মহামারী দেখা দিলে করণীয়

9 minute read
0

 


'মহামারির ইতিহাস থেকে যে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন' শিরোনামে ডেইলী স্টার বাংলায় ৭ মে ২০২০ তারিখে একটি নিবন্ধ লিখেন ড. মো. জহুরুল ইসলাম (পোস্টডক্টরাল গবেষক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ)। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, 'মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সারা পৃথিবীতে ৪০ লাখের কাছাকাছি মানুষ নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না!

এত ক্ষুদ্র অস্তিত্বের এমন ভয়াল থাবা বর্তমান পৃথিবীর কোনো মানুষ (কিছু শতবর্ষী মানুষ ছাড়া) জীবদ্দশায় দেখেননি। যদিও মহামারির এমন ভয়াবহ চিত্র পৃথিবীতে আগেও দেখা গেছে। এইতো গত শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯১৮ সালে লোমহর্ষক 'স্প্যানিশ ফ্লু' মহামারিতে পৃথিবীর প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।

একশ বছর পর দুনিয়াতে আবার সেই একইরকম ভয়াল সংক্রামক রোগের মহামারি হানা দিল ২০১৯ সালে! অতীতে মানুষ কীভাবে বিশ্ব-মহামারি মোকাবিলা করেছে? মহামারি পরবর্তী বিশ্বই বা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল? অতীতে বিশ্ব-মহামারির প্রকোপ ও তৎপরবর্তী সময়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সার্বিক সমাজ ব্যবস্থায় যে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছিল সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি আমরা।

পৃথিবীতে মানুষের বিচরণ যেমন বহুকালের, সংক্রামক রোগের মহামারির ইতিহাসও সেরকম অনেক প্রাচীন। সময়ের বিবেচনায় বলতে গেলে প্রথমেই আসে 'এথেনিয়ান প্লেগে'র ইতিহাস। সেই ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই বিশ্ব-মহামারি ইথিওপিয়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে ছড়িয়ে পড়েছিল মিশর ও গ্রিসে।

দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এ মহামারিতে রোগের উপসর্গ ছিল কিছুটা ইবোলা ভাইরাসের লক্ষণের মতো তীব্র জ্বর ও রক্তবমিসহ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু। উল্লেখ্য যে, ইবোলা ভাইরাস পৃথিবীতে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ সুদানে। ধারণা করা হয় গ্রিসের এক-তৃতীয়াংশ মানুষই এ মহামারির সময় সংক্রমিত হয়। বেশি সংক্রমিত হয় ডাক্তার ও রোগীর সেবা প্রদানকারীরা।

এথেনিয়ান প্লেগ মানুষকে এতোটাই প্রভাবিত করেছিল যে তারা ধর্ম বা নিয়মনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সমাজে শ্রদ্ধাবোধের রীতি বিনষ্ট হয়েছিল। মানুষ মৃত্যুভয়ে ছিল আড়ষ্ট।

তারপর কয়েক শতাব্দী পর, ১৬৫-১৮৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে পৃথিবীতে হানা দেয় 'এন্টোনাইন প্লেগ'। চীনে উৎপত্তি হয়ে এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও মিশর, গ্রিস, ইতালিসহ সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যে সৈনিকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি।

ধারণা করা হয়, এ মহামারির কারণ ছিল গুটিবসন্তের জীবাণু। সে সময় রোমান সাম্রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই সংক্রমিত হয় এন্টোনাইন প্লেগে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে মানুষের অবিশ্বাস্য পরিবর্তন হয় তখন। যার ফলস্বরূপ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের গোড়াপত্তনও হয় তখন থেকেই। মহামারি পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুত নতুন নতুন কুসংস্কার আর নতুন ধর্মের বিস্তার শুরু হয় সেসময়।

এরপর ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে আসে ইতিহাসের আরেক ভয়াবহ মহামারি। এর নাম 'জাস্টিনিয়ান প্লেগ'। মহামারির নামকরণ হয় তখনকার রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ানের নামানুসারে। এ মহামারির জীবাণু ছিল ''Yersinia Pestis' নামক ব্যাকটেরিয়া; যা ইঁদুর ও একধরণের মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চলসহ রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপলে।

খুব ক্ষিপ্রবেগে ছড়িয়ে পড়া এ রোগের উপসর্গ ছিল জ্বর, বিষফোঁড়া ও রক্তবমি। মৃতের সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে লোকালয়ে মানুষকে কবর দেওয়ার মতো জায়গা ছিল না! বিশালাকার গর্ত করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত গর্তও সংকুলান না হওয়ায় শহরগুলির চারপাশে ভাগাড়ের মতো লাশের স্তুপ জমে ছিল। রাস্তাঘাট মরুভূমির মতো জনশূন্যে পরিণত হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভীষণ খাদ্য সংকটে না খেতে পেয়ে অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল।

শুরুটা ৫৪১ সালে হলেও বছরান্তে চক্রাকারে এ মহামারি চলতে থাকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। মোট আড়াই কোটির বেশি মানুষ মারা যায় এ মহামারিতে। ধারণা করা হয় ইউরোপের অর্ধেক মানুষই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এ সময়।

আবার, প্রায় ৬০০ বছর পর ১৩৩৪ সালে চীনে দেখা দেয় 'বিউবনিক প্লেগ' যা ইতিহাসে 'ব্ল্যাক ডেথ' হিসেবে পরিচিত। এ মহামারির জীবাণুও ছিল 'Yersinia Pestis' নামক ব্যাকটেরিয়া যা ইঁদুর ও একধরণের মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিল। উপসর্গ ছিল জ্বর, বিষফোঁড়া, রক্তবমি ও নিউমোনিয়া। সংক্রমিত মানুষের প্রায় ৫০ শতাংশই মারা গিয়েছিল।

শুরুটা চীনে হলেও মধ্য এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশ পাড়ি দিয়ে ১৩৪৭ সালে প্রথম ইতালির সিসিলি হয়ে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। সারা বিশ্বে পঞ্চাশ বছর ধরে এ মহামারির তান্ডব চলে ১৫০ মিলিয়ন মানুষ পৃথিবী থেকে মুছে যায়! তখন বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে কমে ৩০০ মিলিয়নে নেমে আসে। মৃত্যুভয় ও আতঙ্কে মানুষ বিভিন্ন কুসংস্কার আর ধর্মীয় কোন্দলে জড়িয়ে পরে। শ্রমিক সংকটে পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় থেমে যায়। ফলে সমাজে ধনী-গরিবের শ্রেণিবিন্যাস বদলে যায়। অনেক ধনী মানুষ সর্বশান্ত হয়ে যায়। আবার অনেক গরিব মানুষ ধনী হতে শুরু করে। এভাবে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব হয় এ মহামারি-পরবর্তী সময়ে।

'ব্ল্যাক ডেথ'র সময় থেকেই কোয়ারেন্টিন ধারণার ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সংক্রামক রোগের মহামারি নিয়ন্ত্রণে কোয়ারেন্টিনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বিশ্বব্যাপী।

বর্তমান সময়ের নিকটতম অতীতের সব থেকে ভয়াবহ মহামারির নাম 'স্প্যানিশ ফ্লু'। যাকে বলা হয় 'সব মহামারির জননী'। ইনফ্লয়েঞ্জা ভাইরাসের বিশেষ জাত H1N1 দ্বারা সংক্রমণকারী এ মহামারিই ছিল আসল বিশ্ব-মহামারির দৃষ্টান্ত। মানুষ-শুকর-পাখি এই তিন সম্ভাব্য প্রাণী থেকে উৎপত্তি হওয়া H1N1 ভাইরাস ১৯১৮ সালের শুরু থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র দুই বছরে সংক্রমণ করে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষকে। আর প্রাণ কেড়ে নেয় প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, স্পেন অথবা অস্ট্রিয়ার কোথাও উৎপত্তি হয়ে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বে। ঐতিহাসিক নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, 'স্প্যানিশ ফ্লু' মহামারির ভাইরাস জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে বারবার রূপ পরিবর্তন করে তিনটি ভিন্ন ধাপে আঘাত হানে। ১৯১৮ সালের মার্চে প্রথম ধাপে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে। প্রথম ধাপে সংক্রমণের গতি ছিল খুব ক্ষিপ্র। কিন্তু মৃত্যুহার ছিল অনেক কম। ছয় মাস পর সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হলে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। এ ধাপে মৃত্যুহার ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন দেশে তৃতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হয় ১৯১৯ সালের শুরুর দিকে।

'স্প্যানিশ ফ্লু' আক্রান্তদের বেশিরভাগই ছিল যুবক আর সুস্থ মানুষ। তবে সংক্রমিতদের মৃত্যুহার ছিল বেশি। অনেক বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি 'স্প্যানিশ ফ্লু'তে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও শুরুতে মানুষ অনেক আতঙ্কিত ও দিশেহারা ছিল। তবে মহামারি শেষ হওয়ার অল্পদিনের মধ্যে মানুষ সবকিছু ভুলে গিয়ে দ্রুত আবার নতুন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে। এ জন্য 'স্প্যানিশ ফ্লু'কে অনেক সময় বলা হয় 'ভুলে যাওয়া মহামারি'।

উল্লেখিত মহামারিগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে অন্তত এটুকু অনুমান করা যায় যে অতীতের সব মহামারির সঙ্গেই নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। যেমন, ছড়িয়ে পড়ার গতি, সংক্রমণের ব্যাপকতা ও বৃহৎ ভৌগলিক অঞ্চলে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া। তাই অতীতের ভালো-খারাপ দুই ধরণের দৃষ্টান্তই বর্তমানের জন্য হতে পারে দারুণ শিক্ষা। যা এই বিজ্ঞান-তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুনিক পৃথিবীতে আমাদের জন্য হতে পারে পাথেয়। ...' [https://www.thedailystar.net/bangla/148894]

নিবন্ধটি অনেক বড়। বৈশ্বিক মহামারীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরার জন্যেই নিবন্ধটির একটা বিশেষ অংশ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতের বিভিন্ন মহামারীর কারণ এবং আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় সম্পর্কে যেসব কথা নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা এখানে উদ্দেশ্য নয়।

বর্তমান নিবন্ধ পড়ার পর যে ধারণাগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া যাবে:

(এক) ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া কোনো ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ নয়।

(দুই) কনজাংটিভাইটিস এবং পক্সও কোনো ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ নয়।

(তিন) যক্ষ্মা এবং কলেরাও ছোঁয়াচে বা বায়ুবাহিত রোগ নয়।

(চার) পৃথিবীতে বায়ুবাহিত এবং ছোঁয়াচে কোনো রোগই নেই। কোনো রোগ একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে বায়ুর মাধ্যমে লাফিয়ে লাফিয়ে যাওয়ার ধারণা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। শারীরিক ছোঁঁয়ার মাধ্যমেও কোনো রোগ এক শরীর থেকে আরেক শরীরে প্রবাহিত হতে পারে না। রোগ একটা শারীরিক সমস্যা। শরীরের সাথে মিশে থেকে মানুষকে যন্ত্রণা দেয়। মানুষ কোনো না কোনো কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কোনো কারণের সাথে সম্পর্কিত নয়, এমন কেউ কোনো রোগীকে স্পর্শ করলে রোগটি ঐ লোকের শরীরে চলে যেতে পারে না। এজন্য ছোঁয়াচে হওয়াটাও সম্পূর্ণ কাল্পনিক ধারণা।

(পাঁচ) ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর ধারণা বিজ্ঞানেরই সৃষ্টি (বিজ্ঞান বলে, এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না; এগুলো দেখতে মাইক্রোস্কোপ লাগে; সাধারণ মানুষ সচরাচর এগুলো দেখার সুযোগ পায় না)। এগুলো সত্যিই অস্তিত্বশীল হয়ে থাকলেও এগুলো মানুষের কোনো ক্ষতি করার শক্তি বা ক্ষমতা রাখে না; মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি এবং একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে কোনো রোগ ছড়িয়ে দেয়া দূরের কথা।

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নিয়ে যারা চর্চা করেন, তাদেরকে একটু পেছনে আসতে হবে। ভাবতে হবে পূর্ববর্তীরা উপকার করতে গিয়ে বুঝার ভুলে কি মানুষের ক্ষতির পথই খুলে গেছে? এই নিবন্ধে সেই ভাবনার পথের দিকে শুধু ইঙ্গিত দেয়া হয়নি, বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু বিজ্ঞানের সৃষ্টি করা ভুত। বাস্তবের ভুত অস্তিত্বশীল থাকলেও বিজ্ঞানের সৃষ্ট এই ভুত অস্তিত্বহীন।

(ছয়) করোনাভাইরাস কোনো ভাইরাস নয়, উহানে স্থাপিত ভাইরোলজি ল্যাব থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে উহানের বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য বিষের প্রতিক্রিয়া মাত্র। নামে ভাইরাস হলেও করোনাভাইরাস কোনো 'ভাইরাস' তো নয়ই, ছোঁয়াচে বা সংক্রামকও নয়।

(সাত) চীন ছাড়া অন্য কয়েকটি দেশেও উহানের মতোই অদৃশ্য বিষ ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ফলে সেসব দেশেও করোনাভাইরাসের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। উহান থেকে এই রোগ অন্য কোনো দেশে ছড়ায়নি।

(আট) বিজ্ঞানের তৈরি অদৃশ্য যে বিষ উহান এবং অন্য কিছু দেশের বাতাসে মিশে যাবার কারণে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সেই বিষ অন্য এলাকার যাদের নাকে প্রবেশ করেনি, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।

(নয়) (ক) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে কোনোভাবে যাওয়া ছাড়া বিভিন্ন দেশে যারা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছে, বিশেষত স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত রোগীরা এবং (খ) যেসব দেশে অদৃশ্য বিষ ছড়ানো হয়নি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ সেসব দেশে যাবার পর তাদের সংস্পর্শে আসার পর যারা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, এই দুই শ্রেণির মানুষ পরীক্ষার ভুলেই করোনায় 'আক্রান্ত' হয়েছে, বাস্তবে নয়। কারণ করোনা রোগীর সংস্পর্শে না এসে কারোনায় আক্রান্ত হওয়া দূরের কথা, করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার পরও কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে না, অসংখ্য ঘটনা এবং তথ্য/প্রতিবেদন দ্বারা এটা প্রমাণিত।

যে কোনো কারণে কোনো এলাকার বাতাস বা পানি দূষিত বা বিষাক্ত হলে সেই এলাকার মানুষ বিষের ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রোগে ব্যাপক হারে আক্রান্ত হতে শুরু করে। এটাকেই মহামারী বলে। মহামারী বা যে কোনো কথিত ছোঁয়াচে রোগে প্রথমে যে বা যারা আক্রান্ত হয়, পরে যারা আক্রান্ত হয়, তারাও সে কারণেই আক্রান্ত হয়। প্রথমে আক্রান্তদেরকে মাটিতে জীবন্ত প্রোথিত করে ফেললেও পরে আক্রান্তরা ওই রোগে আক্রান্ত হতো প্রথমে আক্রান্তরা যে কারণে আক্রান্ত হয়েছে, সে কারণেই। যেহেতু কোনো রোগ একজন থেকে বায়ু বা ছোঁয়ার মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে না এবং কোনো এলাকায় বাতাস বা পানি দূষিত বা বিষাক্ত না হলে সে এলাকায় ঐ নির্দিষ্ট রোগ ছড়াতে পারে না, তাই কোনো এলাকায় মহামারী দেখা দিলে মহামারী থেকে বাঁচতে কী করা উচিত?

এই নিবন্ধ পুরোটা মনোযোগ সহ পড়ার পর এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবলে সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী অনেক মানুষ এই প্রশ্নের সম্ভাব্য সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে সক্ষম হবে।

ধরা যাক, ভবিষ্যতে উহানের মতো কোনো এলাকায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর যখন সবার মনে এই বিশ্বাস থাকবে, কোনো রোগ একজন থেকে আরেকজনের শরীরে বায়ু বা স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে না এবং কোনো এলাকায় মহামারী তখনই দেখা দিতে পারে, যখন সে এলাকার বাতাস বা পানি কোনো কারণে দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে যায়, তখন সবাই কী করবে? নিশ্চয়ই এলাকাটি ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাবে, যেখানে এরকম কোনো সমস্যা নেই। আর ইতোমধ্যে যারা রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, তাদেরকে কী করবে? তাদেরকে আক্রান্ত এলাকায় রেখে চলে যাবে? নাকি হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরে পুরো শরীর ত্রুটিমুক্তভাবে ঢেকে তাদেরকে ধরে নিয়ে জীবন্ত পুড়ে ফেলবে বা মাটিতে পুঁতে ফেলবে? কেন, তাদের কাছ থেকে যদি অন্য কেউ আক্রান্ত হতে না পারে, তাহলে তাদেরকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে তাদের চিকিৎসা এবং সেবা করলে কী ক্ষতি হবে?

কোনো ক্ষতি হবে না।

বিজ্ঞানের অনেক ধারণা মানবজাতির মহাক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। মানুষের কল্যাণের জন্য ধারণাগুলোর সৃষ্টি হলেও নিবিড়ভাবে চিন্তাভাবনা এবং পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া ধারণাগুলো বাজারে ছেড়ে দেয়ার ফলে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। বিজ্ঞানের ছোঁয়াচে, বায়ুবাহিত রোগের ধারণা; ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু মানুষের ক্ষতি করার ধারণা এ পর্যন্ত মানুষের কত গুরুতর ক্ষতি করেছে, একটু ভাবলেই সবার বুঝে আসবে। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ক্ষতি তার সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ। আইসোলেশন, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, সোশাল ডিসটেন্স এ রকম নতুন অসামাজিক আইনগুলো বিজ্ঞানের আগের কিছু ভুল ধারণার বিষাক্ত ফল। সেই বিষাক্ত ফলের বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাপক বেকারত্ব, ক্ষুধা, অভাব, হতাশা, আত্মহত্যা, ক্ষুধার জ্বালায় দেশে দেশে জনগণের সাথে প্রশাসনের সংঘর্ষ ইত্যাদি আরো কতো কী!

‘‘করোনাভাইরাস কি সত্যিই কোনো ভাইরাস?’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বইয়ের একটি বিশেষ অংশ হলো এই নিবন্ধ। পুরো নিবন্ধ পড়তে হলে যেতে হবে এই লিঙ্কে: https://www.facebook.com/nurahmad.bangladeshi/posts/149460373326356?__tn__=K-R-R-R-R-R-R

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top