করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য (পর্ব-৩৪) : করোনা নিয়ে চীনের আরো কিছু লুকোচুরি

5 minute read
0

করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য

[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়] 


আরো কিছু লুকোচুরি সম্পর্কে জানা যাক:
'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে মেরে ফেলতে চায় চীন! ' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে  ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে মেরে ফেলতে চীন সরকার আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
সম্প্রতি ab-tc.com-City News নামক একটি সংবাদমাধ্যমের একটি রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম 'এই সময়'।
ওই রিপোর্টের শিরোনামে লেখা হয়েছে, ২০ হাজার করোনভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের প্রাণে মারতে উদ্যোগী হয়ে কোর্টের অনুমতি চাইছে চীন সরকার।
রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, সংক্রমণ যাতে আর না ছড়িয়ে পড়ে তা বন্ধ করতেই মূলত এই চিন্তাভাবনা করছে জিনপিংয়ের দেশ। আর এই খবর বহু মানুষ নানান সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

তবে ইংরেজিতে লেখা সেই রিপোর্টের প্রথম বাক্যেই China কে লেখা হয়েছে Chhina লেখা হয়েছে, 'করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে মারতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম পিপলস কোর্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় সরকার'।
ওই রিপোর্টে একটি ডকুমেন্টের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে 'স্টেট' কোর্টের কাছে লিখছে, 'এই দেশটা হয়তো সব নাগরিকদেরই হারাবে, যদি না খুব শিগগিরই ওই আক্রান্তরা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য আরও মানুষকে বাঁচান।'
তবে ab-tc.com ওয়েবসাইটটি কোনো বাইলাইন (রিপোর্টারের নাম) ছাড়াই কেবলমাত্র স্থানীয় সংবাদদাতা লিখেই এই গুরুতর খবরটি প্রকাশ করেছে।
এই ওয়েবসাইটটি ছাড়া আর কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়া এ ধরনের কোনো খবর প্রকাশ করেনি।

যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তার নীচে কোনো ডিসক্লেইমার দেয়া হয়নি। এমনকি রিপোর্টটি ফিকশন নাকি স্যাটায়ার তারও কিছুই জানানো হয়নি।
এদিকে Snopes fact-check-এর পক্ষ থেকে এই রিপোর্টের সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কীভাবে দিনের পর দিন একটা ওয়েবসাইট এই ধরনের ভুয়ো খবর প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, এই ধরনের ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য এই ওয়েবসাইটকে বিশ্বাস করা যাবে না।
চীনের সুপ্রিম পিপলস কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এই ধরনের কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়নি।' [https://www.jugantor.com/international/276090]

'বাড়ি বাড়ি ঢুকে রোগী ধরছে চীন' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন কর্মকর্তারা। কারও দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। এরপর হাসপাতাল কিংবা কোনো ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ ক্যাম্পে যেতে না চাইলে জোর করেই নেয়া হচ্ছে তাকে। দেশজুড়ে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে ব্যাপক নজরদারি চালানো হচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন ও রোবটের মতো উন্নত সব প্রযুক্তি। রোগীর কাছে খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিতেও রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। করোনার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এর বিরুদ্ধে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী সুন চুনলুনের 'গণযুদ্ধে'র ডাক দেয়ার পরই আরও সোচ্চার হয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ হাজার রোগীকে চীন সরকার মেরে ফেলতে চায় বলে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য কর্তৃপক্ষ আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। খবর রয়টার্সের।

একজন রোগীকে আটক করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এমন একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, উহানের চাংকিংয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে কোয়ারিন্টিনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সুট-প্যান্ট-টাই পরা কর্মকর্তারা। কিন্তু ওই ব্যক্তি হঠাৎ করেই দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। হতচকিত কর্মকর্তারা দ্রুত তার পিছু ধাওয়া করেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংহাইয়ের কাছাকাছি সুঝৌ এলাকায় প্রতিরোধক পোশাক পরিহিত কর্মকর্তারা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে তার বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনছেন।

চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার উহানের সব সন্দেহভাজন রোগী এবং যাদের সঙ্গে কোয়ারিন্টিনে রাখা ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন সবাইকে কোয়ারিন্টিনে রাখার আদেশ দিয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী সান চুনলুন জানিয়েছেন, চার ধরনের লোককে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারিন্টিন বা সাময়িক অন্তরীণ কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে- নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত, সন্দেহভাজন ব্যক্তি, আক্রান্ত দু'জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এমন ব্যক্তি এবং যাদের দেহে জ্বর রয়েছে। এদিকে, চীন সরকার করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের হত্যা করতে আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। চীনা একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের বরাতে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম 'এই সময়' জানায়, সংক্রমণ বন্ধ করতেই মূলত এই চিন্তাভাবনা করছে শি জিনপিংয়ের দেশ। রিপোর্টে একটি ডকুমেন্টের উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে 'স্টেট' কোর্টের কাছে লিখছে, 'এই দেশটা হয়তো সব নাগরিকদেরই হারাবে, যদি না খুব শিগগিরই ওই আক্রান্তরা নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য আরও মানুষকে বাঁচান।'

অন্য দিকে, করোনাভাইরাস শনাক্তে মানুষের তাপমাত্রা পরীক্ষায় রোবট নামিয়েছে চীন। সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়াতেই ব্যবহার করা হচ্ছে এই রোবট। এই ভারাইসটি শনাক্ত করতে গিয়ে চীনে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী। এরই মধ্যে গুয়াংডং প্রদেশের গুয়াংঝু শহরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করেছে ফাইভজি চালিত রোবট। শরীরের তাপমাত্রা দেখার পাশাপাশি মাস্ক না পরেই কেউ ঘোরাফেরা করছেন কিনা সেদিকে নজর রাখছে তারা। এটি একসঙ্গে অনেকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন রোবটটির নির্মাতা ঝাং শাওফেই। যখনই কারো শরীরে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা পড়ছে এটি সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির ছবি তুলছে। এছাড়া রোগীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে রোবট। চীনের নানজিংয়ের এক হাসপাতালে এমন রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। তাই রোগীর সংস্পর্শেই ছড়িয়ে যাচ্ছে ভাইরাস। একজন রোগীকে দেখভালের জন্য চিকিৎসককে তার কাছে যেমন যেতেই হচ্ছে, তেমনি ওষুধপত্র নিয়ে তার কাছে যাচ্ছেন নার্সরা। রোগীর খাবারদাবার পৌঁছে দিতে হাসপাতাল কর্মীরাও তার কাছে যাচ্ছেন। এসব ঝুঁকি এড়াতে রোবট ব্যবহার করছে চীন।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/276962]

চীন এই দু'টি প্রতিবেদনের বক্তব্য সরাসরি গুজব বলেই উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু চীনে যদি শুরু করোনাভাইরাস নিয়ে লুকোচুরি, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, সাংবাদিক নিখোঁজ ইত্যাদির মতো কোনো ঘটনা না ঘটতো, তাহলে চীন নয়, অন্যরাও এগুলোকে গুজব বলেই বিশ্বাস করতে পারতো। অবশ্য তখন চীনে এমন ঘটনাও ঘটতো না আর ঘটলেও গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে সংবাদগুলো চলে আসতো। অথচ এখন কী হচ্ছে? অনেক তথ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে আসার পরও তা মুছে দিতে হচ্ছে, কোনো সংবাদ মাধ্যম অনেক সাহসের সাথে কোনো কোনো তথ্য প্রকাশের পরও বিভিন্ন ফেক্ট চেকার ওয়েবসাইট তা ভুল প্রমাণের চেষ্টা করছে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সেরকম সংবাদ প্রকাশ না হওয়াতে।

একটু আগে ডেইলী মেইলের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারলাম, 'Fang Bin, a Wuhan resident, went missing on February 9 after releasing a series of videos, including one showing piles of bodies being loaded into a bus (একটি বাসে লাশের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এমন ছবি দেখানো একটি ভিডিওসহ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশের পরে ফুং বিন নামে একজন উহানের বাসিন্দা নিখোঁজ হন)।' এই নিখোঁজ হবার সাথে এই দু’টি প্রতিবেদনের কি কোনো সাদৃশ্য নেই? সচেতন মানুষ এর জবাব দেবে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top