করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য (পর্ব-২৮) : এই ভাইরাসটি অন্য দেশে নয়, চীনে কেন? চীনের অন্য শহরে নয়, উহানে কেন দেখা দিল?

5 minute read
0
করোনাভাইরাসের প্রকৃত রহস্য

[করোনাভাইরাস : কোত্থেকে ছড়ালো? সত্যিই কি ছোঁয়াচে? সত্যিই কি কোনো ‘ভাইরাস’? মহামারী প্রতিরোধে করণীয়] 



(ছয়) বিশ্বের আর কোনো দেশে নয়, চীনে কেন এই ভাইরাসের উপদ্রব দেখা দিলো? যেসব দেশ নিরীহ, যেসব দেশের কাছে পরমাণু অস্ত্র নেই, যেসব দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চেতনা নেই, যেসব দেশের বিশ্ববাজার একচেটিয়া দখল করার দুরন্ত মানসিকতা নেই, বাণিজ্যযুদ্ধে আগ্রহ নেই যেসব দেশের, চীনের মতো যেসব দেশে সি ফুড মার্কেট আছে, সেসব কোনো দেশে এই ভাইরাসের উপদ্রব না হয়ে চীনে কেন হলো?

ভাবনার দিক আরেকটু পরিবর্তন করা যাক।

(সাত) চীনের অতি প্রসিদ্ধ শহর বেইজিং, সাংহাই, শেনজেন, গুয়াংজৌ ইত্যাদিকে বাদ দিয়ে করোনাভাইরাস কেন হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানকে বেছে নিল নিউমোনিয়া প্রসবের উত্তম স্থান হিসেবে? অন্য প্রদেশের কোনো শহরের কথা না হয় বাদ দিলাম, হুবেই প্রদেশেও কি উহান ছাড়া আর কোনো শহর ছিল না?

উহান শহরে সি ফুড মার্কেট ছিল বলে? সি ফুড মার্কেট কি চীনে আর কোনো শহরে নেই?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সহায়তা করতে পারে একটি প্রতিবেদন, যা দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে ২৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে 'রাসায়নিক অস্ত্রের কারখানা থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাস?' শিরোনামে। পুরো প্রতিবেদন দেখা যাক:
'সার্স বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের মতো উপসর্গ। পরিণতি ভয়ঙ্কর মৃত্যু। রহস্যময় নোভেল করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি) সংক্রমণ কি সত্যিই উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়েছে?

আর পাঁচটা করোনাভাইরাসের থেকে আলাদা এই ভাইরাসের উৎস কোথায়? সত্যিই কি ভাইরাস, না মারণাস্ত্র? এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
ইসরাইলি সেনা-গোয়েন্দা এবং মাইক্রোবায়োলজিস্টদের মতে এই ভাইরাসের জন্মদাতা উহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল-৪ (বিএসএল-৪) ল্যাবরেটরি।
১০ বছর ধরে নির্মিত এ কারখানাটি ২০১৮ কার্যক্রম শুরু করে চীন। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ।
প্রশ্ন আরও উঠেছে। সত্যিই কি ল্যাবরেটরি থেকে অসতর্কতাবশত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা। ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে কি নিজেদের শক্তি জাহির করতে চাইছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি? সম্প্রতি এক রিপোর্টে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের দাবি, সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড এই আরএনএ ভাইরাসকে তৈরি করা হয়েছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবলে শত শত প্রাণনাশ করা সম্ভব। উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল দীর্ঘ সময় ধরেই। হয় সেখান থেকেই ভাইরাস কোনোও ভাবে বাইরে চলে গেছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নানাবিধ অপকর্ম বিষয়ক গবেষক মাইলস গুয়ো ভারতীয় দৈনিক জিনিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভাইরাস যে দুর্ঘটনাক্রমে কারখানা থেকেই ছড়িয়েছে পরিস্থিতি শান্ত হলেই তা স্বীকার করবে সিসিপি। সরকারের সবুজসংকেত পেলেই এ ঘোষণা দেবে দল। দুর্ঘটনার পরপরই গোপনে কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান।

২৫ জানুয়ারির ওই সাক্ষাৎকারে গুয়ো আরও বলেন, 'সংক্রমণ ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে এবং ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হবে- কারখানা ঘুরে এসে নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সে কথাই বলেছিলেন কিশান।'
২০১৫ সালে রেডিও ফ্রি এশিয়ার একটি রিপোর্টে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে ভয়ংকর, প্রাণঘাতী সব ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এর অর্থ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে বেইজিং। পরবর্তীকালে ইজরাইলি সেনা-গোয়েন্দা দফতরের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম বলেছিলেন, বায়ো-ওয়ারফেয়ারের জন্য তৈরি হচ্ছে চীন।

জিনের কারসাজিতে এমন ভাইরাস তৈরি করা হচ্ছে যার প্রভাব হবে সাঙ্ঘাতিক। প্রতিরোধের আগেই মহামারীর চেহারা নেবে এসব ভাইরাসের সংক্রমণ। যে দেশের ওপর আঘাত হানা হবে, সেখানে মৃত্যুমিছিল শুরু হবে।
২০০২ থেকে ২০০৩ সাল। মহামারীর আকার নিয়েছিল 'সার্স' (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)। চীনের মূল ভূখন্ডেই মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৪০০ জনের। হংকংয়ে অন্তত ৩০০।

২০০৯ সালে ফের সোয়াইন ফ্লুয়ের ছোবল। শয়ে শয়ে মৃত্যু। সরকারি হিসেবেই সংখ্যাটা ছিল সাতশ'র কাছাকাছি। সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তো বটেই আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDCP) জানিয়েছিল, ওই ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস নিয়ে কাজ হলেও গবেষকরা অনেক বেশি সচেতন থাকেন।

ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে এই ল্যাবরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং, যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু।

রিপোর্টে বলা হয়, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর থেকেই উহানে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে- এই তথ্যও মানতে রাজি নন ইসরাইলি মাইক্রোবায়োলজিস্টরা। তাদের দাবি, অনেক আগে থেকেই নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল।

ডাক্তাররা বলেছিলেন উহান নিউমোনিয়া রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চুপিচুপি চিকিৎসা চলছিল। পরে মানুষের থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে হু হু করে। উহানের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ৪১ জন রোগীর প্রথম চেস্ট এক্স-রে হয়, তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেও দেখা যায়- কোনো খোলা বাজার থেকে বা পশুপাখির সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়নি।
এই সংক্রমণের পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। চীন সরাসরি না বললেও মার্কিন এ দৈনিকের খবর, সব ক্ষেত্রেই নাকি দেখা গেছে, ভাইরাসটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়ায়নি। তাহলে কি সত্যি এটি জৈব-রাসায়নিক মারণাস্ত্র? উত্তর এখনও অধরা।' [https://www.jugantor.com/todays-paper/ten-horizon/272558]

এই প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত যে তথ্যগুলোকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই, সেগুলো হলো:

(এক) চীনের উহানে রয়েছে জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা, যা ১০ বছর ধরে নির্মাণ করার পর ২০১৮ সালে কার্যক্রম শুরু করে।
(দুই) উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল দীর্ঘ সময় ধরেই।
(তিন) ২০১৫ সালে রেডিও ফ্রি এশিয়ার একটি রিপোর্টে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে ভয়ংকর, প্রাণঘাতী সব ভাইরাস নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। এর অর্থ জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্রের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছে বেইজিং। পরবর্তীকালে ইজরাইলি সেনা-গোয়েন্দা দফতরের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট ড্যানি শোহাম বলেছিলেন, বায়ো-ওয়ারফেয়ারের জন্য তৈরি হচ্ছে চীন।
(চার) ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজিতে এই ল্যাবরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং, যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। বলা হয়, রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু।
(পাঁচ) চীন সরাসরি না বললেও মার্কিন এ দৈনিকের খবর, সব ক্ষেত্রেই নাকি দেখা গেছে, ভাইরাসটি সি-ফুড মার্কেট থেকে ছড়ায়নি।

এই তথ্যগুলো সামনে রেখে যদি এই প্রতিবেদন উল্লেখের আগে সর্বশেষ পয়েন্টে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তর খোঁজা হয়, তাহলে এই প্রতিবেদনের বক্তব্যকে বা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সম্ভাবনাকে প্রশ্নগুলোর নিশ্চিত উত্তর হিসেবে মেনে নিতে কোনো সচেতন মানুষের আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রশ্নগুলো আর এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো সামনে রাখলে কোনো সম্ভাবনামূলক কথাকেই 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বলে চালিয়ে দেয়ার আর সুযোগ থাকবে না।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top