoV. Notably, none had been to the Wuhan market, but two had visited a Wuhan hospital. The authors suggest these findings confirm human-to-human transmission. Together, these Articles provide an important initial picture of the clinical spectrum and transmission of this new disease. ...

There are still many gaps in our understanding. The early experiences of these patients and the response to their symptoms before cases were reported remain undocumented. The exposure and possible infection of health workers remain extremely worrying. We will not know for some time the consequences of the quarantine imposed in Wuhan on Jan 23, 2020. Chinese public health authorities are under enormous pressure to make difficult decisions with an incomplete, and rapidly changing, understanding of the epidemic. The shutdowns may seem a drastic step—whether they represent an effective control measure deserves careful investigation and much will likely depend on maintaining trust between authorities and the local population. News media that worsen fears by reporting a “killer virus“ only harm efforts to implement a succesful and safe infection control strategy.' [https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(20)30186-0/fulltext]

এই প্রতিবেদনে প্রথমে বলা হয়েছে, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে; পরে আবার বলা হয়েছে, তবে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ নিশ্চিত হবার কথা বলেছে কোত্থেকে? সম্ভবতঃ এর উত্তরে পরে বলা হয়েছে, জ্যাস্পার ফুক-উন চ্যান এবং সহকর্মীরা আলাদাভাবে ছয়জনের একটি পরিবার থেকে ক্লিনিক্যাল এবং মাইক্রোবায়োলজিক্যাল তথ্য রিপোর্ট করেছেন যারা পরে উহান ভ্রমণ করেছিলেন এবং পরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুয়াংডং প্রদেশের শেনজেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পাঁচজনকে ২০১৯-এনসিওভিতে সংক্রমিত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, কেউই উহান বাজারে আসেনি, তবে দু'জন একটি উহান হাসপাতালে গিয়েছিল। লেখকরা পরামর্শ দেন যে, এই ফলাফলগুলি মানুষের থেকে মানবিক সংক্রমণকে নিশ্চিত করে।

এই প্রতিবেদনও নিশ্চিত করে, উহানের মাছের বাজারে যাওয়া ছাড়াই এই পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে এটা নিশ্চিত, উহানের মাছের বাজার থেকে ভাইরাস ছড়ায়নি। তাহলে কোত্থেকে?
এই ছয়জন লোক উহানে ভ্রমণ করার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এদের দু'জন উহানের একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই দু'জন আগে আক্রান্ত হয়েছেন, নাকি পরে, তা কিন্তু এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। আগে হোক বা পরে, এরা উহানে গমন করার কারণেই মূলত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ উহানের বাতাস বিষাক্ত ছিল। কিন্তু এই বিষাক্ত হবার কথাটা গোপন থাকার কারণেই গবেষকরা হাসপাতালে যাওয়াকেই এদের করোনায় আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করে বসলেন, এমনকি করোনাকে ছোঁয়াচে বলেও মন্তব্য করলেন। এই মন্তব্য করাটাই হয়তো মানবজাতির জন্য সীমাহীন অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ালো।

এই প্রতিবেদনে করোনাকে ছোঁয়াচে বলে মন্তব্য করার পর আবার বলে দেয়া হলো, 'আমাদের বোঝার মধ্যে এখনো অনেক ফাঁক রয়ে গেছে।' এই মন্তব্যের দিকে কেউ আর ভ্রক্ষেপ করার প্রয়োজন মনে করেনি।

'Radiological findings from 81 patients with COVID-19 pneumonia in Wuhan, China: a descriptive study' শিরোনামে ল্যানসেটে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি নিবন্ধে বলা হয়, 'Most of the initial cases of coronavirus disease 2019 (COVID-19), the disease caused by SARS-CoV-2, were epidemiologically linked to exposure to Wuhan's Huanan seafood market, where wild animals are traded. Although the market has been closed since Jan 1, 2020, as part of efforts to contain the outbreak, patients without exposure to the market but with a history of travel to Wuhan or close physical contact with a patient confirmed to have COVID-19, including health-care workers, have also been identified, suggesting strong human-to-human transmission. The number of cases has been increasing rapidly: by Feb 15, 2020, more than 60000 cases of COVID-19 pneumonia had been reported in China and in other countries worldwide (including ThailandJapanSouth Korea, and the USA), and 1524 patients had died, equivalent to a mortality rate of around 2%.' [https://www.thelancet.com/journals/laninf/article/PIIS1473-3099(20)30086-4/fulltext]

ল্যানসেটের এই নিবন্ধে এসে আবার উহানের সি ফুড মার্কেটকে করোনার প্রাদুর্ভাবস্থল বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার বলা হয়, প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যদিও ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মার্কেটটি বন্ধ ছিল, তবু বাজারটিতে গমন করা ছাড়াই স্বাস্থ্যকর্মীসসহ অনেক মানুষ শুধু উহানের ভ্রমণের কারণে অথবা কোনো রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হতে থাকাটা দৃঢ়ভাবে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের পরামর্শ দেয়।

এখানে সি ফুড মার্কেটের কথা বাদ দিয়ে উহানে ভ্রমণের সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াকে সম্পর্কিত করা হয়েছে। আবারও নিশ্চিত হওয়া গেলো মাছের বাজারটির সাথে করোনাভাইাসের সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক উহানের সাথে। উহানে অবস্থিত বায়োলজিক্যাল ল্যাব থেকেই যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, তা বুঝার জন্য আর কোনো প্রমাণ দরকার?

করোনায় আক্রান্ত রোগীর সাথে শারীরিক যোগাযোগের যে কথা এখানে বলা হয়েছে, তার কোনো অর্থ আর থাকে না, যখন দেখা যায় মানুষ শুধু উহানে থাকলেই বা ভ্রমণ করলেই করোনায় আক্রান্ত হয়। উহানের বাতাস যাদের নাকে প্রবেশ করেছে, তাদের মধ্যে কি স্বাস্থ্যকর্মীরা নেই? স্বাস্থ্যকর্মীরা আরেকজন থেকে কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হবে, মাস্ক, পিপিই সহ নভোচারীদের মতো পোষাকে বন্দী হয়ে থাকার পরও? আর দশজন যেভাবে উহানের বাতাস ফুসফুসে গ্রহণের পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেভাবে আক্রান্ত হতে বাধা কোথায়? নিঃশ্বাস নেয়া তো বন্ধ করে না!

'করোনা ভাইরাসের বাহক মানুষও!' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে, যা প্রকাশিত হয় জানুয়ারি ২২, ২০২০ তারিখে, তৈরি করেছেন জাকিয়া আহমেদ। সেখানে বলা হয়, 'জানা যায়, সম্প্রতি চীনের উহান শহরের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে নতুন করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেটি জাপান, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্তেরও খবর পাওয়া গেছে, যাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এখান থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে।' [https://www.banglatribune.com/others/news/605297]

যখন স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছে, তখন সবাই ভাবতে শুরু করেছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা অবশ্যই কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। তাই এই রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আবার একই পরিবারের তিন জন আক্রান্ত হবার পর যখন দেখা গেছে, তাদের একজন উহানের সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন, তখন থেকেই ধারণা করা হয়, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু এই তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়নি, ঐ পরিবারের তিনজন লোকের মধ্যে মাছের বাজারে যে গেছে, সে আগে আক্রান্ত হয়েছে, নাকি বাকি দু’জন; নাকি তিনজনই একসাথে। মূলত ছোঁয়াচে রোগের ধারণা প্রচলিত থাকা এবং নিউমোনিয়া জাতীয় রোগকে আগ থেকেই ছোঁয়াচে মনে করার কারণে এই বিষয়টা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করা হয়নি এবং এই কথাটাও মাথায় আসেনি, ঐ পরিবারের যে লোকটি মাছের বাজারে গেছে, সে সেখানে না গেলেও আক্রান্ত হতে পারতো। ছোঁয়াচে মনে করার আরেকটা কারণ হচ্ছে, যখন কর্তৃপক্ষ প্রাদুর্ভাবস্থল বা প্রাদুর্ভাবের উৎস হিসেবে মাছের বাজারের দিকেই আঙ্গুলি নির্দেশ করেছে, তখন আক্রান্ত কেউ ঐ বাজারের নামও কেউ মুখে নিয়েছে কিনা, তার উপর ভিত্তি করে রোগটি ছোঁয়াচে হবার বিষয়টা যাচাই করা শুরু করলো।

সবচেয়ে বড় কথা, যখন প্রমাণিত হয়েই গেলো মাছের বাজারের সাথে এই ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই, তখন মাছের বাজারের সাথে এই রোগের ছোঁয়াচে হবার সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার চিন্তাটা ভুল। এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, ঐ পরিবারের অন্য দু’জন যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, মাছের বাজারে গমন করা ব্যক্তিও সেই কারণেই আক্রান্ত হয়েছে। রোগীরা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই কারণেই আক্রান্ত হয়েছে প্রতিরক্ষামূলক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও।

করোনাভাইরাস সত্যিই ছোঁয়াচে কিনা, তা নিয়ে আরেকটি বিভ্রান্তির উদাহরণ দেখা যক:
health protection agency, Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর ওয়েবসাইটে 'Coronavirus Disease 2019 (COVID-19)' শিরোনামের নিয়মিত হালনাগাদকৃত নিবন্ধে বলা হয়, 
'How 2019-nCoV Spreads
Most often, spread from person-to-person happens among close contacts (about 6 feet). Person-to-person spread is thought to occur mainly via respiratory droplets produced when an infected person coughs or sneezes, similar to how influenza and other respiratory pathogens spread. These droplets can land in the mouths or noses of people who are nearby or possibly be inhaled into the lungs. It's currently unclear if a person can get 2019-nCoV by touching a surface or object that has the virus on it and then touching their own mouth, nose, or possibly their eyes.' [https://www.cdc.gov/coronavirus/about/transmission.html]

এই নিবন্ধটি এরকসময় এই রকম ছিল। কিন্তু পরে আবার শেষ বাক্যটি এডিট করে সেখানে বলা হয়, 'It may be possible that a person can get COVID-19 by touching a surface or object that has the virus on it and then touching their own mouth, nose, or possibly their eyes, but this is not thought to be the main way the virus spreads.'

২১ মার্চ ২০২০ তারিখেও এরকম ছিল। পাশাপাশি আরও বলা হয়, 
'Can someone spread the virus without being sick?
People are thought to be most contagious when they are most symptomatic (the sickest).
Some spread might be possible before people show symptoms; there have been reports of this occurring with this new coronavirus, but this is not thought to be the main way the virus spreads.'

নিবন্ধটিতে ৪ মে ২০২০ তারিখে বিষয়টা উল্লেখ করা আছে এভাবে(১) COVID-19 মূলত সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে শ্বাসের ফোঁটায় করে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড় বলে 'মনে করা হয়'। (২) COVID-19 একটি নতুন রোগ এবং এটি কীভাবে এটি ছড়ায় এবং অসুস্থতার তীব্রতা সম্পর্কে আমরা এখনও শিখছি।
সিডিসি এখনো বলছে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে 'মনে করা হয়'; কিন্তু সারাবিশ্ব অনেক আগে থেকেই বিষয়টা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে। সিডিসি এখনো শিখছে কিভাবে এটা ছড়ায়, কিন্তু সারাবিশ্ব একে ছোঁয়াচে মনে করে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছে/নিচ্ছে।
চীন উহানের এই সংক্রমণকে ছোঁয়াচে বলে প্রচার করে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি এখনো পর্যন্ত ল্যাবরেটরিটির দিকে থেকে ফিরিয়ে মাছের বাজারের দিকে নিবদ্ধ রাখতে যেমন সফল হলো, তেমনি করোনাভাইরাসের উপদ্রবের সাথে ল্যাবরেটরির সম্পর্ক সম্পর্কে অভিযোগগুলোকেও 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ' বলে উড়িয়ে দিতে মোটামুটি সফল হলো।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top